রাকিবুল হাসান:
ভ্যাকসিন মানুষের কয়েকটি রোগ নির্মূল আর তা মোকাবেলার মধ্য দিয়ে আধুনিক চিকৎসা বিজ্ঞানের চর্চাপদ্ধতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মানবজাতি ভ্যাকসিনের সুফল ভোগ করে এলেও কার্যকর ভ্যাকসিনগুলো আবিষ্কারের এ পথচলা ছিল খুবই দীর্ঘ ও বন্ধুর। টিকা হলো ভ্যাকসিনেশনের সেকেলে রূপ। উসমানি সাম্রাজ্য থেকে এ টিকা যখন ইউরোপে যায়, তখন ইউরোপের অভিজাত শ্রেণী, ডাক্তার, সরকার এবং পুরোহিতদের প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়। অনেক শ্রম ও কৌশলে সেই বাধা কাটিয়ে গ্রহণযোগ্যতা পায় টিকা। মুসলমানদের টিকা উদ্ভাবন এবং প্রসারের এই দীর্ঘ যাত্রা কেমন ছিল, এ লেখায় তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করব।
ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টিপাত
রোগের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা উদ্ভাবনের ধারণাটি ছিলো ইতিহাসের একটি বৈপ্লবিক ধারণা। আধুনিককালে টিকা সহজলভ্য হলেও এর উদ্ভাবন অনেক পুরোনো। আমেরিকান দার্শনিক এবং ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট (মৃ:১৪০২হি/১৯৮১খৃ.) তার ‘সভ্যতার জন্ম’ গ্রন্থে বলেন, ‘ইউরোপ টিকা চিনেছে এই আঠারো শতকে। কিন্তু ভারত উপমহাদেশ টিকা চিনে সেই ৫৫০ খৃস্টাব্দ থেকে। আরবদের মাধ্যমে ভারত আমাদের শিখিয়েছে সাধারণ সংখ্যা, দশমিক সংখ্যা। ভারতের প্রাচীনতম চিকিৎসক ধনান্তরি গরুর গায়ে উঠা ফোস্কার পুঁজ নিয়ে মানুষের কাঁধ ও কনুইয়ের মধ্যবর্তী জায়গায় ঘষে রক্ত বের করে তাতে ওই পুঁজ মিশিয়ে দিতেন। এর ফলে গুটি বসন্তের জ্বর আসতো। কিন্তু এ জ্বর অতটা গুরুতর হতো না। যেমন চৈনিক বৈদ্যরা গুটিবসন্তের খসে পড়া বস্তু একজন নিরোগ রোগীর শরীরে টিকা দিতো এবং এর থেকে প্রস্তুত পাউডার নাক দিয়ে টানাতো। তারা এটা সম্ভবত ভারত থেকেই গ্রহণ করেছে।’
ভারতের সঙ্গে যেহেতু আরবের যোগাযোগ ছিলো, আরবরা ভারত থেকেই তাদের জ্ঞান ইউরোপসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।
প্রাচীন বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসকরাও টিকার ধারণা লালন করতেন। ‘আল কানুন ফিত তিব্ব’ গ্রন্থে ইবনে সিনা (মৃ:৪২৮হি/১০৩৮খৃ.) বলেন, ‘যে জিনিস রোগের কারণ, সেটা ব্যবহার করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা যেতে পারে। যেমন—কেউ যদি বিষ একটু একটু করে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে, সে বিষক্রিয়ার প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। একদল বৃদ্ধা এর এক্সপেরিমেন্টও করেছিলো। বিষ তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।’
এর কাছাকাছি বক্তব্য ইবনে আবি উসায়বিয়ারও (মৃ:৬৬৮হি/১২৬৯খৃ.)। তিনি ‘উয়ুনুল আম্বা ফি তাবাকাতিল আতিব্বা’ গ্রন্থে বলেন, ‘সাপের গোশত সাপের বিষের ক্ষেত্রে উপকার করে।’ এখান থেকেই এই চিন্তা এসেছে—বিষ যেখানে উৎপাদিত হয়, সেখানের উপাদান দিয়েই তার চিকিৎসা করা হবে। ক্রালক্রমে এই চিন্তাকে মৌল ধরেই চিকিৎসা চর্চায় ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। আমরা আজ যে ভ্যাকসিনের পেছনে দৌড়াচ্ছি, প্রাচীনকালে আরবের লোকেরা এই পন্থায়ই রোগের প্রতিষেধক তৈরী করতো।
