Tuesday, November 29, 2022

বৌদ্ধমন্দিরে সব সন্ন্যাসী মাদকাসক্ত!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

থাইল্যান্ডের একটি বৌদ্ধমন্দিরে সন্ন্যাসীরা মাদক গ্রহণ করেন কি না, তা জানতে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ওই পরীক্ষায় কেউ কৃতকার্য হননি। তাই সন্ন্যাসীদের সবাইকে পাঠানো হয়েছে মাদক নিরাময়কেন্দ্রে। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।

মন্দিরটির অবস্থান মধ্য থাইল্যান্ডের ফেটচাবুন প্রদেশের বুং সাম ফান জেলায়। সেখানে মোট চারজন সন্ন্যাসী ছিলেন। সোমবার তাঁদের সবার শরীরে মেথামফেটামিন নামের এক ধরনের মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর ওই চার সন্ন্যাসীর ধর্মীয় আচারে অংশ নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বুং সাম ফান জেলার কর্মকর্তা বোনলার্ট থিনটাপথই বলেন, ওই মন্দিরে এখন কোনো সন্ন্যাসী নেই। ধর্মীয় আচার কীভাবে পালন করবেন, তা নিয়ে স্থানীয়রা চিন্তায় রয়েছেন। তবে ওই মন্দিরে অন্য সন্ন্যাসীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

থাইল্যান্ডে মাদক বেশ সহজলভ্য। ২০ ভাট (প্রায় ৬০ টাকা) খরচ করলে রাস্তাঘাটেই পাওয়া যায় মেথামফেটামিনের একটি ট্যাবলেট। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে মাদক পাচারের জন্য মূল পথগুলোর একটি থাইল্যান্ড।

The post বৌদ্ধমন্দিরে সব সন্ন্যাসী মাদকাসক্ত! appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a7%8c%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%ac-%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b8/

কওমি গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থান-জটিলতা: কী ভাবছেন বেফাক-হাইয়া সংশ্লিষ্টরা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

কওমি মাদরাসা থেকে গ্রাজুয়েট করা শিক্ষার্থীরা কর্মের খোঁজে বেরিয়ে জটিলতার মুখে পড়ছে। প্রতি বছর কওমি মাদরাসা থেকে গ্রাজুয়েট করছে গড়ে পনেরো হাজার শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশই মসজিদ-মাদরাসায় নিয়োগ পাচ্ছে না কিংবা বিভিন্ন কারণে মাদারাসা-শিক্ষকতায় আগ্রহী হচ্ছে না। তারা বাইরে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে খাপ খাওয়াতে পারছে না নিজেদের। মাস্টার্স সমমান সনদ থাকলেও অংশ নিতে পারছে না কোনো সরকারি পরীক্ষায়। ইচ্ছে হলেই যেতে পারছে না উচ্চশিক্ষার নিমিত্তে বাইরের কোনো দেশে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমকালীন পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে এসব ঘটছে। এতে গ্রাজুয়েটদের যেমন দায় আছে, দায় আছে মাদারাসার শিক্ষকদেরও। এই দুদলকেই নিয়েই কাজ করতে পারে কওমি শিক্ষাবোর্ড।

জটিলতা কোথায়

কথা হয় রাজধানীর এক মাদরাসা-শিক্ষকের সঙ্গে। তার অভিজ্ঞতায় জটিলতার স্বরূপ জানতে চাইলে তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘প্রতি বছর যত শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েট হচ্ছে, তাদের সমসংখ্যক পদ তো তৈরী হচ্ছে না। তারা সবাই নিয়োগ পাচ্ছে না মসজিদ-মাদরাসায়। ফলে তাদের বাইরের কর্মস্থানে পা বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু মাদারাসার বর্তমান এই সিলেবাসে পড়াশোনা করে তারা বাইরে গিয়েও তেমন সুযোগ পাচ্ছে না। পেলেও এমন কাজে সুযোগ পাচ্ছে, এত কম বেতন, যা তার সঙ্গে বেমানান।’

এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘বর্তমানে ইসলামি প্রকাশনার জগতে লেখালেখির একটা স্রোত তৈরী হয়েছে। সেখানেও কিন্তু পদ স্বল্পতা। হাতেগোনা কয়েকজন সেখানে যুক্ত হতে পারছে। বাকিরা কোথাও সুযোগ না পেয়ে ব্যবসায় নামছে। এটাকেও আমি জটিলতা হিসেবে দেখছি। একজন ছাত্র গ্রাজুয়েট হচ্ছে, কিন্তু তার পড়ালেখা দিয়ে কিছু করত পারছে না।’

বেফাক-সংশ্লিষ্টদের ভাবনা

কর্মসংস্থানের এই জটিলতা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহকারী পরিচালক মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারের মূল্যস্ফীতির কারণে মাদরাসার বেতনে অনেকের হয় না। পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে অনেকে মাদরাসায় না এসে বাইরে কোনো কর্মস্থানে যোগ দিতে চায়। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগের পরীক্ষার জন্য সার্টিফিকেট তুলে নিয়ে যান। এক শিক্ষার্থী ইসলামি ব্যাংকে আবেদন করেছির। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কারণ, তাকে দিয়ে সব কাজ করাতে পারবে না। এই জটিলতার ‍মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা হচ্ছে।’

জটিলতা নিরসনে তিনি বলেন, ‘মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এই জটিলতা কিছুটা হলেও কমাবে। শিক্ষকদের ভেবে দেখতে হবে, পড়া শেষ করে এই শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে যাবে। এজন্য অভিজ্ঞ হতে দরকারি যা কিছু লাগে, তার ব্যবস্থা তাকে করে দিতে হবে। দরকার হলে ছাত্রদেরকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে পড়াবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটা জরুরী। কারণ, এখন মাদরাসার তুলনায় গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাদেরকে বাইরে কাজ করতেই হবে।’

হাইয়া-সংশ্লিষ্টদের ভাবনা

কর্মসংস্থানের জটিলতা কথা স্বীকার করলেও তা শিক্ষার্থীদের কারেণেই বলে মনে করেন কওমি শিক্ষাবোর্ডগুলোর সমন্বিত বোর্ড হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য মুফতি মোহাম্মদ আলী। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘জটিলতা তৈরী হচ্ছে গ্রাজুয়েটদের কারণে। সবাই শহরে-রাজধানীতে থাকতে চায়। শহরে তো এত মানুষের কর্মসংস্থান নেই। এমন অনেক জেলা আছে, সেখানের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। যেগুলো প্রতিষ্ঠিত আছে, সেগুলোতে দরকার শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা গ্রাজুয়েট হচ্ছে, শিক্ষকতার মানসিকতা নিয়ে তারা গ্রাজুয়েট হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘কওমি মাদরাসার লক্ষ্য হলো, দ্বীনের কল্যানে কাজ করা। কর্মজীবনেও দ্বীন প্রতিষ্ঠারই চেষ্টা করা। সেই লক্ষ্যেই মাদরাসায় পড়ানো হয়। ফলে এখানে পড়ে কার্পোরেট সবখানে কাজ করতে পারে না কেন, তা প্রশ্ন করাই ঠিক না। যদিও অনেকেই কাজ করছে। তাই, শিক্ষকদের দায়িত্ব হলো, শিক্ষার্থীদেরকে কওমি মাদরাসার লক্ষ্য ‍বোঝানো। সেই লক্ষ্যেই তাদেরকে তৈরী করা।’

এই জটিলতা কমাতে বোর্ডের তৎপরতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি হাইয়াতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সনদ কার্যকর করার। আমরা জোর তৎপরতা শুরু করেছি, যেন কওমি সনদ দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মশিক্ষক, মডেল মসজিদে নিয়োগ, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। সফল হলে জটিলতা অনেকটা কমবে। পাশাপাশি যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যেতে চায়, তাদের জটিলতা নিরসনেও কাজ শুরু হয়েছে।’

The post কওমি গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থান-জটিলতা: কী ভাবছেন বেফাক-হাইয়া সংশ্লিষ্টরা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%93%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%b8/

Monday, November 28, 2022

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির উদগীরণ শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো লাভা উদগীরণ শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়ায়। আগ্নেয়গিরিটির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে। স্থানীয় সময় রবিবার রাতে আগ্নেয়গিরিটিতে লাভা উদগীরণ শুরু হয়।

এরই মধ্যে স্থানীয়দের জন্য সতর্কবার্তার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাভার প্রবাহ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের আশপাশে রয়েছে। আপাতত তা নিম্নাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম।

বিবিসির খবরে বলা হয়, সোমবার (২৮ নভেম্বর) মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিষ্ঠান (ইউএসজিএস) সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতি যেকোনো সময় মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত আশপাশ এলাকার লোকজন সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়নি।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, ১৮৪৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরি থেকে ৩৩ বার লাভা উদগীরণের ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে আগ্নেয়গিরিটি থেকে টানা ২২ দিন লাভা উদগীরণ হয়েছিল। ওই সময় আগ্নেয়গিরি থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে হিলো শহরে লাভা ছড়িয়ে পড়েছিল।

ইউএসজিএস বলছে, আগ্নেয়গিরির এ বিস্ফোরণের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে সতর্কমাত্রা আরও বাড়ানো হবে এবং স্থানীয়দের নিরাপত্তায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে।

সূত্র: বিবিসি

The post বিশ্বের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির উদগীরণ শুরু appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ac%e0%a6%9a%e0%a7%87%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%a1%e0%a6%bc-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%a8/

ভারতে মুসলিম শিক্ষার্থীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে বরখাস্ত অধ্যাপক

ফাতেহ ডেস্ক:

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে এক মুসলিম শিক্ষার্থীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলায় অধ্যাপক বরখাস্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার ভারতের মানিপাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এ ঘটনা ঘটে। ওই অধ্যাপক যখন ওই শিক্ষার্থীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেন তখন এর প্রতিবাদ করেন তিনি। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। খবর এনডিটিভির।

ওই দিন অধ্যাপক শুরুতে ওই শিক্ষার্থীর নাম জিজ্ঞাসা করেন। তিনি তাঁর নাম বলেন। নাম শোনার পর ওই অধ্যাপক তখন তাঁকে সন্ত্রাসীর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘তুমি কাসাবের মতো!’ মুম্বাইয়ে ২৬/১১ হামলায় ধরা পড়া পাকিস্তানি সন্ত্রাসী আজমল কাসাবের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর তুলনা করেন অধ্যাপক। অধ্যাপকের কাছ থেকে এ কথা শোনার পর ওই শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আপনি এ ধরনের কথা কীভাবে বলেন?’ এর জবাবে ওই অধ্যাপক বলেন, তিনি কৌতুক করে এ কথা বলেছেন। এ কথার প্রতিবাদ করে ওই শিক্ষার্থী তখন বলেন, তাঁকে সন্ত্রাসীর সঙ্গে তুলনা করে তিনি তাঁর ধর্মের অবমাননা করেছেন।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘২৬/১১ কোনো কৌতুক ছিল না। এ দেশে মুসলিম হিসেবে প্রতিদিন এসবের মুখোমুখি হওয়া কৌতুকের বিষয় নয়, স্যার। আপনি আমার ধর্ম নিয়ে কৌতুক করতে পারেন না, বিশেষ করে এভাবে অবমাননাকর হিসেবে।’

এরপর ওই অধ্যাপক তাঁর কথার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘তুমি আমার ছেলের মতো।’ তখন ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আপনি কি আপনার ছেলের সঙ্গে এভাবে কথা বলেন? তাঁকে কি আপনি সন্ত্রাসী নামে ডাকেন?’

ওই অধ্যাপক তখন বলেন, ‘না’। তখন ওই শিক্ষার্থী বলতে থাকেন, ‘তাহলে কীভাবে আপনি এত শিক্ষার্থীর সামনে আমাকে এভাবে বলতে পারেন। আপনি একজন পেশাদার ব্যক্তি। আপনি শিক্ষা দিচ্ছেন। দুঃখ প্রকাশ করে আপনি কীভাবে চিন্তা করেন বা নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করেন তা কখনোই পরিবর্তন করা যাবে না।’ ওই অধ্যাপককে তখন ক্ষমা চাইতে শোনা যায়। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা এ কথোপকথন নীরবে শুনেছেন।

ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যাপককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরো ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীকে কাউন্সেলিং করার কথাও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

The post ভারতে মুসলিম শিক্ষার্থীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে বরখাস্ত অধ্যাপক appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a7%80%e0%a6%95/

ইহুদি আইনের ওপর উদারতাবাদের জয়: ইজরাইল কেন সমকামীদের গন্তব্য হলো?

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ইজরাইল এখন মধ্যপ্রাচ্যের সমকামী সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে উন্মুক্ত দেশ। সমকামীদের জন্য উন্মুক্ততার কারণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর তেলআবিব। শহরটি সমকামীদের জন্যে সমুদ্র-সৈকত, নৈশক্লাব এবং প্রকাশ্য নগ্নতার জন্যে বিখ্যাত। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সহযোগিতায় একটি সমকামী ওয়েবসাইট দ্বারা পরিচালিত বিশ্বব্যাপী এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ সমকামী মানুষের প্রিয় শহর তেল আবিব।

১৯৮৮ সালে দেশটিতে সমকামিতা আইনগতভাবে বৈধতা পায়। ১৯৯২ সালে সমকামী ব্যক্তিদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে আইন পাশ করা হয়। ১৯৯৪ সালে সমকামী যুগলদের বিয়ে ছাড়াই একত্রবাসের অনুমতি দেয় দেশটি। ইসরায়েলী সামরিক বাহিনীতে সমকামীদের যোগদানের অনুমতি দেয়া হয় ১৯৯৩ সালে। ২০০৮ সালে সম-লিঙ্গের যুগলদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি দেয় উচ্চবিচারালয়। ইসরায়েলের সমাজের অধিকাংশ মানুষ যৌনতার ব্যাপারে খুবই উদার এবং তারা সম-লিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ে সমর্থন করে। ২০১৭ সালে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ৭৯ শতাংশ ইজরাইলি সমকামী বিয়েকে সমর্থন করে।

এমনকি তেল আবিব ছাড়িয়ে ইজরাইল-কর্তৃপক্ষ সমকামীদের সমাবেশ ঘটাচ্ছে ফিলিস্তিনের দখলকৃত এলাকাতেও। এক্ষেত্রে হাইফা অঞ্চলে অবস্থিত হারিশের কথা বলা যায়। শহরটি যদিও কট্টর ইহুদিদের, তবুও সমকামীরা সেখানে বেশ সমাদর পাচ্ছে। ইহুদিরা ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল। তবুও সমকামীতার ক্ষেত্রে তাদের এত অতি উদারতার রহস্য কী?

