রাকিবুল হাসান :
১৯২৯ সালের কাঠফাটা গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেল। বাইরের তাপে ঘরের ভেতর ভ্যাপসা গরম। ছোট হাতপাখা দিয়ে নিজের গায়ে নিজেই বাতাস করছেন প্রাচ্যের মুসলিম দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল। তাঁর সামনে বসে আছে ষোল বছরের এক কিশোর। তাকে তিনি চেনেন না। কিশোরটি এই প্রথম তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আব্দুল্লাহ চুগতাই পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘এর নাম আবুল হাসান আলী। লখনৌ থেকে এসেছে।’
কবি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘লখনৌ থেকে?’
প্রফেসর বললেন, ‘জি। হিন্দুস্তানে কবি ও কবিতার ইতিহাস গ্রন্থের লেখক মাওলানা সাইয়েদ আবদুল হাইয়ের ছেলে।’
কবি ও কবিতার ইতিহাস গ্রন্থ লিখে তখন বেশ পরিচিত এবং অলোচিত সাইয়েদ আবদুল হাই। কবি সাহেবও তাকে চিনেন, খুব ভালো করেই। তিনি আবুল হাসান আলীর দিকে তাকিয়ে একটি স্নেহের হাসি দিলেন।
আবুল হাসান আলীও লজ্জা-নম্র মুখে মুচকি হাসলো। চোখে অপার মুগ্ধতা নিয়ে সে তাকিয়ে আছে তার প্রিয় কবি, তার আত্মার কবির দিকে। আল্লামা ইকবালকে তার আত্মার, তার একদম নিজের মনে হয়। মনে হয় এই কবি তার নিজের কথাগুলোই বলে দেন। রাসূলের মুহাব্বত, ঈমানের তাকত, মুসলিম উম্মাহর জাগরণ ও সংস্কার—সে যেমন করে ভাবতে চায়, এই কবি যেন ঠিক তেমন করেই বলে যান। বরং তাকে আরও তেজস্বী, আরও প্রখর করে তুলেন অনুভবের তাড়নায়।
আবুল হাসান আলী কবির একটি উর্দু কবিতার আরবি অনুবাদ করে এনেছে। কবিতার অনূদিত কপিটি সে মেলে ধরলো কবির সামনে। কবি সাহেব আরব কবিদের নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলেন, বাজিয়ে দেখলেন। অনূদিত কবিতার জন্য প্রশংসা করলেন। এত বড় কবির বিনয় দেখে, তার মতো কিশোরের সঙ্গে বাৎসল্যপূর্ণ আচরণ দেখে আবুল হাসান আলী আবার বিস্মিত হলো। কবির দরবার থেকে সে ফিরে এলো বুকভরা প্রশান্তি এবং আরও মুগ্ধতা নিয়ে।
তারপর কালের দেয়াল থেকে খসে গেছে আটটি বছর। আবুল হাসান আলী এখন দারুল উলুম নদওয়ার শিক্ষক। কবি সাহেব জীবনের পড়ন্ত বেলায়, এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। ডাক্তারের নিয়ম মেনে ওষুধ খান, কম কথা বলেন। ১৯৩৭ সালের ২২ নভেম্বরের এমনই এক দিনে মাওলানা সাইয়েদ তালহা হাসানির সাথে কবির বাসভবনে আবার উপস্থিত হলেন আবুল হাসান আলী নাদাবি। সঙ্গে তার ভাই মৌলভী সাইয়েদ ইবরাহিম হাসানি। এখন তিনি আর সেই কিশোর নেই। তিনিও হয়ে উঠছেন কবির উত্তরসূরী এক চিন্তাপুরুষ।
ডাক্তারের নিষেধ লঙ্ঘন করে কবি সাহেব কথা বলতে শুরু করলেন। আবুল হাসান আলী নাদাবিকে পেয়ে যেন তার মুখের অর্গল খুলে গেছে। উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন তিনি। বৃদ্ধ খাদেম আলী বখশ ডাক্তারের নিষেধ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। কবি সাহেব হাত দিয়ে ইশারা করে তাকে থামিয়ে দিচ্ছেন। সেদিন তিনি কথা বললেন তাসাউফ নিয়ে, ইসলামের পুনর্জাগরণ নিয়ে। মুসলমানদের আলাদা ভুখণ্ড পাকিস্তানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বললেন, ‘রাষ্ট্র ছাড়া উম্মাহ তাদের দ্বীন এবং সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে পারে না। এ দুটো টিকিয়ে রাখার জন্য শক্তি চাই, রাজত্ব চাই। এই উপমহাদেশে মুসলমানদের যাবতীয় সমস্যার একমাত্র সমাধান পাকিস্তান রাষ্ট্র। এটা মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমস্যারও সমাধান।’
