মুনশী নাঈম:
মক্কা ও মদিনা নগরীকে মুসলিম বিশ্বের আর্থিক ও বাণিজ্যিকেন্দ্রে রূপান্তর করতে চায় সৌদি আরব। এ লক্ষ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মক্কা চেম্বার অব কমার্স, মদিনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার। চুুক্তির নাম ‘মানাফে’। চেম্বার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এবং সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী মাজিদ আল-কাসাবির পৃষ্ঠপোষকতায় এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
চুক্তির লক্ষ্য ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃ-বাণিজ্যকে উদ্দীপিত করা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া করা এবং মক্কা ও মদীনায় অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে আরও বেগবান করা। পাশাপাশি এই চুক্তির লক্ষ্য হলো, পবিত্র দুই শহরে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে লজিস্টিক সহায়তা করা এবং বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোর জন্য বিনিয়োগ করা। বিনিয়োগ পরিবেশ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা প্রদান করা।
বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ
মক্কায় মানাফে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী কাসাবি ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব কর্মসূচিতে ৯টি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এরমধ্যে রয়েছে গ্লোবাল হালাল ফোরাম, মক্কা গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ ফোরাম, বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক নেতাদের সাথে ৫টি বৈঠক এবং আরও কিছু উদ্যোগ।
কাসাবি বলেন, কোন সন্দেহ নেই, প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে দুটি পবিত্র শহরের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এই দুটি শহরকে অর্থনৈতিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের জন্য আমরা উন্মুখ।
মক্কা চেম্বার অব কমার্সের মহাসচিব ইসমাত মাতুক চুক্তি অনুষ্ঠানে বলেন, ত্রিপক্ষীয় এই জোট ইসলামি দেশগুলোর আন্তঃবাণিজ্যকে উদ্দীপিত করবে। বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ হজের মওসুমে যে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ পাওয়া যায়, তা লক্ষ্য করে সরকার অনেক সুবিধা দিবে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনুকরণীয় সহযোগিতা তৈরি করতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সফল অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
মাতুক আরও বলেন, মক্কা চেম্বার অব কমার্সের একটি প্রতিবেদনের তথ্যমতে আমরা আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এবার হজযাত্রী ৩০ শতাংশ বাড়বে। এর সংখ্যা হতে পারে ২.৫ মিলিয়ন। এরমধ্যে ১.৭ মিলিয়ন বিদেশ থেকে, ৮ লাখ ৫০ হাজার আসবে দেশ থেকে। হাউজিং ইউনিট এবং হাজিদের থাকার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হোটেলগুলির আবাসন ক্ষমতা আনুমানিক ৩.৩ মিলিয়ন। এ মওসুমে হাজিদের বহনের জন্য দরকার ৬৬ হাজার গাড়ি। সৌদি আরবের অভ্যন্তরে বর্তমান হজ মৌসুমের আয় প্রায় ২৩ বিলিয়ন রিয়াল (প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার)। এই ডাটাগুলো হজ মৌসুমে যে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে তার উদাহরণ মাত্র।
উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য
মক্কা চেম্বার অব কমার্স পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ বিন সালেহ কামেল বলেন, এই চুক্তি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধের প্রচার এবং পবিত্র দুই শহরের গুরুত্ব তুলে ধরার সুযোগ হবে। শুধু নয়টি প্রকল্পই নয়, আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হবে, যা দুই শহরের ব্যাবসায়িক খাতকে সমৃদ্ধ করবে।
অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং সৌদি অর্থনৈতিক সমিতির সদস্য সুলেমান আল-আসাফ বলেছেন, ইসলামি অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির মধ্যে একটি। কারণ, এটি বার্ষিক প্রায় ৩২০০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। বর্তমানে ৫৭টি ইসলামি দেশের জনসংখ্যা এক বিলিয়ন এবং ২০০ মিলিয়নেরও বেশি। তাদের কাছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র মক্কা এবং মদিনা। তাই এখানে ইসলামী অর্থনীতির সুবিধা নেওয়া প্রয়োজন, যা বিশ্বের অর্থনীতির প্রায় ৩.৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি আরও বলেন, নতুন এই ত্রিপক্ষীয় জোট এ দুটি শহরকে আকর্ষণীয় বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে। বর্তমানে সৌদি বছরে ৭০ মিলিয়ন ধর্মীয় পর্যটক পায়। এছাড়াও মক্কা এবং মদীনা অঞ্চলে অনেক পণ্য তৈরি করা যেতে পারে মুসলমানদের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগ মাথায় রেখে। আশা করছি, মক্কা- মদিনা ভবিষ্যতে এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করবে।
ইসলামী বাজার প্রতিষ্ঠা
সৌদি আরবের আল-ফয়সাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খালেদ বাতারফি বলেন, ৬০ বছর আগে, ইসলামিক সংহতি প্রকল্প গ্রহণের পর থেকে সৌদি একটি প্রধান ইসলামী বাজার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। বিভিন্ন কারণে সেটা হয়নি। এখন এই জোটের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক রাজধানী (মক্কা) এবং ইসলামের প্রথম রাজনৈতিক রাজধানী (মদিনা) থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।
ড. খালেদ বাতারফি আরও বলেন, আমরা একটি বড় প্রকল্পের মুখোমুখি হচ্ছি, যা সৌদি আরব থেকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে, অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের সকল সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে একটি সাধারণ ইসলামী বাজার গড়ে তোলা। এই প্রকল্পের সাফল্যের জন্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ইসলামিক সংস্থার সকল সদস্যদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
সূত্র: আল-জাজিরা
The post ত্রিপক্ষীয় চুক্তি: মক্কা ও মদিনা হবে মুসলিম বিশ্বের বাণিজ্যকেন্দ্র appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ae%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%95/
No comments:
Post a Comment