সমকামীদের আশ্রয় ইজরাইল

দখলদার রাষ্ট্র ইজরাইল যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের প্রণীত আইন উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। তাতে সেই সময়ে বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের মতো ইজরাইলেও সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর দুই দশক পর প্রথম সমকামী বার তেল আবিবের একটি ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টে খোলা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতেও তখন সমকামিতা ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৭৫ সালে সমকামী অধিকার রক্ষার জন্য প্রথম ইসরায়েলি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৮ সালকে বলা হয় ইসরায়েলে সমকামী বিপ্লবের বছর। এ বছর বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ করে সমকামিতাকে বৈধ করার আন্দোলন শুরু হয়। এবং এই আন্দোলন সফলও হয়।

সমকামীরা এরপর সেনাবাহিনীতে অনুমতি পায়। তারা কেবল সেনাবাহিনীতেই আটকে থাকেনি, ইসরায়েলি নেসেটে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রেও পৌছে যায়। উজি এভিন সমকামীদের জন্য প্রথম ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা হিসাবে নিযুক্ত হন ২০০২ সালে। ২০২০ সালে যে নেসেট গঠিত হয়, তাতে বিভিন্ন দলের ৬ জন সমকামী মন্ত্রী ছিল। তাতে একজন ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টির। অথচ লিকুদ চরমপন্থী ইহুদি গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠ একটি রক্ষণশীল দল।

ইজরাইল সবসময় কর্তৃত্ববাদী এবং ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল শাসকদের দ্বারা শাসিত। কিন্তু তারা আরব অঞ্চলে একমাত্র উদারপন্থী দেশ হওয়ার কার্ড খেলছে। তারা আরব বিশ্বের যৌন নিপীড়িত যুবকদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি কার্ড হিসাবে তার যৌন উদারতা ব্যবহার করছে। কিছু আরব যুবক ইতিমধ্যে ইজরাইলকে যৌন স্বাধীনতার মরূদ্যান হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই যৌন উদারতার মাধ্যমে মূলত তারা তাদের শাসনের ঔপনিবেশিক চেহারা লুকিয়ে রাখে।

ইজরাইলের দিকে আকৃষ্ট হওয়া সবচেয়ে বিখ্যাত আরব মুখের মধ্যে একটি হল মাহমুদা রিয়াদ। তিনি ১৯৪০ এর দশকে দশকে গ্যালিলে একটি আরব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তারপর ইস্রায়েলে ভ্রমণ করেছিলেন। সত্তরের দশকে তিনি জেন্ডার পরিবর্তন করে নিজের আরবি নাম পরিবর্তন করে হিব্রু নাম নাওমি রাখেন। গত জুনে ইসরায়েলি নেসেটের একটি অফিসিয়াল কমিটির সামনে একদল ফিলিস্তিনি সমকামী আশ্রয় চায়। এর কিছুদিন পরই ৯০ জন ফিলিস্তিনি সমকামীকে ইসরায়েলে অস্থায়ী আশ্রয়ের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম প্রথম ফিলিস্তিনি সমকামীদের তথ্য ও ভিডিও সংগ্রহ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতো ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও সামরিক গোয়েন্দারা।

সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকে সমর্থন করার দায়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ‘আল-কাওস’ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে। তখনই আরব সমকামীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করে ইজরাইল। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রথম আশ্রয়স্থল খোলা হয়।

সমকামিতা ইস্যুতে রাষ্ট্র যেভাবে সমর্থন দেয়

২০২২ সালের জুনে কয়েক হাজার ইসরায়েলি এবং বিদেশী সমকামী মিটজপ রমন শহরে একট পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিল। তাদের হাতে ছিল রংধনু পতাকা। পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিল দখলদার পুলিশের সুরক্ষায়। নতুবা চিত্রটি এতটা সহজ ছিল না। কারণ, ইজরাইলে সমকামীদের বিরুদ্ধে সর্বাধিক চরমপন্থী ইহুদি গোষ্ঠীগুলোর সুস্পষ্ট হুমকি আছে। এই ইহুদি গোষ্ঠীগুলো মনে করে, উন্মুক্ত যৌনতা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। শুধু তাই নয়, ২০০৯ সালের আগস্টে তাদের আক্রমণে দুজন সমকামী নিহত হয়। তেল আবিবের একটি সমকামী যুব কেন্দ্রে বন্দুকধারীর গুলিতে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিহত হয় ১৬ বছরের একটি মেয়ে। সে তার সমকামী বন্ধুদের সমর্থনে জেরুজালেম প্রাইড প্যারেডে অংশ নিতে এসেছিল।

ইজরাইলে সমকামীদের সুরক্ষা দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং বিশিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। যেমন ইসরায়েলি নেসেটের স্পিকার মিকি লেভি এক সমকামী সমাবেশে জনতাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘আপনি যাকে চান তাকে ভালবাসার অধিকার আপনার আছে। আপনার অধিকার আছে আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে বিয়ে করার। আপনার অধিকার আছে অন্য সবার মতো পরিবার গড়ে তোলার। এগুলো কোনো সুযোগ-সুবিধা নয়, প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।’

গত কয়েক বছরে সমকামীদের পক্ষে নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে ইজরাইলে। সমকামী বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের প্রতি স্কুলশিক্ষার্থীদের আচরণ কেমন হবে, নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে ইজরাইলের শিক্ষামন্ত্রণালয়। ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বৈদেশিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যৌন অভিযোজন এবং লিঙ্গ পরিচয়ের উপর বিভিন্ন কোর্স নিজেদের খরচে আয়োজন করছে। চলতি বছরের শুরুতে সমকামী দম্পতিদের জন্য সারোগেসির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। ১৯৬৩ সাল থেকে এই ইহুদি রাষ্ট্রে সারোগেসি নিষিদ্ধ ছিল।

সম্প্রতি ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন নিতজান হোরোভিটজ। তিনি মূলত সমকামীদের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। আগে সমকামীরা ইজরাইলে রক্ত ডোনেট করতে পারতো না। কেউ রক্ত দিতে গেলে তাকে জিজ্ঞেস করা হতো, রক্ত দানের ১২ মাস আগ পর্যন্ত তার সমকামী সম্পর্ক ছিল কিনা কিন্তু হোরোভিটজ এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। বলেন, রক্তের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

এই যে সমকামিতার পক্ষে ইজরাইলে এত আয়োজন, তার পেছনে অর্থ ঢালছে ইজরাইল কর্তৃপক্ষ। সামাজিক সমতা মন্ত্রণালয় সমকামীদের সুবিধার জন্য এই বছর ২৬.৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ করেছে। তারা পরিকল্পনা করছে, ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমকামী প্রকল্প মেইর পার্কে একটি নতুন গে সেন্টার নির্মাণের জন্য ৯.২ মিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ করবে৷

উপসংহার

ইহুদি-ধর্মে অত্যন্ত কঠোরভাবে সমকামিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইবেলের পুরাতন নিয়ম বা তানাখে সমকামিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একজন পুরুষের অন্য একজন পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীলোকের ন্যায় যৌন সম্পর্ক অবশ্যই থাকবে না। তা হলো ভযঙ্কর পাপ। যদি কোন পুরুষের অন্য এক পুরুষের সঙ্গে একজন স্ত্রীলোকের মত যৌন সম্পর্ক থাকে তবে এই দুজন পুরুষ এক ভযঙ্কর পাপ কার্যে লিপ্ত। তাদের অবশ্যই যেন মেরে ফেলা হয়। তারা তাদের নিজেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী’ (লেভিকটাস ১৮:২২)।

ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্মে সমকামিতা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহর ক্রোধ ও গযবের কারণ। বাইবেলের ভাষ্য হল, মানুষ সমকামী হয়ে সৃষ্টি হয়নি, বরং পাপের কারণে সমকামী হয়। বলা হয়েছে, সেই কারণে ঈশ্বর, অশুদ্ধ যৌনাচারের প্রতি তাদের হৃদয়কে পাপপূর্ণ অভিলাষে সমর্পণ করলেন, যেন পরস্পরের দ্বারা তাদের শরীরের মর্যাদাহানি হয়। তারা ঈশ্বর-বিষয়ক সত্যের পরিবর্তে এক মিথ্যাকে মনোনীত করেছিল। তারা স্রষ্টার উপাসনা না করে সৃষ্ট বস্তুর উপাসনা ও সেবা করেছে—সেই স্রষ্টাই চিরতরে প্রশংসিত হোন। আমেন। এই কারণে, ঈশ্বর তাদের লজ্জাজনক রিপুর অধীনে সমর্পণ করেছেন। এমনকি, তাদের নারীরাও স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক পরিবর্তন করে অস্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। একইভাবে, পুরুষেরাও নারীদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ত্যাগ করে পরস্পরের প্রতি কামানলে প্রজ্বলিত হয়েছে। পুরুষেরা অন্য পুরুষদের সঙ্গে অশালীন কর্ম করেছে এবং তাদের বিকৃত আচরণের জন্য তারা যোগ্য শাস্তি লাভ করেছে’ (রোমীয় ১:২৪-২৭)।

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইজরাইল যে গণহত্যার মতো নৃশংসতা চালাচ্ছে, সেই অপরাধ আড়াল করার অংশ হিসেবে তারা সমকামীদের অধিকার তুলে ধরছে। নিজেদেরকে মানবিকতার পক্ষে বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি যৌনতার উদারতার দৃশ্য দেখিয়ে আকৃষ্ট করছে বিশ্বব্যাপী সমকামী পর্যটকদের। যদিও সমকামীদের অধিকার রক্ষায় যে-কোনো আইন ইহুদি ধর্মের মূলমন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তবুও তারা সমকামীদের পক্ষেই কথা বলছে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

The post ইহুদি আইনের ওপর উদারতাবাদের জয়: ইজরাইল কেন সমকামীদের গন্তব্য হলো? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%87%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a6%bf-%e0%a6%86%e0%a6%87%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%93%e0%a6%aa%e0%a6%b0-%e0%a6%89%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be/

Sunday, November 27, 2022

দেশে ১০ মাসে নির্যাতনের শিকার ৩০৬৭ নারী

ফাতেহ ডেস্ক:

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে মোট তিন হাজার ৬৭ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে নারী অধিকার সংগঠন জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ। এছাড়াও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাত দিয়ে সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে।

রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ এর পরিচালক নাজমা ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই মোট ৩৭১ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে- এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২ জন কন্যাসহ ৯১ জন; তার মধ্যে ১২ জন কন্যা ও ১০ জন নারীসহ ২২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ২ জন কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এছাড়াও ৫ জন কন্যাসহ ১০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নারী ও কন্যা পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৩টি- এর মধ্যে ১৮ জন কন্যা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাত দিয়ে নাজমা ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই দশ মাসে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৩০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৯ নারী, আর এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। এ ছাড়া আর ১৪১ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নোয়াখালী জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা-নারীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বাধা। এটা কোনো একক সমস্যা না। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। পুরুষতান্ত্রিক মন-মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে হবে। নারীর প্রতি এ সহিংসতা রোধে নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরাতন আইনগুলোকে সংস্কার করতে হবে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারী নির্যাতনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

নারী সহিংসতা হয়রানি ও নির্যাতন রোধে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো-

১. যৌন হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন’ প্ৰণয়ন করতে হবে;

২. কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসন বিষয়ক আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থন করতে হবে;

৩. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে প্রদানকৃত হাইকোর্টের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে; কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে এবং সমাজে নারী শ্রমিকের যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে;

৪. আদালতের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে;

৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার নিষ্পত্তি করা ও বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে হবে;

৬. বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর সংশোধনীতে (১ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রকাশিত গেজেট) মহিলাদের প্রতি সংক্রান্ত নতুন বিধি ৩৬১ক এবং সেই বিধির (২)’এ বর্ণিত অভিযোগ কমিটি গঠন মহামান্য হাইকোর্টের প্রদানকৃত গাইডলাইন-এর ভিত্তিতে করতে হবে;

৭. নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন মুকুট, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র সহ-সভাপতি এডভোকেট সীমা জহুর, ফেয়ারওয়্যার ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. বাবলুর রহমান প্রমুখ।

The post দেশে ১০ মাসে নির্যাতনের শিকার ৩০৬৭ নারী appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a7%a7%e0%a7%a6-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b6/

Saturday, November 26, 2022

রাশিয়ায় সমকামিতা নিষিদ্ধ: আইন, জরিমানা ও বাস্তবায়ন

মুনশী নাঈম:

বিভিন্ন দেশে যখন সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়ার স্রোত তৈরী হয়েছে, ঠিক তখনই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেল রাশিয়া। বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাশিয়ার পার্লামেন্ট স্টেট ডুমা তার সাধারণ অধিবেশনে সমকামিতা নিষিদ্ধ করে একটি বিল অনুমোদন করেছে। এই বিলে সমর্থন দিয়েছেন ৪০০ বিধায়ক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি সমকামিতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মন্তব্য করেন। তার ভাষ্য ছিল, সমকামিতায় ব্র্যাকেট টানা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। পরে রুশ প্রশাসন তাদের জারিকৃত আইনকে ‘অ্যানসার টু ব্লিঙ্কেন’ নামকরণ করে।

নতুন বিলে কি বলা হয়েছে

রাশিয়ায় সমকামী প্রচার আইনের মূল সংস্করণটি ২০১৩ সালে করা হয়। এতে শিশুদের মধ্যে অ-প্রথাগত যৌন সম্পর্কের প্রচার ও সমকামী সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করা হয়।

নতুন আইনে এলজিবিটি প্রচারের পাশাপাশি এলজিবিটিকিউ আচরণ প্রদর্শনের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । সমকামিতা নিয়ে অনলাইনে হোক বা চলচ্চিত্রে, বইতে কিংবা বিজ্ঞাপনে যেকোনো আলোচনাকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি লিঙ্গ পরিবর্তন করায় উদ্বুব্ধ করাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, সমকামিতা বিষয়ক নতুন আইন ভঙ্গ করলে ৪ লাখ রুবল (৬৬০০ ডলার) জরিমানা করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান আইন ভাঙলে ৫ মিলিয়ন রুবল (৮২১০০ ডলার) জরিমানা আদায় করা হবে। বিদেশি বা রাষ্ট্রহীন কোনো ব্যক্তি ভঙ্গ করলে তাকে রাশিয়া থেকে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি লিঙ্গ পরিবর্তনের উদ্বুব্ধ করে কিছু প্রচার করলে ১ কোটি রুবল (১ লাখ ৬৫ হাজার ডলারের বেশি) জরিমানা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ আইনের কারণে সমকামি অপরাধীর সংখ্যা কমছে।

কেন নিষিদ্ধ করা হলো

সমকামিতা নিষিদ্ধ করার পেছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার আইনপ্রণেতারা। এক. রাশিয়ার ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ রক্ষা। দুই. শিশু নিগ্রহ বন্ধ করা।

