Sunday, October 31, 2021

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মেঘদল ব্যান্ডের নামে মামলা

ফাতেহ ডেস্ক:

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’, হজের এই পবিত্র বাক্যটিকে গানের মধ্যে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মিউজিক ব্যান্ড ‘মেঘদল’র বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

গতকাল রোববার (৩১ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ১ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এর আগে ২৮ অক্টোবর মেঘদলের সাতজনের নামে মামলার আবেদন করেন ইমরুল হাসান নামের এক আইনজীবী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশের দিন রোববার ধার্য করেন।

মামলায় মেঘদলের ভোকাল শিবু কুমার শিল, মেজবা-উর রহমান সুমন, গিটারিস্ট ভোকাল রাশিদ শরীফ শোয়েব, বেজ গিটারিস্ট এম জি কিবারিয়া, ড্রামস আমজাদ হোসেন, কীবোর্ড তানভীর দাউদ রনি ও বাঁশি সৌরভ সরকারকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী ইমরুল হাসান নিজেই এ তথ্য জানান।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৬ অক্টোবর বাসায় অবস্থানকালে সকাল ৭টার দিকে ইউটিউবে দেখতে পান গানের তালে হজের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিকে হজরত নিষিদ্ধ বাদ্য বাজনা তথা আধুনিক মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে বিকৃত সুরে গান আকারে বিকৃতাকারে অশ্রদ্ধার সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাতালের ন্যায় গাওয়া হচ্ছে।

এ দোয়া প্রতিটি মুসলিমমের কাছে বিশুদ্ধ ও পবিত্র। এ দোয়া বা প্রার্থনা সাধারণত হজের সময় বিনয়ের সঙ্গে শ্রদ্ধাভক্তি দিয়ে পাঠ করা হয়। এ গান তার ধর্মানুভূতিতে আঘাত হেনেছে অভিযোগ করে মামলার আবেদন করেছেন এই আইনজীবী। ইমরুল হাসান মেঘদলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় তিনি কদমতলী থানায় মামলা করতে যান। তবে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ না করে তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।

 

The post ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মেঘদল ব্যান্ডের নামে মামলা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%ac%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a7%87/

মুসলমানদেরকে ইব্রাহিমি মসজিদে ঢুকতে দিচ্ছে না ইজরাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের ইব্রাহিমি মসজিদকে মুসলমানদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে ইজরাইল। এখন এ মসজিদটিতে নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এ মসজিদের পরিচালক। রোববার এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে ইয়েনি শাফাক।

আনাদোলু এজেন্সিকে ওই মসজিদের পরিচালক শেখ হেফফি আবু আসিনিনা বলেন, ইজরাইলের সেনাবাহিনী শুধুমাত্র ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ইব্রাহিমি মসজিদে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। ইহুদিদের ছাইয়ে সারাহ উৎসব পালনের জন্য তাদেরকে ইব্রাহিমি মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

শুক্রবার দুপুর ৩টার দিতে এ মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়। শনিবার এ মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয় রাত ১০টার দিকে।

প্রত্যেক বছর ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসবের সময় ইজরাইলি সেনাবাহিনী ১০দিনের জন্য মুসলমানদেরকে এ মসজিদে প্রবেশ করতে দেয় না।

ইহুদি ও মুসলিম ধর্মের মানুষদের কাছে হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদ খুবই প্রবিত্র এক স্থান। দু’ধর্মের মানুষদের বিশ্বাস এখানে ইব্রাহিম, ইয়াকুব ও ইসহাক নবীর কবর আছে। ১৯৯৪ সালে বারুক গোল্ডস্টেইন নামের এক ইহুদির হাতে ২৯ ফিলিস্তিনি নামাজরত অবস্থায় গণহত্যার শিকার হন। এ গণহত্যার পর ইব্রাহিমি মসজিদকে ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেয় ইজরাইলি কর্তৃপক্ষ।

সূত্র : ইয়েনি শাফাক

The post মুসলমানদেরকে ইব্রাহিমি মসজিদে ঢুকতে দিচ্ছে না ইজরাইল appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%87%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%ae/

দেশের ৩৫ শতাংশ তরুণ সারাক্ষণই ইন্টারনেটে থাকেন

ফাতেহ ডেস্ক:

দেশের ৮৬ শতাংশ তরুণ কভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে ইন্টারনেটে আরও বেশি সময় কাটাচ্ছেন। এরমধ্যে ৩৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, তারা সারাক্ষণই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এছাড়া ১৫ শতাংশ প্রধানত সন্ধ্যায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং কেবল ২ শতাংশ শুধু স্কুল চলাকালে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।

কভিডের পরিপ্রেক্ষিতে তরুণদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার ও অনলাইন বুলিং কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল একটি জরিপ করেছে। সেই জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড–এই চারটি দেশে জরিপটি করা হয়েছে। গ্রামীণফোনের করপোরেট কমিউনিকেশনস ম্যানেজার তাজরিবা খুরশীদ এ তথ্য জানান।

জরিপে তিন হাজার ৯৩০ জন অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ১৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ছিলেন বাংলাদেশি তরুণ। এই তরুণদের ৮৫ শতাংশের মতে, অনলাইন বুলিং একটি মারাত্মক সমস্যা। জরিপে অংশ নেওয়া দেশের ২৯ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, কভিড প্রাদুর্ভাবের আগেই তারা বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন, যেখানে ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে তারা আরও বেশি অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশের ৮ শতাংশ তরুণ সপ্তাহে অন্তত এক বা একাধিকবার অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপস এবং অনলাইন গেমিং ও ভিডিও গেম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম–এ তিনটি মাধ্যমে সাধারণত তরুণরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

 

The post দেশের ৩৫ শতাংশ তরুণ সারাক্ষণই ইন্টারনেটে থাকেন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a7%a9%e0%a7%ab-%e0%a6%b6%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b6-%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%95/

ভারতে বেড়েছে শিশু আত্মহত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

২০২০ সালে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৩১ শিশু আত্মহত্যা করে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১১ হাজার ৩৯৬ শিশু আত্মহত্যাজনিত কারণে মারা গেছে। এটি ২০১৯ সালে ঘটা এ ধরনের ৯৬১৩টি মৃত্যুর থেকে ১৮ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৯৪১৩টি থেকে ২১ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে পারিবারিক সমস্যা (৪০০৬), প্রেমঘটিত (১৩৩৭) ও অসুখ (১৩২৭) ছিল শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সী) আত্মহত্যার প্রধান কারণ। এ ছাড়াও ছিল মতাদর্শগত কারণ বা বীর পূজা, বেকারত্ব, দেউলিয়াত্ব, পুরুষত্বহীনতা বা বন্ধ্যাত্ব এবং মাদকাসক্তি কিছু শিশুর আত্মহত্যার পেছনে দায়ী ছিল।

চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (সিআরওয়াই)-এর পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর প্রীতি মাহারা বলেছেন, মহামারির শুরু থেকেই এটি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সাইকোর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন একটি উদ্বেগ ছিল। সামাজিক সুস্থতা এবং সাম্প্রতিক ন্যাশনাল ক্রাইম সার্ভিস ব্যুরো ডাটা আসলে এই ভয়কে আন্ডারস্কোর করে যে মহামারিটি বাচ্চাদের মানসিক ট্রমাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে।

পিটিআইকে তিনি বলেন, এনসিআরবি ডাটা জানাচ্ছে, ২০২০ সালে মোট ১১ হাজার ৩৯৬ শিশু আত্মহত্যা করে। এদের মধ্যে ছেলে শিশু পাঁচ হাজার ৩৯২ এবং মেয়ে শিশু ছয় হাজার চারজন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩১ শিশুর আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ প্রতিঘণ্টায় একজনেরও বেশি।

তিনি আরো বলেন, শিশুরা গৃহবন্দিত্ব এবং বন্ধু, শিক্ষক বা বিশ্বাসযোগ্য অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘসময় মিশতে না পেরে প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে গেছে। অনেকে তাদের প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছে। পারিবারিক স্তরে সংক্রামণের ভয় এবং গভীর আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। অনেক শিশু পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা এবং ফলাফলসম্পর্কিত বিশাল অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়েছে।

প্রীতি মাহারা বলেন, বিশাল সংখ্যক শিশু, বিশেষ করে যারা বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের ছায়ায় বসবাস করে, তারা অনলাইন ক্লাসে যোগদান করতে পারছিল না। তারা ডিজিটাল বিভাজনের দ্বারা প্রধানত প্রভাবিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে অন্য অনেকে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত এক্সপোজারের শিকার হয়েছিল। হয়েছিল অনলাইন বুলিং ও অন্যান্য সাইবার-অপরাধের শিকার। এসব ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার সামগ্রিক উদ্বেগের সাথে যুক্ত। তাদের কোমল মনের জন্য অবশ্যই খুব বেশি সহ্য করা সম্ভব ছিল না।

সূত্র : এনডিটিভি

The post ভারতে বেড়েছে শিশু আত্মহত্যা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a7%9c%e0%a7%87%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%81-%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%a4/

আজ শুরু হচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান

ফাতেহ ডেস্ক:

দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে আজ সোমবার (১ নভেম্বর)।

আজ শুধু রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই কার্যক্রম চলবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

আগামীকাল হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সাউথব্রিজ স্কুলে টিকা দেওয়া হবে।

সব মিলিয়ে ঢাকায় আপাতত আটটি স্কুলকেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

টিকা দেওয়ার পর কোনো শিশুর প্রয়োজন হলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, উত্তরা কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলছিল। গত ১২ অক্টোবর মানিকগঞ্জে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের ১২০ জন শিক্ষার্থীকে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়। এরপর আজ থেকে শুরু হচ্ছে শিশুদের রুটিন টিকাদান কর্মসূচি। যাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আপাতত প্রতিদিন ৪০ হাজার শিশুকে করোনার টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

The post আজ শুরু হচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%9c-%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%81-%e0%a6%b9%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7/

প্রাইমারি স্কুলে কুরআন ও নামাজ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন : আইম্মা পরিষদ

ফাতেহ ডেস্ক:

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে পবিত্র কুরআন ও নামাজ শিক্ষার জন্য সব প্রাইমারি স্কুলে কুরআন এবং নামাজ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের জাতীয় নির্বাহী কমিটি।

গতকাল পুরানা পল্টনস্থ একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় ১৫ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ এবং ২২৩ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার নাম ঘোষণা করা হয়।

পরিষদের সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় সহসভাপতি আল্লামা ওমর ফারুক সন্দিপী, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মুফতি হেমায়েতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি।

The post প্রাইমারি স্কুলে কুরআন ও নামাজ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন : আইম্মা পরিষদ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%86%e0%a6%a8-%e0%a6%93/

মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে আতঙ্ক

ফাতেহ ডেস্ক:

বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদ ও মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক হামলায় ৬ জন নিহত হবার পর ক্যাম্পে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলার জন্য স্থানীয় রোহিঙ্গারা আরসাকে দায়ী করছে। যদিও আরসা হামলার দায় অস্বীকার করেছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক কাজ করছে। ক্যাম্পের বাইরে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে স্থানীয় অধিবাসীদেরও মধ্যেও ভয়-আতঙ্ক বাড়ছে।

সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায় হামলার ভয়াবহ চিত্র- মসজিদ, মাদ্রাসা এবং হেফজোখানার দরজা জানালায় এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। মসজিদের ভেতরে রয়েছে রক্তের কালসিটে দাগ। ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই চারজন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরো দুজন মারা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত তিনটার পর সশস্ত্র রোহিঙ্গা হামলা চালায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তারা তছনছ করে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট কেন আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি?

হামলার সময় তারা শুধু এই মসজিদ মাদ্রাসায় আক্রমণ করেই থেমে থাকেনি, আশপাশের প্রতিটি বাড়ির সামনেও পাহারা বসায় যাতে কেউ প্রতিরোধ করতে না পারে। আশপাশের রোহিঙ্গাদের দাবি কয়েকশ রোহিঙ্গা ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা বলেন, এখনো তাদের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলতেও ভয়-আতঙ্ক কাজ করছে সবার।

ঘটনার পর সার্বক্ষণিক পুলিশের পাহারা বসেছে, চলছে দিনে রাতে টহল। কিন্তু ক্যাম্পের পরিস্থিতি থমথমে বলেই মনে হয়েছে।

মসজিদ মাদ্রাসায় কেন হামলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতৃস্থানীয় একজন রোহিঙ্গা বলছিলেন, এ মাদ্রাসা ও মসজিদের অবস্থান ছিল স্পষ্টতই আরসার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।আরসা এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাদের সমর্থন না করায় আগেও হুমকি দিয়েছে। বলা হয়েছে মাদ্রাসা ছেড়ে দিতে। তারা (আরসা) চেয়েছে এই এলাকায় জন্য এই মাদ্রাসা তাদের একটা হেডকোয়ার্টার হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো এই মসজিদ মাদ্রাসায় এত ভয়াবহ হামলা কেন?

এ প্রসঙ্গে ওই রোহিঙ্গা বলেন, অনেক আগে থেকেই এই মাদ্রাসা তাদের টার্গেট ছিল। মাদ্রাসায় সাড়ে তিনশ’র মতো রোহিঙ্গা ধর্মীয় শিক্ষা নেয়।

সম্প্রতি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মহীবুল্লাহ হত্যার পর বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে এই মাদ্রাসা কেন্দ্রিক রোহিঙ্গারা। এছাড়া মহীবুল্লাহ হত্যার পর ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশে রোহিঙ্গাদের অনেকে পাহারা দেয়া শুরু করে।

১৮ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গারাও পাহারা দিত এবং গত কয়েক সপ্তাহে তারা ৪/৫জন দুস্কৃতিকারীকে ধরতে সহায়তা করেছে। এছাড়া ওই মসজিদের খুতবায় ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বয়ান করা হতো। যা আরসার বিপক্ষে যায়।

ক্যাম্পের বাজার-ঘাট দোকানে চাঁদাবাজি এবং নারী নির্যাতন নিয়েও সোচ্চার ছিল হামলার শিকার মসজিদ ও মাদ্রাসার পরিচালনার সাথে যুক্তরা।

ক্যাম্পে আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

ক্যাম্পে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন আরো নাজুক হয়ে পড়ছে বলেও মনে করেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। সেখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাচ্ছে বলেই তাদের অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পের ভেতর চাদাবাজি, মাদক বাণিজ্য এবং নানা রকম অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটছে অহরহ। ক্যাম্পে মারামারি রক্তক্ষয়ী সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গারাও নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

মসজিদের পাশে অবস্থানরত আরেকজন নারী ওই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলছিলেন, “রাতে ঘুম হয় না আমাদের। নামাজ-দোয়া পড়ি। আবার মারামারি কাটাকাটি হয় কিনা এ জন্য আতঙ্ক।”

এদিকে নিরাপত্তা এবং রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে ক্যাম্পের চারদিকে এখন কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই অপরাধ কর্মকাণ্ড।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

The post মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে আতঙ্ক appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%b8%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%a6-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%98/

চট্টগ্রামে জাতীয় সীরাত কনফারেন্স ৫ নভেম্বর

ফাতেহ ডেস্ক:

চট্টগ্রামে আল্লামা আবুল খাইর ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও রিসালাতুল খাইর এর ব্যবস্থাপনায় জাতীয় সিরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।আগামী শুক্রবার (৫নভেম্বর) বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।

এতে সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম আল্লামা সুলতান যওক নদভী।

সীরাত কনফারেন্স আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম দারুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর ডক্টর সাইয়েদ আবু নোমান,চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার সহকারী মুহতামিম মাওলানা ফুরকানুল্লাহ খলিল,বিশিষ্ট লেখক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, বিশিষ্ট লেখক ও কবি মাওলানা মুসা আল হাফিজ, মাওলানা আফিফ ফোরকান, দাঈ, মদিনা ইউনিভার্সিটি।

এছাড়াও জাতীয় ও স্থানীয় উলামা-মাশায়েখ,বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও সুধীবৃন্ধ বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।

রিসালাতুল খাইর’র চেয়ারম্যান মাওলানা সোহাইল সালেহ ও সদস্য সচিব মাওলানা খন্দকার হামিদুল্লাহ সীরাত কনফারেন্সে যথাসময়ে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

The post চট্টগ্রামে জাতীয় সীরাত কনফারেন্স ৫ নভেম্বর appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%9a%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a7%9f-%e0%a6%b8%e0%a7%80%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a6%95/

গুরগাঁওয়ে মুসলিমদের নামাজে বাধা: কী ঘটছে সেখানে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের অনলাইন এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার জুমার নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগে গুরগাঁওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক ডজন মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই উগ্র ডানপন্থি গ্রুপগুলোর সদস্য। বলা হয়েছে, এসব গ্রুপের মধ্যে রয়েছেন বজরং দল কর্মীরাও।

গুরগাঁওয়ের ১২-এ সেক্টরে একটি প্রাইভেট প্রপার্টিতে শুক্রবার শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করছিলেন মুসলিমরা। কিন্তু জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে তাতে বাধার সৃষ্টি করা হয়। এমনিতেই ওই এলাকায় হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মুসলিমরা এদিন যখন নামাজ আদায় করছিলেন তখন বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজ্যের র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও।

মুসলিমরা কোথায় নামাজ আদায় করতে পারবেন তা নির্ধারণ করে গুরগাঁও জেলা প্রশাসন ৩৭টি স্থানকে নির্দিষ্ট করে দেয়। তার মধ্যে ৪৭ এবং ১২-এ সেক্টর দুটি রয়েছে। একই রকম উত্তেজনার প্রেক্ষিতে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে এসব স্থানকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে গত সপ্তাহে ৪৭ নম্বর সেক্টরে বিক্ষোভ হয়। এরপরেই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী এমএল খাত্তার সাংবাদিকদের বলেছেন, সবারই প্রার্থনা করার অধিকার আছে। কিন্তু যারা প্রার্থনা করছেন তাদের উচিত হবে না সড়ক চলাচল বন্ধ করে দিয়ে তা করা। তিনি আরও বলেন, কারও উচিত হবে না ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া অথবা অন্যের প্রার্থনায় বিঘ্ন ঘটানো। জেলা প্রশাসন যেসব স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেখানে যদি তারা নামাজ আদায় করেন, তাহলে তো তাতে বিঘ্ন ঘটানো উচিত নয়। বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি ভালোভাবে মোকাবিলা করছে।

