Friday, February 28, 2020

আত্মপরিচয় প্রশ্ন : ধর্মনিরপেক্ষতার বিপদ

ইফতেখার জামিল :

ধর্মনিরপেক্ষতা সমকালীন মুসলিম চিন্তায় এক বিশেষ প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যে প্রশ্ন ও সংশয়ে মুসলমানরা নিজেদের ইসলামি পরিচয় ও বক্তব্যে দ্বিধা করতে শুরু করেছে; তারা নাস্তিক বা অমুসলিম হয়ে যায় নি, ইসলামকে গুরুত্বহীনও মনে করে নি, তবে জনপরিসরে তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য ইসলামি পরিচয় ও বক্তব্যের বিকল্প অনুসন্ধানকে জরুরী মনে করছে। এক কথায় একেই আত্মপরিচয় প্রশ্ন ও সংশয় হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

আত্মপরিচয় কেন গুরুত্বপূর্ণ?

যে কোন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রকল্পে আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন পরিষ্কার থাকা অনেক বেশী জরুরী; আপনি কে, কেন ও কী বক্তব্য পেশ করবেন, আত্মপরিচয়ে তার প্রস্তাবনা থাকে। আত্মপরিচয় থেকেই প্রকল্প তার তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বৈধতাগ্রহণ করে। আত্মপরিচয়ের পাটাতনে দাঁড়িয়ে সাহিত্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে বক্তব্য তৈরি করা যায়। পাশাপাশি আত্মপরিচয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে সংযোগ ও সম্পর্কের প্রশ্নেরও প্রাথমিক ও মৌলিক সমাধান থাকে।

আত্মপরিচয়ের প্রস্তাবনা পরিষ্কার না থাকলে বহির্গত বিজয়ী সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়। মানুষ বিজয়ী সংস্কৃতির মোকাবেলার যুক্তি ও বৈধতা তৈরি করতে পারে না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে বিজয়ীর সংস্কৃতি ও পরিচয় গ্রহণ করে। তখন মোকাবেলার কোনো অর্থ বাকি থাকে না। বহির্গত আগ্রাসন নিছক রাজনৈতিক সংঘর্ষ হিসেবে আখ্যা পেতে থাকে। একে দখল ও জুলুম হিসেবে দেখার প্রবণতা শেষ হয়ে যায়।

এর পাশাপাশি আত্মপরিচয়ের প্রস্তাব পরিষ্কার না থাকলে নতুন কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রস্তাব বা প্রস্তাবের প্রয়োজন প্রমাণ করা যায় না। কেননা আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন নতুন আন্দোলনের ফাউন্ডেশন ও ভিতের মতো কাজ করে। ফাউন্ডেশন ও ভিত ছাড়া যেমন বড় ইমারত গড়া যায় না, তেমনি আত্মপরিচয়ের ভিত্তি ছাড়া কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সামাজিক জীবনের ক্লান্তি ও রাজনৈতিক পরাজয় পার্থিব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আত্মপরিচয় ছাড়া মানুষ ব্যর্থতা ভুলতে পারে না। ইতিবাচক ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে না।

ইসলাম ও আত্মপরিচয়

সাম্প্রতিককালের আগে মুসলমানদের আত্মপরিচয় কী, এই প্রশ্ন অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় ছিল। কেননা মুসলমানদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো সংশয় ও প্রশ্ন ছিল না। মুসলমানদের পরিচয় তারা মুসলমান, তাদের একমাত্র প্রস্তাবনা তো ইসলাম; আগে নাস্তিকতা ও ফাসেকি ছাড়া এই বাক্যে কারো কোনো সংশয় ছিল না। বরং মুসলমানরা এই বাক্যের বিশেষ তাত্ত্বিক প্রস্তাবনা দাঁড় করিয়েছিল, যাকে ওয়ালা-বারা নামে আখ্যা দেওয়া হয়। এখন, ফাসেক-ফুজ্জাররা তো বটেই, অনেক নিয়মিত ধার্মিক মুসলমানরাও মুসলিম পরিচয়ে সংশয় পোষণ করেন। স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী পরিচয় গ্রহণের চেষ্টা করেন।