উপমহাদেশের মুসলমানদের ভবিষ্যৎ কর্তব্য নিয়ে তিনি আরও বললেন, ‘মুসলিম নেতাদের আমি বলেছিলাম—অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিতে এবং মুসলমানদের মাঝে ইসলামি সংস্কৃতি, সাহিত্য এবং আরবি ভাষার প্রসার ঘটাতে। বলেছিলাম—মুসলমানদের একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক, তাদের কথা বলার জন্য ইংরেজি দৈনিক থাকা উচিত।’
আবুল হাসান আলী নাদাবি দেখলেন, কবি অনর্গল বলে যাচ্ছেন। নিজের শরীরের দিকে খেয়াল করছেন না। তাই তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘আজ আমার যেতে হবে। আপনারও বিশ্রাম নিতে হবে।’ কবি সাহেব মুসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। নাদাবি সাহেব বললেন, ‘আপনার কবিতা আমি আরবিতে অনুবাদ করতে চাই।’ কবি সাহেব বলে উঠলেন, ‘মাশাল্লাহ! অবশ্যই অনুবাদ করবে।’ তারপর নাদাবি সাহেব কবির উর্দু কবিতা সমগ্র ‘যারবে কালিম’ থেকে কিছু কবিতা পড়ে শুনালেন।
২
১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর পাঞ্জাবের শিয়ালকোট শহরে আল্লামা ইকবালের জন্ম। তিনি শিয়ালকোটে স্কটিশ মিশন কলেজ থেকে দর্শন, ইংরেজি ও আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশােনা করেন এবং স্বর্ণপদক নিয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর ১৮৯৯ সালে দর্শনে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। আল্লামা ইকবাল যখন মাস্টার্সে পড়েন, তখন স্যার টমাস আর্নল্ড এর সংস্পর্শে আসেন এবং তার কাছেই তিনি ইউরোপে উচ্চশিক্ষার অনুপ্রেরণা পান । ১৯০৫ সালে তিনি ইউরোপে যান। লাহোর ফিরে আসেন ১৯০৮ সালে।
১৯১০ সালে শুরু হয় বলকান-ত্রিপোলির যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ‘লিবীয় যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের ফলে ইতালি অটোমান সাম্রাজ্যের কাছ থেকে ত্রিপোলি দখল করে নেয়। কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের সামরিক দুর্বলতার সুযোগে ইতালির সঙ্গে অটোমানদের যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই বলকান লীগ অটোমান সাম্রাজ্যের ওপর আক্রমণ চালায় এবং প্রথম বলকান যুদ্ধের সূচনা ঘটায়।
এই যুদ্ধ আল্লামা ইকবালের মন ও মননে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মুসলমানদের ওপর নির্যাতন দেখে তার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে। এই প্রথম তিনি ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের প্রতি ঘৃণা অনুভব করেন। শত্রুর চোখে দেখতে শুরু করেন তাদের। এই সময়ে ব্যথাতুর কলমে তিনি রচনা করেন—ইসলামি রাষ্ট্র, জাতীয়তাবাদের প্রত্যাখ্যান, পূর্ণাঙ্গ ইসলামের আহ্বান, হে ঈদের চাঁদ, মুসলিম, ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ, বেলাল, আধুনিক সভ্যতা, দ্বীন, রাসূলের নিকট আরজি ইত্যাদি কবিতা।
‘রাসূলের সমীপে নিবেদন’ কবিতায় তার রক্তাক্ত হৃদয়ের দেখা পাওয়া যায়। কবিতায় কল্পনায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন রাসূলের দরবারে। রাসূল জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমার জন্য কী হাদিয়া এনেছো?’
