Tuesday, May 31, 2022

‘জাতীয় কবি’র গেজেট চেয়ে দশ আইনজীবীর নোটিশ

ফাতেহ ডেস্ক:

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

তাদের পক্ষে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আসাদ উদ্দিন।

আসাদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন,  কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বলা হয়ে থাকে, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি হয়ে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে কোন প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কোনো মৌখিক বিষয় নয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাকে একটি বাড়ি দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডি-লিট উপাধীতে ভূষিত করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। সবকিছুরই ছবি, তথ্যসহ লিখিত দলিল আছে। কিন্তু নির্মম সত্য এটিই যে, ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে সরকারি ঘোষণার কোনো লিখিত দলিল বা প্রমাণক নেই।

বাংলাদেশের দু’টি আইনে জাতীয় কবি হিসাবে নজরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি আয়োজনে তাকে জাতীয় কবি হিসাবে উল্লেখও করা হয়। কিন্তু সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি। এমন স্বীকৃতি কালের পরিবর্তনে মুছে যেতে পারে।  তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চাদালতের আইনজীবী হিসাবে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশ প্রদানকারি আইনজীবীরা হলেন— মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান, মো. রেজাউল করিম এবং মো. আলাউদ্দিন।

নোটিশ প্রাপ্তির ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলা হয়েছে।

The post ‘জাতীয় কবি’র গেজেট চেয়ে দশ আইনজীবীর নোটিশ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a7%9f-%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a7%87%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%9f-%e0%a6%9a%e0%a7%87%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%a6/

বুস্টার ডোজ সপ্তাহ ৪-১০ জুন

ফাতেহ ডেস্ক:

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ৪ থেকে ১০ জুন থেকে দেশব্যাপী টিকার বুস্টার ডোজ সপ্তাহ পালন করা হবে। এই সময়ে ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব সবাই বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।

মঙ্গলবার (৩১ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৪ থেকে ১০ জুন দেশব্যাপী করোনা টিকার বুস্টার ডোজ সপ্তাহ পালন করা হবে। এই সাতদিনের যেকোনো দিন নিকটবর্তী টিকাকেন্দ্রে গিয়ে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে। তবে, টিকাকেন্দ্রে আসার সময় সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ক্যাম্পেইনের আওতায় ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব সব নাগরিক তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ করোনা টিকা নিতে পারবেন। দ্বিতীয় ডোজের চার মাস পর বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে।

অধিদপ্তর জানায়, দেশের সব টিকাকেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে টিকাদান শুরু হবে। এক্ষেত্রে সঙ্গে টিকা কার্ড বাধ্যতামূলক। এছাড়াও বুস্টার ডোজের পাশাপাশি, করোনা টিকার স্বাভাবিক কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

করোনা প্রতিরোধে টিকা একটি কার্যকর সমাধান উল্লেখ করে অধিদপ্তর জানায়, টিকার সম্পূর্ণ সুফল পেতে অবশ্যই তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিতে হবে।

 

The post বুস্টার ডোজ সপ্তাহ ৪-১০ জুন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a1%e0%a7%8b%e0%a6%9c-%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b9-%e0%a7%aa-%e0%a7%a7%e0%a7%a6-%e0%a6%9c%e0%a7%81/

Monday, May 30, 2022

বন্যার্তদেরকে নগদ অর্থ দিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

ফাতেহ ডেস্ক:

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে সিলেটে বন্যা কবলিত গোয়াইনঘাট এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

সোমবার (৩০ মে) হযরত শাহ জালালের পূণ্যভূমি খ্যাত সিলেটে বন্যা কবলিত এলাকা গোয়াইনঘাটের দুই স্থানে দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়।

সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান এর তত্ত্বাবধানে একটি প্রতিনিধি দল এই নগদ অর্থ বিতরণ করেন।

এ সময় মহাসচিব বলেন, জলে ও স্থলে মানুষের উপর যত বিপর্যয় আসে তা তাদের কৃতকর্মের ফল। আজ সমাজে বেহায়াপনা, অন্যায়, পাপাচার বেড়ে যাওয়ায় আল্লাহ মহামারি, রোগব্যাধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে সতর্ক করছেন। আমাদেরকে এসব দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে তওবাহ করতে হবে। সবর করে গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে হবে। তাহলেই আল্লাহ আমাদেরকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে হেফাজত করবেন।

তিনি আরো বলেন, এখন বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসন পক্রিয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা প্রয়োজন। এটা আল্লাহর আদেশ। এ অবস্থায় সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদেরকে দুর্গত জনগণকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। এখানে কোন ধরনের রাজনীতি নয়, সংকীর্ণতা এবং বিভেদ নয়। আসুন সব ভেদাভেদ ভুলে দুর্গতদের রক্ষায় এগিয়ে আসি। বিশেষভাবে তিনি তাদের সাহায্যার্থে সরকার ও দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহবান জানান।

এছাড়া প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আত্মমানবতার সেবায় নিবেদিত একটি অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং এ দেশের আলেম-উলামারা বরাবরই দেশের যে কোনো দূর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে সর্বোচ্চ মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সাথে সাথে যে সমস্ত সংগঠন ও মানবিক ব্যক্তি বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি তিনি আন্তরিক মুবারকবাদ জানান।

পরিশেষে নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ সকল দূর্যোগ, বালা-মুসিবত থেকে দেশ-জাতিকে হেফাজতের জন্য এবং দেশের সর্বাত্মত সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করেন।

প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, নায়েবে আমীর মাওলানা মোবারক উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী।

স্থানীয় উলামায়ে কেরামদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা জুনায়েদ বিন ইয়াহইয়া, মাওলানা জিল্লুর রহমান, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মুফতী আলী আকরাম, মাওলানা খালিদ বিন সাজিদুর রহমান, মাওলানা শাহজাহান, মাওলানা নুর মোহাম্মদ, হাফেজ সাজিদ বিন সেলিম প্রমূখ।

The post বন্যার্তদেরকে নগদ অর্থ দিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%97%e0%a6%a6-%e0%a6%85%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%a6/

১ জুন থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ফাতেহ ডেস্ক:

১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ আহরণ ছাড়াও দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার আওতায় সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পামপার্মিট বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্লানেলের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি বছর এই সময়ে সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখে বন বিভাগ।

উল্লেখ্য, সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস মাছের প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী খালে থাকা বেশির ভাগ মাছের ডিম থেকে জন্ম নিয়ে থাকে মাছ। যার ফলে এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে সুন্দরবনের নদী খালে যেমন মাছ বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অন্যান্য প্রাণি ও উদ্ভিদসহ সব জীবের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বন সংশ্লিষ্টরা।

 

The post ১ জুন থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a7%a7-%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac/

কাল থেকে খুলনা থেকে ১৮ রুটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

ফাতেহ ডেস্ক:

নসিমন-করিমনসহ হাইকোর্ট নির্দেশিত অবৈধ যানবাহন মহাসড়কে চলাচল বন্ধের দাবিতে খুলনা থেকে ১৮টি রুটে ১ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি এ ধর্মঘট আহ্বান করেছে।

সোমবার (৩০ মে) রাতে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট নির্দেশনা দেওয়ার পরেও মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করেনি প্রশাসন। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সর্বশেষে গত ২৬ মে মিটিং করে প্রশাসনকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়, যা ৩১ মে শেষ হচ্ছে। এ মেয়াদে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন না হলে ১ জুন থেকে ১৮টি রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

The post কাল থেকে খুলনা থেকে ১৮ রুটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%96%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a7%a7%e0%a7%ae-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%9f/

৪ দিনের অভিযানে বন্ধ হলো ১১৪৯ অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল

ফাতেহ ডেস্ক:

মাত্র চার দিনের অনিবন্ধিত ক্লিনিক বিরোধী চলমান অভিযানে সারাদেশে এক হাজার ১৪৯টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সোমবার (৩০ মে) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ১৪৯টি অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে বন্ধ করা হয়েছে ২৮৬টি প্রতিষ্ঠান। যেখানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় বন্ধ করা হয়েছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া ঢাকার বাইরে বন্ধ করা ৮৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামে ২৮৬টি, রাজশাহীতে ১৩৫টি, রংপুরে ১৪টি, ময়মনসিংহে ১২১টি, বরিশালে ৬৫টি, সিলেটে ৩৫টি এবং খুলনায় রয়েছে ৩০৩টি।

৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গত ২৬ মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চারটি নির্দেশনা জারি করা হয়।

 

The post ৪ দিনের অভিযানে বন্ধ হলো ১১৪৯ অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a7%aa-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a7%a7/

Sunday, May 29, 2022

২২ আরোহী নিয়ে মাঝ-আকাশে নেপালের বিমান নিখোঁজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভ্রমণের সময় মাঝ-আকাশ থেকে নিখোঁজ হয়েছে নেপালের একটি প্লেন। নিখোঁজ এই প্লেনটি দেশটির তারা এয়ারলাইন্সের এবং বিমানটিতে ১৯ জন যাত্রী ও ৩ ক্রুসহ মোট ২২ জন আরোহী ছিলেন।

নেপালের অভ্যন্তরীণ রুটের এই ফ্লাইটটি পোখরা থেকে জমসমের দিকে যাচ্ছিল। তবে ভ্রমণের সময় মাঝ-আকাশেই নিখোঁজ হয় বিমানটি। রোববার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার সকালে মাঝ-আকাশে হঠাৎই হারিয়ে যায় নেপালের একটি ফ্লাইট। তারা এয়ারলাইন্সের এই বিমানটি ১৯ জন যাত্রী নিয়ে পোখরা থেকে জমসমের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছ, সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে হঠাৎই বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটির ১৯ যাত্রীর মধ্যে ৪ জন ভারতীয় ও ২ জন জাপানি নাগরিক। অন্যরা নেপালি নাগরিক। এছাড়া বিমানটিতে ৩ জন ক্রুও ছিলেন। তবে চারজন ভারতীয় ছাড়া যাত্রীদের বাকি দু’জনকে বিদেশি বললেও তারা আসলে কোন দেশের নাগরিক সেটি এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

তারা এয়ারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পোখরা থেকে ১৯ জন যাত্রী নিয়ে ভ্রমণের সময় ৯এন-এইটি বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের রোববার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, কানাডিয়ান-নির্মিত টুইন অটার প্লেনের মাধ্যমে মূলত আকাশপথে সেবা দিয়ে থাকে তারা এয়ারলাইন্স। নেপালের পুলিশ কর্মকর্তা রমেশ থাপা বলছেন, নিখোঁজ টুইন অটার এই বিমানের কোনো তথ্য এখনও নেই এবং অনুসন্ধান চলছে।

এদিকে নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। তল্লাশির জন্য নেপাল সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

 

The post ২২ আরোহী নিয়ে মাঝ-আকাশে নেপালের বিমান নিখোঁজ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a7%a8%e0%a7%a8-%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%b9%e0%a7%80-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9d-%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a7%87/

হিজাব পরায় কর্ণাটকের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে হিজাব-বিরোধীদের অহেতুক কর্মকাণ্ড। হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যাওয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হলো বেশ কয়েকজন ছাত্রীদের। ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ভিডিও ভাইরাল হলে সমাবেশে নামে সংখ্যালঘুদের সংগঠ্নগুলো।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ এবং সরকারি নিয়ম সবাইকে মানতে হবে। তাই বিতর্কে না জড়িয়ে পড়াশোনায় মন দেয়া উচিত ছাত্রীদের।

আদালতের নির্দেশ এবং সরকারি নিয়ম মেনে দুই দিন আগেই ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হলে সকলকে পোশাকবিধি মানতেই হবে। অর্থাৎ হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যাবে না। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই শনিবার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

সরকারের ‍নির্দেশ নিয়ে অসন্তোষ দেখা ‍দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে, পোশাকবিধির আড়ালে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানায়, তাদের নতুন নির্দেশিকায় মুসলিমদের শিক্ষালাভে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্ত এতে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ মুসলিম শিক্ষার্থীরা।

১৫ মার্চ কর্ণাটক হাইকোর্ট জানায়, ইসলাম পালনে হিজাব অপরিহার্য নয়। শিক্ষাঙ্গনে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে যে সমস্ত আবেদন জমা পড়েছিল, তাও খারিজ হয়ে যায়। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। শীর্ষ আদালতও কর্ণাটক সরকারের ফরমানে স্থগিতাদেশ দেয়নি। যার কারণে হিজাব পরে আর শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারেন না শিক্ষার্থীরা।

সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

 

The post হিজাব পরায় কর্ণাটকের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ac-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a3%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6/

‘সন্ধ্যা ৭টার পর নারীদের কর্মক্ষেত্রে রাখতে বাধ্য করা যাবে না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের উত্তরপ্রদেশে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সন্ধ্যা ৭টার পর কর্মক্ষেত্রে রাখতে বাধ্য করা যাবে না বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। গতকাল শনিবার (২৮ মে) উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নারীরা লিখিত অনুমতি না দিলে সন্ধ্যা ৭টার পর এবং ভোর ৬টার আগে তাদের কর্মক্ষেত্রে আসতে বাধ্য করা যাবে না।

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার তথ্যমতে, এ সময়ের মধ্যে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাড়ি কিংবা অফিসে এসে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। নারীরা যদি রাতে অফিসে এসে কাজ করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে তাদের জন্য যাতায়াত এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নিয়োগকারী সংস্থাকে।

এ ছাড়া কাজের জায়গায় চারজনের বেশি নারীকর্মী থাকলে তবেই তাদের অফিসে ডাকা যাবে। এই নিয়মের আমান্য হলে, তা শ্রম আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

সূত্র : আনন্দবাজার

The post ‘সন্ধ্যা ৭টার পর নারীদের কর্মক্ষেত্রে রাখতে বাধ্য করা যাবে না’ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a7%ad%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0/

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০

ফাতেহ ডেস্ক:

বরিশালের উজিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জন হয়েছে। এ সময় আহত আরও ১৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রোববার (২৯ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সানুহার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আর্শাদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে শনিবার রাতে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে যমুনা লাইন পরিবহনের একটি বাস। উজিরপুরের সানুহার এলাকা অতিক্রমকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে থাকা গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে বাসের ভেতর থেকে আট যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে। আহত ১৮-২০ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওসি আলী আর্শাদ আরও বলেন, সকাল সোয়া ৯টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের পাশের ডোবা থেকে আরও এক জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত আরেক বাসযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। হতাহতদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

 

The post বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%9c%e0%a6%95-%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%98%e0%a6%9f%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%a8%e0%a6%bf/

Friday, May 27, 2022

মুসলিম চিন্তাবিদদের বয়ানে ইসলামী নারীবাদ

রাকিবুল হাসান নাঈম:

৯ অক্টোবর, ২০০৮। মালয়েশিয়ার মুসলিম নারীবাদী সংগঠন সিস্টার্স ইন ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিনা ওয়াদুদ মধ্য ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে নারী-পুরুষের একটি জামাতে ইমামতি করেন। বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেম ও ফকিহদের ভাবিয়ে তুলে। তারা এর প্রতিবাদ জানান। জবাবে আমিনা ওয়াদুদ বলেন, ‘ইমামতি কেবল পুরুষেরই অধিকার নয়, বরং নারীদেরও অধিকার।’ তার এই বক্তব্যটির ইসলামি ফিকহি তুরাসের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও আধুনিক নারীবাদী বক্তব্যের সঙ্গে বেশ সাজুয্যপূর্ণ। নারীবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ওপর ভিত্তি করে যে নির্মিত যে নিয়ম, তিনি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

এটাকে বলা হয় পশ্চিমা নারীবাদের ইসলামীকরণ। তবে মুসলিম নারীরা তা স্বীকার করতে চান না। লেবাননী গবেষক ও লেখিকা দিলাল বাজরি বলেন—‘ইসলামী নারীবাদ পশ্চিমা নারীবাদের সমস্ত চিন্তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ ও নিজের ভেতর ধারণ করলেও তারা সেটা অস্বীকার করে বলে, এটা ইসলাম।’ ‘ইসলামী নারীবাদ’ পরিভাষাটির প্রথম ব্যবহার দেখা যায় ১৯৯২ সালে তেহরান থেকে প্রকাশিত নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘জানান’ -এ দুজন ইরানি লেখিকা জিবা মীর হুসাইনি ও আফসানা নজমাবাদীর লেখায়। এরপর ১৯৯৬ সালে সৌদি লেখিকা মী ইমানির বই ‘ইসলাম ও নারীবাদ’ প্রকাশিত হয়, যেখানে এই পরিভাষাটি ব্যবহার হয়।

পশ্চিমা চিন্তায় নারী

১৮৩৭ খ্রি. ফরাসি দার্শনিক ও ইউটোপীয় সমাজবাদী চার্লস ফুরিয়ে প্রথম ‘নারীবাদ’ শব্দটির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। নারীবাদ(feminism) এবং নারীবাদী (feminist) শব্দদুটি ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ সালে। যুক্তরাজ্যে ১৮৯০ সালে, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ সালে। অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী নারীবাদী শব্দের উৎপত্তিকাল ১৮৫২ এবং নারীবাদ শব্দের ক্ষেত্রে তা ১৮৯৫। কেমব্রিজ ডিকশনারী বলেছে, নারীবাদী দর্শন এমন একটি দর্শন যা একজন নারী ছাড়া একজন পুরুষের সাথে মানুষের অভিজ্ঞতার সম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান করে। এটি এমন এক দর্শন, যা বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পুরুষের আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে চায়।

আমরা গ্রীক সাহিত্যসহ পুরুষ র্দাশনিকদের চিন্তায় নারী সত্ত্বাকে ভাবতে থাকে বিকৃত সত্ত্বা হিসেবে পাই। উদাহরণস্বরূপ গ্রীক সাহিত্যিক হেজডস মনে করেন, নারীর পৃথিবীতে আগমনের আগে পৃথিবীতে কোন অশান্তি ছিল না। প্যানডোরা নামক নারী পৃথিবীতে দু:খ, দূর্দশা ও অশান্তি নিয়ে আসে। ইলিয়ড এবং ওডিসি মহাকাব্যের লেখক অন্ধ মহাকবি হোমার নারীকে প্রাকৃতিক ভাবে অসহায় ও দূর্বল ভেবেছেন। নারী প্রশ্নে বিকৃত চিন্তার ক্ষেত্রে প্লেটো, এরিস্টটল, রুশো কিন্তু পিছিয়ে ছিলেন না। প্লেটো তার বিখ্যাত “The Republic” গ্রন্থে নারীর জন্মকে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেন। তার মতে, যারা পাপ করবে তারা পরজন্মে নারী হিসেবে জন্ম নেয় অর্থাৎ পাপী ও খারাপ লোকের আত্না থেকে নারীর জন্ম। অবশ্য প্লেটোর দ্বিতীয় গ্রন্থ “The Laws” এ নারী প্রশ্নে ইতিবাচক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।

অন্যদিকে, জীব বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল নারী প্রশ্নে ভয়ানক ধারনার প্রকাশ করেন। তার মতে, নারী হলো “Defective male” । মানুষ একটি লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য জন্ম গ্রহন করে কিন্তু পুরুষ সৃষ্টিতে কোন উপাদানের ঘাটতি হলে তখনই “Defective male” বা অর্পূনাঙ্গ পুরুষ হিসেবে নারীর জন্ম হয়। তার মতে, প্রজননের ক্ষেত্রে পুরুষ “প্রাণ” এবং নারী হলো বস্তুু। শিশুর শরীরের আকৃতি গঠনে সকল ভূমিকা পুরুষের কারণ, পুরুষ তাপ উৎপাদন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, নারীর গুন হলো নীরবতা ও ধৈর্য্য। তৎকালীন গ্রীক সমাজে একটি কথা প্রচলিত ছিল, যে নারী কম দেখে, কম বুঝে, কম জানে এবং ঘরের বাইরে কম বের হয় তারাই হলো উত্তম নারী। হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত এই আদর্শ নারীর ধারণা কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে বিদ্যমান। নারী প্রশ্নে ফরাসি বিপ্লবের শ্লোগান ”সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা” স্রষ্টা, সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রবক্তা রুশো যে ধারনা ব্যক্ত করেন তা সত্যিই হতাশাব্যঞ্চক। রুশো নমনীয়তা, কোমলতা, সৌন্দর্য ও সংযমী হওয়াকে নারীর গুন বলেছেন। তিনি বলেন, পুরুষ যুক্তি শিখবে নারী নয়; কেননা যুক্তিবাদী পুরুষের জন্য আবেগময় নারী অধিক মাত্রায় গ্রহণযোগ্য। তিনি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলেন।

আধুনিক দার্শনিক দেকার্ত মানুষের দেহ ও মনের দ্বৈতবাদী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, মানুষ হচ্ছে দেহ ও মনের সম্মিলিত সংগঠন। দেহ হচ্ছে মনহীন বস্তু আর মন হচ্ছে বস্তুহীন সত্তা। দেহ আর মন প্রকৃতিগতভাবে পরস্পরবিরোধী। মন হচ্ছে সচেতন সত্তা আর দেহ হচ্ছে অসচেতন সত্তা। মানুষ দ্বৈতসত্তার অধিকারী হলেও ‘সচেতনতা’ মানুষকে প্রকৃতি থেকে স্বতন্ত্র করেছে, উচ্চতর স্থানে আসীন করেছে। আধুনিক দার্শনিকদের এই দ্বৈতবাদী ব্যাখ্যা সামাজিক পর্যায়ে বৈষম্যকে (যেমন নারী-পুরুষ বৈষম্য, মানব প্রকৃতি বৈয়ম্য, মালিক-উৎপাদনকারীর বৈষম্য) উৎসাহিত করেছে।

নারীবাদী আন্দোলনের সূচনা

নিউটন বলেছেন, সমস্ত কর্মের বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে যা তাদের তীব্রতার সমানুপাতিক। নারীবাদী ফরাসি লেখিকা, বুদ্ধিজীবী, অস্তিত্ববাদী দার্শনিক, রাজনৈতিক-কর্মী সিমোন দ্য বোভোয়ার এই তত্ত্বটিকে প্রমাণ করেছেন তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো নারীবাদী গ্রন্থ ‘দি সেকেন্ড সেক্স’ বইয়ে । এই বইটির মাধ্যমে সিমোন গোটা পৃথিবীতে নারীবাদী তত্ত্বের এক নতুন প্রতিবাদী জোয়ার তৈরি করতে সমর্থ হন। তিনি বলেন, নারীদের অবশ্যই পৌরাণিক কাহিনী, কুসংস্কার এবং পবিত্র বিশ্বাসগুলি পরিত্যাগ করতে হবে যা শ্বেতাঙ্গ পুরুষকে নারীদের নিপীড়ন ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করে। নারীকে যদি প্রকৃত নারী হয়ে থাকতে হয়, তাহলে তাকে নারীত্ব ত্যাগ করতে হবে। কারণ নারীত্বের ধারণাই মহিলাদের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। পাশাপাশি তাকে বিয়ে ও মাতৃত্বও পরিত্যাগ করতে হবে।

এখান থেকেই সবকিছু পরিবর্তন হয়। নারীবাদী আন্দোলন শুরু হয়। একতরফা সংগ্রামে পুরুষের বিরুদ্ধে দুটি দাবি তোলা হয়। এক. লিবারেল: এতে কর্মসংস্থান, সুযোগ এবং ব্যক্তির অধিকারে সমতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। দুই. রেডিক্যাল: এতে বলা হয়, সামাজিক কাঠামো, যেমন বিজ্ঞান, ভাষা এবং ইতিহাস, এগুলি পুরুষ-পক্ষপাতমূলক কাঠামো, এবং এই কাঠামোগুলি অবশ্যই নারীর মতামত অনুসারে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

আত্মকেন্দ্রিকতা এবং লিঙ্গ দ্বন্দ্ব

তবে আবদুল ওহহাব মাসিরি ‘নারীবাদ’ শব্দটিকে নারীবাদের অভিব্যক্তি হিসাবে গ্রহণ করতে নারাজ। তিনি বিশ্বাস করেন, এই শব্দটি নারীর স্বাধীনতাকে প্রকৃত অর্থে প্রকাশ করে না। বরং পুরুষদের সাথে বিরোধের অবস্থা এবং পশ্চিমের ধারণানুযায়ী নিজেদেরকে পণ্য হিসাবে প্রকাশ করে। এতে মহিলা এমন এক অবস্থায় আবির্ভূত হয়, যে নিজেকে ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। পুরুষকে শত্রু ভাবে।

ইসলামী সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক এবং প্রভাষক মালাক আল-জুহানি দুটি মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন। এক. আধুনিক নারীবাদী প্রশ্ন যা পুরুষতান্ত্রিক জগতে নারীর প্রতি নিকৃষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করার জন্য চালু করা হয়েছিল। দুই. লিঙ্গ সম্পর্কে উত্তর-আধুনিক প্রশ্ন, যেটিকে মাসিরি পুরুষের সাথে নারীর দ্বন্দ্বের একটি অনিবার্য ফলাফল হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

জেন্ডার বিশেষ অভিধান অনুসারে একবচন, যা একটি ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ জাতি বা মূল। তারপর জেন্ডার ফরাসি ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে এর অর্থ হয় লিঙ্গ। জিনস হলো জেন্ডারের আরবি অনুবাদ। শব্দটি মনোবিজ্ঞানী রবার্ট স্টলার দ্বারা প্রবর্তিত। তার মতে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোর কারণে লিঙ্গ বৈষম্য ঘটে। বায়োলজিক্যাল কারণে নয়। নারী-পুরুষ পার্থক্যটি সমাজের তৈরী। সিমোন দ্য বোভোয়ার বলেন, একজন নারী নারী হয়ে জন্মায় না, বরং সমাজ তাকে নারী বানায়।

ইসলামী নারীবাদ এবং জেন্ডার পাঠ

মরক্কোর গবেষক ইকরাম আদনানি বিশ্বাস করেন যে, আধুনিক বিপ্লব মানবাধিকারের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি নারীবাদী মতবাদের ভিত্তি সূচনা করেছে। জর্ডানের চিন্তাবিদ ফাহমি জাদান তার সমালোচনামূলক-বিশ্লেষণমূলক গবেষণায় প্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বে নারীবাদী উত্তরণের চিত্রের বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বিরোধিতা করেছেন সে সমস্ত নারীবাদীদের, যারা ইসলামি পরিবেশ ও বক্তব্য ছেড়ে পশ্চিমা পরিবেশ ও বক্তব্য গ্রহণ করেছে।

মুসলিম নারীবাদীদেরকে ফাহমি জাদান দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক. যাদের মধ্যে সংস্কারবাদী প্রবণতা আছে। তারা ইসলামিক পোশাকে নারীবাদকে সাজানোর প্রচেষ্টা চালায়। দুই. যাদের মধ্যে প্রত্যাখানবাদী প্রবণতা আছে। চরম উদ্বেগের বিষয় হলো, তারা ইসলামের বিধানকে প্রত্যাখ্যান করে। কুরআনিক টেক্সট, হাদিস কিছুই মানে না, বরং এগুলো ভুল সাব্যস্ত করতে চায়। প্রত্যাখ্যানবাদী নারীবাদীরা পশ্চিমের অ-ইসলামিক স্থানগুলিতে স্বাধীনতার প্রলোভনের সহজ শিকারে পরিণত হয়। তাদের সকলেই শৈশব থেকেই মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

জর্ডানের চিন্তাবিদ তার বইয়ে ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রত্যাখ্যানবাদী নারীবাদের চারটি উদাহরণ দিয়েছেন। এক. সুইডিশ বাঙালি তসলিমা নাসরিন। দুই, ডাচ সোমালি আয়ান হিরসি। তিন. কানাডায় উগান্ডার অভিবাসী ইরশাদ মানজি। চার. সবশেষে জার্মান-তুর্কি নাজলা কিলিক। তার বইতে তিনি তাদের সবচেয়ে বিশিষ্ট ধারণা সহ তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তসলিমা নাসরিন বিশ্বাস করেন, মুসলিম বিশ্বের ধর্ম এবং রাষ্ট্র একজন মহিলাকে তার স্বামীর যৌনদাসীতে পরিণত করেছে। আয়ান হিরসি ইসলামিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের বিরুদ্ধে বিপ্লবের আহ্বান জানিয়েছেন, সালমান রুশদির মতো কুরআনকে একটি ঐতিহাসিক টেক্সট বলে বিবেচনা করেছেন। ইরশাদ মানজি বিশ্বাস করতেন, ইসলামিক ব্যাখ্যা একটি উপজাতীয় চিন্তাধারা দ্বারা সেট করা হয়েছিল এবং তাকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি নাজলা কিলিক পর্দার বিরোধিতা করেছিলেন। বলেছিলেন, ধর্মই নারীকে বাধা দেয়। ইউরোপীয় আইন নয়।

উপসংহার

ডঃ হেবা রউফ ইজ্জাত লিঙ্গ এবং সমতা বিষয়ক কুরআনের একটি মননশীল পাঠ উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলাম নিপীড়নকারী পুরুষতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ফলেই ইসলাম পুরুষের উত্তরাধিকারে পুরুষ ও নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ কোরানের ভাষায় চিন্তা করার যোগ্য জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল মানুষ। এখানে কোনো বিরোধ নেই। নারী এবং পুরুষ যেই হোক, বলা হয়, সে একজন মানুষ।

লিঙ্গের মধ্যে সমতা কিছু বিষয়ে নিরঙ্কুশ এবং অন্যান্য বিষয়ে আপেক্ষিক। যেমন শারীরীক কাঠামো এবং শক্তিতে পার্থক্য আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পার্থক্য নেই। যেমন ইমাম ইবনে হাজম আল-আন্দালুসী বলেন, মানবজাতির প্রতি নবীর মিশন ছিল উভয় লিঙ্গের জন্য একটি অভিন্ন মিশন। নারী-পুরুষের প্রতি আল্লাহ ও রাসূলের বক্তব্য ছিল এক। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া কোথাও পুরুষকে নারী থেকে আলাদা করা হয়নি।