মানুষের একাধিক ঠিকানা থাকতে পারে, কাল-দেশ-ভাষা ভেদ মানুষের পার্থিব জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এসব ঠিকানা বা পরিচয়ে জাতীয়তাবাদ হয় না। জাতীয়তাবাদ মানে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়কে মৌল ভিত্তি হিসেবে দেখছেন, আপনি আপনার ভাষা, দেশ বা জাতিভিত্তিক বর্গকে মনে করেন সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে; আপনি এখানে কোনো বিবেচনা বা পর্যালোচনায় আগ্রহী না। পর্যালোচনাহীন অন্ধ জাতিগত প্রস্তাবে ধর্মও জাতীয়তাবাদে রূপান্তরিত হয় বা হতে পারে।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ধর্মীয় জাতিবাদের সমালোচনা করলেও স্বয়ং নিজেরা কখনো জাতীয়তাবাদ থেকে বের হতে পারে না। এটা শুধু সততার প্রশ্নই নয়, মানুষের আদর্শিক ভিত্তি না থাকলে জাতীয়তাবাদই হয়ে ওঠে তার অস্তিত্ব, বৈধতা, আবেগ ও প্রয়োজনীয়তার মূল প্রস্তাব। সৃষ্টির শুরু-শেষ ও জীবন-জগতের মর্ম ব্যাখ্যা ছাড়া মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান সম্ভব নয়। এভাবে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ও সমর্থন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না।

ইসলাম জাতীয়তাবাদকে জাহেলিয়াত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। নবীজি বলেন, হে মানব সম্প্রদায়, তোমাদের রব একজন, আদিপিতাও একজন, কোনো আরবের ওপর অনারবের, কোনো অনারবের ওপর আরবের, কোনো সাদার ওপর কালোর, কোনো কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নাই–শুধু তাকওয়া ও ধার্মিকতাই তোমাদের মধ্যে প্রাধান্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কালো বলে ঠাট্টা করা হলে নবীজি একে জাহেলিয়াত হিসেবে আখ্যা দেন।

নবীজি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের মিথ্যা অহংকার ও পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মু’মিন হলো আল্লাহভীরু আর পাপী হলো দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম আলায়হিস সালাম মাটির তৈরি। লোকদের উচিৎ বিশেষ গোত্রের ভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অহংকার না করা। এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যথায় তোমরা মহান আল্লাহর নিকট ময়লার সেই কীটের চেয়েও জঘন্য গণ্য হবে যে তার নাক দিয়ে ময়লা ঠেলে নিয়ে যায়।

পাশাপাশি নবীজি মুসলমানদেরকে একক দেহের সাথে তুলনা দিয়েছেন, বিভক্তি ও অনৈক্যে ব্যাপক তিরস্কার করে আল্লাহর রজ্জুতে ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওমর রাদি. নবীজির কাছে আসমানি কিতাবের বক্তব্য পেশ করলে নবীজি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে বলে উঠেন, এখন মুসা আলায়হিস সালম জীবিত থাকলেও আমার অনুসরণ করতেন। আল্লাহ ও রাসুলের ভালোবাসা ও আনুগত্যকে সবার আগে প্রাধান্য না দিলে ঈমান পরিপূর্ণ হবে না বলে সতর্ক করেছেন।

মোটকথা ইসলামি ইতিহাস ও চিন্তায় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক পরিচয়, ঐক্য ও বক্তব্যকে আত্মপরিচয় হিসেবে আখ্যাদানের কোনো নিশানা পাওয়া যায় না।

যেভাবে আধুনিক আত্মপরিচয়ের সূচনা ও বিকাশ

বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতা একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। যে সাম্রাজ্য নিছক ক্ষমতা ও আভিজাত্য দিয়ে একটা বিশাল অঞ্চল দখল করে রেখেছিল। মানুষ রোমান পরিচয়কে আত্মপরিচয় হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। বরং প্রতিরোধ প্রকল্পে তাদের মধ্যে বিশেষভাবে জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রভাব ছিল। যদিও ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন, তবে যেহেতু খ্রিষ্টধর্ম ঈসা আলায়হিস সালামের পরে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, তাই তার পক্ষে সামগ্রিকভাবে জাতীয়তাবাদের মোকাবেলা করা সম্ভব হয়নি।

