জুবাইর আহমদ আশরাফ:
এতেকাফের প্রকার
এতেকাফ তিন প্রকার।
প্রথম প্রকার: এতেকাফে ওয়াজিব। এতেকাফ ওয়াজিব হয়, মানত করার দ্বারা। মানত দুই ধরনের হতে পারে। সাধারণ মানত অথবা কোন শর্তের সঙ্গে নির্ধারিত মানত। সাধারণ মানত যেমন, কেউ বলল, ‘আল্লাহর শপথ! আমি অমুক তারিখে এতেকাফ করব।’ শর্তের সঙ্গে নির্ধারিত মানত যেমন, কেউ বলল, ‘আল্লাহ তাআলা আমার অমুক অসুখ ভাল করে দিলে আমি এতেকাফ করব।’ মানতের এতেকাফ সহীহ হওয়ার জন্য রোযা রাখা শর্ত। এমনকি, কেউ যদি মানত করে যে, রোযা রাখা ব্যতীত আমি একমাস এতেকাফ করব, তবু তার এতেকাফ করতে হবে এবং রোযা রাখতে হবে। মানত সহীহ হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করা জর“রী। মনে মনে নিয়ত করারদ্বারা মানত হয় না।
দ্বিতীয় প্রকার: সুন্নতে মুওয়াক্কাদায়ে কেফায়া। রমযানের শেষ দশদিনের এতেকাফ এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। এর অনুরূপ এবাদত হলো, তারাবীহ-এর সালাত জামাআতে আদায় করা। যদি কতিপয় লোক জামাআত কায়েম করে, তবে অন্য যারা তরক করে, তারা গোনাহগার হবে না। যদি তা সুন্নতে কেফায়া না হয়ে সুন্নতে আইন হতো, তবে সুন্নতে মুওয়াক্কাদা তরক করার দ্বারা অন্যরাও গোনাহগার হতো।
সুন্নতে মুওয়াক্কাদায়ে কেফায়া হওয়ার দলীল এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমযানের শেষ দশদিন এতেকাফ করেছেন। তাঁর কোন কাজ সর্বদা স্থায়ীভাবে করার দ্বারা ঐ কাজটি সুন্নতে মুওয়াক্কাদা প্রমাণিত হয়। কিন্তু যেহেতু কেউ এতেকাফ না করলে তিনি তাকে কিছু বলেননি, তাই এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, এতেকাফ করা সুন্নতে মুওয়াক্কাদায়ে কেফায়া। আর যদি তিনি এতেকাফ তরককারীর বিরুদ্ধে কিছু বলতেন, তবে তা ওয়াজিব হতো।
তৃতীয় প্রকার: নফল এতেকাফ। রমযানের শেষ দশকের এতেকাফ এবং মানতের এতেকাফ ব্যতীত অন্য সময়ের এতেকাফ এ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। নফল এতেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘এতেকাফকারীর রোযা রাখা জরুরী নয়, তবে সে যদি নিজের জন্য জরুরী বানিয়ে নেয়।’ (অর্থাৎ মানতের মাধ্যমে ওয়াজিব
বানিয়ে নেয়।)
হযরত হাসান রহ. বর্ণনা করেছেন, ‘নফল এতেকাফেও রোযা রাখা জরুরী, এ জন্য মানতের এতেকাফের ন্যায় নফল এতেকাফও একদিনের কম সময়ে হবে না।’ কিন্তু প্রকৃত কথা এই যে, সামান্য সময়ের জন্যও নফল এতেকাফ হতে পারে। সর্বনিম্ন সময়ের কোন নির্ধারিত সীমা নেই। নিয়তসহ সামান্য সময়ের জন্য অবস্থানের মাধ্যমেও নফল এতেকাফ হতে পারে। এমনকি, মসজিদে না বসে হাঁটা অবস্থায়ও হতে পারে।
এতেকাফের হুকুম
ওয়াজিব এতেকাফের হুকুম হলো, নিজের উপর থেকে ওয়াজিব সাকেত হওয়া এবং সওয়াব হাসিল করা।
সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ এতেকাফের হুকুম হলো, এর মাধ্যমে মুওয়াক্কাদায়ে কেফায়া থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং সওয়াব হাসিল হয়।
নফল এতেকাফের হুকুম হলো, এর দ্বারা সওয়াব হাসিল হয়।
এতেকাফের শর্তাবলী
১. নিয়ত করা। নিয়ত ব্যতীত এতেকাফ করলে সর্বসম্মতিক্রমে এতেকাফ বৈধ হবে না।
২. পুরুষের জন্য এ রকম মসজিদ হতে হবে, যেখানে জামাআতের সঙ্গে সালাত আদায় করা হয়। তবে নফল এতেকাফ যে কোন মসজিদেই হতে পারে।
৩. মহিলাগণ নিজেদের ঘরের সালাত আদায়ের স্থানে এতেকাফ করবেন। পুরুষের জন্য জামাআতের মসজিদ যেরূপ, তাদের জন্যও এ স্থানটি তদ্রুপ। প্রয়োজন ব্যতীত এ স্থান থেকে বের হওয়া যাবে না।
৪. রোযা রাখা। তবে নফল এতেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত নয়।
৫. মুসলমান হওয়া। কাফের ব্যক্তি এবাদতের যোগ্যতা রাখে না।
৬. বোধসম্পন্ন হওয়া। প্রাপ্তবয়স্ক বা বালেগ হওয়া এতেকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়। এ জন্য বোধসম্পন্ন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকার এতেকাফও সহীহ হয়, যেমনিভাবে তাদের নামায ও রোযা সহীহ হয়।
৭. নারী-পুরুষ সকলের জানাবাত বা গোসল ফরয হয় এমন অপবিত্রতা থেকে এবং নারীদের হায়েয নেফাস থেকেপবিত্র হওয়া।
ওয়াজিব এতেকাফের নিয়ম