সুরা নিসার ৩৪নং আয়াত, যেখানে আল্লাহ বলেছেন—‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’। এখানে অভিভাকত্বকে ‘কাওয়ামাহ’ শব্দ দ্বারা বিধৃত করা হয়েছে। সাধারণ কাওয়ামাহ একজ মুমিনের গুণ, চাই সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। এর অর্থ হলো, সবকাজ শরিয়তের নিয়মমাফিক করা, ন্যায় ও ইনসাফ করা। এসব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান। উল্লিখিত আয়াতে কাওয়ামাহর অর্থ, নারীর উপর পুরুষকে কর্তৃত্ব নয়, বরং বিবাহের মাধ্যমে পুরুষের উপর যে পারিবারিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা যেন সে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে পালন করে। তার দায়িত্ব দুটি। এক. পরিবারের বস্তুগত ও নৈতিক চাহিদাগুলি পূর্ণ করা। দুই. তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া এবং ইনসাফের সঙ্গে তাদেরকে পরিচালিত করা।

 

The post মুসলিম চিন্তাবিদদের বয়ানে ইসলামী নারীবাদ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%a8/

তসলিমার নারীবাদ : অধিকার আন্দোলন নাকি পশ্চিমা অনুকরণ

খালিদ মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ:

বাংলাদেশের সামাজিক পটভূমিতে তসলিমা নাসরিন নব্বইয়ের দশকে যতটা আলোচিত ছিলেন বহুলাংশে তার হ্রাস ঘটেছে। তবে সম্পূর্ণরূপে স্তিমিত যে হয়নি, তার সরল প্রমাণ হলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন সহ কিছু কিছু গণমাধ্যমে তার কলাম প্রায়ই ছাপছে । তিনি নিজেও লিখছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে । তসলিমা নাসরিন সহ হাতেগোনা যে কয়জন লেখক এককালে নারীবাদ ও মানবতাবাদ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছিলেন , তাদের মানস চিন্তার আতুড়ঘরে বিরাজমান ছিল পশ্চিমা চিন্তাধারা । তবে অদ্ভূত ব্যাপার হলো, বিগত কয়েক দশকে, পশ্চিমের সামাজিক পটভূমিতে, নারীবাদী চিন্তাধারার যে অচলাবস্থা ও বিপর্যয় সামনে উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে চিন্তাধারার নবায়ন ঘটছে পশ্চিমে । এবং নারীবাদের ফলিত বাস্তবতা নিয়ে সমালোচনাও করছেন অনেকে । হেইঞ্জ কিরচফ heinz kirchoff হাযারাতুল ইসলাম ‘ নামক পত্রিকায় ‘নারীর কর্মসংস্থান ‘ বিষয়ক একটি রচনা লিখেছেন । তিনি বলেন, ‘একজন নারীকে সন্তান লালন-পালন , পরিবারের পর্যবেক্ষণ ও গৃহস্থালি কাজ করতে হয় ; এ কাজগুলো এতোটা কষ্টের যে , একজন নারীকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। এর বাইরে নারীকে আরো কাজ চাপিয়ে দেওয়া একধরনের অমানবিকতা। গত শতকে শিশুশ্রম আমাদের সমাজে যেমন ঘৃণ্য ছিল, আজকের বাস্তবতায় নারীশ্রম তেমনি ঘৃণিত ।’( ১)

তসলিমার নারীবাদ প্রশ্নে প্রাথমিকভাবে জ্য পল সার্ত্রের আলোচনা প্রাসঙ্গিক । কারণ, তসলিমা সহ নারীবাদীদের চিন্তার মৌলিক সূত্র আমরা সার্ত্রের অস্তিত্ববাদে নিহিত দেখি । উনিশ শতকে জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশে ‘নয়ালিজম’ বা ধ্বংসবাদের ধারণা দেন । তিনি মনে করতেন, পৃথিবীর সবকিছুই অর্থহীন, মহাজাগতিক যাত্রায় মানুষের কোন লক্ষ্য নেই । নিটশে পশ্চিমের মানস জগতে যে হতাশাবাদের জন্ম দিয়েছিলেন, তা উপশমের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্ত্রে ও তার ভাবনা কেন্দ্রীক । নিটশে যখন মানুষের অস্তিত্বকে অর্থহীন ও নেতিবাচকতায় পর্যবসিত করেছিলেন, সার্ত্রে তখন বললেন, মানুষের অস্তিত্ব অনিবার্য । আর এ অস্তিত্ব আছে বলেই আমরা জীবনের অর্থ খুঁজি।

তবে বিবেচ্য বিষয় হলো, সার্ত্রে ছিলেন নাস্তিক, আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না, ইহজাগতিকতার পরে মানুষের চরম পরিণতি বা পরকালীন ধারণার সাথে সার্ত্রের কোন সম্পর্ক ছিল না । এজন্য ইসলাম সহ প্রচলিত ধর্মসমূহতে মানবজীবনের যে অর্থ ও সফলতার কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, সার্ত্রে তা অগ্রাহ্য করেছেন । মানবজীবনের অর্থ অনুসন্ধানের দায়িত্ব তিনি মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন । সার্ত্রে বলেন, যদিও মৃত্যু পরবর্তী কালে মানুষের কোন অর্থ নেই, তথাপি, প্রত্যাহিক যাপনে মানুষকে কিছু অর্থ খুঁজতে হয় । করণীয় ও বর্জনীয়ের হিসাব কষতে হয় তাকে । জীবনের অর্থ, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের যে ধারণা সার্ত্রে দিয়েছেন তসলিমা নাসরিনের মানসপট বোঝার জন্য তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।

সার্ত্রে একজন ব্যক্তির ভালো-মন্দ বা করণীয়-বর্জনীয়ের নির্বাচন ক্ষমতা মানুষের কাধে চাপিয়ে দিয়ে বলেন,

১ . তুমি যা করতে চাও তা করার ক্ষমতা তোমার থাকতে হবে ।
২ . তুমি যা করেছ তা যদি স্বাধীন ভাবে সম্পন্ন হয় তবে তা জায়েজ ও অনুমোদিত । কারণ, তোমার নির্বাচন ক্ষমতার বাইরে কোন কাজকে হারাম বা নিষিদ্ধ করার নির্ণায়ক নেই। (২)

এসব কথার একটি নির্ভুল ফলাফল হচ্ছে, একজন স্বাধীন ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি যা কিছু করবে তাই বৈধ । সার্ত্রে তার বক্তব্যের শেষে, স্থানে স্থানে, ফিওদর দস্তয়েভস্কির বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরেছেন, আমরা যদি পৃথিবী থেকে ঈশ্বরকে বর্জন করি , সব কাজই আমাদের জন্য বৈধ ও হালাল ।

সার্ত্রে বিয়েতে বিশ্বাসী ছিলেন না, নারী সঙ্গী হিসেবে আমৃত্যু তার পাশে ছিল ‘ বিউভয়’ । তারা উভয়েই বহুগামিতায় অভ্যস্ত ছিলেন । যখন, যার সাথে ইচ্ছা হয় শয়ন করতেন । এক জীবনে তসলিমা নাসরিন অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়েছেন , জৈবিক চাহিদা মিটিয়েছেন অনেকের দ্বারা । প্রথম জীবনে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেও এখন তিনি বিবাহের চরম বিরোধী । তিনি বলেন, নারী তো সেদিন-ই পরাধীন হয়ে যায় যেদিন বিবাহ করে। সবচে’ বড় ব্যাপার হলো – এসব প্রথাবিরুদ্ধ অনুষঙ্গগুলো তিনি তার রচনাবলীতেও স্থান দিয়েছেন। এসব তার কেন্দ্রীয় চিন্তা-ভাবনার বাস্তবায়নের প্রতি স্বচ্ছ ইঙ্গিত বহন করে । যে চিন্তাধারায় মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে বিধ্বস্ত করে ‘স্বাধীন ইচ্ছার ‘ কথা ঘোষণা করা হয়, তা অবশ্যই বিপজ্জনক । এ বিপদ পশ্চিমের পরিবার ব্যবস্থাকে ক্ষয়িষ্ণু করেছে, তসলিমা নাসরিন নিজেও পারিবারিক শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সার্ত্রে ও তসলিমা নাসরিনদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রকল্প যেই সমাজ ব্যবস্থার প্রতি-ক্রিয়াশীল রুপ , তা চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি ।এজন্য পশ্চিমের সামাজিক ইতিহাসে যতো ধর্ম ও মতাদর্শের বিকাশ ঘটেছিল, সেসবের অনুসন্ধান করতে হবে, নারীদের সেখানে কোন চিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে ।

পশ্চিমে সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম হচ্ছে -খৃষ্টধর্ম । তবে আমরা নারী বিষয়ক বাইবেলীয় ধ্যান-ধারণার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব পরবর্তী কালের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থার উপর । কারণ, বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার বিপর্যয় থেকে উৎসারিত হয়েছে এসব মতাদর্শ । অষ্টম শতকের সূচনাকাল থেকে চতুর্দশ শতকের শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল মধ্যযুগীয় ধর্মীয় ইতিহাসের বসন্তকাল । এ সময়টিতে মোটাদাগে একটি প্রবণতা লক্ষ্যণীয় যে , স্পেনে মুসলমানদের রাজত্ব চলাকালে কবিতা ও কল্পনাধর্মী উপন্যাস সামাজিক অবস্থাকে আলোকজ্জ্বল আভায় উদ্ভাসিত করলেও খৃষ্টজগতে নারী জাতি ছিল নিগ্রহের শিকার।

‘ক্রাইসষ্টম’ উচ্চমার্গের একজন সাধু-পুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, তিনি নারী জাতিকে একটি অনিবার্য অমঙ্গল, একটি স্বাভাবিক প্রলোভন, কাম্য অনর্থ, পারিবারিক বিপদ, মারাত্মক আকর্ষণ এবং চিত্রিত পাপ বলে ঘোষনা করেছেন।

‘টারটুলিন’ বলতেন , নারী জাতি শয়তানের দ্বার, নিষিদ্ধ বৃক্ষের মোহন উন্মুক্তকারী , ঐশী আইন প্রত্যাখানকারী , খোদার প্রতিবিম্ব – মানুষের ধ্বংসকারী ।’ (৩)

নারী বিষয়ে সে যুগের ধর্মীয় মানস উদ্ধার করার জন্য ব্যাপক উপাত্তের উপস্থিতি রয়েছে। এখানে দুটিই উদ্ধৃত করা হলো। একটি সামাজিক আবহ অনুধাবন করার জন্য প্রাথমিক ভাবে এতটুকুই যথেষ্ট মনে করছি। যদিও দৃঢ় অবস্থানের জন্য আরো বেশি উপাত্তের প্রয়োজন। এতটুকু থেকে অবশ্যই ধারণা করা যায় যে , সার্ত্রে ছিলেন এ আবহের আবশ্যিক ফসল। তবে বিশেষভাবে তসলিমা নাসরিনের নারী ভাবনাকে সামনে আনতে হলে ‘ ভারতীয় ধর্ম-দর্শন ‘ পর্যালোচনা সমানভাবে জরুরি। কারণ, তসলিমা নাসরিন পশ্চিমা প্রভাবিত হলেও সে এ অঞ্চলের মানুষ, এখানে তার বেড়ে ওঠা। এতদঅঞ্চলের ধর্মীয় সামাজিক পরিস্থিতি তার মানস জগতকে আন্দোলিত করবে, এটি অতি সহজাত। এ অঞ্চলের একজন উচ্চ শ্রেণীর ব্রাহ্মণের জন্য যথেচ্ছা স্ত্রী গ্রহণের অনুমোদন স্বীকৃত। এছাড়াও রয়েছে বিধবা বিবাহ আইনের কঠোরতা. সতিদাহ প্রথার মতো অমানবিকতা। রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংস্কারের পরও এ অমানবিকতার উপস্থিতি কমবেশি ছিল। এ প্রেক্ষাপট থেকে তসলিমা নাসরিনের মানসপট বিশ্লেষণ সহজ হয়। মুসলিম সমাজে তসলিমা নাসরিনের বেড়ে ওঠার প্রসঙ্গ এখানে অযথার্থ। কারণ, শুধুমাত্র মুসলিম সমাজে বেড়ে ওঠাই কাউকে ইসলামি আদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে না, এজন্য জরুরি ইসলামি শিক্ষার সাথে গভীর সম্পর্ক , যা কোন কালেই তসলিমা নাসরিনের হয়ে উঠেনি।

ইসলাম নারীদের সামাজিক অধিকার দেয়নি – একথা যেমন অবাস্তব, তেমনি নারীর শিক্ষা-দীক্ষা , মর্যাদা ও মানবিক ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও অজ্ঞতা। রাসুল সা. ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় নারীদেরকে এমনসব অধিকার প্রদান করেছেন , যা প্রাক-ইসলামি যুগে ছিল অকল্পনীয়। ইসলাম প্রদত্ত এসব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা কালের অগ্রগতির সাথে পূর্ণ মূল্যায়িত হবে । সমুদয় আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা ও ভূমিকা পালনে ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের সঙ্গে নিখুঁত ভাবে সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলাম যেভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যার সীমা নিরূপণ করেছে, তদ্রুপ, সকলের প্রতি নিরপেক্ষ আচরণকে আবশ্যিক করে দিয়েছে। ফলে বহু বিবাহ প্রথার মধ্যে নিপুণ ভারসাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, কুরআনের যে আয়াতে সর্বোচ্চ চারটি বিবাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার পরের আয়াতেই এর তাৎপর্যকে স্বাভাবিক মাত্রায় স্থাপন করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, কিন্তু, তোমরা যদি তাদের সকলের সাথে ন্যায় ও সমতার আচরণ করতে না পারো, তবে তোমরা একটি মাত্র বিবাহ করবে।

নারী জাতির জন্য পর্দা অবরোধ মূলক কোন ব্যবস্থা নয়, বরং চুড়ান্ত সন্মান। যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর সামাজিক ইতিহাসে বিরল। এ কথা শুধু আমরা কেন, পশ্চিমের লোকেরাও বলে । ভন হ্যামার বলতেন , নারীদের অন্তঃপুর হলো পবিত্র স্থান; অপরিচিতদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ । এজন্য নয় যে, রমনী জাতি অবিশ্বাস্য । বরং প্রথা ও সমাজব্যবস্থা যে পবিত্রতা তাদের প্রতি আরোপ করেছে, সেজন্য। গোটা মুসলিম সমাজে নারীদের প্রতি যে মাত্রায় সম্মান দেখানো হয়েছে, তা বিশদ ভাবে প্রমাণ সাপেক্ষ। “(৪)

