Tuesday, November 8, 2022

কেমন হলো বাইতুল মোকাররমের বইমেলা

মুনশী নাঈম:

শেষ হলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ইসলামি বইমেলা ২০২২। অন্যবারের তুলনায় এবারের মেলা ছিল বেশ জমজমাট এবং উৎসবমুখর। মেলা উপলক্ষে যেমন প্রকাশিত হয়েছে নতুন বই, তেমনি আয়োজিত হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও। নতুন বইগুলো মেলার প্রতি পাঠকদের আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করেন প্রকাশকরা। তারা বলেন, এবার বেচাবিক্রিও ভালো হয়েছে। তবে চলমান মূল্যস্ফীতির সংকট না থাকলে আরও বেশি বই বিক্রি হতো।

সূত্র মারফত জানা গেছে, বইমেলার সময় আগামী রোববার পর্যন্ত বাড়ানোর কথা চলছিল। বাইতুল মোকাররমের হকাররা ফাউন্ডেশন থেকে অনুমতিও নিয়েছিল। তবে তারা ইসলামি প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ করেনি। উলটো তাদের কাছে আগামী কয়দিনের জন্য দুই হাজার টাকা করে দাবি করে। এভাবে মেলার সময় বাড়াতে রাজি হয়নি ইসলামি প্রকাশকরা। ফলে গতকাল রাতেই মেলার পর্দা নেমেছে।

কারা কিভাবে অংশ নিয়েছে

এবারের মেলায় স্টল ছিল ৬৪টি। স্টল বরাদ্দের জন্য প্রথমেই লটারি দেয়া হয়। লটারিতে বাংলাবাজারের ইসলামি প্রকাশনীগুলোর মধ্যে স্টল পায় মাত্র ২১টি প্রকাশনী। এরমধ্যে রয়েছে: আসলাফ, চেতনা , মুহাম্মদ, গার্ডিয়ান, সমকালীন, বইঘর, রুহামা, ইসলাম হাউজ , বিশ্বকল্যাণ , পথিক, মাকতাবাতুল ফুরকান , আশরাফিয়া বুক হাউজ, সোজলার, সত্যায়ন, কালান্তর, মিরর, মাকতাবাতুল হিজায, প্রচ্ছদ, আযান, রফরফ এবং বইসই।

৪০টির মতো স্টল বরাদ্দ পায় বাইতুল মুকাররম এলাকার হকাররা। কোনো কোনো হকার একাই ৪টি স্টল বরাদ্দ পান।

স্টল না পেলেও হকারদের থেকে স্টল নিয়ে কিংবা স্টল শেয়ার করে মেলায় অংশগ্রহণ করেছে আরও বিশের অধিক অভিজাত ইসলামি প্রকাশনী। তাদের মধ্যে রয়েছে: রাহনুমা, হুদহুদ, সমর্পণ, উমেদ, মাকতাবাতুস সাহাবা, সিয়ান, ইত্তেহাদ, হাসানাহ, নাশাত, দারুল উলুম, সঞ্চালন, বইকেন্দ্র, শব্দতরু, আরিশ, পড় প্রকাশ, তিবইয়ান, সীরাত, ফাউন্টেন, রাইয়ান, বুকমার্ক, ইলম, ইলমহাউস, সিজদাহ, পাথফাইন্ডার, হাসান, স্বরবর্ণ।

প্রকাশকদের দাবি, এই বইমেলায় হকার নেতারা বেশ প্রতিপত্তি দেখান। তারা স্টলও বরাদ্দ পান বেশি। এবার মেলার শুরুতে ইসলামি প্রকাশকদের অসম্মান করার অভিযোগও উঠেছিল হকারদের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে বইমেলা বয়কটের পরিস্থিতি তৈরী হয়। পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়।

