Monday, April 17, 2023

চার শতাব্দী পুরোনো মসজিদ : বরুণা বড়ো জামে মসজিদ

হাবীব হুবায়বী

মসজিদ হলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও পবিত্র জায়গা। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়সহ মুসলমানরা মসজিদে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগি, যিকির আযকার করে থাকেন। মসজিদ যে শুধু ইবাদতের জায়গা— এমন নয়, এটি ইসলামি সমাজের একটি প্রতিচ্ছবিও। তাছাড়া প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর মসজিদগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ইসলামি ঐতিহ্য বহন করে আসছে। এমনই একটি প্রাচীন মসজিদ হলো বরুণা মসজিদ। ঐতিহাসিক স্থাপত্যে নির্মিত চারশো বছরের পুরোনো ‘বরুণা বড়ো জামে মসজিদ’।

অবস্থা ও অবস্থান

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুণা গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটির নাম ‘বরুণা বড়ো জামে মসজিদ’। প্রায় ষাট শতাংশ জায়গায় নির্মিত মসজিদটির উপরে তিনটি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজ ছাড়াও এর বিভিন্ন দিকের কারুকাজ দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। এই স্থাপত্যের অবকাঠামো নির্মাণে পোড়ামাটি, চুন ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বারান্দায় কাঠের উপর টিনের ছাউনি— যা মূল ভবনের সঙ্গে পরবর্তীতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুসল্লিরা। অবাক করা বিষয় হলো— মসজিদটি নির্মাণে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ফাতেহকে জানান, এই মসজিদটিতে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি। মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট, আর দেয়াল ৩-৪ ফুট প্রশস্ত। পুরোটাই চুন-সুরকি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন— ‘ভিতরে কুরআন শরিফ রাখার কয়েকটি খোপও রয়েছে। রয়েছে মোমবাতি রাখারও খোপ। প্রত্যেক গম্বুজের ভিতরে গোল অংশে নান্দনিক কারুকাজ। তাছাড়া গম্বুজের উপরের অংশ বেশ বড়, যা এখন সবুজ রং করে রাখা হয়েছে।

স্থাপত্যকাল

এটি কতো আগের মসজিদ? কেই বা নির্মাণ করলেন? এর কোনো সঠিক তথ্য স্থানীয়দের কাছে নেই। তবে মসজিদের প্রধান ফটকে আবছা করে একটি সন লেখা রয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায়, ১৫৯৩ ঈসায়ি সনে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এলাকার মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র রায়হান রাহিমী ফাতেহকে বলেন— ‘এই মসজিদটির স্থাপত্য সম্পর্কিত সঠিক কোনো তথ্য আজ অবদি পাওয়া যায়নি। কিন্তু অনেকেই ধারণা করেন মসজিদটি গায়েবি। যা আদৌ সত্য নয়।’ তিনি জানান, এরশাদ সরকারের আমলে একজন প্রকৌশলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন, আনুমানিক চারশো বছর পূর্বে মসজিদটি স্থাপিত হয়। রায়হান ফাতেহকে বলেন— ‘মসজিদটি এখনো অনেক মজবুত। প্রায়ই দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন।’

ভেতরে এসি না থাকলেও গরম নেই একটুও

চার শতাব্দি পুরোনো এই মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য তিনটি দরজা, উভয় পাশে দুটি জানালা রয়েছে। এখানে প্রায় সাতশো জন মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। বিগত আট-নয় বছর পূর্বে মসজিদের সামনের প্রাচীর এবং প্রাচীরের উপরে থাকা মিনারটি ভেঙে পড়ে। অতঃপর ২০১৬ সালে প্রবেশপথে মসজিদ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় পঞ্চাশ ফুট লম্বা নয়নাভিরাম মিনার নির্মাণ করা হয়। তাছাড়া সামনের প্রাচীর সরিয়ে সেখানে মসজিদ থেকে একই বাউন্ডারিতে স্থাপিত হয়েছে ঈদগাহ মাঠ। যেখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মুসল্লি একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। চারশো বছর পূর্বের পুরোনো এই মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে কেমন লাগে? প্রশ্ন করলে একজন মুসল্লি বলেন— ‘মসজিদের ভেতর সব সময় ঠান্ডা থাকে। ভেতরে কোনো এসি না থাকলেও এমন মনে হয় যে এসির নিচে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছি।’

The post চার শতাব্দী পুরোনো মসজিদ : বরুণা বড়ো জামে মসজিদ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%80-%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a7%8b-%e0%a6%ae%e0%a6%b8%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%a6/

Sunday, April 9, 2023

যেমন ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরী

যুবাইর ইসহাক

অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সাবেক মহাপরিচালক। লেখাপড়া করেছেন কওমি ও জেনারেল ধারায়। শিক্ষকতাও করেছেন উভয় ধারাতেই। এক বর্ণাট্য জীবন শেষে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ গত শুক্রবার সাত এপ্রিল ইফতারের মুহূর্তে ইন্তেকাল করেন।