বিখ্যাত জার্মান প্রাচ্যবিদ সিগ্রিড হোয়েঙ্ক (মৃ:১৪২০হি/১৯৯৯খৃ.) ‘আরব সান শাইনিং অন দ্য ওয়েস্ট’ গ্রন্থে বলেন, ‘আঠারো শতকের শেষদিকে ইউরোপ গুটিবসন্তের টিকা প্রবর্তনের প্রয়াস চালায়। কিন্তু আরব এই টিকা ইসলামের প্রথম যুগেই উদ্ভাবন করেছিলো। যে পক্রিয়ায় আমরা এখন টিকা তৈরী করছি, ঠিক অবিকল পক্রিয়ায়। তারাও দুর্বল জীবানুর মাধ্যমে টিকা দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করতো।’
তার সমকালীন আরেক গবেষক ডা. উসামা আস সায়াদি ‘মানবসভ্যতার ইতিহাসে আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব’ বইয়ে লিখেন, ‘সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে আরব চিকিৎসকগণ রোগের প্রতিষেধক খুঁজতেন, যেন রোগ প্রতিরোধ করা যায়। গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে তারা একটি টিকা তৈরী করেছিলো। টিকাদানের পদ্ধতি হলো—তারা গুটিবসন্তে আক্রান্ত উটের ফুসকুড়ি থেকে খসে পড়া বস্তু নিতেন। তারপর নিরোগ মানুষের হাতে আঁচড় দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে ফুসকুড়ি থেকে আহরিত বস্তু ক্ষতে মিশিয়ে দিতেন।’
নজদের মুফতি শায়খ হামদ বিন নাসির বিন মুআম্মার নাজদি হাম্বলি একটি ফতোয়া দিয়েছিলেন এই টিকা সম্পর্কিত। তার থেকেও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, হোয়েঙ্ক এবং সায়াদি যে টিকার কথা বলছেন, প্রাচীনকালে আরবের জনসাধারণের নিকট তা ব্যাপক প্রচলিত ছিলো। তখন তারা এটাকে বলতো ‘তাওতিন’।
তাওতিনের অর্থ ও মর্ম নিয়ে ভাষাবিদদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। ‘সিহাহ’ অভিধানে আবু নাসর জাওহারি (মৃ: ৩৯৩হি/১০০৪খৃ.) বলেন, তাওতিন শব্দ উদ্ভূত হয়েছে ‘ওতানা’ ক্রিয়া থেকে। এর অর্থ নিরবচ্ছিন্নভাবে থাকা। যেহেতু টিকার দাগ টিকা গ্রহীতার দেহে থেকে যেতো, তাই এটাকে তাওতিন বলে। কিন্তু ইবনে মানযুর (মৃ:৭১১হি/১৩১১খৃ.) ‘লিসানুল আরব’ অভিধানে বলেন, ‘টিকাদানকে আহলে নজদ ‘ওতানা’ বলতো। ‘ওতানা’র অর্থ আলাদা, বিরোধিতা। যেহেতু টিকা দেবার পর টিকার জায়গাটা শরীরের অন্য জায়গা থেকে আলাদা দেখা যেতো, তাই এটাকে ওতানা বলে।
টিকা সেবনে তুরস্কের অগ্রগামিতা
টিকার উদ্ভাবন ও প্রসারের এই যাত্রায় উসমানি সাম্রাজ্যের তুর্কিরা সবচেয়ে এগিয়ে। বরং বলা যায়, ইউরোপে টিকা প্রবেশ করেছে তুরস্ক নামক দরজা দিয়ে। তুর্কিদের নিকট টিকা নতুন কোনো বিষয় ছিলো না। কারণ, সার্কাসিয়ান এবং আর্মেনিয়ানরা ছিল তাদের প্রতিবেশী। উইল ডুরান্ট লিখেন, ‘প্রচীন চৈনিক বৈদ্যরা গুটিবসন্তে আক্রান্ত মানুষের দেহ থেকে দুর্বল ভাইরাস নিয়ে নিরোগ মানুষের শরীরে প্রবিষ্ট করাতো। যেন তারা গুটিবসন্ত থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে। এ লক্ষ্যেই সার্কাসিয়ান নারীরা সুই দিয়ে শরীর ছিদ্র করে গুটিবসন্তের তরল পদার্থ প্রবিষ্ট করাতো!’