তারা বলছেন, পশ্চিমারা এই সমকামিতার মতো বিকৃত এবং অপ্রচলিত একটা যৌন সম্পর্ককে অধিকারের নামে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছেন। জোর করে চাপিয়ে দেয়া কোনো জিনিশ আমরা নিব না। এমন অপ্রচলিত যৌন সম্পর্ক আমাদের ঐতিহ্যবিরোধী। সঙ্গে তারা এটাও বলছেন, ঐতিহ্যবিরোধী এই যৌন সম্পর্ক আমাদের শিশুদের ক্ষতি করছে। তারা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। আরা শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারা যদি এখন এই বিকৃত যৌন সম্পর্কে অভ্যস্ত হয়ে যায়, ভবিষ্যতে এটা দেশের জন্য ক্ষতি হতে পারে।

রাশিয়ার আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইভান সের্গেইভ আল-জাজিরাকে বলেছেন,নতুন আইনটি কোনভাবেই কাউকে দমন করার জন্য নয়। বরং বরং প্রথাগত মূল্যবোধ, সেইসাথে শিশু এবং সমাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। কারণ সমাজে সমকামিতার ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

রাশিয়ান সমাজকর্মী ভ্লাদিমির কোলেসনিকভ আল-জাজিরাকে দেয়া সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নতুন আইনটি আমাদের সামাজিক দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি ঘটাবে। ইউরোপীয় দেশ দ্বারা প্রচারিত অন্ধকার, মানবতাবিরোধী মূল্যবোধ থেকে মানুষ এবং দেশের ভবিষ্যত রক্ষা করতে সহায়তা করবে। নব্বইয়ের দশকে মানবাধিকার এবং যৌন সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার স্লোগানের তালে আমাদের দেশ যে বিশৃঙ্খলায় ডুবেছিল, তা থেকে এখন সমাজ মুক্তি পাবে। রাশিয়ান এই সমাজকর্মী মনে করেন, মানব প্রকৃতির বিপরীত মূল্যবোধ শুধুমাত্র শিশুদের ভঙ্গুর মানসিকতাই নয়, জনসংখ্যার সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সমকামিতার বিরুদ্ধে কতটা কঠোর রাশিয়া

১৯৯৯ সালের আগ পর্যন্ত রাশিয়ায় সমকামিতা একটি মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হতো। ওই সালে সমকামিতাকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। রাশিয়ার অধিকাংশ নাগরিকও সমকামিতা সমর্থন করে না। ২০০৫ সালের জরিপে উঠে আসে, ৪৪ শতাংশ রাশিয়ান সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেয়ার পক্ষে। ২০০৭ সালে পরিচালিত আরেকটি জরিপে ৬৮ শতাংশ রাশিয়ান সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ২০১৩ সালে পরিচালিত একটি জরিপে উঠে আসে, রাশিয়ার ৭৪ শতাংশ মানুষই সমকামিতা সমর্থন করেন না। তারা বলছেন, সমাকিতাকে সমর্থন করাও উচিত নয়।

রাশিয়া সমকামিতার বিরুদ্ধে সবসময়ই কঠোর। ২০১৩ সালে একটি লাইভ সম্প্রচারে নিজের সমকামিতা ঘোষণা করার পরপরই টেলিভিশন রিপোর্টার আন্তন ক্রাসভস্কিকে বরখাস্ত করা হয়। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং অধ্যাপনা থেকে বরখাস্ত করা হয় আলেকজান্ডার ইয়ারমুশকিনকে। শুধু তাই নয়, এর জন্য ২০২০ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে সমলিঙ্গের বিয়েও বেআইনী ঘোষণা করে। বিয়ের সংজ্ঞায় সংবিধানে বলা হয়, ‘বিয়ে হল একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে মিলন।’ চলতি বছরের অক্টোবরে এলজিবিটি প্রচারণার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে টিকটককেও জরিমানা করেছে রাশিয়া। মস্কোর একটি অদালত টিকটিককে ৩০ লাখ রুবল (৫১ হাজার ডলার) জরিমানা করে।

The post রাশিয়ায় সমকামিতা নিষিদ্ধ: আইন, জরিমানা ও বাস্তবায়ন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a6%bf%e0%a6%a6/

Friday, November 25, 2022

ডলারের বদলে সোনা দিয়ে তেল কিনবে ঘানা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মার্কিন ডলারের রিজার্ভ ব্যয় না করে তেলজাত পণ্য কেনার জন্য নতুন একটি পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে আফ্রিকার দেশ ঘানা। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এই তথ্য জানিয়েছেন ঘানার ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাহামাদু বাইউমিয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ নেওয়ার অর্থ হলো তেল আমদানির করার ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো। রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে দেশটির স্থানীয় মুদ্রা দুর্বল হচ্ছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে।

সরকারের তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বর শেষে ঘানার নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৬.৬ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে দেশটির মাত্র তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। গত বছরের এই সময়ে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৯.৭ বিলিয়ন ডলার।

ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফেসবুকে লিখেছেন, পরিকল্পনামতো যদি ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ্বে এই নতুন নীতি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে আমাদের অর্থ পরিশোধের ভারসাম্য মৌলিকভাবে পাল্টে দেবে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে আমাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হ্রাস করবে।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সোনা দিয়ে জ্বালানি ও তেলজাত পণ্য কেনার ফলে বিনিময় হারের সরাসরি প্রভাব ঠেকানো যাবে। কারণ দেশের বিক্রেতাদের তেলজাত পণ্য আমদানিতে বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হবে না।

প্রস্তাবিত এই নীতি খুব প্রচলিত নয়। অনেক সময় বিভিন্ন দেশ অন্যান্য পণ্যের জন্য তেল বিনিময় করে থাকে। এমন চুক্তি সাধারণত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তেল আমদানিকারক দেশের সঙ্গে করে থাকে। ঘানাতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হয়। কিন্তু পরিশোধিত তেলের জন্য দেশটিকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কারণ ২০১৭ সালে বিস্ফোরণের পর দেশটির একমাত্র শোধনাগার বন্ধ হয়েছে।

The post ডলারের বদলে সোনা দিয়ে তেল কিনবে ঘানা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a1%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%a4%e0%a7%87/

Thursday, November 24, 2022

ইউরোপে কাতারবিরোধী ঝড়: পশ্চিমাদের ইসলামবিদ্বেষী নগ্নরূপ

রাকিবুল হাসান নাঈম:

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষ, অভিবাসন বিরোধিতা, কট্টর ডানপন্থী মনোভাব ও ফ্যাসিবাদী আচরণ-এর উত্থান ঘটেছে। উপসাগরীয় ও আরব অঞ্চলে ফুটবল বিশ্বকাপের মতো অনুষ্ঠান আয়োজনকে ইউরোপ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। সম্প্রতি ফ্রান্সে ইসলামফোবিক একটি ম্যাগাজিনের একটি কার্টুনে কাতার জাতীয় ফুটবল দলকে সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাতারের ফুটবল দলের সদস্যদের পিস্তল ও বন্দুক বহন করতে দেখা যায়। তাদের পরনে টুপি এবং দাঁড়ি ছিল। যারা দাঁড়ি ও টুপি পরে তারা সন্ত্রাসী এ ধরনের মনোভাব ওই কার্টুনে ফুটে উঠে।

২০১০ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয় কাতার। এই বিডিংয়ে কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার দৌড়ে বরং যুক্তরাষ্ট্রই এগিয়ে ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত ভোটাভুটিতে ১৪-৮ ব্যবধানে জয় পায় কাতার। বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকেই কাতারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হতে দেখা যায় পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোকে। মূলত কাতারে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, নারী স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে দেশটির অবস্থান, ইসলামি শরীয়াহ আইন, সমকামিতার বিপক্ষ অবস্থান ও অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি দেশটির আচরণ বিষয়ে অভিযোগ তুলে তারা। বিবিসি, গার্ডিয়ানের মতো গণমাধ্যম প্রায়ই নানা ইস্যুতে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক মাহমুদ আলুশ আল জাজিরার এক নিবন্ধে বলেন, পশ্চিমাদের এই প্রচারণা এবং বিষোদগার কাতার মুসলিম হবার কারণে। তিনি পশ্চিমাদের এই আচরণকে ইসলামফোবিক বলেও অভিহিত করেন।

পশ্চিমাদের ডাবল স্টান্ডার্ডবাজি

মাহমুদ আলুশের মতে, গত দুই দশক ধরে পশ্চিমাদের মধ্যে এই ধারণা প্রবল হয়েছে, আরব এবং মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদের একটি সম্ভাব্য উৎস। একই ঘটনা ঘটছে কাতার ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের এই সময়েও। তারা বলছে, আরবে স্বাধীনতা নেই, মানবতা নেই, জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে। এখানে বিশ্বকাপ করা যাবে না। অথচ এই অভিযোগগুলো পশ্চিমাদের ওপরই বেশি বর্তায়। আধুনিক যুগের আগে পশ্চিমের অন্ধকার ইতিহাস রক্তাক্ত ইতিহাস। এখন তারা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে এবং রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের ধারণার বিকাশে আশ্চর্যজনকভাবে সফল হয়েছে। কিন্তু তারা প্রায়শই অন্য বিশ্বের উপর সাম্রাজ্যবাদ অনুশীলন করে এবং তার উপর বিতর্কিত সামাজিক মূল্যবোধ আরোপ করার চেষ্টা করে। ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইসরায়েল এবং তাদের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে আরব অঞ্চলকে দেখে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক হত্যা করেছে।

মাহমুদ আলুশ লিখেন, ইসলামোফোবিয়ায় আচ্ছন্ন একটি ফরাসি সংবাদপত্র কাতারি জাতীয় দলকে নিয়ে একটি কার্টুন প্রকাশ করেছে। যেখানে বন্দুক বহনকারী কাতারি খেলোয়াড়দের মুখে রাগ ও বর্বরতার চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা যখন বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল তখন আমরা এমন সমালোচনা শুনিনি। রাশিয়া যখন বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল, তখন রাশিয়ার জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সশস্ত্র হিসাবে চিত্রিত করে এমন একটি কার্টুন দেখিনি। অথচ রাশিয়া বিশ্বকাপের ৩ বছর পরই বলপ্রয়োগ করে ইউক্রেনীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে দখল করে।

বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগের দিন ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কাতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের আচরণকে কড়া ভাষায় তুলে ধরেন। কাতারে মানবাধিকারের অবস্থা নিয়ে পশ্চিমাদের মায়াকান্নাকে স্রেফ ‘ভণ্ডামি’ বলে অবিহিত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গত ৩ হাজার বছরে ইউরোপিয়ানরা সারাবিশ্বে যা যা করেছে, তাতে আগামী ৩ হাজার বছর তাদের শুধু ক্ষমা চেয়ে বেড়ানো উচিত।’

কাতারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগকে পশ্চিমাদের ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ বলে মনে করেন ‘দ্য হেরাল্ড’ -এর সাবেক উপসম্পাদক কেভিন ম্যাককেনা। পত্রিকাটির এক নিবন্ধে তিনি লিখেন, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, যৌন স্বাধীনতার অভাব, অভিবাসী শ্রমিকদের নির্যাতনের একই অভিযোগ রাশিয়া বা চীনের বেলাতেও থাকলে তাদের বেলায় পশ্চিমারা চুপ থাকে।

পশ্চিমাদের মুসলিমবিরোধী নগ্নরূপ

দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক লেখায় বলা হয়েছে, পশ্চিমারা কাতারকে যেভাবে স্বৈরাচারী রাষ্ট্র মনে করে, সেখানে গলদ আছে। কাতার কিংবা আরব রাষ্ট্র নিয়ে অনেক সিদ্ধান্তই তারা নেয় কুসংস্কার বা ভুল ধারণা থেকে। এমনকি, পশ্চিমারা ধনী কিংবা মুসলমান দেশ বলেই কাতারকে অপছন্দ করে। চীন ও রাশিয়ার গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে কাতারের রয়েছে সুস্পষ্ট পার্থক্য। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি কোন ধরনের চাপ ছাড়াই এক ধরণের নির্বাচন প্রক্রিয়া অন্তত চালু করেছেন। কাতারের আছে আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক মানের গণমাধ্যম। সে তুলনায় রাশিয়া বা চায়নায় গণতন্ত্র বা গণমাধ্যমের বিষয়টি আরও বেশি অনুপস্থিত। চীন দুবার অলিম্পিক আয়োজন করেও দেশটিতে গণতন্ত্রের কোন উন্নতি হয়নি। রাশিয়া বিশ্বকাপ আয়োজন করেও অন্যদেশের ওপর সাম্রাজ্যবাদ চর্চা করছে।

অভিবাসী শ্রমিক নিয়ে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন মাহমুদ আলুশ। তিনি লিখেন, কাতারের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ ভাগ কাতারি। বাকিদের সবাই মূলত দেশটিতে কাজ করতে আসা অভিবাসী শ্রমিক। ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় কাতারে কাজের সুযোগও বেশি। শ্রমিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি পুরোপুরি আদর্শ না হলেও এখানে কাজ করে যা আয় করে তারা, তাতে তাদের জীবনও বদলে গেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের কাজ অনেক এশিয়ান শ্রমিকের একটি নতুন জীবন গঠনে সহায়তা করেছে। কিন্তু অভিবাসীদের সাথে ইউরোপীয় দেশগুলো কী করছে? ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় হাজার হাজার অভিবাসী সমুদ্রে মারা গেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ইজিয়ান সাগরে অভিবাসীদের ডুবিয়ে দেয় গ্রীস। আমরা কাউকে এই নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করতে দেখিনি।

কাতারের বিরুদ্ধে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের অভিযোগও করেছে পশ্চিমারা। উষ্ণ মরুর দেশ হওয়ায় কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামগুলোয় ব্যবস্থা করেছে কুলিং সিস্টেমের। যার কারণে প্রচুর কার্বন নিঃসরণ হবে বলে অভিযোগ তুললেও ফিফা বলছে , কাতার বিশ্বকাপে হওয়া কার্বন নিঃসরণ এ বছর হওয়া বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের মোটে ০.০১ শতাংশ। মাহমুদ আলুশ লিখেন, যদি কার্বন নিঃসরণ নিয়ে কথা বলা হয়, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির সমালোচনা করা আরও বেশি যুক্তিযুক্ত হবে, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে বিশ্বের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর কাতার রয়েছে ৫৮ তম তালিকায়।

হোমোফোবিয়া বা সমকামিতা নিয়েও অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমারা। ইকোনমিস্ট-হেরাল্ডের মতো গণমাধ্যমে বলো হয়েছে, সমকামিতা যে কাতারে নিষিদ্ধ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে শুধু কাতার নয়, প্রায় সব মুসলিম দেশেই নিষিদ্ধ সমকামিতা। একইভাবে বিয়ের বাইরে যে কোন সম্পর্ক অবৈধ দেশটিতে। তবে কাতারে এসব আইন ভঙ্গের দায়ে বিচারের ঘটনা কম। মাহমুদ আলুশের মতে, খেলাধূলায় সমকামিতার প্রসঙ্গ আসারই কথা না। কিন্তু আনা হচ্ছে খেলাধুলাকে রাজনীতিকরণের একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা হিসাবে। সমাজ ও জাতির মধ্যে বিভাজনমূলক মূল্যবোধ আরোপ করার জন্য। কাতার তার সীমার মধ্যে থেকে আয়োজনটিকে বৈচিত্রপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে। তবুও পশ্চিমাদের কাতারবিরোধী এই প্রচারণা কেবল মুসলিম হবার কারণে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