এভাবে নারী বিষয়ক ইসলামি ধারণাগুলোকে শব্দে শব্দে ব্যাখ্যা করলে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব-ই যাহির হবে , এজন্য নির্মিত হবে অগণিত শব্দের জগত, শব্দের বুননে সুশোভিত হবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। নিতান্ত হালের গবেষণা সমূহের মধ্যে সৈয়দ আমীর আলীর ‘the sprite of Islam ‘ এর পাঠ ও বিবেচনা প্রাসঙ্গিক । তাছাড়া ড . মুস্তাফা সিবাঈ তার ‘ আল মারআতু বাইনাল ফিকহি ওয়াল কানুন’ বইয়ে পশ্চিমের নারীবাদী ব্যবস্থার অন্তঃসার শূন্যতা তুলে ধরেছেন । বিদ্যমান সমাজের বিবেচনা অনেককেই ভুল পাঠের সম্মুখীন করে। একটি সমাজ কাঠামোতে অবিচার যখন ব্যাপকতা লাভ করে, তার দায় তখন সীমাবদ্ধ থাকবে সে সমাজের লোকায়ত ধারণার সাথে। সুতরাং, কোন মুসলিম সমাজে নারীর প্রতি অবহেলা প্রদর্শিত হলে সে দায় সমাজের , ইসলামি আদর্শের নয় । ইসলামি আদর্শকে এ দায়ে অভিযুক্ত করা তখনই সম্ভব, যখন সমাজ আদর্শ ভিত্তিক হবে। এজন্যই সমাজকে ইসলামি আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করা ভূমিকা মূলক কাজ।

সঙ্গত কারণেই তসলিমা নাসরিনের ‘নারী ভাবনা ‘কে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ ইতিবাচক ভাবে নেয়নি। কারণ, যেই সংকট উদ্ভব ও বিকাশ লাভ করেছে পশ্চিমে , বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থাকে করেছে বিপর্যস্ত তার দায়ভার প্রাচ্য বহন করবে না। ক্যাথলিক চার্চের সংকটকে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় সংকট হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা একপ্রকার আগ্রাসন । সে আগ্রাসনের নির্ভুল শিকার আজকের মুসলিম সমাজ ও তার বিশেষায়িত শ্রেণী । আধুনিক ইউরোপের সামাজিক ইতিহাস ও তার সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমার সকল অভিজ্ঞতা তাদের সমাজের পরিপার্শ্বিকতার ফসল। রেনেসাঁ পরবর্তী উদারনীতিবাদ, মার্কসবাদ, অস্তিত্ববাদ , ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ সহ মানবতা সংশ্লিষ্ট ধারণাগুলোর সূতিকাগারে রয়েছে তাদের জীবন-ব্যবস্থাগত সংকট। তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাসে এমন কোন মতাদর্শের উপস্থিতি ঘুণাক্ষরেও পাওয়া যাবে না, যা নারী মুক্তির কথা বলেছে, মানবতার ব্যাপক কল্যাণ সাধন করেছে। কিন্তু, সে সংকট মুসলমানদের মোকাবেলা করতে হয়নি কোন কালেই। বরং , ইসলাম নারী মুক্তির ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, মানবতার যুগান্তকারী নযীর স্থাপন করেছে। সুতরাং, যে রোগে আমি ও আমার সমাজ বিপদ সংকুল হয়নি, সে রোগের দাওয়াই গ্রহণ করা আমার মূর্খতা ও ব্যর্থতা। বরং , ক্ষেত্র বিশেষে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

আধুনিক কালে সমস্যার এ কেন্দ্রীয় ধারণা সামনে ছিল না বলে অনেক মতাদর্শকে যেমন ইসলামি করণের প্রবনতা দেখা গেছে, তেমনি ইসলামি জীবনব্যবস্থার উপর প্রশ্ন ছুড়তে উদ্যত হয়েছে কিছু শ্রেণী। বিবর্তনবাদের চরম বিকাশের যুগে ইসলামকে এর সাথে শ্লেষ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে , অপব্যাখ্যা ও ধূর্ততার আশ্রয় নিয়ে। এসবের পেছনে দুটি কেন্দ্রীয় সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায় :

১ . জাতি সত্ত্বার স্বকীয় বিশ্বাস ও কর্মধারা সম্পর্কে অনবহিত থাকা। কারণ, কোন বিষয়ে মানুষের জ্ঞানশূণ্যতা তাকে অবিশ্বাস ও বিরোধিতার দিকে ঠেলে দেয়। আরবী প্রবাদ আছে, ‘ অজানা বিষয়ের প্রতি মানুষের বিদ্ধেষ লালন করার প্রবনতা তার সহজাত।’

২ . পশ্চিমা সংস্কৃতির উন্মত্ত আগ্রাসন প্রাচ্যকে দীর্ঘকাল যাবত দুর্বল করে রেখেছিল। ফলে তারা চিন্তা ও বিশ্বাসগত স্বকীয়তা ভুলে প্রশ্নহীন ভাবে পশ্চিমের অনুকরণ করতে থাকে। দিনশেষে, আলো আঁধারির প্রদোষে , কল্পনার আরশিতে যে চেহারা প্রতিফলিত হয় , তা পশ্চিমের। নির্বাসিতা লেখিকা তসলিমা নাসরিন যে আয়নায় চেহারা প্রদর্শনী করেন, তা পশ্চিমের । প্রাচ্যের নয় ।

তথ্যসূত্র :
১ . আল মারআতুবাইনাল ফিকহি ওয়াল কানুন, ড মোস্তফা আস সিবাঈ। পৃ . ১৯৭
২ . Man Marxism and Islam, ali shariati, page – 44
৩ . The sprite of Islam, sayeed amir ali , page,- 133
৪ . প্রাগুক্ত, ১৩৪ পৃ .

 

The post তসলিমার নারীবাদ : অধিকার আন্দোলন নাকি পশ্চিমা অনুকরণ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a4%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%86/

নারীবাদ ও নারী অধিকার: কিভাবে পার্থক্য করবেন ?

খালিদ মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ:

বিশ্বব্যাপী ফেমিনিজমের সাংগঠনিক তৎপরতা চালু হবার পর থেকে একটা ভুল বোঝাপড়া জারি আছে অনেকের মনে; তারা ভাবতে শুরু করেছে যে, নারীবাদ হয়তো কমবেশি নারী অধিকারের প্রতিনিধিত্ব করছে। ফেমিনিজমের সঙ্গে নারী অধিকারের মৌলিক কিছু তফাৎ নিয়ে আমরা আলাপ করব সামনে–

সমাজের অ-ব্যবস্থাপনার প্রতি তীব্র অনাস্থা থেকে শুরু হয় নারীবাদের সফর; কিন্তু দিনশেষে তুরাস, উলামা এবং প্রতিষ্ঠিত চিন্তার প্রতি একরোখা জেদ হয়ে ওঠে তাদের মঞ্জিলে মকসুদ। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে, ভোটাধিকার সহ ইউরো-খৃষ্টীয় জুলুমের প্রতিবাদ হিসেবে ফেমিনিজমের সাংগঠনিক সূচনা হয়। কালক্রমে তাদের ইশতেহারে যুক্ত হতে থাকে বিচিত্র দাবি-দাওয়া। একটা নোক্তা মাথায় রাখতে হবে, নারীদের কিছু সংকট, সীমাবদ্ধতা এবং অপ্রাপ্তি আছে; আন্তরিক ভাবেই এগুলোর সুরাহা হওয়া জরুরি। তবে নারীবাদ প্রতিনিয়ত সংকট-সীমাবদ্ধতার যে সিলসিলা নির্মাণ করতেছে তা ‘নারী অধিকার’ না বরং ‘শ্রেণী-রাজনীতি’। Heywood বলেছেন, ‘Feminist thought’ can be broadly defined as the ideology of trying to advance the social role of women’ (১)

নারীবাদ রাজনৈতিক অভিলাষের সূক্ষ্ম চোরাবালিতে আটকে গেছে, যত দৌড়ঝাঁপ করবে ততো সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। বিপ্লবীদের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা ফেমিনিজমের প্রধান প্রেরণা হয়ে উঠছে। কেট মিলেটের sexual politics এর ভাষা ও বয়ান খেয়াল করলে দেখবেন, নারীবাদ খুব সূক্ষ্মভাবে পুরুষের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে; লৈঙ্গিক বৈষম্যকে পুঁজি বানিয়ে নিছক ক্ষমতায়ন না বরং পুরুষের সবধরনের কর্তৃত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।

ফেমিনিজম তার বুদ্ধিবৃত্তিক রসদ উৎপাদন, যোগান ও সরবরাহ করে কখনো মার্ক্সীয় সাহিত্যের (class struggle) শ্রেণী-প্রশ্ন থেকে, কখনো সাঈদের ওরিয়েন্টালিজমকে ঘিরে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাপানে ফেমিনিষ্টরা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে, পুরুষ প্রতিনিধির বিপরীতে নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে নারী-প্রার্থীদের। ফলে আইনসভায় নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে নাটকীয় হারে। ওয়েলশ (Welsh) এসেম্বলিতে ৫০% নারী আইনসভায় জায়গা করে নিয়েছে। অন্যান্য এসেম্বলিতেও বাড়ছে সংখ্যা। (২) ফলে নারীবাদকে ‘নারী অধিকারের’ এজেন্ট ভাবলে ভুল করবেন। নারী অধিকার আর নারীবাদ এক জিনিস না। ফেমিনিজমের রয়েছে নিজস্ব আদর্শিক-রাজনৈতিক পরিচয়।

নিছক পুরুষতন্ত্রকে দোষারোপ করা ফেমিনিজমের স্বভাব; অথচ পুরুষতন্ত্রের সাথে নারী অধিকারের সত্তাগত কোন সঙ্ঘাত নেই। অন্যান্য সংকট-সমস্যার মতো নারী-সমস্যা একক-অবিমিশ্র কোন সূত্রের উপর দাঁড়িয়ে নেই যে, স্রেফ সংকটের ঐ নির্দিষ্ট সুত্রের সুরাহা করে ফেললেই নারীমুক্তি ঘটে যাবে। শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাষ্ট্র এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যা স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংকট উৎপাদন ও সুরাহার পেছনে কমবেশি ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অধিকাংশ ফেমিনিষ্টরা এই নোক্তা ধরতে পারে না। এজন্য দেখবেন শুধু ইসলামিস্ট কেন, আদর্শবাদী সচেতন লোকজন নারীবাদরে ভালো চোখে দেখে না। মার্ক্সিস্ট-নিউ মার্ক্সিস্ট এবং প্রগতিশীল নারীও একে স্রেফ বিলাসিতা হিসেবে দেখে। ফেমিনিজম আদতে সমাজ জীবনে ‘এনার্কিজম’ (নৈরাজ্যবাদ) চর্চা করে। তাদের এই নৈরাজ্য অথবা তন্ত্রহীনতা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক রুপ ধারণ করছে।

বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী ও জাতির মধ্যে এখনও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা চালু আছে; পেশা, পরিবেশ ও জীবনধারা হিসেবে হয়তো তা উপযোগী তাদের জন্য, সেখানে পুরুষরা সমতা পাচ্ছে না। তাদের কি উচিত পুরুষবাদ চর্চা করা ?

৩.

বার্ট্রান্ড রাসেল মার্ক্সবাদ নিয়ে তার power কেতাবে লিখছেন যে, ‘গোঁড়া অর্থনীতিবিদগণ ব্যক্তির অর্থনৈতিক স্বার্থকে সামাজিক বিজ্ঞানের মৌল প্রণোদনা হিসেবে অনুমান করেছেন। তাদের এ জাতীয় অনুমান ভূল। কার্ল মার্ক্সও এ দলের অন্তর্ভুক্ত।’ রাসেল মার্ক্সবাদের গোড়ার গলত নিয়ে কিছুদূর আলাপ করে যে নোক্তা দিলেন, সমাজ জীবনের একক স্বার্থকে মৌলিক ভাবা যাবে না, এই পয়েন্ট ধরে মার্ক্সরে খারিজ করলেন, সেই পয়েন্টে সে নিজেই পরাস্ত। তিনি নিজেও কার্ল মার্ক্সের মতো সামাজিক বিজ্ঞানের মৌল প্রণোদনা হিসেবে ‘ক্ষমতা-স্পৃহা’ এবং ‘ক্ষমতার অসম বন্টন’রে অনুমান করছেন। সামগ্রিকভাবে সমাজরে বিচার করতে পারেন নাই। ফ্রয়েড সাহেবও নিছক যৌনতাকে মৌলিক সংকট হিসেবে হাজির করেছেন। নারী অধিকার এবং ফেমিনিজমের মৌলিক তফাৎ মুলত এখানেই; অধিকার নিয়ে সেকুলার কিংবা ইসলামিস্ট সবাই আলাপ তুলতে পারে, অন্যদের সচেতন করতে পারে, কিন্তু একে মৌল প্রণোদনা ভেবে ‘শ্রেণীবিদ্ধেষ’ জাগিয়ে তোলা আর যা কিছু হোক, অধিকার সচেতনতা না।

ক্ষমতা এবং অর্থনীতি ইসলামের (كلي ) সামগ্রিক প্রস্তাবনার (جزء اضافي ) শাখাবিশিষ্ট একটা অঙ্গ। জুযঈ ইদাফি এজন্য যে, এর আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়েও শাস্ত্রাকারে আলাপ করা যাবে। এজন্যই দেখবেন , ইসলামের ইকতেসাদ / economy নিয়ে শাস্ত্র হিসেবে পাঠ পর্যালোচনা হয়। ইভেন ইসলামের নিরঙ্কুশ শাখা (جزء حقيقي ) (যেমন যাকাত) নিয়েও বহু আলাপ আছে। ইসলামে সমাজ এবং (تدبير المنزل) গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের মতো শাখা-শাস্ত্রে নারী-পুরুষ এবং পরিবার শৃঙ্খলা নিয়ে আলাপ করা হয়েছে, একে মৌল প্রণোদনা ভাববার সুযোগ নেই। বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করে রাজনৈতিক দাসত্ব জিইয়ে রাখলে সেই মুক্তিকে মুক্তি বলে না।

ইসলামে নারীর অধিকার আছে, তবে বিশেষ শ্রেণীর অধিকার রক্ষার নামে বিভেদের রাজনীতি ‘আসাবিয়াতের’ অংশ। ইসলামে যেকোন সংকটের সুরাহা সঙ্গবদ্ধতা ছাড়া অসম্ভব, খারেজি-প্রচেষ্টা ফেৎনার দ্বার খুলে দেয়। এজন্য ইসলাম গরিবকে সহনশীলতা শেখানোর পাশাপাশি ধনীকে নির্দেশ দিয়েছেন যাকাতের। দানের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন। নারীর যাবতীয় দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে তুলে দিয়ে নারীকে পুরুষের ‘দায়িত্বশীলতার মূল্যায়ন’ করতে বলা হয়েছে। সমাজের যৌথ-প্রক্রিয়ায় কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ না, নির্ভরতা জরুরি।

৪.

