Thursday, January 28, 2021

কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহজ করতে মুসলিম ইয়ুথ সার্কেলের ৬ দাবি

ফাতেহ ডেস্ক:

‘বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা প্রতিটি কওমি শিক্ষার্থীদের অধিকার। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বৈধ পথ ও পন্থা তৈরি দেওয়া সকলের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন দেশের একাধিক শিক্ষাবিদ ও এমপি প্রফেসর আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

‘কওমী শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মুসলিম ইয়ুথ সার্কেলের এক সেমিনারে তারা একথা বলেন।রাজধানী ঢাকার ফকিরাপুলের হোটেল রাহমানিয়া রুফটপ রেষ্টুরেন্টে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

মাদরাসা দারুর রাশাদ এর প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ সালমান এর সভাপতিত্বে ও মুসলিম ইউ সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোহাম্মদ মনযূরুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে  প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তার বক্তব্যে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘কওমি মাদরাসার জন্য কওমি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার প্রয়োজন আছে। এটা নিয়েও আমি কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। কওমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কওমি ছাত্রদের যেতে আরও সহজ হবে। তবে কওমি বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়টি কিভাবে হতে পারে তা আমরা খুব দ্রুতই দেখবো। সে ক্ষেত্রে কওমি মাদরাসা শিক্ষার সম্মিলিত শিক্ষা সংস্থা আল হাইআতুল উলয়ার অধীনে অনুমোদন হতে পারে’।

তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন – মুসলিম ইয়ুথ সার্কেল যদি আল হাইআর অধিনে ওয়ার্কিং প্ল্যান করেন এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দরকার হয় তাহলে আমার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, কওমি মাদরাসার সার্টিফিকেট দিয়ে অবশ্যই সরকারি বেশকিছু জায়গায় চাকরি করা সম্ভব। বিশেষ করে দারুল আরকাম, সরকারি মসজিদ কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন পর্যায়ে দাওরায়ে হাদিসের সনদ দিয়ে চাকরি নেওয়া সম্ভব।

আবু রেজা নদভী বলেন – কওমি ছাত্রদের দেওবন্দ ও নদওয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমি কাজ করবো। প্রয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আমরা সাক্ষাত করবো। এছাড়াও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেবো। বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ প্রতিটি সেক্টরে আমি এসব নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেবো। তবে কওমি ছাত্রদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ওয়ার্কিং প্লেসে কাজ করতে হবে।’

বক্তব্যে তিনি আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহ. এর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন আল্লামা শাহ্ শফী রহ বেঁচে থাকলে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় কওমি ছাত্রদের যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন হয়ে যেত। তবে আপনারা এ বিষয়টি চাইলে খুব দ্রুতই হয়ে যাবে।

সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আল হাইআতুল উলয়ার অধীনে যখন কওমি মাদরাসার সনদের মান দেয়া হয়েছে তখন আমি সে কমিটির মধ্যে ছিলাম। আমি অবশ্যই আমার জায়গা থেকে সার্বিক চেষ্টা করবো যেন বিষয়টি একটি গোছালো প্রক্রিয়ার মধ্যে আসে।’ এছাড়াও তিনি বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে কওমি শিক্ষার্থীদের কী কী বাধা রয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন।

একই সাথে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সদিচ্ছা ছিলো এবং তিনি মরহুম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহ. কে সর্বোচ্চ সম্মান দিতেন। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু কওমি মাদরাসার প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিক তাই বিষয়টি তিনি সর্বোচ্চ বিবেচনা করবেন বলেও জানান তিনি।

সেমিনারে বিশেষ ৬ টি দাবিসহ মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মুসলিম ইয়ুথ সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। প্রবন্ধে সরকার, সংশ্লিষ্ট মহল এবং দেশবাসীর প্রতি ৬ টি দাবি তুলে ধরেন। ৬ দফা দাবিগুলো হলো:

১. কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহজ ও নিষ্কণ্টক করতে সরকারিভাবে কওমি সনদকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক।

২. কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথিবীর সকল দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে তাদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা সহজলভ্য এবং সকল আইনি জটিলতা নিরসন করা হোক।