The post ইউরোপে কাতারবিরোধী ঝড়: পশ্চিমাদের ইসলামবিদ্বেষী নগ্নরূপ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%87%e0%a6%89%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%aa%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a7%e0%a7%80-%e0%a6%9d%e0%a6%a1%e0%a6%bc-%e0%a6%aa/

মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। মালয়েশিয়ার রাজপ্রাসাদ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মালয়েশিয়ার সান ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ বিকেল ৫টায় আনোয়ার শপথ নেবেন। দেশটির রাজা আল–সুলতান আবদুল্লাহের এই শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ সকালে মালয়ের শাসকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় দেশটির রাজা মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ রক্ষায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানান।

শনিবার মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট ৮২টি আসনে জয় পায়। অন্যদিকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) পায় ৭৩ আসন। কোনো দলই ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেখাতে পারেনি। দেশটিতে সরকার গঠনে ১১২ আসন নিশ্চিত করতে হয়।

The post মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%a8/

Wednesday, November 23, 2022

তাজরীন ট্র্যাজেডির ১০ বছর, আজও মেলেনি ন্যায়বিচার

ফাতেহ ডেস্ক:

আজ ২৪ নভেম্বর; তাজরীন ট্র্যাজেডি ১০ বছর। ২০১২ সালের এ দিনে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছিল। অগ্নিদগ্ধ অনেককে শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। যাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।

তবে এই দীর্ঘ সময়েও ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এরই মধ্যে অনেক শ্রমিক পরিবার আশুলিয়া ছেড়েছেন। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষ্য দিতে শ্রমিকরা আদালতে না আসায় মামলার বিচারকাজ এগোচ্ছে না। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, দীর্ঘদিনেও মামলা শেষ না হওয়ায় আসামিরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে গেলে তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ পোশাক শ্রমিক ও কর্মী নির্মমভাবে নিহত হন। আহত হন শতাধিক। গার্মেন্টস কারখানাটিতে এক হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন, দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের ইন্সপেক্টর একেএম মহসীনুজ্জামান। মামলায় চার্জশিটভুক্ত মোট ১৩ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক এবং জামিনে আছেন ৯ জন।

আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল। তাদের মধ্যে আল-আমিন, রানা, শামীম ও মোবারক পলাতক।

The post তাজরীন ট্র্যাজেডির ১০ বছর, আজও মেলেনি ন্যায়বিচার appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a7%a7%e0%a7%a6-%e0%a6%ac%e0%a6%9b/

অ্যান্ড্রু টেট-ম্যালকম এক্স: দুই আমেরিকান নওমুসলিমের গল্প

মুনশী নাঈম:

এমরি অ্যান্ড্রু টেটকে নিশ্চয়ই সবাই চিনেন। তিনি একজন বিখ্যাত আমেরিকান-ব্রিটিশ অনলাইন ব্যক্তিত্ব এবং প্রাক্তন পেশাদার কিকবক্সার। কিকবক্সিং ক্যারিয়ার থেকে অবসর নেওয়ার পর টেট তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করানো শুরু করেন এবং এভাবেই পরবর্তীতে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। টিকটকে তার ফলোয়ার ছিল ১১.৬ বিলিয়ন, টুইটারে ছিল ৪ মিলিয়ন এবং ইনস্টাগ্রামে ৪.৭ মিলিয়ন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প এবং রানী এলিজাবেথের পরে ২০২২ সালে তিনি গুগলে তৃতীয় সর্বাধিক অনুসন্ধান করা ব্যক্তি ছিলেন।

পশ্চিমা মিডিয়া তাকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করে। এই অভিযোগে স্থায়ীভাবে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে তাকে নিষিদ্ধ করেছে এর মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। বিবিসি জানায়, টেটের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টগুলো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ, অ্যান্ড্রু টেট বলেছেন, ‘আমি ‘নারীবিদ্বেষী’ নই। মিডিয়া তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।’ চলতি বছর অক্টোবরে ২৪ তারিখ অ্যান্ড্রু টেটের ইসলাম গ্রহণের পর সাড়া পড়ে যায়। মুসলিমরা তাকে অভিবাদন জানায়। কারণ, ইসলাম গ্রহণ করার আগেও তার মুসলিম অনুসারী ছিল।

এই সময়ে টেটের মেধা এবং জনপ্রিয়তা দেখে মনে পড়ে যায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আন্দোলনের সোচ্চার এক কর্মী ম্যালকম এক্সের কথা। তিনিও একজন আমেরিকান। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। এক্স এবং টেটের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মিল আছে। এ লেখায় তা তুলে ধরব কিঞ্চিৎ।

ম্যালকমের উত্থান

তিনি শৈশবে শেতাঙ্গদের হাতে পিতাকে হারান। এদিকে স্বামীর শোক ও সন্তানদের সামলে নেবার চাপ সইতে না পেরে তাঁর মাতা মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেন। একটু বড় হয়ে স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু স্কুলে বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন এবং পরপর কয়েকটি শ্বেতাঙ্গ দত্তক পরিবারে প্রতিপালিত হয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন। তারা তাকে ডাকতো নিগ্রো বলে। এভাবে একসময় তিনি বেছে নেন অন্ধকার পথ। হয়ে ওঠেন মাদক কারবারী। কিন্তু তার অদৃশ্যে লেখা ছিল ভিন্ন কিছু। তাই তিনি কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জেলে যান। সূচিত হয় তার জীবন বদলে যাওয়ার প্রথম অধ্যায়।

জন্মসূত্রে তিনি একজন খৃস্টান ছিলেন। জেলে গিয়ে ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ সম্পর্কে অবগত হন। সংগঠনটি আমেরিকার কালো মানুষদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। কিন্তু তারা ছিল কট্টর বর্ণবাদী ও শেতাঙ্গ বিদ্বেষী। তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যোগ দেন ন্যাশন অব ইসলামে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজের প্রবল প্রতিভা ও দক্ষতার বলে ন্যাশনের একজন প্রভাবশালী নেতা ও দলের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন।

কিন্তু ১৯৬৪ সালে হজে গিয়ে এমন ইসলামের খোঁজ পান, যা বৈষম্যমুক্ত একবিশ্বের স্বপ্ন দেখায়। দেখায়, ইসলাম শুধু কালোদের ধর্ম নয়, বরং তা পুরো মানবজাতির ধর্ম, সাদাকালো সকলের। মক্কার স্মৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইসলামি বিশ্বে কাটানো বারো দিনে আমি একই পাত্র হতে খাবার খেয়েছি, একই পানপাত্র হতে পান করেছি, একই বিছানায় ঘুমিয়েছি, এক মহান প্রভূর ইবাদত করেছি এমন মুসলিমদের সাথে যাদের চোখ সবুজ, চুল সাদা ও চামড়া সাদা। তাদের আন্তরিকতায় পেয়েছি ঠিক একই আবহ যা পেয়েছি নাইজেরিয়া, সুদান ও ঘানা হতে আগত মুসলিমদের মাঝে। মনে পড়ে মুযদালিফার ময়দানের খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপনের কথা। মনে হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখণ্ডের বিভিন্ন চেহারার ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যেন একই সারিতে ঘন-নিবিড়ভাবে সদলবলে উপস্থিত। এ ভূখণ্ডে আমি যা দেখেছি, তা আমার চিন্তা-চেতনাকে পুরো পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমার পূর্ব-অভিজ্ঞতা হতে সহজেই মুক্ত হতে পারছি। এটা হলো নিষ্পাপতা ও মায়া-মমতার বিশ্ব, যেখানে ম্যালকম এক্স তার সকল পূর্ব-চিন্তা-চেতনা বিসর্জন দিয়ে উপনীত হয়েছে।’

অ্যান্ড্রু টেটের উত্থান

২০১৭ সালে হলিউড প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। তখন বিশ্বজুড়ে ‘মি টু’ নামে একটি নারীবাদী প্রচারণা শুরু হয়। সবদেশের নারীরা পুরুষদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের বলতে থাকেন। এই প্রচারণায় টনক নড়ে সবার। প্রশ্ন উঠে, পুরুষরা কেবলই নির্যাতন করে? সুবিধা নেয়? নারীরা কেবলই বঞ্চিত?

অথচ পরিসংখ্যান বলে, পশ্চিমা বিশ্বে ২০০০ সালের পর থেকে পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিচ্ছে কম। তাদের শ্রমশক্তির অংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। এমনকি হতাশায় পুরুষরা আত্মহত্যা করছে। পরিসংখ্যান বলে, শিল্পোত্তর যুগে পুরুষদেরও নারীদের মতোই অনেক সমস্যা রয়েছে। নারীদের নির্যাতিত হবার কারণ কেবল পুরুষের আধিপত্য নয়। যদিও নারীবাদীদের সিংহভাগই বলে, পুরুষদের সুযোগ-সুবিধা আছে এবং নারীরা সুবিধাবঞ্চিত। হিসেব কষলে দেখা যাবে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পুরুষদের এই সংখ্যা ২০ শতাংশও হবে না।

এন্ডু টেট তখন পুরুষদের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নারীরা যে ধর্ষিত হয়, তার পেছনে কেবল পুরুষরাই দায়ী না, বরং নারীদেরও দায় রয়েছে।’ তার এই বক্তব্যের পরই মূলত তার উত্থান ঘটে। চারদিকে তাকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলা শুরু হয়। তাকে নিষিদ্ধ করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর।

বক্তৃতায় এক্স ও টেটের মিল

ম্যালকম এক্স-এর সময়ে ‘কালো’কে কদর্যতার সমার্থক হিসাবে দেখা হত। কিন্তু ম্যালকম বলতেন, ‘আমরা কুৎসিত নই, কিন্তু আপনি বর্ণবাদী।’ তার সবচে বড় শক্তির জায়গা হলো, তিনি তার দুর্বলতা এবং কষ্ট দেখাতে লজ্জিত হতেন না। কিন্তু অ্যান্ড্রু এক্ষেত্রে বিপরীতে; তিনি সবসময় নিজেকে একজন অদম্য সুপারম্যান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন।

ম্যালকম ছিলেন তার তার সমবয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত এবং সুপঠিত। তাকে আলাদা করে তুলেছিল তার বিশুদ্ধ চিন্তা অনুশীলন করার ক্ষমতা। তার ধারনা উপস্থাপনের পদ্ধতি ছিল দুটি ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। প্রথমত, তিনি এমন তথ্য উপস্থাপন করেছেন যেগুলি সম্পর্কে লোকেরা চিন্তা করে এবং খোলাখুলিভাবে কথা বলতে ভয় পায়। দ্বিতীয়ত, প্যারাডক্স এবং কমেডি আকারে যুক্তি তৈরি করার ক্ষমতা। তার পুরো জীবনে এ বিষয় দুটি স্পষ্ট।

এন্ড্রু টেট একই কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তার তর্ক করার ক্ষমতার কারণে। বিশেষত, যেখানে লোকেরা প্রকাশ্যে তর্ক করতে খুব লজ্জা পায়, সেখানে। যেমন উদারতাবাদ এবং নারীবাদ প্রশ্নে। তাই পশ্চিমা মিডিয়া তাকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দেয়।

পশ্চিমা মিডিয়া বিশেষ করে দুটি বক্তব্য নিয়ে অ্যান্ড্রুর উপর তাদের ক্রোধ প্রকাশ করে। প্রথমটি হল: ‘নারীরা পুরুষদের মালিকানাধীন’। দ্বিতীয়টি হল: ‘নারীরা যে ধর্ষিত হয়, তার পেছনে কেবল পুরুষরাই দায়ী না, বরং নারীদেরও দায় রয়েছে।’ এ দুটি লাইন দিয়ে তাকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করে। প্রথমটির জবাবে এন্ড্রু বলেন, এখানে মালিকানা কথাটি খ্রিস্টধর্মের ঐতিহ্যবাহী পরিবার-রূপের একটি ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা কাঠামোর মধ্যে এসেছিল। যেখানে বলা হয়েছে, মালিকানা বলতে এখানে সুরক্ষা ও দায়িত্ব বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাবার জন্য মেয়েকে সুরক্ষা দেয়া কর্তব্য। স্বামীর জন্য স্ত্রীকে সুরক্ষা দেয়া কর্তব্য। এখানে প্রকৃত মালিকানা উদ্দেশ্য নয়। দ্বিতীয়টির জবাবে তিনি বলেন, একটি মেয়ে পরিচিত কারো ঘরে যাবে, মাদক নেবে, মাতাল হবে, ধর্ষিত হবে। এখানে ছেলে-মেয়ে দুজনের দায় রয়েছে। পরিবার এখানে না জানার ভান করে থাকতে পারে না।

মজলুুম ধারণায় মিল

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফিরে আসি। ম্যালকমের চিন্তাধারার মূল স্তম্ভ ছিল কৃষ্ণাঙ্গপ্রেম। তিনি মনে করতেন, কৃষ্ণাঙ্গরা মজলুম। এক ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের বলেছেন, কে আপনাকে আপনার চুলকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছে? আপনার ত্বকের রঙকে অপছন্দ করতে বলেছে? কে আপনার আপনাকে ঘৃণা করতে ‍উদ্বুব্ধ করেছে? যেখানে আল্লাহ আপনাকে এমনভাবে বানিয়েছেন।’ এই ধারণাটি ম্যালকমের চিন্তাধারার একটি বড় অংশ দখল করেছিল। এই বিন্দুর ওপর পরবর্তীতে অনেক চিন্তাবিদ কাজ করেছেন। ফলে এই একবিংশ শতাব্দীতে ‘কালো’ কদর্যতার সমার্থক ধারণাটি অনেক কমে গেছে। ম্যালকম বলেছেন, বিশ্ব আমাদের ভালবাসে না। তাই আমাদের সবার আগে নিজেদেরকে ভালবাসতে হবে। বিশ্বের মানদণ্ডের কাছে নতি স্বীকার করতে করা যাবে না।