৪৭ নম্বর সেক্টরে চার সপ্তাহ ধরে এমন প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। বার্তা সংস্থা এএনআই বলেছে, তারা আরও দাবি করেছেন যে, ওই স্থানে একদিনে একবার মাত্র নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কয়েক সপ্তাহে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করা হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল খোলা স্থানে ‘নামাজ বন্ধ কর’ লেখা প্ল্যাকার্ড। দাবি তোলা হয়েছিল ‘মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় কর’।

গত সপ্তাহে এসিপি আমান যাদব বলেছেন, সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তা সত্ত্বেও তারা সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন। ওদিকে কেন্দ্রীয় সামাজিক বিচার বিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী কৃষাণ পাল গুরজার বলেছেন, যদি নামাজের জন্য ওই স্থানগুলো অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে নামাজের জন্য তা ব্যবহার অবশ্যই করতে দেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, এমপি অনন্ত কুমার হেজ সহ বিজেপি’র কিছু সিনিয়র নেতার হতাশাজনক মন্তব্যের কারণে গুরগাঁওয়ে এই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ওইসব নেতারা এমনও বলেছেন, মসজিদ থেকে দেয়া আজান শব্দ দূষণ ঘটাচ্ছে।

The post গুরগাঁওয়ে মুসলিমদের নামাজে বাধা: কী ঘটছে সেখানে? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be/

মুহিবুল্লাহ হত্যা: আরও দুই আসামি গ্রেপ্তার

ফাতেহ ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। রোববার সকালে ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর ক্যাম্পের ডি-ব্লকের ছব্বির আহমদের ছেলে আবুল কালাম আকু (৩৪) ও একই ক্যাম্পের ডি/৪ ব্লকের সৈয়দ আনোয়ারের ছেলে নাজিম উদ্দিন (৩৫)।

নাইমুল হক জানান, শনিবার বিকেলে মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের উখিয়া থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হবে।

The post মুহিবুল্লাহ হত্যা: আরও দুই আসামি গ্রেপ্তার appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b9-%e0%a6%b9%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a6%93-%e0%a6%a6%e0%a7%81/

দুই দশকে সুন্দরবনের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪০২ শতাংশ

ফাতেহ ডেস্ক:

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সম্পদমূল্য ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই দশকের বেশি সময়ে বেড়েছে ৪০২ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৪৬টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে ‘দ্য চেইঞ্জিং ওয়েলথ অব নেশনস ২০২১’ শিরোনামে বিশ্ব সম্পদের পরিবর্তন নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রাকৃতিক পুঁজি, মানব পুঁজি ও উৎপন্ন পুঁজি- এই তিন ধরনকে পরিমাপের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের হিসাব করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল এক হাজার ডলার। এটি ২০১৮ সালে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ২০০ ডলার। তবে দেশের মোট জাতীয় সম্পদে প্রাকৃতিক সম্পদের হার অনেকটাই কমেছে। ১৯৯৫ সালে দেশের মোট জাতীয় সম্পদে প্রাকৃতিক সম্পদের অবদান ছিল ১২ শতাংশ। এটি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে মানবসম্পদের অবদান এখন ৬৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর উৎপাদিত সম্পদ ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ (সুন্দরবন) সম্পদমূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ১৯৯৫ সালে ছিল যেখানে ২০৪ কোটি ডলার, সেখানে ২০১৮ সালে এই সম্পদের মূল্য চার গুণ বা ৪০২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক হাজার ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যে কয়টি দেশে দ্রুত ম্যানগ্রোভের সম্পদ মূল্য বেড়েছে, তার অন্যতম বাংলাদেশ। এ খাতে সম্পদ মূল্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১৯টি দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় শীর্ষে চীন ও ভিয়েতনাম দ্বিতীয়। ম্যানগ্রোভের বিস্তৃতি, বন্যার ঝুঁকি, বন্যা থেকে ধ্বংসের ঝুঁকিতে থাকা উৎপন্ন পুঁজির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ম্যানগ্রোভের মূল্য ও এর পরিবর্তন পরিমাপ করেছে বিশ্বব্যাংক।

The post দুই দশকে সুন্দরবনের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪০২ শতাংশ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%87-%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa/

হিজাব খুলতে বাধ্য করায় ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

একজন পুরুষ অফিসারের সামনে বুকিং ছবির জন্য হিজাব অপসারণে বাধ্য করায় শহরের ৪জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একজন মুসলমান নারী ফেডারেল মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শহরটির পুলিশ প্রধান ডেনিস এমি, দুজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন পুলিশ সার্জেন্টকে আসামি করা হয়েছে। খবর ডেট্রয়েট নিউজ।

গত সেপ্টেম্বর মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে হেলানা বোয়ে নামের একজন মুসলিম নারী অভিযোগ করেন যে, ফার্নডেল পুলিশ তাকে তার নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করে বুকিংয়ের ছবির জন্য হিজাব খুলতে বাধ্য করে। তিনি ক্ষতির পাশাপাশি আদালতের আদেশ চাইছেন যাতে পুলিশ বিভাগকে ছবি বুকিংয়ের জন্য কোনও এবং সমস্ত ধর্মীয় মাথার আবরণ অপসারণের প্রয়োজন হতে নিষেধ করা হয়।

বোয়ে আদালতকে ফার্নডেল পুলিশকে আদেশ দিতে বলছেন যে হিজাব ছাড়া তার তোলা ছবিটি কখনোই প্রচার না করা, জনসাধারণের রেকর্ড থেকে সরিয়ে ফেলা এবং ভবিষ্যতে সমস্যা প্রতিরোধের জন্য অ-বৈষম্যহীন নীতি গ্রহণ করে। কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস বা এমআই-সিএআইআর-এর মিশিগান অধ্যায় বোয়ের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অভিযোগ সমাধানের আহ্বান জানায়। এই দলের কর্মকর্তারা বলেছেন, বোয়ের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে তারা কেবল মাত্র শহরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন সাড়া মেলেনি। এর প্রায় এক মাস পর হেলানা বোয়ে গতকাল শুক্রবার রাজ্যের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের যুক্তরাষ্ট্রের জেলা আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন।

The post হিজাব খুলতে বাধ্য করায় ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ac-%e0%a6%96%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a7%aa-%e0%a6%aa/

Saturday, October 30, 2021

অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিতে আবারও তালেবানের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আবারও বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যমন্ত্রী জবিউল্লাহ মুজাহিদ শনিবার রাজধানী কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার সব প্রেক্ষাপট প্রস্তুত রয়েছে।

তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলে আফগানিস্তানসহ গোটা অঞ্চলের ওপর এর যেসব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা তুলে ধরে জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, এসব সমস্যা দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তালেবান সরকার সপ্তম শ্রেণির উপরের ক্লাসগুলোর ছাত্রীদের স্কুলে যেতে দিচ্ছে না এবং নারী চাকুরিজীবীদেরও কর্মস্থলে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার পেছনে এ বিষয়গুলো কাজ করছে কি?

এ প্রশ্নের উত্তরে জবিউল্লাহ মুজাহিদ সাফ জানিয়ে দেন, “এগুলো সম্পূর্ণ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এগুলোর সঙ্গে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এসব বিষয়ে কথা বলা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।”

 

The post অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিতে আবারও তালেবানের আহ্বান appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%80-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80/

ঢাকায় আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ

ফাতেহ ডেস্ক:

বাংলাদেশের আমন্ত্রণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ঢাকায় আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, তিনদিনের সফরে আগামী ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এটিই হবে তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। সফর ঘিরে এরই মধ্যে দু’দেশের মধ্যে প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে এ সপ্তাহে দু’দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে দিল্লিতে আলোচনা হয়েছে।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তার ঢাকা সফরের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়নি।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। দিনটিকে স্মরণীয় করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিতে ভারত আয়োজিত মৈত্রী দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানাকে অতিথি হিসেবে নয়াদিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে বিশ্বের ১৮টি দেশে যেখানে ওই দুই দেশের মিশন আছে, সেখানে মৈত্রী দিবস উদ্‌যাপন করবে। যৌথ আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী এ দু’দেশের সম্পর্ক ও বন্ধন তুলে ধরবে। দু’দেশ নিজেদের এ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।

The post ঢাকায় আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a2%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%86%e0%a6%b8%e0%a6%9b%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f/

Friday, October 29, 2021

হাসান রোবায়েত-এর ‘মোহাম্মাদ’ : চরণে চরণে ছুটে নাতের ফোয়ারা

মুজিব হাসান:

কবিদের জন্য নিজের নামটি কাব্যিক হওয়া কবিতার মতো অলৌকিক ব্যাপার। হাসান রোবায়েতের নামের সঙ্গে—তার হৃদয় ভেজানো কবিতা পড়ার বদৌলতে—পরিচিত হওয়ার পর থেকে এ বোধটুকু মনের মধ্যে গেঁথে যায়। এরকম কাব্যিক নামের অধিকারী একজন কবির কবিতা সময়ের চৌকাঠে সাবআ মুআল্লাকার মর্যাদায় উৎকীর্ণ থাকবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

হাসান রোবায়েতের কবিতাকে আমার কাছে মনে হয় এক ধরনের মায়াকাজল। পাঠক তার কবিতাগুচ্ছ চোখের সামনে মেলে ধরলে পাপড়িদামে লেগে যায় মুগ্ধতার কালো কান্তি। পঙক্তির পরতে পরতে এত মোহন গচ্ছিত রাখেন তিনি, তার কবিতা পড়লে গেলে সারিবদ্ধ অক্ষরের আয়নায় ভেসে উঠে নিজেরই প্রতিবিম্ব; মনে হয় আমাকে যেন পড়ে চলেছি আমি—এমন আত্মপাঠের সৌরভে ভরপুর তার কবিতা-কানন। ‘মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ সেই কবিতা-কাননের এক দিব্যকান্তি ফুলের প্রস্ফুটন।

ঘনঘোর ফ্যাসিবাদের ধোঁয়াশাচ্ছন্ন সময়ে হাসান রোবায়েতের ‘মোহাম্মাদ’ এক আদর্শিক আলোর মশাল; যে আদর্শের প্রোজ্জ্বল বাতিঘর রাসুল মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ চিরায়ত বিশ্বাসের বোধ থেকে বিকশিত হয়েছে তার হৃদয়জ পঙক্তিমালা, চরণে চরণে ছুটেছে নাতের ফোয়ারা।

সকল মানবাত্মার অভিকর্ষ যাঁর দিকে, তিনি আমাদের নবীজি; তাঁকে নিয়ে কবির পরম পঙক্তি—
‘গুহারও হেরা থাকে
যেমন মানুষের মোহাম্মাদ—’

যাঁর মাধুরিময় চরিত্রের পরাগ আমাদের সম্মোহিত করে, নিখাদ সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু তিনি, আমাদের সান্দ্র রাসুল, তাঁকে নিয়ে কবির অমিয় অভিব্যক্তি—
‘সমস্ত ফুলের কাছে তার ঘ্রাণই যেন মোহাম্মাদ—’

মনের গহন থেকে সুরের মোহন মিশিয়ে নিজের ভাষায় রাসুলকে ডাকার চেয়ে সুখকর আর কিছু নেই। প্রতিজন বাংলাভাষী উম্মতের অমিয় আকুতি এটি—
‘রসুল, তোমাকে যেন চিরকাল ডেকে উঠি বাংলা ভাষায়—’

এ বাংলাভূমি থেকে মদিনার দূরত্ব যোজন দূরে। কিন্তু রাসুলকে ডাকার প্রতিটি দিক হয়ে যায় মদিনার অভিমুখ—
‘যেখানেই ডাকা যায় মোহাম্মাদ, সেখানেই মদিনা—’

রাসুলের ইশক চিরদূর মদিনাকে এনে দেয় বাংলা-মাটির প্রতিটি চরণপাতে—
‘ইশক এমন
যেখানেই পা রাখি হয়ে যায় মদিনার পথ—’

নবীজির ভালোবাসা তাঁকে এনে দেয় সন্নিকটে। ব্যাকুল হৃদয় মানে না কোনো দূরত্ব—
‘নবীজির ছায়া থেকে আমার দূরত্ব ততদূর
খাদিজার ঘর থেকে যতদূর হেরার সুড়ঙ’

দরদিয়া রাসুলের জন্য উম্মতের আকুল হৃদয়ের সমস্ত কান্না—
‘আমার প্রতিটা মোহাম্মাদ
চলে যায় ফাতেমার কান্নার দিকে—’

কথা ও কলমের প্রতিটি সেরেনাদ নবীজির প্রতি সমর্পিত দরুদ—
‘কার যেন মায়ের দরুদ ইতস্তত গড়িয়ে যাচ্ছে নবীজির রওজা বরাবর—’

ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত আজকের সমাজ। এর বিরুদ্ধে স্ফুরিত এসময়ের প্রতিটি অকুতোভয় কণ্ঠস্বর যেন একেকটি বদর—
‘যেকোনো বদর যেন জেগে ওঠে জুলুমের পাশে—’

বস্তুবাদের মাতাল হাওয়া আঘাত হানছে চিরন্তর বিশ্বাসের কপাটে। তারা কেড়ে নিতে চায় উদীপ্ত হৃদয়ের অমিয় বিভূতিগুলো। এসময়ে কবির পঙক্তিতে অরুণিমার মতো ভেসে ওঠে এ আশাবাদ—
‘যদি আবরাহা কাছে আসে তবে কাবার বিজয়ও খুব দূরে নয়—’

মোহাম্মাদ-এর কবি হাসান রোবায়েত, তার এসব পরম পঙক্তির কারণে হয়ে উঠেছেন বাংলাভূমির শায়েরে রাসুল-নবীজির কবি। তার প্রতি রইল আমাদের কোটি হৃদয়ের হার্দিক শুভ কামনা। জয়তু হাসান রোবায়েত!

The post হাসান রোবায়েত-এর ‘মোহাম্মাদ’ : চরণে চরণে ছুটে নাতের ফোয়ারা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%a4-%e0%a6%8f%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d/

কাঁচ ও কাঞ্চন

সাইফুল্লাহ সুবহান:

রফিক সাহেব বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছেন। লতীফ এক পেয়ালা চা আর আজকের পত্রিকা দিয়ে গেল।

লতীফ বাসার কাজের লোক। বয়স সতেরো-আঠারো হবে। ঘরের ছোটখাটো কাজ করে। সুযোগ পেলে কাজে ফাঁকি দেয়। গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে রফিক সাহেব পত্রিকায় চোখ বুলাতে লাগলেন। পত্রিকা ভরা নানা খবর। খবরে খবরে সয়লাব। রফিক সাহেব তবু খুঁটিয়ে পড়ার মতো কিছু পেলেন না। পত্রিকা থেকে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালেন। শহরতলীর সরু পথ। পথের ওপাশে একটা টিনশেড বাড়ি। বাড়িটার সদর দরজা হাট করে খোলা। বাড়ি ভরা লোক। লোক আসছে। লোক যাচ্ছে। ঘরের লোক। বাইরের লোক। সবাই হাসছে। কথা বলছে। চারপাশ কেমন একটা উৎসবের আমেজে ভাসছে।

বাড়িটা অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর আজমল সাহেবের। তিনি শিক্ষিত মানুষ। নানান মানুষের আসা যাওয়া তার কাছে। এসব মানুষেরা রোজই আসে। রোজই বাড়ির সদর দরজা হাট করে খোলা থাকে। কেন আসে এত লোক ! কী আছে এই মধ্যবিত্ত প্রাক্তন প্রফেসরের কাছে! রফিক সাহেব বুঝতে পারেন না। শুধু তাকিয়ে থাকেন। মানুষের আসা যাওয়া দেখেন। দেখতে তার ভালো লাগে। একধরনের পুলক অনুভব করেন। মানুষ দেখার পুলক।

এই পুলক পেতে পেতে একসময় তার পিপাসা বাড়ে। মানুষের সঙ্গ লাভের পিপাসা! মানুষের সাথে মন খুলে দুটো কথা কইবার পিপাসা! একটু কথা কইবার লোকও তিনি পান না! অথচ আজমল সাহেবের ওখানে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। রফিক সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়। আজমল সাহেবের উপর রাগ চড়তে থাকে। তাকে আচ্ছা মতো গালাগাল দিতে ইচ্ছে করে। তখন তিনি বারান্দা ছেড়ে রুমে চলে আসেন। দেয়ালে টানানো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে তোলা ছবিগুলোর সামনে দাঁড়ান। বহুদিন ধরে এটাই  হয়ে দাঁড়িয়েছে তার রোজকার নিয়ম ।

রফিক সাহেব আর আজমল সাহেব ছোটবেলার বন্ধু। সেই ছোটবেলার, যখন তারা সাহেব ছিলেন না। কেবল রফিক আর আজমল ছিলেন। মুখোমুখি বাড়ি তাদের। দু’বাড়ির মাঝ দিয়ে শহরতলীর প্রায় নির্জন পথ। পথটা বহুদূর অবধি গিয়ে মিশে গেছে বড় রাস্তায়।

এই বড় রাস্তা ধরে পুবদিকে কিছু দূর এগোলে শোভনপুর হাইস্কুল। এই স্কুলেই পড়তেন তারা দুজন। এসএসসি পড়তে পড়তে পড়ালেখা ছেড়ে দেয় রফিক। তার বাবা তখন শহরতলীর বেশ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সেও নেমে পড়ে ব্যবসায়। আজমল পড়াশুনা চালিয়ে যেতে থাকে। মাঝেসাঝে রফীকের সাথে কথা হয়। রফিক তার উন্নতির গল্প শুনায়। পড়াশুনা যে নেহাৎ সময় নষ্ট বৈ কিছু নয় নানাভাবে বুঝায় সে কথা।

দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক বছর। দুজনেই সাহেব হয়ে ওঠে। রফিক হয়ে যায় বিশিষ্ট শিল্পপতি রফীকুল ইসলাম সাহেব। শহরতলীর এক কলেজে নিয়োগ পেয়ে আজমল হয়ে ওঠে প্রফেসর আজমল সাহেব।

শিল্পপতি রফিক সাহেব ব্যবসার কাজে দেশ বিদেশ করে বেড়ান। শহরতলীর পৈতৃক ভিটায় বছর দু’বছরে এক আধবারের বেশি আসার সুযোগ হয় না। তবু বাড়িটা তিনি বানিয়েছেন আলিশান। অবশ্য এর কারণও আছে। বাপদাদার ভিটা ছেড়ে শহরের অভিজাত এলাকায় গিয়ে থাকতে তার বাবা কখনোই রাজি হননি। বিপত্নীক এই মানুষটি স্ত্রীর স্মৃতি বিজড়িত এ বাড়িতে থাকতেই বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। রফিক সাহেব তাই বাবার জন্য এখানেই গড়ে দিলেন প্রাসাদোপম ভিআইপি বাড়ি। শোনা যায়, এই প্রাসাদোপম বাড়িতে থেকেও তার বাবা শেষ জীবনে অসুখী ছিলেন। একমাত্র ছেলে, বউমা আর নাতিপুতির সঙ্গ লাভের জন্য হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। সে সুযোগ তার হয়নি। রফিক সাহেব মাঝে মাঝে আসলেও তার বউ ছেলেমেয়েরা কখনো এ মুখো হয়নি। তার বাবাও শহরে যেতে রাজি হননি কখনো। শেষতক এই বিশাল বাড়িতে একাকী থেকে থেকেই একদিন নিঃসঙ্গ কবরের যাত্রী হন।

পিতৃ বিয়োগের বছর তিনেকের মাথায় বিপত্নীক হন রফিক সাহেব। তখন তার বয়স পঞ্চান্ন কি ষাট হবে। ধনীদের এ বয়স তেমন কিছু না। টাকা হলো চির যৌবনা। কখনো বুড়ো হয় না। মালিককেও বুড়ো হতে দেয় না। পঞ্চান্ন-ষাটের টগবগে যুবক(!) টাকার কুমির রফিক সাহেব যেকোন সময় বিয়ে থা করে ফেলতে পারেন। হয়ত তার আচরণে বিষয়টা আঁচ করা গিয়েছিল বা তার ভেতর এ ভাবনা আদৌ ছিলই না। কিন্তু তার ছেলে-মেয়েদের মাথায় হয়তো এ ভাবনাটাই ছিল। এ বয়সে বাবার বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করার অভিজ্ঞতা হয়ত তাদের জন্য খুব একটা সুখকর হতো না। অথবা আরো কিছু শরীক বৃদ্ধির ঝুঁকি তারা নিতে চাইল না। ভাইবোনরা সবাই মিলে তাই একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো।

পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে সিদ্ধান্তের কথাটা শুনালো বড় ছেলে। বাবা! তোমার তো বয়স হয়েছে। সারাজীবন কষ্ট করেছো। আর কত! এবার তুমি বিশ্রাম নাও! ব্যবসা-পাতির ঝক্কি ঝামেলা আমরাই সামলে নেব। ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। বাকি ছেলে মেয়েরাও তাকে সমর্থন দিল। রফিক সাহেব এই উথলে ওঠা দরদের উৎসের খোঁজ ধরতে ঠিকই পারলেন, কিন্তু কিছু বললেন না। বাহ্যিক স্বাগ্রহে তাদের কথাই মেনে নিলেন। একদিন সব হিসাবপত্র বুঝিয়ে দিয়ে পূর্ণ অবসর নিয়ে বাড়ির নিত্য সদস্য হয়ে ওঠলেন। নাতি নাতনিদের সাথে হেসে খেলে দিন কাটাতে লাগলেন।

কিন্তু অবসরের সুখ তার বেশিদিন সইলো না। বছর না ঘুরতেই হঠাৎ একদিন তিনি আবিষ্কার করলেন, যে লোকগুলো প্রত্যহ তাকে ফোন করে স্যার স্যার বলে মুখে ফেনা তুলত, তাদের কেউই এখন আর ফোন করেনা। ছেলে বউদের আদর আপ্যায়নও যেন কমে এসেছে। ছেলেমেয়েরাও আগের মতো আর প্রতিদিন খবর খোঁজ নেয় না। হয়ত ব্যস্ততার কারণে তাদের সময় হয়ে ওঠে না। কিন্তু রফিক সাহেবের মনে ঘুরতে লাগলো অন্য কথা। তার মনে হতে লাগলো এসবই তার প্রতি অবহেলা। এবং টাকার হাতবদলই এই অবহেলার একমাত্র কারণ। নইলে একসময়ের প্রিয়জনরা তার প্রতি এত উদাসীন হয় কী করে!

নিত্য অবহেলার কল্পনায় তিনি ভেতরে ভেতরে যন্ত্রণাদগ্ধ হতে লাগলেন। দগ্ধিভূত ভেতরের উত্তাপ বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে লাগলো। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেলো। আচরণের সংযতভাব কমতে লাগলো। তিনি যে অচিরেই সংসারের শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছেন এটা খুব বুঝতে পারলেন। স্থির করলেন এখানে আর থাকবেন না। বাকীটা জীবন শহরতলীর যে বাড়িটাতে তার জন্ম ও বড়ে ওঠা সেখানেই কাটিয়ে দিবেন।

নাস্তার টেবিলে তিনি কথাটা পাড়লেন। ছেলেমেয়েরা উপরে উপরে কিছুক্ষণ আমতা আমতাকরে শেষে রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন সাড়ম্বরে বউ ছেলেমেয়ে নাতিপুতি নিয়ে তিনি আপন জন্মভূমে নির্বাসিত হতে যাত্রা করলেন। কিছুদিন থেকে সবাই সুযোগ পেলেই আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে যার মতো চলে গেল। ডজন খানেক ঝি-চাকর নিয়ে তিনি এখানেই থেকে গেলেন। তারই বেদখল সাম্রাজ্য থেকে ছেলেরা প্রতি মাসে মাসোহারা পাঠায়। মাঝেমাঝে একটু হিসেব করে খরচ করার পরামর্শও দেয়। রফিক সাহেব হাসিমুখে সায় দেন। কিছু বলেননা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যান। ভাবেন, কী আশ্চর্য! দিনেদিনে রক্ষকরাই মালিক হয়ে ওঠেছে, মালিক হয়ে গেছে রক্ষকদের দয়ার ভিখারি।

দেয়ালে টানানো ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে তিনি তার সাফল্যের পরিমাপ করতে চান। তার ভেতরের সত্তাকে বুঝাতে চান, তিনিও আজমল সাহেবের চেয়ে কম সুখী নন। সহসাই সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নিজেকে কতক্ষণ আর ধোকা দেয়া যায়! তুলনার প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দেয়। মানুষ ও পরিবার বেষ্টিত আজমল সাহেবের জীবন কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তার কাছে। একটা তোলপাড় শুরু হয় বুকের ভেতরে।  ভেতরটা দুমরে মুচড়ে যায়। আজ ভুল মনে হওয়া রক্তে উদ্দাম জোয়ার তোলা যৌবনের সিদ্ধান্তের আক্ষেপে দুফোঁটা তপ্ত অশ্রু নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ওঠে আসে।

The post কাঁচ ও কাঞ্চন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%9a-%e0%a6%93-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%a8/

মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্বের লেখালেখি ও কাশ্মীরপ্রেম

আব্দুল্লাহ আল মুনীর:

ভূস্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে যুগের পর যুগ কথা হতে থাকবে। যতদিন কাশ্মীর মানুষের মুখে উচ্চারিত হবে, ততদিন নিজের প্রাসঙ্গিকতা জানান দিতে থাকবেন মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্ব। কাশ্মীরকে ধারণ করেছেন তিনি তার বর্ণাঢ্য জীবনে, অবিরত সচল কলমে, ইশকমাখা কবিতায়, সৃষ্টিশীল গদ্যে, বৈরী বাতাসের বিরুদ্ধে ঝড়তোলা সাংবাদিকতায়। তিনি এ-সবের মারফত দেখিয়েছেন কাশ্মীরকে এভাবেও উচ্চকিত যায়। পরের প্রজন্মের জন্য তিনি কাশ্মীর নিয়ে গর্ব করার, পাঠ করার এবং উজ্জীবিত হওয়ার জন্য রেখে গেছেন অজস্র উপাদান।

উনিশ শতকের হিন্দুস্তানে জাগরণ-তোলা সংবাদপত্রগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখি ফওক্বকে। একইসময়ে তাকে দেখা যায় আল্লামা ইকবালের শের-মজলিসে। কাশ্মীরের ইতিহাস নিয়ে সমৃদ্ধ কোনো কাজ প্রথমবারের মত করলেনও তিনি। কবিতা কী পত্রিকার সম্পাদকীয়! গদ্য কী পদ্য! সবখানে তার বুকজুড়ে কাশ্মীর আর কাশ্মীর। কাশ্মীরের অপরুপ মায়াময় পল্লীতে জন্মাবার সৌভাগ্যে যে ঋণ তৈরী হয়, তা কেবল ফওক্ব জীবনের ক্ষণে ক্ষণে পরিশোধ করেছেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে শিয়ালকোট শহরের নিকটে— বর্তমান পাকিস্তানশাসিত আজাদ কাশ্মীরের কোটলি জেলার হরনারায়ন এলাকায় মুন্সি লুধা খানের ঘরে মুন্সি মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্বের জন্ম। ঘড়তল প্রাইমারি স্কুলে সূচিত হয় তার শিক্ষাযাত্রা। উর্দু মিডল পাশ করেছেন শিয়ালকোট থেকে। সেখানেই কাব্যপ্রীতির সূচনা— জানিয়েছেন তিনি নিজেই। ১৮৯৬ এ ইংরেজি মিডল পাশ করেন। সেসময় আল্লামা ইকবাল পড়েন লাহোর গভর্মেন্ট কলেজে। আঞ্জুমানে ইত্তিহাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সাপ্তাহিক কবিতা আবৃত্তিসভা বা মুশাআরা অনুষ্ঠান হতো। সেখানেই সময়ের দুই শ্রেষ্ঠকবির মিলন। সেসময়ে ফওক্ব গজল, কাসিদা, রুবাঈয়্যাত, পদ্য লিখতেন দু’হাতভরে।

আল্লামা ইকবাল ও ফওক্ব

মুনশী ফওক্ব ছিলেন আল্লামা ইকবালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উভয়ই দিওয়ানা ছিলেন নিজেদের মাতৃভমি কাশ্মীরের ইশকে। ১৮৯৬ খৃষ্টাব্দে আল্লামা ইকবাল ও ফওক্ব বুলবুলে হিন্দ খ্যাত নওয়াব মির্জা দাগ দেহলভীর শাগরিদ বনে যান। তাঁর আসরে গজল গাওয়া শুরু করেন। লাহোরের শের-মজলিসে দু’জনের উপস্থিতি থাকতো একত্রে। উভয়ে বুঝতেন উভয়ের মেজাজ। এরপর ইতিহাসে ইকবাল আর ফওক্বের কথা এলে আসবে কাশ্মীরের মধ্যস্ততায়। উভয়ে জন্মেছেন শিয়ালকোটে। লাহোরের মাটিতে বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বল তারকা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন উভয়ে। কাশ্মীর নিয়ে এই দু’জনের চিন্তাজগত ছিলো অভিন্ন। কাশ্মীর নিয়ে যখন ফওক্ব বলেছেন, তখন তাতে অনুভূত হয়েছে ইকবালকে। তাদের লেখায় অন্যের কব্জায় থাকা মাতৃভমি কাশ্মীর ব্যাথাতুর ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। ইকবাল বলেন:

পরিশ্রমী হস্তদ্বয় দাও ভেঙে ইয়া রব
পদদলিত করেছে যারা কাশ্মীরের আত্মাকে

আর ফওক্বের কন্ঠে বেজে উঠে,

নিঃসঙ্গ ব্যক্তিরও তো বন্ধু রয়েছে
কাশ্মীরিদের হালহাকিকত জিজ্ঞাসার নেই কেউ!

আল্লামা ইকবাল তাকে ডাকতো ‘মুজাদ্দিদে কাশামিরা’ বলে। পরে এই লকব জড়িয়ে যায় ফওক্বের সাথে। এরপর ইতিহাসে অনেকেই ফওক্বের নামের লিখবেন মহান এই লকব। ইকবালের জীবন নিয়ে সর্বপ্রথম কলম ধরেন ফওক্ব। ‘হালাতে ইকবাল’ শিরোনামে কাশ্মীরি ম্যাগাজিন ১৯০৯ সালের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এরপর বইও বের হয়। ফওক্ব বলেন, ‘ডক্টর ইকবালের সংক্ষিপ্ত জীবন ও তাঁর কিছু গজলের সংকলন এক মলাটে তার অনুমতিক্রমে আমিই সর্বপ্রথম ‘বাহারে গুলশান’ নামে প্রকাশ করি। এটা সেই ১৮৯৮ এর কথা।’

ফওক্ব ছিলেন ‘আঞ্জুমানে কাশ্মীরি মুসলমান’র সেক্রেটারি। আল্লামা ইকবাল ছিলেন একই সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি। কাশ্মীরি মুসলমানদের জন্য তাদের দৌঁড়ঝাপও হতো এক পতাকাতলে। আল্লামা ইকবাল তার কয়েকটি কিতাবের ভূমিকাও লিখেছেন। ফওক্বের নামে ইকবালের পক্ষ থেকে প্রেরিত বাইশটি পত্রের সন্ধান মিলে। যা “রূহে মাকাতিবে ইকবালে” প্রকাশিত হয়েছে। ফওক্ব তার গ্রন্থগুলোতে আল্লামা ইকবালের ব্যাপারে বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, যাতে ইকবালও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইকবালপুত্র জাস্টিস জাভেদ ইকবাল তার লিখিত ‘জিন্দা রওয়াদ’ এ ফওক্বের সেই লেখাগুলো থেকে উপকৃত হবার কথা জানিয়েছেন এবং ইকবালকে নিয়ে পড়তে হলে ফওক্বের লেখাগুলো পড়ার গুরুত্বের কথা ব্যক্ত করেছেন।

উভয়ের বন্ধুত্ব নিয়ে কালিম আখতার ‘ইকবাল আওর মাশাহিরে কাশ্মীর’ গ্রন্থে সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আখতার লিখেছেন –‘আল্লামা ইকবাল আর ফওক্ব সাহেবকে যদি জনম জনমের সঙ্গী বলা যায়, অতিরঞ্জিত হবে না মোটেও। এক মাটি থেকেই তৈরী হয়েছিলো এই দু’জন। ইকবাল— সাইয়েদ নজির নিয়াজি ও সুলাইমান নদভীর পর যাকে সবচেয়ে বেশি পত্র লিখেছেন, তিনি হলেন এই ফওক্ব।

কাশ্মীরি সাংবাদিক হিসেবে ফওক্ব.

সে যুগের বিখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন ফওক্ব। হিন্দুস্তানে সাংবাদিকতার শুরুর দিকে সাহিত্যিকরাই সাংবাদিকতা করতো। এই তালিকায় আছেন আব্দুল হালিম শরর ও জাফর আলী খান প্রমুখ। ফওক্ব সাহেব বিক্ষিপ্ত সময়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকা বের করেছেন। যার মধ্যে পাঞ্জায়ে ফওলাদ, কাশ্মীরি ম্যাগাজিন, আখবারে কাশ্মীরি, কাশ্মীরে জাদিদ, তরিকত, নেজাম অন্যতম। এছাড়া ‘পেসাহ আখবার’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় চাকুরি করেছেন ফওক্ব। তৎকালীন সময়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখা ব্যক্তিত্বদের নিয়ে লিখিত গ্রন্থগুলোতে ফওক্বের নাম অবশ্যই থাকবে। তার পত্রিকাগুলোর প্রশংসা করেছেন দাগ দেহলভী ও আল্লামা ইকবালের মত ব্যক্তিগণ।

উনিশ শতকের হিন্দুস্তানে দু’টি পত্রিকা মশহুর ছিলো। প্রথমটি ‘আখবারে আম’। ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে লাহোর থেকে এই পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকলো। সেই পত্রিকার সাথে সংযুক্ত হলেন ফওক্ব। এই পত্রিকার মালিক ছিলো কাশ্মীরি। তাই এর মাধ্যমে উঠে আসতো কাশ্মীরের হালহাকিকত। ফওক্বের তামান্নাও তো ছিলো তাই। ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে লাহোর থেকে আরেক বিখ্যাত পত্রিকা ‘পেসাহ আখবার’ প্রকাশিত হয়। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ফওক্ব যুক্ত হলেন সেই পত্রিকায়ও। এই পত্রিকাগুলো উনিশ শতকের শেষভাগ ও বিশ শতকে ব্যাপক প্রভাব তৈরী করেছিলো।

১৯০১ খৃষ্টাব্দে অক্টোবরে পেসাহ আখবারের চাকুরি ছেড়ে ফওক্ব নভেম্বর মাসেই নিজের পত্রিকা ‘পাঞ্জায়ে ফওলাদ’ চালু করেন, যার প্রথম সংখ্যাই চারদিক নাড়িয়ে দেয়। সূচনাসংখ্যা ছিলো বড় চমৎকার শিরোনামে ‘আল্লাহর ঘর সরকারের কব্জায়’। কাহিনিটা এমন ছিলো– লাহোর রেলওয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী শাহজাহানী আমলের একটি মসজিদ ছিলো। ইংরেজরা সেই মসজিদ কব্জা করে ট্রাফিক সুপারেন্টেন্ডেন্ট অফিস বানালো। লোকেরা বলতো টিএস অফিস। ফওক্ব সাহেব সেই মসজিদের ইতিহাস তুলে ধরে পত্রিকায় দাবি জানালেন, ইংরেজদের হস্তক্ষেপ থেকে যেন মসজিদ মুক্ত হয়। এই সংখ্যা অন্যন্য সংবাদপত্র পেলে তারাও সরব হয় এই ইস্যুতে। অবশেষে ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে লর্ড কার্জন ঐ মসজিদকে মুক্ত ঘোষণা করে। ফওক্ব তার যাত্রার প্রথম পদক্ষেপেই বিজয়ী হলেন। পাঞ্জায়ে ফওলাদের এই দুর্দান্ত সূচনার পর আল্লামা ইকবাল লিখেন:

একটি কাগজ আছে— পাঞ্জায়ে ফওলাদ নামে
নিজগুণে তা পরিচিত হলো হিন্দুস্তানে
সাধারণ লোকজন আর বিশেষ— সবার পছন্দ
বাহ! বাহ! কাগজটি পূর্ণ কী ন্যায়-নীতিতে
কে এই পত্রিকার দায়িত্বে?
এ কথাটিও তো প্রকাশের উপযুক্ত নাকি!
তার নাম মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্ব
কমবয়সী ছেলে— তবে হুশিয়ার

ইতিহাসের চর্চা ও রচনায় ফওক্ব.