একদিকে খ্রিষ্টধর্ম হয়ে উঠেছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম, পাশাপাশি তাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক আইন অন্তর্ভুক্ত ছিল না, রোমান আইনেই চলত রাষ্ট্র ও দণ্ডবিধি। পাশাপাশি ধর্মীয় ভাষা ল্যাটিন বা গ্রীক, যার সাথে বৃহত্তর রোমান জনগোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক ছিল না। এভাবে ভাষা, আইন ও ধার্মিকতায় রোমান জাতীয়তাবাদকে মোকাবেলার পূর্ণ সক্ষমতা রোমান খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে মজুদ ছিল না। পোপের ক্ষমতা ও প্রভাব ছিল, তবে সে ছিল ব্যক্তিগত ধার্মিক নেতৃত্বে; রাষ্ট্রীয় আত্মপরিচয়ে নয়।

অবশ্য রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পোপ ও গির্জাব্যবস্থা বৃহত্তর রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়। তবে রাষ্ট্রীয় ও আইনি বিষয়ে স্পষ্ট ধর্মীয় নির্দেশনা না থাকায় গির্জার স্বেচ্ছাচারিতার পরিসর অনেক বিস্তৃত ছিল। অনেক দার্শনিক ও চিন্তাবিদের প্রস্তাবে গির্জা ক্ষুব্ধ হয়, ব্যাপক অত্যাচার চালায়, জান্নাতের বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করে, ব্যাপক সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠে। ক্রুসেড যুদ্ধসহ অনেক ক্ষেত্রে গির্জার একটা প্রভাব ও ঐক্যব্যবস্থা জারি ছিল। অবশ্য একসময় এতে সামন্ত সর্দাররা আপত্তি জানায়। তারা অধিকতর ক্ষমতা, সম্পদ ও ভূমির মালিকানা দাবি করে।

ক্রমশ আধুনিক দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের সাথে সামন্ত সর্দারদের যোগসূত্রে গড়ে ওঠে আধুনিক আত্মপরিচয়, বিকল্প নাগরিকত্ব ও অধিকার ব্যবস্থা; ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। ইউরোপ এই উগ্র জাতীয়তাবাদে ভুগেছেও অনেক। বছরের পর বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মেতেছে তারা। সর্বশেষ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও ছিল ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের বিস্তারের ফসল। আমার রক্ত ও রাষ্ট্রই শ্রেষ্ঠ; বংশ, গর্ব ও অহংকারে উন্মাদ হয়ে ওঠে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। যুদ্ধ ও গণহত্যার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মানব ইতিহাসে এই ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদই সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী।

মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ

ওপরের ব্যাখ্যায় স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, ইসলাম কোনোভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করতে পারে না। তবে গত শতকের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ আমদানি করা হয়। আগে যতবার পশ্চিমা শক্তিগুলো মুসলিম বিশ্বে আক্রমণ করেছে, ততবার শুধু সামরিক ও ধর্মীয় শক্তিতে জোর দিয়েছে। তবে এবার ধর্মীয় শক্তির পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদে বিশেষভাবে জোর দিয়েছে; ‘মুসলমানদেরকে দীর্ঘদিন পরাধীন রাখা বা ধর্মান্তরিত করা সম্ভব নয়, মূল আঘাত হানতে হবে চিন্তায়, মুসলমানরা নামে মুসলমান থাকবে, তবে তার আত্মপরিচয় আর ইসলাম থাকতে দেওয়া যাবে না।’

১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেয়া বক্তৃতায় টমাস র‌্যাবিংটন মেকলে নীতিনির্ধারণী এক মিটিংয়ে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এমন একটি শ্রেণী তৈরি করতে, যারা আমাদের এবং আমরা যাদের শাসন করছি তাদের মাঝে ব্যাখ্যাকার (দালাল) হিসেবে কাজ করবে। এটি এমন মানুষের শ্রেণী যারা রক্ত এবং বর্ণে ভারতীয়; কিন্তু রুচিতে, মতামতে, মূল্যবোধে এবং বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে ইংলিশ’। তার এ বক্তৃতার মধ্য দিয়েই পশ্চিমা উপনিবেশের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি আত্মপরিচয়ের সম্পর্ক ও সংঘর্ষ বুঝতে এই বক্তব্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

