মাহমুদ সিদ্দিকী:
১.
খেলাফতে রাশেদা শেষ হবার পর থেকেই শাসক ও আলিমদের সম্পর্কের মধ্যে ভিন্নতা শুরু হয়েছে। খেলাফতে রাশেদায় যেখানে আলিমদের সাথে খলিফাদের সম্পর্ক ছিল সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার, উমাইয়া শাসনের সূচনা থেকে তার পট পরিবর্তন হয়। কিছু দুর্বোধ্য ও অমীমাংসিত প্রশ্ন, খেলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহর পদাঙ্ক থেকে ক্রমান্বয়ে অধঃগতি, জুলুম-নির্যাতন ও ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমতার টানাপোড়েন—নানা পট-প্রেক্ষাপটে শাসক ও আলিমদের মধ্যকার সম্পর্ক ত্রিমুখী রূপ নেয়। একদল আলিম শাসকদেরকে নাসিহার মাধ্যমে শরঈভাবে শাসন পরিচালনায় সহযোগী হন, আরেকদল দৃঢ়তা অবলম্বন করে বিরোধিতা করেন; এবং, তৃতীয় দলটি নীরবতা অবলম্বন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
সন্দিগ্ধ পরিস্থিতিতে এই কর্মপদ্ধতির প্রথম প্রয়োগ দেখা যায় খেলাফতে রাশেদার শেষদিকে, জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফিনের সময় থেকে। জঙ্গে জামালে একদিকে যখন হযরত আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু, অপরদিকে তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ ও যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাযিয়াল্লাহু আনহুমার মতো সাহাবি—তখনও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো সাহাবিদের একটি অংশ নীরব পর্যবেক্ষণের কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। বরং সাহাবিদের সবচেয়ে বড় অংশটিই নীরব থেকেছিলেন। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরিন রহ. বলেন, ‘যখন ফিতনা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজার-হাজার সাহাবি তখনো জীবিত। কিন্তু জঙ্গে জামালে একশোজনও অংশগ্রহণ করেননি; বরং যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের সংখ্যা ত্রিশও হবে না।’[১]
তো, পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন টানাপোড়েনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, আলিমদের একটি অংশ এই সন্দিগ্ধ পরিস্থিতিতে নীরবতা অবলম্বন করতেন। বিশেষত, পরিস্থিতি যখন ফিতনার রূপ নিত।
একথাটি ভালোভাবে স্মর্তব্য যে, ইসলামি শাসনব্যবস্থায় আলিমদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক ও আবশ্যক পর্যায়ের। বিচারবিভাগ, উপদেষ্টামণ্ডলী, শূরা কমিটি ইত্যাদি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পরিষদগুলো পরিচালিত হতো আলিমদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
ইতিহাসে দেখা যায়, শাসকদের সাথে আলিমদের মুখোমুখি কিংবা বৈরী পরিবেশ তৈরির মৌলিক কারণ দুইটি। শরঈ ও রাজনৈতিক। শরঈ বিষয়ে শাসকদের সীমালঙ্ঘন পাওয়া মাত্র আলিমরা এর শক্ত ও সক্ষম বিরোধিতা করতেন। প্রথমে নাসিহার মাধ্যমে শোধরানোর চেষ্টা করতেন। এতে কাজ না হলে প্রত্যেক আলিম নিজ-নিজ পরিসরে শাসকের শরিয়াবিরোধী কার্যক্রম সম্পর্কে মুসলিমদেরকে সতর্ক করতেন এবং শক্ত ভাষায় শাসকের বিরোধিতা করতেন। এক্ষেত্রে তারা কোনো জুলুম-নির্যাতনকে ভয় করতেন না।
২.
শাসকদের সাথে আলেমদের মুখোমুখিতার টানাপোড়েন বেশ পুরোনো। এর ব্যাপকতা শুরু হয় উমাইয়া শাসনামলে। বিশেষত ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সময় থেকে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, এখানে দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। একটি হলো শাসককে নসিহত করা। আরেকটি হলো শাসকের হঠকারিতার কারণে তার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করার কারণে বৈরিতা তৈরি হওয়া। শাসককে নসিহতের ঘটনা খোদ খেলাফতে রাশেদার মধ্যেও অসংখ্য পাওয়া যায়। হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো জাঁদরেল শাসককেও কাঠখোট্টা ভাষায় সাহাবিরা নসিহত করেছেন—ইতিহাসে এমন ঘটনা পাওয়া যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু নবীজির পদাঙ্ক অনুসরণ করে শামে অভিযান প্রেরণ করেন। জুনুদুশ শাম বা শামের বাহিনী নামে পরিচিত সেই বাহিনীগুলোতে ছিলেন আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, মুয়াজ ইবনু জাবাল, আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো জাঁদরেল সাহাবিগণ। শামে বাহিনী প্রেরণের কয়েক মাস পর আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু ইন্তেকাল করেন। খলিফা হন হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু। এই খবর শুনে শাম থেকে দ্বিতীয় খলিফাকে নসিহত করে পত্র লেখেন হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ও মুয়াজ ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহুমা।
চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীর মনীষী আবু নুআইম আসবাহানি (৪৩০ হি.) এই চিঠি উল্লেখ করেছেন। তারা লেখেন—
‘আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ও মুয়াজ ইবনে জাবালের পক্ষ থেকে উমর ইবনুল খাত্তাবের প্রতি।
সালামুন আলাইক। আম্মা বা’দ।
আমরা সবাই আপনাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিয়েছি। এখন থেকে আপনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কারণ, আপনি এই উম্মতের সাদা-কালো, গরীব-ধনী সকলের খলিফা নিযুক্ত হয়েছেন। আপনার সামনে এখন সম্মানী লোক যেমন বসবে, ইতর লোকও বসবে; বন্ধু যেমন বসবে, শত্রুও বসবে। প্রত্যেকেরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সুতরাং আপনি ভাবুন হে উমর, আপনি কেমন শাসক হবেন। আমরা আপনাকে সতর্ক করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি ওই দিবসের কথা, যেদিন চেহারাগুলো বিচলিত থাকবে এবং আত্মা শুকিয়ে যাবে; মহাপরাক্রমশালীর যুক্তির সামনে আর কোনো যুক্তিতর্কের সুযোগ থাকবে না। সকল সৃষ্টি সেদিন তাঁর সামনে নতজানু হয়ে থাকবে; একদিকে রহমতের আশা করবে, আবার পরক্ষণে শাস্তির আশংকা করবে। আমাদেরকে তো হাদিসে বলা হয়েছে, শেষ যামানায় এই উম্মতের অবস্থা এমন হবে যে, প্রকাশ্যে বন্ধুভাবাপন্ন মানুষরা আড়ালে শত্রুভাবাপন্ন হবে। আল্লাহ তাআলার কাছে আমরা আশ্রয় চাই, যেই অনুভূতি থেকে আমরা এই পত্র লিখেছি, আপনার মধ্যে যেন তা ভিন্ন অনুভূতির উদ্রেক না করে। নিশ্চয় এই পত্র আমরা আপনার প্রতি নসিহত হিসেবে লিখেছি।
ওয়াস সালামু আলাইক।’
এই পত্র প্রেরণ করতে সাহাবিদ্বয় কুণ্ঠিত বোধ করেননি। ইতিহাস ঘাঁটলে খেলাফতে রাশেদার যুগে এমন আরও উদাহরণ পাওয়া যাবে। এই পত্রের জবাবে হযরত উমর কী লিখেছিলেন?
তাঁদের পত্রের জবাবে উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু লেখেন,
‘উমর ইবনুল খাত্তাবের পক্ষ থেকে, আবু উবাইদা ও মুয়াজের প্রতি।
সালামুন আলাইকুমা। আম্মা বা’দ।
আপনাদের পত্র আমার কাছে পৌঁছেছে। আপনারা তাতে লিখেছেন—আপনি ভেবে দেখুন হে উমর, কেমন শাসক হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া উমরের শাসন করার কোনো শক্তি ও সক্ষমতা নেই। আপনারা আরও সতর্ক করেছেন সেসব বিষয়ে, যার ব্যাপারে পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। চিরকাল থেকে রাত ও দিনের বিবর্তন মানুষের আয়ুকে কমিয়ে আনছে; মৃত্যু থেকে দূরবর্তী প্রতিটি ব্যক্তিকে পরম পরিণতির নিকটবর্তী করছে। এই পরিক্রমা প্রতিটি নতুনকে করছে জীর্ণ; প্রতিটি প্রতিশ্রুতিকে করছে সত্য। এভাবে একদিন মানুষ তাঁর নির্ধারিত মনযিলে পৌঁছে যাবে—কেউ জান্নাতে, কেউবা জাহান্নামে। আপনারা আমাকে সতর্ক করে আরও লিখেছেন—শেষ যামানায় এই উম্মতের অবস্থা এমন হবে যে, প্রকাশ্যে বন্ধুভাবাপন্ন মানুষরা আড়ালে শত্রুভাবাপন্ন হবে। আপনারা সেই লোক নন; এ সময়টাও শেষ যামানা নয়। শেষ যামানায় মানুষের মাঝে ভয় ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পাবে। মানুষের একে-অপরের প্রতি আগ্রহ হবে তখন নিছক দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য। আপনারা আমার কল্যাণ কামনা করে এই পত্র লিখেছেন; এবং সত্য লিখেছেন। এধরনের পত্র লেখা বন্ধ করবেন না। কারণ, আপনাদের এই পত্রগুলো আমার প্রয়োজন।
ওয়াস সালামু আলাইকুমা।’[২]
দেখা যাচ্ছে, হযরত উমরের প্রতিক্রিয়াও ছিল স্বাভাবিক। যে-কেউ তাকে নসিহত করতে পারবে—এমনটা তিনি ভেবেই রেখেছিলেন। তাই বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া তার দিক থেকে প্রকাশিত হয়নি। তো, খেলাফতে রাশেদার যুগে এটি ছিল স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। যে-কেউ খলিফাকে যেকোনো ভাষায় নসিহত কিংবা সতর্ক করতে পারতেন।
তবে শাসকের সাথে বৈরিতার বহিঃপ্রকাশ পূর্ণরূপে ঘটে ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার শাসনামলে।
৩.
ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার শাসনামলে আলেমসমাজ
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এই সময়টা বড় বেদনাবিধুর। ‘আসরুল ফিতনাহ’ বা ফিতনার যুগ বলতে যে-সময়গুলোকে বোঝানো হয়, ইয়াযিদের শাসনামল তার একটি। হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের মাধ্যমে সাবায়িরা মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে যে-রক্তাক্ত ও বিশৃঙ্খল ইতিহাসের সূচনা করে, তার জের টানতে হয় হযরত আলি রাযিয়াল্লাহু আনহুকে। এই বিশৃঙ্খল ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটে ৪১ হিজরিতে, হযরত হাসান ইবনে আলি ও হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুমার পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহু খেলাফতের হক ছেড়ে দেন মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাতে। ৪১ হিজরি থেকে ৬০ হিজরি—‘ওলি আহদে’র প্রসঙ্গটি বাদ দিলে সম্পূর্ণ স্থিতিশীলভাবে শক্ত হাতে খলিফা মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু বিশ বছর মুসলিম জগত শাসন করেন। এই সময় তিনি ব্যাপকভাবে জিহাদের প্রতি মনোনিবেশ করেন। রোমান বাইজেন্টাইনদের সাথে শুরু হয় লাগাতার যুদ্ধ। যার মূল লক্ষ্য ছিল কনস্টান্টিনোপল জয় করা। পদাতিক ও সামুদ্রিক—উভয় পথে তিনি অভিযান প্রেরণ করেন। তার শাসনামলেই ৪৮ হিজরিতে মুসলিম বাহিনী সিসিলি পৌঁছে। সিজিস্তান, কোহেস্তানও তার শাসনামলেই বিজিত হয়। মুহাল্লাব বিন আবু সুফরার নেতৃত্বে ভারত উপমহাদেশেও অভিযান প্রেরণ করেন। মোটকথা—তার একক শাসনামলের পুরো সময় ইসলামি খেলাফতের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কাফিরদের সাথে লড়াই করা।
পূর্বের বিশৃঙ্খল সময়টা আবারও ফিরে আসে ইয়াযিদকে ‘ওলি আহদ’ নিযুক্ত করা হলে। এরপর ইয়াযিদ যখন শাসক হয়, বিরোধ ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ইয়াযিদকে কি শাসক মানা হবে? না মানা হবে না? বলাবাহুল্য, তখনো খেলাফতের যোগ্য অসংখ্য সাহাবি জীবিত ছিলেন। হযরত হুসাইন ইবনু আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন যোগ্য হকদার। এ নিয়ে সাহাবি ও আলিম তাবেয়িদের মধ্যে মিশ্র পরিবেশ দেখা যায়। ইয়াযিদের খেলাফতের খবর ইবনে উমরের কাছে পৌঁছলে তাঁর বাক্য ছিল এমন—‘যদি সে কল্যাণকর হয়, তাহলে আমরা খুশি। আর যদি আপদ হয়, তাহলে সবর করব।’[৩] ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া ফিতনার ভয়াবহতা সামনে থাকায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু সহ অনেকে নীরবতা অবলম্বন করেন। অনেকে মৌখিক অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সক্রিয় কর্মপন্থা অবলম্বন থেকে নীরব থাকেন।
তবে আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর, হুসাইন ইবনে আলি ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুম ইয়াযিদের খেলাফতের সরাসরি বিরোধিতা করেন। শুরুর দিকে ইবনে উমর তাঁদের সাথে থাকলেও বাইআত ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর তিনি ফিতনার আশঙ্কায় নীরব হয়ে যান। পক্ষান্তরে এই তিনজন শুরু থেকেই ইয়াযিদের হাতে বাইআত হতে অস্বীকৃতি জানান। প্রসঙ্গত বলা রাখা ভালো, তাঁদের কাছে মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু ‘ওলি আহদে’র বাইআত চাওয়া নিয়ে ইতিহাসে একাধিক বানোয়াট ও মুখরোচক বর্ণনা আছে। সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।
হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর বিরোধিতা ও শাহাদাত
আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু ইয়াযিদের বাইআত গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেও নিজে খেলাফতের হকদার ছিলেন না। পক্ষান্তরে বাকি দুইজন খেলাফত দাবি করেন। ‘খেলাফত দাবি করেন’ কথাটি যতটা সরলীকরণ হয়ে যায়, বিষয়টা ততটা সরলও নয়। যেহেতু হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু শুরু থেকেই বাইআত হননি, অপরদিকে কুফার লোকজন তাঁর হাতে বাইআত হতে চাচ্ছিল, যোগ্যতার বিচারেও তিনি ইয়াযিদ থেকে যোজন-যোজন এগিয়ে, তাই সার্বিক বিচারে খলিফা হবার অবস্থা ও অবস্থান—উভয়টাই ছিল হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে। এই প্রেক্ষিতে তিনি কুফায় বাইআত গ্রহণের জন্য লোক প্রেরণ করেন।
হিজরি দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের ঐতিহাসিক খলিফা ইবনে খাইয়াত লেখেন, ৬১ হিজরিতে হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় পাঠান তাঁর পক্ষে বাইআত গ্রহণের জন্য। বিপুল মানুষ মুসলিম ইবনে আকিলের কাছে বাইআত প্রদান করে। ইয়াযিদ একথা জানতে পেরে আব্দুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে কুফায় পাঠায়। ইরাকের সরকারি বাহিনী নিয়ে ইবনে যিয়াদ মুসলিম ইবনে আকিল ও হানি ইবনে উরওয়াকে হত্যা করে।[৪]
হুসাইন ইবনে আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু ও ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বৈরী সম্পর্কের সমাপ্তি হয় হযরত হুসাইনের মর্মান্তিক শাহাদাতের মাধ্যমে; ৬১ হিজরির ১০ই মুহাররমে, কারবালা প্রান্তরে।
‘হাররা’র ঘটনা
একদিকে ইয়াযিদের হাতে যেন বাইআত না হতে হয়, এজন্য আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু মক্কায় চলে যান। অপরদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা রাযিয়াল্লাহু আনহু সহ মদিনাবাসীদের একটি প্রতিনিধি দল ইয়াযিদের সাক্ষাতে যান। ইয়াযিদ তাদেরকে বেশ সমাদর করে উপঢৌকন দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা ফিরে এসে মদিনাবাসীর সামনে ইয়াযিদের পাপাচার ও দোষত্রুটি তুলে ধরেন। সবাইকে ইয়াযিদের বাইআত ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। মদিনাবাসী তখন ইয়াযিদের বাইআত ত্যাগ করে। সময়টা তখন ৬৩ হিজরি।