এন্ড্রুও মনে করতেন, পুরুষরা মজলুম। যারা কথা বলতে ভয় পায়। বঞ্চনার কথা স্বীকার করতে পারে না প্রকাশ্যে। ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে অ্যান্ড্রু তার পুরুষ দর্শকদের সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘মেয়েরা শক্তিশালী এবং ধনবান পুরুষদের ভালবাসে। দুর্বলদের ঘৃণা করে। পরিসংখ্যানও এটিই বলে। তাই আপনাকে ধনী এবং শক্তিশালী হতে হবে। বডি বিল্ড করতে জিমে যেতে হবে, পেশী তৈরি করতে হবে, যাতে মহিলারা আপনাকে ভালবাসে।’ এন্ড্রুর বক্তৃতা বিপ্লবী বা বিদ্যমান মতাদর্শিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং এই ব্যবস্থার সবচেয়ে উগ্র ও খোলামেলা অভিব্যক্তি। অ্যান্ড্রু স্পষ্টভাবে বলেছেন, আমরা যে পশ্চিমা বিশ্বে বাস করি, তার কেন্দ্রবিন্দেুতে থাকে নারী। তাই একজন পুরুষ তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করতে পারে, তা হল নারীকে প্রভাবিত করা এবং তার প্রশংসা পাওয়ার জন্য তাকে শারীরিক এবং আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করা।

তবে ইসলাম গ্রহণের পর তার এ ধারণার পরিবর্তন ঘটেছিল। ইসলাম গ্রহণের পরে এন্ড্রু তার অনেক সংলাপে জোর দিয়েছিলেন, পুরুষদের সুখ আনতে পারে কেবল আধ্যাত্মিক সমাধান এবং ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ।

অ্যান্ড্রুর বুদ্ধিমত্তা, তীক্ষ্ণতা এবং তার ধারণা উপস্থাপনে কমেডির ব্যবহার আমেরিকান দর্শকদের ম্যালকমের এক ঝলকের কথা মনে করিয়ে দেয়। ম্যালকমের মতো তার চারপাশেও ভীড়। তিনি বলেন, ‘এখনও তার নতুন ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি শেখার এবং পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।’ তার ইসলাম গ্রহণের পর অনেক মুসলিম আশা করেছিল, এন্ডুর পাবলিসিটি মুসলমানদের কাজে লাগবে। তার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের বিষয়টি আরও টাইমলাইটে আসবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মুসলিম প্রচারকরা তার ইসলামের বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আসলে, আরও সময় গেলে বুঝা যাবে, অ্যান্ড্রু ইসলামটাকে আসলেই মন থেকে গ্রহণ করেছেন, নাকি নিতান্তই পাবিলিসি পাওয়ার জন্য করেছেন।

সূত্র: আল-জাজিরা

The post অ্যান্ড্রু টেট-ম্যালকম এক্স: দুই আমেরিকান নওমুসলিমের গল্প appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%85%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a1%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%81-%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%9f-%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%95%e0%a6%ae-%e0%a6%8f/

Tuesday, November 22, 2022

বাবুগঞ্জে বিএনপি নেতার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা

ফাতেহ ডেস্ক:

বরিশালের বাবুগঞ্জে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিহত মারুফা বেগমের বাবা আইউব আলী বাবুগঞ্জ থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহবুবুর রহমান।

তিনি জানান, মামলায় নিহতের স্বামী মামলায় মিলন ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মারুফাকে হত্যা ও হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিলনের সাবেক স্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মিলনকে পুলিশ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এর আগে বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামে সোমবার (২১ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মিলনের ভাই সবুজ খান জানান, মিলন এলাকায় রড সিমেন্টের ব্যবসা করেন। তিনি উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের দুটি শিশু সন্তান আছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে বাসার কলাপসিবল গেট ভেঙে ডাকাতদল প্রবেশ করে। ডাকাতরা বাসায় থাকা আড়াই লাখ টাকা ও তিন ভরি সোনার গয়না লুট করতে গেলে মারুফা বাধা দেয়। তখন তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এসময় মি‌লনকেও কুপিয়ে আহত করে ডাকাতরা।

ওসি মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফরের চেষ্টা চলছে।

The post বাবুগঞ্জে বিএনপি নেতার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%97%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%8f%e0%a6%a8%e0%a6%aa%e0%a6%bf-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8/

ফেসবুক থেকে সরানো হচ্ছে ধর্মীয়-রাজনৈতিক বিশ্বাসের অপশন

ফাতেহ ডেস্ক:

প্রোফাইলের ‘ইন্টারেস্টেড ইন’ অপশন থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরিয়ে ফেলছে ফেসবুক। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বড় ধরনের এই পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। নতুন আপডেটের ফলে ফেসবুকের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের অপশনগুলো আর প্রোফাইলে দেখা যাবে না।

ব্যবহারকারীদের নোটিফিকেশন পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, ১ ডিসেম্বর থেকে ‘অ্যাড্রেসেস’, ‘ইন্টারেস্টেড ইন’, ‘রিলিজিয়াস ভিউজ’ এবং ‘পলিটিক্যাল ভিউজ’ ঘরের তথ্যগুলো আর প্রোফাইলে দেখা যাবে না।

এতদিন ব্যবহারকারীর তাদের রাজনৈতিক ও ধর্ম বিশ্বাসের মতো ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত ফেসবুকের ‘ইন্টারেস্টেড ইন’ক্যাটাগরিতে শেয়ার করার সুযোগ পেতো। ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার মুখপাত্র এমিল ভ্যাসকেজ প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট গিজমোডোকে বলেছেন, ব্যবহারকারীদের কাজ সহজ করার লক্ষ্যে এ পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে।

যেসব ব্যবহারকারী আগে এসব তথ্য শেয়ার করেছেন, আমরা তাদের নোটিফিকেশন পাঠিয়ে জানাচ্ছি- এই শ্রেণিগুলো মুছে দেওয়া হবে। এই পরিবর্তনে কারও নিজে থেকে এসব তথ্য ফেসবুকের অন্যান্য জায়গায় শেয়ার করার সক্ষমতা প্রভাবিত হবে না।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

The post ফেসবুক থেকে সরানো হচ্ছে ধর্মীয়-রাজনৈতিক বিশ্বাসের অপশন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%95-%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8b-%e0%a6%b9%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%a7/

৭ দিনেও কৃষকের লাশ দেয়নি বিএসএফ

ফাতেহ ডেস্ক:

ফেনীর পরশুরামের বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত কৃষক মেজবাহ উদ্দিনের (৪৭) মরদেহ সাত দিনেও ফেরত দেয়নি বিএসএফ। তার মরদেহ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন স্ত্রী, তিন কন্যা সন্তানসহ স্বজনরা।

পরশুরাম থানার ওসি (তদন্ত) পার্থ প্রতিম দেব বলেন, গত বুধবার রাত ৩টার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের সমাঝোতা বৈঠকের পর ভারতের সীমারেখার মধ্যে থাকা লাশটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার লাশ ফেরত দেওয়া হবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিলেও সোমবার রাত পর্যন্ত ফেরত দেয়নি।

মেজবাহ উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, গত ১৩ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আমার স্বামী বাঁশপদুয়া গ্রামের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধান কাটতে যান। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলে তাকে কিল-ঘুষি এবং লাথি দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর বিষয়টি এলাকার লোকজন ও স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত ফাঁড়ি এবং পরশুরাম থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানাই।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার সকালে মেজবাহ উদ্দিনের লাশ ভারতীয় সীমান্তের একশ গজের মধ্যে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা বিজিবিকে জানায়।

ফেনীর ৪ বিজিবির গুথুমা সীমান্ত ফাঁড়ি সূত্র জানায়, বিএসএফের সাঙ্গে লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে যোগাযোগ ও পতাকা বৈঠক হয়েছে। গত বুধবার রাত ৩টার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের সমাঝোতার পর ভারতের সীমারেখার মধ্যে থাকা লাশটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার লাশ ফেরত দেওয়া হবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিলেও সোমবার রাত পর্যন্ত ফেরত দেয়নি।

ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। সম্ভবত বিএসএফ আইনি পক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। এজন্য লাশ দেয়নি।

The post ৭ দিনেও কৃষকের লাশ দেয়নি বিএসএফ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a7%ad-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%93-%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%b7%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b6-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8%e0%a6%bf/

ইহরামের কাপড়ে বিদায়: যেমন ছিলেন হাজী সাহেব হুজুর

রাকিবুল হাসান নাঈম:

তিনি হাজী সাহেব হুজুর নামে প্রসিদ্ধ। বাইতুল্লাহর প্রেম এবং সবুজ গম্বুজের ভালোবাসার ছটা সবসময় দ্যুতি ছড়াতো তার চোখেমুখে। খুব সাদামাটা চলন, বিনয়ী বলন। এই লালবাগ মাদরাসায় তার শিক্ষকতার বয়স অর্ধ শতাব্দী। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় তিনি কিছুই চাইতেন না। বলতেন, ‘যখন শুনবা, তোমাদের হাজী সাহেব হুজুর এন্তেকাল করেছেন, তখন তোমরা একবার সূরা ফাতিহা ও তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করবা।’ যেন প্রস্তুত হয়েই ছিলেন পরম প্রভুর সাক্ষাতের জন্য।

তিনি জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার সদরে শুরা ও শায়খুল হাদিস মাওলানা হাজী হাবীবুর রহমান। ১৬ নভেম্বর, মঙ্গলবার বেরিয়েছিলেন ওমরার উদ্দেশ্যে। গায়ে ইহরামের শুভ্র সফেদ কাপড়। কিন্তু ইহরামের ডানায় কাবার আকাশে উড়াল দেয়া হলো না তার। ডাক এসে গেলো পরম প্রভুর, ডাক এসে গেলো জান্নাতের। এয়ারপোর্ট গিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় দাঁড়ানো অবস্থায় স্ট্রোক করলেন। চারদিন চিকিৎসায় থাকার পর ইন্তেকাল করলেন ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ১২.২০ মিনিটে।

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত মেজাজের ধীর-স্থির একজন মানুষ। আত্মীয়তার সম্পর্কে তিনি ছিলেন হযরত হাফিজ্জী হুজুর রহ-এর নাতনি-জামাই। তার তিন সন্তান এবং এক মেয়ে।

হুজুরকে নিয়ে কথা হয় তার দীর্ঘদিনের খাদেম মাওলানা হেলালুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি হুজুরের কাছাকাছি ছিলাম। বিশেষ করে মেশকাত ও দাওরার বছর। হুজুর দরসে এলে আমি তার জন্য পান কিনে আনতাম। আমি যেদিন ক্লাসে থাকতাম না, হুজুর আমার খোঁজ নিতেন। আমি তার চুল কেটে দিতাম। পরিবারের বাজারসদাই করতাম। এমনতি তিনি কুরবানির গরু কিনতে গেলেও সঙ্গে আমাকে নিয়ে যেতেন। যতটুকু দেখেছি, তিনি ছিলেন অত্যন্ত অত্মমর্যাশীল একজন মানুষ। চলনে-বলনে পরিমিতি রক্ষা করতেন। যেন তার চলনে-বলনে তার জীবনের কোনো ক্ষতি না হয়।

তার আরেকটি গুণ ছিল, তিনি সদা সত্য উচ্চারণে ছিলেন আপোষহীন। জুমার খুতবা শুরু করতেন ‘আল হাক্কু মুররুন’ তথা ‘সত্য কথা তিতা’ বাক্যটি দিয়ে। পাশাপাশি তিনি ছিলেন অত্যন্ত রুচিশীল। পোশাকে, খাবারে, আচরণে সবক্ষেত্রে। তার সবকিছুতে রুচির প্রকাশ ঘটতো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় তিনি ছিলেন অনন্য।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে গুণটি তিনি পরম যত্নে আগলে রেখেছিলেন, তা হলো ইলমের পিপাসা। ছাত্র জীবনে তিনি যেমন মেহনতি ছিলেন, ঠিক শিক্ষকতার জীবনেও মেহনতি ছিলেন। তার এক ছাত্র কাতার চলে গিয়েছিল। দেশে ফিরে ছাত্রটি যখন তার সঙ্গে দেখা করতে এল, তিনি তার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন না। অভিমান নিয়ে বললেন, আমরা তোমাদের মানুষ করি। পড়াই। শেখাই। আর তোমরা বিদেশ চলে যাও।

পারিবারিক জীবন

তার পারিবারিক জীবন ছিল সুন্নতে রাসুলের উদাহরণ। মাওলানা হেলালুদ্দিন বলেন, আমি তার পরিবারের সঙ্গেও মিশে গিয়েছিলাম। পারিবারিক জীবন ছিল তার নিতান্তই সাদামাটা। লালবাগে তার বাড়ি দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। কতটা সাধারণ জীবন যাপন করতেন তিনি।

সন্তান প্রতিপালনে হুজুর ছিলেন বেশ যত্নবান। লালবাগ জামেয়ার প্রাক্তন ছাত্র এবং মাকতাবাতুল ইসলামের কর্ণধার মাওলানা আহমাদ গালিব বলেন, হাজি সাহেব হুজুরকে সেই ক্ষুদ্রকাল থেকে চিনি, জানি। ৯০-এর দশকে যখন লালবাগে মুসা হুজুরের কাছে পড়ি তখন হাজি সাহেব হুজুরের তিন ছেলে ছিলেন আমার সহপাঠী; মাওলানা ইবরাহিম, মাওলানা ইসমাইল ও মাওলানা ইসহাক। মাওলানা ইবরাহিম জামিয়াতুস সালামের সিনিয়র শিক্ষক, মাওলানা ইসমাইল সাহবানিয়ার শিক্ষক, মাওলানা ইসহাক জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগের শিক্ষক এখন। হুজুর তার সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলেছেন।

লালবাগ জামেয়ার ফারেগ মাওলনা মাহমুদুল ইসলাম খান বলেন, হুজুর সন্তানদেরকে সুচারুরূপে পরিচালিত করতেন। ফলে তার সব সন্তানই আলহামদুলিল্লাহ যু ইসতি’দাদ ও বাআখলাক হয়েছে। বড় ও ছোট ছেলে উপমহাদেশের প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের ঘনিষ্টজন।

শিক্ষকতার জীবন

তার শিক্ষকতা বয়স অর্ধ শতাব্দী। তার কাছে পড়েছে হাজার হাজার ছাত্র। কিন্তু এই দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে কোনো ছাত্র তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। এতটাই একনিষ্ঠতার সঙ্গে পড়াতেন তিনি।

লালবাগ জামেয়ার ফারেগ আলেম লেখক মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর হুজুরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, হাজী সাহেব হুজুর অত্যন্ত নরমদিল মানুষ ছিলেন। আমার মুহতারাম উস্তাদ ছিলেন তিনি। মিশকাত জামাতে তাফসিরে বায়জাভি পড়াতেন। দাওরা জামাতে পড়াতেন তরিমিজি শরিফ। ছোটখাটো মানুষটা দরসে আসতেন সাদাসিধেভাবে। তাঁর চলন-বলন, কথা-কাজে কখনো ‘বহুত বড় আলেম’ টাইপের প্রভাব ছিল না। তিনি বড় একটা ওয়াজ-মাহফিলে যেতেন না। নাম কামানোর সস্তা প্রবণতা থেকে নিজেকে হামেশা পরহেজ করে চলতেন।

