Wednesday, January 25, 2023

মুসলিম সভ্যতায় কৌতুক ও কৌতুক অভিনেতা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ইসলাম নিরস কোনো ধর্ম নয়। কঠোর ধর্ম পালনে হাস্যরসকে ইসলাম নিষেধ করেনি। বরং হাসিকে দেখেছে জীবনেরই প্রতিরূপ হিসেবে। রাসুল সা. সাহাবিদের মাঝে মাঝে কৌতুক করে হাসাতেন। সাহাবিরাও হাসতেন। তবে তিনি কখনও মিথ্যা বলে হাসাতেন না। যারা প্রথম শ্রেণীর সাহাবি-তাবেঈ ছিলেন, তারা হাস্যরস জানতেন। হাস্যরস এবং কৌতুককে তারা পাপের কাজ মনে করতেন না।

হাস্যরস বিভিন্ন প্রেক্ষিতে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে করা হয়। কখনও করা হয় বিনোদনের জন্য। কখনও করা হয় কাউকে কিছু শেখানোর জন্য। কখনও রাজনৈতিক ও সামাজিক সমালোচনা করার জন্য হাস্যরস ব্যবহার করা হয়। মুসলিম ইতিহাসে শেষ প্রকারের হাস্যরসই বেশি প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত। জাহিজ ছিলেন মুসলমানদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশিষ্ট সামাজিক সমালোচক। তিনি সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমালোচনায় হাস্যরসের ব্যাপক ব্যবহার করেছেন। আব্বাসীয় খেলাফতকালে ঘটে যাওয়া এক বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের শিরোনাম ছিল জাহিজ ও তার ব্যঙ্গাত্মক সাহিত্য। তখন সংস্কৃতি, ধারণা, জাতি এবং ধর্মের বাধাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বাগদাদসহ অন্যান্য ইসলামি শহরগুলোতে ছিল বিজ্ঞান, শিল্প, কারুশিল্প এবং বাণিজ্যের আসর। ছিল সাহিত্য মজলিস, বিনোদন আসর এবং কৌতুক মাহফিল।

মুসলিম সমাজে হাস্যরস কেবল চিত্তবিনোদন ছিল না। তারা এটিকে মানসিক, জ্ঞানীয় এবং শৈল্পিক করে তোলার চেষ্টা করেছিল। পরে একটা সময় নগরায়ন ঘটার পর হাস্যরস হয়ে ওঠে বিশেষ এক নৈপুণ্য। এই হাস্যরসই পরিণত হয়ে যায় একটি পেশায়। যে পেশার লোকদের কাজই হলো, মানুষকে হাসানো। এই পেশার লোকদেরকে শেখানো হতো, মানুষকে কিভাবে হাসাতে হয়। মানুষ হাসিয়ে তারা উপর্জনও করতে শুরু করে। সম্পদের প্রসারের সাথে সাথে কৌতুক নির্মাতাদের পরিষদ বহুগুণ বেড়ে যায়। কবি ও লেখকরা এই শিল্পে দক্ষতা অর্জন করে। এভাবে এর কার্যক্রম অনুশীলন ও অধ্যয়নের মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণিতে ছড়িয়ে পড়ে।

লেখক ও সাহিত্যিকরা হাস্যরস বিষয়ক বই লিখতে শুরু করে। জাহিজ লিখেন ‘আল মুজাহিক ‘, আল-জুবায়ের বিন বকর আল-কুরাশি লিখেন ‘কিতাবুল ফুকাহাতি ওয়াল মুজাহ’, মুহাম্মদ বিন ইসহাক নাদিম তার ফিহিরিস্ত গ্রন্থে হাস্যরস বিষয়ক নয়টি বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন, ‘এই বইগুলোর লেখক জানা নেই।

ইসলাম পূর্ব যুগ

ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই আরবে হাসি ও কৌতুকের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। কারণ, হাসি-কান্না দুটোই জীবনের সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। সুরা নাজমে আল্লাহ তাআলা বলেছে, ‘তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান; তিনিই মৃত্যু দেন, তিনিই জীবিত করেন।’

