Sunday, July 31, 2022

বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বাদ : কেন প্রতিবাদে নামছেন আলেমরা?

মুনশী নাঈম:

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বহালের দাবিতে প্রতিবাদে নামছেন প্রায় সব ধারার আলেমগণ। তারা বলছেন, বোর্ড পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা ৫০ নম্বরের জন্য হলেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ রেখে শুধু শিখনকালীন মূল্যায়ন দিয়ে ইসলাম শিক্ষার সুফল প্রত্যাশা করা অবাস্তবতার নামান্তর।

ধর্মীয় মহল বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিরোনামে ধর্মীয় শিক্ষা রাখা হলেও মূলত তা কোনোক্রমে ধর্মশিক্ষা নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় শিক্ষাক্রম থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়ার যে পরিকল্পনা চলছিল, এ শিক্ষাক্রম তার সফল বাস্তবায়ন। ২০১০ সালে প্রণীত সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর সেই শিক্ষানীতি কেউ অনুসরণ করেননি। ২০১২-এ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ইসলামী শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শাখা থেকে ইসলামী শিক্ষাকে পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছে। মানবিক বিভাগে ইসলাম শিক্ষাকে করা হয়েছে ঐচ্ছিক। তারপর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০-এ ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আর ২০২২ সালের শিক্ষাক্রমেও একই অবস্থা বহাল রয়েছে।

শনিবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইসলামি শিক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রায় সবধারার আলেমগণ। উপস্থিত ছিলেন চরমোনাই, ছারছিনা, ফুলতলী, নেছারাবাদ ও মোকামিয়া সহ আলিয়া মাদরাসার বিভিন্ন প্রতিনিধিগণ। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে বোর্ড পরীক্ষা থেকে ইসলাম ধর্ম তুলে দেওয়াটা দুঃখজনক। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সর্বস্তরে ইসলামসহ ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির দাবি অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ২টি শিশু শ্রেণি এবং প্রাথমিক স্তরের ১ম ও ২য় শ্রেণিতে ইসলাম তথা ধর্মশিক্ষার নির্ধারিত বই থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ৪র্থ শ্রেণির মতোই যথাযথ মূল্যায়নের আওতায় আনতে হবে।

সম্মেলন থেকে ৪ দফা দাবীও জানানো হয়। দাবিগুলো হলো—১. বোর্ড পরীক্ষায় ইসলামি শিক্ষাসহ সব ধর্মীয় শিক্ষা বিষয় বহাল করতে হবে। ২. প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরিসহ সব শ্রেণি ও শাখায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৩. শিক্ষা-সিলেবাস থেকে প্রত্যাখাত বিবর্তনবাদসহ ধর্মবিরোধী সব পাঠ অপসারণ করতে হবে। ৪. বৈদেশিক শ্রম বাজারে ব্যাপকহারে প্রবেশের জন্য শিক্ষার সব স্তরে আরবি ভাষা-শিক্ষা কোর্স চালু করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল হক বলেন, প্রথমে বিষয়টির নাম ছিল ‘ইসলাম শিক্ষা’। এরপর পরিবর্তন করে নাম রাখা হলো ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’। এরপর পরিবর্তন করে রাখা হলো, ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা’। শুধু নামই পরিবর্তন না, বোর্ড পরীক্ষা থেকেই ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়া হলো। অথচ সরকারের নির্দেশ ধর্মকে প্রাধ্যন্য দিয়ে শিক্ষাক্রম তৈরী করা। কিন্তু শিক্ষা কমিটি সে নির্দেশনা মানেননি। এটা মূলত গভীর ষয়যন্ত্রের অংশ।’

আমরা কেন প্রতিবাদ করছি তা ব্যাখ্যা করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘আগের প্রজন্ম সবাই মোটামুটি ধার্মিক হতো। শিক্ষাক্রমেই সে ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখনকার যে ব্যবস্থাপনা, তাতে আগামী প্রজন্ম ধর্মহীন হয়ে পড়বে। আমাদের ছেলেরা না হয় মাদরাসায় পড়েছে, কিন্তু জেনারেল শিক্ষায় যারা পড়ছে, তারা ধর্মশিক্ষাটা পাবে কোথায়? তারা তো বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কথা ভেবেই প্রতিবাদ জানাতে হবে। জনগণকে জাগ্রত করতে হবে।’

ফরিদপুরের চরবন্দরখোলা ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা কবি মুহিব্বুল্লাহ জামী বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষায় গুরুত্ব দেবার কথা ছিল। কিন্তু তারপর ক্রমান্বয়ে ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসের সংখ্যা অন্য বিষয়ের ক্লাস থেকে কম। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোনো ধর্মীয় বই নেই। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কোনো ধর্মীয় শিক্ষক নেই। অথচ শিশুদের ভিত তৈরী হয় এ ক্লাসগুলোতেই। পরে বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ধর্মশিক্ষা। এখন তো আর কেউ পড়বেই না বিষয়টা। ভবিষ্যত প্রজন্ম অমাদের ভয়াবহ ধর্মীয় পরিচয় সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। তাই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। মানুষকে সতর্ক করতে হবে। সরকারকে বলতে হবে। যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করতে হবে।

শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনের প্রতিবাদে শুরু থেকে সরব ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো৷ এসএসসি পরীক্ষায় যখন ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছিলো, তখনই প্রায় সব ইসলামি দল প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। চলতি বছরের পয়লা এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় মহাসমাবেশ। এতে প্রধান পাঁচটি দাবির অন্যতম একটি ছিল—শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন বন্ধের দাবি। দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, শুরু থেকেই আমরা নতুন এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সমাবেশ থেকে শুরু করে প্রতিটি সমাবেশে শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। আমাদের জাতীয় শিক্ষক ফোরাওমও এ বিষয়ে সরব। সরকারের উর্ধ্বতন মহলে আমরা মেইল, স্মারকলিপি দিয়েছি। তাতে কাজ হয়নি। তাই মাঠে ময়দানে কথা বলা শুরু করেছি। এখন সবাইকে এক করে প্রতিবাদ শুরু করেছি।

The post বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বাদ : কেন প্রতিবাদে নামছেন আলেমরা? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a1-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7/

আর্সেনিক দূষণে জন্ম নেওয়া শিশুদের ওজন কম হয়

ফাতেহ ডেস্ক:

আর্সেনিক দূষণের সঙ্গে কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মানোর সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা দেখেছেন, যে এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি, সেসব এলাকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের ওজন তুলনামূলকভাবে কম।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় শিকাগোর গবেষকেরা এই গবেষণা করেছেন। গবেষণা নিবন্ধটি এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে গবেষকেরা বলেছেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন নলকূপগুলোর পানিতে থাকা আর্সেনিকের পরিমাণ কমানো সম্ভব হলে তা বেশিসংখ্যক শিশুর পর্যাপ্ত ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করায় সাহায্য করবে। বলা হচ্ছে, আর্সেনিক নিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রোগতাত্ত্বিক গবেষণা।

বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় আর্সেনিকের দূষণ আছে। অন্যদিকে দেশে কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মানোর হারও অনেক বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের তথ্য বলছে, প্রতি ১০০টি শিশুর মধ্যে ২৩টি শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায়। আর্সেনিক দূষণ ও শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা বাংলাদেশে হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, দূষণের শিকার শিশুদের বিকাশ তুলনামূলকভাবে কম হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা আর্সেনিকের প্রভাব নির্ণয়ে যান্ত্রিক মডেল ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাম এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন উৎসের পানিতে থাকা আর্সেনিকের মাত্রা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্মকালীন ওজন পর্যালোচনা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এক লিটার পানিতে ৫ মাইক্রোগ্রামের কম আর্সেনিক থাকলে তা সহনীয়। অর্থাৎ তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু ৫ গ্রামের বেশি হলে তা দূষিত হিসেবে বিবেচিত হয়।

গবেষকেরা দেখেছেন, যেখানে এক লিটার পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি, সেখানে শিশুদের জন্মকালীন ওজন শিশুদের জন্মকালীন গড় ওজনের চেয়ে ১ দশমিক ৮ গ্রাম কম। আবার যেখানে এক লিটার পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি, সেখানে শিশুদের জন্মকালীন ওজন জন্মকালীন গড় ওজনের চেয়ে ২ দশমিক ৮ গ্রাম কম। গবেষকেরা বলছেন, গবেষণার একটি দুর্বলতা হচ্ছে পরিমাণ মাত্রা ব্যক্তিপর্যায়ে মূল্যায়ন করা হয়নি।

 

The post আর্সেনিক দূষণে জন্ম নেওয়া শিশুদের ওজন কম হয় appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%a6%e0%a7%82%e0%a6%b7%e0%a6%a3%e0%a7%87-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%ae-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%93%e0%a7%9f/

আওয়ামী লীগের ব্যয়ের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ কোটি

ফাতেহ ডেস্ক:

২০২১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ২১ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৬ টাকা। একই সময়ে দলটি ব্যয় করেছে ছয় কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৮৫২ টাকা। অর্থাৎ গত বছর খরচের চেয়ে প্রায় ১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে দলটির।

রোববার (৩১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে গত বছরের (২০২১ সাল) আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকারের কাছে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এ হিসাব জমা দেন। সেখানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। দলটি মনোনয়নপত্র ও সদস্য ফরম বিক্রি থেকে বেশি আয় করেছে বলে হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দলগুলো কোন খাত থেকে কত টাকা আয় করছে, কত টাকা ব্যয় করছে সেসবের বিল-ভাউচারসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের নির্ধারিত একটি ছকে জমা দিতে হয়। এ হিসাব বিবরণী রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরপর তিন বছর কমিশনে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে ইসির সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে।

এর আগে গত ২৮ জুলাই নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সেই হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা। দলটি ব্যয়ে করেছে এক কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা।

অর্থাৎ আয়ের চেয়ে এক কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৭ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। ঘাটতি এ টাকা দলটির ব্যাংকে জমা থাকা অর্থ থেকে মেটানো হয়েছে বলে জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

The post আওয়ামী লীগের ব্যয়ের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ কোটি appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80-%e0%a6%b2%e0%a7%80%e0%a6%97%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a7%87%e0%a7%9f%e0%a7%87/

Saturday, July 30, 2022

গাজীপুরে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৫

ফাতেহ ডেস্ক:

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মকিষবাথান এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতেরা হলেন, টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর থানার শেখ বাড়ী গ্রামের অটোরিকশা চালক নজরুল ইসলাম (৩২), বরগুনা জেলার সদর থানার আংগারপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান ওরফে বাবলু (৪৫), গাজীপুরের কালিয়াকৈরে থানার হিজলতলী গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৪৩), একই উপজেলার লতিফপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম রুবেল (২৭) ও যশোরের মাগুরা থানার দহর গ্রামের শাহিন উদ্দিন (২৮)।

পুলিশ বলছে, গতকাল রাত ১১টার দিকে কালিয়াকৈর থেকে ছেড়ে আসা ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মাকিষবাথান এলাকার বটতলায় বিকট শব্দে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এ ঘটনায় অটোরিকশার চালকসহ আরও একজন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন আরও ৩ জন।

স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কালিয়াকৈরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সেখানে একজন এবং বাকি দুই যাত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে মারা যান।

কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাহাত আকন্দ বলেছেন, ইতিহাস পরিবহনের বাসটি জব্দ করা গেলেও চালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

The post গাজীপুরে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৫ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%85%e0%a6%9f%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ae/

‘ঈসায়ী মুসলিম’ : উত্তরবঙ্গে বিস্তৃত হচ্ছে ষড়যন্ত্রের ছায়া

মুনশী নাঈম:

উত্তরাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের নামে চলছে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা। এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলায় রয়েছে উপজাতি মানুষ। তবে বৃহত্তর দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, ঘোড়াঘাট, বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, বৃহত্তর বগুড়ার জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, বৃহত্তর রাজশাহীর নওগাঁ, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং চলনবিল এলাকায় এদের বসবাস বেশি। খৃস্টান মিশনারীগুলো সেবার নামে দরিদ্র লোকদের টার্গেট করে। তারপর বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে খৃস্টধর্মের প্রতি দাওয়াত দিতে থাকে। এই কৌশলের অন্যতম একটি হলো নিজেদেরকে খৃস্টান না বলে ‘ঈসায়ী মুসলিম’ বলা। এতে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা দরিদ্রদের বিভ্রান্ত করা সহজ হয়।

খৃস্টান না বলে ঈসায়ী মুসলিম বলা

১৯৭৮ সালে উত্তর আমেরিকার লুওয়াজিন নামক স্থানে সমকালীন খৃষ্টবাদ প্রচারের ধারাবাহিকতায় এক ঐতিহাসিক কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। তাতে সারা দুনিয়ার প্রায় দেড়শ প্রথম সারির খৃষ্টান ধর্মগুরু ও ধর্মনেতাগণ যোগদান করেন। তাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন দেশের বড় বড় গির্জা, মিশনারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ছিলেন। উক্ত কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী সবাই গুরুত্বারোপ করেন যে, দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সময় যদি তাৎক্ষণিকভাবে মুসলমানদেরকে খৃষ্টবাদের বিষাক্ত ট্যাবলেট গলধকরণ করানো নাও যায় তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু কমপক্ষে অতি অবশ্যই মুসলমানদের মাঝে নৈতিক ও চারিত্রিক স্খলন ঘটানো এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে তাদেরকে পঙ্গু করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে তারা মুসলমানদেরকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। এতে c4. c5 এবং c6 ক্যাটাগরিতে মুসলিমদের দাওয়াতের যে পদ্ধতি তুলে ধরা হয়, তা হলো, সরসরি খৃস্টধর্মের প্রতি দাওয়াত দেয়া যাবে না। বরং নিজেদেরকে মুসলমানদের একটি ক্যাটাগরি হিসেবে উল্লেখ করেই দাওয়াত দিতে হবে। এক্ষেত্রে ঈসায়ী ধর্ম এবং ইসলোমে যে জিনিসগুলো মিল আছে, ইসলামি যে প্রেকটিসগুলো বাইবেলে স্বীকৃত, সেগুলো তুলে ধরতে হবে। বলতে হবে, তারা জিশুর অনুসারী।

মিশনারিরা মানুষকে ধর্মান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে থাকে। এরমধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

ক. মুসলিম নাম ধারণ: মিশনারী সংস্থাগুলো মুসলিম নাম ধারণ করে কাজ করে। যেমন, নুর-ই-ইলাহী, খোদার পথ, মাসীহী জামাত, আল হানিফ কল্যাণ ট্রাস্ট। অনেক সময় নাম দেখে বুঝাই যায় না, তারা খৃস্টান ধর্ম প্রচারক সংস্থা।

খ. ধর্মগ্রন্থের নাম পরিবর্তন: খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ সারা বিশ্বে বাইবেল নামেই বহুল পরিচিত। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্রভেদে নাম পরিবর্তন করার কৌশলে খৃষ্টান মিশনারিদের জুড়ি নেই। বাইবেলকে নামকরণ করেছে কিতাবুল মুকাদ্দাস নামে। পরে কিতাবুল মুকাদ্দাসের ‘পুরাতন নিয়ম’ অংশের নামকরণ করেছে ‘তৌরাত, জবুর ও নবীদের কিতাব’ এবং ‘নতুন নিয়ম’ অংশের নামকরণ করেছে ‘ইঞ্জিল শরীফ’। ‘কিতাবুল মুকাদ্দাস’ ও ‘ইঞ্জিল শরীফ’ এর মলাট সম্পূর্ণ ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক প্রচ্ছদে অলংকৃত করে প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন রঙের সুদৃশ্য কভারের উপর সোনালী রঙের ইসলামী ধাঁচের প্রচ্ছদ দেখে এটাকে পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা পবিত্র হাদিসগ্রন্থ বলে ভুল করা অস্বাভাবিক নয়।

গ. ইসলামী পরিভাষা ও নামাবলী ব্যবহার: খৃষ্টান মিশনারিরা তাদের ধর্ম গ্রন্থের নাম পরিবর্তনের সাথে সাথে ইসলামী পরিভাষা, শব্দ ও নামাবলী চুরি করে তাদের ধর্মগ্রন্থ ও বইগুলো প্রকাশ করে চলেছে। তাদের পবিত্র বাইবেলের কিছু শব্দ উল্লেখ করা হলো, যে শব্দগুলোকে তারা তাদের গ্রন্থ কিতাবুল মুকাদ্দাসে ইসলামী পরিভাষা ও নামের রূপ দিয়েছে (কিতাবুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তিত রূপ ব্র্যাকেটে উল্লেখ করা হলো): আদিপুস্তক (আল-তৌরাত), প্রথম সিপারা (পয়দায়েশ), পরমগীত (নবীদের কিতাব সোলায়মান), গীতসংহিতা (আল জবুরঃ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম সিপারা), ঈশ্বর (আল্লাহ), ঈশ্বর পুত্র (ইবনুল্লাহ), পরিত্রাণ (নাজাত), ভাববাদী (নবী), ভজনা (এবাদত), বিশ্বাস (ঈমান), ব্যবস্থা (শরীয়ত), আব্রাহাম (ইব্রাহীম), মোশি (মুসা), দায়ুদ (দাউদ), যীশুখৃষ্ট (ঈসা মসীহ), দূত (ফেরেশতা), শির্ষ (সাহাবী), প্রায়শ্চিত্ত (কাফফারা), উবড় (সিজদা), যাচঞা (মুনাজাত), অলৌকিক কার্য (মোযেজা) ইত্যাদি।