ফওক্বের ইতিহাসচর্চা নানাদিক নিয়ে। তিনি কাশ্মীরের সন্তান, থেকেছেন লাহোরে। লাহোরের ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন। তবে তার সত্তাজুড়ে ছিলো কেবল কাশ্মীর। তিনি পরিচিত ছিলেন কাশ্মীরের প্রথম নওজোয়ান সাংবাদিক হিসেবে। গদ্য-সাহিত্য, গল্প-উপন্যাস, সাংবাদিকতাসহ নানাদিকে দক্ষতা থাকলেও তার ঐতিহাসিকসত্তা ছিলো প্রখর এবং অসামান্য। ফওক্বের আগে উর্দু ইতিহাসসাহিত্যে যদি কারও নাম আসে, তিনি শিবলী নোমানী রহ.। তিন খণ্ডে তিনি রচনা করেছেন তারিখে কাশ্মীর, তার আগে কাশ্মীর নিয়ে উর্দুভাষায় কেবল দুয়েকটি অপুর্ণাঙ্গ বই পাওয়া যেত। কাজি জহুরুল হাসান নাজেম সিওহারুভী তার ‘নিগারিস্তানে কাশ্মীর’ এ লিখেন, ‘এখন পর্যন্ত উর্দু, ফার্সী, ইংরেজিতে কাশ্মীরের ইতিহাস নিয়ে যতগুলো বই রচিত হয়েছে, তারিখে কাশ্মীর তার মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ।’ পৃথিবীর সব মানুষ নিজের গোষ্ঠীর দিকে নিজেকে সম্বোধিত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সবাই উঁচু করে ধরতে চায় নিজের সম্প্রদায়কে। ফওক্ব সাহেব এমন এক সম্প্রদায়ের ছিলেন, যা পাহাড়ে ঘেরা, ফুলেল বন-বনানীসমৃদ্ধ, কাঁচা আঙুরের ঘ্রাণে যার বাতাস সুভাসিত, লাল-নীল ফুলে দিগন্ত ছুঁয়ে যাওয়া যার উপত্যকা। সেখানের মানুষগুলো বিভিন্ন সংস্কারচ্ছন্ন হয়েও ‘মিলঝুল’ রেখে এক ও অভিন্ন। ইকবাল বলেছেন, ‘মিলেমিশে থাকো ভুবনে ‘কাশ্মীর’ শব্দটির মত’। এই নামও যেন প্রমাণ বহন করে একতার। আরবরা নিজেদের বংশপরিক্রমা সংরক্ষণে তৎপর। নিজেদের ঘোড়া, উটের বংশতালিকাও তারা অনায়েসে বলে যেতে পারতো। ফওক্ব সাহেব তার প্রিয় ‘ওয়াদি’ কাশ্মীরের হক আদায় করেছেন ‘তারিখে আকওয়ামে কাশ্মীর’ রচনা করে। পাহাড়ে ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর কাশ্মীরের হরেক রঙের মানুষ, সভ্যতা, আর তাদের একতা বর্নণায় অনবদ্য ও সমৃদ্ধ বই এটি। এতে এসেছে কাশ্মীরের প্রাচীন বাসিন্দাদের কথা, ব্রাক্ষ্মণ-পণ্ডিত কিংবা মুসলমানদের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী আর সমাজের কথা।

কাশ্মীরের বিখ্যাতদের নিয়ে রচনা করেছেন ‘মাশাহিরে কাশ্মীর’ ও ‘খাওয়াতিনে কাশ্মীর’। এই ইতিহাসকর্মের মাধ্যমে তিনি কাশ্মীরের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে পৃথিবীর সামনে এনেছেন। কাশ্মীরের রোডঘাট নিয়েও তিনি লিখেছেন ‘রাহনুমায়ে কাশ্মীর’। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘হিকায়াতে কাশ্মীর’। এসব ছাড়াও তিনি লিখেছেন তারিখে আঙ্গুরা, তারিখে হুররিয়্যাতে ইসলাম, তারিখ কা রওশন পেহলু। লিখেছেন তারিখে লাহোর। সুফীদের নিয়ে রচনা করেছেন ‘ইয়াদরফতগার’।

‘ইয়াদরফতগার’ ফওক্ব লিখেছিলেন ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে। লাহোরের সুফিরা উল্লেখ হয়েছে এই গ্রন্থে। এতে এসেছে হজরত শাহ আবুল মাআলি, শাহচেরাগ, মওজে দরয়া, শাহ মুহাম্মদ গাওস, শাহ জামাল, সাইয়্যেদ জান মুহাম্মদ হুজুরি, হজরত ঈশান, হজরত লাল হুসাইন, দাতা গঞ্জবখশ, হজরত মিয়া মির, প্রমূখ। এই বই পড়ার পর আল্লামা ইকবাল পত্র লিখলেন ফওক্বের কাছে– ‘আল্লাহওয়ালাদের হালাত’ সম্পর্কে ‘ইয়াদরফতগার’ নামে আপনি যে গ্রন্থ রচনা করেছেন, তা আমাকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছে। ছোট এই পুস্তকের কিছু কিছু কথা পড়ে তো আমি এতটা কেঁদেছি যে ‘বেখুদ’ হয়ে গেছি। আল্লাহ আপনার দৃষ্টিকে এদিকে পুনরুজ্জীবিত করার মাঝেই রেখেছেন। ভাই ফওক! আপনি নিজেও এই দুর্লভ রত্নের তালাশে থাকুন, যা বাদশাহের ধনভান্ডারে নয় বরং কোন চাদরাবৃত্তের পদধূলিতে মিলে যায়।’

এমনকি এই বই থেকে প্রভাবিত হয়ে আল্লামা ইকবাল রচনা করেন তার বিখ্যাত পঙক্তি:

তামান্না দরদে দিল কি হো তু কর খিদমাত ফকিরু কি,
নেহি মিলতা ইয়ে গাওহার বাদশাহুঁ কে খজিনু মে

তিনি লিখেছেন অসংখ্য মানুষের জীবনচরিত নিয়ে। জীবনীকার আর ঐতিহাসিক— এই দুই সত্তাকে খুব আলাদা করেও দেখতেন না তিনি। লাহোরের ওলামা মাশায়েখদের নিয়ে লিখেছেন ‘তাযকিরাতুল ওলামা ওয়াল মাশায়েখ লাহোর’। কেবল ওলামাসমাজ নয়, এই বইয়ে এসেছে লাহোরের প্রাচীন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিবরণও। মোল্লা শাহ খাজা শাহজাহানী’র দরসগাহ থেকে নিয়ে সমকালীন বিখ্যাত ইলমী সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেমায়েতে ইসলাম’ সবই উল্লেখিত হয়েছে এই বইয়ে। লিখেছেন তারিখে শালামার, লাহোর আহদে মোগলিয়া মে, মাসিরে লাহোর। তার লেখায় এসেছে শামসে তাবরীজ, ইবরাহীম বিন আদহাম, মাওলানা রূমী, মুজাদ্দিদে আলফে সানী, খাজা হাসান বসরী, আব্দুল হাকিম শিয়ালকোটি রহ. এর মত বিখ্যাত মনীষীদের জীবন। ‘সর গুজাশতে ফওক্ব’ নামে তার একটি অপ্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। যাতে আল্লামা ইকবাল, মাওলানা আব্দুল হালিম শরর, মাওলানা হালি, দাগ দেহলভি, মুহাম্মদ হুসাইন আজাদ, আকবর ইলাহাবাদী, আবুল কালাম আজাদ, জফর আলী খান, খাজা হাসান নিজামী, আগা হাশর কাশ্মীরীসহ আরও অনেক আহলে ইলম ও আহলে কলমের সাথে ফওকের সম্পর্ক, পত্রবিনিময় সহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।

আজাদ কাশ্মীরের শায়ের ফওক্ব.

কবিতাকে ছেড়ে ফওক্বকে ব্যাখ্যা করা অন্যায় হবে। একটি মানুষের কতগুলো প্রতিভা থাকতে পারে? অসম্ভব ছিলো না হয়তো তাদের জন্য। ফওক্ব ছিলো সেই পর্যায়ের কবি, যিনি আল্লামা ইকবালের সাথে কবিতার আসর জমাতেন। এটুকু ছাড়া আর অতিরিক্ত বিশেষণের প্রয়োজন নেই বোধহয়। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘কালামে ফওক্ব’ নামে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। যার একেকটি কবিতায় প্রিয় মাতৃভূমির মুহাব্বাত আর ইসলামের প্রতি দিলের দরদ উপচে পড়ছে। ফওক্ব সাহেবই প্রথম কবি, যিনি কাশ্মীরের মজলুম মুসলমানদের প্রাণের কণ্ঠস্বর হয়ে তাদের অন্তরের ব্যথাগুলো কবিতাকারে সচেতন মহলের কানে পৌঁছিয়েছিলেন। কাশ্মীরের মজলুমরা তার কবিতায় পেতো আস্থা আর ঐতিহ্যের প্রতি অঙ্গীকার ও আহ্বান, আর অন্যরা পেতো জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও একতাবদ্ধতার শ্লোগান।

ফওক্ব শের ছাড়াও লিখতেন গজল। তার শের ও গজলে বিভাসিত হতো ওয়াদিয়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্য, মজলুমদের সকরুণ অভিব্যক্তি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধাচারণ। কালামে ফওক্ব ছাড়াও তিনি লিখেছেন ‘সিকাওটু কে গিত ও নগমা ওয়া গুলজার।’

বস্তুত, ফওক্ব ছিলেন নানাগুণে পারদর্শী এক ব্যক্তিত্ব। কবিতা, গজল ছাড়াও তিনি লিখেছেন উপন্যাস-গল্প ও ড্রামা। লিখেছেন আনারকলি, আকবর, নিমে হাকিম খতরায়ে জান, নাকাম, খানা বরবাদি, ইসমত আরা, গম নসীব, মহরুম তামান্না, গরীবুদ্দিয়ার, স্টুডেন্টস লাইফের মতো বিখ্যাত উপন্যাস।

শতাধিক গ্রন্থ লিখে গেছেন মুন্সি মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্ব। যার অধিকাংশ সুবিশাল কলেবরের। ইতিহাস লিখতে গিয়ে ঘুরেছেন হিন্দুস্তানের অলিতে গলিতে। পুরোনো কিতাবের স্তুপে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। সাংবাদিকতা করেছেন বহু পত্রিকায়। কাশ্মীর নিয়ে যতটুকু তিনি লিখেছেন, আজও বা কয়জন এর ততটুকু পেরেছেন? বরেণ্য ঐতিহাসিক আকবর শাহ খান নজিবাবাদী বলেন, ‘আমার বন্ধু আর ইতিহাসচর্চায় প্রচুর পাঠাগ্রহী সমমনা ব্যক্তি হলেন মৌলভী ফওক্ব। যে নীরবে নিভৃতে উম্মাহর বিপুল খিদমাতের জন্য পাঞ্জাব ও কাশ্মীরে গর্বের ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।’

১৯৪৫ খৃষ্টাব্দে ফওক্ব গেলেন কাশ্মীর। সেখানেই অসুস্থ হলেন। চিকিৎসার জন্য চলে এলেন লাহোরে। অসুস্থতা বেড়েই চলছিলো। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে জুমআর দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। লাহোরেই দাফন হয়। কাশ্মীর তার প্রিয় আপন কাউকে হারিয়ে হয়তো নীরবে কাঁদে এখনও।

সহায়কগ্রন্থ–

ফওকুল কাশমির : ডা. মুহাম্মদ আজমল খান নিয়াজি
ইকবাল আওর মাশাহিরে কাশ্মীর : কালিম আখতার
কালামে ফওক্ব : মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্ব
রেখতা : ওয়েব

লেখক— অধ্যায়নরত, সেন্টার ফর ইসলামিক থট এন্ড স্টাডিজ

The post মুহাম্মদ উদ্দিন ফওক্বের লেখালেখি ও কাশ্মীরপ্রেম appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%a6-%e0%a6%89%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%ab%e0%a6%93%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b0/

লেভ তলস্তয়ের ‘শয়তান’ গল্পের পাঠপ্রতিক্রিয়া

মওলবি আশরাফ:

আমি হেঁটে গেছি মৃত্যু উপত্যকায়

‘এমনকি যদি আমি মৃত্যু উপত্যকা দিয়ে হেঁটে যাই, তখনও ভয়ে আমি হবো না বিহ্বল, কারণ আমার সঙ্গে রয়েছেন আপনি প্রভু— আপনার শাসনদণ্ড আমাকে স্বস্তি দেয়, নিরাপদে রাখে।’ (বুক অফ সাম, ২৩ : ৪)

বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক লেভ তলস্তয়ের জন্ম ১৮২৮ সালে, রাশিয়ার তুলা রাজ্যের য়াসনায়া পলয়ানা নামক স্থানে, এক প্রাচীন অভিজাত পরিবারে। জন্মের দু’বছর পরেই তলস্তয়ের মা মারা যান আর নয় বছর বয়সে বাবার ছায়া চিরকালের জন্য মাথা থেকে সরে যায়। ভাই ও আত্মীয়স্বজনদের হাতেই তিনি প্রতিপালিত হন। তাতিয়ানা নামে তার এক ফুফু ছিলেন, যিনি স্বচ্ছল হয়েও সরল ও ধর্মপ্রাণ ছিলেন— তার জীবন কিশোর তলস্তয়কে বেশ প্রভাবিত করেছিল। এবং তার সাহচর্য বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। বয়স ১৮ হওয়ার পর নিজের পৈতৃক সম্পত্তির অংশ হিসেবে জন্মস্থান য়াসনা পলয়ানার বিশাল জমিদারি এবং প্রায় ৩৫০ জন ভূমিদাসের মালিকানা পান। এসময় মদ, জুয়া আর নারীদের নিয়ে নিজেকে এক লক্ষ্যহীন উচ্ছৃঙ্খল জীবনে ঠেলে দেন। এরই মধ্যে বড় ভাই তাকে ভর্তি করিয়ে দেন রুশ সেনাবাহিনীতে, তারপর তিনি চলে যান ক্রিমিয়ার যুদ্ধে গোলন্দাজ অফিসার হিসাবে। কিন্তু এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে এতটাই আহত করেছিল যে তিনি যুদ্ধ শেষে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। আর এই অভিজ্ঞতাই তার ব্যক্তিদর্শন নির্মাণে সহায়ক হয়েছিল।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মোতাবেক তলস্তয়ের জীবনীশক্তি ও কর্মোদ্যম ছিল প্রচণ্ড দানবীয় রকমের। ভালো শিকারি ছিলেন এবং ভয়ংকর একগুঁয়ে স্বভাবের ছিলেন। একবার ভালুক শিকারে গিয়েছিলেন, একটা ভালুক থাবা মেরে চোখের নীচে থেকে বাঁ-দিকের গাল ছিঁড়ে নামিয়ে দেয়; দুই সপ্তাহ পরে ভালো হয়ে তিনি ফের শিকারে যান এবং ওই ভালুকটিকে বধ করেন। বন্ধু-বান্ধব বা সমাজ কী বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজে যা উচিত এবং ন্যায্য বলে ভেবেছেন তাই করেছেন সবসময়। শান্ত-সুবোধ প্রকৃতির ছিলেন না, যৌবনে প্রচুর ধার-দেনা করেছেন এবং বিষয় সম্পত্তি নষ্ট করেছেন। পাদ্রি-পুরুতদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন, এবং তার শাস্তিস্বরূপ যাজক সম্প্রদায় ঘোষণা করেন যে, তলস্তয়কে খ্রিস্টধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হলো। এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, যারা ঈশ্বর ও যীশুকে নিয়ে ব্যবসা করে তাদের চেয়ে তিনি হাজার গুণ বেশি ধার্মিক ও সাচ্চা খ্রিস্টান।

অভিজ্ঞতা তলস্তয়ের মধ্যে এই অনুভূতি জন্ম দিয়েছিল যে জীবনের আনন্দ কেবল ভালোবাসায়, হিংসাবিদ্বেষে নয়, আর ভালোবাসারই অপর নাম ধর্ম। ধর্ম ও ধর্মের সঠিক ব্যবহারই মানুষকে শান্তিময় পথে চালিত করে। তলস্তয় তাই খ্রিস্টের বাণী কার্যত বাস্তবায়নের নির্দেশ করতেন, প্রথাগত খ্রিষ্টান হতে বলতেন না। তলস্তয়ের এই শিক্ষা উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী গ্রহণ করেছিলেন, এবং বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করেছিলেন। জওহরলাল নেহেরু তাই মন্তব্য করেছিলেন— ইউরোপের লক্ষ লক্ষ যাজকের চেয়ে গান্ধীজি যিশুখ্রিস্টের বাণী বেশি বুঝতেন।

শিল্প সম্পর্কে তলস্তয়ের ভাবনা আমাদের আল্লামা ইকবালের মতোই ছিল— শিল্প কেবল শিল্পের জন্য নয়, বরং শিল্পের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ সমাজের পরিবর্তন :

ওহে দৃষ্টিধর
তোমার দৃষ্টির জাল অভেদ্য বটে
কিন্তু হাকিকতই যদি ধরা না পড়ে জালে
তা তুমি কেমন জেলে বাহে!