অনেক দার্শনিক মানুষের সংজ্ঞাই দিয়েছেন এভাবে: ‘মানুষ এমন প্রাণী, যে নিজে হাসে এবং অন্যকে হাসায়।’ আরবি অভিধানগুলোও হাস্যরস এবং হাসির প্রচুর উপাদানে পরিপূর্ণ। জাহিজ ‘আল বুখালা’ক গ্রন্থে লিখেছেন, আরবের মানুষ তাদের সন্তানের নাম রাখতো ‘যাহহাক’। আরবি অভিধানগুলোও হাস্যরস এবং হাসির প্রচুর উপাদানে পরিপূর্ণ।

প্রাক-ইসলামী যুগে আরবদের ঐতিহ্য হাস্যরস ও হাসির দৃশ্যের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। ‘হায়াতুল হাইওয়ানিল কুবরা’ গ্রন্থে দিন দামিরি লিখেন, মুজাইনা গোত্র হাসসান ইবনে সাবিতের বাবাকে গ্রেফতার করেছিল। মুক্তিপণ হিসেবে তারা একটি ছাগল চাইলো। কিন্তু সাবেতের কওম ছাগলের কথা শুনে রেগে যায়। কিন্তু শেষমেষ ছাগলই দিতে হয়। তারা যখন ছাগল দিতে আসে, সাবেত তার কওমকে বললেন, ‘তাদের ভাইকে তাদের কাছে দাও। তোমাাদের ভাইকে নিয়ে যাও।’

নবির যুগ

তবে প্রাক-ইসলামি যুগে হাসি, উপহাস এবং কৌতুক যে অর্থে ব্যবহার করা হতো, যেভাবে জ্ঞানীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে ঘিরে আবর্তিত হতো হাস্যরস, ইসলাম এসে এই ধারণাগুলো বদলে দেয়। একটি সুশৃঙ্খল নৈতিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসে। রাসুল সা. তার সাহাবিদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করতেন। কেউ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাদের সাথে মজা করছেন! তিনি বললেন, ‘আমি শুধু সত্য বলছি’ (সুনানে তিরমিযী)। ইমাম বুখারী  বকর বিন আবদুল্লাহ আল-মুজনীর সূত্রে ‘আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে লিখেন, ‘সাহাবিরা একজন আরেকজনের দিকে তরমুজ নিক্ষেপ করে মজা করতেন।’

কিছু সাহাবি হাস্যরসের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। তাদের  একজন নুয়াইমান বিন আমর আল-আনসারী। ইবনে হাজার তার জীবনী লিখেছেন। একবার তিনি একটি জিনিস নিয়ে নবিজির দরবারে এলেন। এসেই বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, এই জিনিসটি আপনার জন্য হাদিয়া।’ কিন্তু নুয়াইমান জিনিসের দাম পরিশোধ করেননি। একটু পর বিক্রেতা এসে যখন দাম চাইলো, তিনি বিক্রেতাকে নবিজির কাছে এনে বললেন, ‘জিনিসটির দাম পরিশোধ করে দিন।’ নবিজি বললেন, ‘তুমি আমাকে এটি হাদিয়া দাওনি?’ নুয়াইমান বললেন, ‘আমার ইচ্ছে করছিল জিনিসটি আপনাকে দিতে। কিন্তু আমার কাছে টাকা ছিল না।’ নবিজি হেসে দাম পরিশোধ করে দিলেন।

উমাইয়াদের যুগ

তারপর উমাইয়াদের যুগে ধর্মীয় বাঁধন হালকা হয়ে পড়ে। তখন সমাজের সর্বস্তরে হাস্যরস ছড়িয়ে পড়ে। সমাজের নিচু লোক থেকে শুরু করে শাসকরাও এতে অংশ নেয়। অনেক কবিতা-গদ্যে সেসবের প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম শাবি বেশ হাসিঠাট্টা করতেন।