‘তারিখুত তিব্ব’ গ্রন্থে উইলিয়াম বায়নামও এর কাছাকাছি বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সেই প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচ্যে টিকা দেবার প্রচলন ছিলো। চীনারা গুটি বসন্তের মামরি থেকে তৈরী পাউডার নাকে টানতো। আর তুর্কিরা চামড়ায় ক্ষত করে ফুসকুড়ি থেকে আহরিত তরল প্রবিষ্ট করাতো।’
আল্লামা আনাসতাস কারমালি (মৃ:১৩৬৬হি/১৯৪৭খ.) ১৯২৯ সালের পয়লা মার্চ প্রকাশিত ‘লুগাতুল আরব’ ম্যাগাজিনের ৬৭ নং সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ লিখেন। শিরোনাম: ইরাক-ইরানে গুটিবসন্তের প্রতিষেধক টিকার ইতিহাস। তাতে তিনি লিখেন, ‘আর্মেনিয়ান নারীরা তাদের সন্তানদেরকে কিশমিশ খাওয়াতো। ওই কিশমিশের ভেতর দিয়ে দিতো গুটিবসন্তের ফুসকুড়ি। যেন তাদের সন্তানেরা গুটিবসন্ত থেকে সুরক্ষিত থাকে।’
ইতালীয় পর্যটক সিস্তিনি (মৃ:১১৯৫ হি/১৭৮১খৃ.) ১৭৮১ সালে বাগদাদ সফরে গিয়েছিলেন। তিনি তার সফরনামায় লিখেন, ‘বাগদাদের সবাই একজন আরেকজনের মাধ্যমে টিকা দিত।’ কারমালি প্রশ্ন করেন, ‘সিস্তিনি আসলে এই কথার মাধ্যমে কী মর্ম বোঝালেন? তিনি কি ইস্তাম্বুলে প্রচলিত টিকার কথা বলেছেন নাকি অন্যকিছু? আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।’
এতসব দেখেই বোধহয় তুর্কি ঐতিহাসিক ইলমাজ ওজতুনা (মৃ:১৪৩৪ হি/২০১২ খৃ.) তার ‘উসমানি সাম্রাজ্যের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই টিকা দিয়ে আসছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে—১৬৯৫ সালে ইস্তাম্বুলে বাচ্চাদেরকে গুটিবসন্তের টিকা দেয়া হয়েছিলো।’
ওজতুনার বক্তব্যকে শক্তিশালী করে ডুরান্টের আরেকটি উদ্ধৃতি। ডুরান্ট লিখেন, ‘১৭১৪ সালে ডা. ইমানুয়েল টিমুনি (মৃ:১১২৮হি/১৭১৬খৃ.) লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির কাছে একটি রিসালা পাঠিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিলো, প্রাচীনকাল থেকেই ইস্তাম্বুলে গুটিবসন্তের টিকা দেয়া হতো।’
ডুরান্ট আরও লিখেছেন, ‘তুর্কিরা গর্ব করতো যে, তারা ইউরোপীয়দের চেয়ে স্বাস্থ্য সচেতন এবং পরিচ্ছন্ন। তুর্কিরা ইউরোপকে টিকা দেয়া শিখিয়েছে।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রথম সফল টিকা উদ্ভাবকও তুর্কি বংশদ্ভুত মুসলিম জার্মান দম্পতি উগুর শাহিন ও ওজলেম তুরেজি। তারা দুজন ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে প্রতিরোধকারী টিকা উদ্ভাবন করেন।
তুরস্ক থেকে জার্মানিতে ১৯৬০-এর দশকে আসা অভিবাসী পরিবারে শাহিন ও তুরেজি জন্ম নেন। চিকিৎসা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে ক্যান্সার চিকিৎসা, আণবিক জীববিদ্যা ও টিকা প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় একত্রে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন তারা। ২০০৮ সালে তারা নিজস্ব ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কিন অংশীদার ফাইজারের সাথে তাদের বায়োএনটেক থেকে বিশ্বের প্রথম কার্যকর করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবন করেন এই দম্পতি।