কোন কোন খৃস্টান মিশনারী কাজ করছে

বর্তমানে বাংলাদেশে ২১ টি এনজিও মিশনারী কাজ চালাচ্ছে। সেগুলো হলো: (১) কারিতাস, (২) এন.সি.সি. (ননলাইট সেন্ট্রাল কমিটি), (৩) লুথারান মিশন, (৪) দ্বীপশিখা, (৫) সালভেশন আর্মি, (৬) ওয়ার্ল্ড ভিশন, (৭) সি.ডি.এস. (সেন্ট্রাল ফর ডেভেলপম্যান্ট সার্ভিস), (৮) আর.ডি.আর.এস. (রংপুর দিনাজপুর রোড এন্ড সার্কেল), (৯) সি.সি.ডি.ভি. (খৃষ্টান কমিশন অফ ডেভেলপম্যান্ট), (১০) হিড বাংলাদেশ, (১১) সেভেন ডে এডভেঞ্চারিস্ট, (১২) চার্চ অফ বাংলাদেশ, (১৩) পের ইন্টারন্যাশনাল, (১৪) সুইডিশ ফ্রেমিশন, (১৫) কনসার্ন, (১৬) এডরা, (১৭) অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপটিস্ট সোসাইটি, (১৮) এমসিনি, (১৯) ওয়াই.ডব্লিউ.সি. (২০) ফেমিলিজ ফর চিলড্রেন, (২১) আল-হানিফ কল্যাণ ট্রাস্ট ইত্যাদি।

এরমধ্যে ‘হিড বাংলাদেশ’ মৌলভী বাজারে, কমলগঞ্জে, সুন্দরবনে সেবার আড়ালে খৃষ্টধর্ম প্রচার করে যাচ্ছে। সূচনাতেই তারা ৬ লক্ষ মার্কিন ডলার নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ‘সেভেন ডে এডভেঞ্চারিস্ট’ খৃষ্টান মিশনারি তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে ৮৫ টি প্রাইমারী স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল পরিচালনা করে। এসব স্কুলে কোন মুসলমানের সন্তান ভর্তি নেওয়া হয় না। ‘সি. সি. ডি. ভি.’ নামক সংস্থা রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে কাজ করছে।

তারা বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে খৃস্টধর্ম প্রচার করে বেশি। যেমন এগুর্ণা, চাকমা, মারমা, তনচৈঙ্গা, চাক, ক্ষুমি, ভৌম, ত্রিপুরা, খাশিয়া, মনিপুরী, খিয়াং, মাংখু, লুশাই, মগ, গারো, মুরু, সাঁওতাল, রাখাইন, হাজং, রাজবংশী, মুরং, কুকি, হুদি, পাংখো, উড়াও, বোনজোগী, দালই, লুসাই, খুশী, তংচংগা, বংশাই, বোম, মুনী চাক, চোক, হরিজন, মুন্ডা ইত্যাদি। এরমধ্যে সাঁওতালরা অধিকাংশই খৃস্টান হয়ে গেছে।

উত্তরাঞ্চল কোন ধর্মপ্রদেশের আওতায়

তারা সমগ্র বাংলাদেশকে প্রচারের আওতাভুক্ত করার জন্য ১৯৬৮ সালে ১লা সেপ্টেম্বর তৎকালীন ঢাকা মহাপ্রদেশের অধীনে পুরো পূর্ব পাকিস্তানকে চারটি ধর্ম প্রদেশে বিভক্ত করে।

১. চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশ: এ ধর্মপ্রদেশের আওতাভুক্ত এলাকা প্রদেশের সমস্ত দক্ষিণাঞ্চল।
২. দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশ: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে এ ধর্মপ্রদেশ। এ ধর্মপ্রদেশের পরিধি যমুনা নদীর পশ্চিমাঞ্চল তীর থেকে দক্ষিণে পদ্মা এবং পশ্চিমে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত।
৩. খুলনা ধর্মপ্রদেশ।
৪. ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ।

কী ক্ষতি হচ্ছে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল হক বলেন, ধর্মীয় জনগ্রাফি চ্যাঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। তারা গোপনে গোপনে মুসলিম নাম ধারণ করে কাজ চালাচ্ছে। এতে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছে। এটা ধর্মীয় ক্ষতি। এছাড়াও আর্থ সামাজিক ক্ষতি তো আছেই। ক্রমান্বয়ে আমরা ক্ষমতাহীন হয়ে যাব। যেমন, মক্তব বন্ধ করে দেয়া হবে। দাঈ ইমামদের খুন করা হবে। যেটা আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। বিভিন্ন অঞ্চলে তারা যেমন কর্তৃত্ববাদী মনোভাব দেখাচ্ছে, এক হিসেবে সেটা স্বাধীনতার উপরও হস্তক্ষেপ।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহিন হাসনাত বলেন, ধর্ম প্রচার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু অসততা ও প্রতারণায় আশ্রয় নিয়ে ধর্ম প্রচার অপরাধ। সেবার নামে তারা খৃষ্টধর্মের শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের তরুণ সমাজ, যারা ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তারা ঝুঁকে পড়ছে। খৃস্টান মিশনারীর সহযোগিতায় বিভিন্ন স্কলারশিপ, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে যোগ দিচ্ছে। ভাবচে তাদের সঙ্গে থাকলে আমাদের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হবে। এটাই সবচে ভয়ের কারণ।

উত্তরণে করণীয় কী

অধ্যাপক মো. শহীদুল হক বলেন, এর থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।

ক. সরকারকে বুঝাতে হবে, যেন সরকার প্রভাবিত না হয়। সমাজকল্যান অধিদপ্তর, এনজিও ব্যুরোকে বলতে হবে, তারা যেন মিশনারী এনজিওগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখে, তারা কখন কী করে। তাদের অর্থের উৎস কী।

খ. বাংলাদেশী দাঈদের সতর্ক হতে হবে। দাঈদের সংগঠন বাড়াতে হবে। বর্তমানে দাঈ দরকার ১০ হাজার। সেখানে কাজ করছে মাত্র ৩০-৪০ জন।

গ. আলেমদের সোশ্যাল এক্টিভিটি বাড়াতে হবে। দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যেন আলেমরাই মূলধারা হয়ে যান।

ঘ. এলাকাভিত্তিক মক্তবশিক্ষা বাড়াতে হবে। টার্গেট করে আলোচিত অঞ্চলে কাউন্সেলিং করতে হবে।

ঙ. মেইনস্ট্রিম গণমাধ্যমে আলাপ তুলতে হবে। ফিচার, ক্রোড়পত্র, সাময়িকী, বিশেষ সংখ্যা, রিপোর্ট ও প্রতিবেদন করে সবাইকে জানাতে হবে।

চ. একাডেমিয়া গড়ে তুলতে হবে। যেখান থেকে প্রতি বছর জরিপ প্রকাশ করা হবে, প্রতিবেদন ও বার্ষিক রিপোর্ট তৈরী করতে হবে। তৈরী করতে হবে রিসার্চ পেপাার। বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায়। যেন আন্তর্জাতিক মুসলিম সমাজ সতর্ক হয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ প্রেয়োগ করতে পারে মিশনারীদের ব্যাপারে।

মিডিয়া কাভারেজ কতটুকু সম্ভব

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহিন হাসনাত বলেন, খৃস্টান মিশনারীদের খবর প্রকাশ করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ইন্টারফেইথ হরমোনি নষ্ট হবার অভিযোগে মামলা করে দিতে পারে। সরকারও এই আইনের ব্যাপারে খুব কঠোর। সুতরাং একদম খোলামেলা প্রচারণা চালানো যাবে না। তবে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সংস্থা জরিপ প্রকাশ করে জনগণকে সতর্ক করা যায়। জরিপে সেই ভয়টা থাকে না।

The post ‘ঈসায়ী মুসলিম’ : উত্তরবঙ্গে বিস্তৃত হচ্ছে ষড়যন্ত্রের ছায়া appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%88%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%80-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%89%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%99%e0%a7%8d/

মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত: গেটম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

ফাতেহ ডেস্ক:

চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহতের ঘটনায় আটক গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

শনিবার (৩০ জুলাই) ভোরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত গেটম্যানকে একমাত্র আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন শুক্রবার সকালে মাইক্রোবাসে খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান। ফেরার পথে দুপুর দেড়টা নাগাদ উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের ঝরনা এলাকার রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ১১ জন মারা যান। আহত পাঁচ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

The post মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত: গেটম্যানের বিরুদ্ধে মামলা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a7%a7%e0%a7%a7-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%a8/

Friday, July 29, 2022

বয়স্ক জীবন: ষাটোর্ধ্ব ইমাম-শিক্ষকদের দেখার কেউ নেই

লেখাটি অনলাইন করা হবে অচিরেই।

The post বয়স্ক জীবন: ষাটোর্ধ্ব ইমাম-শিক্ষকদের দেখার কেউ নেই appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a7%9f%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95-%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8-%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be/

‘কেয়ার নাকি কন্ট্রোল’ : সন্তানদের সাথে বয়স্ক পিতামাতার টানাপোড়েন

জহুরুল ইসলাম:

তিন মাথার সেই গল্পের কথা মনে আছে তো?
সেই যে কবে এক দুঃখী লোক বোকা তিনটে ছেলে ঘরে রেখে দূরদেশে পাড়ি জমাল আর সন্তানদের উপদেশ দিয়ে গেল— “সবসময় তিন মাথার বুদ্ধি নিয়ে চলবি!”

বাবার আদেশ বলে কথা! ছেলেরা দেশ-বিদেশ ঘুরে হয়রান। কোত্থাও তিন মাথাওয়ালা লোকের হদিস মিলল না। ছেলেদের মনে দুঃখ— বাবার শেষ আদেশ বুঝি পালন করা গেল না।

ফেরার পথে দেখা মিলল এক বুড়োর— গাছতলায় বসে দু’ হাঁটুর মাঝখানে মাথা সেধিয়ে ঝিমুচ্ছেন। বৃদ্ধের কাছে তারা আদ্যোপান্ত শোনাল। বৃদ্ধ একগাল হেসে বললেন, “তিন মাথাওয়ালা মানুষ জগতে কোথায় পাবে বাপু? বাবার কথার অর্থ তোমরা বোঝো নি। শেষ বয়সে মানুষের মাথা নুয়ে দুঁ হাটুর মাথার সঙ্গে মিলে যায়। এ–ই হচ্ছে তিন মাথার রহস্য। অর্থাৎ, তোমাদের বাবা কোন বয়স্ক লোকের পরামর্শ নিয়ে তোমাদের দিনগুজরান করতে বলেছেন!”

এই গল্পের ভেতর দিয়ে জগতের এক চিরায়ত বাস্তবতার কথা বলা হয়েছে। জীবন একটা দীর্ঘ পথ। এই পথে যে যত দীর্ঘ সময় হেঁটেছে, যতদূর এগিয়ে গেছে, এর চড়াই-উৎরাই সেই বেশি চিনবে। তার দেয়া নির্দেশনা নিয়ে পথচলাই তো নিরাপদ।

ষাটোর্ধ্ব জীবন পূর্ণ জীবন। পৃথিবীর সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ— নবীজি সা. ষাটের পরে তিন বছর হায়াতে ছিলেন এবং তিনি বলে গেছেন, আমার উম্মতের আয়ুষ্কাল ষাট-সত্তরের মাঝামাঝি। এখানেও ষাটের ঘরে গিয়ে জীবনের পূর্ণতা লাভের একটা ইঙ্গিত রয়েছে।

সাধারণভাবেই বোঝা যায়— দীর্ঘ একটা সময় যিনি পৃথিবীর আলো-বাতাস নিয়েছেন, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, যাপিত জীবনের সুখ-শান্তি-ভালোবাসা ও দুঃখ-কষ্ট-জটিলতার ভেতর দিয়ে ভাসতে ভাসতে একটি স্থির পাটাতনে এসে দাঁড়িয়েছেন, জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি হবে অপেক্ষাকৃত নির্ভুল। এ এক সহজ হিসাব।

বৃদ্ধকাল প্রজ্ঞায় যেমন ভারি, অধিকারের হিসেবেও তার স্থান আগে। পৃথিবীর বুকে লম্বা সময় কাটানোর পর জীবন ও জগতের কাছে বৃদ্ধদের কিছু অঘোষিত পাওনা তৈরি হয়ে যায়। শুধু বৃদ্ধজনই নয়— বরং মানুষে মানুষে গড়া প্রতিটি সম্পর্কেই অগ্রজরা অনুজদের কাছে ন্যায়সঙ্গত কিছু অধিকার পেয়ে থাকে। এসব অধিকারের মধ্যে সন্তানের প্রতি মা-বাবার অধিকারই বুঝি অগ্রগণ্য।

বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার সেবা, তাদের অধিকার ও দাবিগুলো পূরণ করা যুক্তিসম্মত তো বটেই, বরং এখানে কমতি হলে ইসলামে রয়েছে শাস্তির ঘোষণা।

বৃদ্ধ মা-বাবার সেবা-যত্নের প্রথা আবহমান কাল থেকেই আমাদের সমাজে প্রচলিত। পরিবারের সন্তানেরা মা-বাবার এই যত্ন-আত্তি আগ্রহের সঙ্গেই করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বার্ধক্যে তৈরি হওয়া কিছু আচরণগত বিষয় উভয়পক্ষের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করে।

দীর্ঘ জীবন কাটিয়ে ওঠার পর মানুষ একধরনের ক্লান্তিবোধ করে। এটা সাময়িক কোনো ক্লান্তি নয়। এটা আটপৌরে জীবনের প্রতি একরকম বিরক্তি। জাহিলি যুগের বিখ্যাত কবি যুহাইর ইবনু আবি সুলমা এই অবসাদকে কবিতায় ব্যক্ত করেছেন—

“জীবনের ভার বয়ে বয়ে আজ আমি বিরক্ত খুব
আশি বছরের যাতনা সইবে যে, তারও হাল হবে অনুরূপ”

আর বার্ধক্যের এই ক্লান্তি থেকেই মানুষের মধ্যে জন্মায় বিভিন্ন অসংলগ্ন আচরণ। অনেকের ক্ষেত্রেই প্রকাশ পায় বাচ্চাসুলভ মানসিকতা। এ-সময় বৃদ্ধ মা-বাবা সন্তানের কাছে নানা বিষয়ে আহ্লাদি আবদার করে বসে। তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। তারা সবকিছু এলোমেলো করতে থাকে। তখন তাদের সামাল দেয়া সন্তানের জন্য হয় কিছুটা কষ্টের।

এ তো তাও এক প্রকার। যখন বার্ধক্যজনিত বিরক্তিতে তার মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, তখন অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় আরেকটু কঠিন। কথায় কথায় রেগে যাওয়া, খেদমতের সামান্য এদিক-সেদিকে অভিমান করা, পান থেকে চুন খসলে দুনিয়া মাথায় তোলা ইত্যাদি তখন তাদের নিত্য মামুলাতে পরিণত হয়।

এই পর্যায়ে এসে তার জীবনের চিত্রটা পাল্টে যায়। সন্তান তাকে আবিষ্কার করে এক নতুন অবয়বে। তার চিরচেনা প্রিয় বাবা— যিনি তাকে পৃথিবীর পথে একটু একটু করে হাঁটতে শিখিয়েছেন, তার একটু সুখের জন্য হাজারটা কষ্ট সয়েছেন, বয়সকালে সেই পিতাকে এমন ভিন্ন চরিত্রে আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা সন্তানের কাছে বেদনার।

বার্ধক্যজনিত এই বিরক্তির প্রকাশ কখনো আবার এতটাই সীমা ছাড়িয়ে যায়, যখন মা-বাবাকে নিয়ন্ত্রণ— এমনকি সময়ে সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাও খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সম্পর্কের এই টানাপোড়েনে ভারসাম্য রক্ষার অনুশীলন সন্তানের জন্য হয়ে দাঁড়ায় মহা ভাবনার বিষয়। তবু সন্তানকে এখানে মানিয়ে নিতে হয়। একে তো মা-বাবার থেকে পাওয়া আজন্ম ভালবাসা ও অনুগ্রহের ঋণ পরিশোধের কোশেশ, এছাড়াও তা সন্তানের প্রতি আল্লাহ তায়ালার সরাসরি আদেশ। কুরআনের আয়াত দেখুন—

“তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার ডানা বিছিয়ে দাও এবং বলো, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”(বনি ইসরাইল : ২৩–২৪)

শেষে একটি হাদিসের ঘটনা বলি।
এক লোক নবীজি সা.–এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো আমার মায়ের পেছনে যথেষ্ট টাকা-পয়সা খরচ করি। কিন্তু তিনি সারাদিনই আমাকে বকাঝকা করেন। নানা কটু কথা বলে কষ্ট দেন। আমি এখন কী করতে পারি?

নবীজি সা. বললেন, তার হক আদায় করতে থাকো। তুমি কি জানো না, তার পায়ের নিচে তোমার বেহেশত?

লোকটি কিছুসময় চুপ থেকে বলল, আল্লাহর কসম! আমি এসব অসদাচরণের বিনিময়ে তাকে কিছুই বলবো না। এই বলে সে তার মায়ের কাছে ছুটে গেল। তার পায়ে চুম্বন করতে লাগল এবং বলল, নবীজিই আমাকে এই কাজের আদেশ দিয়েছেন!