ইকবাল বলেন, ‘এই পৃথিবীর কোনো হাদিয়া-ই আপনার শান মোতাবেক নয়। তবে আপনার জন্য আমি একটি আয়না নিয়ে এসেছি। এই আয়নায় তাকালে আপনার উম্মতের করুণ দৃশ্য দেখা যায়; দেখা যায় লিবিয়ায় শহীদদের রক্ত।’
৩
উচ্চশিক্ষা এবং উদ্দীপ্ত কবিতার কারণেই কী আল্লামা ইকবাল অমর হয়ে আছেন? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদাবি ‘রাওয়াইউ ইকবাল’ গ্রন্থে বলেন, ‘শুধু শিক্ষা আর কবিতার মাধ্যমেই কেবল তিনি এত বড় হননি, এত মানুষের মনে জায়গা পাননি। এমন শিক্ষা অনেকেই নিয়েছে, এমন কবিতা অনেকেই লিখেছে। অন্যদের চেয়ে আল্লামা ইকবালকে আলাদা করেছে পাঁচটি বিষয়। এই পাঁচটি বিষয় তাকে মহিমান্বিত করেছে আপন স্বাতন্ত্র্যে।
ক. ঈমান
ঈমান ছিলো আল্লামা ইকবালের প্রধান সম্বল। তার কথায়-কাজে, ইলমে-আমলে, চিন্তায়-ভাবনায় ঈমানের বিচ্ছুরণ ছলকে ছলকে উঠতো। এক কবিতায় তিনি বলেন, ‘এই নাদান ফকিরের কিছুই নেই, কিছুই নেই। আছে কেবল দুটো কালিমা—লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মদ রাসূলাল্লাহ।’ আসরারে খুদী গ্রন্থের এক চরণে বলেন—’মুসলিমের হৃদয় শাসিত হয় মুস্তফা সা. এর ভালোবাসায়/তিনিই আমাদের সম্মানের কারণ/আমাদের গর্বের উৎস।’ আরেক কবিতায় বলেন—’পশ্চিমা জ্ঞানের ঝলক আমাকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি, চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারেনি। কারণ, আমি চোখে লাগিয়েছি মদীনার সুরমা।’
আল্লামা ইকবাল বিশ্বাস করতেন, এই পৃথিবীর একমাত্র টিকে যাওয়া ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ছাড়া মানুষ সফল হতে পারে না। অমর হতে পারে না। এই ঈমানই আল্লামা ইকবালের সুক্ষ্ম অনুভূতি, গভীর ইলম, আশ্চর্য হিকমাহ, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, স্বাতন্ত্র্য ব্যক্তিত্বের একমাত্র উৎস।
খ. কুরআন
মৃত্যু পর্যন্ত আল্লামা ইকবাল কুরআনের ইলমে মগ্ন ছিলেন। তিনি কুরআন পড়তেন; কুরআন থেকে নতুন ঈমান, নতুন শক্তি, নতুন চিন্তা, নতুন ইলম উদ্ভাবন করতেন। কুরআনকে তিনি বরণ করেছিলেন জীবনের পূর্ণ সংবিধান হিসেবে। তার কুরআন পাঠের একটি গল্প তিনি বলেছেন। গল্পটি তার যবানিতেই শোনা যাক—
‘প্রতিদিন ফজর নামাজের পর আমি কুরআন পাঠ করতাম। আমার বাবা তাকিয়ে দেখতেন। আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘কী করছো?’ আমি বলতাম, ‘কুরআন পড়ছি।’ এভাবে টানা তিন বছর তিনি আমাকে একই প্রশ্ন করে গেলেন; আমিও উত্তর দিয়ে গেলাম। তারপর একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা, প্রতিদিন একই প্রশ্ন করেন। আমিও একই উত্তর দেই। আপনি চুপ করে থাকেন। রহস্যটা কী?’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমাকে বলতে চাচ্ছি—তুমি এমনভাবে কুরআন পড়ো, যেন কুরআন তোমার ওপরেই নাজিল হয়েছে।’ তারপর থেকে আমি কুরআন বুঝে বুঝে পড়তে শুরু করি। আমার কবিতায় যত জোছনা, যত স্বপ্ন—তা এই কুরআনের নূর ও বরকতেই। কুরআনের আলোকেই আমার সব পাওয়া।’