তুরস্ক থেকে ইউরোপে টিকার যাত্রা
ভ্যারিওলা ভাইরাসের সংস্পর্শে গুটিবসন্তের বিস্তার লাভ করে এবং সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো সাধারণত এর সংক্রমণের শুরু হয়। এরপর রোগী জ্বর, আলস্য, পেশির বেদনা ও মাথাব্যথায় ভোগে। তারও কয়েক দিন পর শরীর ও মুখের ত্বকে এক ধরনের ফুসকুড়ি দেখা দেয়, সঙ্গে মুখ, গলা ও নাকের ভেতর ক্ষত তৈরি হয়। তরলে ভরা এ ফুসকুড়ির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একসময় এতে ত্বকের বড় একটা অংশ ছেয়ে যায়। তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী বেঁচে থাকলে এগুলো মামড়িতে পরিণত হয় এবং ত্বক থেকে খসে পড়তে থাকে।
আঠারো শতকে গুটিবসন্ত ইউরোপজুড়ে এতটাই বিস্তার লাভ করে যে, এক পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়, তখন প্রতি বছর এর প্রকোপে প্রায় চার লাখ লোক মারা যেত। এমনকি ইউরোপের পাঁচজন সম্রাট পর্যন্ত রাজত্বকালে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে জানা যায়। গবেষকেরা হিসাব কষে দেখেছেন, এ রোগে আক্রান্তদের ২০ থেকে ৬০ ভাগ ও শিশুদের ৮০ ভাগের ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণের মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সেরে ওঠাদের বেশির ভাগের শরীরেই কোনো না কোনো স্থায়ী দাগ থেকে গেছে, যাদের অসংখ্য লোক তাদের ঠোঁট, নাক বা কানের কিছু অংশ হারিয়েছে। গুটিবসন্ত আক্রান্তের কর্নিয়ায়ও ক্ষত সৃষ্টি করে এবং এ ধরনের রোগীদের তিন ভাগের এক ভাগ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়।
ইউরোপ তখন ভয়ংকর এই গুটিবসন্তের টিকার কথা না জানলেও উসমানি সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তাম্বুলে তখন এই টিকার ব্যাপক প্রচলন। তুর্কির ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী লেডি মেরি ওয়ার্টলি মন্টেগিউ তখন ইস্তাম্বুলে। তিনি ১৭১৭ সালের পয়লা এপ্রিল লন্ডনে তার এক আত্মীয়ের কাছে একটি চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি উসমানি সাম্রাজ্যে টিকার প্রচলন এবং এর উপকারিতা তুলে ধরেন। তিনি লিখেন, ‘ভয়ংকর গুটিবসন্তের প্রকোপ এখানেও। তবে টিকার কল্যানে আমরা সুস্থ আছি। প্রতিবছর এখানে হাজার হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়। ফলে এই রোগে একজনও আর মৃত্যুবরণ করেনি। বিশ্বাস করো—এই টিকা গ্রহণ করে আমি এর উপকারিতা সম্পর্কে যারপরনাই সন্তুষ্ট। ভাবছি—আমার ছোট ছেলেকেও টিকা দেওয়াবো।’