নারী কেন নারীবাদকে অপছন্দ করে? ফেমিনিজম নারী অধিকারের প্রতিনিধিত্ব করে থাকলে, নারী তো স্বাধিকার বিরোধী হতে পারে না। এন্টি-ফেমিনিজম কোন নতুন জিনিস না, গত শতকের সত্তরের দশকে marabel morgan এর ‘The total woman’ বইটি বেষ্টসেলার হয়েছিল। কয়েক বছর আগেও পশ্চিমে ‘নারীবাদ বিরোধী প্ল্যাকার্ড’ নিয়ে সোসাল মিডিয়া উত্তাপ ছড়িয়েছিল নারীরা। তাদের প্ল্যাকার্ডে বিচিত্র বাক্য প্রদর্শিত হয়েছিল– “I don’t need feminism because I believe in equality not entitlement and supremacy । আবার কেউ লিখেছিল, I don’t need feminism because it reinforces the men as agent and women as victims dichotomy। বিশেষত, তারা নারীদের ঐতিহ্যিক প্রথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তারা মনে করেন, মা হিসেবে ঘরে থাকার অধিকার ক্ষুন্ন করছে ফেমিনিজম, আমরা যথার্থ-মা হতে চাই; একটা সুস্থ পরিবার ও সমাজ গড়ে তুলবো। (৩)

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে BBC news ‘why so many young women don’t call themselves feminist’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল Dr Christina scharff এর তৈরিকৃত। তিনি আশ্চর্য হয়ে বলেন, “‘So it’s perhaps unexpected that the identity ‘feminist’ has not gained more popularity among young women in the western world” পশ্চিমা সমাজে ফেমিনিজম এখনও যুবতী নারীদের আকর্ষণ করেনি, মুসলিম সমাজে এটি ঢের বেশি জটিল। ইত্যাদি কারণে নারীবাদ এবং নারী অধিকারকে আলাদা করেই দেখতে হবে।

তথ্যসূত্র:

১. Assess the Impact of Feminist Thought on Contemporary Politics, Keith Smith, 2007
২. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২
৩. ‘Women against feminism’, Cathy young,2014

 

The post নারীবাদ ও নারী অধিকার: কিভাবে পার্থক্য করবেন ? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%93-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%ad/

মুসলিম নারীবাদ: সূচনা ও বিকাশ

আবদুর রহমান দাখিল:

বাংলা নারীবাদ শব্দের ইংরেজি রূপ Feminism মূলত Feminine মূল থেকে উদ্ভূত। এর ফরাসি ও জার্মান প্রতিশব্দ Feminin, অর্থ—নারী বা স্ত্রীলিঙ্গ। শব্দটির মূল উৎপত্তি লাতিন শব্দ Femina থেকে। ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটি পরিভাষা হিসেবে সর্বপ্রথম ফরাসি ভাষায় প্রবেশ করে ১৮৩৭ সালে, ‘ম্যান-ওমেন’ শিরোনামে লিখিত একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭২ সালে। উক্ত প্রবন্ধে ফেমিনিজম শব্দটি এমন নারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল, তারা আচার-আচরণে পুরুষের অনুকরণ করে। কিন্তু ফেমিনিজম শব্দটি এই অর্থে ব্যবহারের আগে থেকেই নারীবাদী আন্দলনের সূচনা হয়েছিল। এমনকি প্রথম দিককার নারীবাদীরা নিজেদের ফেমিনিস্ট শব্দে পরিচিত করত না।

নারীবাদ বা ফেমিনিজম শব্দটির পারিভাষিক সংজ্ঞা নিয়ে রয়েছে তুমুল বিতর্ক। পশ্চিমা নারীবাদী চিন্তক ও লেখিকা বেল হোকস বিষয়টি স্বীকার করে বলেন—‘নারীবাদী চিন্তার একটি কেন্দ্রীয় সমস্যা হচ্ছে এর একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সকলের ঐকমত প্রতিষ্ঠিত না হওয়া, কিংবা এমন কোনো সংজ্ঞা গ্রহণ করতে না পারা যা আমাদের সকলের চিন্তাকে প্রতিফলিত করে। একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় একমত হতে না পারলে তত্ত্ব ও মতাদর্শ হিসেবে এর শক্ত ভিত্তি আমরা দাঁড় করাতে সক্ষম হব না এবং এর সূত্র ধরে কোনো সফল ও পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পে আমরা মনোনিবেশ করতে পারব না।’

সংজ্ঞা নিয়ে এই মতপার্থক্যের মূল কারণ হচ্ছে স্থান ও কাল ভেদে নারীবাদী আন্দলন একেক সময় একের রূপ ধারণ করেছে এবং সময়ে সময়ে তাতে নানা বিবর্তন ও সংস্কার এসেছে। তবে সংজ্ঞা নিয়ে এই বিতর্ক সত্ত্বেও নারীবাদ বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে—নারীর ওপর পারিবারিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন করা।

উল্লেখ্য যে, আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ইসলামী নারীবাদ হলেও আমরা পাশ্চাত্য নারীবাদ দিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। কারণ ইসলামী নারীবাদ পশ্চিমা নারীবাদের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও মূলত এ দুইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ‘ইসলামী নারীবাদ’ পরিভাষাটির প্রথম ব্যবহার দেখা যায় ১৯৯২ সালে তেহরান থেকে প্রকাশিত নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘জানান’ -এ দুজন ইরানি লেখিকা জিবা মীর হুসাইনি ও আফসানা নজমাবাদীর লেখায়। এরপর ১৯৯৬ সালে সৌদি লেখিকা মী ইমানির বই ‘ইসলাম ও নারীবাদ’ প্রকাশিত হয়, যেখানে এই পরিভাষাটি ব্যবহার হয়।

প্রচলিত পশ্চিমা নারীবাদ ও ইসলামী নারীবাদের মূল চিন্তা ও দাবিতে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকলেও দাবি-উপস্থাপন ও কর্মপন্থায় কিছু ভিন্নতা রয়েছে। লেবাননী গবেষক ও লেখিকা দিলাল বাজরি বলেন—‘ইসলামী নারীবাদ পশ্চিমা নারীবাদের সমস্ত চিন্তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ ও নিজের ভেতর ধারণ করলেও তারা সেটা অস্বীকার করে বলে, এটা ইসলাম।’ নারীবাদ যেমন প্রচলিত সমস্ত প্রথা ও ধর্মকে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে দাবি করে, যা যুগ যুগ ধরে নারীকে নিপীড়িত শোষিত ও বঞ্চিত করার জন্যই তৈরি হয়েছে। ইসলামী নারীবাদের দাবিও একই। তবে সমস্যার মোকাবেলায় পশ্চিমা নারীবাদ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, সাম্য ইত্যাদির মতো লিবারেল ধারণাগুলোকে সামনে আনলেও ইসলামী নারীবাদ প্রাথমিকভাবে এর মোকাবেলা করতে চায় ভিন্নভাবে।

ইসলামী নারীবাদের মতে কোরআন ও হাদিসের সমস্ত প্রচলিত ব্যাখ্যা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা। ফলে কোরআন ও হাদীসকে নারীবাদের আলোকে অধ্যায়ন ও পুনর্পাঠ করতে হবে এবং নারীবান্ধব নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে। এই দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে ইসলামী নারীবাদ নতুনভাবে কোরআন-হাদিসের পাঠ ও ব্যাখ্যা করতে চায়। এই চিন্তার সূত্র খুঁজতে গেলে আমরা সন্ধান পাব নতুন আরেকটি ধারণার—যা ‘নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব’ নামে পরিচিত। পশ্চিমে ধর্মের বলয়ে থেকে বা ধর্মকে একেবারে প্রত্যাখ্যান না করে যারা নারীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, তাদের হাত ধরেই এই ধারণার উৎপত্তি। ফলে আমরা দেখতে পাই ইসলামী নারীবাদ শব্দটির আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই ‘ইহুদি নারীবাদ’ ও ‘খৃষ্টান নারীবাদ’— শব্দদুটির প্রচলন ছিল। এরা সবাই যদিও ধর্মের ভেতরে থেকে ধর্মের নারীবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেয়েছে, কিন্তু শেষ বিচারে প্রায় সবার পরিণতি হয়েছে ধর্মবিদ্বেষ থেকে নিয়ে ধর্মের বিবিধ বিধানের সরাসরি প্রত্যাখ্যান।

ইসলামী নারীবাদ কীভাবে একজন মানুষকে ধীরে ধীরে কুফর ও রিদ্দাহ পর্যন্ত নিয়ে যায়, তার বিররণ দিয়েছেন ড্যানিয়েল হাকিকাৎজু। তিনি পাঁচটি স্তর বর্ণনা করেন, যার একেকটি স্তর অতিক্রম করে করে চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছেন একজন মুসলিম নারীবাদী, সেখানে ধর্মের নানা বিধানকে সরাসরি অস্বীকার করেন। প্রথম ধাপে কিছু যৌক্তিক অভিযোগ দিয়েই শুরুটা হয়। মুসলিম পুরুষরা নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, নারীরা নিপীড়িত, নিগৃহীত। ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে কোনো কথা বলে না, কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না ইত্যাদি। বলাবাহুল্য যে, এমন সমস্যাগুলো কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তবে এর সমাধান কখনোই নারীবাদ নয়, বরং ইসলামের সঠিক জ্ঞানের চর্চা ও ইসলামী আইনের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু যখন এর সমাধান হিসেবে নারীবাদকে গ্রহণ করা হয়, তখন মূলত একটা সমস্যার সমাধানে তার চেয়ে বড়ো আরেকটা সমস্যাকে আমদানি করা হয়।

প্রথম ধাপে নারীর বিভিন্ন অধিকারের বিষয়ে নানা অভিযোগ আপত্তির পর দ্বিতীয় ধাপে এই ব্যাপারগুলো মতাদর্শিক রূপ নেয়। তখন এমন কিছু নতুন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, যা আসলে বাস্তবতা বিবর্জিত। যেমন অমুক কনফারেন্সে কেন শুধু পুরুষদের রাখা হল, নারীদের কেন রাখা হলো না, কেন নারীদের পর্দা, হিজাব, শালীনতা বিষয়ে পুরুষরা বলবে? ইত্যাদি। এ পর্যায়ে এসে সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ী করা হয় পুরুষতান্ত্রিকতা নামক এক অদৃশ্য জুজুকে। এই ধাপে আলোচনার কাঠামো গড়ে ওঠে এবং চালিত হয় পশ্চিমা নারীবাদী এবং লিবারেল অবস্থানকে কেন্দ্র করে। এ সময়ে নারীর প্রতি ইসলামের বিশেষ ও স্বতন্ত্র কিছু বিধান নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় তাদের। যেমন পর্দা, হিজাব, নারীর ঘরের বাইরে যাওয়া, সাধারণ কর্মক্ষেত্রে কাজ করা, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে অনেকটা অজ্ঞতা নিয়েই ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়।

তৃতীয় ধাপে যখন একজন নারীবাদী জানতে পারে যে, নারী-বিষয়ক এসব স্বতন্ত্র বিধানগুলো আসলেই শরীয়াহ নির্দেশিত, তখন ইসলামী জ্ঞানব্যবস্থা নিয়েই সে অভিযোগ তোলে। ইসলামী জ্ঞানের সিলসিলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা মুসলিম স্কলারদের পুরুষতান্ত্রিক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। কোরআন ও হাদিসকে নতুন করে নারীবাদী ব্যাখ্যায় এনে নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব উদ্ভাবনের প্রয়োজনীতা উপলব্ধি হয়। এই ধারাবাহিকতার শেষ থেকেই তৈরি হয় চতুর্থ ধাপ।

চতুর্থ ধাপে একজন মুসলিম নারীবাদী লক্ষ্য করে শুধুমাত্র কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যার মধ্যেই না, বরং সরাসরি কোরআন ও হাদিসের টেক্সটে সুস্পষ্টভাবে এমন কিছু বিষয় আছে, যা নারীবাদের মানদণ্ডে টিকে না। যেমন সুরা নিসার ৩৪নং আয়াত, যেখানে আল্লাহ বলেছেন—‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’। এমন অন্যান্য আয়াত, যেখানে অবাধ্যতার জন্য নারীদের বিছানা ত্যাগ ও তাদের মৃদু প্রহার করতে বলা হয়েছে, দুইজন নারীর সাক্ষ্যকে একজন পুরুষের সাক্ষ্যর সমান বলা হয়েছে, উত্তরাধিকার আইনে পুরুষের অংশকে দ্বিগুণ করা হয়েছেন, আকল ও ধর্মে নারীর অপূর্ণাঙ্গতার কথা বলা হয়েছে ইত্যাদি। এই ধাপে এসে যখন মুসলিম নারীবাদী দেখে যে, এসব বিষয়কে পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা বলে পার পাওয়া যাবে না, তখন সে সরাসরি এসব বিষয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যেমন মালয়েশিয়ার মুসলিম নারীবাদী সংগঠন সিস্টার্স ইন ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আমিনা ওয়াদুদের মতে— ‘কুরআনে বর্ণিত স্পষ্ট যেসব আয়াতের বিকল্প ব্যাখ্যা নারীবাদীরা খুঁজে পাচ্ছেন না, সেসকল আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। তিনি বলেন— ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন কিছু আয়াত পেয়েছি, যেগুলো অর্থ প্রকাশে অপর্যাপ্ত কিংবা অগ্রহণযোগ্য, যদিও সেসবের উপর অনেক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে ঐশী বাণী হিসেবে কুরআনের বিশেষ কিছু বক্তব্য সমস্যাযুক্ত মনে হবে, ‘সেখানে সুযোগ রয়েছে কুরআনের বক্তব্যকে প্রত্যাখান করার, জবাব দেয়ার, এমনকি ‘না’ বলার।

এভাবেই একজন মুসলিম নারীবাদী দিনশেষে সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। পঞ্চম ধাপে এসে তারা ধর্ম নয়, বরং সরাসরি স্রষ্টার উপর নানা অভিযোগ তুলে। যেমন, আল্লাহ যদি নারী ও পুরুষের ব্যাপারে সাম্যবাদী হন তাহলে নিজের ব্যাপারে কুরআনে কেন পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করলেন? আল্লাহ্ কেন প্রথমে আদমকে (আলাইহিস সালাম) তথা একজন পুরুষকে সৃষ্টি করলেন? কেন প্রথমে নারীকে সৃষ্টি করলেন না? শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন একজন পুরুষ? কেন নারী নন? কেন আল্লাহর ওয়াহি নারীর মাধ্যমে না এসে পুরুষের মাধ্যমে এল? এভাবে একজন মুসলিম নারীবাদী তার চূড়ান্ত অবস্থা তথা কুফর ও রিদ্দাহের দিকে পৌঁছে যায়।

ওয়াহিদ মুরাদ একে আখ্যায়িত করেন নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব নয়, শয়তানী ধর্মতত্ত্ব বলে। তিনি এই পর্যায়গুলোকেই আরেকটু ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তার মতে— ‘নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব আন্দোলন প্রথম পর্যায়ে সমস্ত ঐতিহ্যবাদী সনাতন ধর্মকে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখিয়ে নারীর নিপীড়ন, বঞ্চনা ও শোষণের দায় আরোপ করে এবং এর উপর শক্ত সমালোচনা করে। যখন ধর্মীয় শিক্ষার প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণরূপে সুফল হওয়া যায়নি তখন দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ধর্মগুলোর ঐতিহ্যে এবং ও টেক্সটে এমন রেফারেন্স খোঁজা শুরু করে, যার নারীবাদী ব্যাখ্যা নারীবাদের পক্ষে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াও যখন কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে সমর্থ হয়নি, তখন নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে ধর্মীয় শৈলীতে উপস্থাপন করার জন্য ‘শয়তানি নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব’ নামে একটি নতুন ধর্ম তৈরি করা হয়। এজন্য অনেকেই ইসলামী নারীবাদকে পশ্চিমা নারীবাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর বলেছেন।

