মাওলানা ওহিদুদ্দিন খান
অনুবাদ : মহিউদ্দিন মণ্ডল
ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। এই সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদি. বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর রাখা হয়েছে। এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও রসুল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা ও জাকাত প্রদান করা, হজ করা এবং রমজানের রোজা রাখা (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৮, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬)।
এই হাদিসটির বাহ্যিক অর্থ হলো ঈমানের শব্দগুলির পুনরাবৃত্তি করা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, নির্ধারিত পরিমাণ জাকাত প্রদান করা, হজ পালন করা, রমজানের রোজা রাখা। তবে এর অর্থ বাহ্যিক কাঠামোর জন্য নয়, স্পিরিটের জন্য। এর অর্থ, এই এবাদতের বাহ্যিক কাঠামোর একটি মর্যাদা আছে; কিন্তু তাদের সেই এবাদত উচ্চ স্তরের এবাদত হতে পারে যদি তার মধ্যে চেতনা অর্থাৎ স্পিরিট পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ, কুরআন অনুসারে নামাজের বাস্তবতা হলো খুশু-খুজু অর্থাৎ নম্রতা ( সুরা মুমিনুন, ২৩: ১-২), এবং রোজার বাস্তবতা হলো তাকওয়া ও ধৈর্য। এই নীতি ইসলামের অনান্য আদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
প্রতিটি ইসলামিক এবাদতের একটি হলো বাহ্যিক দিক এবং অন্যটি তার মর্মকথা বা আসল রূপ। এবাদতের এই অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা কখনোই বদলায় না। এই আবশ্যিক আদেশগুলি তখনই ইসলামের ভিত্তি হবে যখন সেগুলির বাহ্যিক রূপের সাথে আধ্যাত্মিক বাস্তবতা পাওয়া যায়। আত্মার বিচ্ছেদের পরে বাহ্যিক রূপের অস্তিত্ব কোনো কাজে আসে না।
কুরআনে রোজা রাখার হুকুমটি সুরা বাকারায় কী সুন্দর ব্যাখ্যার সাথে এসেছে। এই আয়াতের অনুবাদ এখানে দেওয়া হলো : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযত জীবন যাপন করতে পারো (২ : ১৮৩)।
এটাই রোজার মূল কথা। হাদিস ও ফিকহে এর আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রোজার অধ্যায়গুলির অধীনে হাদিসের বইগুলিতে অনেক হাদিস সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি রোজার স্বরূপ প্রকাশ করে।
হাদিসে বর্ণিত আছে যে রমজান মাস আসার আগে শাবানের শেষ দিনগুলিতে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুতবা দিয়েছিলেন। সেই খুতবায় রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। খুতবায় তিনি যে সমস্ত কথার উল্লেখ করেছেন তার কিছু অংশ এমন : এটি ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত, এটি সহমর্মিতার মাস এবং এটি এমন এক মাস যার মধ্যে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয় (সহিহ ইবনে খাযিমা), হাদিস নং ১৮৮৭)।
এই হাদিসে রিজিকের অর্থ বস্তুগত রিজিক নয়; বরং আধ্যাত্মিক রিজিক। এই বর্ণনায় রোজার আসল চেতনা বা স্পিরিট প্রকাশ পায়। এই হাদিসটির অর্থ হলো এই মাসে মানুষকে একতরফা নৈতিকতা সহকারে সমাজে দাতা হতে হবে এবং তার জীবন আল্লাহ কেন্দ্রিক জীবনে পরিণত হবে, সে সর্বদা আধ্যাত্মিক রিজিকের অধিকারী হবে।
রমজান সম্পর্কে আরেকটি হাদিস : যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখে এবং রোজার সীমারেখা সম্পর্কে সতর্ক থাকে এবং যথাসাধ্য সংযত জীবনযাপন করে, তার অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
রোজার আসল বাস্তবতা হলো ঐ সমস্ত জিনিস থেকে নিজেকে বাঁচানো, যা থেকে আল্লাহ বিরত থাকতে বলেছেন। রমজানের দিনগুলিতে খাবার-দাবারের মতো জিনিস দিয়ে রোজা রাখার হুকুম আসলে তারই ব্যবহারিক আমল। খাওয়া এবং পান করা হলো সর্বশেষ প্রয়োজন যা থেকে একজন ব্যক্তিকে বিরত রাখা হয়। মানুষকে সর্বশেষ প্রয়োজন থেকে বিরত রেখে তাকে সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়ে শেখানো হয় যে আল্লাহ যে জিনিস থেকে তোমাকে মানা করেছে তা থেকে তোমাকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যদিও তোমার সাধ এবং অভ্যাসকে সংযত করা যতই কষ্টকর হোক না, যদিও তোমার জীবনের তালিকায় সেগুলির প্রয়োজন সর্বাধিক হোক না কেন।
রোজার উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তির মধ্যে সেই ক্ষমতা তৈরি করা, যাতে তার জীবন অনুশাসনের জীবন হয়, জেলখানার জীবন নয়।
The post রোজার প্রকৃত মর্ম appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4-%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae/
No comments:
Post a Comment