The post ‘কেয়ার নাকি কন্ট্রোল’ : সন্তানদের সাথে বয়স্ক পিতামাতার টানাপোড়েন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%b2-%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a7%8d/

ঠিকানা যখন বৃদ্ধাশ্রম; অনুশোচনা, উপলব্ধি ও ধর্মভাবনা

খাজা হাসান মুঈনুদ্দীন:

শুরুর আলাপ 

বৃদ্ধাশ্রম; কথাটা শুনলেই মনসপটে ভেসে ওঠে কতগুলো করুণ চেহারার জলছবি, জীবনের পড়ন্ত বেলায় যারা একটু ভালোবাসা খুঁজে ফিরেন। মাথা গুজার ঠাই হারিয়ে যারা একেবারে পথে নেমে গেছেন। যারা নিজের সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মকে আগলে রেখে শেষ জীবনটা হাসি-খুশি কাটাতে চান। জীবনসায়াহ্নে সন্তান ও নাতিনাতকুরের পাশে থেকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চান। অথচ মানবতার চরম উপহাস!সন্তানরা ক্রমে ভুলে যায় স্বীয় বাবা-মায়ের আদুরে স্মৃতিবিজড়িত সেই দিনগুলো। অস্বীকার করে বসে স্বযত্নে আগলে রাখার প্রতিটি মুহূর্ত, ভালোবাসার প্রতিটি ক্ষণ।

বৃদ্ধাশ্রম হল বয়স্কদের থাকার জায়গা। অনেকটাই হোস্টেল এর মতো। যে সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখার কেউ নেই তাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই আবাসন। পরিবার ও স্বজনদের থেকে আলাদা আবাস বা আশ্রয়ের নাম বৃদ্ধাশ্রম। সময়ের সবচে নিষ্ঠুর পরিভাষা হয়ত এটাই। মূলত অসহায় ও গরীব বৃদ্ধদের প্রতি করুণার বোধ থেকেই হয়ত বৃদ্ধাশ্রমের সৃষ্টি ; যেখানে বৃদ্ধদের প্রয়োজনীয় সেবা ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে। ঠিক সময়ে সময়ে খাবার দেওয়া হয়। হোস্টেলের মতো কমন রুম থাকে। আর এই কমন রুমে টিভি দেখার, বিকেলে পার্ক এ ঘোরানোর ব্যবস্থাও থাকে। বৃদ্ধাশ্রমের ক্যাটালগে এমন হাজারো সুযোগ-সুবিধার কথা লেখা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বৃদ্ধাশ্রমে অবস্থান করা বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের অনুযোগ-অভিযোগের কমতি নেই। সন্তান ও পরিবার হারা এই মানুষগুলো হয়তো বড্ড অভিমানে নিজেদের অপ্রাপ্তির কথা কাউকে বলতে চান না। আর বলেই বা কি হবে? এর সমাধান করার মতো কেউ কি আছে? নিজেদেরকে সমাজের অপাংক্তেয়ই ভেবে ভেবে জীবনের শেষ সময়টা কাটে অনুশোচনায়।

উৎপত্তি ও বিকাশ

বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা সর্বপ্রথম শান রাজবংশের মাথায় এসেছিল। তারা খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে প্রাচীন চীনে প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত করেছিল। গৃহছাড়া অবহেলিত ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আশ্রয়ের জন্যে ছিল এই উদ্যোগ। পরিবার থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছিল এই শান রাজবংশ। তাদের আবিষ্কৃত এই ধারণা বর্তমান সমগ্র বিশ্বে প্রসার লাভ করেছে।(১) বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের ধারণার প্রবর্তন হয় ডা. এ. কে. এম আবদুল ওয়াহেদের হাত ধরে। বার্ধক্যে সবার জন্য শারীরিক-মানসিক সুস্থতা ও স্বস্তিময় জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ডা. এ. কে. এম আবদুল ওয়াহেদের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন এবং পরে ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারি অনুদানে হাসপাতাল ও হোম ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির ৫০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। ১৯৮৭ সালের গোড়ার দিকে ঢাকার উত্তরায় আজমপুরে গড়ে তোলেন ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’। ১৯৯৪ সালে কেন্দ্রটিকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করা হয় গাযীপুরের মণিপুর বিশিয়া কুড়িবাড়ীতে। এ ছাড়া কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, ব্র্যাক, ইআইডি, প্রবীণ অধিকার ফোরাম প্রভৃতি প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করে। এই সকল সংস্থা মূলত বৃদ্ধ বয়সে যাদের সহায় সম্বল নেই, তাদেরকে মাথায় রেখেই কাজ পরিচালনা করে।
২৮.১০.২০১৮ইং তারিখে প্রকাশিত সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য মোতাবেক বর্তমান বাংলাদেশের নিবন্ধনকৃত শান্তি নিবাসের (বৃদ্ধাশ্রমের) সংখ্যা ছয়টি।এগুলো ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বাগেরহাট, বরিশাল ও সিলেট জেলায় অবস্থিত। তখনকার সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সারা দেশে প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে ৫০টি করে মোট ৩০০টি সিট রয়েছে।(২)

বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তর সম্পূর্ণ জিওবির অর্থায়নে ৭ হাজার ৩৯৮ দশমিক ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০২০ হতে জুন ২০২২ মেয়াদকালে বাস্তবায়নের জন্য ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তি নিবাস স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি একনেক এটির অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে শান্তি নিবাস স্থাপন করা হবে। শান্তি নিবাসগুলো হলো- ১. শান্তি নিবাস (প্রবীণা), শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ; ২. সরকারি শিশু পরিবার (প্রবীণা) লালমনিরহাট সদর, লালমনিরহাট; ৩. শান্তি নিবাস (প্রবীণ), সরকারি শিশু পরিবার, সম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ; ৪. শান্তি নিবাস (প্রবীণা), সরকারি শিশু পরিবার, সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জ; ৫. শান্তি নিবাস (প্রবীণা), সরকারি শিশু পরিবার, মাইজদী, নোয়াখালী; ৬. শান্তি নিবাস (প্রবীণ), সরকারি শিশু পরিবার, বায়া, রাজশাহী; ৭.শান্তি নিবাস (প্রবীণ), সরকারি শিশু পরিবার, মহেশ্বরপাশা, খুলনা ও ৮. শান্তি নিবাস (প্রবীণ), সরকারি শিশু পরিবার, সাগরণী, বরিশাল।

বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বর্ণিত প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে দেশের সব জেলায় একটি করে শান্তি নিবাস (প্রবীণ/প্রবীণা) স্থাপন করা হবে। বর্তমানে চারটি প্রবীণ নিবাস স্থাপন প্রকল্প চলমান রয়েছে। তার মধ্যে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে একটি, যৌথ অর্থায়নে দুটি ও পিপিপির আওতায় একটি প্রকল্প চলমান। এছাড়া বিগত অর্থবছরে যশোর ও মাদারীপুর জেলার দুটি প্রবীণ নিবাস স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্প শেষ হয়েছে।(৩)

কেন সুগম হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমের পথ?

বিশ্লেষকদের মতে, মুসলিম যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ফলে পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। সন্তানরা মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে যাচ্ছে। নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে তারা। অনেক সন্তানের দাবী, কর্মজীবনের নানান ব্যস্ততায় বাবামায়ের সাথে কথা বলার মতো পর্যাপ্ত সময় হয়ে উঠে না। তাই বাবা-মাকে একাকি নিঃসঙ্গ রাখার চেয়ে বৃদ্ধাশ্রমে সমবয়সীদের সঙ্গে দিয়ে আসেন। যেন ভালো সময় কাটে। এই যুক্তি কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? এমন সন্তানকে কুসন্তান বলাই মনে হয় শ্রেয়। বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাড়তি বোঝা হিসেবে বিবেচনা করছে অনেকে। যে মা-বাবাই ছিল সারা জীবনের আশ্রয়স্থল, সে কিনা আজ বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখার নুন্যতম প্রয়োজন বোধ করছে না। উল্টো বাবা-মাকে উটকো ঝামেলা মনে করছে। তাঁদেরকে রেখে আসছে বৃদ্ধাশ্রমে। কিংবা অবহেলা ও নিষ্ঠুর আচরণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে যেন বাধ্য হয়ে তারা নিজেরাই ভিন্ন কোনো ঠাঁই খুঁজে নেন। যেন নিজেরাই আগ বেড়ে বৃদ্ধাশ্রমের দরজার কড়া নাড়েন। বৃদ্ধ বাবামায়ের সম্পদ ভাগবাটোয়ারা করে সন্তানরা ভোগ করছে কিন্তু বাবামায়ের দায়িত্ব নিতে কোন সন্তান রাজি নয়। সম্পদহীন করে অমানবিকভাবে তাদের আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে। নতুবা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হচ্ছে।

ছেলের বউয়ের সাথে মনোমালিন্যের কারণে বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বশুরী পায় না সদাচরণ, বেঁচে থাকার মত মিলে না আহার, পায় না উপযুক্ত পরিধেয় বস্ত্র এবং নানাবিধ রোগের যাতাকলে পিষ্ট হয়েও পায় না চিকিৎসার জন্য পারিবারিক সহযোগিতা। অর্থের অভাবে ব্যক্তিগত চাহিদার সকল অংশ থাকে অপূরণীয়। ফলে কষ্ট-ক্লেশে জর্জরিত হয়ে অনেকেই স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমকে জীবনের শেষ ঠিকানা বানিয়ে নেয়। এমনই একজন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মুখপাড়া এলাকার ৭৭ বছর বয়সী অরুণ ভট্টাচার্য। একমাত্র ছেলের বউয়ের লাথি ঘুষি খেয়ে হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে এখন আমেনা-বশর বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে আছেন।(৪) অনেকে শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে অবুঝ শিশুর মত ঘুরে বেড়ায় পথে-প্রান্তরে। অচেনা কারোর সহযোগিতায় তার ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
মূলত এ কারণেই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। অথচ একটা সময় যৌথ পরিবারই ছিল মুসলিম বাঙালি সমাজ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় শক্তি। শিশুরা দাদা-দাদির সান্নিধ্যে বড় হত। ইসলামিক প্রাথমিক শিক্ষা ও আদব-আখলাকসহ বিভিন্ন বিষয়ে দাদা-দাদিই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতেন। নাতি-নাতনিরাও দাদা-দাদির মাঝেই খুঁজে পেত নির্ভরতার আশ্রয়। উভয়ের মাঝে গড়ে উঠত ঘনিষ্ঠতা। বয়জ্যেষ্ঠরাও পরম মমতায় আগলে রাখতেন পরিবারের বাকি সদস্যদের। কিন্তু পশ্চিমা কালচারের প্রভাবে এই চিত্র অনেকটাই বদলে যাচ্ছে। যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একক পরিবার বেড়ে যাওয়াটা কিন্তু মূল সমস্যা না। আসল সমস্যা হলো আমরা বৃদ্ধ মা-বাবার দায়িত্ব সম্পর্কে ভুলতে বসেছি। ফলে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগার প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। দশক দুই আগেও অধিকাংশ বাঙালির মাঝে বৃদ্ধাশ্রমের তেমন ধারণা ছিল না। এখন দেশের অনেক জায়গায়ই বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর নারকীয় এ বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় হচ্ছে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবার। সেখানে যেতে তাদের বাধ্য করা হয়। অনেকে আবার জন্মদাতা মা-বাবার জন্য অতটুকু ভদ্রতাও দেখান না। বাবামাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ডাক্তার দেখানোর কথা বলে অচেনা জায়গায় বসিয়ে রেখে চলে যায় বা দূর পাল্লার গাড়ীতে তুলে দিয়ে কৌশলে নেমে যাওয়ার মত ঘৃণ্য দৃষ্টান্তও রয়েছে।

গৌরনদী উপজেলার টরকী বাস স্ট্যান্ডে পঁচাশি বছর বয়সী বৃদ্ধা মা আরাফাতুন্নেসাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। টানা আট দিন এভাবেই কাটে। মাঝে মাঝে ছেলেদের নাম ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধা। স্থানীয়রা নিতে চাইলে বলেন, আমার ছেলেরা আমাকে নিতে আসবে। (৫) যারা কালের সেরা বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও চাকরিজীবী ছিলেন, রঙীন রঙে বর্ণাঢ্য ছিল যাদের জীবন, জীবনের পড়ন্ত বিকেলে তারা নিঃসঙ্গ, একাকি। বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজ সন্তানদের অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বহু পিতা-মাতা এখন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবার ও সন্তান থেকেও যারা ‘সন্তানহারা দুঃখী বাবা-মা’ হয়ে জীবন যাপন করছেন। এরচে বড় দুঃখ অভাগা বাবামায়ের জীবনে আর কি হতে পারে?

সন্তানদের সুবোধ ফিরে আসুক

বৃদ্ধাশ্রম বর্তমান সময়ের এক তিক্ত বাস্তবতা। পরিবার-পরিজনের অবহেলা ও অনাদরের ফলেই এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে চলেছে। সন্তানরা নিজের স্বার্থ হাসিলে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ব্যাপারে কঠিন সীদ্ধান্ত নিতে একটুও দ্বিধাবোধ করছে না। বেমালুম ভুলে যাচ্ছে তার উপর বাবামায়ের ইহসানের কথা। সন্তানদের নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এই ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব উল্লেখিত হয়েছে।
কুরআন ও হাদিসের দিকনির্দেশনা–
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ وَصَّیْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰی وَهْنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیْ عَامَیْنِ اَنِ اشْكُرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیْكَ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ .
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি- (কারণ) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’ বছরে- তুমি শোকর কর আমার এবং তোমার পিতা-মাতার। আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে। (সুরা লোকমান- ১৪)।

এ আয়াতে পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায়ের কথা বলা হয়েছে। কারণ বাবামা সন্তানের জন্য অনেক কষ্ট-মোজাহাদা করেছেন। তাই সারাজীবনই পিতা-মাতার শোকর আদায় করা উচিৎ। তবে কৃতজ্ঞ হওয়ার সবচে মোক্ষম সময় হলো তাদের বার্ধ্যক্যে। কারণ এ সময় তারাও শিশুর মত হয়ে যান। নিজেরা কিছুই করতে পারেন না। সন্তানই তখন তাদের বেঁচে থাকার সম্বল হয়ে উঠে। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَ قَضٰی رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًا رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا فِیْ نُفُوْسِكُمْ اِنْ تَكُوْنُوْا صٰلِحِیْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَوَّابِیْنَ غَفُوْرًا.
তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে উফ্ (পর্যন্ত) বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সাথে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত কর এবং দুআ কর, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন। (সুরা বনী ইসরাঈল- ২৩,২৪)।

এ দুআ থেকে বুঝে আসে যে, সন্তান শৈশবে যে ধরনের লালন-পালনের মুখাপেক্ষী হয়, ঠিক তেমনি পিতা-মাতাও বৃদ্ধ বয়সে সে ধরনের মমতাপূর্ণ আচরণের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। তাদের সাথে মমতাপূর্ণ আচরণের আদেশ দিয়েছেন। অথচ অনেক সন্তান বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে। এমনকি মারধর পর্যন্ত করে। স্ত্রীকে খুশী করার জন্য বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অচেনা জায়গায় ফেলে আসা, দূরপাল্লার গাড়ীতে তুলে দিয়ে পালিয়ে আসা, ডাক্তার দেখানোর কথা বলে জমি দলীল করে নিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় বের করে দেয়া, হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে বন্দী করে রাখার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা মাঝে-মধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়। অথচ মহান আল্লাহ তাদের সাথে এমন আচরণ তো দূরের কথা ‘উহ’ শব্দও করতে নিষেধ করেছেন।

বাবামায়ের সাথে সর্বদা বিনয়ী আচরণ করবে। উত্তম আখলাকের পরিচয় দিবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, এক লোক রাসুল সা.-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা।(৯)

এমনকি পিতা-মাতা অমুসলিম হলেও তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। যেমন আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা.-এর যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সা.-এর নিকট ফতোওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আসক্ত, আমি কি তার সঙ্গে সদাচারণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচারণ কর।(১০)
বার্ধক্যে মা-বাবার খেদমত করতে পারাটা যেমন জান্নাতে দাখেল হওয়ার কারণ তেমনি মা-বাবার খেদমত না করাটাও হতভাগা হওয়ার কারণ। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক! বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কার? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্যে পেল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ লাভ করল না।(১১)

সন্তান বাবামায়ের খেদমতের পাশাপাশি তাদের হাজতও পূরণ করবে। তাদের ভরণপোষণে কোন অবহেলা করবে না। আমর বিন শুআইব বর্ণনা করেন, একজন লোক রাসুল সা.-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আমার সম্পদ ও সন্তান আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বললেন, তুমি ও তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানের উপার্জন থেকে খাও।(১২)

সুতরাং বাবামায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেয়া সন্তান কর্তব্য। যদি এই দায়িত্ব কোন গাফলতি করে তাহলে তাকে চাপ প্রয়োগ করতে করে। শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। ২০১৩ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৫ পৃষ্ঠা ব্যপী ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’-এর খসড়া উপস্থান করেন। তাতে বিধিমালার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এখানে সন্তানের কিছু আচরণ বিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন,
১) পিতা-মাতার সঙ্গে সব সময় মর্যাদাপূর্ণ আচরণ ও যত্নসহকারে দেখভাল করতে হবে।

