রাকিবুল হাসান নাঈম:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রকাশ্য ও নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছে না মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলো। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, নানা শর্ত ও নিয়মের বেড়াজালে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সেবামূলক কাজ। দেখানো হচ্ছে এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন না থাকার অজুহাত। ২০১৭ সালে এমন অজুহাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি ইসলামি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এরমধ্যে রয়েছে, আল মারকাজুল ইসলামি, মুসলিম এইড বাংলাদেশ, ইসলামিক রিলিফ এবং আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন।
এনজিওগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও সেটা না তোলার মতোই। নিষেধাজ্ঞা তোলার প্রক্রিয়াটি একেকজনের সঙ্গে একেকরকম। কাউকে সরাসরি কক্সবাজারেরর ক্যাম্পগুলোতেই কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কাউকে কক্সবাজারে কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং ভাসানচরের ক্যাম্পগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু খাতে কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ অনুমোদন ছাড়াই গোপনে কাজ করছে।
কাজ করতে হয় গোপনে
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন মওসুম ও প্রয়োজনে সেবাদান করে পিপলস্ ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (পিসব)। ক্যাম্পে কাজ করার জন্য সংস্থাটির এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন নেই। তাই গোপনেই কাজ করতে হয় তাদের।
এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা ইমরান হুসাইন হাবিবি ফাতেহকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মওসুমে কাজ করি। যেমন বন্যায়, অগ্নিকাণ্ডের সময়, খাবার সঙ্কটে। অনুমোদন নেই বলে গোপনেই কাজটা করতে হয়।’
নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি (?)
২০১৭ সালে ক্যাম্পে কাজ করতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি পরে অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সেবাপ্রতিষ্ঠানটির কর্মী এবং চট্টগ্রাম ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হারুনুর রশিদ। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে একটা ভুল বুঝাবুঝি তৈরী হয়েছিল। পরে সেটা ঠিক হয়েছে। সরকার এখন আমাদেরকে ক্যাম্পে কাজ করার অনুমোদন দিয়েছে।
কী কী প্রকল্পে কাজ চলছে জানতে চাইলে তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘এখন শেল্টার তৈরী এবং খাদ্য বিতরণের প্রকল্প চলছে।’
নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল আল মারকাজুল ইসলামিও। পরে তাদেরকে কক্সবাজারে কাজ করার অনুমোদন দেয়া না হলেও ভাসানচরে কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারী মুফতি এনামুল হক ফাতেহকে বলেন, ‘আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আসলে সেই অর্থে তুলে নেয়া হয়নি। আমাদেরকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে, আমরা যেন ভাসানচরে কাজ করি। বিশেষ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করি। সেখানে আমরা ৬ হাজারের অধিক সিলিন্ডার বিতরণ করেছি।’
কক্সবাজারে আর কাজ হয়নি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আর কাজ করা হয়নি। এখন ভাসানচরেই সিমিত আকারে কাজ করছি।’
ধর্মীয় প্রকল্পে কাজ হচ্ছে না
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধর্মীয় প্রকল্প, যেমন মক্তব-মাদরাসার কাজ ইসলামি এনজিওগুলো তেমন করতে পারছে না। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, নিরাপত্তা ও ডোনেশন এখানে বড় একটি ভূমিকা পালন করে।
ক্যাম্পে সংস্থার কোনো মক্তব প্রকল্প আছে কিনা জানতে চাইলে পিসবের পরিচালক মাওলানা ইমরান হুসাইন হাবিবি বলেন, ‘মক্তব-মাদরাসা প্রকল্প তো আছে। তবে সেটা আমরা প্রকাশ্যে করতে পারি না। সমস্যা হয়। তবে প্রকল্প আছে, কাজও চলছে।’
দাতারা যে কাজের জন্য ডোনেশন দেয়, কেবল সে কাজই করে আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন। ধর্মীয় প্রকল্পে তাদের কাজের কথা জানতে চাইলে লেকচারার হারুনুর রশিদ ফাতেহকে বলেন, ‘আমরা কাজ করি ডোনেশনভিত্তিক। এখন শেল্টার নির্মাণ ও খাদ্য বিতরণের ডোনেশন আছে। দাতারা এটার জন্যই দান করেছেন। ধর্মীয় প্রকল্পে ডোনেশন আসে না, তাই কাজ করা হয় না।’
ভাসানচরেও খুব সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করে আল মারকাজুল ইসলামি। ধর্মীয় প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ হয় না। এ প্রসঙ্গে মুফতি এনামুল হক বলেন, ‘আমাদেরকে কেবল গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করতে বলা হয়েছে। সেটাই করতে হয়। কোনো ধর্মীয় প্রকল্পে কাজ করতে পারি না। তবে প্রতিটি বিল্ডিংয়ে মসজিদ আছে, সেখানে মক্তব চালু আছে। মসজিদ ছাড়াও কিছু জায়গায় দেখেছি, রোহিঙ্গারা নিজস্ব উদ্যোগে মক্তব চালু করেছে। সেটা খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে।’
The post রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করতে পারছে না মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলো appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a6%be-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c-%e0%a6%95%e0%a6%b0/
No comments:
Post a Comment