জন্ম

অধ্যাপক জোবায়ের আহমদ চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা রোডস্থ বাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা আবদুর নূর। তিনি প্রখ্যাত আলেম ও শায়খে কৌড়িয়ার বিশিষ্ট খলিফা ছিলেন।
তার মাতা কারী রুহেলা খানম চৌধুরী।

শিক্ষা

অধ্যাপক জোবায়ের আহমদ পিতার কাছে ১৯৬৬ সালে মৌলভীবাজারের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।
পরবর্তীতে ঢাকার আশরাফুল উলূম মাদরাসা, জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগ মাদরাসা ও জামিয়া হোসাইনিয়া আরাবিয়া গহরপুর মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। ১৯৭২ সালে জামেয়া আনোয়ারুল উলুম বরুণা মাদরাসা থেকে ১ম স্থান অধিকার করে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি সোনামুড়ি আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল সমাপ্ত করেন।

কর্মজীবন

অধ্যাপক জোবায়ের আহমদ কর্মজীবনে বহু মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। লেখাপড়া সমাপ্ত করে, ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনার মৌ মাদরাসার মধ্য দিয়ে তার শিক্ষকতা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে মৌলভীবাজার ডিগ্রী কলেজে ইসলামিয়াত ও ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার জামেয়া দ্বীনিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় অংশ নেন। তিনি সেখানে সদরুল মুহাদ্দীস ছিলেন। ১৯৯৫ সালে বর্ষিজোড়ায় হাফিজিয়া মদীনাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এই মাদরাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কমলগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস মুন্সিবাজারের শায়খুল হাদিস হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারি মহাপরিচলকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৬ সালে বেফাকের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ হন, ২০২২ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনীতি

অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ ছাত্রজীবনে জমিয়তে তোলাবায়ে আরাবিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০২১-২২ সেশনে দলের সিনিয়র আমির হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। ২০২৩ সালে খেলাফত মজলিসের আমির নির্বাচিত হন, আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেন।

পরিবার

অধ্যাপক জোবায়ের আহমদ চৌধুরী ১৯৭৬ সালে বর্ষিজোড়া টিলাবাড়ির ডা: মাওলানা আ.ফ.ম আবদুল বারীর কন্যার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ফুফাতো বোনের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিবাহ হয়। সাংসারিক জীবনে তিনি চার ছেলে-তিন মেয়ের বাবা।

রচনা

মাওলানা জোবায়ের আহমদ ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে তাফসীর গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইফা থেকে প্রকাশিত তারযুমানুস সুন্নাহ ২য় খণ্ডের অনুবাদ করেন। তাছাড়া তিনি ইসলামী বিশ্বকোষের একজন অনুবাদ ও নিবন্ধকার ছিলেন।

কেমন ছিলেন তিনি

বেফাকের সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ যোবায়ের ফাতেহকে জানান, ‘অধ্যাপক জোবায়ের আহমদ পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। অফিসের সবগুলো শাখায় তার জানাশোনা ছিল। আমি তাকে অল্প দিন পেয়েছি। অফিসিয়াল কাজে তার মধ্যে দক্ষতার কোন ঘাটতি ছিল না।’

খেলাফত মজলিস মৌলভীবাজার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা জিয়া উদ্দীন ফাতেহকে বলেন, ‘মাওলানা জোবায়ের আহমদ ছিলেন বিচক্ষণ,শিক্ষাবিদ, নীতিতে অটল। কোনো অনিয়ম মেনে নিতে পারতেন না। তার জীবন যাপন ছিল খুব সহজ, স্বাভাবিক। সহজে তার সঙ্গে মেশা যেত। কোনো বিষয়ে আলোচনা করা যেত।সাংগঠনিক হিসেবে কর্মঠ, কর্মীবান্ধব ও আন্তরিক ছিলেন।

মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরীর ছাত্র মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ জানান, ‘আমাদের উস্তাদ সদালাপী ও আন্তরিক ছিলেন। সহজে আপন করে নিতেন যে কাউকে। শিক্ষক হিসেবে দক্ষ ও যোগ্য ছিলেন। তার প্রতিভা ছিল বহুমূখী, সফল সংগঠক, দক্ষ রাজনৈতিক ও যোগ্য শিক্ষক। তার আচরণে বংশীয় আভিজাত্য প্রকাশ পেত।’

মাওলানা জোবায়ের চৌধুরীর ছেলে ইমতিয়াজ আহমদ চৌধুরী মুরাদ ফাতেহকে বলেন, ‘আমাদের বাবা সদাসর্বদা দ্বীনের প্রতি উৎসর্গিত ছিলেন। হাদীস কীভাবে সহজে মানুষ বুঝতে পারে, এ চেষ্টা করেতেন। হাদীসের উপর একটি গবেষণাগ্রন্থ তৈরি করেছিলেন, যা প্রকাশ করে যেতে পারেন নি।

‘পিতা হিসেবে আমরা তাকে আদর্শবান পেয়েছি। তিনি আমাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা, সত্যের উপর অটলতার শিক্ষা দিতেন। ব্যক্তিজীবনে প্রচারবিমুখ ছিলেন। বাসায় এলে আমাদের সময় দিতেন। দূরে থাকলেও নিয়মিত খোঁজ নিতেন।’