২) পিতা-মাতার মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

৩) পিতা-মাতার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত বিষয়ে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সেবা-শুশ্রুষা, পথ্য ও অন্যান্য উপকরণ যথাসম্ভব দ্রুত সরবরাহ করবে।

৪) পিতা-মাতার নিজস্ব সম্পদ বিনষ্ট করবে না এবং পিতা-মাতার আইনানুগ অধিকার সমুন্নত রাখবে।

৫) পিতা-মাতার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ নিশ্চিত করবে।

৬) ছলচাতুরির মাধ্যমে পিতা-মাতার সম্পদের যথেচ্ছা ব্যবহার করবে না।

৭) পিতামাতার সম্পদে অন্য উত্তরাধিকারদের অংশ আত্মসাতের চেষ্টা করবে না।

৮) পিতা-মাতার নিজস্ব সম্পদ না থাকলে তাদের দোষারোপ করবে না।

৯) পিতা-মাতার সুনাম, মর্যাদা ও পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে।

১০) আয়-রোজগারের সক্ষমতা অনুসারে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষার লক্ষ্যে আপদকালীন সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করবে।

১১) পিতা-মাতার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করবে।

এছাড়াও পিতা-মাতার অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা সেবার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় পিতামাতা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ জানালে উপযুক্ত প্রক্রিয়া গ্রহণ করে ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বাধ্যতামূলক বিল পাশ করেছে সংসদে। তাদেরকে ভরণ-পোষণ না করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাস জেল। এ ধরনের অপরাধ যামীন অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।(১৩)

বৃদ্ধাশ্রমের কার্যক্রম ও ধর্মীয় পরিবেশ

বর্তমান সময়ে এসে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। আমাদের দিলের তামান্না বৃদ্ধাশ্রমের সকল বাবা-মা আপন পরিবারের কাছে ফিরে যাক। পরিবার তাদের সাদরে গ্রহন করুন। বৃদ্ধাশ্রমের কার্যকরিতা হারিয়ে যাক। সকল বৃদ্ধাশ্রম অসহায় নরনারী না পেয়ে নিজেদের দেওলিয়া ঘোষণা করুক। সেই সুদিন ফিরে আসার আগ পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমের কার্যক্রমে যেন কোন ধরনের অনৈতিকতা প্রকাশ না পায়। সেবার মান নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না উঠে। সেই জন্য কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

এক. শতভাগ সেবা নিশ্চিত করা। ব্যবসায়ী মনোভাব কিংবা দায়সারাভাব যেন বৃদ্ধাশ্রমের সেবামূলক কাজের স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট না করে দেয়।

দুই. পরিবেশ মনোরম হওয়া। নিরাপত্তায় যেন কোন ঘাটতি না হয়। কক্ষ, বিছানা, চাদর পরিচ্ছন্ন রাখা। হাটাহাটি ও শারীরিক চর্চার জন্যে বিস্তৃত আঙিনা রাখা। কিংবা বিকল্প কোন ব্যবস্থা করা।

তিন. মমতা ও সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ। বৃদ্ধাশ্রম যেহেতু বৃদ্ধ ও অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল, তাই সেবক সেবিকারা যেন তাদের সাথে মমতা ও সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ করেন সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। এটা মানবিক দায়িত্বও। রূঢ় ও কর্কশ আচরণ কাম্য নয়।

চার. রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করা। এই বয়সে সাধারণ খাবার সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী খাবার বন্দোবস্ত করতে হবে। পাশাপাশি অষুধপত্রের সেবনের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

পাঁচ. মহিলা পুরুষের থাকার জন্যে আলাদা ভবন কিংবা ভিন্ন কামরার ব্যাবস্থা করা। যেন পর্দার ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়। এই বিষয়ে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

ছয়. দীনি পরিবেশ গড়ে তোলা। জীবনের শেষ সময়টা যেন দ্বীনী পরিবেশে, ইবাদত-বান্দেগী ও তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমেই কাটে সে দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বৃদ্ধাশ্রমে যদি দ্বীনী পরিবেশ কায়েম করা যায় তাহলে এর মাধ্যমে তারা আত্মিক প্রশান্তিও লাভ করবেন। আত্মিক প্রশান্তি মানুষকে হতাশা, দুঃখ ও বেদনা থেকে মুক্তি দেয়। মানুষ কষ্টের মাঝেও এক অনাবিল সুখের খোঁজ পায়। এজন্য বৃদ্ধাশ্রমকে যদি দ্বীনী তালীম ও ইবাদতের উপযোগী করে তোলা যায় তাহলে অন্তত শেষ জীবনে হলেও তারা নিজেদেরকে আখেরাতমুখী করে ঈমান-আমল নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারবেন। এ তো একজন মুসলমানের জন্য মহা সফলতা। আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জীবনের শেষ সময়ে আল্লাহ তাআলার হামদ ও তাসবীহ এবং বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফারের আদেশ করে উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন, তারা যেন জীবনের শেষ সময়ে বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার হামদ ও তাসবীহ, জিকির-আজকার করেন, ইবাদত-বন্দেগীতে রত থাকেন। আল্লাহ তাআলার দরবারে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَ اسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন ও তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল। (সুরা নাসর-৩)।

উপংহার

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আজ যিনি সন্তান, তিনিই আগামী দিনের বাবা কিংবা মা। সবাইকে একদিন বার্ধক্যের স্বাদ নিতে হবে। এ এক অপ্রিয় চরম সত্য। অমোঘ বিধান। আমরা তারুণ্যে মা-বাবাকে নানান অজুহাতে দূরে ঠেলে দেওয়ার পায়তারা করছি। অদূর ভবিষ্যতে যে নিজেদের জীবনে প্রতিফলন হবে না তার গ্যারান্টি কি? তাই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মা-বাবাকে অবহেলা, অবজ্ঞা করা উচিত নয়। মা-বাবা আমাদের যেভাবে আগলে রেখেছেন ঠিক সেভাবে বৃদ্ধ বয়সে তাদের সন্তানতুল্য স্নেহ-ভালোবাসা, সেবা-যত্ন করা উচিত। বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যান, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য। বৃদ্ধ মা-বাবাকে শেষ বয়সে দূরে ঠেলে নয় বরং সেবা-শুশ্রূষা ও ভালোবাসায় তাদের যত্নে রাখুক সন্তান, এটাই কাম্য। আমাদের পৃথিবীতে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারের পরিসমাপ্তি ঘটুক। বৃদ্ধ বাবামায়ের শেষ সসময়টুকু কাটুক আপনজনদের সান্নিধ্যে। জীবন-অধ্যায়ের সুন্দর সমাপ্তি হোক।

সূত্র
(১) প্রথম আলো, ১৭ই জানুয়ারী’১৪
(২) সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন ডটকম, ২৮শে অক্টোবর’১৮
(৩) দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি,২৮ জুলাই ২২
(৪) সিটিজিবার্তা ডটকম, ৬ই মে ’১৯
(৫) দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ই ফেব্রুয়ারী’১৪
(৬) দৈনিক যায়যায়দিন, ০২ জুন ১৯
(৭) দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০২ জুন ১৯
(৮) দৈনিক প্রথম আলো, ৯ই ফেব্রুয়ারী’ ২০
(৯) বুখারী-৫৯৭১; মুসলিম-২৫৪৮
(১০) বুখারী-২৬২০; মুসলিম-১০০৩
(১১) মুসলিম-৪৬২৭, আহমাদ-৮৫৫৭, শু‘আবুল ঈমান-৭৫০০।
(১২) আবু দাউদ-৩৫৩০; ইবনু মাজাহ-২২৯২
(১৩) https://ift.tt/q2l0hpn

The post ঠিকানা যখন বৃদ্ধাশ্রম; অনুশোচনা, উপলব্ধি ও ধর্মভাবনা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a0%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%af%e0%a6%96%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a7%83%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a8/

ষাটোর্ধ্ব জীবনে বৈবাহিক সম্পর্ক; ভালোবাসা, একাকিত্ব ও টানাপোড়েন

আব্দুল্লাহ আল মাহী:

বৈবাহিক সম্পর্ক; ভালোবাসা, একাকিত্ব ও টানাপোড়েন, এই তিন বিষয়ে, প্রবন্ধে মৌলিকভাবে আলাপের গতি জারি থাকলেও আংশিকভাবে প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিকের সমন্বয়ে কিছুটা ভিন্ন কথাও এখানে এসে যাবে। এটাই আলাপের গতি।

পুরোটা জুড়েই কয়েকটা নোক্তায় আলাপ করব:

০১—বৈবাহিক সম্পর্ক; স্বামী-স্ত্রী উভয়ে জীবিত, তাদের পারষ্পরিক ভালোবাসা, একাকিত্ব ও টানাপোড়েন।

০২—বৈবাহিক সম্পর্ক; স্বামী-স্ত্রী’র যেকোন একজন মৃত বা বিচ্ছেদের কারণে একাকিত্বে ভোগে, তার ভালোবাসার চাহিদা এবং টানাপোড়েন।

০৩—অবিবাহিত নারী কিংবা পুরুষ; ভালোবাসা, একাকিত্ব ও টানাপোড়েন।

০৪—ট্রান্সজেনারেশন; ভালোবাসা, একাকিত্ব ও টানাপোড়েন।

বাংলাদেশের পরিমন্ডলে ষাটোর্ধ্ব জীবনে একজন মানুষ কয়েকরকমের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ক্ষেত্র বিশেষে নারী-পুরুষ উভয়েই কঠিন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। যাদের সঙ্গী জীবিত তারা আরও ঘনিষ্ঠতা ও হৃদ্যতার তালাশ করে। পরষ্পরের মান, অভিমান ও শ্রদ্ধার জায়গা বৃদ্ধি পায়। তাদের মাঝে একটু আধটু ছেলেমানুষীও দেখা যায়। বাচ্চাদের মতো হয়ে যায় তারা। বাচ্চাদের পছন্দও করে খুব। সঙ্গ ও আড্ডা এ সময়ে তাদের প্রাণে গতি সঞ্চার করে।

ষাটোর্ধ্ব জীবনের সমস্যাবলী

০১. যৌন জীবনে ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষ

এই বয়সে এসে অধিকাংশ নারী-পুরুষ তাদের জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে বসে। ফলে তাদের বৈবাহিক জীবনের একটি মৌলিক চাহিদা যৌনজীবন; এক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে। এক মুরুব্বির কথা শুনলাম— বয়স পচাত্তর। তার স্ত্রী বছর তিনেক আগে মারা গেছে। বেচারার জৈবিক চাহিদা আছে এখনও। সে আরেকটি বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ছেলেমেয়ে নাখোশ হবে, টাকা-পয়সা দিবে না আর। এই ভয়ে তিনি বিয়ে করেন না। না পেরে হস্তমৈথুন করেন। বিশেষ এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় শরীয়ত হয়তো মুরুব্বিকে ছাড় দিবেন। কিন্তু আখলাকী সংকটে আমরা কতদূর পিছিয়ে পড়লাম!

সমাধান চেষ্টা

০১. একাধিক বিবাহ করা— এটা মেন্ডাটরি অপশন না। তবে সামাজিকতা রক্ষার তাগিদে প্রয়োজন সত্ত্বেও না করে থাকাটা অন্যায়ও বটে। একাধিক বিবাহের ওপর সামগ্রিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লাভ-ক্ষতির সমন্বয় করলে বিবাহ করাটা উত্তম। তবে শুধু যৌনজীবনের দিকে তাকিয়েই বিবাহ করা মারাত্মক অন্যায়। ফলস্বরূপ শেষমেশ সহবাসের বিকল্প হিসেবে হস্তমৈথুনকে বেছে নিতে হচ্ছে যে!

০২. জৈবিক চাহিদা পূরণে অপরিহার্য বিষয় হিসেবে যৌন সম্পর্ককেই সামনে আনতে হবে, এই চিন্তা না করে আমরা এর স্থানে বিকল্প কিছুকে প্রতিস্থাপন করতে পারি। কারণ, যৌনতা একটি চাহিদা মাত্র। চাহিদার রূপান্তর ঘটানো সহজ। সুতরাং জৈবিক চাহিদার বিকল্প হিসেবে ইবাদাতমুখিতা, সামাজিকভাবে আরও সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করণ, মাঝেমধ্যে রোজার অভ্যাস; সোমবার, বৃহস্পতিবারের রোজা ইত্যাদি।

শেষ কথা হচ্ছে, তাদের যৌবন আছে ঠিক, কিন্তু কতটা? এই পরিমাণ যা দিয়ে সে অন্যের হক্ব আদায় করতে পারবে? ধারাবাহিকতায় সে সক্ষমতা রাখে কিনা, এসব প্রশ্নের অধীনে এনেই একজন পূর্ণ বয়ষ্ক ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষের বিবাহের আলাপ উঠতে পারে। এই বয়সে নতুন করে বিবাহ ষাটোর্ধ্বদের শারিরীক সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল একটি প্রশ্ন। বিভিন্ন গবেষণা ও সার্ভেতে দেখা গেছে, তারা বলছেন, এই সময়টাতে তারা যৌন জীবনকে আরও বেশি উপভোগ করেন। কিন্তু উপভোগ আর সক্ষমতা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কারণ, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এই বয়সে যৌনজীবনে ঝুঁকির মাত্রা অনেক। তবে, ব্যতিক্রমী আলাপ ও উদাহরণ কখনোই আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। বাংলাদেশের মানুষ সক্ষম কি না এটাই আলোচনার ধারা-উপধারা। শারিরীক সক্ষমতা প্রশ্নই ষাটোর্ধ্বদের বিবাহের মূলনীতি। আর সামাজিকতার খাতিরে বিবাহ ব্যথিত ভিন্ন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা জায়েজ কি-না, সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া চাই।

২. অর্থনৈতিক জীবনে ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষ

কারও কারও ক্ষেত্রে, সারাটা জীবন টাকাপয়সা নেড়েচেড়ে এই বয়সে এসে ছেলেমেয়ের ধন্না দিয়ে থাকতে হয়।

আর কেউ কেউ তো কিছুই পাচ্ছে না ছেলেমেয়েদের থেকে। নিজের ভিটেমাটিও নিজের থাকছে না তাদের। বাধ্য হয়ে গায়ে কিছু শক্তি থাকলে বেছে নিতে হচ্ছে কোন পেশা। নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত, এই দুই শ্রেণীর পুরুষেরা নামেমাত্র মূল্যে কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আর গরীবদের ভাগ্য তো কখনোই দরোজা মেলেনি। আখেরে আছে তার একটা ভাঙা সংসার আর একটা ভাড়া করা রিকশা।

আর নারীরা এই বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়েদের আনুকূল্য না পেলে, হয়তো বাধ্য হয়েই স্বামীর সাথে তাদেরও রোজগারি করতে হয়। কখনও কারও বাসায় বুয়ার কাজ করে। কখনও সেলাই করে। কখনও ভিক্ষা চেয়ে। নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত পরিবারের ষাটোর্ধ্ব বয়সী নারীদের শোচনীয় অবস্থাটাই ফুটে ওঠে বেশি। কারণ, তাদের হঠাৎ করেই মূদ্রার না দেখা অপর পিঠ দেখতে হয়।

সমাধান চেষ্টা

ব্যক্তিগত উদ্যোগ

১. বার্ধক্যের আগেই এই বয়সটার জন্য সঞ্চয় করে রাখা।

২. জীবিত থাকাকালীন সময়ে সমস্ত সম্পত্তির বন্টন না করা, স্বামী-স্ত্রী নিজেদের সংকট দূর করে ভালোমতো জীবনযাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহে রাখা।

০৩. সন্তানদেরকে আখলাক শিক্ষা দেওয়া। মা-বাবা’র খেদমত কী, শৈশবেই এই শিক্ষা প্রদান করা।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

১. ষাটোর্ধ্বদের জন্য কোন একটি সামাজিক সহায়তা মূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা৷ এদের কাজ হবে বহুমুখী। অর্থাৎ বৃদ্ধাশ্রমকে আরও উন্নত করতে হবে। যুক্ত করতে হবে হোম সার্ভিস। এতে করে বেকারত্ব ঘুচানো যাবে, নতুন পেশা যুক্ত হবে। মানবিকতার চর্চাও হবে। সদকা, ফেতরা, যাকাত এবং দান-অনুদান কীভাবে সুষ্ঠু ও শরয়ী বিধান অনুসারে তাদের মাঝে ব্যায় করা যায়, সে বিষয়ে দক্ষ ও প্রাজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ফতওয়া বিভাগ থেকে জেনে নিয়ে কার্য পরিচালনা করা চাই। রাষ্ট্রের উদ্যোগ বা সহায়তা ব্যাতিত কোন কাজই বাধাবিঘ্ন ছাড়া নির্ঝঞ্ঝাট সমাধা করা সম্ভব হয় না। সেজন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবশ্যই সহযোগী হতে হবে। আর ইসলামী শরিয়তে রাষ্ট্রের জন্য এটা আবশ্যিক কর্তব্য।

৩. আধ্যাত্মিকভাবে চাহিদা পূরণ

ষাটোর্ধ জীবনে এসে একজন নারী বা একজন পুরুষের সবচেয়ে কষ্টের জায়গা হচ্ছে, তারা এক সময়ের সার্বক্ষণিক সঙ্গীদের হারাতে শুরু করে। স্যোলম্যাটদের একের পর এক মৃত্যু তাদের জীবনে একাকিত্বের ও নিরাশার প্রভাব সৃষ্টি করে। রুহের খোরাক হিসেবে যদি তখন আধ্যাত্মিকতা বা খোদার দরবার খুঁজে না পায় তাহলে সে এই বয়সের জীবনকে উপভোগের পরিবর্তে বসে বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করছে যেন। পক্ষান্তরে আধ্যাত্মিকতা তাদের রুহে খোরাক হিসেবে জীবনে আশার আলো সঞ্চারিত করার ক্ষমতা রাখে। এক কথায়, ধর্মকর্ম ও সহজাত প্রকৃতির দাবি মোতাবেক এরকম ব্যথিত মূহুর্তে তাদেরকে স্বান্তনার আশ্রয় দেয়ার মতো কেউ থাকে না। তাই এমন একজনকে খুঁজে নিতে হয় যে তার দুঃখে প্রলেপ দিতে পারে। তিনিই হচ্ছেন রব্বুল আলামিন; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা।

৪. মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ

ষাটোর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষের প্রতি আমাদের কর্তব্যও কী?