শেষ কথা হচ্ছে, নারীদের উপর সমাজে যেসব শোষণ, নিপীড়ণ ও বঞ্চনা চলে, তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না। তবে এর প্রতিকার ইসলামেই রয়েছে। শরীয়াহর বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা ও সত্যিকারের ইসলামী আইন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়িত করতে পারলেই এর প্রতিকার সম্ভব। নারীবাদের ধারণা নিজেই একটা সমস্যা, এটা কখনোই সমাধান নয়।

ইউরোপে ফেমিনিস্ট আন্দলনের ভিত্তি তৈরি করে মেরি ওয়েস্টনক্র্যাফ্টের বিখ্যাত বই A Vindication of the Rights of Woman (1792), যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৯২ সালের দিকে। এই বই প্রকাশিত হবার ৩ বছর পূর্বে ১৭৮৯ সালে ইউরোপীয় পর্যটক, নাট্যকার এবং লেখিকা লেডি এলিজাবেথ ক্র্যাভেন উসমানী খিলাফতের রাজধানী তুরস্ক ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তুরস্কের মুসলিম নারীদের সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ লিখেছিলেন, অর্থাৎ যখন ইউরোপে নারীবাদের জন্ম হয়নি। ওসমানীয় তুর্কি নারীদের সম্পর্কে তিনি লিখেন—‘এখানে প্রতিদিনই অনেক নারীকে দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রয়োজনে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। হয়ত সংখ্যাটা পুরুষের তুলনায় বেশি হবে না, কিন্তু কোনোভাবেই কম নয়। আমি এমন কোনো দেশ দেখিনি, যেখানকার নারীরা তুরস্কের নারীদের মতো এতোটা স্বাধীনতা ভোগ করে। তাদেরকে কোনো প্রকার অবমাননার শিকার হতে হয় না। নারীর প্রতি তুর্কিদের উদারতা অন্য সব জাতির জন্য আদর্শ হওয়া উচিত। আমি সত্যিই মনে করি পৃথিবীর অন্য কোনো নারী এখানকার নারীদের মতো স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। তাদেরকে কোনো প্রকার হয়রানির আশঙ্কায় থাকতে হয় না। এখানের নারীরা হয়তো নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ভেবে গভীরভাবে শ্বাস নেয়।’

এটাই ইসলামী ব্যবস্থার অধীনে নারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ছবি। পুরো ইসলামী খেলাফতের সময়টা জুড়েই এই চিত্র ছিল। বিশেষত এটা সেই সময়ের চিত্র, যখন ইউরোপে নারীবাদী আন্দলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। তাই নারী নির্যাতন ও নারী অধিকার হরণের একমাত্র সমাধান ইসলামই, অন্য কিছু নয়।

 

 

The post মুসলিম নারীবাদ: সূচনা ও বিকাশ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%b8%e0%a7%82%e0%a6%9a%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%bf/

নারী সমতা ও স্বাধীনতার বিতর্ক

মূল : ওয়াহিদ মুরাদ
অনুবাদ : কাজী একরাম

সমতা (equality) আধুনিক ও আলোকিত পশ্চিমের পবিত্র মূল্যবোধের একটি। ফরাসি বিপ্লবী স্লোগান ‘স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব’ এবং স্বাধীনতার আমেরিকান ঘোষণাপত্র সমতা উদযাপন করার সময় দাবি করে যে, এটি একটি স্বজ্ঞাত ধারণা যে, সমস্ত মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং স্বাধীনতার মতো সীমাহীন অধিকার দেওয়া হয়েছে।[১] কানাডিয়ান চার্টার অফ রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমসও এ কথায় জোর দেয় যে, ‘প্রত্যেকেরই আইনের সমান সুরক্ষা, সমান সুবিধা ভোগ করার এবং আইনের চোখে সমান অধিকারের অধিকার রয়েছে। তার বিবেক, ধর্ম, চিন্তা-ভাবনা, মতপ্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংঘের মৌলিক অধিকার রয়েছে।[২]

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, যখন লেভেলারদের আন্দোলন (Levellers) সমতার আহ্বান জানায়, তখন এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল অভিজাতদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বাতিল করানো। পরবর্তী শতাব্দীতে, উদারপন্থীরা অর্থনৈতিক সুযোগের সমতার উপর জোর দিয়েছিল, যেখানে সকল মানুষের অগ্রগতি, সফলতা, সম্পদ এবং আয় লাভের ন্যায্য সুযোগ ছিল। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনে সাম্য বলতে বোঝাত উৎপাদনের উপায়ের ওপর থেকে গুটিকয়েক লোকের একচেটিয়া আধিপত্য দূর করা এবং তাদের সবার প্রয়োজন পূরণের জন্য উন্মুক্ত করা। একুশ শতকে সমতার ধারণা এবং সংগ্রামকে সরল করে ‘ক্যাম্পেইন ফর ইকুয়ালিটি অফ রেজাল্টস’-এর রূপ দেওয়া হয়, যার অর্থ সবার জন্য সম্পদ, মর্যাদা এবং অবস্থানের সমতা। এটি নিপীড়িত শ্রেণির কণ্ঠস্বর নয়, বরং আমেরিকান ডেমোক্রেটিক পার্টির কণ্ঠস্বর, যারা নির্বাচনে স্লোগান দেয় , তাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে ধনীদের কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায় করা এবং তাদের ভোটারদের স্বার্থ-চাহিদা, রাস্তা, পাড়া, পার্ক এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ব্যয় করা। [৩]

কানাডার ব্রডবেন্ট ইনস্টিটিউট (Broadbent Institute) এর যুক্তি হলো, ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য, আয় এবং সম্পদের অসম বন্টন আমাদের সময়ের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং ১৯৯০ এর দশকে কানাডায় যে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা আজও উচ্চ পর্যায়ে বিদ্যমান। এই প্রবণতাকে পরিবর্তনের জন্য প্রগতিশীলদের অবশ্যই এমন পাবলিক পলিসি দাবি করতে হবে যা সাধারণ সমৃদ্ধির উপর ফোকাস করে।’ একইভাবে, কানাডা সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভস বলে যে, ‘কানাডাকে আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির একটি মোকাবেলা করতে হবে, এবং তা হলো আয় এবং সম্পদের বৈষম্য বৃদ্ধি।’ এই লক্ষ্যে, সংস্থাটি পরামর্শ দেয় যে, জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী 1% এর উপর উচ্চ করের সুযোগ রয়েছে। [৪]

আজকের যুগের সমস্যা হলো, স্ব-নির্মিত জীবনযাত্রার মানদণ্ডের প্রবক্তারা সমতা এবং অন্যান্য মৌলিক পশ্চিমা মূল্যবোধের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেনি, বরং সমতাকে অন্যান্য মূল্যবোধের উপরে রেখেছে। এর প্রধান কারণ হলো বিংশ শতাব্দীর বড় রাজনৈতিক আন্দোলন কমিউনিজম সাম্যকে তার রাজনীতির সবচেয়ে বড় আইডল করে তুলেছিল। কমিউনিস্টরা সাম্যের উপর এত জোর দিয়েছিল যে, এর জন্য কার্যতই স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির মূল্য চুকাতে হয়েছিল এবং অবশেষে পার্টি নেতারা তাদের শাসন বাঁচানোর জন্য জনগণ ও সাম্যকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।

অর্থনৈতিক সমতা বনাম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা

বিশ্বজোড়া সমাজের সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন দেখায় যে, অর্থনৈতিক সমতা ব্যক্তি স্বাধীনতার বিপরীতভাবে সমানুপাতিক। যে সমাজে অর্থনৈতিক সমতা বিদ্যমান, সেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা অত্যন্ত সীমিত, এবং বিপরীতে, যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার উচ্চস্তর রয়েছে, সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে। কারণটা বেশ স্পষ্ট। মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের সম্পদ অন্যদের মধ্যে বণ্টন করে সমতা প্রতিষ্ঠা করে না। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধনী ব্যক্তিদের তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ কর আকারে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করে, যাতে তা সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা যায়। রাষ্ট্র এভাবে জবরদস্তির মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সীমিত করে।

এই গবেষণাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক সমতা এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতা সামঞ্জস্য বজায় রাখে না। একটির আধিক্যে অন্যটি হ্রাস পায়। পূর্ণ অর্থনৈতিক সমতার প্রবক্তারাও সমতা নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকে সমর্থন করে। বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমতা অর্জনের উপায় হলো সরকার কর্তৃক সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ এবং পুনঃবন্টন।[৫]

কমিউনিস্ট সমাজ যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মাও সেতুং-এর চীন, উত্তর কোরিয়া এবং কিউবা ইত্যাদি যেখানে অর্থনীতি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং স্বাধীনতা কমিউনিস্ট পার্টিগুলির আদেশ পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের বিপরীতে, উদার গণতান্ত্রিক সমাজের নির্দিষ্ট বহুত্ববাদ একাধিক দলে একাধিক নীতির সাথে দেখা যায়। উদার গণতন্ত্র অর্থনৈতিক সমতার সমর্থনে যথেষ্ট কিন্তু অপেক্ষাকৃত সীমিত স্বাধীনতার ব্যবস্থা সমর্থন করে, যেমন কল্যাণ রাষ্ট্র নীতি। বহুত্ববাদী উদারনৈতিক গণতন্ত্রে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যকার ভারসাম্যের বিষয়টি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়। কিছু দল বেশি সমতার উপর জোর দেয়, অন্যরা ব্যক্তি স্বাধীনতার সমর্থক। মোদ্দা কথা, বেশি সমতার পক্ষে কথা বলা আসলে কম স্বাধীনতার সমর্থন।

আরেকটি মূল্য যা বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমতা বা সরকারের তরফ থেকে সমতা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা দ্বারা পরীক্ষিত হয়, তা হলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। এই ইস্যুতে সর্বদা এই উত্তপ্ত বিতর্ক হয় যে, অর্থনীতির উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ফলশ্রুতিতে দুর্বল উত্পাদনশীলতা এবং উদ্ভাবনের অভাবের সম্মুখে পড়তে হয়। কমিউনিস্ট দেশগুলির অভিজ্ঞতা এমনই বলে, যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে শ্রমিকরা এই বলে রসিকতা করত যে, ‘আমরা কাজ করার ভান করি এবং তারা আমাদের বেতন দেওয়ার ভান করে।’ কমিউনিস্ট ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে চীন পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পা দেয়। আসল প্রশ্ন হলো কাজ করার অনুপ্রেরণা, সুযোগ গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক সুবিধার মধ্যে সম্পর্ক। এ এযাবৎকালের সাক্ষ্য-প্রমাণ বলে যে, উৎপাদন থেকে লাভবান হওয়ার স্বাধীনতা আরও উৎপাদনকে উৎসাহিত করে। বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমতার পক্ষে ওকালতি করা প্রকৃতপক্ষে, কাজ এবং সমৃদ্ধির জন্য প্রণোদনার বিরুদ্ধে ওকালতি করার সমতুল্য।

লিঙ্গ সমতা (gender equality)

অতীতে, উদারপন্থীরা ব্যক্তিদের মধ্যে সমতার আহ্বান জানিয়েছিল, কিন্তু আজকের প্রগতিশীলরা, যেমন কানাডিয়ান দার্শনিক উইল কিমলিকা (Will Kimlicka) ব্যক্তিদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির (জেন্ডার, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা, জাতীয়তা ইত্যাদি) মধ্যে সমতার দাবি জানায়। সমষ্টিগত সমতা এটি দাবি করে যে, প্রতিটি ক্যাটাগরির লোক বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ এই সমতা মানে অন্তর্ভুক্তি (inclusiveness)। পূর্ব এশীয়ান ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি ছাড়া স্কুলের ক্লাস, শিখ ছাড়া পুলিশ ফোর্স, আফ্রিকান আমেরিকান ছাড়া সিটি কাউন্সিল, ইতালীয়দের ছাড়া সিভিল সার্ভিস, মুসলিম ছাড়া অফিস, সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার ছাড়া কোম্পানির বোর্ড অসম্পূর্ণ, বর্ণবাদী এবং অন্যায্য বলা হয়। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যত বেশি সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, ততই তাদের সমতাবাদী ও ন্যায়পরায়ণ বলা হবে।

আপাতদৃষ্টিতে বলা হয়, লিঙ্গ সমতার মানে হলো পুরুষ ও নারীকে সমান সুযোগ এবং অংশগ্রহণ প্রদান করা। কিন্তু বাস্তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০% শিক্ষার্থী নারী এবং আইন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সর্বত্র এই কুশেশ চলে যে, পুরুষ এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ রাখে এমন লোক যত কম হবে, ততই ভালো। ডাকোটা নিউম্যানের (Dakota Newman) মতে লিঙ্গ সমতাও একটি সমস্যাজনক টার্ম, কারণ এর কোনো সাধারণ সংজ্ঞা নেই এবং অনেক মতলব এর হতে পারে। [৬]

জেন্ডার-ইকুয়ালিটি বা লিঙ্গ সমতা মানে লিঙ্গ নির্বিশেষে সমস্ত উপায়, সম্পদ এবং সুযোগ, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, মূল্য এবং মর্যাদা, অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহ বিভিন্ন আচরণ, ইচ্ছা এবং চাহিদার সমান অ্যাক্সেস। এটির লক্ষ্য হলো নীতি ও আইনে পরিবর্তন আনা, যাতে লৈঙ্গিক স্বায়ত্তশাসন অর্জিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী যৌন পাচার, নারী হত্যা, যৌন সহিংসতা , শ্রেণীগত বেতনের ব্যবধান এবং অন্যান্য ধরণের যৌন নিপীড়ন অবসিত হয়। নারীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান, মালিকানা, সম্পত্তি, ক্রেডিট, ইত্যাদিতে অধিক প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। লিঙ্গ সমতা অর্জন জাতিসংঘের ১৭ টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের পঞ্চমতম এবং এটাকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন (Human Development Reports) দ্বারা প্রতি বছর পরিমাপ করা হয়। [৭]

লিঙ্গ সমতায় জাতিসংঘের ভূমিকা

লিঙ্গ সমতা শুধু নারী-পুরুষের সমতা নয়, এটি বিশ্বব্যাপী বাইনারি লিঙ্গ-ভিত্তিক (নারী ও পুরুষ) সমাজের অবসান ঘটানোর একটি প্রচেষ্টা, যেখানে জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ খিলাড়ি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। কয়েক দশক আগে, শব্দটি জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই শব্দটি ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের পরিচয়কে আইনত সুরক্ষা এবং প্রচার করতে ব্যবহৃত হয়, যা তাদের জন্মগত শরীর থেকে প্রকাশ পায় না। ২০১৯ সালে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল একটি রেজুলিশনে এই শব্দটিকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে যে, পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে ব্যবধান দূর করার আন্তর্জাতিক এজেন্ডা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

জাতিসংঘের এই রেজুলেশনে ইন্টারসেক্স ক্রীড়াবিদদের অনুমতি দেওয়া হয় যে, তারা নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং এটাকে তাদের অধিকারের সুরক্ষা ঘোষণা করা হয়। একইভাবে, জাতিসংঘের অন্যান্য রেজুলেশনে যেখানে লিঙ্গ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এর অর্থ হলো, লৈঙ্গিক পতাকার অধীনে এমন পুরুষদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা উদ্দেশ্যে, যারা তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডারের পাশাপাশি queer, intersex, pan sexual, gender non confirming, nonbinary এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের সম্পূর্ণ পরিসর অন্তর্ভুক্ত আছে। লিঙ্গের পরিভাষাটি এমন এক অস্ত্র যাকে নারীর নামে পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রতি বছর, জাতিসংঘের Sustainable Development Goals এর জন্য বরাদ্দ করা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার নারী অধিকারের নামে এই লিঙ্গ মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমরা মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, বোন, ভাইয়ের মতো শব্দ শুনে এসেছি যা একটি পরিবার গঠন করে, কিন্তু এখন সেগুলোকে লিঙ্গ সমতার নির্মম যানের চাকার নিচে পিষ্ট করা হচ্ছে। এই এজেন্ডা সফল হওয়ার সাথে সাথে নারীরা সে-সমস্ত অধিকার হারাবে, যা শত শত বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করা হয়েছে। [৮]

সমতা না অভিন্নতা?