পরামর্শের ভিত্তিতে কুরাইশদের আমির নির্ধারণ করা হয় উবাইদুল্লাহ ইবনে মুতিকে, আনসারদের আমির বানানো হয় আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালাকে; আর সকল মুহাজির গোত্রের আমির বানানো হয় মা’কিল ইবনে সিনান রাযিয়াল্লাহু আনহুমকে। বাইআত ত্যাগ করার পর তারা উসমান ইবনে মুহাম্মদ ও বনু উমাইয়ার লোকজনকে মদিনা থেকে বের করে দেয়।[৫]
এই সংবাদ জানতে পেরে ইয়াযিদ তার বিশ্বস্ত সেনাপতি মুসলিম ইবনে উকবাকে এক শক্তিশালী সেনাবাহিনী দিয়ে মদিনায় পাঠায়। মুসলিমকে ইয়াযিদ নির্দেশনা দেয়—মদিনাবাসীকে তিনবার পুনরায় বাইআত নেবার আহ্বান জানাবে। যদি আহ্বান ফিরিয়ে দেয়, তাহলে তিনদিন সেনাবাহিনীর জন্য মদিনাবাসীদের রক্তকে বৈধ করে দিবে। মদিনার লড়াই শেষ করে মক্কায় গিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে গ্রেফতার করবে।
মদিনাবাসীদের সাথে মুসলিমের বাহিনীর লড়াই হয়। আনসারদের নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা রাযিয়াল্লাহু আনহু। মদিনার চারদিকে খন্দক নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বনু হারিস বিশ্বাসঘাতকতা করে খন্দকের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে মুসলিমের বাহিনীর একটি দলকে মদিনায় ঢুকিয়ে নেয়। তাদের তাকবিরধ্বনি শুনে মদিনাবাসীদের মনোবল ভেঙে যায়। মুসলিম ইবনে উকবার বাহিনীর হাতে মদিনার পতন ঘটে। এরপর টানা তিনদিন মুসলিম ইবনে উকবার বাহিনী মদিনায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। যারা বেঁচে ছিল, তাদের কাছ থেকে এই মর্মে বাইআত নেওয়া হয়—মদিনাবাসীরা ইয়াযিদের দাসানুদাস। ইয়াযিদ যখন যেভাবে চাইবে, তাদেরকে হত্যার হুকুম দিতে পারবে। তাদের জান-মাল ও পরিবারের ব্যাপারে যা-ইচ্ছা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এই তিনদিনকে বলা হয় ‘ইয়াউমুল হাররা’ বা হাররার দিন। মদিনার হত্যাযজ্ঞ শেষ করে মক্কায় যাওয়ার পথে মুসলিম ইবনে উকবার মৃত্যু হয়। [৬]
মদিনাবাসী যখন ইয়াযিদের বাইআত ত্যাগ করে, তখনকার পরিস্থিতিতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর কর্মপন্থাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর সন্তান ও গৃহকর্মীদেরকে একত্রিত করেন। তারপর বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে। আমরা এই লোকের হাতে আল্লাহ ও রাসূলের নাম করে বাইআত হয়েছি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে কোনো ব্যক্তির হাতে বাইআত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা কিছু আছে বলে আমি জানি না। যদি আমি জানতে পারি যে, তোমরা কেউ বাইআত ত্যাগ করেছ, বা সবার অনুসরণ করেছ, তাহলে তার ও আমার মাঝে এটাই হবে শেষ কথা।[৭]
আমরা একটু আগেই দেখেছি, ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু ‘ওলি আহদে’র সময় বাইআত দিতে অস্বীকৃতি জানালেও মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর ইন্তেকালের পর সাধারণভাবে ইয়াযিদের বাইআত হয়ে গেলে তিনিও মেনে নেন। এর প্রেক্ষিতে ইবনে উমর সহ উম্মাহর একটি অংশ ফিতনার আশঙ্কায় বাইআত ত্যাগ করেননি। মৌখিকভাবে ইয়াযিদের কর্মকাণ্ড ও জুলুমের বিরোধিতা করলেও বাইআত ত্যাগ করে ফিতনা তৈরি হোক—এমনটা তারা চাননি। তবে, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মদিনাবাসীদের এই বাইআত ত্যাগ ছিল ধারাবাহিক অস্থিতিশীল পরিবেশ ও বাইআত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে ইয়াযিদের জোর-জবরদস্তির ফলাফল। পূর্বের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মক্কা ও মদিনাবাসী—কেউই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইয়াযিদকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। ‘ওলি আহদে’র জন্য মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু হজের সময় বাইআত গ্রহণের ঘটনা দেখলে একথা পরিষ্কার হয়।
ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের ডাক
ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু শুরু থেকেই ইয়াযিদের খেলাফতের বিরোধিতা করেছেন। তার বাইআত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ইয়াযিদ যখন খলিফা হয়, ইবনে যুবাইর তখন মক্কায়। মক্কার গভর্ণর তখন হারিস ইবনে খালিদ ইবনিল আস। ইবনে যুবাইরের বাইআত নেওয়ার জন্য ইয়াযিদ লোক পাঠায়। উপঢৌকন হিসেবে সাথে পাঠায় রৌপ্যমুদ্রা ও রেশমের তৈরি পোশাক। ইবনে যুবাইর সাফ জানিয়ে দেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি ইয়াযিদের হাতে বাইআত হব না; তার আনুগত্যও গ্রহণ করব না।’[৮]
মুসলিম ইবনে উকবার নেতৃত্বাধীন হাররার বাহিনী মক্কার দিকে রওয়ানা করে। উদ্দেশ্য—ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করা। পথিমধ্যে মুসলিম ইবনে উকবা মারা গেলে হুসাইন ইবনে নুমাইর আল-কিন্দিক বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করে। হুসাইন ইবনে নুমাইর তার বাহিনী নিয়ে মক্কায় উপস্থিত হয়। ইবনে যুবাইর তার অনুসারী সহ তখন বাইতুল্লায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। হুসাইনের বাহিনী তাকে সর্বাত্মকভাবে অবরুদ্ধ করে ফেলে। এই অবরোধ চলাকালে ইয়াযিদ মারা গেলে অবরোধ ভেঙে যায়। শামের বাহিনীও ফিরে যায়।[৯]
ইয়াযিদের মৃত্যুর পর প্রশ্ন আসে—কে হবে পরবর্তী খলিফা?