আশআব ইবনে জুবায়ের ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের আজাদকৃত দাস। তিনি বেশ হাসিঠাট্টা করতেন। একবার তিনি তাবেঈদের মজলিসে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি একটি হাদিস মুখস্থ করেছি। তাবেঈরা বললেন, কী সেই হাদিস? তিনি বলেন,  নাাফে ইবনে ওমর থেকে, তিনি রাসুল সা. থেকে বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে দুটি গুণ থাকবে, আল্লাহ তায়ালার নিকট সে মুখলিস হিসেবে বিবেচিত হবে। সবাই বললো, কোন দুটি গুণ? তিনি বললেন, একটি নাফে ভুলে গেছেন। একটি আমি ভুলে গেছি!

ইবনে জাওজি ‘আখবারুয যুরাফা ওয়াল মুতামাজিনিন’ গ্রন্থে লিখেন, এক বেদুঈন কুরআন মুখস্থ করলো। সে চাইছিল, এই কুরআন দিয়ে সে তার উদ্দেশ্য হাসিল করবে। সে এক ব্যক্তির কাছে গেলো। লোকটির সামনে ছিল ডুমুর। বেদুঈনের তাকানো দেখে লোকটি ডুমুরগুলো লুকিয়ে ফেললো। এরপর বেদুঈনকে জিজ্ঞেস করলো, কুরআন পড়তে পারেন? বেদুঈন কুরআন থেকে সুরা তিন পড়ে শোনালো। লোকটি বললো, তিন ফল কোথায়? লোকটি বললো, তোমার কাপড়ের নিচে!

একই গ্রন্থে  ইবনুল জাওজি লিখেন, এক আরবি লোক ইহুদিদের একত্র করে বললো, ঈসা ইবনে মারয়াম সম্পর্কে তোমাদের মতামত কী? তারা বললো, অামরা তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করেছি। এবার আরবি লোকটি বললো, তোমরা যে তাকে হত্যা করেছো, তার দিয়ত দাও। দিয়ত না দিয়ে তোমরা বের হবে না। অগত্যা সবাইকে দিয়ত দিয়েই বের হতে হলো।

আবু হাইয়ান তাওহিদি লিখেছেন, এক আরবি লোককে দার্শনিকরা জিজ্ঞেস করলো, আপনি উম্মতের স্বার্থে শূলে চড়তে পারবেন? লোকটি বললো, উহু। বরং আমার স্বার্থে উম্মতকে শূলে চড়াতে পারবো।

আব্বাসিদের যুগ

আব্বাসীয় যুগ আবির্ভাবের সাথে সাথে বিভিন্ন জাতির সাথে মুসলমানদের সংহতি গভীরতর হয়েছে। নতুন সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক ঘটনা উদ্ভূত হয়েছে এবং জীবনের অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে ভিন্নতা এসেছে। এর ফলে লেখক, কবি এবং সাধারণ জনগণ হাস্যরস ও হাসির ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে সাহস পায়। তখন হাস্যরস একটি ‘বিনোদন শিল্প’ হয়ে ওঠে। আমির-উমারারা ডুবে যায় আরাম আয়েশে। তারা বসায় গান-বাজনা ও হাস্যরসের আসর।

হাম্বলী বিচারক নাজমুদ্দিন মাকদিসি ‘মুখতাসারু মিনহাজুল কাসিদিন’ গ্রন্থে লিখেন, অনেকে মানুষকে হাসিয়ে টাকা কামাতো।

আব্বাসীয় যুগে ব্যঙ্গাত্মক সাহিত্য এবং লেখকদের শীর্ষস্থানে উঠে আসেন জাহিজ। গবেষক আহমেদ আবদুল গাফফার উবাইদ ‘আদাবুল ফুকাহাতি ইনদাল জাহিজ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘রসিক কাঠামো ব্যবহার করে তিনি সামাজিক অসুস্থতা এবং নৈতিক ত্রুটিগুলিকে ব্যঙ্গ করেছেন। তার শৈলীতে কটাক্ষ এবং মিষ্টতা দুটোই ছিল। তিনি সামাজিক অসুস্থতা যেমন মিথ্যা, কৃপণতাকে ব্যঙ্গ করেছেন। তিনি গল্পকার ও প্রচারকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, যারা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে বয়ান করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছিলেন।