১৭১৮ সালের মার্চ মাসে লেডি মেরি ওয়ার্টলি মন্টেগিউ তার ছয় বয়সী ছেলেকে টিকা দেওয়ান। টিকা পুশ করেন তৎকালীন তুরস্কে বসবাসরত ইংরেজ চিকিৎসক ডা. চার্লস ম্যাটল্যান্ড।’
১৭২১ সালে লন্ডনে আরও ভয়ংকর রূপে গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এতে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। লেডি মেরি তখন লন্ডন ফিরে যান। ফিরে যান ডা. চার্লসও। লেডি মেরি ডা. চার্লসকে তার চার বছর বয়েসী মেয়েকে টিকা দেয়ার দায়িত্ব প্রদান করেন। ডা. চার্লস তখন প্রসিদ্ধ তিনজন ব্রিটিশ চিকিৎসক ডেকে আনেন। উদ্দেশ্য—তারা দেখুক কিভাবে টিকা দিতে হয়, টিকার উপকারিতা কী। চিকিৎসকরা মুগ্ধ হয়। এমনকি তাদের একজন তার নিজের ছেলেকে টিকা দেয়ারও অনুমতি দিয়ে দেয়।
লেডি মেরির টিকা দেয়ার কথা ব্রিটিশ রাজ পরিবারেও ছড়িয়ে পড়ে। তখন তৎকালীন ব্রিটেনের রাজা দ্বিতীয় জর্জের স্ত্রী কুইন ক্যারোলিন আনসবাচ এতিম শিশুদেরকে টিকা দেয়ার নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য এক্সপেরিমেন্ট। এক্সপেরিমেন্ট পূর্ণ সফল হয়। কুইন তখন তার দুই মেয়েকে টিকাদানের অনুমতি প্রদান করেন। তাদের একজন হলো প্রিন্সেস ক্যারোলিন। যাকে আমরা গ্রেট ব্রিটেনের রাজকন্যা বলেই বেশি চিনি।
১৭৪১ সালে প্রিন্সেস ক্যারোলিন আরেকটি এক্সপেরিমেন্ট চালান। ছয়জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ডেকে বলেন, ‘তোমাদেরকে টিকা দেয়া হবে। যদি বেঁচে থাকো, সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হবে।’ ছয়জনকে টিকা দেয়া হলো। এদের একজন হালকা অসুস্থতা অনুভব করেছিলো। বাকিদের কিছুই হয়নি। প্রিন্সেস তাদের সকলকে মুক্ত করে দেন।
রাজ পরিবারের এক্সপেরিমেন্ট যখন সফল হলো, তখন টিকাদানের পথের বাধা সব সরে গেলো।
ইউরোপের পুরোহিত-অভিজাতদের বিরোধিতা
লেডি মেরি যখন ব্রিটেনে সর্বপ্রথম টিকা নিয়ে যান, সেখানের খৃস্টান ধর্মযাজকরা সবচে বেশি এর বিরোধিতা করেছিলো। তারা বলেছিলো, এই টিকা ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী। কারণ, আমাদের বিশ্বাস, ঈশ্বর রোগ-বালাই দেন, জন্ম-মৃত্যু দেন। এটাই নিয়তি। এই মৃত্যু আটকানো কিংবা রোগ প্রতিরোধ করা মূলত নিয়তির বিরোধিতা করা, নিয়তিকে অমান্য করা!
ডুরান্ট বলেন, ১৭৭২ সাল অবধি এই টিকার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন ইংরেজ পুরোহিত অ্যাডওয়ার্ড ম্যাসি। তার দাবি ছিলো, রোগ আসে পাপের শাস্তি হিসেবে। রোগ প্রতিরোধ করা মানে ঈশ্বরের বিধানকে অমান্য করার চেষ্টা!
পুরোহিতদের বিরোধিতার আরেকটি কারণ হলো—নারীদের হাতে টিকার প্রসার এবং অনুশীলন। নারীদের প্রতি তাচ্ছিল্য থেকেই তারা ভাবতো, এই মূর্খ নারীরা হঠাৎ কী না কিসের চর্চা শুরু করেছে!