গ. নিজেকে চেনা
আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘তুমি তোমার হৃদয়ের তলদেশে নামো। তুমি তোমার ব্যক্তিত্বের গভীরে প্রবেশ করো। তাহলে জীবনের রহস্য এবং উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে।’ এই দর্শনকে ভিত্তি করেই ১৯১৫ সালে তিনি লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘আসরারে খুদী’। খোদ মানে নিজে, আমি। আসরার মানে রহস্য। ইকবালের খুদী কিন্তু আমিত্ব নয়। এই খুদি অর্থ হলো স্বকীয়তাবোধ, নিজেকে জানা, নিজের শক্তি বিষয়ে ওয়াকিবহাল হওয়া। নিজের আসল পরিচয় উপলব্ধি। নিজস্বতা বিষয়ক প্রতীতি।
এটাই ইকবালের খুদীর মাকসাদ। মানুষ যখন নিজেকে জানে, নিজের আত্মা ও সত্তা সম্পর্কে তার পরিস্বচ্ছ ধারণা হয়ে যায়, তখন মানুষ অমিত-তেজা ও অমৃত-তাজা হয়ে পড়ে। মানুষ যখন নিজেকে চিনে, তখন আল্লাহকে চিনে ফেলে। তাই তিনি নিজেকে চেনার ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন—’যদি তুমি তোমার খাদ্য দানকারী আল্লাহকে না চিনো, তাহলে রাজা-বাদশাদের কাছে ভিখারির মতো খাদ্যের জন্য হাত পাততে হবে। আর যদি তুমি আল্লাহকে চিনে ফেলো, রাজা-বাদশাগণ তোমার দরবারে এসে পড়ে থাকবে। অমুখাপেক্ষিতাই সবচে’ বড় রাজত্ব। উদর-পূজা মানুষের আত্মাকে ধ্বংস করে দেয়। এখন তুমিই বেছে নাও—আল্লাহকে চিনবে, নাকি রাজা-বাদশার দরবারে ভিখিরি হবে।’
ঘ. শেষ রাতের কান্না
যতই তিনি কিতাব পড়তেন, কবিতা লিখতেন, সমাজিক কাজে ব্যস্ত থাকতেন, শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে নামাজের মুসল্লায় দাঁড়িয়ে যেতেন ঠিকই। নিজের যত দুঃখ, যত চাওয়া শেষ রাতের কান্নায় নিবেদন করতেন। শেষ রাতের এই কান্না ছিল তার চিন্তার খোরাক, হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার চাঞ্চল্য। তাই তিনি দরবারে ইলাহিতে ফরিয়াদ করেছেন—’হে আল্লাহ, ইচ্ছে হলে আমার সব কেড়ে নাও। কিন্তু শেষ রাতের এই কান্নার স্বাদ ও লাযযাত কেড়ে নিও না।’
শেষ রাতের এই ইবাদাত ও কান্নার প্রতি তিনি যথেষ্ট নিবেদিত এবং প্রণোদিত ছিলেন। শেষ রাতের এই কান্নার গুরুত্ব ফুটিয়ে তিনি বলেন—’মারেফাতের জগতে হতে পারো ফরিদুদ্দিন আত্তার, হিকমতের জগতে জালালুদ্দিন রুমি, ইলম ও প্রতিভার জগতে হতে পারো আবু হামেদ গাজালি। কিন্তু শেষ রাতের কান্না ছাড়া তুমি মহান হতে পারবে না।’