শিক্ষকতায় হুজুরের একনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর বলেন, মুফতী আমিনী রহ. সময়কালীন লালবাগ মাদরাসা মানেই রাজনীতি, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সবাই হয়তো মনে করতো, লালবাগ মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা নিশ্চয় সবসময় রাজনীতির ডামাডোলে সময় কাটায়। মোটেও এমন কোনো প্রবণতা ছিল না। মুফতী আমিনীর রহ.-এর সময়কালে তিনি কেবল একাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। তাঁর সঙ্গে মাদরাসার তিন-চারজন শিক্ষক ছিলেন যারা সবসময় সঙ্গ দিতেন। এছাড়া বাদবাকি আর কোনো শিক্ষকই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতেন না। তাদের কাজ ছিল কেবলই দরস-তাদরিস। হাজী সাহেব হুজুর, আবদুল হাই সাব হুজুর, মুহিব্বুল্লাহ সাব হুজুর, বাবা হুজুর, রহিম সাব হুজুর, মাকসুদ সাব হুজুর এরা কখনোই রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতেন না। পড়া ও পড়ানো ছাড়া তাদের জীবনের আর কোনো মাকসাদই ছিল না। আমিনী রহ. রাজনীতি আর তাদরিস সম্পূর্ণ আলাদা করে রেখেছিলেন। হাজী সাহেব ছিলেন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

লালবাগ জামেয়ার প্রাক্তন ছাত্র এবং মাকতাবাতুল ইসলামের কর্ণধার মাওলানা আহমাদ গালিব বলেন, দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি লালবাগ জামিয়ার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। দরসে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে কিতাব পড়াতেন অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে। হাজি সাহেব হুজুরের একটি কথা মনে পড়ছে। একবার কুরবানির কাজের জন্য ছাত্রদের তারগিবি-তারতিবি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘ভালা কারেগা ভালা পায়েগা, বুরা কারেগা বুরা পায়েগা, সাজা পায়েগা।’ বহুকাল আগের সেই কথা এখনো মনে আছে। জীবনভর তিনি ভালো করে গেছেন, নিশ্চয়ই এখন তিনি ভালোই পাবেন।

লালবাগ জামেয়ার ফারেগ মাওলনা মাহমুদুল ইসলাম খান বলেন, লালবাগ জামেয়ার সবচে প্রবীণ উস্তায ছিলেন তিনি। চলতি বছর জামেয়া শারিফিয়া আরাবিয়ার উস্তাযদের এক ইসলাহী মজমায় হযরত নিজেই বলেছেন, আমি লালবাগ জামেয়ায় এসেছি বাইশ বছর বয়সে। তিনি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে মাদরাসায় ভর্তি হন। এখন আমার বয়স চুরাশি বছর। ৬২ বছর যাবৎ লালবাগ জামেয়ায় আছি। মুহতারাম উস্তাযের কাছে তিরমিযী আউয়াল পড়ার খোশ কিসমত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। পুরো দরসে তাশাহহুদের সুরতে বসে অবনত মস্তকে তাকরির করতেন। সবদিক ফুটিয়ে তুলে তাকরির করতেন। কোন বিষয় অস্পষ্ট রাখতেন না।

মাওলানা হেলালুদ্দিন বলেন, হুজুরের কাছে আমি বাকুরাতুল আদব, বায়জাবি, তিরমিজি এবং বুখারী সানি পড়েছি। হুজুর দরসে বসে টানা পড়াতেন। দরসের সময় ফোন এলে কথা বলতেন না। ফোন রিসিভ করে কয়েক সেকেন্ড দরস শুনিয়ে কেটে দিতেন কল। হাদিসের দরসে বসতেন তাশাহ্হুদের আসনে। হাদিসের দরসে তার যে বিনয় এবং ভক্তি ছিল, তা এখন বিরল। মনে হতো, তিনি হাদিসে একদম ডুবে গেছেন।

আমলি জীবন

হুজুরের আমলি জীবন ছিল অনুসরণীয়। সুন্নতে নববির জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন তিনি। মাওলানা হেলুলুদ্দিন বলেন, হুজুর যখন নামাজে দাঁড়াতেন, বিনয় ফুটে থাকতো চেহারায়। তিনি দীর্ঘ কেয়াম করতেন। ধীরস্থিরভাবে নামাজা আদায় করতেন। তাড়াহুড়া করতেন না।

মুফতী আনসারুল হক ইমরান ফাতেহকে বলেন, হুজুর একজন আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গ ছিলেন। সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। আর ছাত্রদের বলতেন, তোমরা দোয়া কইরো, আল্লাহ যেন আমারে এহরামের কাপড় পরা অবস্থায় মওত দান করেন। গত বুধবার এহরামের কাপড় পরে পরিবার, আত্মীয়, লালবাগ জামেয়ার আসাতিজা ও ছাত্রদের থেকে বিদায় নেন। এয়ারপোর্টে পৌছে বিমানে ওঠার পূর্বমুহূর্ত স্ট্রোক করেন। আজ সেই ইহরাম পরিধান অবস্থায় চিরবিদায় নিলেন।

The post ইহরামের কাপড়ে বিদায়: যেমন ছিলেন হাজী সাহেব হুজুর appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%87%e0%a6%b9%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%af%e0%a7%87/

Monday, November 21, 2022

চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৬৪০০ কোটি টাকা

ফাতেহ ডেস্ক:

চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম তিন মাসের ধারাবাহিকতায় অক্টোবরেও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতিতে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অর্থবছরের চতুর্থ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯২ কোটি টাকা কম আদায় করেছে এনবিআর। এর ফলে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা।

এই অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থনীতিবিদরা এই লক্ষ্যমাত্রাকে অস্বাভাবিক বলছেন। তাদের মতে, অর্থবছর শেষে বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে।

এনবিআরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ৯০ হাজার ৯০১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।

বিগত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৭৯ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এই চার মাসে আমদানি ও রপ্তানি থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৭৩৯ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৬ দশমিক ৮৭ কোটি টাকার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

স্থানীয় পর্যায়ে মূসক লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। ৪ মাসে মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ২২৫ কোটি। আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ১৮৪ কোটি টাকার মূসক৷

অন্যদিকে আয়করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। চার মাসে এই খাত থেকে এসেছে ২৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এই আয় গত অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।

The post চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৬৪০০ কোটি টাকা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%98%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a7%ac%e0%a7%aa%e0%a7%a6/

কাতার কেন বিশ্বকাপ আয়োজন করছে?

মুনশী নাঈম:

ফুটবলের সব পথ মিশে গেছে মরুর দেশ কাতারে। বেজে উঠেছে বিশ্বকাপের বাঁশি। এই প্রথম প্রথা ভেঙে শীতকালীন বিশ্বকাপ শুরু হলো। কাতারই মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ, যারা ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, আরববিশ্বেও কাতারই প্রথম। এশিয়ায় অবশ্য এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। প্রথমবার হয়েছিল ২০০২ সালে, যৌথভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে। এই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে রেকর্ড অর্থ ব্যয় করেছে কাতার। দেশটি বলেছে, এবারের ফিফা বিশ্বকাপে তারা ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে মিলিয়ন থেকে বিলিয়নে পা দেওয়ার প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল আমেরিকা। ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ০.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স খরচ করেছিল ২.৩ বিলিয়ন ডলার। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে খরচ করেছিল ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে জার্মানি খরচ করেছিল ৪.৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের খরচ ছিল ৩.৩ বিলিয়ন ডলার। চার বছর পর ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে খরচ করেছিল ১৩.৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে ব্যয় করেছিল ১০.৭ বিলিয়ন ডলার। কাতার এবার সেসব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। রাশিয়ার থেকে প্রায় ১১ গুণ বেশি অর্থ খরচ করেছে তারা।

কিন্তু কেন এমন বিপুল অর্থ ব্যয় করল কাতার? অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফুটবলের এই মহা আয়োজন থেকে লাভের হিসাব কষেই মাঠে নেমেছে তারা।

কোথায় খরচ হলো এত টাকা

বিশ্বকাপের কমিউনিকেশন্স এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফাতমা আল নুয়াইমি বলেন, ‘২০৩০ সালের দিকে তাকিয়ে কাতার পরিকাঠামোগত পরিবর্তন এনেছে। বিশ্বকাপ তারই একটা অংশ। শহরের উন্নয়নের, জাতীয় পরিকাঠামো, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের দিকেও নজর রাখা হয়েছে। আসলে ২০০ বিলিয়ন ডলার কাতার ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের জন্যই খরচ হয়েছে।’

বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে। নতুন করে ছয়টি স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে আয়োজকরা। সংস্কার করেছে দুটি স্টেডিয়াম। খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির জন্য বানাতে হয়েছে অনুশীলনের জায়গা। সেসব আধুনিকিকরণেও ব্যয় হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। স্টেডিয়ামগুলো হলো: ১. লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম, ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার। ২. আল-বায়াত স্টেডিয়াম, আল-খোর (ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার)। ৩. অ্যাডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, আল-রাইয়ান (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)। ৪. আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম, আল-রাইয়ান (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)। ৫. খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, দোহা (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)। ৬. আল-থুমামা স্টেডিয়াম, দোহা (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)। ৭. স্টেডিয়াম ৯৭৪, দোহা (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)। ৮. আল-জানুব স্টেডিয়াম, আল-ওয়ারকাহ (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, মোট অবকাঠামোগত ব্যয়ের মধ্যে কেবল স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যয় প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো বিশ্বকাপেও এত ডলার খরচ করেনি। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর মতে, এখন পর্যন্ত সেরা বিশ্বকাপ এটি।

ফিফার কাছে যে পরিকল্পনা কাতার দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছে, শুধু ফুটবলের অবকাঠামো নির্মাণে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে তারা। কিন্তু আদতে খরচ করেছে ৬.৫ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার। ইউএস স্পোর্টস ফাইন্যান্স কনসালটেন্সি ফ্রন্ট অফিস স্পোর্টসের মতে, বাকি প্রায় ২১০ বিলিয়ন ডলার বিমানবন্দর, নতুন রাস্তা, হোটেলসহ উদ্ভাবনী হাব এবং অত্যাধুনিক পাতাল পরিবহনের উন্নয়নে ব্যয় করেছে কাতার। শুধুমাত্র দোহাতেই, ‘দ্য পার্ল’ নামে আবাসন কমপ্লেক্সে ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে এবং দোহা মেট্রোতে খরচ হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়ার নিউজ এজেন্সি টাসের মতে, কাতারের অর্থমন্ত্রী স্বীকার করছেন প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে অবকাঠামো নির্মাণে।

স্টেডিয়াম ছাড়াও কাতার ১০০ টিরও বেশি নতুন উচ্চ-স্তরের এবং বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করেছে, যার মোট কক্ষের সংখ্যা ৩০ হাজার। এছাড়াও তৈরী করা হয়েছে এপার্টমেন্ট, ভিলা এবং আবাসিক ইউনিট। প্রস্তুত করা হয়েছে অসংখ্য ভাসমান হোটেল। সিএনবিসির পর্যবেক্ষণ অনুসারে, বিশ্বকাপ চলাকালীন একটি হোটেল-কক্ষের দাম রাতপ্রতি ৫ হাজার ডলার করে পড়ছে। যেটা তিন তারকা এবং দুই তারকা হোটেলে ৫০০ থেকে ২ হাজার ডলারের মধ্যে ছিল।

পরিবহন এবং যোগাযোগের জন্য অনেক হাইওয়ে নির্মাণ ছাড়াও সাইকেল এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য পথ প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে কাতার খুলেছিল দোহা মেট্রো টানেল। যাতে খরচ হয়েছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এটি ৭৬ কিমি দীর্ঘ। ৩৮টি সেটশনে থামে। যে জায়গাগুলোতে বিশ্বকাপের আয়োজন, সেগুলো অতিক্রম করেই যায়।

কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে তৈরী করেছে স্মার্ট শহর এবং কৃত্রিম দ্বীপ। রাজধানী দোহার কেন্দ্র থেকে ১৬ কিমি দূরে, কাতার ‘লুসাইল’ আধুনিক শহরটিকে ভবিষ্যতের স্মার্ট সিটির মডেল হিসাবে তৈরি করেছে। খরচ হয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্মার্ট শহর হয়ে উঠেছে এটি। এই শহরের স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। এই শহরটি ২২টি অতি-বিলাসী আন্তর্জাতিক হোটেল, দুটি বড় গল্ফ কোর্স, ১৯টি শহরতলির সমন্বয়ে গঠিত। এতে রয়েছে পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, বাণিজ্যিক সুবিধা এবং ক্রীড়া সুবিধা। প্রধানত প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সবুজ পরিবেশের উপর নির্ভর করে শহরটি ডিজাইন করা হয়েছে। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাতারি ঐতিহ্য। এছাড়াও ১৫ বিলিয়নেরও বেশি খরচে তৈরী করা হয়েছে কৃত্রিম পার্ল দ্বীপ। এতে রয়েছে আবাসিক টাওয়ার, ভিলা এবং কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেল।

খেলার চেয়েও বেশি কিছু

কাতার কি কেবল বিনোদনের লক্ষে এত এত ডলার খরচ করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে রয়টার্সকে কাতারের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, কাতার তার মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপকে কেবল একটি ক্রীড়া ইভেন্টের চেয়ে অনেক বেশি কিছু মনে করে। দেশটি মনে করে, এটি তার জন্য একটি প্রধান ‘বিপণন লঞ্চ প্যাড’ হিসাবে কাজ করবে।’

ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের একজন ফেলো কারেন ইয়াং বলেন, এটি একটি একটি দুর্দান্ত বিপণন। যা পর্যটন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে।

কাতার আশা করছে, এই বিশ্বকাপ মৌসুমে দেড় মিলিয়ন পর্যটক পাবে তারা। দোহা এবং অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থাগুলির আশ্বাস অনুযায়ী, শুধুমাত্র পর্যটন খাত থেকে উৎপন্ন রাজস্ব প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়নে পৌঁছবে। বিশ্বকাপের সাথে যুক্ত পর্যটন ব্যয় এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম দেশের জিডিপিতে ১.৫% যোগ করবে। এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আশা করেছিল যে, কাতারি অর্থনীতি এই বছর ৩.৪% হারে বৃদ্ধি পাবে এবং আগামী বছরগুলিতে ৪.৪% হারে বৃদ্ধি পাবে। কারণ বিশ্বকাপ আয়োজনের পর দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ ঘটবে। কাতারের লক্ষ হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৬ মিলিয়ন পর্যটক নিয়ে আসা।

বিশ্বকাপের পর কাতারে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের ফলে একটি দুর্দান্ত পর্যটন-সুবিধা পেয়েছিল দেশটি। ২০১৯ সালে বছরে দেশটির পর্যটক হয়েছিল ১০ মিলিয়ন। যা মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ।