তবে এতসব বাধার সম্মুখে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি লেডি মেরি। তিনি তার সাধ্যের সবটুকু চেষ্টা ব্যয় করেছেন টিকার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করতে। এর জন্য তাকে রাজপরিবারের সামনে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টে সফলতা অর্জন করে এগুতে হয়েছে। এমনকি টিকার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করতে তিনি নিজে ছদ্ম নামে প্রবন্ধ ছাপিয়ে বিলি করেছেন। তাতে তুর্কি বণিকের নামে তৈরী করেছেন বক্তব্য। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল: তুর্কী বণিকের কলমে গুটিবসন্তের টিকার উপকারিতা: একটি প্রামাণিক বিশ্লেষণ। তৎকালে একজন তুর্কি বণিকের কথা ব্রিটিশ জনগণের কাছে সরকারি সিদ্ধান্তের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেতো। বণিকের ওই কথা তারা চিকিৎসক ও সফল পরীক্ষার চেয়ে বেশি বিশ্বাস করতো। এই সুযোগটি লেডি মেরি কাজে লাগান।
টিকা দেওয়ার ব্যাপারে কেবল ইউরোপের ইংরেজরাই বিরোধিতা করেনি, বরং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, ফরাসি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা বিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক উচ্চবিত্তরাও এর বিরোধিতা করেছিলো। তবে ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অরলানস তার দুই ছেলেকে টিকা দিয়ে সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কিন্তু ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ এর বিরোধিতা করেছিলো।
ফরাসি লেখক ভলতেয়ার টিকা-প্রচেষ্টায় লেডি মেরির প্রশংসা করেছেন। সঙ্গে ছদ্মনামে ফরাসি সংসদের সমালোচনাও করেছেন। তিনি বলেছেন, ফরাসি সংসদ প্রতিক্রিয়াশীল। তারা প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। যেমন, ফরাসি একডেমি প্রতিষ্ঠা, গুটিবসন্তের টিকা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সবকটি দাবিতে তারা ভ্যাটো দিয়েছে। আটকে দিতে চেয়েছে অগ্রযাত্রা।
ভ্যারিওলে ভ্যাকসিন: এডোয়ার্ড জেনার
ইউরোপে টিকার বিকাশ ও উৎকর্ষে এডোয়ার্ড জেনারের অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন ডুরান্ট। ১৭৫৭ সালে টিকা দেয়া হাজার খানেক শিশুর মাঝে আট বছর বয়সী এডোয়ার্ড জেনারও ছিলেন। ছেলেবেলায় বিজ্ঞান ও প্রকৃতির প্রতি জেনারের ছিল ভীষণ আগ্রহ, যা তাকে চিকিৎসাশাস্ত্র, শল্যচিকিৎসা, এমনকি প্রাণিবিজ্ঞান পর্যন্ত অধ্যয়নে অনুপ্রাণিত করে। ঘটনাক্রমে তিনি লন্ডনের বাইরে ইংল্যান্ডের পল্লী এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন এবং চিকিৎসাবিদ্যা অনুশীলন শুরু করেন। তার সেই গ্রাম্য পরিবেশ থেকে তিনি জানতে পারেন যে গোয়ালিনী ও অন্যান্য যে লোকেরা গোবসন্তের সংস্পর্শে আসে, তাদের শরীরে স্বল্পসংখ্যক ফুসকুড়িসহ তুলনামূলকভাবে কম সংক্রমণ দেখা দিলেও পরবর্তী সময়ে তারা আর গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয় না। তিনি আরো দেখতে পান যে এসব লোকদের তিনি সফলভাবে গুটিবসন্তের টিকা দিতে পারছেন না। এ যোগসূত্র লক্ষ করে জেনার ১৭৭৮ সালে এ সিদ্ধান্তে আসেন যে গোবসন্ত কেবল গুটিবসন্ত থেকেই সুরক্ষা দেয় না, বরং সুরক্ষার একটি উদ্দশ্যপ্রণোদিত প্রক্রিয়া হিসেবে তা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে হস্তান্তরিতও হতে পারে।
