Friday, June 25, 2021

সন্দ্বীপের মোকদ্দমা

রাকিবুল হাসান:

১৯৬৪ সালের ফাল্গুন মাস। সন্দ্বীপের কালাপানিয়া দীঘির পাড়ের শিমুল গাছের তলা ছেয়ে গেছে শিমুল ফুলে। মনে হচ্ছে কেউ লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। শিমুল গাছের পাতা-ফুল ভেদ করে ফুলের গালিচায় যে রোদ পড়ছে, তাকে রোদ বলা চলে না। বরং ফুলের গায়ে উষ্ণ আরাম বলাটাই শ্রেয়। শীত বিদায় নিয়েছে। এখন ঋতুরাজ বসন্ত নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। শাখায় শাখায় নতুন পাতার উদ্ভব, যেন নতুন হয়ে উঠছে পুরোনো পৃথিবী। বসন্তের এই মনমাতানো দৃশ্য দেখতে দেখতে নিধু ফকির গান ধরেন, ‘আজি বসন্ত দ্বারে/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/করো না বিড়ম্বিত তারে।’

নিধু ফকির টনাশাহ মাজারের একান্ত খাদেম। দীঘির উত্তর-পূর্ব কোণে মাজারটি অবস্থিত। মাজার-প্রাঙ্গণের এই শিমুল গাছের তলায় নিধু ফকির বিশ্রাম নেন। চাটাই পেতে পেট ভাসিয়ে তিনি যখন শুয়ে থাকেন, ভুরিটা তার ছোট পাহাড়ের মতো দেখায়। মাজারে যারা খাদেম থাকে, তাদের অধিকাংশই থাকে ভুরিওয়ালা। নিধু ফকির বার কয়েক ভেবেছে ভুরিটা কমানো যায় কিনা। কিন্তু অনেক ভেবে দেখেছে—ভুরিটা এখন আর ভুরি নেই। এটা এখন নিধু ফকিরের বিশেষ সৌন্দর্য। আচমকা ভুরি কমে গেলে তার মনে হয় সে মহা বিপদে পড়বে। তাকে আর প্রথাগত ফকিরের মতো লাগবেনা। ফকির হবার জন্য ইলম কালামের চেয়ে বেশভূষাটাই বেশি কাজে লাগে।

টনাশাহ মাজারের নামকরণের পেছনে একটা ইতিহাস আছে। সন্দ্বীপে বাঁশের কঞ্চিকে বলা হয় টনা। এই ফকির একসময় জনৈক ব্যক্তির ঘোড়ার রাখাল ছিলো। ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ করতে তার হাতে বাঁশের একটি কঞ্চি থাকতো। ফকিরের মৃত্যুর পর ভক্তরা তার কবর পূজা শুরু করে। গড়ে তুলে মাজার। নাম দেয় টনা শাহের মাজার। নিধু ফকির এই মাজারের শুরু থেকেই এখানে আছে। বাকি জীবনটা এখানেই কাটানোর ইচ্ছে। বাল-বাচ্চা নেই। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘দয়ালে যার মন নিয়েছে, সংসারে তার মন বসে? বিয়ে করছিলাম প্রথম জীবনে। কিন্তু বিপদ একটাই। বউ টানে ঘরে, দয়াল টানে বাইরে। দ্বিধাদ্বন্দে তখন বউ ছেড়ে দিলাম। তারে শুধু শুধু কষ্ট দিয়া তো লাভ নাই।’

তবে বাকি জীবন দূরে থাক, আর দশ মিনিটও পেট ভাসিয়ে শুয়ে থাকতে পারলো না নিধু ফকির। সে দেখলো, জুমার নামাজ পড়ে একদল মুসল্লি মাজারের দিকেই এগিয়ে আসছে। তাদের চোখেমুখে কেমন ক্ষোভ ঠিকরে পড়ছে। শোয়া থেকে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মুসল্লিরা কাছে চলে এলো।