মেলার বই এবং বেস্টসেলার বই

এবারের মেলায় সবচে বেশি বই প্রকাশ করেছে কালান্তর প্রকাশনী। তারা মোট দশটি বই প্রকাশ করেছে। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস’ বইটি। মুহাম্মদ পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে ৯টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘সিরাতে ইবনে হিশাম এবং আব্বাসি খেলাফতের ইতিহাস। গার্ডিয়ান প্রকাশ করেছে ৮টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘দাঈদের জ্ঞানচর্চা’ বইটি। সন্দ্বীপন প্রকাশ করেছে ৬টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘ছোটদের তাফসিরুল কুরআন’। চেতনা প্রকাশন প্রকাশ করেছে ৫টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে মুশাজারাতে সাহাবা, বঙ্গ থেকে সিন্ধু। হাসান এনেছে ৫টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে সিরাতের বইগুলো।

মেলায় রাহনুমা প্রকাশনী প্রকাশ করেছে ৪টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘সিরাতে আয়েশা এবং সিরাতে খাদিজা’। মেলায় তিনটি বই প্রকাশ করেছে পথিক প্রকাশন। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘আখলাকুন নবি এবং আত তারাগিব ওয়াত তারহিব’। হাসানাহ পাবলিকেশন বই এনেছে ২টি। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘নির্বাচিত তাফসির।’ সত্যয়ন প্রকাশ করেছে ২টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে ‘বিশ্বাসের স্বাধীনতা’।

সঞ্চালন এনেছে ৩টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে সম্মুখযুদ্ধের মহানায়ক বইট। নাশাত প্রকাশ ২টি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে খুুলাসাতুল কুরআন, বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের ইতিবৃত্ত। সিয়ান এনেছে একটি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে নতুন বই ‘সেরেন্ডার্ড ওয়াইফ’। মাকতাবাতুল আসলাফ এনেছে একটি বই। তাদের বেস্টসেলারের তালিকায় রয়েছে নতুন বই ‘ইসলামি জ্ঞানচর্চার ইতিহাস’।

এছাড়াও উমেদ এনেছে বিয়ে বিষয়ক একটি বই। ফাউন্টেন এনেছে ইসলামফোবিয়া বিষয়ক বই। ফাতেহ প্রকাশন এনেছে ‘উলামায়ে কেরামের সমালোচনার নেপথ্যে’ নামক একটি বই।

কার কেমন বিক্রি হলো?

এবারের বিক্রি আশাব্যাঞ্জক ছিল বলে মনে করছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, এবার বেচাবিক্রি ভালো হয়েছে। তবে চলমান মূল্যস্ফীতির সংকট না থাকলে আরও বেশি বই বিক্রি হতো।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় মুহাম্মদ পবিলিকেশনের কর্ণধার অব্দুল্লাহ খানের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার মেলায় যা বিক্রি হয়েছে, তার থেকে খরচাদি বাদ দিয়ে তাদের হাতে রয়েছে দুই লাখ। তিনি অসুস্থ। তাই মার্কেটিং ঠিকমতো হয়নি। নতুবা এ সংখ্যাটা আরও বাড়তো।

কথা হয় কালান্তরের কর্মী আবদুল ওয়াদুদ মাহদির সঙ্গে। তিনি জানান, মেলায় তাদের বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ প্লাস। এবারের বেচাবিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। মেলায় সত্যয়নের বইবিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার। রাহনুমার বিক্রি হয়েছে সারে চার লাখ টাকার।

আরও কয়েকজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের বেচাবিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তবে অনেকেই তাদের বিক্রির পরিমাণটা স্পষ্ট করেননি বিভিন্ন কারণে।

এবারের মেলা ছিল প্রাণের মেলা। প্রায়শই মেলায় গিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার, লেখক, শিল্পী ও ওয়ায়েজগণ। তারা পাঠকদের বই পড়তে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করেছেন। বই সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বারবার ভুগিয়েছে মেলার পরিধি খুব ছোট হবার প্রসঙ্গটি। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের দাবি, সামেনে থেকে যেন বইমেলার পরিধি আরও বাড়ানো হয়।

The post কেমন হলো বাইতুল মোকাররমের বইমেলা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a7%87/

No comments:

Post a Comment