ফরাসি রাজনৈতিক দার্শনিক অ্যালাইন ডি বেনোইস্ট (Alain de Benoist) বলেন যে, লিঙ্গ তত্ত্বে, সমতাকে অভিন্নতা (sameness) হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, অথচ এই ব্যাখ্যাটি, স্পষ্টতই নারী বিরোধী। এই ব্যাখ্যায় এটা অনুমান করা হয় যে, সোসাইটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তাতে সমস্ত পেশা-বৃত্তি, সম্পর্ক, চুক্তি এবং অনুষঙ্গগুলি তার নিজস্ব ইচ্ছা এবং স্বায়ত্তশাসন দ্বারা নির্ধারিত হয়। সুতরাং, নারীর পরিচয়কেও তাদের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে নয়। অর্থাৎ, যেকোনো মূল্যেই নারীদের নিজেদেরকে নারী হিসেবে বিবেচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সমতার এই ধারণাটির জন্য অভিন্নতা প্রয়োজন এবং এটি আসলে জ্যাক দেরিদার (Jacques Derrida) বাইনারি শ্রেণীবিভাগের (binary oppositions and binary pairs) ধারণা থেকে নেওয়া হয়েছে। দেরিদার মতে, দিন/রাত্রি, উপস্থিতি/অনুপস্থিতি, পুংলিঙ্গ/স্ত্রীলিঙ্গ ইত্যাদির মত বাইনারি শ্রেণীবিভাগে, সর্বদা একটি শব্দের অন্যটির উপর আধিপত্য করার প্রবণতা থাকে, অর্থাৎ দিন ছাড়া রাত, উপস্থিতি ছাড়া অনুপস্থিতি এবং পুংলিঙ্গ ছাড়া স্ত্রীলিঙ্গের কল্পনা করা যায় না। নারীবাদী বিশেষজ্ঞরা এর থেকে এই উপসংহার টেনেছেন যে, এই আগ্রাসী এবং সহিংস প্রবণতাকে অবশ্যই প্রতিরোধ করা উচিত। এইভাবে, উগ্র নারীবাদী আন্দ্রেয়া ডোয়ার্কিন, (Andrea Dworkin) তার বিশ্বাস এবং মতাদর্শে, “পুরুষ আধিপত্য এবং লিঙ্গকে খতম করার দৃঢ় সংকল্প” প্রকাশ করে। ফরাসি নারীবাদী মনিক উইটিগ (Monique Wittig) বলে যে, আমাদের রাজনৈতিক, সিম্বোলিক এবং দার্শনিকভাবে নারী ও পুরুষের ক্যাটাগরিকে ধ্বংস করতে হবে এবং উভয়কে সমতা তথা অভিন্নতার স্তরে নিয়ে আসতে হবে, যাতে কেউ আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। তার দৃষ্টিতে, পরিচয়ের প্রকাশ এবং আকাঙ্খার স্বাধীনতা দাবি করে যে লিঙ্গ বিভাগগুলি বিলুপ্ত করা উচিত, কারণ যতক্ষণ এই বিভাগগুলি বিদ্যমান থাকবে, একজন নারীর পরিচয় একজন পুরুষের উপর নির্ভর করবে।[৯]

মনিক হুইট্যাগ এই বিষয়টাও ঘৃণা করত যে তিনি একজন নারী লেখিকা। তাই সে নিজেকে একজন র্যাডিক্যাল লেসবিয়ান রাইটার বলত। তার ধারণা যে, লেসবিয়ানরা নারী নয়, কারণ তারা নারীদের ক্যাটাগরির বাইরে পড়ে এবং লেসবিয়ানদের সাথেই সম্পর্ক রাখে। তাদের নিজের অস্তিত্ব স্বীকার করানোর জন্য কোনো পুরুষের প্রয়োজন নেই। হাস্যকরভাবে, সমান অধিকারের সংগ্রামে এবং পুরুষত্বকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টায়, নারীত্ব নিজেই পুরুষত্বের রূপ গ্রহণ করে নিলো এবং এখন প্রকৃত নারী তাকে মনে করা হয়, যিনি একজন পুরুষের রূপ ধারণ করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, সমতাবাদী ফেমিনিজমের নারী-বৈচিত্র্যের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, কারণ নারী বৈচিত্র্যের মধ্যে পার্থক্যের ধারণা বিরাজ করে এবং নারীবাদ জৈবিক পার্থক্যও বিদূরিত করতে চায়। [১০]

সমতার মূল্য বা দায়শোধ

বর্তমানে যে সমষ্টিগত সমতার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, তার জন্য দুনিয়ার সমাজগুলো ভারী মূল্য চুকাচ্ছে। একটি মূল্য হলো স্বতন্ত্র পরিচয় হারানো, যেখানে জাতিগত, জাতীয়, ধর্মীয়, যৌন ক্যাটাগরিগুলো ব্যক্তিদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্ব, সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরির নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কিছু কাজে সামর্থ্য ও যোগ্যতার অভাবের আকারে চুকাতে হয় দ্বিতীয় মূল্য। লোকদের কাজ করার ক্ষমতার অগ্রাধিকারের চেয়ে, কেবল তাদের জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ইত্যাদির কারণে বেছে নেওয়া হয়। এইভাবে, সংশ্লিষ্ট কারণগুলিতে মনোযোগ না দেওয়ার কারণে কম সামর্থ্যযুক্ত লোকেরা উপরে উঠে যায়। অতঃপর এ ধরনের বাক্য শুনতে পেতে হয় যে, ‘আচ্ছা, আপনি স্নাতক পর্যায়ে খুব ভালো স্কোর করেছেন, কিন্তু আমাদের ইতিমধ্যে একজন শিখ কর্মী আছে এবং এখন আমাদের একজন সমকামী বা লেসবিয়ান ওয়ার্কারকে নিয়োগ করতে হবে।’ অন্য কথায়, ক্যাটাগরির লেবেলগুলির কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রবণতা, ক্ষমতা এবং সম্ভাবনা গুরুত্বহীন হয়ে যায় এবং লোকেরা কেবল ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্তির কারণে সাফল্য অর্জন করে নেয়। এইভাবে সমষ্টিগত সমতার প্রবক্তারাও প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি পরিচয়, যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠতা (excellence) সন্ধানের বিরোধী। আপনার এমন সুধারণায় পড়ে প্রতারিত হওয়া উচিত নয় যে, সমতা প্রচারের প্রোগ্রামগুলো মুফত এবং উপকারী। আপনাকে স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, স্বাতন্ত্র্য, যোগ্যতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের বিলুপ্তির আকারে এ-সবের ভারী মূল্য দিতে হবে।[১১]

এমন একটি কোম্পানির কল্পনা করুন যেখানে সবাই সমান। কোনো ম্যানেজার, সুপারভাইজার বা দারোয়ান ইত্যাদি নেই, সবাই একই কাজ করে এবং কেউ কাউকে রিপোর্ট করে না। তারা যাই পরিশ্রম করে বা যতই দক্ষ হোক, সবাই সমান বেতন পায়। সবার কাজের সময় একই। সমতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে বলে কেউ কখনও পদোন্নতি পায় না। আপনি কি মনে করেন যে, এই ধরনের একটি কোম্পানি সফল হবে? স্পষ্টতই নয়, কারণ সমাজ সর্বদা বিশেষীকরণে সমৃদ্ধ হয়। একজন একাকী ব্যক্তি যেভাবে চায় জীবনযাপন করতে পারে, তবে সমাজে যোগদানের পরে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিবিন্যাস অনুসরণ করা আবশ্যক। সবাই ‘আলফা’ হতে পারে না এবং সবাই ‘আলফা’ হওয়ার চেষ্টা করলে সমাজ ব্যর্থ হবে। সাম্যের স্লোগান একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির কাছে আবেদনময় হতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণ সমতা সমাজের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। সমাজের টিকে থাকার জন্য আদল ও ইনসাফ, সাম্য ও ন্যায়বিচার অপরিহার্য, কিন্তু শ্রেণীর মধ্যে সম্পূর্ণ সমতা প্রতিষ্ঠার দ্বারা সমাজ কার্যকরভাবে ক্রিয়াশীল হতে পারে না।

পূর্ণ সমতার মাধ্যমে যখন সমান ফলাফল নিশ্চিত করা হয়, তখন শুধু ধর্ম, বিশ্বাস, সভ্যতা, শিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য, অনুভূতি নয়, জীবনের সব রঙ নষ্ট হয়ে যায়। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা যুক্ত হয়। যুবকরা বুঝতে পারে না কার সাথে বন্ধুত্ব করবে এবং কাকে বিয়ে করবে। কারণ একটি নিশ্চিত পরিস্থিতির জন্য যে উৎসাহ প্রয়োজন, তা সমতার দ্বারা লুপ্ত হয়ে যায়৷ সম্পূর্ণ সমতা পারিবারিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে এবং প্রতিটি বিষয় বাণিজ্য ও দর কষাকষির নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। আবেগ, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ছাড়া ঘর হয়ে যায় কম্পিউটারের অ্যালগরিদমের মতো। ফলে শিশুরা তাদের বাবা-মাকে হত্যা করে বা বাড়ির বড়দেরকে মাহরাম সম্পর্কের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে দেখা যায় এবং জীবন একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।[১২]

তথ্যসূত্র:

[১] “The Declaration of Independence” The Want, Will and Hopes of the People. Retrieved from https://ift.tt/1GXod3K
[২] “The Constitution Acts of Canada 1867 to 1982”. Retrieved from https://ift.tt/ATwHhOq
[৩] “Let’s end corruption – starting with Wall Street” New Internationalist magazine issue 447. Retrieved from https://ift.tt/QWkmqZM
[৪] “Growing Gap” CCPA. Retrieved from https://ift.tt/EtrxUah
[৫] Kymlicka, Will (1996) “Multicultural Citizenship: A Liberal Theory of Minority Rights”. Retrieved from https://ift.tt/dKVCn9Z
[৬] “Women in Canada embrace higher education”. Retrieved from https://ift.tt/uNoHP0S
[৭] McKie, Linda & Jeff Hearn (2004) “Gender Neutrality and Gender Equality: Comparing and contrasting policy responses to Domestic Violence in Finland and Scotland”. Retrieved from https://ift.tt/hrwGH4N
[৮] Ells, Kimberly (2021) “The Dark Side of Global Gender Equality”. Retrieved from https://ift.tt/S6DshFC
[৯] Kirkup, James(2003) “Monique Wittig”. The Independent https://ift.tt/9BkSOIu
[১০] Mattix, Micah (2015) “The Absurdity of Gender Theory”. Retrieved from https://ift.tt/Zr4FcxA
[১১] Salzman, Philip Carl (2018) “Equality at What Cost?”. Retrieved from https://ift.tt/9A3OfIF
[১২] Chamberlain, Shannon (2014) “What is the price of Perfect Equality?”. Retrieved from The Atlantic https://ift.tt/cM6LXvk

 

 

The post নারী সমতা ও স্বাধীনতার বিতর্ক appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf/

Tuesday, May 24, 2022

টেক্সাসে স্কুলে বন্দুকধারীর হামলা, ১৮ শিশুসহ নিহত ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৮ জনই শিশু। মঙ্গলবার (২৪ মে) মেক্সিকো সীমান্তবর্তী উভালদে এলাকার একটি এলিমেন্টারি স্কুলে এ ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকহামলার ঘটনা নিয়মিত হলেও গত ১০ বছরের মধ্যে দেশটির স্কুলে সংঘটিত এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। খবর এএফপির।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর প্রথমে তার দাদিকে গুলি করে রব এলিমেন্টারি স্কুলের দিকে যায় এবং একটি হ্যান্ডগান নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় সম্ভবত একটি বন্দুকও তার সঙ্গে ছিল।

গভর্নর জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন কিশোরের নাম সালভাদর রামোস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্থানীয় বাসিন্দা। সম্ভবত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের গুলিতে হামলাকারীও নিহত হয়েছেন।

টেক্সাসের সিনেটর রোল্যান্ড গুতেরেস সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামলায় তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও মারা গেছে। তবে এই তিনজনের মধ্যে হামলাকারীও রয়েছেন কি না তা নিশ্চিত নয়।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশ ছোট ছোট শিশুদের স্কুল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব শিশুর বয়স সাত থেকে ১০ বছরের মধ্যে বলে ধারণা করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১২ সালের পর থেকে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। ওই বছর কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে বন্দুকহামলায় ২০ শিশু ও ছয় কর্মকর্তা নিহত হন।

 

The post টেক্সাসে স্কুলে বন্দুকধারীর হামলা, ১৮ শিশুসহ নিহত ২১ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a6%a7%e0%a6%be/

দুই শতাধিক বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক আরোপ

ফাতেহ ডেস্ক:

আমদানি প্রবণতা কমাতে ও দেশীয় পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদেশি ফুল ও ফল, ফার্নিচার এবং কসমেটিকস আইটেমের দুই শতাধিক পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ মূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ বা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এমন নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ মে) এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৪ মে) এনবিআর পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ০ ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যা ২৩ মে থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফুল ও ফল চাষে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। এ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবে এবং ফুল ও ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে দেশের প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকস যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ফার্নিচার ও কসমেটিকসে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। এছাড়া এ ধরনের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ বা বৃদ্ধি করা পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— তাজা ও শুকনো যেকোনো ধরনের আমদানি করা ফুল, অলংকার তৈরিতে আমদানি করা ফুল, বিভিন্ন ধরনের আর্টিফিশিয়াল ফুল এবং গাছের চারা কিংবা গাছের শাখা-প্রশাখা।

