মুনশী নাঈম:
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার নৃপেন্দ্র নারায়ণ এন এন হাইস্কুল মাঠে ২ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে কাদিয়ানিদের বার্ষিক সম্মেলন। জেলার ৪৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুসলমানদের অনুকরণে এই সম্মেলনকে তারা ‘ইজতেমা’ বলে অভিহিত করে থাকে।
আলেমরা বলছেন, খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানিরা সু্স্পষ্টভাবে অমুসলিম তথা কাফের। ইসলামবিদ্বেষী আন্তর্জাতিক অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাদিয়ানিরা মুসলিম নাম ও পরিভাষা ব্যবহার করে সাধারণ মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার মিশন চালাচ্ছে। তারা এই সম্মেলন বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এক ভাষণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘কাদিয়ানিরা সর্বসম্মতক্রমে কাফের। তারা অমুসলিম পরিচয়ে তাদের কার্যক্রম চালালে আমরা বাধা দিব না। কিন্তু তারা মুসলিম পরিচয়ে মুসলিম পরিভাষায় তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়, তাই সরকারের উচিত, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা।’
অমুসলিম ঘোষণার দাবি সবার
দলমত নির্বিশেষে সবার দাবি—কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা। অনেকদিন ধরেই কাদিয়ানিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বাংলাদেশের আলেমগণ। আন্দোলনের নিমিত্তে ‘খতমে নবুওয়ত আন্দোলন’ শিরোনামে তৈরী হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় আলেম লেখক ও অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা না থাকার কারণে কাদিয়ানিরা নিজেদের মুসলিম পরিচয় প্রদানের সুযোগ পায়। আর এই পরিচয়কে ব্যবহার করে তারা হজ ও ওমরার মতো ইসলামের একান্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। অথচ অমুসলিমদের জন্য হজ ও ওমরা পালনের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু মুসলিম পরিচয়ের কারণে তারা এই সুযোগটা ব্যবহার করে। এ ছাড়া এই পরিচয়ের কারণে কাদিয়ানিরা মৃত্যুর পর মুসলিমদের কবরস্তানে দাফন এবং জানাজা পড়ার আইনি বৈধতাও পেয়ে যায় । তাই তাদেরকে এই কাজ থেকে নিবৃত করতে হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার কোনো বিকল্প নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাদিয়ানিদের যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়, তাহলে আমাদের ইবাদত ও রীতিনীতির নামানুসারে তারা তাদের ধর্মের ইবাদত ও রীতিনীতির নামকরণ করতে পারবে না। সাধারণ মুসলিমও আর ধোঁকা খাবে না। তারা বুঝতে পারবে, ওরা যা করছে তার সঙ্গে ইসলামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ফলে আমাদের ধর্মীয় অধিকারও আর ক্ষুণ্ন হবে না, যে ব্যাপারে সংবিধানে বলা আছে।’
কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে একমত আহলে হাদীস আলেমরাও। জমঈয়তে আহলে হাদিসের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শহীদুল্লাহ মাদানী ফাতেহকে বলেন, ‘কাদিয়ানিরা যে অমুসলিম, এ ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সকল ওলামায়ে কেরাম একমত। কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনও তারা মুসলিম হিসেবে স্বীকৃত, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা না থাকার কারণে কাদিয়ানিরা এ দেশের সাধরণ মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে চলেছে। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হলেও কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা জরুরি।‘
কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের ঘোষণার দাবিতে বেরলবি ঘরানার নৈতিক সমর্থন আছে বলে জানিয়েছেন সোনাকান্দা দরবার শরীফের খলিফা মাওলানা আবূ তাহের মুহাম্মাদ ছালেহ উদ্দিন। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘কাদিয়ানিরা আমাদের মহানবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবি হিসেবে মানে না। তাই তারা কোনোভাবেই মুসলিম থাকতে পারে না। তারা কাফের। অতএব বাংলাদেশে তারা বসবাস করতে চাইলে অমুসলিম পরিচয়েই বসবাস করতে হবে। রাষ্ট্রকে এ ঘোষণা দিতে হবে যে, তারা অমুসলিম।’
‘খতমে নবুওয়ত আন্দোলন’ কেন সফল হচ্ছে না?
কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে ‘খতমে নবুওয়ত আন্দোলন’ শিরোনামে তৈরী হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এ দাবির প্রতি আছে সবার সমর্থন। তবুও কেন এই আন্দোলন সফল হচ্ছে না?
এ প্রশ্নের জবাবে ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্টের আমির মুফতি শোয়াইব ইবরাহিম ফাতেহকে বলেন, ‘আন্দোলন কিভাবে, কার নেতৃত্বে, কখন কোন কর্মসূচি চলবে, তার পরিকল্পনা লাগে। লাগে ধারাবাহিক কর্মসূচি। কিন্তু আমাদের যতগুলো সংগঠন আন্দোলন করে, তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাই নেই। হুট করে হুজুগ আসে, উপলক্ষ তৈরী হয়, ঝটপট একটা সমাবেশ কিংবা মিছিল হয়ে যায়। পরে সব চুপচাপ। এখন মাঝেমধ্যে আমরা সভা-মিছিল করি, মানুষ ভাবে এটা বুঝি কেবল হুজুরদের আন্দোলন। অথচ, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার আন্দেলনটি সবার। সবাইকে এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ ফাতেহকে বলেন, ‘রাষ্ট্রকে দিয়ে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করাতে হলে তিনটি কাজ নিয়মিত করতে হবে। এক. আন্দোলনে ধারাবাহিক কর্মসূচি লাগবে। দুই. দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। যেহেতু বিষয়টি আদালতের বিষয়। তিন. পার্লামেন্টারি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। তাদেরকে বিষয়টি বুঝাতে হবে। সবাই মুসলিম। আমার যে দাবি, স্পিকারেরও একই দাবি। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করলে তাদের কাছে বিষয়টির গুরুত্ব আরও প্রকটভাবে ধরা পড়বে।’
The post কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হচ্ছে না কেন? appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%98%e0%a7%8b%e0%a6%b7/
No comments:
Post a Comment