ছেলেমেয়েরা তাদের যত্নআত্তি করুক— এটাই তাদের শেষ বয়সের সবচেয়ে বড় চাওয়া। কিন্তু ‘শহুরে জীবনের যান্ত্রিক মানুষ’ আমরা এটা করছি না। ঢেউ লেগেছে পশ্চিমের। ধীরে ধীরে সামাজিক বন্ধনের ভাঙনে তার অনুপস্থিতির জায়গা দখল করে নিচ্ছে আরেক সংস্কৃতি। আমাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, তাদের প্রতি দয়াদ্র হওয়া, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তাদের জরুরত পূরণ করা। তাদের সাথে খোশগল্পে সময় কাটানো। আড্ডা, সহমর্মিতা ও চারপাশের ভালোবাসা তাদের একাকিত্ব দূর করণে খুব বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. ছেলের বউ সমস্যা

ছাড় না দেয়ার মানসিকতা ও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্ন থেকেই এই সমস্যার সৃষ্টি। এটা উভয় পক্ষেরই ক্ষতি করে। শেষ বয়সী এসব শ্বশুর-শ্বাশুরীর যদি ক্ষমতা থাকে, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয় আর মানসিকতা মন্দ হয়, তাহলে ছেলের বউ সহ ছেলের প্রতি তারা এক প্রকার জুলুম করে থাকেন। আর বাবা-মা যদি সক্ষম না হোন, তবুও জুলুম করেন তখন নিঃশর্তে ছেলে তাকে বউ থেকে আলাদা করে দেয়া। অথবা কোন কারণ ছাড়াই আলাদা করে দেয়। ওপরের একটাও উচিত না। দরকার ছিল, সবার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ় করা। সুতরাং সহমর্মিতার চর্চা ব্যতিত কোন কিছুই সম্ভব নয়।

অবিবাহিত নারী-পুরুষ; সমাজের বৃত্তেরই একটি অংশ।

বিবাহ ও ভালোবাসাকে অতটা গুরুত্বপূর্ণ হিশেবে হয়তো তারা কখনো নেননি। কিংবা নানান জটিলতা তাদেরকে এই জটিলতা (?) থেকে বিরত রেখেছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসে বাংলাদেশের সমাজে তাদের হালচাল কেমন এই মূহুর্তে সার্ভে করে দেখলে আমরা যা পাই— তারা অন্য সবার মতোই আছেন বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে আরও সুখি আছেন। কারণ, তারা ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ব্যায় করেছেন অর্থোপার্জনের পেছনে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের দেশে অর্থকড়ি আসে বয়স একটু বাড়লে। যারা বিয়েই করেন স্ট্যাবলিশড হয়ে তাদের বয়সটা দেখুন। আর যারা বিয়েই করেন না তাদেরটা বিবেচনা করুন।

সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা এক প্রশ্ন ধরে বলছিলেন, ‘না, আমার একাকিত্ব অনুভব হয় না। নেটফ্লিক্স আছে, বন্ধু-বান্ধব, মা আছেন। সময় কেটে যায়।’ যদিও তার বয়স চল্লিশ। তারা একাকিত্বে অভ্যস্ত। আর এই অভ্যস্ততা তাদের খুব কমই সমস্যায় ফেলে। পশ্চিমাদের ব্যাপারটাও এরকম। তাদের একাকিত্ব অনুভব হয় না৷ কারণ, এভাবেই তারা জীবনযাপনে অভ্যস্ত।

হিজড়া সম্প্রদায়ের ষাটোর্ধ্ব জীবন কেমন

নারী পুরুষের যেকোন এক দিকে বেশি যারা তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে হয়, সে হিশেবে তাদের ব্যাপারে আলাপটা শুরু থেকে করতে হয়। তাদের সামাজিক মর্যাদার বাস্তবিক ও প্রায়োগিক স্বীকৃতি স্থাপন না করা পর্যন্ত তাদের ষাটোর্ধ্ব জীবনের ভালোবাসা ও একাকিত্ব নিয়ে আলাপ করাটা জটিল। কারণ, তাদের আলোচনাই মৌলিকভাবে করা হচ্ছে যারা একটা সময় সম্মিলিত জীবনযাপনের পরে এসে হুট করেই যেন একা পড়ে গেছেন, তাদের ওই আগের ও পরের জীবনের তুলনামূলক চালচিত্র নিয়ে।

তবে একটা নোক্তা বলে রাখি—

১— নারী বা পুরুষ এই ক্যাটাগরিতে যারা পড়ছেন তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা। তাহলে এই ধারাবাহিকতায় সব কিছুই স্বভাবিকতা পাবে।

ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষ যা চায়

১. তাদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি চায় তারা। তাই, তারা কিছুই বুঝে না, এটা বলে তাদের কষ্ট দেয়া অনুচিত।

২. আসলে এই বয়সে এসে ‘প্রথম’ অনেক কিছু পিছে স্মৃতির আড়ালে পড়ে থাকলেও এখনও অনেক ‘প্রথম’ কিছুর বাকি পড়ে আছে। সেজন্য, তারা কখনোই নিজেদের বুড়ো মনে করেন না। আমাদের দায়িত্ব, তাদেরকে এটা মনে করতে না দেয়া, তারা বয়ষ্ক।

৩. ষাটোর্ধ্বদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার মাঝে একটি কমন উত্তর এটা ছিল, এই দীর্ঘ সময়ে আমরা খুব দেখেছি, খুব শিখেছি। এক কথায় অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়েছে খুব। তারা চায় যুবকরা তাদের অবহেলা না করুক। তাদের সৃষ্টিকে ছুঁয়েই আজ এত বড় হয়েছি আমরা- এই মানসিকতা নিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাক।

৪. অনেক ষাটোর্ধ্ব‌ই পরামর্শ দিয়েছেন, নিজ পরিবারের সবার সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করা জরুরি। তারা চান, আমরা তাদের দেখাশুনা করি। তাদের খোঁজখবর রাখি।

কুরআন নবীর ভাষায় আমাদের শেখাচ্ছে, ‘বলুন, হে আমার রব, আমার পিতা মাতাকে দয়া করুন যেভাবে তারা আমার প্রতি শিশুকালে দয়া করেছেন।’ খুব সুক্ষ্ম একটি বিষয়— পিতামাতা’র কাছে সন্তান বৃদ্ধ বয়সেও শিশু। তাই, তাদের দয়া ও দোয়া সন্তানের প্রতি সব সময়ই রয়েছে।

হাদিসে এসেছে— ‘বরকত ও সুখ তোমাদের বৃদ্ধদের কাছে পাবে।’

‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে বড়দের শ্রদ্ধা করে না, ছোটদের স্নেহ করে না। —তিরমিজি শরিফ

নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিবরাইল আমাকে বলেছে, বৃদ্ধদের সব সময় অগ্রাধিকার দিন।— আবু দাউদ শরীফ

আমাদের উচিত স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকল মুরুব্বিদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, সৌহার্দ্য প্রদর্শন পূর্বক তাদের একাকিত্ব ও টানাপোড়েন দূর করা। সকল ধর্ম ও মতের সহাবস্থানকে ইসলামের সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঠপূর্বক তাদের সবার প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় করা। এবং সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়া। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

The post ষাটোর্ধ্ব জীবনে বৈবাহিক সম্পর্ক; ভালোবাসা, একাকিত্ব ও টানাপোড়েন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a7%88%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%95/

সালাফের শেষজীবন : ঈমান, আমল ও তাকওয়া

হুসাইন আহমাদ:

দ্বীনের ক্ষেত্রে যাঁরা আমাদের পূর্বসূরি তাঁরা হলেন সালাফ। আমরা তাঁদের সালফে সালেহিন তথা পূণ্যবান পূর্বসূরি হিসেবে চিনি। ঈমানের দৃঢ়তা, আমলের একাগ্রতা ও তাকওয়ার পবিত্রতা ছিল তাঁদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। উঠতি যৌবনে তাঁরা যেমন উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের পূর্ণ ধারক ছিলেন, পড়ন্ত পৌঢ়েও ঈমান, আমল ও তাকওয়ায় শোভিত ছিল তাঁদের জীবন। আমরা এখানে কয়েকজন সালাফের পড়ন্তবেলার সময়টুকু তুলে আনার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

সালাফের আলোচনায় সর্বপ্রথম যাঁর নাম আসে, তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু। উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। যাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হয়েছে স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারক জবানে। পবিত্র কুরআনেও বিবৃত হয়েছে তাঁর গুণ মহিমা। এই মহান ব্যক্তিটি ঈমান ও আল্লাহভীতিতে কেমন ছিলেন? কেমন ছিল অস্তাচলগামী জীবনে তাঁর আমল? আসুন একটু জেনে নেওয়া যাক ইতিহাসের পাতা থেকে।

হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও নরম দিলের মানুষ। নবীজি বলেছেন, আমার উম্মতের প্রতি সবচেয়ে দয়াবান হল আবু বকর। জীবনের শেষসময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হয়ে নামায পড়াতে পারছিলেন না, হযরত আবু বকরকে নামায পড়াতে খবর পাঠাতে বললেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমার আব্বাজান বড় নরম দিলের মানুষ! তিনি আপনার জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়াতে পারবেন না। আপনার বিচ্ছেদ সইতে পারবেন না। অন্য কাউকে বলুন। কিন্তু নবীজি যে তাকেই নিজের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তাই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথা আমলে না নিয়ে পুনরায় আদেশ পাঠাতে বললেন।
হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দয়া ও নম্রতা আর ঈমানি দৃঢ়তা ছিল সমান্তরাল। দয়ার সুযোগ নিয়ে ইসলামের ওপর আঘাত করতে পারেনি কেউ।

প্রয়োজনে তিনি কঠোর হয়েছেন। কোষমুক্ত তরবারি হাতে গর্জে উঠেছেন। ইসলাম ও তার বিধান অস্বীকারীদের ফেতনাকে কঠিন হাতে দমন করেছেন। তিনি যেন ছিলেন কুরআনের আয়াত— তাঁরা কাফেরদের ওপর কঠোর ও পরস্পরের প্রতি দয়াশীল— এর শ্রেষ্ঠ ও বাস্তব রূপ।

তাঁর খোদাভীতি সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, “হায়! আমি যদি একজন মুমিনের গায়ের লোম হতাম!” কখনো তিনি নিজের জিহ্বা ধরে বলতেন, “যত অনিষ্টের মূল এই বস্তু।” তারপর খুব কাঁদতেন আর বলতেন, “ওরে মন, সময় থাকতে কাঁদো! অন্যথায় আখেরে তোমাকে কাঁদানো হবে!” যখন তিনি নামাযে দাঁড়াতেন, আল্লাহর ভয়ে যেন কাঠ হয়ে যেতেন!

একবার তিনি গাছের ডালে একটি পাখি দেখে বললেন, “হে পাখি, কতো ভাগ্যবান তুমি! গাছের ফল খাও। শীতল ছায়ায় নেচে বেড়াও। মৃত্যুর পরও তুমি এমন স্থানেই যাবে যেখানে হিসাব ও জবাবদিহিতা নাই। আফসোস! আবু বকর যদি এমন হতো!” আবার কখনো বলতেন, “আফসোস! আমি যদি তৃণ হতাম, চতুষ্পদ জন্তু আমাকে খেয়ে ফেলত!”

আল্লাহর ভয়ে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এভাবেই কাঁদতে থাকতেন। আমরা কি ভেবে দেখেছি? মহান রাব্বুল আলামিন যাঁর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রহমাতুল্লিল আলামিন যাকে দুনিয়াতেই বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন। রোজ কেয়ামতে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কেমন ছিল তাঁর ভয়! আর আমাদের অবস্থান কোথায়? তাহলে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহকে আমাদের কিরূপ ভয় করা উচিৎ?

মৃত্যুর দুয়ারে যখন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উপনীত হলেন, বায়তুল মাল থেকে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ ভাতা গ্রহণ করেছেন তার হিসেব করতে আদেশ দিলেন। হিসেব করে জানা গেল, গোটা খেলাফতকালে মোট ৬ হাজার দেরহাম– যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৫ শত টাকা– গ্রহণ করেছেন। বললেন, আমার জমি বিক্রি করে তা ফিরিয়ে দাও। তাই করা হল। এরপর তিনি বললেন, অনুসন্ধান করে দেখ, খেলাফত গ্রহণের পর থেকে আমার সম্পদে কোনো বৃদ্ধি হয়েছে কি না? অনুসন্ধানের পর দেখা গেল, একটি হাবশি গোলাম— যে শিশুদের দেখাশোনা ও মুসলমানদের তরবারি পরিষ্কার নিয়োজিত ছিল, একটি পানি বহনের উট ও একটি চাদর বৃদ্ধি হয়েছে। হিসেব শুনে তিনি নির্দেশ দিলেন, আমার মৃত্যুর পরই যেন এগুলো পরবর্তী খলিফার নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়।

ইন্তেকালের পর যখন উপরোক্ত বস্তুগুলো হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট পাঠানো হল তিনি কেঁদে ফেললেন। চোখের পানি মুছে বললেন, আবু বকর! আপনি আপনার স্থলাভিষিক্তদের দায়িত্ব অনেক কঠিন করে গেলেন! এই ছিল উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষটির শেষবেলার তাকওয়া ও ঈমানি দৃঢ়তার সামান্য নমুনা।

উম্মতের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হলেন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু। কেমন ছিল তাঁর শেষজীবন? কেমন ছিল তাঁর ঈমান, আমল ও খোদাভীতির রূপ? খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর সর্বসাধারণ মুসলমানকে একত্রিত করে বলেন, “মুসলমানগণ, আপনাদের সম্পদে আমার ঠিক ততটুকু অধিকার রয়েছে যতটুকু কোন এতিমের প্রতিপালকের জন্য এতিমের সম্পদে থাকে। আমার যদি সামর্থ থাকে তবে আপনাদের থেকে কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করব না। যদি অসমর্থ হয়ে পড়ি তবে কেবলমাত্র খাওয়া-পরার খরচ গ্রহণ করব। এরপরও আপনারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবেন, যেন অপচয় বা সঞ্চয় করতে না পারি।”

প্রথম দিনের প্রদত্ত এই ভাষণ গোটা খেলাফতকালে তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তিনি রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের সর্বময় কর্তৃত্ব লাভ করেছিলেন। কিন্তু নিজের জীবন-জীবিকার কোন উন্নতি তাঁর হয়নি। নিঃস্বতা ও উপবাসকেই নিত্য সঙ্গী করে রেখেছিলেন। কখনো তিনি গরম কাপড় পরেননি। তাঁর জামায় একত্রে বারটি পর্যন্ত তালি থাকত। মাথায় থাকত ছেঁড়া ও জীর্ণ পাগড়ি। পায়ে ছেঁড়া-ফাটা জুতা। একবার জামা ছিঁড়ে গেলে তিনি তালির ওপর তালি দিচ্ছিলেন। হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে বারণ করলে তিনি বলেন, “হাফসা, আমি মুসলমানদের সম্পদ হতে এর অধিক গ্রহণ করতে পারি না।”

খাবার গ্রহণেও তিনি ছিলেন খুব হিসেবি। শুধু ক্ষুধা নিবারণের তাড়নাতেই খাবার গ্রহণ করতেন, তবুও তা হতো অতি সাধারণ খাবার দিয়ে। হিজরি ১৮ সনে আরবে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই সময়ে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর অস্থিরতা ছিল বেদনাদায়ক। তখণ ঘির বদলে তিনি জয়তুন তেলের ব্যবহার শুরু করলেন। ফলে একদিন তাঁর পেটে পীড়া দেখা দিল। তিনি পেটের উপর হাত রেখে বললেন, “দুর্ভিক্ষ যতদিন আছে তোমাকে ইহাই গ্রহণ করতে হবে!” একদিন স্বীয় পুত্রের হাতে তরমুজ দেখতে পেয়ে ভীষণ রাগান্বিত হয়ে বললেন, “মুসলিম জনসাধারণ না খেয়ে মরছে আর তুমি ফল খাচ্ছো!?”

হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দাসদাসী ও কর্মচারীদের সাথে নিজের ভাইয়ের মতো আচরণ করতেন। প্রসিদ্ধ ফিলিস্তিন সফর সহ ইতিহাসের অসংখ্য ঘটনা— তাঁর এই মহৎগুণের সাক্ষ্য বহন করে আসছে। তিনি রাতভর ইবাদত করতেন এবং কাঁদতে থাকতেন। কান্নার তীব্রতায় তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসত। দু‘চোখের অশ্রু প্রবাহের ধারায় দু’টি কালো দাগ পড়ে গিয়েছিল। একবার তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, “আফসোস, আমি যদি তৃণখণ্ডের মতো নগণ্য হতাম! আমি যদি জন্মই না নিতাম! আমার মা আমাকে যদি পৃথিবীতেই না আনতো!”
সর্বোচ্চ তাকওয়া ও ইবাদতের মধ্যে জীবন কাটানোর পরও তাঁর ভেতর এতো ভয় ছিল যে, একবার বলছিলেন, “যদি আসমান থেকে ঘোষণা হয়, একজন ব্যক্তি ব্যতিত দুনিয়ার সবার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে, তবুও আমার ভয় কাটবে না। আমার মনে হবে, সেই হতভাগ্য মানুষটা বুঝি আমিই!” এই ছিল বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি খলিফায়ে রাশেদ হযরত উমর রাদিয়াল্লাহুর খোদাভীতির সামান্য বিবরণ।

উম্মতের তৃতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু। যিনি ছিলেন যুন-নুরাইন তথা নবীজির দুই দুইটি নুরের (কন্যা) অধিকারী। ছিলেন আরবের মর্যাদাবান ধনী ব্যক্তিত্ব। ইসলামের জন্য তিনি অকাতরে দান করেছেন। কুরআন সংকলনের পূর্ণতা দানকারীর মর্যাদাও তিনি লাভ করেছেন।
বর্ণনায় এসেছে, তিনি যখন কোন কবরের পাশ দিয়ে যেতেন কান্নায় ভেঙে পড়তেন। তাঁর গণ্ডদেশ ও শ্মশ্রু চোখের পানিতে ভিজে যেতো। জীবনের শেষবেলায় এসে তাঁর ইবাদতের অবস্থা ছিল বিশেষভাবে বর্ণনা করার মতো। তিনি অধিক পরিমাণে রোযা পালন, নামায আদায় ও কুরআন তেলাওয়াত করতেন। এমনকি ফেতনাবাজ দুর্বৃত্তদের নির্মম আঘাতে যখন শাহাদত বরণ করেন, তখনও তিনি কুরআন তেলাওয়াতরত ছিলেন।

ফেতনা সৃষ্টিকারীরা যখন তাঁর বাসভবন ঘেরাও করে রাখল এবং খাদ্য-পানীয় প্রবেশের সকল পথ বন্ধ করে দিল। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অলীক অভিযোগর দালিলিক জবাব দিচ্ছিলেন, তবুও যখন তাঁরা মানছিল না। বরং ভেতরে ঢুকে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করার জন্য বাসভবনে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। তখন হযরত আবু হুরায়রা রা. সহ বড় বড় সাহাবিগণ বারবার অনুমতি চাচ্ছিলেন যে, আমিরাল মুমিনিন, বাহিনী প্রস্তুত আছে। আপনি শুধু অনুমতি দিন। এই ঘাতকদলকে মদিনা ছাড়া করতে বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁদের জবাবে বলছিলেন, না, আমার তরবারি কোনো মুসলমানের ওপর উদ্যত হতে পারে না। অবশেষে সেই ঘাতকদলের হাতে শহিদ হলেন, তবুও তাঁদের প্রতিহত করলেন না। কারণ তারাও যে মুসলমান পরিচয় বহন করছিল!

আমিরুল মুমিনিন হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর শেষজীবনও তাঁর পূর্ববর্তীদের মতোই ছিল ইবাদতমুখর। তিনিও ঈমানের দৃঢ়তা ও খোদাভীতিতে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন। মারাত্মক জখম হওয়ার পর যখন আততায়ীকে বন্দী করা হল, তখন তিনি পুত্র হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, এই ব্যক্তি বন্দী; তার সাথে ভালো ব্যবহার কর। তাকে ভালো খেতে দাও, নরম বিছানা দাও। যদি বেঁচে থাকি তবে আমার রক্তের সবচেয়ে বড় দাবীদার আমি হবো। তার থেকে প্রতিশোধ নেবো বা ক্ষমা করে দেবো। আর যদি মরে যাই তাকে আমার পেছনেই পাঠিয়ে দিও আল্লাহর কাছে তার জন্য ক্ষমা চাইবো।
হে বনী মুত্তালিব, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মধ্যে রক্তপাত শুরু করে দিও না। সাবধান! আমার হন্তা ব্যতিত অন্য কাউকে হত্যা কোরো না। তারপর বললেন, হাসান, তার এই আঘাতে যদি আমার মৃত্যু হয় তবে তার থেকে অনুরূপ আঘাতে কেসাস নিও। তার নাক-কান কেটে দিয়ে পাপ কোরো না। কেননা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাবধান! নাক-কান কেটো না, যদিও সে কাফের হয়। এরপর দীর্ঘ এক অসিয়ত নামা লিখলেন এবং মহান রবের দরবারে চলে গেলেন।

নবীজি ও মুসলমানদের দুর্দিনের নিষ্ঠবতী সহায়িকা আম্মাজান হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহার সম্পর্কে আমরা জানি। তিনি প্রথম যুগের সেই কঠিন সময়গুলোতে নবীজির সান্ত্বনা ও আশ্রয় হয়েছিলেন। নবীজির দাওয়াতের প্রেরণা ছিলেন। তিনি নিজের অঢেল সম্পদ প্রিয়নবীর চরণতলে সঁপেছিলেন। জীবনের শেষবেলায় এসে ইসলামের জন্য হাজারো কষ্ট সয়েছেন। শিয়াবে আবু তালেবের গিরিপথে দীর্ঘ তিনটি বছর তিনি নবীজির সাথে ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে কাটিয়েছেন। অথচ বয়সের বিবেচনায় ওই সময়টাতে ছিল তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জীবনের বেলাভূমিতে এসে আল্লাহর ইবাদতে অধীর থাকতেন এবং রবের ভয়ে চোখের পানিতে আঁচল ভেজাতেন। আম্মাজান খাদিজার ত্যাগ, ভালোবাসা ও ঈমানের ওপর অবিচলতা এবং আম্মাজান আয়েশার ইলম, ইবাদত ও খোদাভীরুতা ইতিহাসে অমর ও আমাদের উত্তম আদর্শ হয়ে আছে।

ফেকাহর প্রসিদ্ধ চার ইমামের ইলম, আমল, তাকওয়া ও ঈমানী দৃঢ়তার ইতিহাস কমবেশি সবাই আমরা জানি। তাঁদের জীবনের শেষ সময়গুলোতেই রচিত হয়েছে তাঁদের মাযহাব এবং ঈমানি অবিচলতার ঐতিহাসিক দাস্তান। দুনিয়ার পদমর্যাদা তাঁদের পদচুম্বন করেছে বারবার, কিন্তু তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইতিহাসে প্রসিদ্ধ, খলিফা আবু জাফর মনসুর ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহকে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু ইমাম তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। কারণ তিনি জনগণের ওপর জুলুমকারীদের সহযোগী বানাতে চাননি নিজেকে। চাননি এমন কোন শৃংখল গলায় পরতে, হক ও সত্য বলতেই যাতে টান পড়বে। আর বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে সত্যের বাণী। ফলাফল এই দাঁড়ালো, খলিফা ভীষণ রেগে গেলেন। পদ গ্রহণ না-করায় ইমাম আবু হানিফাকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন। জুলুমের জল্লাদকে আবু হানিফার গর্দানের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখলেন। নির্দেশ দিলেন প্রতিদিন নিয়ম করে ইমামকে চাবুক মারতে। তাই মারা হতে থাকল। নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকল। এতো নির্যাতনের পরেও যখন রাজি করানো গেল না, তখন তাকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করা হল। ইমাম আবু হানিফা জীবন দিলেন, তবুও হকের আওয়াজ বন্ধ হয় এমন কোনো পদ গ্রহণ করলেন না!

ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহর ওপরও সত্য বলার অপরাধে খলিফা মনসুরের মদিনার শাসক চড়াও হয়েছিল। ইমাম মালেককে ঘোরার পিঠে চড়িয়ে সারা শহর ঘুরিয়ে বেত্রাঘাত করেছে সে। কিন্তু ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ হক বলা থেকে একবিন্দু সরে আসেন নি।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর কারা-নির্যাতন ভোগের ইতিহাস বড় বেদনাদায়ক। মামুন, মুতাসিম ও ওয়াসিক ধারাবাহিক এই তিনজন খলিফার অমানুষিক নির্যাতনের সাক্ষী ছিল বাগদাদের কারাগার। নির্যাতনের প্রচণ্ডতা তাঁর জীবনের আশা কেড়ে নিয়েছিল। তবুও তাকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি হকের ওপর থেকে। ইমাম আহমদ রহিমাহুল্লাহকে এতো পরিমাণ বেত্রাঘাত ও কষ্ট দেওয়া হয়েছে যে, একটি হাতির পক্ষেও তা সহ্য করা সম্ভব ছিল না। অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী না চিনলেও সাধারণ মানুষ ঠিকই ছিনেছিল তাকে। এই মজলুম মানুষটি যখন মৃত্যুবরণ করেন, গোটা শহর জুড়ে তখন কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রায় আট লক্ষাধিক মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।

সংক্ষিপ্ত আলোচনায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁরা ছিলেন আমাদের সালাফ, পূণ্যবান পূর্বসূরি। সালাফগণ নিজেদের জীবনে নববি আদর্শের বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়ে গেছেন আমাদের। তাঁদের জীবন জুড়ে ছিল ঈমান, আমল ও আল্লাহভীতির উজ্জ্বল উদাহরণ। বিশেষ করে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে সেই উজ্জ্বলতা যেন অনির্বাণ শিখার রূপ ধারণ করতো। আমরা যদি সালাফের জীবন থেকে ঈমানি দৃঢ়তা, ইবাদতমুখরতা ও আল্লাহভীতির শিক্ষা নিয়ে তাঁদের পথের পথিক হতে পারি, দুনিয়াতে তাঁদের অনুসারী হতে পারি। তাহলে অনন্ত আখেরাতেও তাঁদের সাথী হতে পারব ইনশাআল্লাহ।

The post সালাফের শেষজীবন : ঈমান, আমল ও তাকওয়া appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b7%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8-%e0%a6%88%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%b2/

মহানবীর ষাটোর্ধ্ব জীবন

নাসিম ইমরান:

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ষাটোর্ধ্ব জীবন প্রবীণ জীবনের দৃষ্টান্তমূলক নমুনা। `ষাটোর্ধ্ব জীবন’ সংখার পাঠকদের জন্য পেশ করা হল সংক্ষেপে মহানবীর ষাটোর্ধ্ব জীবনের ঘটনাপঞ্জী। প্রতিটি ঘটনায় রয়েছে স্ববিষয়ের বিস্তর শিক্ষা। ষাটোর্ধ্ব জীবনেও যা করা সম্ভব তার একটি চিত্র ফুটে উঠবে এখান থেকে।

অষ্টম হিজরি : ৬২৯ সাল

অষ্টম হিজরির সফর মাসের প্রথম তারিখ। মদিনায় ফিরে এলেন ইবনু আবিল আওজা। ৫০ জনের কাফেলাসহ তাকে পাঠানো হয়েছিল সপ্তম হিজরির জিলহজ মাসে, বনু সুলাইমের কাছে ইসলাম প্রচারের জন্য। তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়, অগ্রাহ্য করে তারা। আক্রমণ করে এবং তাবারির মতে, সকলেই শহিদ হয়ে যান। যদিও ওয়াকিদি লিখেন, কাফেলা-প্রধান আহত রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছিলেন।

৮ম হিজরির রবিউল আউয়াল মাস। মুসলিমদের ওপরে হামলা করার জন্য বনু কুজাআহর সেনাসংগঠনের খবর শুনে মহানবি সা. কাব বিন উমায়ের আনসারির নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি সেনাদল প্রেরণ করেন। যুদ্ধে সাহাবিদের নির্মমভাবে শহিদ করা হয়। কাফেলার মধ্যে একজন মাত্র জীবিত থাকেন।

৮ম হিজরির রবিউল আউয়াল মাস। বনু হাওয়াজিন গোত্র বারবার শত্রুদের সাহায্য করে যাচ্ছিল। ফলে তাদের দমনের জন্য শুজা বিন ওয়াহাব আল আসাদির নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি সেনাদল উক্ত গোত্রের জাতু-ইরক এ প্রেরিত হন। যুদ্ধ হয়নি।

৮ হিজরি জুমাদাল উলা মাসে মুতার যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। বসরা বা হাওরানের নিকট নবিজির পত্র বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় উমর ইবনু হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু সিরিয়া সীমান্তে মুতার রোমক শাসনকর্তা শুরাহবিল কর্তৃক শহিদ হন। এজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহার নেতৃত্বে ৬ হাজার সেনা প্রেরণ করেন। রোম সম্রাটের সাহায্যপুষ্ট শুরাহবিল ১ লাখ সৈন্য নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। যায়েদ, জাফর ও আবদুল্লাহ সৈন্য চালনা করতে গিয়ে শহিদ হন।। অবশেষে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোমানরা পরাভূত হয়।

মক্কাবিজয় ও মহামানবতার নবযাত্রা

৮ম হিজরির শাবান মাসে মুসলিমদের মিত্র বনু খুজাআর বিরুদ্ধে কুরাইশদের মিত্র বনু বকর অস্ত্রধারণ করে এবং বহু লোককে হত্যা করে। বনু বকরকে কতিপয় কুরাইশ অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেছিল। যার ফলে হুদাইবিয়ার সন্ধি ভেঙে যায়।

(সন্ধিচুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর) অত্যাচারের প্রতিশোধকল্পে ৮ম হিজরির ৭ই রমজান মোতাবেক ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার ১০,০০০ সাহাবি নিয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা হতে রওনা হন এবং ১৭ই রমজান মোতাবেক ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি সোমবার একপ্রকার বিনা যুদ্ধে মকাবিজয় সম্পন্ন হয়। মুসলিম পক্ষে কাফেলা থেকে আলাদা দুইজন শহিদ ও কাফেরের পক্ষে অতি উৎসাহী হয়ে অগ্রবর্তী ১২ জন নিহত হয়। এ সময় মদিনার দায়িত্বে ছিলেন আবু রুহুম কুলসুম বিন হুসাইন আল-গিফারি।

মক্কা অধিকার সম্পন্ন করে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগনের প্রতি কুরাইশদের যাবতীয় অত্যাচার উৎপীড়নের প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি সবাইকে সাধারণ ক্ষনা প্রদান করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, যে ব্যক্তি অস্ত্র ত্যাগ করবে, সে নিরাপদ। যে ব্যক্তি স্বগৃহে অবস্থান করবে, সে নিরাপদ। যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে, সেও নিরাপদ। এটা ছিল পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব এবং অভাবনীয় ঘটনা। নবিজির উদারতা ও ক্ষমার গুণে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের অনেক বড় বড় শত্রুসহ মক্কাবাসীর নরনারীগণ ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর মুসলিমরা কাবার ভেতর ও বাইরের মূর্তিগুলোকে বিনষ্ট ও বিদূরিত করে কাবাগৃহের পবিত্রতা ও সম্মাননা নিশ্চিত করেন।

৮ম হিজরির শাওয়াল মাস, হুনাইন জনপদের হাওয়াজিন বংশীয় যোদ্ধারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে জেনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সামাম ২ হাজার মক্কাবাসী ও ১০ হাজার মদিনাবাসী বীরযোদ্ধাদের নিয়ে হুনাইনে উপস্থিত হন। এবং যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে শত্রুপক্ষের ৬ হাজার নারী ও শিশু বন্দি হয়। বিপুল পরিমান গবাদিপশু ও ধনসম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হয়। পরাজিত হুনাইনিরা তায়েফ দুর্গে আশ্রয় নেয়। মুসলিমরা দুর্গ অবরোধ করে রাখে তিন সপ্তাহ পর তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধা হয়। যুদ্ধবন্দিদের প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে হাওয়াজিন দলপতি মালেক স্বীয় দলবলসহ ইসলাম গ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে মুসলিমদের ১২ জন শহিদ হন।

আওতাস যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণ হলো, হাওয়াজিন সম্প্রদায় পরাজয় বরণ করার পর তাদের একদল তায়েফে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে দলপতি মালিক ইবনু আওফ নাসরিও ছিল। তায়েফের দুর্গের অভ্যন্তরে তারা অবস্থান নেয়। আর এক দল লোক আততাস নামক স্থানে গিয়ে সমবেত হয়। বাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু আমির আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে একদল সাহাবির একটি বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করেন। অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তায়েফের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং তায়েফ অবরোধ করেন। ইবনু হিশাম বলেন, এ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনজানিক দ্বারা পাথর নিক্ষেপ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম ইসলামে মিনজানিক ব্যবহার করেন। এর দ্বারা তিনি তায়েফবাসীদের প্রতি পাথর বর্ষণ করেছিলেন। কতিপয় সাহাবি একটি দাব্বাবায় (ট্যাংকের ন্যায় সমরাস্ত্র) প্রবেশ করেন। তারপর তা আস্তে আস্তে টেনে নিয়ে যান তায়েফের প্রাচীর বিধ্বস্ত করার জন্য। তখন তাদের ওপর গরম লৌহ শলাকা ফেলে দেওয়া হয়। ফলে তারা দাব্বাবা থেকে বেরিয়ে আসেন। তখন বনু সাকিফ তাঁদের ওপর তির নিক্ষেপ করে। যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় হয়। প্রচুর গনিমত অর্জিত হয়।

যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুধ বোন সায়মা বিনতে হারিস ইবনু আবদুল উজ্জা বন্দি হন। নবিজি তাকে চিনতে পেরে সম্মান প্রদর্শন করেন। এক দাসী ও দাস এবং নানা উপহারসহ তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নিজ গোত্রে, যেখানে তিনি যেতে চেয়েছিলেন। হুনাইনের গনিমত বণ্টন করে জিলকদ মাসে জিরইয়ানা থেকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহয় উমরা আদায় করেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে এলে বুজাইর ইবনু জুহাইর ইবনু আবি সুলমা তার সহোদর কাব ইবনু জুহায়েরকে পত্র লিখে জানান যে, মক্কার যেসব লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিন্দা করত এবং তাঁকে কষ্ট দিত, তাদের কতিপয়কে তিনি হত্যা করেছেন। কুরাইশদের যেসব কবি এখনও বেঁচে আছে যেমন: ইবনু জুবারি ও হুরায়রা ইবনু আরি ওহাব তারা চারিদিকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তুমি যদি বেঁচে থাকা প্রয়োজন মনে করো; তবে দ্রুত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে চলে এসো। কেননা, যে লোক তওবা করে। তাঁর কাছে আসে তাকে তিনি হত্যা করেন না। তিনি তাঁর সেই বিখ্যাত কাসিদাটি রচনা করল, যাতে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা করেছেন, তাঁর আশঙ্কার কথা ও নিন্দাকারী শত্রুদের কেঁপে ওঠারও বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর তিনি মদিনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। নবিজির সমীপে উপস্থিত হয়ে তিনি কবিতা আবৃত্তি করেন, ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবিজি কর্তৃক পুরষ্কৃত হন।

অভিযান থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। তখন জিলহজ মাস শেষ হতে কয়েক দিন বাকি ছিল। বছরের অবশিষ্ট সময় সেখানেই কাটান। এ বছর জিলহজ মাসে মারিয়া কিবতির গর্ভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুত্র ইবরাহিমের জন্ম হয়।

৬৩১ খ্রিষ্টাব্দ, নবম হিজরি

বিশেষত ৯ম হিজরিকে বলা হয় আমুল উফুদ ‘প্রতিনিধি বর্ষ’। যদিও ১০ম হিজরি বর্ষে প্রতিনিধিদল আগমনের ধারা জোরদার ছিল। কিন্তু এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয় দীর্ঘ ধারাবাহিকতায়। যাকে অবধারিত করে মক্কা ও হুনাইন বিজয়। এরপর আরবদের ইসলাম গ্রহণে বড় কোনো বাধা রইল না। তারা এতদিন দেখতে চাচ্ছিল মহানবির সাথে স্বগোত্রীয়দের বিরামহীন বিরোধিতার শেষ পরিণতি কী হয়? তা যখন সবাই দেখে নিল এবং ইসলামের মহিমাকে অনুভব করে নিল নিবিড়ভাবে, এরপর আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর নেতারা ইসলাম গ্রহণ করতে আরম্ভ করল। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের নাসর সুরায় ইরশাদ করেন,

যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এলো এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখলেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী।

ইসলামে আত্মনিবেদনের মাত্রা এমনই ছিল, যার ফলে, মক্কাবিজয়ের মাত্র নয় মাসের মাথায় ৯ম হিজরির রজব মাসে তাবুক অভিযানের সময় ৩০,০০০ সৈন্য নিয়ে অভিযান সম্পন্ন হলো। তার এক বছর পর ১০ম হিজরির জিলহজ মাসে বিদায় হজের সময় নবিজির সাথি হলেন ১ লক্ষ ২৪ হাজার বা ৩০ হাজার মুসলিম।

৯ম ও ১০ম হিজরিতে আগত প্রতিনিধিদলের সংখ্যা ছিল বিস্তর। ইবনু সাদ, দিমইয়াতি, ইবনু সাইয়িদিন নাস, মুগলতায়ি, জায়নুদ্দিন ইরাকি প্রমুখ জীবনীকারগণ ৬০-এর অধিক প্রতিনিধিদলের কথা বর্ণনা করেছেন। জুরকানি বলেন, মোট ৩৬টি প্রতিনিধিদলের বর্ণনা দিয়েছেন। ইবনুল কাইয়িম উল্লেখ করেছেন ৩৫ প্রতিনিধিদলের কথা।

তায়েফের ছাকিফ গোরের প্রতিনিধিদল ১ম হিজরির রমজান মাসে মদিনায় আসে। সেখানে ইতোপূর্বে উরওয়া ইবনু মাসউদ ছাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণ করে এর আনুকূল্যে দাওয়াতি কাজ করেন এবং সালাতরত অবস্থায় শহিদ হন।

এরপর ইসলামে অনুরক্ত হয়ে যে কাফেলা মদিনায় এলো, তাতে ছিলেন ছয়জন সদস্য। যাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন প্রথম ভারত অভিযানকারী বিজয়ী সেনাপতি উসমান ইবনু আবুল আছ-সাকাফি। এরা মদিনায় পৌঁছলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমে মুগিরা বিন শোবা এদের আপ্যায়ন ও আতিথেয়তার দায়িত্বে নিয়োজিত হন।

তারা মুসলিম হতে চাইলেও সালাত থেকে অব্যাহতি চায়, ব্যভিচার, সুদ ও মদপানের অনুমতি চায়। কোনো চাহিদাই নবিজির কাছে স্বীকৃত হয়নি।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লান ছাকিফ প্রতিনিধিদলের জন্য মসজিদে নববির কাছাকাছি তাঁবুর ব্যবস্থা করতে বললেন। যাতে তারা সেখান থেকে মসজিদে সালাতের দৃশ্য দেখতে পায় ও কুরআন শুনতে পায়। ইসলামকে খুব কাছ থেকে তারা দেখল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের অন্তরে ইসলাম প্রভাব বিস্তার করল।

বিস্তারিত আলোচনা শেষে তারা সবাই ইসলাম কবুল করল। ১৫ দিন পর বিদায় নিলো। নিজেদের জন্য একজন ইমাম কামনা করল। বলল, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তরুণ কিন্তু বিজ্ঞ সাহাবি উসমান বিন আবুল আস-সাকাফিকে তাদের ইমাম ও নেতা নিযুক্ত করে দেন।

এর কিছুদিন পরে, বীরে মাউনার গণহত্যার অপরাধী আমের বিন তোফায়েল ও আরবান বিন কায়েস মহানবিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যার লক্ষ্য নিয়ে নজদ থেকে আগত প্রতিনিধিদলের সঙ্গী হয়। তারা ব্যর্থ হয় এবং অচিরেই মৃত্যুবরণ করে।

ইয়ামামার হানিফা গোত্রের ১৭ সদস্যের অস্ত্র প্রতিনিধিদলটি ৯ম হিজরি সনে মদিনার এসে ইসলাম কবুল করেন। তাদের নেতা ছুমামাহ বিন আছাল হানাফি যিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার কুমতলবে ৬ষ্ঠ হিজরির মহররম মাসে মদিনায় যাওয়ার পথে মুহাম্মদ বিন মাসলামার হাতে পাকড়াও হয়ে মদিনায় নীত হন। তিন দিন বন্দি থাকার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মুক্তি দিলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম কবুল করেন। প্রধানত তাঁরই দাওয়াতে উদ্‌বুদ্ধ হয়ে অত্র প্রতিনিধিদলটি ৯ম হিজরি সনে মদিনায় এসে ইসলাম কবুল করেন। উক্ত প্রতিনিধিদলে ইয়ামামার নেতা মুসায়লামা ছিল, সে শর্ত দিলো, যদি মুহাম্মদ তাঁর পরে আমাকে তাঁর শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেন, তাহলে আমি তাঁর অনুসারী হব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাতে রাখা খেজুরের শুকনো ডালটির দিকে ইশারা করে বললেন, যদি তুমি এই শুকনা ডালের টুকরাটিও চাও, তাহলেও আমি তোমাকে এটা দেবো না। যদি তুমি ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে ফিরে যাও, তবে আল্লাহ তোমাকে ধংস করে দেবেন। কারণ, তোমার পরিণতি আমাকে দেখানো হয়েছে। মুসায়লামা ফিরে গিয়ে মুরতাদ হয় এবং নবি দাবি করে নিজেকে।

প্রসিদ্ধ তাই গোত্রের প্রতিনিধিদল তাদের বীর যায়েদ আল খাইলের নেতৃত্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে হাজির হয়। সবাই মুসলিন হয়ে যায়। দলনেতা যায়েন নবিজির প্রশংসা লাভ করেন। ৯ম হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে হাতিম তায়ির পুত্র বিখ্যাত খ্রিষ্টান পণ্ডিত ও পুরোহিত আদি বিন হাতিম স্বীয় বোন সাফফানার দাওয়াতে সাড়া দিয়ে শাম থেকে মদিনায় এসে সরাসরি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মর্যাদা প্রদর্শন করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তিনি ইসলামকে ঘৃণা করতেন এবং তা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। মহানবির সাথে আলোচনা ও নববি বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে তিনিও ইসলামে দীক্ষিত হন।

কিন্দার নেতা আশআস বিন কায়েস ৬০ অথবা ৮০ জনের একটি দল নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে আসেন। অতঃপর তারা মসজিদে প্রবেশ করেন। এমতাবস্থায় তাদের পোশাকে রেশমের কাপর ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওরা সাল্লাম তাদের বললেন, তোমরা কি ইসলাম কবুল করোনি? তারা বলল, হ্যাঁ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তোমাদের পোশাকে রেশনি কাপর কেন? এগুলো ছিঁড়ে ফেলো। অতঃপর তারা এগুলো ছিঁড়ে দূরে নিক্ষেপ করল।

ইয়েমেনের প্রসিদ্ধ আশআরি গোত্র মুসলিম হয়েই মদিনায় আসে। আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের নিকট একদল লোক আসবে, যারা ইসলামের ব্যাপারে তোমাদের চাইতে নম্র হৃদয়।

অতঃপর আশআরি প্রতিনিধিদল এলো। যাদের মধ্যে আবু মুসা আশআরিও ছিলেন।

তারা মদিনায় প্রবেশ করার সময় খুশিতে কবিতা পাঠ করতে থাকেন,

“কালকে আমরা বন্ধুদের সাথে মিলিত হব। মুহাম্মদ ও তাঁর দলের সাথে।”

অতঃপর তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এলেন এবং পরম্পর মুসাফাহা করলেন। তাদের মাধ্যমেই প্রথম মুসাফাহার রীতি চালু হয়।

বনু তামিম আগে থেকেই মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু তাদের কিছু লোক তখনো মুসলিম হয়নি। তারা জিজিয়া দিতে অস্বীকার করে এবং অন্যান্য গোত্রকেও জিজিয়া না দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য কর্মকর্তা উয়ায়না বিন হিসন ৯ম হিজরির মহররম মাসে ৫০ জনের একটি অশ্বারোহী দল নিয়ে অতর্কিতে হামলা করেন। তাদের অনেকেই বন্দি হয়। এ নিয়ে আলোচনা করতে আসে তাদের নেতারা। মহানবিকে গৃহের বাইরে থেকে অশোভনভাবে ডাকতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশ জারি করেন,

যারা তোমাকে কক্ষের বাহির থেকে উঁচু স্বরে আহ্বান করে, তাদের অধিকাংশ জ্ঞান রাখে না। যদি তারা তোমার বের হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করত, তাহলে সেটাই তাদের জন্য উত্তম হতো।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু তামিন নেতাদের সাথে বসলেন। কিন্তু তারা তাদের বংশীয় অহমিকা বর্ণনা করে বক্তৃতা ও কবিতা আওড়ানো শুরু করে দিলো। প্রথমে তাদের একজন বড় বক্তা উতারিদ বিন হাজের বংশ গৌরবের উপরে উঁচু মানের বক্তব্য পেশ করলেন। তার জওয়াবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘খতিবুল ইসলাম’ ছাবিত বিন কায়িস বিন শাম্মাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পেশ করলেন। অতঃপর তারা তাদের কবি জিবরিকান বিন বদরকে পেশ করল। তিনিও নিজেদের গৌরবগাথা বর্ণনা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কবিতা পাঠ করলেন। তার জওয়াবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘শাইরুল ইসলাম’ হজরত হাসসান বিন ছাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পেশ করলেন।

উভয় দলের বক্তা ও কবিদের মোকাবিলা শেষ হলে বনু তামিমের পক্ষ হতে আকবা বিন হাবিস বললেন, তাদের বক্তা আমাদের বক্তার চাইতে উত্তম। তাদের কবি আমাদের কবির চাইতে উত্তম। তাদের আওয়াজ আমাদের আওয়াজের চাইতে উঁচু এবং তাদের বক্তব্যসমূহ আমাদের বক্তব্যসমূহের চাইতে উন্নত। অতঃপর তারা ইসলাম কবুল কালেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উত্তম উপঢৌকনাদি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করলেন। অতঃপর তাদের বন্দিদের ফেরত দিলেন।

৯ম হিজবির শেষদিকে ইয়েমেনের অন্তর্গত হামদান গোত্রের প্রতি একটি পরসহ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রেরণ করেন নবিজি। আগে প্রেরণ করা হয়েছিল খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহ তাদের নিকটে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পত্রটি পড়ে শোনান এবং তাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেন। ফলে তাঁর দাওয়াতে এক দিনেই গোত্রের সমস্ত লোক ইসলাম কবুল করে। এই সুসংবাদ জানিয়ে আলি বাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রেরিত পত্র পাঠ করে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুশিতে ‘সিজদায়ে শোকর’ আদায় করেন।

নাজরান ছিল ৭৩টি পল্লিসমৃদ্ধ খ্রিষ্টানদের বৃহৎ কেন্দ্র। সে সময় একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার পক্ষে উক্ত নগরী এক দিনে পরিভ্রমণ করা সম্ভবপর ছিল না। উষ্ণ নগরীতে ছিলেন গুণী ও দক্ষ ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিক, ধর্মনেতা এবং এক লাখ দক্ষ যোদ্ধা।

সেখান থেকে দুবার এই প্রতিনিধিদলের আগমন ঘটেছিল। প্রথমবার তিনজনের এবং পরেরবার ৬০ জনের। দুটি দলই সম্ভবত অল্পদিনের ব্যবধানে ৯ম হিজরিতে মদিনায় এসেছিল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল এবং সেখানকার অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

বনু সাদ বিন বকরের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আসেন গোত্রনেতা জিমাম বিন সালাবাহ। বাইরে উট বেঁধে রেখে তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন। নবিজিকে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি বলেন, যা খুশি প্রশ্ন করো। জিমাম আল্লাহর কসম দিয়ে তাঁকে বাপ দাদাদের উপাস্য দেব-দেবী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সান্নাম বলেন, এ সবই শিরক। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। অতঃপর তিনি ইসলামের ফরজসমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালিমা, সালাত, সিয়াম, জাকাত ও হজ-সহ ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদি ফরজ ব্যাখ্যা করেন। তখন তিনি কালিমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম কবুল করে নেন। তিনি তার কওমের নিকট ফিরে যান এবং তাদের নিকটে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়া সাল্লামের আদেশ ও নিষেধসমূহ বর্ণনা করেন। অতঃপর তার উপস্থিতিতে সন্ধ্যার মধ্যেই সকল নারী-পুরুষ ইসলাম কবুল করে।

ইয়েমেনের কিন্দা গোত্রের তুজিব শাখার লোকেরা আগেই মুসলিম হয়েছিল। তাদের ১৩ জনের এই প্রতিনিধিদল নিজ গোত্রের মাল-সম্পদ ও গবাদিপশুর জাকাতসমূহ সাথে করে এনেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা এগুলো ফেরত নিয়ে যাও এবং নিজ কওমের ফকির-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তাদেরকে বন্টন করার পর উদ্বৃত্তগুলোই কেবল এখানে এনেছি। তারা দ্বীনের বিধিবিধান শেখার জন্য খুবই উদগ্রীব ছিল। সে কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের তালিমের জন্য বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিযুক্ত করেন। অতঃপর তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করে। তিনি সেগুলোর জওয়াব তাদের লিখিয়ে দেন। তারা ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হলে সাহাবিরা তাদের বললেন, এত তাড়া কীসের? তারা বলল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবার থেকে আমরা যেসব কল্যাণ লাভ করেছি, দ্রুত ফিরে গিয়ে আমরা সেগুলো আমাদের সম্প্রদায়কে জানাতে চাই।

বনু সাদ হুজায়েম প্রতিনিধিদল আবু নুমানের নেতৃত্বে রাসুল সা.-এর দরবারে আসেনা তারা নবিজির আতিথ্য লাভ করেন।