ইয়াযিদের মৃত্যুর পর তার নিযুক্ত মদিনার গভর্নর মারওয়ান শামে গিয়ে খেলাফত দাবি করেন। এদিকে মক্কায় খেলাফতের ডাক দেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু। সময়টা তখন ৬৪ হিজরি। ঐতিহাসিক খলিফা ইবনে খাইয়াত লেখেন, ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু নিজের বাইআতের আহ্বান জানান ইয়াযিদের মৃত্যুর পর। ৬৪ হিজরির রজব মাসে তার নামে খেলাফতের বাইআত গ্রহণ করা হয়। ইয়াযিদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজেও বাইআতের আহ্বান জানাননি; তার পক্ষ হয়েও কেউ আহ্বান জানায়নি। [১০]
ইবনে যুবাইরের এই খেলাফত শামের একাংশ বাদে সমগ্র মুসলিমরা মেনে নিয়েছিলেন। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. লেখেন, ইবনে যুবাইর যখন খেলাফতের আহ্বান জানান এবং সে আহ্বানে মানুষজন বাইআত হয়, তখন মক্কা-মদিনা, ইরাক, মিশর ও আশেপাশের অঞ্চলগুলো তাঁর আনুগত্য মেনে নেয়। যাহহাক ইবনে মুযাহিম রাযিয়াল্লাহু আনহু জর্ডান ব্যতীত সমগ্র শামে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে বাইআত নেন। অপরদিকে মারওয়ানের আহ্বানে সাড়া দেয় ফিলিস্তিন ও হিমস বাসী। ইবনে হাজার এও লেখেন, ইবনে যুবাইরের একচ্ছত্র গ্রহণযোগ্যতা দেখে মারওয়ান একবার ভেবেছিলেন, তিনিও ইবনে যুবাইরের হাতে বাইআত হয়ে যাবেন। কিন্তু শামবাসীর একাংশ তার হাতে বাইআত হয় এবং তাকে খলিফা হতে উদ্বুদ্ধ করে। সে অনুযায়ী ইবনে যুবাইরের শাম প্রতিনিধি যাহহাক ইবনে মুযাহিম রাযিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে যাহহাক রাযিয়াল্লাহু আনহু শহিদ হলে মারওয়ান সমগ্র শাম অধিকারে নিয়ে নেন। এরপর মিশর অধীনস্ত করেন। এর কিছুদিন পর, খেলাফত দাবি করার মাত্র ছয় মাস পর মারওয়ান ইন্তেকাল করেন। উমাইয়া খেলাফতে পিতার উত্তরাধিকারী হয় আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান।[১১]
৪.
আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে আলেমসমাজ
এখানে মৌলিকভাবে একটি কথা স্মর্তব্য যে, উমাইয়া খেলাফতের সূচনা হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর সময় থেকে ধরা হলেও, তার পরবর্তীতে শক্তিশালী ও একচ্ছত্র উমাইয়া খেলাফত গড়ে ওঠে মূলত আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের সময় থেকেই। ক্ষমতার টানাপোড়েনের যে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খল সময় মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে গত হয়েছে, আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের সময় থেকে তা কাঠামোবদ্ধ স্থিতিশীল রূপ ধারণ করে। একারণে উমাইয়াদের শাসনপদ্ধতি ও দমন-পীড়নের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ উচ্চকিত থাকলেও শরঈ খেলাফত হিসেবে আলিমগণ এর বিরোধিতা করেননি।
উমাইয়া খেলাফতের ইতিহাসে আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান একটি দ্বিমুখী চরিত্র। একদিকে তিনি বিজ্ঞ আলিম ও মুহাদ্দিস, আরেকদিকে রুক্ষ-কঠোর-নির্দয় শাসক। খলিফা হওয়ার আগে তিনি ছিলেন মদিনার শ্রেষ্ঠ চার ফকিহের একজন। আবুয যিনাদ বলেন, ‘ফুকাহাউল মাদিনাহ’ বা মদিনার ফকিহ ছিল মূলত চারজন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব, উরওয়া ইবনে যুবাইর, কাবিসা ইবনে যুয়াইব ও খলিফা হবার পূর্বের আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান। যুগশ্রেষ্ঠ জাঁদরেল আলেম ইমাম শা’বি রহ. বলেন, যার সাথেই আমি ইলমি মুযাকারা করেছি, আমার শ্রেষ্ঠত্ব দেখেছি। একমাত্র আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান ছাড়া। তার সাথে কোনো হাদিস নিয়ে মুযাকারা করলেও সে আমার চেয়ে এগিয়ে থাকত। কবিতা নিয়ে মুযাকারা করলেও সে-ই এগিয়ে থাকত।[১২] খলিফা হওয়ার পর ফকিহ আব্দুল মালিকই হয়ে গেলেন শক্ত হাতের শাসক।
ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত
৬৪ হিজরি থেকে ৭২ হিজরি—এই দীর্ঘ সময়টিতে দূরদর্শী আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান ধীরে ধীরে গুছিয়ে ওঠেন। ৭২ হিজরির আগ পর্যন্ত তিনি স্বীকৃত খলিফা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সরাসরি ঝামেলায় যাননি। চতুর্দিকের সম্ভাব্য শত্রুদেরকে বশ করা ও বিভিন্ন অঞ্চলকে নিজের আয়ত্তাধীন করা—এদিকেই পুরোমাত্রায় মনোনিবেশ করেন। ৭১ হিজরি পর্যন্ত ইসলামি খেলাফতের স্বীকৃত খলিফা হিসেবে প্রতি বছর ইবনে যুবাইরের নেতৃত্বে হজ পালিত হতে থাকে। ঝামেলা শুরু হয় ৭২ হিজরি থেকে। চতুর্দিক নিষ্কণ্টক বুঝতে পেরে আব্দুল মালিক এবার ইবনে যুবাইরের প্রতি মনোযোগী হন। যেকোনো মূল্যে নিজের মসনদকে একচ্ছত্র ও নিষ্কণ্টক করতে হবে। এর জন্য দায়িত্ব দেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাকাফিকে।
তুখোড় দূরদর্শী আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের দুর্ধর্ষ ও আত্মঘাতী আবিষ্কার ছিল সাকিফ গোত্রের হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। আত্মঘাতী আবিষ্কার এই অর্থে যে, শাসনকার্যকে নিষ্কণ্টক করতে জুলুম-নির্যাতন-খুন—কোনোকিছুই সে বাদ রাখেনি। শুধু আত্মঘাতী আবিষ্কারই নয়, হাফেজ যাহাবির ভাষায়, হাজ্জাজ ছিল তার অসংখ্য পাপের একটি।[১৩] এজন্য হাফেজ যাহাবি রহ. হাজ্জাজের জীবনী শুরু করেছেন বদদোয়ার মাধ্যমে। তার ভালো ও খারাপ কাজ সম্পর্কে এক কথায় মূল্যায়ন করেছেন এভাবে—‘হাজ্জাজের পাপের সমুদ্রে ডুবে যাওয়া কিছু ভালো কাজও আছে।’[১৪]
৭২ হিজরিতে আব্দুল মালিক হাজ্জাজকে মক্কায় পাঠান, ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথে লড়াই করার জন্য। যিলকদ মাসে সর্বপ্রথম লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু বাইতুল্লায় আশ্রয় নেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তখন কাবার দিকে তাক করে মিনজানিক স্থাপন করে। এখানে মূলত যুদ্ধ ছিল না। ছিল একপাক্ষিক শক্তিপ্রদর্শন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের শক্তিশালী বাহিনীর সামনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মোকাবিলা করার পরিস্থিতি ছিল না। হাজ্জাজ ভেবেছিল ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু হারাম থেকে বেরিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এই অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্য দিয়েই ৭২ হিজরির হজ পালিত হয়। একদিকে হাজ্জাজ নেতৃত্ব দেয়, অপরদিকে ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু নিজ অনুসারীদের নিয়ে হজ আদায় করেন।
হাজ্জাজ আবারও হামলা করে। এবার হাজ্জাজের মিনজানিকের আঘাতে কাবা ধসে যায়। পাথর নিক্ষেপের ফলে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দীর্ঘদিন অবরোধ ও লড়াইয়ের পর ৭৩ হিজরির জুমাদাল উখরায় ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত বরণ করেন।[১৫]
এই সময় সাহাবিদের অনেকে ও কিবারে তাবেয়ি আলেমদের অধিকাংশ জীবিত ছিলেন। তাঁদের জীবনী থেকে বিক্ষিপ্তভাবে যা জানা যায় তা হলো—সাধারণভাবে তাঁদের মধ্যে দুই ধরনের মানুষ ছিলেন। একদল যেকোনো একজনের পক্ষ নিয়েছেন, আরেকদল নীরবতা অবলম্বন করেছেন। একদিকে মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যার মতো যাহেদ ও আবেদ তাবেয়ি ইবনে যুবাইরের হাতে বাইআত হতে অস্বীকৃতি জানান। অপরদিকে হাসান বসরির মতো তাবেয়ি নিজ মজলিসে উমাইয়াদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেও ব্যাপকভাবে বলার সাহস পেতেন না। উম্মাহর হকপন্থি সেসব সাহাবি ও তাবেয়ি আলেমগণের মধ্যে ইবনে যুবাইরের মতো সক্রিয় ব্যক্তি যেমন ছিলেন, তেমনি ইবনে উমর, ইবনুল হানাফিয়্যা ও হাসান বসরির মতো নীরব মানুষও ছিলেন। কেবল প্রতিবাদী দিকটিই যেমন সামগ্রিক চিত্র নয়, তেমনি ইবনে উমরের মতো নীরবতাও মূল চিত্র নয়। সামগ্রিক চিত্র হলো—আলেমদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শাসন সংক্রান্ত এসব ইখতিলাফ ও ফিতনার বিষয়ে নির্মোহ থাকতেন। আর যারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের আলেম, তাঁদের মধ্যে উপরোক্ত দুধরনের কর্মপন্থা দেখা যেত। প্রত্যেকে নিজের দক্ষতা, সক্ষমতা, আগ্রহ ও পরিসর অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ করতেন।
৫.