শিল্পের জীয়নকাঠি
জাগিয়ে তোলে জীবনের মননে
উদ্দেশ্য পরম।
শিল্প তো নয় আতশবাজি
কেবল দু’দণ্ড ঝলমলিয়ে
লীন হয়ে যাবে আকাশে!

ঠিক এই কথাই যেন তলস্তয়ের কথা। অ্যালান দ্যো বোতোঁ বলেন, ‘তলস্তয় বিশ্বাস করতেন উপন্যাসের কাজ শুধু আনন্দ দেওয়া নয় বরং এটি মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা আর সংস্কার করারও একটি উপকরণ। … তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন কোনো ভালো শিল্পকলার উচিৎ আমাদের নৈতিকতার ওপর কম জাজমেন্টাল করে তোলা। আর এটি ধর্মের একটি সংযুক্তি হওয়া উচিৎ, যা আমাদের নৈতিকতা আর দয়াশীলতার একটি মজুদ গড়ে তুলবে।’

প্রথম জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে তার মধ্যে গভীর অনুশোচনার জন্ম দেয়। সমাজের অর্থনৈতিক অন্যায্যতার বিপরীতে তার জমিদারি জীবন ভীষণ পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। তাই তিনি সব ছেড়েছুঁড়ে গরিব কৃষকদের মতো জীবনযাপন করতে শুরু করেন। মহল ছেড়ে তাদের সাথেই বেশিক্ষণ থাকতেন। এমনকি চেয়েছিলেন তার সব সম্পত্তি গরিব-অভাবীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে, কিন্তু স্ত্রী রাজি না হওয়ায় পারেননি। এরপর স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক শীতল হতে থাকে।

তার প্রভাব পড়ে লেখনীতেও— যৌনতা আর ভালোবাসার মতো সমাজের চোখে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। ব্যক্তিজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কলমে চিত্রায়িত করতে থাকেন। কবি-সাহিত্যিকদের মতো রঙচঙে বানানোর পরিবর্তে বিয়ে বহির্ভূত ভালোবাসার নামে বুজরুকির প্রকৃত পরিণতি ফাঁস করে দেন। ক্রয়টজার সোনাটা গল্পে স্ত্রীর হত্যাকারী নায়ক পজদনিশেভের মুখ দিয়ে বলেন, ‘বিয়ের আগে থাকতাম অন্য সবার মতো, তার মানে উচ্ছৃঙ্খলতায় সময় কাটত, এ ধরনের জীবনযাপন যে যথোচিত সে বিষয়ে আমাদের শ্রেণির সকলের মতো আমারও বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। নিজেকে ভালো মানুষ বা পুরোপুরি নৈতিক লোক ভাবতাম। মেয়ে-পটানো লোক আমি ছিলাম না; কোনো বিকৃত রুচি আমার ছিল না, লাম্পট্যকেই আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যে করে নিইনি, আমার বয়সের অনেকে যেটা করে। শুধু স্বাস্থ্যের খাতিরে, মর্যাদা বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে কামচর্চা করতাম। বাচ্চা পয়দা করে বা আমার প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে বোঝার মতো হতে পারে এমন মেয়েদের এড়িয়ে চলতাম। বাস্তবিক হয়তো বাচ্চা ও আসক্তি হয়েছিল কয়েকজনের, কিন্তু আমি এমন ভাব দেখাতাম যে ওসব কিছু হয়নি। এটাকে নীতিসম্মত শুধু মনে করতাম না, গর্ববোধ করতাম এমনকি।… অথচ এটাই হলো সবচেয়ে নোংরা জিনিস।’

তলস্তয়ের ‘শয়তান’ গল্পে সেই একই অনুভূতির ছায়া পাই— শরীর রক্ষার নামে, স্বাস্থ্যের খাতিরে প্রাগ-বৈবাহিক সম্পর্ক ও তার পরিণতি। পুরো গল্প জুড়ে যেন যীশুখ্রিস্টের এই বাণী বলার চেষ্টা করা হয়েছে : ‘তোমরা শুনেছ এই কথা বলা হয়েছে— “ব্যভিচার কোরো না”, কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ কোনো মেয়েলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তার সাথে ব্যভিচার করল।’ (মথি ৫ : ২৭ ও ২৮)

উপড়ে ফেলো তোমার নরকবাসী চোখ

আলোচনার সুবিধার্থে গল্পের সারাংশ এখানে উল্লেখ করছি, যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে—

‘ইভগেনে ইর্তেনেভের সামনে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’ সে ছিল রাশিয়ার এক জমিদার পরিবারের ছোট ছেলে। বড় ভাই আন্দ্রেই। সম্প্রতি তাদের বাবা মারা গেলে দুই ভাই যখন বাবার বিস্তর দেনার দায় দেখলেন, পারিবারিক উকিল জানালেন— আপনাদের উত্তরাধিকার অস্বীকার করে সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কিন্তু ইভগেনে জমিদারি বহাল রেখে সব দেনা শোধ করাকেই ভালো মনে করল। বড় ভাই আন্দ্রেইকে বছরে চার হাজার রুবল দেওয়ার শর্তে পুরো জমিদারি গ্রহণ ইভগেনে তাদের মাকে নিয়ে এখানেই বসবাস করতে শুরু করে।

বুদ্ধিমত্তা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ইভগেনে একেএকে বন্ধকি জমিগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে দেনা শোধ করছিল। ধীরেধীরে সফলতার দিকে এগুচ্ছিল। কাজকর্ম ও চিন্তায় খুব ব্যস্ত, এমন সময় এক অস্বস্তিকর অনুভূতি তার মনে খচখচ করছিল। যৌনকামনা— এক দুর্দমনীয় আগ্রহ তাকে বারবার মনোযোগ থেকে সরিয়ে দিচ্ছিল।

‘বয়েস যখন কাঁচা ছিল, ইভগেনের জীবন আর দশজন সাধারণ যুবকের মতোই চলেছিল। অর্থাৎ স্বাস্থ্যবান যুবকরা সাধারণত যেভাবে জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে থাকে, ইভগেনও সেইভাবে স্বাস্থ্যরক্ষার খাতিরে চালিয়ে এসেছে। নানা ধরনের স্ত্রীলোকের সঙ্গে ইতিপূর্বে তার যৌনসম্পর্ক ঘটেছে। ইভগেনে উচ্ছৃঙ্খল বা কামুক প্রকৃতির লোক নয়। কিন্তু তাই বলে সাধু-সন্ন্যাসীর মতো জিতেন্দ্রিয় পুরুষও নয়। স্ত্রীলোকের প্রতি তার যে আকর্ষণ, অর্থাৎ যে কারণে ইভগেনে মেয়েদের প্রতি ঝুঁকেছে, সেটা একান্তই জৈব আকর্ষণ। স্বাস্থ্যরক্ষার খাতিরে, আর তার নিজের ধারণা— মনটাকে খোলা ও পরিষ্কার রাখতে হলে স্ত্রীলোকের দৈহিক সম্পর্ক অপরিহার্য পুরুষের পক্ষে। বয়েস যখন তার বছর ষোলো, তখন থেকে তার যৌনজীবন শুরু হয় এবং এতদিন চলেছে বেশ সন্তোষজনকভাবেই। বিশেষ কোনো গোলমালে পড়তে হয়নি দৈহিক প্রয়োজনের তাগিদে। কোনো হাঙ্গামা যে পোহাতে হয়নি ইভগেনেকে তার প্রথম কারণ হলো ইভগেনের দৃঢ় মন ও সংযম। কোনো দিনই সে ইন্দ্রিয়ভোগের দাস হয়নি দেহের ও মনের লাগাম বেশ কড়া হাতেই সে ধরতে জানে।… ব্যক্তিগত জীবনের এই পর্যায়টি মোটামুটি বেশ মসৃণভাবেই গড়িয়ে এসেছে। এ যাবৎ তা নিয়ে ইভগেনেকে বিশেষ কোনো বেগ পেতে হয়নি।

কিন্তু আজ প্রায় দু’মাস হতে চলল ইউজিন মফস্বলে এসে বাস করছে। এ সম্বন্ধে কী যে করা যায় সে বিষয়ে এখনও কিছু ঠিক করে উঠতে পারেনি। অবস্থান্তরে তাকে আজ অনেকদিন দেহকে উপবাসী, নিরুদ্ধ করে রাখতে হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে বাধ্যতামূলক আত্মদমনের ফলে শরীর ও মনের ওপর টান পড়তে শুরু হয়েছে তা হলে কী করা যায়? শেষ পর্যস্ত কি তা হলে দেহের ক্ষুন্নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে শহরেই ছুটতে হবে? তাই যদি যেতেই হয়— কোথায় কেমন করে তা সম্ভব হবে? এইসব চিন্তাই গত কয়দিন ধরে ইভগেনেকে উত্তপ্ত ও বিব্রত করে তুলেছে। ইভগেনের বিশ্বাস এবং ধারণা যে, শরীরের ধর্মকে বহুদিন দাবিয়ে রাখা চলে না আর তার নিজের ক্ষেত্রে সে প্রয়োজনের তাগিদ অনুভব করছে। তা হলে বর্তমান অবস্থায় সেই প্রয়োজনের খাতিরেই তাকে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হয়! কিন্তু ইভগেনের এ-ও মনে হলো যে, এখন সে তো স্বাধীন নয়, কাজের ও দায়িত্বের চারদিকের বাঁধন তাকে শক্তভাবেই বেঁধে ফেলেছে। তাই আপনার অজ্ঞাতসারেই আশেপাশে প্রতিটি যুবতী নারীর পিছু পিছু তার স্বাধীন দৃষ্টি ঘুরতে লাগল। নিজের গ্রামে বসে কোনো নিন্দনীয় ব্যাপার বা কেলেঙ্কারি করার পক্ষপাতী নয়।’

মনে মনে এবিষয়ের কোনো হিল্লে খুঁজছিলেন, এমন সময় একদিন জঙ্গলমহালের এক চৌকিদার— বুড়ো দানিয়েলের সাথে আলাপ হয়। দানিয়েল বেশ পুরোনো লোক, তার বাবার শিকারসঙ্গী। আলাপে আলাপে বুড়োকে ইঙ্গিত দেয়। বুড়ো তার জন্যে হাঙ্গাম-হুজ্জুৎ ছাড়াই এক কিষাণী মেয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। নাম স্তেপানিদা, পেশনিকভের বউ, এখনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি— ‘আঁটসাঁট গড়ন আর সুঠাম দেহশ্রী নিয়ে একটি সতেজ ফুটন্ত দেহবল্লরী।’ তো তার সাথে ইভগেনে সম্পর্ক স্থাপন করে, কেবলই মিনিট বিশেকের মামলা। ইভগেনের মনে হলো— ‘মফস্বলে পল্লিজীবনের যেটা এতদিন ধরে ছিল সবচেয়ে বড় অন্তরায় এবং অসুবিধা,— অর্থাৎ বাধ্য হয়ে জোর করা আত্মসংযমের অভ্যাস, সেটার প্রয়োজন আর রইল না। মনে এখন আর কোনো উদ্বেগ নেই। মনের সূর্যে এবং স্বাধীন চিন্তায় এখন আর কোনো ব্যাঘাতই ঘটছে না। সহজ এবং সুস্থভাবে এখন আবার নিজের সমস্ত কাজকর্মে মন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’ কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার সেই একই রকম খচখচানি। ইভগেনে কখনো কামুক প্রকৃতির মানুষ ছিল না, তারপরেও এক দুর্বার আকর্ষণ— সে যাকে ভেবেছিল মানসিক তৃপ্তি বা ‘এই-ই শেষ’, বরং উলটো তার মধ্যে আরও অস্বস্তি ও অতৃপ্তি আচ্ছন্ন করে তুলল, নিজেকে সামাল দিতে পারল না।

তাদের গোপন সম্পর্ক চলতে থাকে। একদিন ইভগেনে স্তেপানিদাকে তার স্বামীর সাথে দেখে। বলিষ্ঠ শরীর আর একদম স্মার্ট। অভিসারে স্তেপানিদাকে ওর স্বামীর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে গর্বিত সুরে বলে— ‘সারা গ্রামে ওর জুড়ি নাই।’ আশ্চর্য হয়ে জানতে চায় ইভগেনে— ‘তাহলে? তবে কিসের জন্যে?…’ এই প্রশ্নের উত্তর পায় না। ইভগেনের মাথায় এই ভাবনা চলতে থাকে।

কিছুদিন পর ইভগেনে বিয়ে করে। লিজা অ্যানস্কায়া নামের এক মেয়েকে। স্ত্রী হিসেবে লিজার মতো দুষ্প্রাপ্য— এমন স্ত্রী সাত রাজার ভাগ্যেও মিলে না। সুখে শান্তিতে দিন যায় মাস যায়, পেরিয়ে যায় বছর। একদিন হঠাৎ ইভগেনের চোখে স্তেপানিদা পড়ে যায়। কোলে একটি শিশু। উৎকণ্ঠায় পড়ে যায় ইভগেনে— ‘বাচ্চাটা আমার না তো!’ আবার আপন মনেই বলে, আমার হবে কেন, ওর স্বামী সবসময় ছিল, এখনও আছে। শরীরের জন্য, স্বাস্থ্যের খাতিরে ওর প্রয়োজন ঘটেছিল একদিন, টাকা দিয়ে তা মিটিয়ে দিয়েছি। কোনো পিছুটান রাখিনি।

কিন্তু, একটা ‘কিন্তু’ রয়ে যায়…

ফের আবার একদিন দেখা। আবার ভেতরের দানব জেগে ওঠা। কিছুতেই তাকে মাথা থেকে নামানো যাচ্ছে না, যেন রাজা বিক্রমের ঘাড়ে চেপে বসা বেতাল ভূত।

‘বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকে ইভগেনের ধারণা জন্মেছিল যে, মন তার কু-ভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। অন্য স্ত্রীলোকঘটিত কোনো চিন্তাই তার মনে আর ছায়াপাত করতে পারবে না। নিজে থেকে প্রশ্রয় দেওয়া তো দূরের কথা। কিন্তু আজ এ কী হলো? কামনার দুষ্ট ক্ষত তাহলে কি এতদিন চাপা পড়ে ছিল? সুবিধা-সুযোগ বুঝে আবার আত্মপ্রকাশ করেছে? যে অস্বস্তিকর ব্যাপার তার জীবন থেকে ধুয়েমুছে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে সে ইতিমধ্যে আত্মপ্রসাদ অনুভব করছিল, সেই ব্যাপারের অপ্রত্যাশিত পুনরাবির্ভাবে ইভগেনে রীতিমতো সন্ত্রস্ত, আতঙ্কিত হয়ে উঠল।

বিয়ের পর থেকে এ ভাবটা এতদিন তার হয়নি। অবদমিত ক্ষুধার অছিলা ছিল না কিছুই। নিজের স্ত্রীকে ছাড়া এ ধরনের দেহাসক্তি বা যৌনআকর্ষণ ইভগেনেকে টানতে পারেনি। না স্তেপানিদা— যে স্ত্রীলোকের সঙ্গে প্রাগ-বিবাহিত জীবনে ঘটেছিল একটা অবৈধ মিলন, না অন্য কোনো তৃতীয় রমণী। বিয়ের আগে দেহের যে চাঞ্চল্য, মনের গভীর অপ্রসাদ থেকে থেকে নাড়া দিয়ে যেত, লিজাকে কাছে পাওয়ার পর থেকে সে ধরনের মনোভাব ইভগেনেকে আর পীড়িত করেনি ।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বেঁচেছিল ইভগেনে। ভেবেছিল— এতদিনে তার মুক্তি হলো। দেহানুরক্তির প্রচণ্ড জাদুমন্ত্র কেটে গিয়েছে ভেবে তার আনন্দের সীমা ছিল না।
কিন্তু আজ? হঠাৎ এই যে দেখা হয়ে গেল দু’জনের, ঘটনার ফেরে, হয়তো এর কোনো অর্থ নেই, পিছনে নেই সুবিদিত পরিকল্পনা। নিতান্ত তুচ্ছ ব্যাপার উভয়ের এই আকস্মিক সাক্ষাৎ। আপাতদৃষ্টিতে এটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ হয়তো নয়, অন্তত গুরুত্ব আরোপ করা চলে না। তবু… তবু ইভগেনে বুঝতে পারল, তাকে বুঝতে হলো স্থির মুহূর্তে আত্মবিশ্লেষণ করে— সে আজও মুক্ত নয়। দেহ-আবেদনের ঊর্ধ্বে সে উঠতে পারেনি।’

নানা রকমের ফন্দিফিকির করে, নানা জিনিসকে আশ্রয় বানিয়েও ইভগেনে রক্ষা পায় না। তার এই জঘন্য কামনা, নীচ প্রবৃত্তি তার বিবেকবুদ্ধির টুঁটি চেপে ধরে, সে হাঁসফাঁস করতে থাকে। সে ভাবে :

‘ভেবেছিলুম— দরকার শেষ হলেই, বাঁধন কেটে বেরিয়ে আসব। প্রয়োজন ঘটেছিল স্বাস্থ্যরক্ষার খাতিরে… একটি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন নীরোগ মেয়ের! প্রয়োজন তো মিটে গেছে বহুদিন, তবে…? তা হলে দেখা যাচ্ছে, এসব ব্যাপার নিজের করতলগত নয়, নইলে কিসের জন্যে এই দীন লোলুপতা?’

