Monday, November 7, 2022

নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে বেরলবি দলগুলো?

রাকিবুল হাসান নাঈম:

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বেরলবি দলগুলো। রাষ্ট্রপতি এবং ইসির সঙ্গে সংলাপেও নিয়মমাফিক বসেছে তারা। বেরলবি দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (নিবন্ধন নং ১৯) ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদল। দলটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এম পি। জাকের পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১৬) কোনো জোটে নেই। তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে। দলটির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ৩০) কোনো জোটে নেই। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী।

দলগুলোর উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে। সংলাপে তারা নির্বাচনকেন্দ্রীক নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছে। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে যাবে না, এমন কোনো বক্তব্য তারা এখনও প্রদান করেননি।

তারা ইভিএমের পক্ষে

ইভিএমের পক্ষে যারা কথা বলেছে, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শরিক দলই বেশি। এরমধ্যে রয়েছে তরিকত ফেডারেশনও। সংলাপে তরিকত ফেডারেশন ১১ দফা দাবি জানিয়েছে। এরমধ্যে ইভিএম বিষয়ে তারা বলেছে, সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম; ১৫০ আসনে ব্যালট পেপার এবং স্থানীয় নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।

জোটের বাইরে থেকে ইভিএমের পক্ষে যারা কথা বলেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে জাকের পার্টি। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল টেকনিক্যাল পার্সন বা প্রযুক্তিবিদ নিয়ে আসতে। তবে বেশির ভাগ দলই ইভিএম যন্ত্রটি যাচাইয়ে টেকনিক্যাল পার্সন বা প্রযুক্তিবিদ নিয়ে আসেনি। তবে জাকের পার্টি টেকনিক্যাল পার্সন নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।

ইভিএম বিষয়ে জাকের পার্টির বক্তব্য হলো, আমাদের দেশের যেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট নিয়ে হানাহানি, মারামারি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া উচিত। বন্ধ হওয়ার একটা পদ্ধতি হতে পারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসে ভোটারদের ই-ভোটিং পদ্ধতিতে ভোট দেয়া। দলের চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ই-ভোটিং প্রক্রিয়ায় ঘরে বসে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা উচিত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদে টাকা লেনদেন করা গেলে ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোট দেয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা করা যাবে না কেন?

নির্বাচন কমিশনের ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ফাতেহকে বলেন, ইভিএমে ভোট চাই। তবে তা যেন হয় স্বচ্ছ। কোনো গোঁজামিল যেন না থাকে। সংলাপে দলটি ৩৩% নারী নেতৃত্বের বিধান সংশোধনের সুপারিশও করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে নারাজ

বেরলবি ধারার এ দুটি দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। এ প্রসঙ্গে কথা হয় তরিকত ফেডরেশনের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মোহাম্মদ আলি ফারুকির সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো সমাধান না। এমন নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তি নেই যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানানো যায়। এটা সবসময়ই বিতর্কিত ছিল। নির্বাচন হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারের হাতে। এই সরকারটা হবেন বিগত সময়ের সরকারপ্রধান। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না।

যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, আমরা যেহেতু ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল, তাই এই জোট যে সিদ্ধান্ত নিবে, আমরা তার সাথে একমত। আমাদের মতও তাই।

একই কথা বলেছেন জাকের পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এজাজুর রসুল। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা নির্বাচনে যাব। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা চাই না।’ ‘যদি নির্বাচন হয়’ বাক্যটি দ্বারা বুঝা যায়, নির্বাচন নাও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে মহসচিব বলেন, ‘সত্যিই তো। আমার মনে হয়, আগামীতে নির্বাচন হবেই না। উপমহাদেশ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ কথা বলছি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশও। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ফাতেহকে বলেন, আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারো সঙ্গে জোটে না, স্বতন্ত্রভাবে। তবে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না। নির্বাচন সরকারের অধীনেই হবে। তবে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে নির্বাচন করতে হবে।

আ.লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক

তরিকত ফেডারেশন আ.লীগেরই জোটবদ্ধ দল। নির্বাচন কমিশনে দলটির আলাদা প্রভাব আছে। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম প্রস্তাব করে ১৪ দলীয় জোটের দুই শরিক দল তরিকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী দল। তরিকতের প্রস্তাবের প্রথম নামটিই ছিল হাবিবুল আউয়ালের। তাতে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খানের নামও ছিল। পক্ষান্তরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রস্তাবে তার নাম ছিল সবার শেষে। সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাসহ দুই কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেনের নিয়োগ হয়েছিল ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের তালিকা থেকে। নবগঠিত কমিশনেও দলটির তালিকা থেকে সিইসি পদে কাজী হাবিবুল আউয়াল ও কমিশনার পদে আহসান হাবিব খান নিয়োগ পেয়েছেন।

অন্যদিকে জোটের বাইরে থাকলেও আ.লীগের পক্ষে সবসময় সোচ্চার থাকে জাকের পার্টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় জাকের পার্টির প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘মহাজোটের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে তাকে সমর্থন জানালাম। আজ থেকে জাকের পার্টির কর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ করবেন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বেরলবি দলগুলো নির্বাচন থেকে মুখ ফেরাবে না। তেমন কোনো ইঙ্গিতও তারা দেয়নি। এমনকি, সংলাপে দেয়া নিজেদের দাবিগুলোর পক্ষে তাদের তেমন কোনো মতামত বা শক্ত হুঁশিয়ারিও দেখা যায় না। যেমনটা দেখা যাচ্ছে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর ব্যাপারে। অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর অনেকে বলছে, সংলাপে দেয়া তাদের শর্তগুলো না মানা হলে তারা নির্বাচনে যাবেন না।

The post নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে বেরলবি দলগুলো? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%80-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%ac/

No comments:

Post a Comment