নিধু ফকির বললো, ‘ভাইজানেরা এদিকে?’
এক মুসল্লি বললো, ‘জুমা না পইড়া গাছতলায় পেট ভাসাইয়া শুইয়া আছেন?’
ফকির বললো, ‘কে কইলো নামাজ পড়ি নাই। আমি সবসময় নামাজেই থাকি।’
মুসল্লি বললো, ‘এখনও নামাজেই আছেন? নামাজ থেকেই কথা বলছেন?’
ফকির বললো, ‘মনে মনে নিয়ত করলেই নামাজ হয়। যতক্ষণ ইচ্ছে।’
মুসল্লি বললো, ‘এজন্যই হুজুর বলছে—এসব মাজার শিরক-বিদআতের আখড়া। এরা মানুষরে বিভ্রান্ত করে। এই চল—আজ মাজার গুড়িয়ে দিব।’
ফকির বললো, ‘দোহাই লাগে, এমনটা করবেন না। পবিত্র জায়গায় হাত দিতে নেই।’

একটু আগেই জুমার বয়ানে শিরক-বিদআতের আখড়া মাজারের ভয়ংকর কুফল সম্পর্কে জেনেছে মুসল্লিরা। সন্দ্বীপের পীর সাহেব মাওলানা ইদ্রিস সাহেবের কথাগুলো তাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। যারা অমুসলিম, তাদের ক্ষতি সম্পর্কে আমরা সচেতন। কিন্তু মুসলমানের চিহ্ন গায়ে লাগিয়ে যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তারা অমুসলিমের চেয়েও ভয়ানক। তাই আজ এই মাজার উচ্ছেদ করতে হবে। ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা খুলে ফেললো মাজারের বেড়া, টিনের চাল। ছিঁড়ে ফেললো লাল কাপড়ের নিশান। ঝিকিমিকি কাগজের ঝোলানো ফুল। ভেঙেচুরে সব ফেলে দিলো দীঘিতে। বাধা দিতে গিয়ে নিধু শাহ থাপ্পড় খেলো কয়েকটি। তারপর আর সাহস করে এগুয়নি।

সন্দ্বীপের পীর সাহেব বিভিন্ন ওয়াজে মাজার পূজার বিরুদ্ধে কথা বলতেন। মিলাদ-কিয়াম নিয়ে বিতর্ক করতেন। কদিন আগেই এক বিতর্কে মিলাদ-কিয়ামপন্থী আলেম মাওলানা আবদুল মালেককে পরাজিত করেছেন। বেদআতীদের মনে তার প্রতি এমনিতেই ক্ষোভ। কিন্তু ক্ষোভ উপশমের কোনো উপায় তারা করতে পারছিলো না। কোনোভাবেই পীর সাহেবকে বাটে ফেলা যাচ্ছিলো না। আজকের ঘটনায় যেন সেই সুযোগ এসে গেলো। যদিও পীর সাহেব মাজার ভাঙতে বলেননি। তার বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়েই তো মুসল্লিরা ভাঙচুর করেছে। টনাশাহ মাজার কর্তৃপক্ষ সন্দ্বীপের ফৌজদারি আদালতে আঠারো জনের নামে মামলা দায়ের করে। মামলার প্রধান আসামী—মাওলানা ইদ্রিস সন্দ্বীপী, মাওলানা কলিমুল্লাহ, মাওলানা আমিনুর রাসূল, মাওলানা নুরুল্লাহ, হাজি হাবিবুল্লাহ মুনশী সাহেব, হাজি দলিলউদ্দীন সাহেব প্রমুখ।

মামলার অভিযোগে মাজার কর্তৃপক্ষ বলে, ঘটনার আগেরদিন রাতে কালাপানিয়া হেদায়াতুল ইসলাম মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ছিলো। এই মাহফিলে মাওলানা ইদ্রিস সন্দ্বীপী মাজারের বিরুদ্ধে কথা বলে জনতাকে উত্তেজিত করেছেন। তিনি একই কাজ করেছেন ঘটনার দিন জুমাপূর্ব বয়ানে। সেখানেও তিনি মাজারের বিরুদ্ধে বলে মুসল্লিদের উত্তেজিত করেছেন। সবকিছুর জন্য তিনি দায়ী।

সন্দ্বীপের বিখ্যাত উকিল, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক এসেম্বলির সদস্য এ.ডি.এম. মুওয়াহিদুল মাওলার পরামর্শে সন্দ্বীপের পীর সাহেবের পক্ষে আদালতে লড়াই করতে নামেন এডভোকেট আজিজুল ইসলাম চৌধুরী। বেশ কিছুদিন মামলার শুনানি চলে। তারপর ফৌজদারি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সাত্তার সাহেব সন্দ্বীপ পীর সাহেবের পক্ষে মামলার রায় ঘোষণা করেন। মাজারের অসারতা এবং প্রকৃত রূপ ফুটিয়ে তুলতে ম্যাজিস্ট্রেট একটি গল্প শোনান।