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আলিম নির্যাতন
এতক্ষণ পর্যন্ত যে চিত্র ছিল, এটাকে ক্ষমতার টানাপোড়েন বলা গেলেও পরবর্তী অংশটুকুকে নিছক ক্ষমতার টানাপোড়েন বললে সঠিক চিত্রটি সামনে আসে না। ইয়াযিদ, মারওয়ান কিংবা আব্দুল মালিকের শাসনের প্রথম যুগ—উমাইয়া খেলাফতের এই সময়টি কোনোভাবেই স্থিতিশীল ছিল না। তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতাও অর্জিত হয়নি। বরং ক্ষমতার টানাপোড়েন বলতে যা বোঝায়, তা বেশ জোরেসোরেই ছিল। পক্ষান্তরে ৭২ হিজরির পর থেকে সময়টা হলো উমাইয়াদের একচ্ছত্র শাসনের যুগ। বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ তৈরি হবার মতো পরিস্থিতি হলেও কখনো তা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। অঙ্কুরেই তা বিনাশ করে দেওয়া হয়েছে। হাজ্জাজ কর্তৃক আলেমদের নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোতে ক্ষমতাকে ‘টান’ দেওয়ার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি আলেমদের তৈরি হয়নি; সেদিকে তারা যানওনি। আলেমগণ হাজ্জাজ ও শাসকের শরিয়া লঙ্ঘন ও জুলুমের সরল-স্বচ্ছ প্রতিবাদ করেছেন। এই প্রেক্ষিতে নির্যাতন হয়েছে। সুতরাং আলেমদের এই মুখোমুখিতাকে সরলভাবে টানাপোড়েন বলার সুযোগও নেই।
ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত
শুরু থেকেই আমরা দেখে এসেছি, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু সবসময় ফিতনাকে এড়িয়ে চলেছেন। জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফিনে যখন ফিতনা হলো, ইয়াযিদ যখন খলিফার মসনদে বসল, কারবালা ও হাররায় যখন ফিতনা হলো, ইবনে যুবাইর যখন খেলাফত আহ্বান করলেন—সবক্ষেত্রে, সবসময় ইবনে উমর ফিতনাকে এড়িয়ে চলেছেন। থেকেছেন সবসময় নীরবে, নিভৃতে। কিন্তু হাজ্জাজের খড়গ থেকে তিনিও রক্ষা পাননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণকারী, দ্বিতীয় খলিফা উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর পুত্র এই মহান সাহাবিকেও হাজ্জাজ শহিদ করে দেয়।
কী ছিল তার ‘অপরাধ’? অপরাধ ছিল এটুকুই, শূলীতে চড়ানো শহিদ ইবনে যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করেছিলেন। আফসোস করে বলেছিলেন, তোমাকে মানা করেছিলাম; তবু কেন এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে গেলে। আফসোস করে ইবনে যুবাইরের মানাকিব-মর্যাদা বর্ণনা করেছিলেন।[১৬] আরেকটা ছিল তার ‘অপরাধ’। হাজ্জাজের নামাজের গাফলিত কারণে তিনি তার পিছনে নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। হাজ্জাজ অনুমান করে নেয়, খলিফাপুত্র সুযোগ পেলেই উমাইয়া খেলাফতের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন। তাই তাকে হত্যা করতে হবে।
৭৩ হিজরিতে হাজ্জাজের নির্দেশে তার লোকেরা ইবনে উমরের পায়ে বিষমিশ্রিত বল্লম দিয়ে আঘাত করে। সেই বিষক্রিয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং এতেই শাহাদাত বরণ করেন। অসুস্থ হলে হাজ্জাজ তাকে দেখতে গিয়েছিল। ‘কে করেছে আপনার এই হাল’-এর উত্তরে ইবনে উমর বলেছিলেন, ‘তুমি করেছ। কারণ, যেখানে অস্ত্র ধারণ করা হালাল নয়, সেখানে তুমি অস্ত্র ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছ।’[১৭]
ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো নিরীহ-নিভৃত মানুষকেও হাজ্জাজ রেহাই দেয়নি।
বিখ্যাত তাবেয়ি হাসান বসরি রহ. সক্রিয় প্রতিবাদী কোনো আলেম ছিলেন না। তিনি নিজ পরিসরে হাজ্জাজ ও আব্দুল মালিকের জুলুম-নির্যাতনের সমালোচনা করতেন। এই সংবাদ হাজ্জাজের কাছে পৌঁছলে হাজ্জাজ তাকে হত্যা করার সংকল্প করে। হাসান বসরির খুঁজে হাজ্জাজ তরবারি সহ লোকজন পাঠায়। এই খবর জানতে পেরে হাসান বসরি আত্মগোপন করে প্রাণ রক্ষা করেন।[১৮]
তবে, ক্ষমতার টানাপোড়েন নিয়েই হাজ্জাজের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিখ্যাত তাবেয়ি ও অসংখ্য তাবেয়ি-তাবে তাবেয়ির উস্তাদ সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ.। আশি হিজরির দিকে আব্দুর রহমান ইবনুল আশআস যখন হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, সাঈদ ইবনে জুবাইরও তাতে যোগ দেন। পরবর্তীতে হাজ্জাজের বাহিনীর মোকাবেলায় আশআসের বাহিনী পরাজিত হলে সাঈদ ইবনে জুবাইর আসবাহান পালিয়ে যান। প্রশাসনের লোকজন তাকে গ্রেফতার করে হাজ্জাজের কাছে নিয়ে আসে। হাজ্জাজ তাকে ঐতিহাসিক কথোপকথন শেষে হত্যা করে।[১৯]
হাজ্জাজের শাসনামলে এধরনের হত্যা ও আলেম নির্যাতন ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে যা-যা প্রয়োজন, তার কোনোটা করতে সে কুণ্ঠিত হতো না। এখানে কেবল অতি অল্প কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করা হয়েছে। ইতিহাসে এমন অসংখ্য ঘটনা পাওয়া যাবে। শুধু হাজ্জাজের হাতে নির্যাতিত ও নিহত সাহাবি-তাবেয়ি ও আলেমদের নিয়েই ঢাউস সাইজের একটি গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব। উমাইয়া খেলাফতের অন্য আমিররাও কম যেতেন না। তেমনি একটি ইতিহাস দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।