তিনি নিজেই কেবল কান্না করতেন না। বরং দোয়ায় বলতেন—হে রব, যুবকদের হৃদয়েও আমার এই কান্নার আগ্রহ জাগিয়ে দাও। আমার হৃদয়ের তড়প ও তাড়না, তাদের হৃদয়েও ঢেলে দাও।’
ঙ. রুমির মসনবি শরীফ
আল্লামা জালালুদ্দিন রুমির মসনবি শরীফকে আলোকবর্তিকা হিসেবে নিয়েছেন আল্লামা ইকবাল। ‘আসরারে খুদী গ্রন্থে তাঁর উপর রুমির আধ্যাত্মিক প্রভাবের বিবরণ দিয়ে রুমির স্তুতি বর্ণনা করে লিখেছেন—’রুমির প্রতিভায় অনুপ্রাণিত আমি/আবৃত্তি করে যাই গোপন রহস্যের মহাগ্রন্থ/আত্মা তাঁর জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড/আমি শুধু স্ফুলিঙ্গ/যা জ্বলে ওঠে মুহূর্তের জন্য।’
আরেক পঙক্তিতে লিখেছেন—’পাশ্চাত্যের মোহে বিবেক যখন আসক্ত, রুমির হৃদয়ের তাপ এবং উষ্ণতা ওষুধ হিসেবে কাজ করেছে আমার। তার আলোয় আমার দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়েছে, বুকের গভীরতা প্রশস্ত হয়েছে। শায়খ রুমি থেকে যা পেয়েছি, এক হাজার হাকিম থেকেও তা পাইনি।’
এই পাঁচটি কারণ আল্লামা ইকবালকে অন্যদের থেকে স্বাতন্ত্র্য করেছে। নিজস্ব মহিমায় ভাস্বর করে তুলেছে।
৪
১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল। সুবহে সাদিকের আবছা আলোয় জেগে উঠছে পৃথিবী। সূর্য এখনো উঠেনি। কিন্তু তার আগেই অস্তাচলে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য জগতের আরেক সূর্য আল্লামা ইকবাল। তিনি তার বৃদ্ধ খাদেম আলী বখশের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন। জীবনজুড়ে যার সাধনা ছিলো কবিতায় মানুষকে জাগিয়ে তোলা, আশাবাদী করে তোলা, ঈমানি চেতনায় উজ্জীবিত করে তোলা, এই আজ, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও উচ্চারণ করলেন কবিতা। গোলাপের মতো মুচকি হেসে বললেন জীবনের শেষ পঙক্তি—নিশানে মরদে মুমিন বাতু গোয়াম/চু মরগ আয়াদ তাবাসসুম বর লাব্বে উসত; আমি মুসলিম; আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। একজন মুসলিমের উচিত মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করা।’
তথ্যসূত্র :
রাওয়াইউ ইকবাল, আবুল হাসান আলী নাদাবি
আসরারে খুদী, আল্লামা ইকবাল
নুকুশে ইকবাল, আবুল হাসান আলী নাদাবি
The post ‘তলবে খুদী’ : অজ্ঞাত ইকবালের অনুসন্ধান appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%a4%e0%a6%b2%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%96%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%80-%e0%a6%85%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9e%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%b0/
No comments:
Post a Comment