এক লোক এক পীরের দরবারে বারো বছর কাটিয়েও কিছু অর্জন করতে পারলো না। বিদায় বেলায় পীর সাহেব তাকে একটি গাধী হাদিয়া দিলো। কিন্তু পথে গাধীটি মারা গেলো। লোকটি গাধীটি দাফন করে তার চারপাশে তুলে দিল একটি দেয়াল। তারপর আশ্চর্যজনকভাবে এখানে জনসমাগম শুরু হলো। দেয়ালঘেরা জায়গাটি প্রসিদ্ধি পেলো মাজার হিসেবে। নামযশ শুনতে পেয়ে পীর সাহেব একদিন এসে উপস্থিত হলেন এই মাজারে। এসে দেখেন—মাজারের পরিচালক তারই শাগরেদ। পীর সাহেব জিজ্ঞেস করলো, ‘ব্যাপার কী? মাজারের সন্ধান পেলে কিভাবে?’ লোকটি বললো, ‘এটা আপনার দানকৃত গাধীর কবর। গাধী মারা যাবার আমি এখানে দাফন করি। তারপর বেড়েই চলছে জনসমাগম।’ পীর সাহেব তখন বললেন, ‘তুমি যে মাজারে আমার খেদমতে ছিলে, সেখানেও কোনো বড় বুজুর্গের কবর ছিলো না। বরং সেই কবরটি ছিল এই ছোট গাধীর দাদীর।

গল্প শুনে কোর্টরুমে হাসির রোল পড়ে গেলো।

তবে হাসির পাত্র হয়ে মাজার কর্তৃপক্ষ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো। তারা ফৌজদারি আদালতে নিরাশ হয়ে আপিল করলো চট্রগ্রাম জর্জকোর্টে। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আওলাদে রাসূল হজরত মাওলানা আসআদ মাদানীর বিশিষ্ট মুরিদ হাজি আবদুর রউফ সাহেবের সহযোগিতায় সেখান থেকেও মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। জর্জকোর্টে সুযোগ না পেয়ে মাজার কর্তৃপক্ষ এবার আপিল করলো বাংলাদেশ হাইকোর্টে। হাজি নজির আহমদ সাহেবের সহযোগিতায় এখান থেকেও মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্ট থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা গেলো সুপ্রিম কোর্টে। সেখানেও কিছু করতে পারলো না। মামলা খারিজ হয়ে গেলো।

একের পর এক জায়গা থেকে তারা বিতারিত হচ্ছিলো, কিন্তু থামছিলো না। এর শেষ দেখতে চাইছিলো। সব আদালত থেকে মামলা খারিজ হবার পর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সাহেবের প্রথম আমলে, ১৯৭২ সালে, তারা মার্শাল ল কোর্টে আপিল করে। এখানেও সাহায্য করেন হাজি নজির আহমদ সাহেব। এবার মামলার তদন্তের ভার পড়ে মরহুম সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ওপর। তদন্ত করতে তিনি সন্দ্বীপের পথে পা বাড়ান।

সকাল আটটায় সন্তোষপুর মাদরাসার সামনে এসে একটি জিপ থামলো। জিপ থেকে নামলেন সেনাবাহিনীর মেজর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তার সঙ্গে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট, ওসি এবং সরকারি কর্মকর্তাগণ। মাদরাসা মসজিদের বারান্দায় তখন ঢুলে ঢুলে পড়ছিলো শতাধিক ছাত্র। সবার চোখ কিতাবের দিকে। যত বড় মেহমানই আসুক, যেন তাদের দেখবার ফুরসত নেই। ছাত্রদের একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন এরশাদ। ওসিকে বললেন, ‘দেখছেন, কেমন মন দিয়ে তারা পড়ছে! একবারও চোখ তুলছে না!’ ওসি বললেন, ‘তাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাই এমন। মন দিয়ে পড়তে হয়। বাংলার চেয়ে আরবি কঠিন।’ এরশাদ বললেন, ‘কথা সেটা না। মূল হলো একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা, অধ্যাবসায়। মাদরাসার ছাত্রদের মাঝে তা পূর্ণই আছে দেখতে পাচ্ছি।’