ফলের মধ্যে রয়েছে— তাজা বা প্রক্রিয়াজাত আম, কলা, আঙ্গুর, ডুমুর, আনারস, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, ম্যাঙ্গোস্টিন বা গাব জাতীয় ফল, লেবু, তরমুজ, বরই, এপ্রিকট, চেরি জাতীয় ফল, হিমায়িত কিংবা প্রক্রিয়াজাত করা ফল বা ফলের বীজ ও মিক্সড ফলের খাবার।

ফার্নিচারের জন্য আমদানি করা বাঁশ, পার্টস, বেতের ফার্নিচার এবং ফার্নিচারের জন্য আমদানি করা বিভিন্ন উপাদান। এছাড়া অফিস, রান্নাঘর, বেডরুমে ব্যবহৃত কাঠের ফার্নিচার, প্লাস্টিকের ফার্নিচার ও বিভিন্ন মেটাল ফার্নিচার।

কসমেটিকসের মধ্যে পারফিউম, বিউটি ও মেকআপ প্রিপারেশন, দাঁতের ফ্লস, দাঁতের পাউডার, প্রিশেভ ও আফটার শেভ কসমেটিকস, চুলের জন্য প্রসাধনী ইত্যাদি।

বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে তিন হাজার ৪০৮টি পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা আরডি প্রযোজ্য রয়েছে। এসব পণ্যে সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত আরডি প্রযোজ্য রয়েছে। এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ আইটেমগুলোর ওপর উচ্চ শুল্ক রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার উচ্চ ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুসরণ করে নতুন করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চলমান বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে ও সংকট উত্তরণে সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

The post দুই শতাধিক বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক আরোপ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%87-%e0%a6%b6%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%ac%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%aa%e0%a6%a3%e0%a7%8d/

সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফিলিস্তিন প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

ফাতেহ ডেস্ক:

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ সফররত ফিলিস্তিন প্রতিনিধিদল।

সোমবার (২৩ মে) সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সাক্ষাতকালে ফিলিস্তিন প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশটির মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাকারা এ এইচ মুছলেহ।

এর আগে পোল্যান্ড দূতাবাসের সামরিক উপদেষ্টা কর্নেল র‌্যাডোসলো গ্র্যাবাস্কি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাতকালে পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময়ের পর সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশে সফরের জন্য ফিলিস্তিন প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান এবং উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ অগ্রগতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

এই আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্কের অগ্রযাত্রার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।

 

The post সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফিলিস্তিন প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b8/

বিশ্বে প্রথমবার বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়াল: জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বিশ্বে প্রথমবারের মতো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ এ তথ্য জানিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ শরণার্থী হওয়ার প্রভাব সামগ্রিকভাবে পড়েছে এই সংখ্যায়।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, যুদ্ধ, সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের কারণে অনেক মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ কারণেই প্রথমবারের মতো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি স্পর্শ করেছে। সংস্থাটি এই সংখ্যাকে ‘বিস্ময়কর মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিবৃতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাকে ‘আশঙ্কাজনক’ উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, এই সংখ্যা যুদ্ধ থামাতে বিশ্বকে অবশ্যই তাগাদা দেবে।

The post বিশ্বে প্রথমবার বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়াল: জাতিসংঘ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%9a%e0%a7%8d/

নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি, শিল্পকলার যন্ত্রশিল্পী বরখাস্ত

ফাতেহ ডেস্ক:

সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের যন্ত্রশিল্পী তুষার কান্তি সরকারকে (গ্রেড-৩) বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার একাডেমির সচিব আছাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

অফিস আদেশে বলা হয়, গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার বিকাল চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে ওয়াশরুমে প্রবেশ করেন তুষার কান্তি সরকার। এসময় তিনি পাশের দেওয়াল টপকে আরেকটি ওয়াশরুমে এক নারী সহকর্মীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। ওই সহকর্মী বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে কর্তৃপক্ষ যৌন নিপীড়ক ও চরিত্রহীন তুষার কান্তি সরকারকে সাময়িক বহিস্কার করে।

তৃতীয় শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী নিপীড়ক তুষারের এমন কর্মকাণ্ডকে ‘অত্যন্ত গর্হিত এবং আপত্তিকর আচরণ’ উল্লেখ করে অফিস আদেশে আরও বলা হয়, ‘এটি নৈতিক স্খলনেরও একটি চরম দৃষ্টান্ত, যা নারী নির্যাতনের পর্যায়ভুক্ত। একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে তিনি এ ধরনের অশ্লীল কাজ করতে পারেন না। এটি জঘন্য অসদাচরণ এবং গুরুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।’

The post নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি, শিল্পকলার যন্ত্রশিল্পী বরখাস্ত appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%b8%e0%a6%b9%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%af%e0%a7%8c%e0%a6%a8-%e0%a6%b9%e0%a7%9f%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a8/

৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট চায় মন্ত্রণালয়

ফাতেহ ডেস্ক:

বাংলাদেশ অংশে সৌদি আরব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি জানিয়ে আগামী ৩১ মে’র পরিবর্তে ৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সোমবার (২৩ মে) বিমান ও পর্যটন সচিবের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে জানানো হয়, ‘সৌদি সরকারের রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় এবারের হজে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবগামী শতভাগ হজযাত্রীর সৌদি আরবের ইমগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আগমী ৩১ মে প্রথম হজ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতিও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু আজ (সোমবার) রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের বাস্তবায়নকারী সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এসে জানান যে, রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের জন্য ৪০ জন জনবলসহ সৌদি টিম ঢাকায় আগামী ২ জুন এর আগে এসে পৌঁছাতে পারবে না।

‘প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস/যন্ত্রপাতি এখনো ঢাকায় এসে পৌঁছেনি। এ সব ডিভাইস/যন্ত্রপাতি উল্লেখিত সৌদি টিমের সঙ্গে ঢাকায় আসবে। ওই যন্ত্রপাতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইনস্টল করতে হবে। এতে কিছু সময় লাগবে। ফলে আগামী ৫ জুনের আগে তাদের পক্ষে ঢাকা থেকে হজযাত্রীদের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ৩১ মে প্রথম হজ ফ্লাইট শুরু করা হলে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের হজযাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রথম হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য ডেডিকেটেড ফ্লাইট এবং ঢাকায় প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার স্বার্থে ৩১ মে’র পরিবর্তে আগামী ৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট শুরু করা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩১ মে’র পরিবর্তে আগামী ৫ জুন থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট শুরু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজে যেতে পারবেন।

The post ৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট চায় মন্ত্রণালয় appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a7%ab-%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%9c-%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%9f-%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae/

Monday, May 23, 2022

‘দেশের সম্পদ চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা জেলে ডিভিশন পেতে পারে না’

ফাতেহ ডেস্ক:

দেশের সম্পদ লুটপাট, চুরি ও দুর্নীতি করে যারা অঢেল টাকার মালিক হয়ে কারাগারে আছেন তারা জেলে কোনভাবেই ডিভিশন পেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ আশরাফ আলী আকন।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে আশরাফ আলী আকন বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৫১ বছর পূর্বে আমাদের এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫১ বছরেও দেশে ন্যায়ের শাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি।

আজকের সকল জাতীয় দৈনিকে এসেছে ১৯৭২-৭৩ থেকে শুরু করে ২০১৮-২০১৯ এই ৪৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে বিদেশে অর্থপাচার হয়েছে আট লাখ কোটি টাকা। এ যদি হয় দুর্নীতি ও টাকা পাচারের অবস্থা তাহলে একটি দেশ কিভাবে চলবে।

তিনি বলেন, সাজা হয়, সাধারণ অপরাধীর। কিন্তু বড় বড় রাঘব বোয়ালরা সবসময়ই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায়। আর ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়। সামান্য সময়ের জন্য কারাগারে গেলেও তারা রাজকীয় হালতে থাকে।

তিনি বলেন, একজন এমপি’র দুর্নীতি ও চুরির অভিযোগে ১০ বছর সাজা হয়েছে। একজন জাতীয় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত আসামী ১ম শ্রেণির ডিভিশন পেতে পারে না। তিনি আরো বলেন, এধরণের জাতীয় চোর-ডাকাত ও দুর্নীতিবাজের অবৈধ কালো টাকা বাজেয়াপ্ত করে হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি বন্ধ, অর্থপাচার ও কালো টাকা উদ্ধার করে একটি সার্বজনীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে ইসলামের বিকল্প নেই। তিনি সকলকে ইসলামের সুশীতল ছায়তলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

The post ‘দেশের সম্পদ চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা জেলে ডিভিশন পেতে পারে না’ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%a6-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%9c/

গণকমিশন নেতাদের সম্পদের উৎস খুঁজতে দুদকে আলেমদের স্মারকলিপি

ফাতেহ ডেস্ক:

১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব ও তহবিলের উৎস, কমিটির নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং গণকমিশনের শ্বেতপত্রসহ অতীতে তাদের প্রকাশিত শ্বেতপত্রের আর্থিক জোগান ও আয়-ব্যয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) স্মারকলিপি প্রদান করেছে ইসলামি কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ।

সোমবার (২৩ মে) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সংগঠনটির উপদেষ্টা গাজীপুর দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বরাবর এ স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে ইসলামি কালচারাল ফোরামের উপদেষ্টা গাজীপুর দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, নিম্নবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা নেয়। সরকারি অনুদান না নিয়ে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষিত জাতি গঠনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছি, অথচ আমাদের উৎসাহ না দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা এসব হীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাত ঘটাতে এসব কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। যারা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করছে তাদের অভিযোগ প্রতাহারের জন্য আমরা দুদককে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি তাদের আয়-ব্যয় ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি।

স্মারকলিপি প্রদানে নেতৃত্ব দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা গাজীপুর দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী।

দুদকে উপস্থিত ফোরাম নেতাদের মধ্যে ছিলেন- ইসলামিক কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো. নাজমুল হক, নির্বাহী সদস্য মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা মানসূরুল হক, মাওলানা আবুল কাসেম আশরাফী, মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতি ওয়াহিদুল আলম, মুফতি আব্দুর রহিম, আলহাজ ফজলুল হক ও মাওলানা মোতাহার উদ্দিন।

The post গণকমিশন নেতাদের সম্পদের উৎস খুঁজতে দুদকে আলেমদের স্মারকলিপি appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%97%e0%a6%a3%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0/

২০৫০ সালে কেমন হতে পারে আপনার খাবারের মেন্যু

ফাতেহ ডেস্ক:

ভবিষ্যতে বিশ্ব তীব্র খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা মহামারির মধ্যে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমনকি বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভিক্ষের মুখেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকটের এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের মেন্যুতে থাকতে পারে—এমন স্বল্প পরিচিত উদ্ভিদের তালিকা তৈরি করছেন লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের বিজ্ঞানীরা। গোটা বিশ্বে ভোজ্য উদ্ভিদ রয়েছে সাত হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে খাদ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য চাষ হয় মাত্র ৪১৭টি উদ্ভিদ। স্যাম পিরিনন বলেন, ‘আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে হাজারো ভোজ্য উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এগুলো খায়। এখানেই আমরা ভবিষ্যতের এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের জন্য কোনো সমাধান খুঁজে পেতে পারি।’

চলুন জেনে নেওয়া যাক বিজ্ঞানীদের তৈরী করা উদ্ভিদের তালিকা।

পান্ডানাস

পান্ডানাস বা পান্ডানাস টেকটেরিয়াস একটি ছোট গাছ। এই গাছ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় জন্মে। পান্ডানাস গাছের পাতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খাবারে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের ফল দেখতে আনারসের মতো। এই ফল কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়।

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের রিসার্চ ফেলো মেরিবেল সোটো গোমেজ বলেন, গাছটি খরা, প্রবল বাতাস ও লবণাক্ততার মতো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে।পান্ডানাস সম্পর্কে মেরিবেল বলেন, এটি একটি জলবায়ু সহনীয় গাছ। এটি খাবার হিসেবে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে এই গাছ জন্মাতে পারে।

আমাদের খাদ্যতালিকায় এই গাছ দারুণ বৈচিত্র্য আনতে পারে বলে মনে করেন মেরিবেল। তাঁর মতে, যদি পান্ডানাসকে টেকসইভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমাদের তা আরও ব্যাপকভাবে চাষ করা উচিত।

ভোজ্য বীজ

ভোজ্য বীজ আমাদের অন্যতম ভবিষ্যৎ খাদ্য। এগুলো যেমন সস্তা, তেমনি এতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন রয়েছে, আছে ভিটামিন বি। মটরশুঁটি, শিমসহ মটরজাতীয় উদ্ভিদ সমুদ্রের তীর থেকে শুরু করে পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত এলাকার বিস্তৃত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম। বিশ্বে ২০ হাজার প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ আছে। কিন্তু এগুলোর মাত্র কয়েকটি প্রজাতি আমরা খাদ্যে ব্যবহার করি। বনবাদাড়ে এখনো শত শত প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। আর এগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গেছে।

মোরামা বিন (টাইলোসেমা এস্কুলেন্টাম) বতসোয়ানা, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশে একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব স্থানে এই বীজ সিদ্ধ করে খাওয়া হয় কিংবা তা পাউডারে পরিণত করা হয়। পরে তা দিয়ে জাউ জাতীয় খাবার বা কোকার মতো পানীয় তৈরি করা হয়।

সিরিয়াল

সিরিয়াল একধরনের শস্যদানা, যা ঘাস থেকে আসে। এই শস্যদানার ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। বিশ্বে সিরিয়াল জাতীয় ১০ হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে। নতুন খাদ্যের উৎস হিসেবে এই প্রজাতিগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

ফোনিও (ডিজিটারিয়া অ্যাক্সিলিস) হলো একটি পুষ্টিকর আফ্রিকান সিরিয়াল। এটি কুসকুস (কারি), পোরিজ (জাউ) ও পানীয় জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে ফসল হিসেবে ফোনিও চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদ শুষ্কাবস্থা সহ্য করতে সক্ষম।

মিছেকলা

মিছেকলা (এনসেট) সাধারণ কলার কাছাকাছি একটি প্রজাতি। এই কলা শুধু ইথিওপিয়ার একটি অংশে খাওয়া হয়। সাধারণ কলার মতো দেখতে এই ফল অভোজ্য। কিন্তু তার কাণ্ড ও শিকড় গাঁজন করা যায়। তা জাউ (পোরিজ) ও রুটি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কলার মতো দেখতে এই ফসলের খাদ্য হিসেবে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার

দ্য ইকোনমিক জানিয়েছে, প্রধান প্রধান বিভিন্ন খাবারের উচ্চ মূল্যের কারণে পর্যাপ্ত খাবারের নিশ্চয়তা নেই এমন মানুষের সংখ্যা ইতিমধ্যে বিশ্বে ৪৪ কোটি থেকে বেড়ে ১৬০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আরও প্রায় ২৫ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। যদি যুদ্ধ চলতে থাকে এবং বিশ্ববাজারে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরবরাহ সীমিত হয়, তাহলে আরও কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারেন।

The post ২০৫০ সালে কেমন হতে পারে আপনার খাবারের মেন্যু appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%ab%e0%a7%a6-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a6%b9%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%86%e0%a6%aa/