মুনশী নাঈম:
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র হামলায় আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র । বলা হয়, গত রোববার ড্রোনের মাধ্যমে ওই হামলা চালানো হয়। গতকাল সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে জাওয়াহিরির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তার বরাতে বলা হচ্ছে, হামলার সময় আল–কায়েদার এই নেতা কাবুলে একটি বাড়ির ব্যালকনিতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ড্রোন থেকে তাকে লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে জাওয়াহিরির মৃত্যু হয়। ওই বাড়িতে তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন। তবে হামলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
এদিকে বাইডেনের ঘোষণার আগেই জাওয়াহিরির মৃত্যুর খবর সামনে আনে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। সিবিএস তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবর নিশ্চিত করেছিল। সূত্রের বরাত দিয়ে একই তথ্য জানিয়েছিল নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, তাদের কাছে কিছু ছবি এসেছে। ছবিতে আল-কায়েদা নেতা যেখানে লুকিয়ে ছিলেন সেখান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের কাছে কূটনৈতিক জেলার একটি বাড়ি লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হয়।
জাওয়াহিরি কি ওই বাড়িতে ছিলেন?
মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দারা একাধিক সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছে, নিহত ব্যক্তি আল-জাওয়াহিরিই। কায়েদার এই নেতা কাবুলে একটি বাড়ির ব্যালকনিতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ড্রোন থেকে তাকে লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে জাওয়াহিরির মৃত্যু হয়। ওই বাড়িতে তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন। তবে হামলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এই বছর আল-জাওয়াহিরির স্ত্রী, কন্যা এবং সন্তানরা কাবুলের একটি সেফ হাউজে এসে উঠে। তারপর নিশ্চিত করা হয়, এখানে জাওয়াহিরিও আছেন।
অপারেশনের বর্ণনা দিয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর আগেই জাওয়াহিরির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে, এমন একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পায় যুক্তরাষ্ট্র। আফগান ছেড়ে যাবার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আরও সিরিয়াস হয় গোয়েন্দারা। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্রিফিং শুরু করে। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অবহিত করেন। ১ জুলাই, সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস-সহ প্রশাসনের সদস্যরা হোয়াইট হাউস সিচুয়েশন রুমে জাওয়াহিরির উপর একটি প্রস্তাবিত অপারেশন সম্পর্কে বাইডেনকে ব্রিফ করেন। বাইডেন সেফ হাউজের আলো, আবহাওয়া, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, যা অপারেশনের সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি কাবুলে হামলার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াও বিশ্লেষণ করতে বলেন। ২৫ জুলাই তিনি তার প্রশাসনের প্রধান সদস্যদের এবং তার উপদেষ্টাদের একটি চূড়ান্ত ব্রিফিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি জাওয়াহিরির হত্যা কীভাবে তালেবানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সভাতেই মূলত তিনি হামলার চূড়ান্ত অনুমতি দেন। ৩০ জুলাই, রাত ৯.৪৮ মিনিটে এ হামলা চালানো হয়।
এর আগেও তাকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তাকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় আল-কায়েদার ৪ সদস্য নিহত হন। বেঁচে যান জাওয়াহিরি। তার দুই সপ্তাহ পর ভিডিও বার্তা পাঠান তিনি।
আফগানিস্তান কী বলছে
আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এএফপিকে কাবুলে একটি ড্রোন হামলায় কারো হত্যার খবর অস্বীকার করে বলেছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র রাজধানীতে একটি খালি বাড়িতে আঘাত করেছে, এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আজ মঙ্গলবার মঙ্গলবার সকালে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ কাবুলের শেরপুর জেলার একটি বাড়িতে হামলা সম্পর্কে টুইট করেছেন। তিনি তার টুইটে বলেছেন, ইসলামিক আমিরাতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনাটি তদন্ত করেছে। তারা প্রাথমিক তদন্তে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, হামলাটি আমেরিকান ড্রোন দ্বারা করা হয়েছে। তিনি এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক নীতি’ লঙ্ঘন বলেও তীব্র নিন্দা করেছেন। এবং এটিকে দেশের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। পাশাপাশি এই হামলাকে তিনি বিগত ২০ বছরের ব্যর্থ হামলার পুনরাবৃত্তি বলে অভিহিত করেছেন । তবে কারো নিহত হওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালেবানের একটি সূত্র জানায়, হামলার দিন সকালে কাবুলের ওপর দিয়ে অন্তত একটি ড্রোন উড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সৌদি কী বলছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যা করার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি এ ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। জাওয়াহিরি সন্ত্রাসবাদের অন্যতম নেতা এবং তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবে ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালের ১৯ জুন মিশরের কায়রোতে জন্ম আয়মান আল-জাওয়াহিরির। মধ্যবিত্ত তবে শিক্ষিত পরিবারে জন্ম তার। তার দাদা, রাবিয়া আল-জাওয়াহিরি, মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি ইসলামিক শিক্ষার কেন্দ্র আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ছিলেন। তার এক চাচা ছিলেন আরব লীগের প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল বিভাগে পড়েন তিনি। ১৯৭৪ সালে স্নাতক এবং তার চার বছর পর সার্জারিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন জাওয়াহিরি। তার বাবার নাম মোহাম্মদ। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তার মৃত্যু হয়। জাওয়াহিরি পারিবারিক ঐতিহ্য অব্যাহত রাখতে কায়রোর উপশহরে একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। তারপরই বিভিন্ন ইসলামি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
২০১১ সালে পাকিস্তানে মার্কিন অভিযানে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হন। ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর ২০১১ সালের ১৬ জুন আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে আল-কায়েদার নতুন নেতা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন জাওয়াহিরি। ওসামা বিন লাদেন বেঁচে থাকা অবস্থায় জাওয়াহিরিকে আল-কায়েদার দ্বিতীয় প্রধান মনে করা হতো।
সূত্র:
আল জাজিরা
ফ্রান্স২৪
এএফপি
বিবিসি
The post আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা জাওয়াহিরি: আসলেই কি নিহত হয়েছেন? appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%80%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b7-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%93-2/
No comments:
Post a Comment