অনেকটা সুস্থ ও স্থির মনেই ইভগেনে বিচার করতে বসে আপনাকে।

“নাহ্— দেখছি, এইভাবে আর চালানো অসম্ভব, অন্তত ওইরকম স্ত্রীলোকের সঙ্গে! আগুন নিয়ে খেলা চলে না। ভেবেছিলুম— আমিই বুঝি ওকে গ্রহণ করেছি, রেখেছি। এখন দেখছি— ওই আমায় পেয়ে বসেছে, বেঁধে রেখেছে… ওর হাত থেকে ছুটি-ছাড়ান নেই।”’

কোনোই কি পথ নাই? একেবারে জাহান্নাম? ‘হে ঈশ্বর…’ বলতে গিয়ে ইভগেনের কথা আটকে যায় যেন। ইভগেনে ভাবে :

“না না, ঈশ্বর এখানে নেই… আছে কেবল শয়তান… প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে দাড়িয়ে আছে এক নিদারুণ মায়াবী… সে স্তেপানিদার কবল থেকে উদ্ধার নেই আমার। ও আমাকে পেয়েছে— কাঁধে চেপে বসেছে। কিন্তু নাহ— আমি করব না, আমি পারব না। হ্যাঁ, শয়তানই তো—”’

তলস্তয় গল্পের দুটো উপসংহার টেনেছেন, দুটোই করুণ আর ট্রাজিক। এক উপসংহারে ইভগেনে আত্মহত্যা করে এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়, আর অন্যটায় ইভগেনে স্তেপানিদাকে খুন করে জেলে যায়। পাঠক হিসেবে আমরা এর কোনোটাকেই মেনে নিতে পারি না। আমরা দুটানায় পড়ে যাই— কখনো মনে হয় মুক্তির কোনো উপায় ছিল না আবার কখনো মনে হয় ছিল। যদি ইভগেনে কখনোই স্তেপানিদার কাছে না যেত, যদি তার দিকে চোখ না দিত, যদি… আমাদের বারবার মনে পড়ে যায় যীশুর বাণী : ‘তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে পাপের পথে ডাকে তবে তা উপড়ে দূরে ফেলে দাও। তোমার সমস্ত শরীর নরকে যাওয়ার চেয়ে বরং তার একটা অংশ নষ্ট হওয়া তোমার পক্ষে ভালো।’ (মথি, ব্যভিচার বিষয়ে শিক্ষা ৫ : ২৯)

সে কি তবে গোলাম আপন ইচ্ছার?

‘সমস্ত রকমের ব্যভিচার থেকে পালিয়ে যাও। মানুষ অন্য যে সব পাপ করে তা তার শরীরের বাইরে করে, কিন্তু যে ব্যভিচার করে সে নিজের শরীরের বিরুদ্ধেই পাপ করে।’ (১ করিন্থীয়, ৬ : ১৮)

পাঠক, উপরোল্লিখিত শয়তান গল্পের সারাংশ ও উদ্ধৃতি থেকে আমরা যতটুকুই-বা বুঝতে পারি, তাতে একটি প্রশ্ন তৈরি হয় : শয়তানটা আসলে কে— নারী নাকি যৌনতা? আমি মনে করি এর উত্তর তৃতীয় আরেকটি জিনিস, একটু কাছে গিয়ে যাকে দেখতে হয়, সেটি হলো ‘যুক্তি’। গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পাই ইভগেনে কীভাবে স্তেপানিদার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে— তার মনে হয়েছিল শরীর ও স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে ‘স্বল্পকালীন’ অবৈধ এই সম্পর্কে জড়াতে ক্ষতি কী। তার খাহেশ তাকে গোলামির শিকলে বন্দি করে ফেলেছিল। সে সেই খাহেশ পূরণে দফায় দফায় যুক্তির অবতারণা ঘটিয়েছিল, ভেবেছিল যুক্তিতে মুক্তি— কিন্তু পরিণতি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে যুক্তি আদতে পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত, মুক্তির মানদণ্ড নয়।

তলস্তয়ের এই গল্পে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের সাথে খুব প্রচ্ছন্নভাবে যার মতদর্শনের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তিনি বিখ্যাত দুঃখবাদী জার্মান দার্শনিক আর্টুর শোপেনহাওয়ার। ব্যতিক্রমহীনভাবে পশ্চিমের প্রায় সব দার্শনিকই যুক্তিকে জ্ঞানতত্ত্বে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, এবং মানুষকে বলাও হয় ‘যুক্তিবাদী জীব’। শোপেনহাওয়ার বলেন— ‘কোনো কিছু সম্বন্ধে যুক্তি খুঁজে পেয়েছি বলেই যে আমরা তা গ্রহণ করি এমন নয়, বরং আমরা ওটা পেতে চাই বলেই ওর সপক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকি— এমনকি আমাদের কামনাকে ঢাকবার জন্য আমরা দর্শন আর ধর্মশাস্ত্রের দরাজ ব্যাখ্যা দিয়ে থাকি।’ একারণে শোপেনহাওয়ার মানুষকে ‘তত্ত্বজ্ঞানীজীব’ আখ্যা দিয়েছেন— অন্য জীবেরাও কামনা করে থাকে কিন্তু তত্ত্ব-বিদ্যার দোহাই দেয় না।

আমরা যত যা-ই বলি না কেন, আমরা ইচ্ছার গোলামি করি। এমনকি আমাদের শরীরও। শোপেনহাওয়ারের জবানিতে— ‘সমস্ত দেহটাই ইচ্ছার কর্মময় রূপ’। আমরা মোটেও স্বাধীন নই, বরং প্রয়োজনের দাস। সবরকমের সংকল্প আর চিন্তাভাবনা সত্ত্বেও আমরা আমাদের স্বভাব বদলাতে পারি না— আমাদের কেবল একটা চরিত্রে অভিনয় করে যেতে হয়। ইচ্ছা আমাদের অন্ধের মতো টেনে নিয়ে যায়।

কিন্তু এই ইচ্ছা আসে কোথা থেকে? শোপেনহাওয়ার বলেন— ‘আমরা যা করি নিজ ইচ্ছাতেই করি, কিন্তু কী ইচ্ছা করব তা তৈরি করতে পারি না।’ ধরুন যৌন আবেগ, এর উৎপত্তি কই? মনোবিজ্ঞান বলে মস্তিষ্কে ফিনাথাইলামিন নামের একপ্রকার পদার্থের নিঃসরণ ঘটলে মানুষের মধ্যে সবধরনের আবেগ উৎপন্ন হয়। এই ফিনাথাইলামিন কখন কিভাবে নিঃসরিত হবে তা আগেভাগে নির্ধারণ সম্ভব নয়। আমাদের মস্তিষ্ক এক শান্ত-স্থির পুকুরের মতো, কেউ যদি তাতে ঢিল ছুড়ে, তখন গিয়ে ঢেউ উঠবে। কিন্তু এই ঢিল কে ছুড়বে আর কখন ছোড়া হবে তা খোদা ছাড়া কেউ জানেন না। কেবল নারী নয়, যৌন উদ্দীপক হতে পারে যেকোনো জিনিসই— গাছের বাঁক, কাপড়, গন্ধ কিংবা রঙও যৌন উদ্দীপক হতে পারে। এ এমন শত্রু— যাকে রুখার মতো কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের নাই।

গল্পে ইভগেনের পরিণতি খুবই দুঃখময়, কিন্তু সুখময় কোনো পরিণতি আছে কী? কীভাবে থাকবে, ইভগেনে তো আর দশজনের মতো সাধারণ মানুষ ছিল না। তার বিদ্যা-বুদ্ধিই তাকে আরও দুঃখী বানিয়েছে, তার ইচ্ছাকে জটিল করে তুলেছে। শোপেনহাওয়ারের মতে— ‘ইচ্ছার প্রকাশ যতই জটিল হতে থাকবে ততই যন্ত্রণাভোগও হবে স্পষ্টতর।… যে মানুষ যত বেশি জানে, তার বুদ্ধিও সেই অনুপাতে বাড়ে, ফলে তার দুঃখও বেশি৷ যে প্রতিভার অধিকারী সে-ই সবচেয়ে বেশি দুঃখ ভোগ করে।’ ইভগেনে যদি জন্তুজানোয়ারের জীবনকে উদ্দেশ্যহীন ধরে নিত, পশুর অধম অন্যান্য জমিদারদের মতো রঙতামাশায় জীবন কাটাত, তাহলে এই দুঃখ ভোগ করতে হতো না। কিন্তু তা আর হয়নি, পাকিস্তানি কবি জন এলিয়ার ‘রময’ কবিতার মতো যেন সবকিছু নির্দিষ্ট, কিছুই পরিবর্তনশীল নয়—

তুমি যখন আসবে, পাবে ছন্নছাড়া আমাকে
আমার একাকিত্বে জল্পনা-কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
ঘর সাজানোর খুব ইচ্ছে তোমার
কিন্তু আমার ঘরে তো বইপত্তর ছাড়া কিছুই নেই

এই বইগুলো না বড় জুলুমবাজ— আমাকে শিখিয়েছে তাদের মাঝে থাকা এক গোপন তত্ত্ব— যে-তত্ত্ব কতল করেছে আমার দিল আমার চিত্ত :

মানুষ কখনোই পায় না আনন্দময় পরিণতির সংবাদ
না জীবন হয় কখনো সুখময়

তলস্তয়ের এই ‘শয়তান’ গল্পও গোপন তত্ত্বের সেই বইগুলোর একটি, যেগুলো মন ও মগজকে দিনেদুপুরে খুন করে, কিন্তু কোনো সমাধান বাতলায় না, কখনো ‘মসিহ’ হয়ে বাঁচিয়ে তোলে না।

সহায়ক সূত্র :

১) দর্শনের সহজ পাঠ: লিও তলস্তয়/ অ্যালান দো বোতোঁ/ অনুবাদ : কাজী মাহবুবুল হাসান
২) দর্শনের ইতিকাহিনী/ উইল ডুরান্ট/ অনুবাদ : আবুল ফজল
৩) উইকিপিডিয়া
৪) লিও তলস্তয়ের সাহিত্যজীবন/ জামিয়া রহমান খান তিশা
৫) নুকুশে ইকবাল/ সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি
৬) শায়াদ/ জন এলিয়া
৭) বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ/ জওহরলাল নেহেরু

The post লেভ তলস্তয়ের ‘শয়তান’ গল্পের পাঠপ্রতিক্রিয়া appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%ad-%e0%a6%a4%e0%a6%b2%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%9f%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d/

সালমান হাবীবের কয়েকটি কবিতা

রাত্রির শেষভাগে যিনি
আরশ থেকে আকাশে নেমে আসেন
আজকাল মাঝরাতে আমি তার সাথে কথা বলি।
আপনার কথা, আমার কথা, আপনাকে ঘিরে
বেড়ে ওঠা আমার দুঃখবোধের কথা।

আমি অবলীলায় বলে যাই;
তাঁর সাথে আমার দূরত্বের কথা,
আপনার মত করে তাঁকে
ভালোবাসতে না পারার কথা।
তিনি চুপচাপ শোনেন, শুনে যান।
তারপর এক অদ্ভুত প্রশান্তি ঢেলে দেন
অশান্ত হৃদয় জুড়ে।

আমি বিগলিত হই, সিজদায় নত হই।
পাপড়ি ছুঁয়ে দেখে মধ্যরাতের জল।

প্রতিরাতে আরশের অধিপতি
আকাশে নেমে আসেন,
আমি তাই আকাশ ভালোবাসি।
যতটা ভালো আপনাকে বাসি;
তারচেয়েও বেশি আল্লাহকে ভালোবাসি।

মৃত্যুর ক্ষেত্রে ইচ্ছাধীকার থাকলে
আমি এমনই একটা সময় বেছে নিতাম।
জ্যোৎস্না ধোয়া রাতের বিলাপ।
আকাশে সুবহে সাদিক। বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ।
মিনারে মিনারে ফজরের এ’লান।
আমার জবানে উচ্চারিত হচ্ছে; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আল্লাহু আকবার— আল্লাহ মহান!

কতদিন মনে থাকে মৃত্যুর শোক!
আমি চলে গেলে— কাঁদবে আকাশ?
আমার শোকে ভারি হবে তোমাদের বুক?

আল্লাহর কাছাকাছি হতে পারিনি তাই
আহত হলে এখনো মানুষের কাছে ছুটে আসি,
অথচ ভুলে যাই; এ মনে জমা যত ক্ষত
তার মাঝে মানুষের আঘাতই সবচেয়ে বেশি!

দাম থাকে না মরা মাইনষের, দাম থাকে না লাশের
মরলে মানুষ দাম বেড়ে যায়— গোরস্তানের বাঁশের!

ঘুমের ভেতর দেখি—
আকাশ ছাপিয়ে আরশে নিয়ে যায়
কোনো এক অচেনা নভোযান।
আমার মুখে তখন উচ্চারিত হয়;
“আর্ রহমান, আল্লামাল কুরআন”!

কেউ কি দেখে—
কার কতটা ক্ষত বুকে, কার কতটা ঘাত,
কেমন করে আঁধার বুকে চুপ হয়ে যায় রাত!
কার কীভাবে ক্ষয় হয়েছে, কার কীভাবে জয়,
কেমন করে স্মৃতির দহন দগ্ধ হৃদয় সয়!

কার কতটা হাসির ভেতর দুঃখ আছে জমা
কে কতটা দুঃখ পেয়েও আগলে রাখে ক্ষমা!
কে কতটা রাত্রি জাগে, কে কতটা দিন
কার হৃদয়ে গেঁথে আছে ব্যথাতুর আলপিন!

কে কতটা একলা একা, কার কতটা দুখ
খুব গোপনে কার ভেঙে যায় দুঃখ পোষা বুক!
কোন মানুষটা বুকের ভেতর মৃত হৃদয় বয়
কার কথাতে মন দিয়ে কে আজ হয়েছে ক্ষয়!

কেউ দেখে না কেউ বোঝে না; নিজের দুঃখ ছাড়া
কবির দুঃখ বুঝতে যাবে— কোন বা হতচ্ছাড়া!

বাবা মানেই মাথার উপর
নির্ভরতার আকাশ,
বাবা মানে ‘লাগবেই এটা’র
বায়না বারো মাস।

বাবা মানেই আমার অসুখ
ঘুম চোখে নেই তার,
বাবা মানেই সাহস জোগান
‘চলো আরেক বার’।

বাবা মানেই হাঁটতে শেখা
ভর করে যার পায়ে,
বাবা মানেই আগেই দেখা
বিপদ ডানে বায়ে।

বাবা মানেই নানান বারণ
ভাল্লাগেনা যাকে,
বাবা মানেই লুকিয়ে কাঁদা
শুনতে বলি মা’কে।

বাবা মানেই যার ছেঁড়া শার্ট
আমার গায়ে নূতন,
বাবা মানেই শাসন করেও
আদর সোহাগ যতন।

বাবা মানেই একটা জীবন
ঘরের জন্য বাঁচা,
বাবা মানেই ক্ষয় করা সব
আস্ত মায়ার খাঁচা।

বাবা মানে এক বিকেলে
হারিয়ে গেছে যে জন,
বাবা মানে অপূর্ব স্থান
আমার প্রিয় স্বজন।

বাবা মানে একটা দোয়া
প্রার্থনাতে ঘেরা
বাবা মানে ‘রব্বীর হামহুমা
কামা রব্বা ইয়ানী ছগীরা’।

 

The post সালমান হাবীবের কয়েকটি কবিতা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%ac/

আগুনখেয়া (৬ষ্ঠ পর্ব)

ইবরাহীম জামিল:

ঝোপঝাড়ে ঠাসা অন্ধকার বন। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা বালকের মতো যত্রতত্র জন্মে উঠেছে ক্যাকটাস। ব্যথায় মাঝে মাঝে কঁকিয়ে উঠছে হেলেন।অন্ধকারে দেখা না গেলেও ঠাহর করা যায়, ক্যাকটাসের কাঁটার আঘাতে রক্তে লাল হয়েছে ডেভিডের সাদা পা-জামা। সেবাগী অদ্ভূত কারণে কোনো আঘাতেই ব্যথা পাচ্ছে না।

ডেভিড দুজনের হাত ধরে অন্ধকার বেয়ে এগিয়ে চলেছে। ওদের কোনো গন্তব্য নেই। কোথায় চলেছে ওরা জানে না। আপতত একটু দাঁড়ানোর জায়গা পেলেই হয়। অন্ধকার হাতড়ে পাতড়ে আগুনখেয়া পাহাড় থেকে নেমেছে ওরা অনেক আগে। মাঝে মাঝে ঝুঁকে পড়া গাছের ডাল সজোরে বাড়ি দিচ্ছে মুখে এসে। রাতদুপুরে বনের মধ্যে মানুষের আনাগোনায় পাখিরা বিরক্ত হয়ে ডানা ঝাপটে উঠছে। ডেভিড খেয়াল করলো, আগুনখেয়া থেকে এখনও গুলির শব্দ আসছে থেমে থেমে।

আগুনখেয়ার উঠোনে অনেকগুলো রক্তাক্ত মানুষ পড়ে আছে। কে বেঁচে আছে আর কে মরে গেছে বোঝার উপায় নেই। মাঝে মাঝে কেউ কেশে উঠলে তীব্র গুলির শব্দ তাকে থামিয়ে দিচ্ছে। কাজটা করছে পরেশের দুই সঙ্গী। বেশির ভাগ মানুষ পালাতে পেরেছে। অমাবশ্যার অন্ধকার তাদেরকে পালাতে সাহায্য করেছে। আর যারা পরেশের হাতে বন্দি হয়েছে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের সাথে। এই বন্দিদের মধ্যে মিনিরওজা নামের মেয়েটিও আছে। তাকে দেখে পরেশের ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে ক্রুর হাসি ফুটে উঠেছে।

পরেশ তার পিছু পিছু কত ঘুরেছে! কতভাবে প্রেম নিবেদনের চেষ্টা করেছে!! মেয়েটি পাত্তা দেয়নি। প্রথম যেদিন তাকে প্রেম নিবেদন করেছিল পরেশ, মেয়েটি একদলা থু থু ছুড়ে দিয়ে বলেছিল, ‘তোর মতো মাতাল যদি আমার পিছু লাগে তাহলে আমি সর্বনাশ করে ছাড়বো’। তবু মেয়েটিকে পরেশ ভুলতে পারেনি। একদিন পাহাড়ের ঢালুপথে মিনিরওজাকে একা পেয়ে পাহাড়ের গায়ে চেপে ধরেছিল শুধু এতোটুকু বলার জন্য যে, তোকে ছাড়া আমার চলবে না। মিনিরওজা তার হাত কামড়ে রক্তাক্ত করে দিয়ে বলেছিলো, আরেকবার কাছে এলে খুন করে ফেলবো!