আমেরিকান ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ম্যাগাজিনের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে এতকিছু উন্নত করেছে বিশ্বকাপ শেষে স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে। ব্যবসা, পরিবহন ও বাণিজ্য উদ্যোগের পরিধি সম্প্রসারণ করতে।

কাতারের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক অ্যালেক্সিস আন্তোনিয়াদেস বলেছেন, এখন কাতারের সময় এসেছে বিশ্বের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করার, প্রতিভা এবং কোম্পানিকে আকর্ষণ করার, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করার।

টিকেট থেকে কামাই

ফিফা জানিয়েছে, আট স্টেডিয়ামে মোট তিন মিলিয়ন টিকেট তারা বিক্রি করেছে। শুধু টিকেট বিক্রি থেকেই ফিফা রেকর্ড রেভেনিউ পেতে পারে। রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকেট বিক্রি থেকে ফিফার আয় ছিল ৫.৪ বিলিয়ন ডলার। এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেই রিপোর্টে এসেছে। এর পেছনে কারণ, ম্যাচ টিকেটের দাম বৃদ্ধি।

জার্মানির ক্রীড়া ক্রোড়পত্র আউটফিটার এক গবেষণায় বলেছে, ২০১৮ সালের টিকিটের থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দামে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কিনেছে দর্শকরা। ফাইনালের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম পড়েছে ৬৮৪ পাউন্ড। সর্বোচ্চ ৫ হাজার পাউন্ড ছাড়িয়ে। এছাড়া ম্যাচপ্রতি গড় টিকিটের মূল‌্য ২৮৬ পাউন্ড, রাশিয়া বিশ্বকাপে যা ছিল ২১৪ পাউন্ড।

কিলার স্পোর্টসের ভাষ্যমতে, ‘শেষ ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি টিকিটমূল‌্য দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন সমর্থকরা। ফাইনালে যারা টিকিট পেয়েছেন তারা শেষ চার বছরের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করছে।’

ধারণা করা হচ্ছে, শুধু টিকিট থেকেই ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করবে আয়োজকরা। এছাড়া ২ লাখ ৪০ হাজার হসপিটালিটি প্যাকেজ বিক্রি করেছে আয়োজকরা। এছাড়া ব্রডকাস্টটিং স্বত্ব, স্পন্সর স্বত্ব থেকেও বিশাল আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে কাতারের।

The post কাতার কেন বিশ্বকাপ আয়োজন করছে? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%aa-%e0%a6%86%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%8b%e0%a6%9c/

বিদ্যুতের দাম বাড়লো ২০ শতাংশ

ফাতেহ ডেস্ক:

পাইকারি পর্যায়ে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। আজ (সোমবার) বিদ্যুতের পাইকারি দাম ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

এর ফলে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। আগামী বিল মাস ডিসেম্বর থেকেই নতুন এই মূল্য কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন।

বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করেছিল। এরপর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে। ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। প্রায় ৫ মাস পর গত ১৩ অক্টোবর বিইআরসি জানায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় পিডিবির আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

১৩ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আরও বলেন, পিডিবি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা অস্পষ্ট ছিল। তবে আজকের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তারা রিভিউ আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদেরও নিজেদের সব তথ্য স্পষ্ট ও নতুন করে উত্থাপন করে রিভিউ আবেদন করতে হবে। তারপর আইন যা বলে আমরা সেটিই করবো। এ নিয়ে আরেকটি গণশুনানিও হতে পারে বা সরাসরি বিবেচনায়ও আনা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২ নভেম্বর পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ৬ নভেম্বর বিইআরসির সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সফরকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় বিদ্যুতের দাম, ভর্তুকি ও পিডিবির লোকসান নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর কমিশনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে পিডিবি।

আজ (সোমবার) সংবাদ সম্মেলন করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেন বিইআরসি চেয়ারম্যান। এসময় কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য আবু ফারুক, সদস্য মকবুল ই ইলাহী, সদস্য বজলুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির ১৪-১৫ টাকা খরচ হচ্ছে। তাই দিন দিন লোকসান বাড়ছে সংস্থাটির। পিডিবি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের লোকসান ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় লোকসান। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) লোকসানের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এদিকে পাইকারিতে দাম বাড়ানো হচ্ছে- এমন খবরে বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন তৈরি করছে। পাইকারি বিদ্যুতের দর যতটুকু বাড়বে, তা ধরেই গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে ৬ বিতরণ কোম্পানি। এসব প্রস্তাবের ওপর শুনানি করে নতুন মূল্য ঘোষণা করবে বিইআরসি।

The post বিদ্যুতের দাম বাড়লো ২০ শতাংশ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a7%a8%e0%a7%a6-%e0%a6%b6/

Saturday, November 19, 2022

মুফতি রফি উসমানীর দৃষ্টিতে দেওবন্দি সিলসিলা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ইন্তেকাল করেছেন দেওবন্দি সিলসিলার অন্যতম আলেম মুফতি রফি উসমানি। তার ইন্তেকালের মাধ্যমে কর্মবহুল একটি জীবনের সমাপ্তি ঘটলো। তিনি পাকিস্তান তো বটেই, সমকালিন মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ আলেমদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার গ্রহণযোগ্যতার বিভিন্ন কারণ বলা যেতে পারে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো—তিনি ঘরানানির্বিশেষে ইসলামের খেদমতে মনোযোগী ছিলেন। তিনি তার চিন্তাগত অবস্থান পেশ করতেন বিনাদ্বিধায়, শক্ত পাটের বুননে।

দেওবন্দি সিলসিলা কি

তিনি ছিলেন দেওবন্দি সিলসিলার অন্যতম ধারক ও বাহক। দেওবন্দি সিলসিলার পরিচয় নিয়ে তার ছিল সুস্পষ্ট বক্তব্য। তিনি বলতেন, এই উপমহাদেশে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্যতম ধারক এবং বাহক উলামায়ে দেওবন্দ। তাদের কুরবানীর বদৌলতে এই অঞ্চলে দ্বীনের প্রচার ও হেফাজত হয়েছে সর্ববৃহৎ পরিসরে। সাধারণভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত যা, উলামায়ে দেওবন্দও তা। দেওবন্দিয়ত-এর মাঝে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বাইরের কিছু নেই।

তিনি বলতেন, আপনি ফিকহের কিতাব খুলে দেখেন, প্রাচীন ফতোয়ার কিতাব খুলে দেখেন, দেখবেন, তারা যা বলছেন, দেওবন্দের বুজুর্গরাও তা বলছেন। সুন্নতের অনুসরণই দেওবন্দিয়ত। দেওবন্দিয়ত নতুন কোনো ফেরকা নয়। দেশভাগের আগে বারো বছর বয়স পর‌্যন্ত আমি দেওবন্দে পড়েছি। আমার বাবার কাছে বোগদাদি কায়দা পড়েছি দেওবন্দের ইফতা বিভাগে বসে। দেশভাগের পর যখন পাকিস্তান চলে এলাম, আমি আমার নামের সাথে দেওবন্দী যোগ করতাম। বাবা কিছু বলতেন না। কিন্তু যখন দাওরা ফারেগ হলাম, তিনি নামের শেষে দেওবন্দি যোগ করতে নিষেধ করে দিলেন। বললেন, ‘এর থেকে অন্ধ ফিরকাভক্তির গন্ধ আসে’।

আমাদের আকাবিরগণ কেউ নামের শেষে দেওবন্দী উপাধি যোগ করতেন না। যোগ করা পছন্দও করতেন না। কারণ, এই উপাধি ফেরকার দিকে ইঙ্গিত করে। এই উপাধি কেবল শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী ব্যবহার করেছেন। তিনি দেওবন্দে পড়েছেন এজন্য এই উপাধি ব্যবহার করেননি। বরং তার বাড়ি ছিল দেওবন্দ, থাকতেন দেওবন্দে, তাই এ উপধি ব্যবহার করতেন।

হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়্যব রহ. বলতেন, দ্বীন-ঈমানের মৌলিক বিষয় এবং শরীয়তের শাখাগত বিষয় ও তার রুচি-প্রকৃতির দিক থেকে উলামায়ে দেওবন্দ পরিপূর্ণভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী। তারা নতুন কোনো ফেরকা নয়, নতুন কোনো আকীদা-বিশ্বাসেরও ধারক নয়। তাই রফি উসমানি দেওবন্দে দেয়া এক ভাষণে বলেন, দেওবন্দ কী বুঝতে হলে কারী তায়্যিব রহ. রচিত ‘উলামায়ে দেওবন্দ কা দ্বীনি রুখ আওর মাসলাকী মেযাজ’ পড়তে হবে। এই বইটি সবার পড়া উচিত।

সিলসিলার সঙ্গে সংযুক্তি

মুফতি রফি উসমানি নিজেকে দেওবন্দি সিলসিলার একজন ধারক মনে করতেন। তিনি বলতেন, এই বরকতময় সিলসিলার সংস্পর্শ আমি পেয়েছি।

এক ভাষণে তিনি বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দ সিলসিলা যাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত, তারা হলেন মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, মাওলানা ইয়াকুব আলি এবং মাওলানা কাসেম নানুতবি। তারাই দেওবন্দের মূল আকাবির। তাদের আদর্শকেই বলা হয় দেওবন্দী আদর্শ। তাদের আদর্শ আহলে সুন্নতেরই আদর্শ। তারা তাদের কাজে ও আমলে তার প্রমাণ দিয়েছেন।

এই আদর্শের ব্যাখ্যাতা হলেন শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবি, হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলনা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরি রহ.। তারা দেওবন্দ মাসলাকের ব্যাখ্যাতা। তারা সরাসরি দেওবন্দ প্রতিষ্ঠাতাদের সংস্রব পেয়েছেন। তাদের ব্যাখাতা হলেন শাইখুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি, মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানি, কারী তৈয়্যব সাহেব রহ.। তারা দেওবন্দ মাসলাকের ব্যাখ্যাতাদের ব্যাখ্যাতা। আলহামদুলিল্লাহ, আমারা এই ব্যাখ্যাতাদের সংস্রব পেয়েছি।

দেওবন্দি সিলসিলার বৈশিষ্ট্য

এক ভাষণে রফি উসমানি বলেন, দেওবন্দি সিলসিলার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো সবকিছুতে ‘ইতেদালে শরঈ’ অবলম্বন করা। বিনয়-যুহদ, আবদিয়্যাত ও সাদেগির মধ্যে ইতিদাল, কিতাবুল্লাহ ও রিজালুল্লাহর মধ্যে ইতিদাল।

তিনি বলেন, দেওবন্দি সিলসিলার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো ইলমে গভীরতা। তবে শুধু ইলমে গভীরতা আল আজহারেও আছে। তাহলে দেওবন্দের মধ্যে বিশেষত্ব কী। বিশেষত্ব হলো, এখানে ইলমের গভীরতার সঙ্গে আছে আমলও। ইলম বা আমল দেওবন্দি সিলসিলার বড় একটি বৈশিষ্ট্য। দেওবন্দি সিলসিলার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সুন্নতের অনুসরণ। দেওবন্দি সিলসিলা মূলত সুন্নতেরই অনুসরণ করে। তারা আলাদা কোনো ফেরকা না।

থানভি-মাদানি দ্বন্দ্ব

থানভি-মাদানি দ্বন্দ্ব অপছন্দ করতেন মুফতি রফি উসমানি। তিনি দেওবন্দে দেয়া এক ভাষণে বলেন, থানভি-মাদানি যদি এই গ্রুপিং দেখতেন, বড্ড বেজার হতেন। তারা কখনও এটা সমর্থন করতেন না। দেশভাগ নিয়ে মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি এবং আশরাফ আলী থানভি রহ.-এর মাঝে বিরোধ ছিল। কিন্তু তারা একে অপরকে শ্রদ্ধা করতেন। ভালোবাসতেন। কেউ কখনও কাউকে অশ্রদ্ধা করেননি।
তিনি বলেন, থানভি-মাদানি নামটা খারাপ না। বড্ড মর্যাদাশীল নাম। কিন্তু গ্রুপিংয়ে ব্যবহার হবার কারণে এটা খারাপ। যেমন একবার আনসার-মুহাজিরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছিল। আনসাররা তাদের গোত্রদের ডেকেছিল ‘ইয়া লাল আনসার’ বলে। মুহাজিররা ডেকেছিল ‘ইয়া লাল মুহাজির’ বলে। রাসুল জানতে পেরে বলেছিলেন, এটা আর বলবে না। অথচ আনসার-মুহাজির নামটা কিন্তু খারাপ না, বরং মর্যাদাশীল। কিন্তু গ্রুপিং করার কারণে রাসুল নিষেধ করেছেন।

তিনি বলেন, এই বিষয়ে শাইখুল হাদিস জাকারিয়া রহ.-এর বই ‘আল্ এ’তেদাল ফী মারাতিবির রিজাল’ পড়া উচিত সবার। তাহলে বুঝা যাবে, কিভাবে আকাবিরদের মতভেদে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা যাবে।

তিনি বলেন, আকাবিরদের মধ্যে এমন গ্রুপিং ছিল না। মাদানি সাহেব ছিলেন অখণ্ড ভারতের পক্ষে। শিব্বির আহমদ ‍উসমানি ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। আমার বাবাও ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। মাদানি রহ. যখনি ইংরেজ আমলে জেল থেকে ছাড়া পেলেন, আমার বাবা গিয়েছিলেন তাকে দেখতে। সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম। মাদানি সাহেবের সঙ্গে মুসাফাহা করেছিলাম। সেটাই ছিল তার সঙ্গে শেষ দেখা। আমার বাবা এবং তিনি দুই মতের দাবিদার হলেও শ্রদ্ধা বজায় রেখেছেন। দেওবন্দের শাইখুল আদব আল্লামা ইজাজ আলী রাজনীতি না করলেও তিনি মাদানি সাহেবের পক্ষে ছিলেন। একদিন আমাদের ঘরে পাকিস্তানপন্থী উলামায়ে কেরাম এলেন। আমার বাবার কাছে পরামর্শ চাইতে কোনো একটা বিষয়ে। আমার বাবা তাদেরকে বললেন, বিষয়টি নিয়ে আল্লামা ইজাজ আলীর সঙ্গে কথা বলা দরকার। অথচ তারা ছিলেন দুই মতবাদের। কিন্তু তাই বলে তাকে অশ্রদ্ধা করেননি। তার কাছে গিয়েছেন। এই যে মধ্যপন্থা, এটাও দেওবন্দি সিলসিলার গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য।

The post মুফতি রফি উসমানীর দৃষ্টিতে দেওবন্দি সিলসিলা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%ab%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%b0%e0%a6%ab%e0%a6%bf-%e0%a6%89%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%83%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf/