৩. ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশর, কাতার, বাহরাইন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের বিভিন্ন ইসলামিক ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ক্রেডিট ট্রান্সফারের প্রক্রিয়া সহজ ও সহযোগিতামূলক করা হোক।

৪. একইভাবে এসব দেশের ইসলামিক ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী আদান-প্রদান (Student exchange)-এর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

৫. বিভিন্ন দেশের ইসলামিক ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রদত্ত স্কলারশিপ (বৃত্তি) গ্রহণের সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

৬. সরকারিভাবে কওমি সনদের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিসিএস, পিএইচডি ও উচ্চতর গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া হোক।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুসলিম ইয়ুথ সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুহাম্মদ বদরুজ্জামান। আয়োজকদের মধ্যে ব্যবস্থাপনার সার্বিক ছিলেন মুহাম্মদ এহসান সিরাজ, হাছিব আর রহমান, নাজমুল ইসলাম কাসিমী ও রোকন রাইয়ান।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কওমী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহীদের নিয়ে বিশেষ এ সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রায় দেড়শ কওমি শিক্ষার্থী ও দায়িত্বশীল পর্যায়ের অনেক কওমি শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন বেফাকুল মাদারিসিলি আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের এ উদ্যোগটি অবশ্যই অত্যন্ত সুন্দর একটি আয়োজন। আমাদের বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ ও কার্যক্রম অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে আরও বেশি চেষ্টা করবো যেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে কওমি ছাত্রদের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। এক্ষেত্রে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এবং আল হাইয়াতুল উলিয়া জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন – জাতীয় দীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড এর মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলী। তিনি তার বক্তব্যে মুসলিম ইয়ুথ সার্কেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি আজকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কওমী শিক্ষার্থীদের দরদ ও মনের ব্যাথা দেখেছি। আমি মনে করি মনের দুঃখ ব্যাথা থাকলে যে কোন সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়। আমি আশাবাদী আজকের এ সেমিনার থেকে এ সমস্যার সমাধান হবে। সেমিনারে যারা উপস্থিত আছেন তারা এ সমস্যার সমাধানের উপযুক্ত ব্যক্তি। আমরা আশা করি কওমি মাদরাসার ছাত্রদের স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বিদেশে বিশেষ করে দারুল উলুম দেওবন্দে যাওয়ার সামগ্রিক ব্যবস্থা আমরা করবো। কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডগুলো এ বিষয়ে জোর ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।’

এছাড়াও বক্তারা সকলেই দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা উচিত বলে মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে সরকারের সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে মনে করেন তারা। সেমিনারে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে কওমী শিক্ষার্থীরা কি কি সমস্যার মুখোমুখি হন তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন: বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক শায়খ আহমদুল্লাহ, দাতব্য সংস্থা মারকাযুল ইসলামির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা হামজা ইসলাম, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ এর সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ, আহছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম এর সহকারী অধ্যাপক শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ির দাওয়া বিভাগের মুশরিফ মাওলানা আবু নোমান আল-মাদানী, ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার এর নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, সাইফুরসের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর সাইফুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান, দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতী সালমান আহমদ প্রমূখ।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী, সৌদি আরবে উচ্চশিক্ষা, মো. ওমর ফারুক ইবরাহিমী, দারুল উলুম করাচি ও দরুল উলুম দেওবন্দে উচ্চশিক্ষা। মুহাম্মাদ হাস্‌সান আরিফ, বাইরাইনে উচ্চশিক্ষা, ড. রুহুল আমিন রব্বানি, সহকারী পরিচালক ইসলামিক ল রিসার্চ সেন্টার, মালয়েশিয়ায় উচ্চাশিক্ষা, মাওলানা কাওসার জামিল, মাওলানা জুবায়ের গনী, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।

সূত্র: পাবলিক ভয়েস

 

The post কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহজ করতে মুসলিম ইয়ুথ সার্কেলের ৬ দাবি appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%93%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a7%80%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%87-2/

No comments:

Post a Comment