পরেশ ভেবেছিল এবারও বিষয়টা কেউ জানবে না। কিন্তু মিনিরওজা ঘটনাটা সবাইকে বলে দেয়ায় পরেশকে বিচারের মুখোমুখি হতে হল। রমেশ ও রমেশের বন্ধুরা পরেশকে বলে দিল, আরেকবার মিনিরওজাকে বিরক্ত করলে সত্যি ওরা তাকে খুন করে ফেলবে। পরেশ ভালো করেই জানে, পাহাড়ের মানুষেরা পাহাড়ের নির্মল বাতাসের মতো নরম, কিন্তু ক্ষেপে গেলে পাহাড়ের মাটির মতোই শক্ত হয়ে ওঠে ওরা। একবার যদি কাউকে বলে দেয় যে, খুন করবে তাহলে খুন করেই ছাড়বে।। ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।

এরপর আর মিনিরওজাকে উত্যক্ত করার সাহস হয়নি পরেশের। কিন্তু যে প্রেম সিসার গুলির মতো বুকে বিঁধে আছে, আলতো ছোঁয়ায় কি তাকে সরানো যায়?
মেয়েটি ভালোবাসে রমেশকে। রমেশও বন্দিদের মধ্যে আছে। সে দৌড়াতে গিয়ে শুকরের মাংসে পা পিছলে ধরা পড়েছে। পরেশ চোখ বন্ধ করে মনে করতে চেষ্টা করলো, এই রমেশই তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল সেদিন রাতে, যেদিন পরেশ আগুনখেয়ার কারবারি হতে চেয়েছিল। পরেশের ইচ্ছে হল ব্রাশফায়ার করে রমেশকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে। কিন্তু সে নিজেকে সামলাল। সে মিনিরওজার কাছে গিয়ে নাটুকে গলায় বললো, আমি আগুনখেয়ার রাজা হবো, তুই হবি রাণী। রাজি থাকলে আজই বাসর হবে এই আগুনখেয়ায়! কী বলিস? বাসর হওয়ার জন্য আজকের আবহাওয়াটা দারুণ না?

মিনিরওজার শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠল। সে চিৎকার করে বললো, আমি তোকে বলেছিলাম আরেকবার আমার কাছে এলে খুন করে ফেলবো!
পরেশ হো হো করে হেসে উঠল। কাছে গিয়ে বললো, এই যে কাছে এলাম। নে খুন কর!
মিনিরওজা একদলা থু থু ছুড়ে দিল পরেশের মুখ লক্ষ্য করে। পরেশের মুখ শয়তানের আকার ধারণ করেছে। সে বাঁ হাতে মুখ মুছে বললো, আমাকে খুন করবে কে? তোর প্রেমিকেরা? ওই রমেশ? দেখ রমেশকেই আমি নেই করে দিচ্ছি!
রমেশের দিকে পরেশের বন্দুকের নল ঘুরে এলে রমেশ ভয়ে অসাড় হয়ে গেল। ভয়ার্ত গলায় মাথা নেড়ে বলল, না! না!
পরেশ জিজ্ঞাসা করলো, কী না?
আমি ওর প্রেমিক না।
তুই ওর প্রেমিক।
না, আমি ওর প্রেমিক না।
ওর কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখ তুই-ই ওর প্রেমিক। তোর প্রেমে ও দেওয়ানা হয়েছে বলেই আমার দিকে ওর মনোযোগ নেই।
রমেশ কাতর গলায় বললো, সত্যি আমি ওর প্রেমিক নই। আমি ওকে ভালোবাসি না। কখনো ভালোবাসিনি।
পরেশ আঁতকে ওঠার ভঙ্গি করে বললো, কখনো ভালোবাসিসনি? কেন ভালোবাসিসনি? ওর নাক খারাপ? মুখ খারাপ? দেখতে খারাপ? সবাই ওর প্রেমে হাবুডুবু খায়। তুই কেন ওর প্রেমে পড়লি না? তোর তো বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তোকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিৎ!
রমেশের কপাল বরাবর বন্দুক তুলে পরেশ শীতল গলায় বললো, তুই ওকে ভালোবাসিসনি?
রমেশ আতঙ্কে খেই হারিয়েছে। সে মাথা নেড়ে সায় দিলো, হ্যা, ভালোবেসেছে।
পরেশ বললো, মুখে বল তুই ওকে ভালোবেসেছিস?
রমেশ নিভে যাওয়া গলায় বললো, ভালোবেসেছি।
বল, এখনো ভালোবাসিস!
রমেশ বললো, এখনো ভালোবাসি।
পরেশের বন্দুক গর্জে উঠল। মিনিরওজা চিৎকার করে জ্ঞান হারালো। আর রমেশের দেহ ঝুঁলে রইল বাঁধা দড়ির সাথে।

গুলির শব্দে হুড়মুড় করে পড়ে গেল ডেভিড, তার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ল সেবাগী। হেলেন কেঁদে উঠল হাউ মাউ করে। কী এক দুঃস্বপ্নের রাত নেমে এল তাদের জীবনে! গতকাল বিকেলেও ওরা ভাবতে পারেনি যে, এমন দুঃসময় আসতে পারে। ডেভিড মনে মনে সবকিছু গুছিয়ে রেখেছিল। দুটি শুকর মেরে আগুনখেয়ায় তার পথচলা মসৃণ করে তুলেছিল। সে কারবারি না হলেও কারবারির চেয়ে ক্ষমতাধর হিসেবে আগুনখেয়ার মানুষ তাকে সমীহ করতে শুরু করেছিল । কিন্তু সুখ-স্বপ্নের মাঝখানে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার মতো হঠাৎই সবকিছু ভেঙ্গে গেল।

ডেভিড ভেবেছিল আগুনখেয়ার একদম চূড়ায় একটি দৃষ্টিনন্দন গির্জা তৈরি করবে সে। বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ার বিস্ময় হয়ে উঠবে এ গির্জা। বাংলাদেশের খ্রিস্টানদের কেন্দ্র হয়ে উঠবে আগুনখেয়ার চূড়া। খ্রিস্টানদের পদভারে মুখরিত হবে আগুনখেয়া।

প্রায় দশ বছর আগে ডেভিডের চোখ পড়েছিল আগুনখেয়ার উপর। দারুণ একটা জায়গা! চারপাশে এতো উঁচু আর কোনো পাহাড় নেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার ফুট উপরে আগুনখেয়ার চূড়ায় ধবধবে সাদা মার্বেল পাথরের বিরাট গির্জা তৈরির স্বপ্ন সেই দশ বছর আগের এক সন্ধ্যায় টুপ করে তার মনে গেঁথে গিয়েছিল।

বাংলাদেশে ডেভিড এসেছে বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে, বরং ডেভিডকে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে ডেভিডের কার্যক্রম দেখে বিশ্ব খ্রিস্টান মিশনের নেতারা যার পর নাই আনন্দিত। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্ন ডেভিডের হাত ধরে অনেক দূর এগিয়েছে। ডেভিডের হাত ধরে পার্বত্যাঞ্চলে এতো ধর্মান্তর হয়েছে, খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এতো বেড়েছে যে, পূর্ব তিমুরের মতো গণভোট হলে এখনই তারা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়ে যায়। কিন্তু সময় এখনো আসেনি। বিশ্ব খ্রিস্টান মিশন ডেভিডকে বলে দিয়েছে যে, মিশনের কল্যাণে যে কোনো পদক্ষেপ সে নিতে পারবে। দুনিয়ার তাবৎ খ্রিস্টানেরা তাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করবে। টাকার জন্য ডেভিডের কাজ থেমে থাকবে না।

আগুনখেয়া দেখে ডেভিডের মনে স্বপ্ন জেগেছে, আয়া সোফিয়ার মতো আরেকটি গির্জা সে গড়ে তুলবে বাংলাদেশে, আগুনখেয়ার চূড়ায়। সারা দুনিয়ার খ্রিস্টানদের অর্থায়নে সংগোপনে কাজটা করবে সে। তবে সেই কাঙ্খিত সময়টি এলে পুরো দুনিয়াকে জানিয়ে দেবে সে কী করেছে। সারা দুনিয়ার খ্রিস্টানদের আগমন নির্গমন শুরু হবে আগুনখেয়ায়। চিন্তাটা মাথায় আসার পর থেকে লক্ষ্যে অলক্ষ্যে আগুনখেয়ায় আসে ডেভিড। দূর থেকে দৃষ্টি রাখে আগুনখেয়ার উপর। একটু একটু এগোতে এগোতে একদম আগুনখেয়ার ভিতরে ঢুকে পড়েছিল সে আজ সন্ধ্যায়। ছোট্ট একটা গির্জার অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছিল। অর্থাৎ আগুনখেয়ায় সে পা রেখে ফেলেছিল, কিন্তু হঠাৎ কী এক দুঃসপ্ন এসে সবকিছু ওলটপালট করে দিল!

ডেভিড হাত দিয়ে দেখার চেষ্টা করল পা থেকে এখনও রক্ত ঝরছে কিনা। না, রক্ত ঝরছে না। ক্যাকটাসের বন তারা পার হয়ে এসেছে। পুরোনো রক্ত পায়ের উপর জমাট বেঁধে আছে। তারা প্রায় ফাঁকা একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছে। এ জায়গাটা বনভূমি নয়, সম্ভবত লোকালয়ের কাছাকাছি কোনো জায়গা হবে। এখানে একটু বিশ্রাম নেয়া যায়। ডেভিড সেবাগী আর হেলেনের পা হাতড়ে দেখল, সেবাগীর পা প্রায় ক্ষত-বিক্ষত। হেলেনের অবস্থা একই রকম। সেবাগী চুপ করে আছে, হেলেন ফোঁপাচ্ছে। ডেভিড হেলেনের মাথায় হাত রাখতেই সে জোরে কেঁদে উঠে বললো, বাবা! তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে?
তুই তো বললি সেবাগীর কাছে যাবি। ওর সাথে বন্ধুত্ব করবি।
হেলেন কান্না থামিয়ে বললো, সেবাগীর দাদা কী মরে গেছে?
হ্যা মরে গেছে। থমথমে গলায় সেবাগী উত্তর দিল ।
তাহলে তোমার কেউ আর বেঁচে নেই?
আমি জানি না।
ডেভিড বললো, সেবাগী! তোমার সবকিছু আছে। কিছুই হারায়নি। তোমার দাদা আমার বন্ধু ছিল। এখন আমাকেই মনে করবে মহিত শেখ। আমিই তোমার অভিভাবক। তোমার দাদার পয়সা ছিল না। আমার পয়সা আছে। তুমি আনন্দে থাকবে।
হেলেন আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। বিভীষকাময় রাত্রির কষ্ট যেন ভুলে গেছে সে।
সেবাগী বললো, আমি পয়সা দিয়ে কী করবো?
ডেভিড বললো, বড় হলে বুঝবে, পয়সা দিয়েই দুনিয়ায় সবকিছু হয়।
পয়সা দিয়ে কি আমার দাদাকে ফেরৎ পাওয়া যাবে?
ডেভিড এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না। সে নিরব হয়ে গেল।

গভীর রাতে আগুনখেয়ার মিতালী পনেরো মাইল হেঁটে রুমার আরমি ক্যাম্পের সামনে এসে ক্লান্তিতে ধপাস করে বসে পড়ল।

মিনিরওজার জ্ঞান ফিরেছে। সে শরীরে ও মনে অব্যক্ত ব্যথা অনুভব করল। রমেশকে সে সত্যি সত্যি ভালোবাসতো। মুখ ফুটে বলেনি কখনো, কিন্তু ভেবে রেখেছিল, কোনো এক সুসময়ে সবাইকে জানিয়ে রমেশের সাথে থিতু হয়ে যাবে।

হ্যাজাকের তেল ফুরিয়ে আলো নিভু নিভু হতে চলেছে। হ্যাজাকের নিচে কতগুলো মৃত পতঙ্গ জমেছে। ওরা আগুনের প্রেমে আত্মহুতি দিয়েছে। মিনিরওজার কিছুক্ষণের জন্য আগুনে আত্মহুতি দেয়া একটি পতঙ্গ হয়ে যেতে ইচ্ছে হল। মিনিরওজা মাথা তুলে রমেশের লাশ দেখার চেষ্টা করল। ওভাবেই পড়ে আছে। পরেশ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে গাছের গুড়িতে বসে মদ খাচ্ছে। মদ নয়, পঁচানো পান্তা ভাত। সাথে মাটি থেকে তুলে নেয়া কেজিখানেক শুকরের মাংস।
মিনিরওজাকে রমেশের লাশের দিকে তাকাতে দেখে মাতাল পরেশ খেকিয়ে উঠলো, এখনো তোর ক্যারা নামেনি? ওদিকেই চোখ যায়? আমার দিকে এখনো চোখ আসে না?
মিনিরওজা বললো, আমি নিজ হাতে তোকে খুন করবো!
পরেশ বললো, আমাকে খুন করবি? তাহলে তো তোকে বাঁচিয়ে রাখা উচিৎ না। পরেশ বন্দুক উঁচু করেছিল, কিন্তু মিনিরওজার ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠতে দেখে থেমে গেল। মিনিরওজা মরতে চায়।

পরেশের হঠাৎ মনে হল, রমেশ মরেছে বলেই কি মিনিরওজা বেঁচে থাকতে চায় না? ওর জীবন মরণ সবকিছু রমেশের জন্য? পরেশ উত্তেজিত হয়ে হাতে থাকা মদের হাড়িটা আছড়ে ভাঙল। চিৎকার করে বললো, তোকে আমি এতো সহজে মারবো না। তোকে কুকুরের মতো করে মারবো। যন্ত্রণা দিয়ে মারবো।
পাশের দুজন উৎসাহী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। পরেশ আঙুল উঁচিয়ে বলল, খবরদার!
ওরা অসহিষ্ণু গলায় বলল, আমাদের প্রয়োজন!
‘ওদিকে যাও!’ পরেশ দড়িতে বাঁধা অন্য নারীদের দিকে ইশারা করল।
দুই মাতাল টলতে টলতে বন্দিদের দিকে পা বাড়াল।

পরেশ নিজেকে শুধরে নিয়ে মিনিরওজার উদ্দেশ্যে কাতর গলায় বললো, তোকে আমি ভালোবাসি, তুই আমার সাথে থাকতে রাজি হলে আমি তোর গায়ে ফুলের টোকেও পড়তে দেবো না। আমি তোকে রাণীর মতো করে রাখবো!
মিনিরওজার চেহারায় ঘৃণা ফুটে উঠতে দেখে সে নিজের কথা সংশোধন করে বললো, আমি তোকে যন্ত্রণা দিয়ে মারবো!
ঠিক তখনই আগুনখেয়ার বাইরে থেকে দ্রিম দ্রিম গুলির শব্দ শোনা গেল। নারীদের দিকে হেঁটে যাওয়া লোকদুটো থমকে দাঁড়িয়েছে। পরেশের দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওরা। পরেশও হতভম্ব হয়ে গেছে।
ওরা তিনজন পরস্পরের বন্দুকের দিকে তাকাতে লাগল। আর কারো কাছে তো বন্দুক থাকার কথা নয়!
পরেশ মুহূর্তেই ঘটনাটি বুঝে ফেললো, সর্বনাশ হয়ে গেছে!
একজন প্রশ্ন করলো, কী হয়েছে?
পরেশ বললো, আর্মি এসে গেছে!
ওদের তিনজনের চেহারা থেকেই রক্ত সরে গেল। এতক্ষণ যে আতঙ্ক ওরা আগুনখেয়ায় সৃষ্টি করেছিল সে আতঙ্ক এখন ওদের চেহারায় ভর করেছে। ওরা দৌড়ে পূব দিকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পূব দিক থেকে গুলি শুরু হল।

পরেশ আতঙ্কিত গলায় বললো, আমাদেরকে ঘীরে ফেলেছে! ওদের হাতে ধরা পরলে মেরে ফেলবে! লড়াই করে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই!
পরেশের দুইসঙ্গী হাঁটু গেড়ে বসে গুলি ছুঁড়তে শুরু করল। ওরা পার্বত্যাঞ্চলের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। আর্মির সাথে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে ওদের। পরেশও ওদের সাথে গুলি করার ভান করেছিল প্রথমে। তারপর ওদের মনোযোগ লড়াইয়ের দিকে বুঝতে পেরে আস্তে করে পশ্চিমে সরে গেল সে।

পশ্চিম থেকে পাহাড়টি খাড়াভাবে আড়াইশো ফিট নিচে নেমে গেছে। এদিকে শুধু পাহাড়ের গা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা গাছ ছাড়া আর কিছু নেই। এ পাশ থেকে আর্মি আসার সুযোগ নেই। পরেশ ঝোঁপের মধ্যে ঢুকে পড়তে যাচ্ছিল, মিনিরওজা পাশে এসে বললো, তুমি যদি আমাকে বাঁচাও, আমি তোমার হবো! আমার যাওয়ার কোনো যায়গা নেই। তুমি না বাঁচালে আমি হয়তো আর্মির ব্রাশ ফায়ারে মারা পড়বো!
পরেশ মিনিরওজার মুখে একদলা থুথু মেরে বলল, আয় আমার সাথে!
ঝোঁপের মধ্যে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে আর্মিদের ছোঁড়া এলোপাথাড়ি গুলির একটি এসে পরেশের পায়ে বিঁধল। হাত থেকে বন্দুক ছিটকে গেছে। পরেশ আতঙ্কে যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে। এই মুহূর্তটির সুযোগ নিল মিনিরওজা। সে বন্দুক তুলে নিয়ে পরেশের দিকে তাক করে বললো, আমি বলেছিলাম না, নিজ হাতে তোকে খুন করবো? আমি বলেছিলাম না, তোর সর্বনাশ করে ছাড়বো?
আতঙ্কে পরেশের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে পড়ার দশা। সে বললো, তুই আমার সাথে গাদ্দারী করেছিস!
তোর সাথে গাদ্দারী না করার কি কোনো কারণ আছে? মিনিরওজার শ্লেষ মেশানো প্রশ্ন।
তুই গুলি করতে পারিস?
দ্যাখ পারি কিনা!
বিপদ বুঝতে পেরে পরেশ পশ্চিমের খাঁদে ঝাঁপ দিল। মিনিরওজার গুলিও ঠিক সেই সময় বন্দুকের নল অতিক্রম করল।

