রাকিবুল হাসান নাঈম:
২০২৩ সালে প্রকাশিত হওয়া নতুন পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গ পরিবর্তনের বিকৃত মানসিকতাকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি বলছেন, লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলামে হারাম। কোনো যুক্তি দিয়ে এটাকে হালাল করা যাবে না।
সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ের ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্য ও জেন্ডার ধারণা’ অধ্যায়ে একটি গল্পে লিঙ্গ বিষয়ক ধারণা দেয়া হয়েছে। তাতে আত্মপরিচয় বুঝাতে গিয়ে দেখানো হয়েছে, নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় না। পুরুষাঙ্গ থাকলেও শরীফ যদি মনে করো সে শরীফা, তাহলে সে শরীফা-ই। এটাই আত্মপরিচয়। জৈবিক পরিচয়ে সামাজিক পরিচয়ে সে আবদ্ধ না, আত্মপরিচয়ই তার পরিচয়। পুরুষ শরীরে (biological sex) পুরুষের মতোই জীবনযাপন (gender) করতে হবে, এমন না।
বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে লেখালেখি করছেন আলেম লেখক ও সাংবাদিকরা। তবে সরকারি বইয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন নিয়ে লেখা ছাপায় এর বিরুদ্ধে কথা বলতে চাচ্ছেন না কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলেই ‘সেনসেটিভ’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে বলেন, ইদানীং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ মানুষ নিয়ে আলোচনা দেখা যায়। এদের বেশিরভাগকে তৃতীয় লিঙ্গের মনে করা হলেও মূলত তারা তৃতীয় লিঙ্গের নয়। বরং তারা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তি, যারা মানসিক দিক থেকে তাদের সৃষ্টিগত লিঙ্গের চেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আসক্ত। ফলে একসময় তারা অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের দেহাবয়ব পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গের বেশ ধারণ করেছে। ইসলামে এটা সম্পূর্ণই হারাম।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা সুরা তীনে বলেছেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।’ আল্লাহর সৃষ্ট অবয়বে নিজের বিকৃত রুচি ও অসুস্থ চিন্তা-ভাবনার কারণে পরিবর্তন ঘটানো মহান রবের সঙ্গে নাফরমানি ও ধৃষ্টতা দেখানোর নামান্তর। রাসুল সা. বলেছেন, যে নারী পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করল আর পুরুষ নারীর সাদৃশ্য গ্রহণ করল তাদের উভয়ের প্রতি আল্লাহর লানত। আর এ কথা স্বীকৃত যে, অস্ত্রোপচার করে কখনোই পুরোপুরি লিঙ্গ পরিবর্তন করা যায় না। শুধু অবয়ব পরিবর্তন ও সাদৃশ্য গ্রহণ করা যায়।
দেশে নারী-পুরুষের সাদৃশ্য তৈরীর জন্য লিঙ্গ পরিচয়ের বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে বিভিন্ন বইয়ে। এ প্রশ্নের উত্তরে ইফার এই মুফতি বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার একটা মানসিক রোগ থেকে হয়। তাই তাদের লিঙ্গে অস্ত্রোপচার না করে তাদের মানসিক চিকিৎসায় জোর দেওয়া উচিত। তাদের সমস্যাগুলো যদি হরমোনগত সমস্যা থেকে হয়, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতির অধিকার কারো নেই।’
দারুল উলুম করাচির ফতোয়া হলো, যদি কোনো পুরুষ অথবা মহিলার মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো আলামত প্রকাশিত হয়, যেমন, পুরুষের শরীরে মহিলাদের কোনো অঙ্গ পাওয়া অথবা কোনো মহিলার শরীরে পুরুষের কোনো অঙ্গ পাওয়া অথবা কোনো পুরুষ অথবা মহিলার শরীরে একেই সঙ্গে পুরুষ এবং মহিলার শরীরের কোনো অঙ্গ থাকলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে ত্রুটি বলে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো, শারীরিক ত্রুটি দূর করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ এবং মুবাহ। অতএব উপরে বর্ণিত কোনো শারীরিক ত্রুটি পরিলক্ষিত হলেই কেবল অপারেশন অথবা ওষুধের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করা জায়েজ হবে। এবং এর অপারেশন করা ডাক্তারদের জন্য বৈধ হবে। আর যদি শারীরিক কোনো ত্রুটি না থাকে ইচ্ছে করেই এরূপ করা হয় তাহলে তা বৈধ হবে না এবং এ কাজের অপারেশন করা ডাক্তারদের জন্যেও বৈধ হবে না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইফার গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস ড. ওলিয়ুর রহমান খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ বোধ করেননি।
The post পাঠ্যক্রমে ‘লিঙ্গপরিবর্তন’: ইফা-মুফতি বলছেন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a0%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a7%8d-2/
No comments:
Post a Comment