৮৪ হিজরিতে আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান তার দুই ছেলে ওয়ালিদ এবং সুলাইমানের জন্য ‘ওলি আহদ’ হিসেবে বাইআত নেওয়া শুরু করেন। মদিনার গভর্ণর হিশাম ইবনে ইসমাইল তখন সায়্যিদুত তাবেয়িন সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে ওয়ালিদ এবং সুলাইমানের বাইআতের জন্য ডেকে পাঠান। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব দুই আমিরের হাতে বাইআত হতে অস্বীকৃতি জানান। এই অপরাধে হিশাম ইবনে ইসমাইল তাকে একশত বেত্রাঘাত করেন।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব হিশামকে বলেন, আব্দুল মালিক যদি চায় আমি ওয়ালিদের হাতে বাইআত হব, তাহলে সে নিজের বাইআত সরিয়ে নিক। হিশাম তখন প্রস্তাব দেয়, তুমি এই দরজা দিয়ে ঢুকে ওই দরজা দিয়ে বের হয়ে যাও। যাতে মানুষ দেখে বুঝতে পারে তুমি বায়আত গ্রহণ করেছ।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রহ. তাতেও অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, আমার দ্বারা কেউ যেন ধোঁকাগ্রস্ত না হয়। হিশাম তখন তাঁকে আবার একশত চাবুক মারে। তার পরনের কাপড় খুলে পশমের অন্তর্বাস পড়ায়। ধারণা করা হচ্ছিল—তাঁকে শূলীতে চড়ানো হবে।
ঘটনার বিবরণদাতা আবুল মিকদাম বলেন, আমরা কিতাব পড়ছিলাম। এমন সময় সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে আমাদের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই তাকে একশত চাবুক মারা হয়েছে। পরানো হয়েছে পশমের অন্তর্বাস। তারা তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে শূলীতে চড়ানোর ভয় দেখিয়ে। সাঈদ পরে বলেন, যদি জানতাম তারা আমাকে শূলীতে চড়াবে না, তাহলে আমি তাদের অন্তর্বাস পরতাম না।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রহ.-এর সাথে হিশামের ব্যবহার শুনে আব্দুল মালিক মন্তব্য করে, হিশাম খুব জঘন্য কাজ করেছে। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবের মতো লোককে চাবুক দিয়ে আঘাত করা যায় না। উচিত ছিল—তার গর্দান ফেলে দেওয়া অথবা তাকে ছেড়ে দেওয়া। [২০]
ক্ষমতার এই টানাপোড়েন ও শাসকদের মুখোমুখি আলেমদের দাঁড়ানো—এই প্রেক্ষাপট যুগে-যুগে তৈরি হয়েছে। সাহসী আলেমগণ সরাসরি এর মোকাবেলা করেছেন। আবার অন্যরা নিজ পরিসরে প্রতিবাদ করেছেন। প্রত্যেকে নিজ সামর্থ্যের সীমা অনুযায়ী প্রতিবাদ করেছেন। এমন ঘটনা কেবল উমাইয়া খেলাফতেই নয়, পরবর্তী সময়েও অসংখ্য পরিমাণে ঘটেছে। শরিয়ার বিধান লঙ্ঘিত হলে, কিংবা জুলুম-নির্যাতন হলে খোদ খলিফাদের বিপক্ষে যেখানে আলেমগণ দাঁড়িয়েছেন, সেখানে কুফর ও জুলুমে লিপ্ত শাসক ও শাসনব্যবস্থার বিপরীতে দাঁড়ানো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই স্বাভাবিকতা আলেমদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য; নববী দায়িত্বেরও অংশ।
তথ্যসূত্র:
[১] আস-সুন্নাহ ২/৪৬৬, আবু বকর আল-খাল্লাল, দারুর রায়াহ; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/৪৭৪, দার হিজর
[২] হিলইয়াতুল আউলিয়া ১/২৩৭, দারুল কিতাবিল আরাবি
[৩] মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা নং-৩০৫৭৫
[৪] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৩১, দার তাইবা
[৫] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৩৭, দার তাইবা
[৬] ফাতহুল বারি ১৩/৮৪, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি। মাকতাবাতুস সফা, প্রথম সংস্করণ।
[৭] সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৭১১১
[৮] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৫২
[৯] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৫৪-২৫৫
[১০] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৫৭-২৫৮, দার তাইবা
[১১] ফাতহুল বারি ১৩/৮৪, ইবনে হাজার, মাকতাবাতুস সফা, প্রথম সংস্করণ
[১২] আল-কামিল ফিত তারিখ ৩/৫৩৩, দারুল কিতাবিল আরাবি
[১৩] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৪/২৪৯
[১৪] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৪/৩৪৩
[১৫] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৬৮-২৬৯
[১৬] কিতাবুল মিহান, পৃষ্ঠা-১৮১, আবুল আরব তামিমি
[১৭] আল-কামিল ফিত তারিখ ৩/৪১০, ইবনুল আসির, দারুল কিতাবিল আরাবি
[১৮] কিতাবুল মিহান, পৃষ্ঠা-১৬২, আবুল আরব তামিমি
[১৯] কিতাবুল মিহান, পৃষ্ঠা-১৮৭-১৯১, আবুল আরব তামিমি
[২০] তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা-২৮৯-২৯০
The post উমাইয়া শাসনামলে ক্ষমতার টানাপোড়েন : শাসকের মোকাবেলায় আলেম সমাজ appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/74235/
No comments:
Post a Comment