১৭৯৬ সালের মার্চে জেনারের সঙ্গে স্যারা নেলমস নামে এক গোয়ালিনী তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়, যার গায়ে গোবসন্তের কাঁচা ক্ষত ছিল। জেনার তার এ ক্ষতের উপাদান ব্যবহার করে জেমস ফিপসকে টিকা দেন। শিশুটির মৃদু জ্বর ও ক্ষুধামান্দ দেখা দিলেও ১০ দিন পর সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। জুলাইয়ে জেনার শিশুটিকে আবারো টিকা দেন। এ সময় কোনো রোগ দেখা না দেয়ায় জেনার সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, সুরক্ষা সম্পন্ন হলো। জেনার গোবসন্তের সাহায্যে শিশুদের টিকা প্রদান অব্যাহত রাখলে একই ফলাফল পান। তিনি প্রক্রিয়াটির নাম দেন ভ্যারিওলে ভ্যাকসিন—গোবসন্ত। বর্তমানে এর ইংরেজি করা ও সংক্ষিপ্ত রূপ ‘ভ্যাকসিনেশন’।
এই সফলতায় উৎসাহিত হয়ে জেনার ১৭৯৮ সালে লিখেন তার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘ভেরিওলা ভ্যাকসিনের কারণ ও প্রভাব’। এই বইয়ে তিনি তেইশজন রোগীর কেস স্টাডি তুলে ধরেন। যাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই তিনি সফল। পরবর্তীতে ১৮০২ এবং ১৮০৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট জেনারকে ৩০ হাজার পাউন্ড গবেষণা প্রণোদনা দেয়। যেন তিনি এই ভ্যাকসিনেশনের কাজ এগিয়ে নিতে পারেন।
বাগদাদে টিকাদান
কেবল উসমানি সাম্রাজ্যের ইস্তাম্বুলেই টিকাদান কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সরকারি সহায়তায় অন্যান্য অঞ্চলেও তা ছড়িয়ে পড়েছিলো। কারমালি তার প্রবন্ধে বলেছেন, ইরাকে ১৮০৯ সালের আগে জেনারের পদ্ধতিতে টিকা দেয়া হতো ইস্তাম্বুলের এক তরুণ আর্মেনিয়ান ক্যাথলিক যুবকের মাধ্যমে। তার নাম আওয়ানিস বেন বেদ্রোস মুরাদিয়ান। এই যুবক ছয়টি ভাষা জানতো। চোখ রাখতো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের রাজনীতির দিকে। খবর রাখতো কোথায় কী আবিষ্কার হচ্ছে।
কারমালির ভাষ্যমতে—আওয়ানিসের হাত ধরেই বাগদাদে সবপ্রথম গুটিবসন্তের প্রতিষেধক টিকা প্রবেশ করে। কিন্তু বাগদাদের লোকেরা তাকদির বিরোধী বলে এই টিকার বিরোধিতা শুরু করে দেয়। অবশেষে বাগদাদের গ্র্যান্ড মুফতি আহমদ আফেন্দির (২০১৩ হি/১৮২৮খৃ.) সহায়তায় এই বিরোধিতা দূর হয়। মুফতি সাহেব প্রথমেই তার সন্তান এবং নাতিদের টিকা দেয়ান। তার এই টিকাদান মানুষের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙ্গে দেয়। তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন টিকা দিতে নিশ্চিন্তে। তার উৎসাহে ব্যাপকভাবে শুরু হয় টিকাদান কর্মসূচি। আওয়ানিস এবং তার স্ত্রী তেরেসা মিলে নয় বছরে পাঁচ হাজার চারশর বেশি মানুষকে টিকা প্রদান করে। এদের দুই তৃতিয়াংশকে টিকা দেয়া হয়েছিলো বিনামৃল্যে। এই দীর্ঘ সময়ে মানুষের মধ্যে আস্থার একটুও কমতি হয়নি।
আওয়ানিসের এই সফলতা তার কাজ বিস্তৃত করতে সাহায্য করে। ইরাকিরা তার কাজের স্বীকৃতি দেয়। প্রশংসাপত্রে তার নাম দেয়—খাজা আওয়ানিস মুরাদিয়ান ইসলাম্বুলি। তারা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করে, গত চার বছরে যতজন টিকা নিয়েছে, তারা কেউ আর গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়নি। ইরাকিরা তার জন্য দোয়া করে—হে আল্লাহ! আওয়ানিস যে খেদমত আমাদের দেশে আঞ্জাম দিয়েছে, তুমি তাকে এবং তার সন্তানদেরকে তার প্রতিদান দিও।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হলো—উসমানি সাম্রাজ্যের তত্বাবধানে বিনামূল্যে টিকা বিতরণ করা হতো। ১৮৪৭ সালে সুলতান আবদুল মাজিদ বাগদাদ এবং অন্যান্য উসমানি সাম্রাজ্যে রাগিব বেকে একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠান। তার সঙ্গে ছিল আর্মেনীয় চিকিৎসক বরুনাক ফাররুখ খান। তিনি ইস্তাম্বুল থেকেই রাগিব বের সহযাত্রী হয়েছিলেন। ইস্তাম্বুল থেকে বাগদাদ, পুরো পথে তিনি রোগীদের চিকিৎসা করেছেন, বিভিন্ন শহরে বিনামূল্যে টিকা দিয়েছেন। এরপর বাগদাদে পৌঁছে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন। একটুও বিরক্তি প্রকাশ করেননি। এরপর থেকে বাগদাদ ও ইরাকে টিকা গ্রগণকারীর সংখ্যা কমেনি, কেবল বেড়েছেই।