জাহিজ ‘আল হাইওয়ান’ গ্রন্থে লিখেন, তার লেখায় হাসি এবং হাস্যরসের অন্তর্ভুক্তি পাঠককে উত্সাহিত এবং আনন্দিত করার উদ্দেশ্যে।

পরে লেখক, ফকিহ এবং ইতিহাসবিদদের কৌতুকের খবর লেখা ও সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়া হয়। দেয়া হয় কমিক দৃশ্য আঁকার ক্ষমতাও। ফার্সি লেখক আবদুল্লাহ বিন আল-মুকাফা এই পথের প্রথম প্রদর্শক। তিনি কালিলা ওয়া দিমনাকে অনুবাদ করেন। কালিলা ওয়াদিমনার কাহিনীগুলো মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে সংস্কৃত ভাষায় হিতোপদেশ মূলক কাহিনী। কালিলা ওয়াদিমনা দু’টি শৃগালের নাম। এ কাহিনীর আসল উদ্দেশ্য হল গল্পচ্ছলে উপদেশ দেয়া। আব্বাসীয় আমলে ইবনে মুকাফফা একে আরবিতে অনুবাদ করেন। তারপর মাকামাত শিল্পের জন্ম হয় বদিউজ্জামান হামাদানির হাতে। মাকামা হচ্ছে ছোট গল্পের নাম যার মাঝে অলংকারপূর্ণ সাহিত্য ও রসিকতা রয়েছে। এরপর এই কাজে হাত দেন হারিরি বসরি।

যুগে যুগে কমেডিয়ান

সেই যুগে সবচে বেশি প্রসিদ্ধি পেয়েছিল জোহা এবং আল-জাম্মাজ মুহাম্মদ বিন আমর আল-বসরি (২৫০হি.), আবুল আয়না (২৮৩হি.)।  জোহা ছিলেন সেই যুগে এবং পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয় হাস্যরসের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের একজন।

দামিরি ‘হায়াতুল হাইওয়ান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, একদিন কুফার গভর্নর মুসা ইবনে ঈসা হাশেমি (১৬৮হি.) জোহার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। জোহা তখন মরূভূমিতে মাটি খুড়ছে। মুসা বললেন, কী হয়েছে। মাটি খুড়ছো কেন? জোহা বললো, এখানে কিছু দিরহাম রেখেছিলাম। কিন্তু কোথায় রেখেছি ভুলে গেছি। মুসা বললেন, কোথায় রেখেছো তার চিহ্ন দিয়ে রাখতে। জোহা বললো, চিহ্ন দিয়েছিলাম। যখন দিরহাম রাখি, তখন এখানে মেঘ ছিল মাথার উপর। কিন্তু এখন আলামত খুঁজে পাচ্ছি না!

হাস্যরস এবং ব্যঙ্গাত্মক কর্মকাণ্ড কেবল ইরাকের সীমানায় থেমে থাকেনি। বরং এটি অন্যান্য জাতি, মানুষ এবং দেশেও প্রসারিত হয়েছে। দামেশকের এমন অনেক ঘটনা আছে। মিসরে কৌতুক করে প্রসিদ্ধ হয়েছিল আবু হুরায়রা মিসরি (২৫০হি.)। সে কিতাবের অনুলিপি করতো। মদ-শরাব পান করতো।

হাস্যরস ও কৌতুককেই অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তারমধ্যে একজন হলেন ইরাকের আবু আলকামা নুমাইরি (২২৫হি.)।