মসজিদের দক্ষিণ দিকে পীর সাহেব সন্দ্বীপীর কামরা। মেজর এরশাদ সোজা কামরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। উঁকি দিয়ে দেখলেন, পীর সাহেব একমনে কুরআন তেলাওয়াত করছেন। কুরআন তেলাওয়াতের মাঝে সালাম দেয়া যায় না—মাসআলাটা এরশাদ জানতেন। কিন্তু তখন মাসআলাটা একদমই মনে পড়লো না তার। তিনি সালাম দিয়ে ফেললেন। সালাম দেবার পরপরই মাসআলাটা তার মনে পড়ে গেলো। ভাবলেন, ভুলটা এখনই, এতবড় একজন মাওলানার সামনেই হতে হলো! সালাম শুনে পীর সাহেব কুরআনের পাতা থেকে মুখ তুলে তাকালেন। চেহারার ভাবগাম্ভীর্য দেখে ভয় পেয়ে গেলেন এরশাদ। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে এই বুঝি মাশুল গুণতে হবে। পীর সাহেব কুরআন বন্ধ করে সলাামের উত্তর দেয়ায় তার মনের ভয় কিছুটা কমলো।

মনের ভয় কমলেও কামরার ভেতরে যাবার সাহস হলো না মেজর এরশাদের। বলা যায় না—কোন সময় কী ভুল হয়ে যায়। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর বিশিষ্ট শাগরেদ এই পীর সাহেব। চেহারায় তার নূরের খেলা। কঠিন হতে চাইলেও তার সামনে কঠিন হওয়া যায় না। বিনীত হয়ে আসে মন। দরজায় দাঁড়িয়ে বিনম্র কণ্ঠে এরশাদ বললেন, ‘হুজুর, একটু বাইরে এলে ভালো হতো। সরকারি একটা তদন্তে আপনার কাছে এসেছি।’

পীর সাহেব সন্দ্বীপী বাইরে বেরিয়ে এলেন। মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের ছোট আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বললেন দুজন। কথা শেষ হলে মেহমানদের সামনে হালকা নাশতা উপস্থাপন করা হলো। নাশতার পর মেজর এরশাদ বিদায় নিলেন। তার মনে গেঁথে রইলো সন্দ্বীপের মতো দ্বীপে, সন্তোষপুরের ন্যায় এক গহীন গ্রামে এই মাদরাসার নুরানি চিত্র। কী এক ভালোলাগা মিশে রইলো তার তনুমনে। ঢাকায় ফিরেই তিনি চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট পেশ করলেন। তার রিপোর্টের প্রেক্ষিতে মার্শাল ল কোর্ট থেকেও মাজার কর্তৃপক্ষের মামলা খারিজ হয়ে যায়।

নিধু ফকির এতদিন অপেক্ষায় ছিলো, মামলার রায় তাদের পক্ষে যাবে। টনাশাহের মাজার মেরুদণ্ড নিয়ে আবার দাঁড়াতে পারবে। শিমুল গাছের তলায় শুয়ে পেট ভাসিয়ে সে আবার গান গাইতে পারবে। কিন্তু সব আশা নিরাশায় পর্যবসিত হলো। মার্শাল ল কোর্ট থেকে যেদিন মামলাটি খারিজ হয়ে গেলো, সেদিন নিধু ফকিরকে দেখা গেলো কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে শিমুল গাছের সঙ্গে কথা বলছে। শিমুল গাছকে সে বলছে, ‘দয়ালের খেলা বুঝা বড় দায়। টনাশাহের মাজারকে তুই দেখে রাখিস। ছায়া দিয়ে রাখিস। আমি চলে যাচ্ছি। প্রথমে মাইজভাণ্ডারে হাজিরা দেব। তারপর দয়াল যেখানে ডাকবে, সেখানে চলে যাব। বুঝছিস? দুনিয়ার মামলা কিছু না; দয়ালের মামলা বড় মামলা।’

হালকা বাতাসে শিমুল গাছটা একটু নড়লো। গুটিকয়েক ফুল পড়লো এসে নিধু ফকিরের মাথায়। ফকির হেসে দিয়ে বললো, ‘মাঝেমধ্যে আসব। তোর ছায়ায় একটু বসতে। টনাশাহের দরবারে হাজিরা দিতে। এবার যাই।’

The post সন্দ্বীপের মোকদ্দমা appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%ae%e0%a6%be/

No comments:

Post a Comment