তবে তৎকালে আলজেরিয়ায় বোধহয় তুর্কি টিকার কথা জানা ছিলো না। ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তখন ইউরোপীয় টিকার দিকে হাত বাড়ায়। গবেষক ডা. মুজাহিদ ইয়ামিনা তার ‘ফরাসি উপনিবেশবাদের সময় আলজেরিয়ায় চিকিৎসার ইতিহাস ১৮৩০-১৯৬২’ শিরোনামের গবেষণাপত্রে ফরাসি ডা. শনবার্গের বই ‘উপনিবেশবাদের শুরুতে আলজেরিয়ার চিকিৎসা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। শনবার্গ উল্লেখ করেন, ‘আলজেরিয়ার তুর্কি শাসক দে হুসাইন তার পরিবারের সবাইকে ইংরেজ ডাক্তার বুহিনের নিকট টিকা দিতে পাঠিয়েছিলেন। এই টিকাদান সফল হয়। দে হুসাইন সন্তুষ্ট হয়ে তখন বুহিনের জন্য অনেক টাকা পাঠান।’
শেষকথা
টিকা নিতে হয় জীবনেরই প্রয়োজনে। রোগাক্রান্ত হবার আগে প্রতিষেধক গ্রহণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষেধ নয়। বরং সুস্থ জীবন যাপনের জন্য এটা অপরিহার্য। টিকা মূলত রোগ হওয়ার আগেই জীবাণু যেন আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য বিশেষ সুরক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের নাম। ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগের জন্য দায়ী জীবানুর দুর্বল ভার্সন, মৃত বা জীবানুর অংশবিশেষ সুস্থ বা অসুস্থ মানুষের দেহে টিকা হিসেবে দেয়া হয়। এরপর এর বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে আল্লাহর আদেশ ও ক্ষমতায় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে এন্টিবডি এবং এর মেমোরী সেল তৈরি হয়। পরবর্তীতে সেই নির্দিষ্ট জীবানুটি দেহে প্রবেশ করলে এন্টিবডি এগুলো শনাক্ত করে জীবানুটিকে আল্লাহর আদেশ মেরে ফেলে।
শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে টিকা গ্রহণ বৈধ বা মুবাহ। ভবিষ্যতে রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য হাদীসে নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ কিছু খেতে বলা হয়েছে, যেনো রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
উসামা ইবনে শরিক রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ওষুধ অনুসন্ধান করো। কেননা আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার ওষুধ বা নিরাময়ের ব্যবস্থা রাখেননি।’ (আদাবুল মুফরাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)। তাই ওষুধ এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কার তাকদিরবিরোধী নয়। এটা নিজেকে সুস্থ রাখার প্রয়াস। হজরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন ওই ব্যক্তিকে বিষ ও জাদু-টোনা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আজওয়া খেজুরের হাদীসটি টিকার শরীয়া ব্যাখ্যার সাথে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ। শাইখ বিন বায রহ. টিকার বৈধতার পক্ষে উক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের বিখ্যাত মুফতি, মুফতি আযীযুর রহমান রহ. এক ফতেয়ায় লিখেছেন-‘পূর্ব সুরক্ষা হিসাবে টিকা গ্রহণ করা বৈধ। শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এতে কোনো সমস্যা নেই। এটিও এক ধরনের চিকিৎসা’। সুতরাং মৌলিকভাবে টিকা গ্রহণ মুবাহ বা বৈধ।
The post ‘প্রতিরোধ করতে হবে মহামারী’: মুসলিম সভ্যতায় টিকার ইতিহাস appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a7-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be/
No comments:
Post a Comment