খলিফাদের দরবারে

খলিফা ও সুলতানদের দরবারে কৌতুক অভিনেতারা থাকতো। অনেক খলিফা, সুলতান এবং রাজারা তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে কৌতুক অভিনেতাও রাখতেন। কারণ, কৌতুক শুনে মাঝেমাঝে তারা রাজনৈতিক চিন্তার ক্লান্তি দূর করতেন। জাহিজের লেখা ‘আত তাজ ফি আখলাকিল মুুলুক’ গ্রন্থে খলিফা-সুলতানদের সহযোগী হওয়ার শর্তগুলো তুলে ধরেছেন। তাতে বলেছেন, ‘খলিফা-সুলতানদের সহযোগী হওয়ার জন্য মধ্যপন্থী স্বভাবের হতে হবে। সুস্থ থাকতে হবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, স্বভাব-চরিত্র। পারতে হবে কৌতুক ও বিতর্ক।’

দরবারে কৌতুক অভিনেতা রাখার চলটি ইসলামের আবির্ভাবের আগে থেকেই ছিল এবং আরব ও অনারবদের কাছে এটি পরিচিত ছিল। আলেকজান্ডার দ্য ম্যাসেডোনিয়ান (মৃত্যু 323 খ্রিস্টপূর্ব)-এর কৌতুক অভিনেতা ছিল। সাসানিয়ান পারস্য রাজাদেরও ছিল। ঐতিহাসিক আল-মাসুদি ‘মুরুজুয যাহাব’ গ্রন্থে বলেছেন, পারস্যের রাজা সাপুরের একজন কৌতুক অভিনেতা ছিল। তার নাম মারজুবান।

ইসলামের আগে আরব উপদ্বীপেও এই চল দেখেছি। হিরার রাজা নুমানের দুধভাই ছিল সাদ। সাদ কৌতুক বলে লোকদের হাসাতো। সে নুমানকেও কৌতুক বলে হাসাতো। নুমান তার প্রশংসা করতেন।

মনে হয়, রাজা ও খলিফাদের উপহার দেয়া হতো এসব কৌতুক অভিনেতাদের। অনেক অভিনেতা মৃত্যুর পর অনেক টাকাও রেখে গেছে। যেমন মাহমুদ বিন আল-দাব্বাঘ (মৃত্যু ৬১৪ হি ) সুলতান আবি বকর বিন আইয়ুবের কৌতুক অভিনেতা ছিলেন। তিনি প্রচুর সম্পদ রেখে যান। মাকরিজিও এই তথ্য উল্লেখ করেছেন।

খলিফাদেরও অনেকের কৌতুক অভিনেতা ছিল। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালেক বিন মারওয়ানের কৌতুক অভিনেতা ছিল আতা। আবু কামিল ছিল ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিকের কৌতুক অভিনেতা। ইয়াজিদ ইবনে ওয়ালিদের কৌতুক অভিনেতা ছিল গাদিরি মাদানি।

আব্বাসীয়দের সময়ে শ্রেষ্ঠ রসিক ছিল আবু দালামা জান্দ বিন আল-জাউন আল-আসাদি আল-কুফি। সে আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল-মানসুর, তার পুত্র খলিফা আল-মাহদীর নিকটজন ছিল। তিনি প্রায়শই তার কবিতায় নিজেকে, তার কালো স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে উপহাস করতেন, যা খলিফা এবং তাদের দলবলকে হাসাতো।

খলিফা হারুন আল-রশিদের রসিক অভিনেতার নাম ছিল ইবনে আবি মারয়াম আল-মাদানী। তিনি খলিফার প্রাসাদে বাস করতেন। তার কৌতুক শুনে খলিফা কখনও ক্লান্ত হতেন না। খলিফা হারুন আল-রশিদের আরেক রসিক অভিনেতার নাম ছিল আল-মুরতামি।

খলিফা আল-মামুন রসিক ব্যক্তিদের ভালোবাসতেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন বাগদাদের সুমামা আল মুজহিক। তিনি তার হাস্যরসের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিল রসিক ব্যক্তিদের ভালোবাসতেন। তাদের মধ্যে একজন উবাদা মুখান্নাস। খলিফা যেখানেই সফরে যেতেন, তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

সূত্র: আল জাজিরা অবলম্বনে

The post মুসলিম সভ্যতায় কৌতুক ও কৌতুক অভিনেতা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%95%e0%a7%8c%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%95-%e0%a6%93-%e0%a6%95/

No comments:

Post a Comment