৯ম হিজরিতে সুরা তাওবায় মুশরিকদের সাথে সর্বপ্রকার বারাআত বা সম্পর্ক ছিন্ন করে আয়াত নাজিল করা হয়। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই আয়াতগুলোর বিধান হজের উদ্দেশ্যে আগত সবাইকে শুনিয়ে দেন। তিনি বলেন, অতঃপর কোনো পৌত্তলিক কাবায় হজ করার জন্য আগমন করতে এবং কাবাগৃহে প্রবেশ করতে পারবে না। শত যুগ যুগান্তর পরে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রতিষ্ঠিত কাবাগৃহ পৌত্তলিকতা হতে মুক্ত হয়। আলোকের আবির্ভাবে অন্ধকার বিদূরিত হয়।

নবগঠিত মাদানি রাষ্ট্রের আর্থিক ভিত মজবুত করার জন্য এবং ফরজ জাকাত ও অন্যান্য সাদাকাসমূহ সুশৃঙ্খলভাবে আদায় ও বন্টনের জন্য আল্লাহর রাসুল সাম্রাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন্দ্রীয়ভাবে রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দান করেন। ৯ম হিজরি সনের মহররম মাস থেকে এই সকল নিয়োগ কার্যকর হয়। এতদুদ্দেশ্যে তিনি রাষ্ট্রের অধীন ১৬টি অঞ্চল ও গোত্রের জন্য ১৬ জন রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ করেন।

এ সালে আবিসিনিয়ার ইসলাম ধর্মাবলম্বী নাজাশি বাদশাহ আসহানা ইনতিকাল করেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মৃত্যুর সংবাদ অবগত হয়ে সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে মদিনা নগরে নাজাশির উদ্দেশে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন।

এ বছর তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদিনা আক্রমণ উদ্দেশ্যে ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়া সীমান্তে উপনীত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ শুনে ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়া সীমান্তবর্তী তাবুক নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। এবং সেখানে ২০ দিন পর্যন্ত শত্রুর আগমন অপেক্ষায় অবস্থান। করেন। মুসলিমদের মনোবল, প্রতিরোধক্ষমতা ও কষ্ট সহিষ্ণুতার পরিচয় পেয়ে রোমক সম্রাট পশ্চাৎপসরণ করে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা উম্মু কুলসুম মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীরভাবে শোকাভিভূত হন। তিনি উসমানকে বলেন আমার তৃতীয় কন্যা থাকলে তার বিবাহও তোমার সঙ্গে দিতাম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাবুক হতে প্রত্যাবর্তনের পর মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই মৃত্যুবরণ করে। রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লান তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাধা দান সত্ত্বেও তার সালাতে জানাজা আদায় করেন। পরে কুরআন কারিনের আয়াত অবতীর্ণ হয়ে তাতে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত সমর্থন করে মুনাফিকদের জানাজা আদায় করতে নিষেধ করা হয়।

ওয়াকিনি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে এ বছরের রজব মাসেই আবিসিনিয়ার রাজা (বর্তমান ইথিওপিয়া) নাজাশি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু হয় এবং সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিগণের কাছে তার মৃত্যুর সংবাদ পরিবেশন করেন।

৬৩২ খ্রি. ১০ হিজরি

দশম হিজরির শাবান মাসে ইয়েমেন থেকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল নবিজির সমীপে আসেন। তারা ঈমান আনয়ন করেন। নবিজি তাদেরকে ইসলামের ফরজ ও আবশ্যক দায়িত্বসমূহ বুঝিয়ে দেন এবং আদেশ করেন-

ক. অবশ্যই অঙ্গীকার পূরণ করবে।
খ. আমানতের সুরক্ষা দেবে।
গ. প্রতিবেশীর প্রতি সুদৃষ্টি রাখবে।
ঘ. কারও ওপর জুলুম করবে না।

উদ্ধত স্বভাবের মুহারিব গোত্র অতীতে অনেক দুর্ব্যবহার করেছে। এবার তারা ১০ জনের প্রতিনিধিদল পাঠায়। তারা বলল, কর্কশ ও রুক্ষ ব্যবহার এবং ইসলামের সাথে দুশমনিতে আমাদের অগ্রবর্তী কেউ ছিল না। কিন্তু এবার আমরা ঈমান আনছি। আমাদের ক্ষমার জন্য দুআ করুন।

রমজান মাসে সালমান গোত্রের সাত নেতা মদিনায় আগমন করে ইসলামে দীক্ষিত হন। নিজেদের এলাকায় অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ নিয়ে দুআপ্রার্থনা করেন। নবিজি দুআ করেন, তাদের উপহারসামগ্রী প্রদান করেন এবং সেদিনই সেই এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয় ।

বনি আবস গোত্রের তিন প্রতিনিধি নবিজির দরবারে আসেন এবং হিজরতের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। নবিজি তাদেরকে হিজরত না করে আপন আলয়ে থাকার অনুমতি দেন।

বনি মুনতাফিক গোত্রের প্রতিনিধির আসেন এক ভোরবেলায়। নবিজি সেদিন সাহাবাদের দীর্ঘ খুতবা দেন। তাদের থেকে বাইআত গ্রহণ করেন।

এ বছর রমজানে ২০ দিন এতেকাফ করেন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অন্যান্য বছর জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমজানে একবার সমস্ত কুরআন পেশ করলেও এ বছর সেটা দুবার করেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি প্রিয় কন্যা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেন, আমার মৃত্যু খুব নিকটে মনে হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন দশম হিজরি সনে। তখন তাঁর বিদায় কালে অন্য উপদেশাবলির সঙ্গে এ কথাও বললেন,

হে মুআজা! এ বছরের পর তোমার সঙ্গে আমার হয়তো আর সাক্ষাৎ নাও হতে পারে, তখন হয়তো-বা আমার এ মসজিদ এবং আমার কবরের পাশ দিয়ে তোমরা যাতায়াত করবে।

বিদায় হজ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লান হজের জন্য তাঁর ইচ্ছা এবং কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। আরবের মুসলিমগণ দলে দলে সমবেত হতে আরম্ভ করলেন। প্রত্যেকেরই ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদচিহ্নকে নিজ নিজ চলার পথে একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত ও অনুসরণযোগ্য বা পাথের হিসেবে গ্রহণ করে নেবেন।

জিলকদ মাসের চার দিন অবশিষ্ট থাকতে শনিবার দিবস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা অভিমুখে যাত্রার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন।

তিনি চুলে চিরুনি ব্যবহার করলেন, তেল মালিশ করলেন, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করলেন, কুরবানির পশুগুলোকে মালা বা হার পরালেন এবং জোহর নামাজের পর রওনা হয়ে গেলেন। আসরের পূর্বে জুল হুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছলেন। সেখানে আসরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন এবং শিবির স্থাপন করে সারা রাত সেখানে অবস্থান করলেন।

অতঃপর জোহরের নামাজের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরামের জন্য গোসল করলেন। এরপর আয়েশ রাদিয়াল্লাহ আনহা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীর এবং পবিত্র মাথায় নিজ হাতে জাবিরা এবং দেশক মিশ্রিত একপ্রকার সুগন্ধি দ্রব্য মালিশ করে দিলেন। সুগন্ধির বেশ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরা মাথার সিঁথি এবং দাড়িতে পরিলক্ষিত হলো, কিন্তু তিনি সেই সুগন্ধি না ধুয়ে তা স্থায়ীভাবে রেখে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি লুঙ্গি পরিধান করেন, চাদর গায়ে দেন এবং জোহরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।

অতঃপর মক্কা অভিমুখে ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন। সপ্তাহব্যাপী পথ চলার পর সন্ধ্যার নিকটবর্তী সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কার উপকণ্ঠে জি-তাওয়া নামক স্থানে পৌঁছলেন, যাত্রা বিরতি করে সেখানে রাত্রিযাপন করলেন এবং কছরের নামাজ আদায়ের পর গোসল করলেন। অতঃপর সকাল নাগাদ মক্কায় প্রবেশ করলেন। দিবসটি ছিল ১০ম হিজরির ৪ঠা জিলগজ রবিবার। পথে তিনি আট রাত কটান, মধ্যমভাবে এ দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য এ সময়েরই প্রয়োজন হয়ে থাকে।

মাসজিদুল হারামে পৌঁছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে কাবাগৃহের তাওয়াফ সম্পন্ন করলেন। অতঃপর সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করলেন। কিন্তু ইহরাম ভঙ্গ করলেন না।

জিলহজ মাসের ৮ তারিখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় গমন করেন এবং সেখানে ৯ই জিলহজের সকাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব,ইশা এবং ফজর এ পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ আদায় করেন। অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষ্যা করলেন। অতঃপর আরাফার দিকে রওনা হলেন এবং সেখানে যখন পৗঁছলেন তখন ওয়াদিয়ে নামেরায় তাঁবু প্রস্তুত হয়েছিল। সেখানে তিনি অবতরণ করলেন। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে চলে গেল তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে কাসওয়া নামক উটের পিঠে হাওদা চাপানো হলো। এরপর তিন বাতনে ওয়াদিতে গমন করলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১ লাখ ৪০ হাজার কিংবা ১ লাখ ৪৪ হাজারের এক বিশাল জনতার ঢল। এ বিশাল জনতার উদ্দেশে তিনি প্রদান করেন ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ।

মদিনায় প্রত্যাবর্তন

হজের সকল বিধিবিধান পালন করার পর ১৪ জিলহজ বুধবার হারামে ফজরের সালাত আদায়ের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবিগণকে নিয়ে মদিনা অভিমুখে রওনা হয়ে যান।

আখিরি হজের সময়কাল : ২৪ জিলকদ শনিবার বাদ জোহর মদিনা থেকে রওনা হন ও জুল-হুলাইফাতে গিয়ে কসরের সাথে আছর পড়েন এবং সেখানে রাত্রিযাপন করেন। ও জিলহজ শনিবার সন্ধ্যার প্রাকালে মক্কার নিকটবর্তী ‘জু-তুওয়া’-তে অবতরণ করেন ও সেখানে রাত্রিযাপন করেন। পরদিন ৪ জিলহজ রবিবার ৯ দিনের মাথায় মক্কায় পৌঁছেন। অতঃপর ৯ জিলহজ শুক্রবার পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। তিনি মক্কায় মোট ১০ দিন অবস্থান করেন। ১৪ জিলহজ বুধবার ফজর সালাত শেষে মদিনার উদ্দেশে রওনা হন। অতঃপর সপ্তাহকাল সফর শেষে জুল-হুলাইফাতে পৌঁছে রাত্রিযাপন করেন ও পরদিন মদিনায় পৌঁছেন। এভাবে গড়ে ৯+১০+৯=২৭ দিন সফরে অতিবাহিত হয়।

কুরআন অবতরণের সমাপ্তি : ২২ জিলহজ থেকে ফিরে ১১ হিজরির মহররম ও সফর পুরো দুমাস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় অবস্থান করেন। ওফাতের ৮১ দিন আগে আরাফাতের ময়দানে নাজিল হয়েছিল ইসলামের পূর্ণতার আয়াত, আইয়ামে তাশরিকের মধ্যবর্তী দিনে ১২ জিলহজে মিনায়, দুপুরে নাজিল হয় সুরা নসর। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এটিই ছিল কুরআনের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সুরা।

সাধারণ ভাষণ

মুসলিমদের ডাকলেন মসজিদে নববিতে। প্রচুর লোক সমাগত হলেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বললেন,

মুসলিমগণ, মারহাবা! তোমাদের প্রতি আমার অভিনন্দন। আল্লাহ তাআলা তোমাদের সবাইকে তাঁর সমূহ নিয়ামত দিয়ে ধন্য করুন। তোমাদের ব্যথা ও দৈনা মোচন করুন! সর্বতোভাবে তিনি তোমাদের সাহায্য করুন! তোমাদের রিজিক ও বরকত দান করুনা সম্মান ও মর্যাদায় তোমাদের ভূষিত করুন! তোমাদের রাখুন সুখে-শান্তিতে ও নিরাপদে এখন তোমাদের প্রতি আমার একটি মাত্র উপদেশ, আল্লাহর ভর অন্তরে পোষণ করবে, তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে। একমাত্র আল্লাহই এখন তোমাদের রক্ষক ও পরিচালক। তোমরা তাঁকেই ভয় করবে, এই আমার একান্ত উপদেশ। কেননা, ‘নাজিরুম মুবিন’ তথা প্রকাশ্য সতর্ককারীর ভূমিকা পালন করাই আমার দায়িত্ব। সাবধান! সাবধান! আল্লাহর রাজ্যে আর তাঁর বান্দাদের মধ্যে গর্বিত উদ্ধত হয়ে চলো না! স্মরণ রাখবে আল্লাহর হুকুম,

“এ হচ্ছে পরকালের বাসস্থান। আমার সেই সব বান্দাদের জন্যই আমি তা রেখেছি যাবা দুনিযায় অহংকারী ও কলহপ্রয়াসী না হয়। আর পরকালের সাফল্য তো কেবল মুত্তাকি পরহেজগারদেরই জন্য।”

সাবধান করে বললেন,

“মদমত্ত অহংকারীদের বাসস্থান জাহান্নাম নয় কি?”

সর্বশেষে বললেন,

সালাম ও আশীর্বাদ তোমাদের প্রতি আর আমার ওই সব অনাগত উম্মতের প্রতি যারা তোমাদের মাধ্যমে আমার আনুগত্যের বন্ধনে আবদ্ধ হবে।

রোগের নতুন মাত্রা

২৯ সফর সোমবার। জনৈক মৃতের জানাজা শেষে আল্লাহর নবি ঘরে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে মাথাব্যথার দ্বারা রোগের সূচনা হলো। কঠিন অসুখের সময়কাল ছিল ১৩ অথবা ১৪ দিন। যার মধ্যে অধিকাংশ দিন তিনি মসজিদে এসে জামাআতে ইমামতি করেন। শেষের দিকে বৃহস্পতিবার এশা থেকে সোমবার ফজর পর্যন্ত ১৭ ওয়াজ নামাজে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমামতি করেন।
হিজরী একাদশ সন। দিনটি ছিল সোমবার সূর্য অধিক গরম হওয়ার সময় অর্থাৎ ১০/১১টার সময়। তিনি সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে মিলিত হলেন। এ দিন তাঁর বয়স হয়েছিল চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৬৩ বছর চার দিন।

(মুসা আল হাফিজ রচিত ‘মহানবির জীবনপঞ্জী’ মূলত প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জীবনভিত্তিক একটি কোষগ্রন্থ। এককথায় অনন্য শ্রমনিষ্ঠ সুচয়িত সুলিখিত একটি বই। বাংলা ভাষায় সিরাতচর্চার ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী, অনবদ্য সংযোজন এটি। সেখান থেকে “ষাটোর্ধ্ব জীবন” সংখ্যার পাঠকদের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ষাটোর্ধ্ব জীবনপঞ্জী সংক্ষেপ ও সম্পাদনা করে পেশ করা হল।)

সহায়ক গ্রন্থ:
মহানবির জীবনপঞ্জী, মুসা আল হাফিজ, মুহাম্মদ পাবলিকেশন, জুন ২০২২।

The post মহানবীর ষাটোর্ধ্ব জীবন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8/

Thursday, July 28, 2022

ছাগল চুরির অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে

ফাতেহ ডেস্ক:

পটুয়াখালীর দুমকিতে ছাগল চুরির মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রাজনকে (৫০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে রাজনকে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।

গতকাল বুধবার গভীর রাতে দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া গ্রামের আবু গাজী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে রাজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই গ্রামের প্রতিবেশী আওয়ামী লীগ নেতা রাজন মৃত নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে দুমকি থানায় এস আই আলী হোসেন জানান, আঙ্গারিয়া এলাকার আবু গাজীর বসতবাড়ির পাশে নিজ সম্পত্তিতে দুই বছর আগে মাটি দিয়ে ভরাট করে জমির পাশে বাধ দেন। বুধবার সকালে রেজাউল করিম রাজন আবু গাজীর জমিতে দেওয়া বাধ অপসারণ করতে (কাটতে) যান। এতে আবু গাজী বাধা দিলে রাজনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে রাজন এর হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দা দিয়ে খুন জখমের হুমকি দিয়ে চলে যান।

বিকেল আবু গাজীর ১২ হাজার টাকা মূল্যের গৃহপালিত একটি ছাগল (খাসি) রাজন জবাই করে তার বসতঘরের ফ্রীজে রেখে দেন। এ ঘটনা জানতে পেরে আবু গাজী রাজনের বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে গালাগাল করে রাজন তাকে খুনের হুমকি দেয়।

মামলা দায়েরের পর দুমকি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রেজাউল করিম রাজনকে (৫০) গ্রেফতার করে। এ সময় রাজনের বসতঘরের ফ্রিজ থেকে জবাইকৃত ছাগলের মাংস জব্দ করে পুলিশ।

এস আই আলী হোসেন আরও জানান, ছাগল চুরি ও মাংস উদ্ধারের ঘটনায় মো. রোজাউল করিম রাজনকে একমাত্র আসামি করে আবু গাজী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নাম্বার -১৩। তারিখ ২৮.০৭.২২।

দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাশাপাশি বাড়ির দুই পক্ষ দীর্ঘ দিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এটা মিমাংসা যোগ্য বিষয় ছিল। কেউ ইন্ধন দিয়ে ঘটনাটি মামলা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি শুনেছি রাজনের ঘর থেকে ছাগলের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। রাজন দোষী হলে তার শাস্তি হবে।

The post ছাগল চুরির অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b2-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%86%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%ae/