জানাজা ও দাফন

৮ এপ্রিল বিকেল তিনটায় মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরীর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তাকে বর্ষিজোড়া টিলাবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

The post যেমন ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরী appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a6%9b%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%95-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%93%e0%a6%b2%e0%a6%be/

Wednesday, April 5, 2023

কেমন ছিলেন মুফতি নূর আহমদ

যুবাইর ইসহাক

মুফতি নূর আহমদ ছিলেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস ও প্রধান মুফতি। তিনি মুফতি আযম ফয়জুল্লাহ ও মুফতি আহমাদুল হকের সাহচর্য পেয়েছেন। হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ ৩৮ বছর। একটি কর্মব্যস্ত জীবন শেষে গত ৩১ মার্চ শুক্রবার ভোররাতে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।

জন্ম

মুফতি নূর আহমদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চেছুরিয়া গ্রামের চৌধুরীপাড়ায় ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুস সামাদ ও মাতা আরেফা খাতুন।

লেখাপড়া 

মুফতি নূর আহমদ চার বছর বয়সে মাওলানা আবদুল মালেক রহ. -এর কাছে লেখাপড়ার হাতেখড়ি করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তের পর ১৩৭১ হিজরিতে হাটহাজারী মাদরাসায় ‘কানয’ জামাতে ভর্তি হন। হাটহাজারীতে তিনি ‘কানয’ জামাত থেকে ‘দাওরায়ে হাদীস’ পর্যন্ত লেখাপড়া করে। সেসময় মুফতি আযম ফয়জুল্লাহ, মুফতি আযমে সানি আহমদুল হকসহ প্রসিদ্ধ ও জ্ঞানী আলেমের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে তার দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত হয়।

কর্মজীবন

দাওরা ও তাফসির সমাপ্ত করে হাটহাজারী মাদরাসায় খেতমতের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। কর্মজীবনের পাশাপাশি তখন তিনি ইফতার তামরিনও করতেন।
১৯৬৪ সালে মুফতি ফয়জুল্লাহ নির্দেশে মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলূম বাথুয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছর বাথুয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৪ সালে পুনরায় হাটহাজারী মাদরাসায় মুফতি ও মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ হন। সে থেকে পরবর্তী ৩৮ বছর হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। এ সময় তিনি ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতি, শিক্ষাসচিব, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

রচনা

মুফতি নূর আহমদ বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধানের উপর অনেক ফতোয়া লিখেছেন। তাছাড়া সমকালীন অনেক ভ্রান্ত মতবাদ ও ধর্মীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রায় ত্রিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। উর্দু ভাষায় ছয়খণ্ডে সংকলিত ফতোয়া সমগ্র ‘আশরাফুল ফতাওয়া’ তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

পরিবার

মুফতি নূর আহমদ মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলূম বাথুয়া মাদরাসায় শিক্ষক থাকাকালীন হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক মুহতামিম মাওলানা হামেদ রহ.-এর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পরিবারে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন।

কেমন ছিলেন তিনি

মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, ‘হুজুর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত শব্দ বলা সম্ভব নয়। তিনি সাধাসিধে দরবেশী জীবন যাপন করেছেন। জ্ঞানে তার গভীরতা ছিল। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন অত্যন্ত একনিষ্ঠ।’

মুফতি নূর আহমদের ছেলে মাওলানা মঞ্জুর আহমদ জানান, ‘আব্বা প্রচুর ব্যস্ততার ভেতরেও পরিবারকে সময় দিতেন। ছেলেমেয়েদের শাসনের প্রয়োজন হলে হেকমতে বুঝাতেন। তিনি সরল মানুষ ছিলেন, মনে হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না। সবসময় আত্মীয়স্জবনের খোঁজ নিতেন। ছুটিতে গ্রামে গেলে সহজে সবার সঙ্গে মিশতেন।
সাধারণত তার তাহাজ্জুত ছুটতো না। শেষের তিন বছর খুব অসুস্থ ছিলেন। এই অসুস্থতার ভেতরও তাহাজ্জুদ ও সুন্নতের প্রতি যত্মবান ছিলেন তিনি।’

হাটহাজারী মাদরাসার ইফতার ছাত্র মাওলানা আবদুর রহমান জানান, ‘হুজুর শেষদিকে এসে খুব বেশি ক্লাস নিতে পারেন নি। আমরা তার রুমে গিয়ে দরস করতাম। তিনি বাহরুল উলুম নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। উর্দুতে দরস দিতেন। তার দরস কেবল কিতাবে সীমাবদ্ধ থাকতো না। বরং পাশাপাশি অনেক প্রসঙ্গিত আলোচনা করতেন। আমল আখলাকের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন।’

মুফতি নূর আহমদ অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রেখে গেছেন। শুক্রবার বাদ আসর হাটহাজারী মাদরাসার মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ হাটহাজারী মাদরাসার কবরস্থান ‘মাকবারায়ে জামেয়ায়’ দাফন করা হয়।

The post কেমন ছিলেন মুফতি নূর আহমদ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a6%9b%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%ab%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%a8%e0%a7%82%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%a6/