পরদিন সকাল।
সূর্যের আলো যখন ফুটছে তখন তিনজনই পেটের মধ্যে ছুচোর নাচুনি অনুভব করল। গতকাল দুপুরবেলা খাওয়া হয়েছে। এরপর থেকে পেটে আর দানাপানি পড়েনি। তারপর মাইলের পর মাইল পথ হাঁটা। আতঙ্কে এতক্ষণ ক্ষুধার কথা মনে পড়েনি। এখন যখন পূর্ব দিগন্তে অভয়-বার্তা নিয়ে সূর্য উঠছে, তখন পেটের ক্ষুধাটাও নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
হেলেন বলে ফেললো, বাবা! ক্ষুধা আর সহ্য হচ্ছে না। সেবাগীর মুখটাও শুকনো হয়ে আছে। ডেভিড নিজের মুখটা দেখতে পাচ্ছে না। দেখলে বুঝতে পারতো সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে তারই।
পা-জামায় রক্তের দাগ। জামায় বনকাটা লেগে আছে। ওদের তিনজনকে বড্ড অদ্ভ‚তুড়ে লাগছে। এ অবস্থায় মানুষের সামনে পড়লে বিপদ আরও বাড়বে। মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে হবে। কাছেই একটা ঝিরি। ঝরণার নিটোল জল বয়ে চলেছে ঝিরিতে। ডেভিড হাতে করে জল তুলে ওদের দুজনকে খাওয়ালো। কৃষক টাইপের এক লোক ভোর সকালেই ঘর থেকে বেরিয়েছে। এরকম অদ্ভূত টাইপের তিনটি মানুষ দেখে তার মুখ একদম হা হয়ে গেছে। ডেভিড তাকে ডেকে বললো, কাছাকাছি কোথাও চার্চ আছে?
আপনাদের কি…? লোকটি কথা শেষ করতে পারল না। ডেভিড তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা শুধু চার্চে যেতে চাই।

The post আগুনখেয়া (৬ষ্ঠ পর্ব) appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%96%e0%a7%87%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a7%ac%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac/

হুমাইরা—দিলরুবায়ে সারওয়ারে কায়েনাত (৯ম পর্ব)

সুমাইয়া মারজান:

মরুবালার সংসার

বয়সে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন নবীজির অনেক ছোট। কেবলই কিশোরী সময়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স পঞ্চাশেরও বেশী। বয়সের ঢের তফাত ছিল বলে কি দাম্পত্য জীবন কাঠখোট্টা ছিল? মোটেও না। বয়সের সমীকরণটা জটিল হলেও ভালোবাসা ছিল শীত সকালের প্রথম ঝরে পড়া শিউলির মতো স্নিগ্ধ। কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যতটা না স্বামী, তারচেয়েও বেশি ছিলেন বন্ধু-প্রেমিক। ভালোবাসার মানুষটির কাছে তাই নিজের সবটুকুই সঁপে দিতেন। তাকে নিয়ে মেতে উঠতেন খুনসুটিতে। সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়েও তিনি প্রেয়সীর কাছে তার মনের মতো করে নিজেকে উপস্থাপন করতেন। প্রিয়তমাকে গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের বাহার দেখানো তার স্বভাবেই যেন ছিল না; আগাগোড়া একজন বন্ধুর মতো তুলে ধরতেন নিজেকে।

অনেকটা এমন যে, এখানে— আমার বুকের চাতালে তুমি সাজাও ভালোবাসার অধিকার আর অভিমানের পসরা । চাইলেই ভরসা করা যায় আর ইচ্ছেমতো ভালোবাসা যায়, আমি তোমার এমনই একজন অভিভাবক এবং বন্ধু।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও নিজেকে নবীজির চাওয়ার মতো করেই উপস্থাপন করেছেন। ফলে তাদের দাম্পত্যজীবন হয়েছে মধুরতম!

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার তাদের দাম্পত্যজীবনের নানান সুন্দরম দৃশ্য তুলে ধরেছেন। তার বর্ণনায় পাওয়া যায় তার কাছে নবীজির নিজেকে সঁপে দেওয়ার কথা।

এক শীতের রাতের কথা বলছিলেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে এসে নির্দিষ্ট কোণে ইবাদতের জন্য মগ্ন হলেন। দীর্ঘক্ষণ ইবাদতের পর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে বললেন, আমার কাছে আসো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জবাব দিলেন আমি তো ঋতুবতী। বললেন তাতে কোনো অসুবিধা হবে না। তোমার হাত দু’টি বাড়িয়ে দাও। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তা-ই করলেন। তিনি হাত প্রসারিত করে দিলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নিজেকে তাঁর কোলে সঁপে দিলেন। তিনিও তাকে উষ্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। এভাবেই একসময় দুজনে ঘুমিয়ে পড়লেন। এরকম প্রায়ই হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম গোসল করে ঠাণ্ডায় কাঁপছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে এসে তাকে ডাক দিয়ে উষ্ণতা চাইলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও নবীজিকে জড়িয়ে দিতেন পরম ভালোবাসার উষ্ণতা।

ভালোবাসা, নির্ভরতার পাশাপাশি খুনসুটিতেও ভরপুর ছিল দুজনের প্রেমময় দাম্পত্যজীবন। একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঘরের সামনে অজু করছিলেন। নবীজি ঘর থেকে বের হয়ে তার পাশ দিয়ে মসজিদে নববীর দিকে যাচ্ছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা দুষ্টুমি করে পেছন থেকে নবীজির শরীরে পানি ছিটিয়ে দিলে নবীজিও সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি পাত্র থেকে পানি নিয়ে তার চপলা হুমাইরা পাখির শরীরে পানি ছিটিয়ে দিলেন। আর পুলকিত মনে হেসে উঠলেন দুজনেই। হাসতে হাসতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন, দেখো আয়েশা! আমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করিনি। বদলা নিয়েছি কেবল। আর বদলা নেওয়ার কথা কিন্তু কুরআনেই বলা হয়েছে।

আরেকদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঘরের পাশে লাকড়ি জড়ো করছেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও তার সাথে ছিলেন। নবীজির ছুড়ে দেওয়া একটি ছোট লাকড়ি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পায়ে এসে পড়লো। ইয়া রাসুলুল্লাহ, বদলা নেওয়া কি জায়েজ আছে? নবীজির দিকে তাকিয়ে বললেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। যদিও তিনি তেমন ব্যথা পাননি; ব্যথা পাওয়ার ভান করে আছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঠিকই তা বুঝতে পারলেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে জবাব দিলেন- হ্যা, বদলা নেওয়া তো অবশ্যই জায়েজ। তবে কারোর দ্বারা যদি ভুলবশত কিছু হয়ে যায় তো ভিন্নকথা। তা ধর্তব্য নয়।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার তো বয়স কম ছিল। তার কিশোরী মনে নবীজির জন্য যেমন ফুটতো ভালোবাসার অজস্র ফুল, তেমনি মাঝেমধ্যেই অভিমানের পাথরও জমতো। নবীজির সাথে তিনি প্রায়ই অভিমান করতেন। নবীজিও তার অভিমান ভাঙাতেন খুশিমনেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার অভিমানটুকুও নবীজির কাছে মনে হতো ভালোবাসার সৌন্দর্য। এমনই একদিন দুজনে বেশ ঝগড়া করেছেন। সাধারণত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে অভিমান করতেন তা নবীজির ভালোবাসার পরাগ মাখানো কথাতেই গলে মোম হয়ে যেতো। কিন্তু সেদিনের ঝগড়াটাও বেশি হয়ে গেছে। নবীজি কতকিছু বলছেন, চেষ্টা করছেন প্রেয়সীর মান ভাঙানোর। কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। নবীজি আর কী করবেন, তাও যেন ভেবে পাচ্ছেন না। অগত্যা খুঁজে বের করলেন এক অভিনব পদ্ধতি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, এক কাজ করো, তুমি আমাদের মাঝখানে একজন মধ্যস্থতাকারী ঠিক করে নাও। যে আমাদের বিষয়টির মীমাংসা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভাবলেন , প্রস্তাবটি তো মেনে নেওয়ার মতো। তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কথায় রাজি হলেন। কিন্তু কাকে বানাবেন মধ্যস্থতাকারী? নবীজি তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথা বললেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, না, তিনি নয়। তার মেজাজ কঠিন প্রকৃতির। তারচে আমি আমার পিতাকেই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মানবো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডেকে নিয়ে এলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথমে ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনলেন। শুনলে কী হবে, তিনি তো আবু বকর! যে নবীজির জন্য জান ফিদা করে দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকেন, তার মেয়ে কী না সেই নবীজির সাথে অভিমান করে! আবার তাকে মধ্যস্থতা করতে হবে! তিনি ঘটনা শুনে দেরি করলেন না। মেয়েকে আচ্ছামতো মারতে লাগলেন। কোথায় গেলো মধ্যস্থতার কথা! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পিতার রাগ দেখে দৌড়ে গিয়ে নবীজির পেছনে আশ্রয় নিলেন। নবীজির গলা ধরে তার পিঠে চড়ে গেলেন। নবীজির গলা জড়িয়ে ধরেছেন তো ধরেছেনই! পিতা না যাওয়া পর্যন্ত আর ছাড়াছাড়ি নাই। আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মেয়েকে কতক্ষণ শাসন করে চলে গেলেন। এবার আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির পিঠ থেকে নেমে ঘরের কোণে বসে রইলেন। নবীজি প্রিয়তমার দিকে তাকালেন, মুখখানাতে কেমন অভিমানের ছাপ রয়ে গেছে তখনও। প্রিয়তমার মন ভালো করতে কাছে আসার জন্য ডাকলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকালেনও না। যেভাবে ছিলেন সেভাবেই বসে রইলেন। নবীজি হেসে উঠে বললেন, এখন আমি ডাকছি আর কাছে আসছ না, এতক্ষণ তো আমার পিঠে চড়েই বসে ছিলে।

অন্য একদিন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির সাথে কী এক সামান্য কারণে অভিমান করে বসে আছেন। অভিমানে সারাদিন খাবারও মুখে দেননি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামও সেই সকালে বেরিয়ে গেছেন। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, ফেরার নাম নেই। একা ঘরে অভিমান যেন চাপা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। তাই ভীষণ মনখারাপ করে বসে আছেন নবীজির পথ চেয়ে। আর একথাও জানা আছে যে নবীজি এলে অভিমানের বরফটুকু গলে উষ্ণ জল হয়ে যাবে। কিন্তু নবীজিই তো আসছেন না। একা বসে বসে এসবই ভাবছেন। এর মাঝে হঠাৎ ঘরের দরজার কড়া নড়ে উঠলো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বুঝতে পারলেন কে এসেছেন। আর ততক্ষণে অভিমানও গলতে শুরু করেছে।

প্রিয়তমের সাথে কথা বলার জন্য মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠলো। তবু তিনি তো তিনিই। এক সমুদ্দুর উচ্ছ্বাস বুকে চেপে নির্বিকার ভঙ্গিতে দরজা খুলে দিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অন্যদিকে তাকিয়ে সালামের জবাব দিলেন, কোন কথা বললেন না। নবীজি ধীরে ধীরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এলেন।

হাতে সদ্যই হাদিয়া পাওয়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রিয় খেজুর। আর প্রেয়সীর অভিমানের কথাও অজানা নয়। তাই আদুরে গলায় ডাক দিলেন, হুমাইরা পাখি! দেখোতো তোমার জন্য কী এনেছি, তোমার প্রিয় খেজুর। এবার আল্লাহর নাম নিয়ে খেজুরগুলো খেয়ে নাও।

ব্যস! অভিমান তো হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোন ভালোবাসার পলকা হাওয়ায় উড়ে গেলো। এবার প্রিয়তমের দিকে ফিরে তাকালেন। নবীজির হাত থেকে দুটো খেজুর তুলে নিতে নিতে বললেন, আল্লাহর নামেই তো খাবো। এদ্দিন কি আমি আমার বাবার নামে খেয়েছি! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এমন অভিমান ভরা উত্তর শুনে নবীজি বেশ কতক্ষণ হাসাহাসি করলেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে যোগ্যতম প্রিয়তমা হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে যা যা করার দরকার সবই করেছেন। তার মানসিক বিকাশ, বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তাকে ঘরের কোণে বন্দী না রেখে বিভিন্ন সময়ে তাকে নিজের সফরসঙ্গী করতেন। এছাড়াও মদিনার আশেপাশে তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতেন। ভালোবেসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূর্ণ করতেন।

একদিন নবীজি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছিলেন। বাইরে হঠাৎ বাচ্চাদের আনন্দধ্বনি শোনা গেলো। ব্যাপার কী! নবীজি দেখতে বেরিয়ে এলেন। দেখলেন, এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বাচ্চাদের অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে খেলা দেখাচ্ছে। নবীজি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডাক দিলেন দেখে যাওয়ার জন্য। আয়েশা, এদিকে আসো। খেলা দেখে যাও। নবীজি দরজায় দাঁড়ানো ছিলেন বলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা দেখতে পারছিলেন না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাকে পিঠে তুলে নিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও দিব্যি আরাম করে নবীজির পিঠে চড়ে খেলা দেখতে লাগলেন। কিছুসময় পরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশা, খেলা দেখা হলো? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, না আমি আরও দেখবো। অগত্যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লামও প্রিয়তমাকে কাঁধে নিয়ে আরও কতক্ষণ খেলা দেখার সুযোগ করে দিলেন।

সম্ভবত তখনো পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়নি। মসজিদে নববির সামনে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসেরা বর্শা নিক্ষেপ-তরবারি চালনা-কুস্তিসহ আরও নানান খেলা দেখিয়ে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছিলো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন তার পাশে। ভীড়ের কারণে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভালোমতো দেখতে পারছিলেন না। তাই নবীজি নিজের পাশে চাদর দিয়ে ঢেকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে খেলা দেখার সুযোগ করে দিলেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একজন দায়িত্বশীল স্বামী ছিলেন। এমনিতেও তিনি নিজের সবকাজ নিজ হাতেই করতেন। প্রিয়তমা ঘরে আসার পর তার উপর সংসারের সকল দায়িত্ব চাপিয়ে নির্ভার হয়ে যাবেন এমন স্বভাব ছিল না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার ঘরে আসার পরেও নিজের সব কাজ নিজেই করতেন। বরং প্রিয়তমার সাথে ঘরের কাজেও সাহায্য করতেন। নবীজির দিলরুবাও ছিলেন নবীজির অনুসারী। তিনিও নিজের কাজ নিজেই করতেন। একদিন দ্বিপ্রহরে, সূর্য তার আগুন যেন ঢেলে দিচ্ছে মরুর বুকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঘরের সামনে বসে নিজের জুতা সেলাই করছিলেন। ঘরের ভিতরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চরকায় সুতা কাটছিলেন। এরমধ্যে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার চোখ পড়লো নবীজির ওপর। তিনি তখন সাক্ষী হলেন এক অপার্থিব সুন্দরের। দেখলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কপালে ঘাম জমে আছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে তা টপটপ করে নিচে পড়ছিল। ফোঁটাগুলো নিচে পড়ার সাথে সাথে তার থেকে এক আশ্চর্য আলোকছটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। রোদ্দুরের আলোয় ঝলমল করা হিরে- পান্নার মতো সে আশ্চর্য আলোর বিকিরণ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্থান, কাল, পাত্র ভুলে অবাক বিস্ময়ে— মুগ্ধতামাখা দৃষ্টিতে নবীজিকে দেখতে লাগলেন। প্রেমাস্পদের রূপসুধা পান করায় এতটাই মগ্ন ছিলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামও যে তার দিকে তাকিয়ে আছেন তা খেয়াল করেননি।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ডাকে তার সম্বিত ফিরলো। আয়েশা, কী হয়েছে? অমন করে কী দেখছো?

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার চোখেমুখে তখনও মুগ্ধতা লেগে আছে। নবীজির দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো দেখছিলাম আপনাকে। দেখছিলাম আপনার কপালে জমেছে মুক্তোদানা । সে মুক্তোদানা রোদ্দুরের তাপে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো আলোকছটা। অবাক-বিস্ময়ে আমার দুইচোখ সে আলোর খেলা বিভোর হয়ে দেখছিলো। এখন যদি আবু কাবির হাজলি আপনাকে দেখতো তবে সে তার কবিতার শ্রেষ্ঠ উপমা এখানেই পেয়ে যেতো।

নবীজি বললেন, আচ্ছা! শোনাও দেখি আবু কাবির হাজালির কবিতাখানা।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন প্রিয়তমের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করলেন,

‘সে, নবজাতক শিশু এবং দুধের চেয়েও—
পবিত্রতম ও অপরূপ।
তুমি তার উজ্জ্বল চেহারার দিকে যদি তাকাও
উপলব্ধি করতে পারবে—
কিভাবে সূর্য এবং চন্দ্রের আলোকরশ্মি
তার চারদিক আলোকজ্জ্বল করে রেখেছে।’

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম প্রেয়সীর মুখে কবিতা আবৃত্তি শুনে অভিভূত হয়ে গেলেন। হাতের কাজ ফেলে রেখে এগিয়ে এসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কপালে চুমো খেলেন। বিমোহিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, আয়েশা, তোমার কবিতা শুনে আমার মন যতটা পুলকিত হয়েছে, তুমি আমার চেহারা দেখেও ততটা আনন্দিত হওনি।

তথ্যসহায়িকা :

১.সহিহ বুখারি।
২.সিরাতে ইবনে হিশাম।
৩.হিলইয়াতুল আউলিয়া।
৪.তারিখে তাবারি।
৫.মুসনাদে আহমাদ।

The post হুমাইরা—দিলরুবায়ে সারওয়ারে কায়েনাত (৯ম পর্ব) appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%93%e0%a7%9f-7/