এভাবে মুসলমানরা উপনিবেশের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে, সেটার নাম হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ, ইসলাম নয় ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্রীয় ভিত্তি ও মেটাফর হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। একে মনে করা হয়েছে রাজনৈতিক লড়াই, আদর্শিক ও ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাতে শারীরিকভাবে উপনিবেশের পতন ঘটলেও রয়ে গেছে তার মগজ ও চিন্তা। বাংলাদেশের ইতিহাসের দৃষ্টান্তেও এটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ থেকে ব্রিটিশদের চলে যাবার পরেও রাষ্ট্র চালিয়েছে ব্রিটিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, আইন ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষক, শিক্ষাব্যবস্থা, সিলেবাস ও কর্মসংস্থানে ভিন্নতা আসেনি। যে পাকিস্তান ইসলামের জাতিবাদী ও ধর্মীয় মিশ্র পরিচয়ে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল, তারা শাসক ও বিরোধীদল হিসেবে ইসলামকে প্রধান ও একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করেনি। তাতে হয়েছে বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় চাপে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকে সংবিধানের ভিত্তি বানাতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ।

আধুনিক নাগরিকত্ব, ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম

ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ নাগরিকত্ব চিন্তার প্রস্তাব করেছে। তার প্রস্তাবে সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করবে, এখানে ধর্মের কোন ভূমিকা থাকবে না। এভাবে রাষ্ট্রীয় আইন, প্রশাসন, শিক্ষা, অর্থনীতি ও অধিকারে ধর্মীয় পরিচয়ের প্রশ্ন গৌণ হয়ে যাবে। ধর্মকে সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হবে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ, তাদের মতে, নিরপেক্ষতার মাপকাঠি।

মুশকিল হচ্ছে, এই নাগরিকত্বের নিয়ন্ত্রণ টমাস র‌্যাবিংটন মেকলে কথিত দালালদের হাতে। তারা সাধারণ জনগণের সামনে দু’টি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করে। এক, সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নজরদারি। দুই, অনিয়ন্ত্রিত ভোগ।

আপনার কাছে ধর্মীয় পরিচয় নেই তো কী হয়েছে, রাষ্ট্র আপনার সবকিছু ঠিক করে দেবে। আপনি কত বছর বয়সে বিয়ে করবেন, কেমন শিক্ষাগ্রহণে আপনি চাকরী পাবেন, কেমন আইনে আপনার চলতে হবে, আপনার টিভিতে কোন চ্যানেল চলতে পারে, কোন বই ও পোশাক আপনি পরতে পারবেন, এ সব রাষ্ট্র আপনাকে ঠিক করে দেবে। তার বাইরে গেলেই আপনি জঙ্গি ও রাষ্ট্রবিরোধী বলে চিহ্নিত হবেন। বাকি সবকিছু রাষ্ট্রবিরোধী। মসজিদের বক্তব্য ও ধর্মীয় ব্যাখ্যাতেও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

বিনিময়ে রাষ্ট্র আপনাকে ভোগের সুযোগ দেবে। এখন ফার্স্টফুডের দোকানের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। আপনি মুরগির গোশত খেতেই পারেন, তবে কোরবানি করলে সেখানে অনেকের আপত্তি তৈরি হবে। পতিতালয় এখন আইনিভাবে বৈধ, পতিতাবৃত্তিকে ঘৃণা করলে আপনি মানবতাকেই ঘৃণা করলেন, আপনি প্রেম করতে পারবেন, অবৈধ সঙ্গমেও রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নেই, যত অসুবিধা বৈধ বিবাহে। আপনি পর্ণ দেখতে পারেন, সেটা আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা, তবে স্কুলে আপনাকে নির্দিষ্ট পোশাক পরেই আসতে হবে। বোরকা বা হিজাবে রাষ্ট্র আপত্তি করতে পরে।

এভাবে তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এসবই ধর্মনিরপেক্ষতার মুসিবত। এখানে আরও বেশকিছু প্রসঙ্গ রয়ে গেছে; সংখ্যালঘু ইস্যু ও জাতীয়তাবাদের ইসলামায়নের অপচেষ্টা; সামনে কখনো বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা রইল।

(আলমানাতু মিনাদ দাখেলের মুশকিলাতুল হুবিউয়াহ অবলম্বনে)

The post আত্মপরিচয় প্রশ্ন : ধর্মনিরপেক্ষতার বিপদ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%9a%e0%a7%9f-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a6%bf/

No comments:

Post a Comment