Friday, November 18, 2022

তিনি ছিলেন দেশের জন্য রত্ন: পাক রাষ্ট্রপতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম মুফতি রফি উসমানির ইন্তিকালে পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি ডক্টর আরিফ আলভির গভীর শোক জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ডক্টর আরিফ আলভি প্রয়াত আলেমের ধর্মীয় ও সাহিত্য সেবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ধর্মতত্ত্ব, হাদিস ও তাফসির ক্ষেত্রে মূল্যবান সেবা দিয়েছেন। তিনি ছিলেন দেশের জন্য রত্ন। ধর্ম, শিক্ষা ও বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে তার সেবা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে

রাষ্ট্রপতি মহান আল্লাহর কাছে মরহুমের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেয়ার দোয়া করেন।

শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯.২৫ মিনিটের দিকে করাচিতে তিনি ইন্তিকাল করেন।

মুফতি মুহাম্মদ রফি উসমানি জন্ম ১৯৩৬। পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব। তিনি পকিস্তানের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতি, দারুল উলুম করাচীর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ শফী উসমানি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর সন্তান। তিনি পাকিস্তানের গ্রান্ড মুফতি ও পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম করাচীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিখ্যাত দুই ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি মুহাম্মাদ তাকি উসমানি ও মাওলানা ওয়ালি রাজির ভাই। এছাড়াও তিনি জামিয়াতুল উলামা, ইউ এস এ -এর একজন সন্মানিত সদস্যও ছিলেন।

The post তিনি ছিলেন দেশের জন্য রত্ন: পাক রাষ্ট্রপতি appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%9b%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%8d/

ইসলাহি জোড়: প্রথাগত মাহফিলের বাইরে বিশুদ্ধতার আয়োজন

রাকিবুল হাসান নাঈম:

একটি গাড়ি এসে থামলো মাদরাসার সামনে। রাত তিনটা। গাড়িটি এসেছে রাজশাহি থেকে। ব্যাগ-বিছানা হাতে গাড়ি থেকে নেমে আসছেন মুসল্লিরা। মুসল্লিদের মধ্যে আলেম যেমন আছেন, তেমনি আছেন সাধারণ লোকজনও। তাদের মুখ পড়লে বুঝা যায়, এই শীতের রাতে তারা রাজশাহী থেকে ঢাকা এসেছেন নিতান্তই শখে নয়, এসেছেন শুদ্ধ হবার নিরেট আবেগ নিয়ে। তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের নির্ধারিত খিত্তায় নিয়ে গেলো অভ্যর্থনাকারীরা। তখন গতকালই এসে উপস্থিত মুসল্লিরা কেউ কেউ তাহাজ্জুদের জন্য জেগে উঠছেন।

ঢাকার উপকণ্ঠের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মাদানী নগরে শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী ইসলাহি জোড়। আজ শুক্রবার বাদ ফজর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ফয়জুল্লাহ সন্দ্বীপীর বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় ইসলাহি জোড়ের কার্যক্রম। শনিবার রাত ৯টায় আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথাগত মাহফিলের চেয়ে ভিন্ন অঙ্গিকে পরিচালিত হয় এই জোড়। এ জোড়ে সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। বিশেষ করে দারুল উলুম মাদানী নগরের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইদরিস সন্দ্বীপীর ভক্ত-মুরিদরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে উপস্থিত হন। জোড় শেষে নিজেকে শুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে ফিরে যান তারা।

দারুল উলুম মাদানী নগর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইদরিস সন্দ্বীপী ছিলেন যুগের সংস্কারক। তার মিশন ছিল দাওয়াত, তালিম ও তাজকিয়া। তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে দ্বীনের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে বাংলাদেশ, আমেরিকা ও আবুধাবীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেড় শতাধিক কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্তে গঠন করেছেন তালীমী বোর্ড মাদারিসে কাওমিয়া আরাবিয়া নামের স্বতন্ত্র শিক্ষাবোর্ড। দেশব্যাপী রয়েছে তার অসংখ্য ভক্ত মুরিদান। তাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য আয়োজন করতেন এ বার্ষিক ইসলাহি জোড়। তার ইন্তেকালের পর তার মিশন চালিয়ে নিচ্ছেন তারই সুযোগ্য সন্তান মাওলানা ফয়জুল্লাহ সন্দ্বীপী। এই জোড়টি ৩৮ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

প্রথাগত মাহফিল নয়

প্রতি বছর ইসলাহি জোড়ে অংশ নেন ভারত ও বাংলাদেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। কিন্তু প্রথাগত মাহফিলের মতো অতিথিদের নাম দিয়ে জোড়ের পোস্টার ছাপানো হয় না। কেবল হেন্ডবিল ছাপানো হয় জোড়ের তারিখ উল্লেখ করে।

এবারের জোড়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন ভারতের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দিস আওলাদে রাসূল সায়্যিদ আরশাদ মাদানি। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা সোহরাব আলী কাসেমি। বাংলাদেশী শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত থাকছেন ওলামা বাজার মাদরাসার প্রবীন উস্তাদ মাওলানা নুরুল ইসলাম, কাকরাইলের তাবলীগি মারকাজের মুরুব্বী মাওলানা জুবায়ের আহমাদ, আকবর কমপ্লেক্সের মুহতামিম মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মারকাযুদ দাওয়া ঢাকার শিক্ষাসচিব মুফতি আব্দুল মালেক, রাজশাহীর শীর্ষ আলেম মাওলানা জামালুদ্দিন সন্দ্বীপী ও মুফতি উমর ফারুক সন্দ্বীপী প্রমুখ।

মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মাহবুবুর রহমান ফাতেহকে বলেন, প্রতিদিন মাহফিলের কার্যক্রম ফজরের পর শুরু হয়। সকালে কয়েকজন বক্তার বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক পর্ব শেষ হয়। পরে বেলা ১০টার দিকে মানুষকে নামাজ-কালাম ও প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়। জোহরের পরও শেখানোর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। পরে আসরের আগ থেকে আবার বয়ান শুরু হয়। এশার আগ পর্যন্ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উলামায়ে কেরাম বয়ান করেন। এশার পর আর কোনো আলোচনা হয় না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি, যেন এখানে যারা আসেন, তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার হয়। এ সময়ে আমরা তাদের জন্য এমন আলোচনারই ব্যবস্থা করি, তা তাদের জীবন পরিবর্তনে সহায়ক হবে।

তিনি আরও জানান, আগত মুসল্লিদের সময় যেন যথাযথভাবে কাজে লাগে, সেজন্য মাদরাসার পক্ষ থেকে রয়েছে শিক্ষামূলক নানা উদ্যোগ। মাদরাসার প্রত্যেক কামরার জন্য একাধিক প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা রয়েছে। তারা আগত মেহমানদের নামাজ-কালাম শিক্ষা দেন। প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শেখান। এ সময় তাদেরকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াতেরও মশক করানো হয়।

গোছালো আয়োজন ও মেহমানদারি

জোড়ে আগত মুসল্লিদের থাকার জায়গা ও মেহমানদারি সুষ্ঠুভাবে করার জন্য কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রথমেই পুরো মাদরাসাকে ভাগ করা হয় জেলাভিত্তিক। কোন জেলার মুসল্লিরা কোথায় কোন ভবনে থাকবেন, আঁকা হয় মানচিত্র। মুসল্লিরা এলে অভ্যর্থনাকারীরা তাদেরকে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে তারা বিশ্রাম নেন। মাদরাসার শিক্ষকরা সবসময় টহলে থাকেন। কেউ জায়গা না পেলে ব্যবস্থা করেন তারও।

আগত মুসল্লিদের দেয়া হয় দুইবেলা খাবার। খাবার পরিবেশন করা হয় মাঠেই। এছাড়াও এই মাদরাসার ফুজালা ও আবনাদের জন্য রয়েছে বিশেষ মেহমানদারি। তাদের জন্য বরাদ্দ করা আছে আলাদা রুম, বিছানা, খাবার। তাদের খাবার তাদের রুমে পৌঁছে দেয়া হয়।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নরসিংদি থেকে আসা মুসল্লি হামিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি একজন স্কুল টিচার। স্থানীয় আলেমের কথায় তিনে এই জোড়ে এসেছেন। এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত গোছালো আয়োজন কোথাও দেখিনি। একজন মানুষের যা যা দরকার, তার সবই সরবরাহ করা হচ্ছে মাদরসার পক্ষ থেকে। খাবারের চিন্তা করতে হচ্ছে না, ঘুমানোর জায়গা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। সময়ে সময়ে কেবল মানুষ বয়ান শুনবে, আমলে অংশ নিবে। এবারই প্রথম এলাম। আমি নিয়ত করেছি, প্রতি বছর আসবো।

অন্যবারের তুলনায় মুসল্লি বেশি

এবার অন্যবারের তুলনায় বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাওলানা ইদরিস সন্দ্বীপী রহ.-এর ছেলে এবং মাদরাসার শিক্ষক মুফতি কেফায়াতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এবার শীতও কম, পরিবেশ নাতিশীতোষ্ণ। ফলে মানুষ এসেছে বেশি। আমরা চাই, এ ধরণের শিক্ষণীয় মাহফিলে মানুষ উপস্থিত হোক। যত বেশি মানুষ উপস্থিত হবে, তত মানুষ উপকার বেশি পাবে। তাই এটা আশাব্যঞ্জক।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এবার বিভিন্ন জেলার জন্যে যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে সংকুলান হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। মাদরাসার শিক্ষকরা তাদের জায়গা করে দিচ্ছেন। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে সমাধান করে দিচ্ছেন।

যেখানে ইসলাহি জোড়ের স্টেজ, তার পাশেই মাওলানা ইদরিস সন্দ্বীপী রহ.-এর কবর। তাতে ফুটে আছে হাসনাহেনা ফুল। সৌরভে মৌ মৌ করছে চারদিক। মুসল্লিরা আসছেন, কবর জিয়ারত করছেন, দোয়া করছেন। দৃশ্য দেখতে দেখতে আমিও দাঁড়াই, খানিক সৌরভ নেই। হাসনাহেনার সৌরভমাখা শীতের সকালের তুলনা হয় না।

 

The post ইসলাহি জোড়: প্রথাগত মাহফিলের বাইরে বিশুদ্ধতার আয়োজন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf-%e0%a6%9c%e0%a7%8b%e0%a6%a1%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%a4-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ab/

Thursday, November 17, 2022

মধ্যবর্তী মার্কিন নির্বাচন: রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম প্রার্থীর বিজয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

এবারের মধ্যবর্তী মার্কিন জাতীয় নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৮২ মুসলিম প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম সিনেটরও নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তুরস্ক বংশোদ্ভূত পেনসিলভানিয়ার সিনেটর প্রার্থী ডা. মেহমেদ (মোহাম্মদ) ওজ। খবর দ্য টাইমসের।

যুক্তরাষ্ট্রে এ যাবৎকালে মোট পাঁচজন আরব সিনেটরের দায়িত্ব পালন করলেও এ পর্যন্ত কোনো মুসলিম সিনেটর নির্বাচিত হতে পারেননি। যে পাঁচজন আরব সিনেটর হয়েছেন, তাদের সবাই লেবানন বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। এদের মধ্যে একজন আবার লেবানন ও ফিলিস্তিনের দ্বৈত নাগরিক। কিন্তু তারা সবাই নন-মুসলিম ছিলেন।

মার্কিন টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ওপেরা ইউনফ্রেতে ২০০৪ সালে প্রথমবার এসেছিলেন এ মুসলিম চিকিৎসক। এর পর ২০০৯ সালে তার নামে একটি অনুষ্ঠান চালু হয় টেলিভিশনে। ‘দ্য ডা. ওজ শো’ নামে এ জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে চিকিৎসাবিষয়ক নানা পরামর্শ দেওয়া হয়।

পেনসিলভানিয়ার বর্তমান সিনেট ডেমোক্র্যাট নেতা জন ফেটারম্যানের বিরুদ্ধে লড়েছেন ডা. ওজ। তার পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া মাত্র ২৩ বছর বয়সি নাবিলা সাইদসহ ৮২ মুসলিম প্রার্থী মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

নাবিলা সাইদ ভারত বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী। ২০২০ সালে নির্বাচিত ইলহান ওমর ও রাশিদা তালিবসহ ২১ মুসলিম জনপ্রতিনিধি ছাড়াও মধ্যবর্তী নির্বাচনে আরও ১৬ জন নতুন মুসলিম প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে।

এ ছাড়া রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪৩ মুসলিম প্রার্থী। সব মিলিয়ে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীদের জয়জয়কার।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছে পেনসিলভানিয়া রাজ্যে। এখানে ডেমোক্র্যাট সিনেটরকে হারিয়ে প্রথম মুসলিম সিনেটর হিসেবে জয়লাভ করেন মুসলিম প্রার্থী ডা. ওজ। পেনসিলভানিয়া রাজ্যে মিসর, মরক্কো ও ইরাকসহ বিভিন্ন আরব দেশ থেকে আসা ৮৪ হাজার ৪৭২ জন অভিবাসী আছেন। এদের মধ্যে ৮৩ হাজার ৮১৭ জনই মুসলিম।

এ কারণেই এ আসনে সিনেটর নির্বাচনের প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠেন মুসলিম ভোটাররা। ২০১৬ সালে যে ৬ রাজ্যে বড় ব্যবধানে ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন, পেনসিলভানিয়া ছিল এগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন ও নেব্রাসকা রাজ্যে ট্রাম্পকে পরাজিত করেন বাইডেন।

১৯৫০ সালের পর এ পর্যন্ত ২৮ জন আরব আমেরিকান দেশটির এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ডা. ওজের আগে এ পর্যন্ত কোনো মুসলিম দেশটির সিনেটর নির্বাচিত হতে পারেননি।

মার্কিন টেলিভিশনের জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তুরস্ক বংশোদ্ভূত পেনসিলভানিয়ার সিনেটর ডা. মেহমেদ (মোহাম্মদ) ওজ নতুন ইতিহাস গড়লেন।

The post মধ্যবর্তী মার্কিন নির্বাচন: রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম প্রার্থীর বিজয় appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%80-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be/

ফিলিস্তিনে শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ড, নিহত ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি ভবনে আগুন লেগে শিশুসহ অন্তত ২১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর আল-জাজিরা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার একটি চারতলা আবাসিক ভবনে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা’র সংবাদদাতা জানিয়েছেন, হতাহত বহু মানুষকে ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের নিকটবর্তী শহর বেইত লাহিয়ার ইন্দোনেশিয়ান পাবলিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ভবনটির ভেতরে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এটা থেকে আগুন লাগতে পারে। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস শুক্রবার একদিনের জন্য শোক ঘোষণা করেছেন। এ সময় ফিলিস্তিনের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

তিনি এ ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে সংশ্লিষ্টদের সম্ভাব্য সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

The post ফিলিস্তিনে শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ড, নিহত ২১ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a7%80-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%bf/