ওয়াজিব এতেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। সুতরাং রমযানে হোক, অথবা রমযান ছাড়া অন্য সময়ে, সর্ব অবস্থায় এই প্রকার এতেকাফে রোযা রাখা জরুরী। কেউ যদি একদিন এতেকাফ করার মানত করে, তবে তার উপর শুধু দিনের এতেকাফই ওয়াজিব হবে। সুতরাং সে সুবহে সাদেকের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর বের হবে। আর যদি সে এতেকাফের মানত করার সময় রাতসহ নিয়ত করে, তবে রাতও অন্তর্ভুক্ত হবে।
শরঈ ওযর ব্যতীত নির্দিষ্ট দিন এবং নির্দিষ্ট মাস থেকে মানতের এতেকাফ পিছানো বৈধ নয়। পিছানো হলে সংশিষ্ট ব্যক্তি গোনাহগার হবে। তবে শরঈ ওযর বা শারীরিক ওযর থাকলে পিছানো যাবে। কেউ যদি মানত করে যে, সে রাত্রিবেলায় এতেকাফ করবে, তাহলে তার মানত সহীহ হবে না; কারণ মানতের এতেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। অথচ রাত্রিবেলায় রোযা সহীহ হয় না। কেউ যদি একদিনের এতেকাফের মানত করে, তবে তার জন্য একদিনের এতেকাফই ওয়াজিব হবে; সুবহে সাদেকের আগ থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আর যদি কেউ একদিনের এতেকাফের মানত করে এবং দিন-রাত উভয়েরই নিয়ত করে তবে তার উপর একদিন একরাতের এতেকাফ ওয়াজিব হবে।
যদি কেউ এ রকম মানত করে যে, দুইদিন বা তিনদিন বা এর চেয়ে বেশি দিনের এতেকাফ করবে, তাহলে দিন-রাত উভয় সময়েই এতেকাফ করতে হবে। যদি কেউ এই মানত করে যে, দুই বা তিন অথবা এর চেয়ে বেশি সংখ্যক রাত্রির এতেকাফ করবে এবং এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য রাত্রিই হয়ে থাকে, তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। পক্ষান্তরে যদি রাত বলে তার উদ্দেশ্য রাতসহ দিন হয়ে থাকে, তবে দিন-রাত উভয়েরই এতেকাফ করতে হবে। আর যদি রাত বলে শুধু দিন উদ্দেশ্য হয়, তবে শুধু দিনেই এতেকাফ করতে হবে।
সুন্নত এতেকাফের নিয়ম
রমযানুল মুবারকের বিশ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে শেষ দশদিনের এতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। শরঈভাবে ঈদের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে এতেকাফ খতম হবে।
اِذَا اَرَادَ اَنْ يَّعْتَكِفَ فَلتَغِبْ لَهُ الشَّمْسُ مِنَ اللَّيْلَةِ الَّتى يُريدُ اَن يَعتكِفَ فِيْها
مِنَ الْغَدِ وَقَدْ قَعَدَ فِى مُعتَكَفِه.
‘এতেকাফে বসার ইচ্ছা পোষণকারী ব্যক্তির যে ভোর থেকে এতেকাফ শুরু হবে, তার আগের দিনের সূর্য যেন এ অবস্থায় অস্তমিত হয় যে, তার এতেকাফস্থলে বা মসজিদে প্রবেশ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ রমযানের বিশ তারিখের সূর্য ডুবার আগেই সে মসজিদে চলে আসবে।’ (সুনানুত তিরমিযী, আবওয়াবুস সওম, হাদীস ৭৮২)
মোল্লা আলী ক্বারী লিখেছেন, চার ইমামের সকলেরই এ মত যে, একমাস এতেকাফ করার ইচ্ছা থাকুক বা দশদিন, উভয় অবস্থায়ই এতেকাফকারী ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশই রমযান সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে গোটা একুশতম রাত মসজিদে এবাদত বন্দেগীতে কাটাতেন। ফজরের সালাত আদায় করে তাঁর আরাম করার জন্য নির্মিত চাটাই দিয়ে ঘেরাও করা কুঠরিতে প্রবেশ করতেন।
এ জন্যই হাদীস শরীফে রয়েছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা সিদ্দীকা রা. বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَرَادَ اَنْ يَّعْتَكِفَ صَلَّى الْفَجرَ ثُمَّ
دَخَلَ فِى مُعتَكَفِه.
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতেকাফের ইচ্ছা পোষণ করলে ফজরের সালাত আদায় করে তাঁর এতেকাফের জায়গায় প্রবেশ করতেন।’ (সুনানুত তিরমিযী, হাদীস ৭৮২)
মহিলাগণ নিজেদের এতেকাফের স্থানে এবং পুরুষগণ মসজিদে প্রবেশ করার সময় অথবা প্রবেশ করে মনে মনে এরূপ দুআ করবে যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমযানুল মুবারকের শেষ দশদিনের সুন্নত এতেকাফ শুরু করছি। সুন্নত এতেকাফের নিয়ত বিশ রমযান সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই করতে হবে। মসজিদে প্রবেশ করার সময় করা হোক, বা প্রবেশ করার পর। কিন্তু যদি সূর্যাস্তের কিছু¶ণ পর নিয়ত করা হয়, তবে এ এতেকাফ সুন্নত থাকবে না, বরং নফল হয়ে যাবে। কেননা নিয়ত করার পূর্বে শেষ দশদিনের কিছু অংশ এরূপ অতিবাহিত হয়ে গেছে, যেখানে এতেকাফের নিয়ত করা হয়নি। সুতরাং পূর্ণ দশদিনের এতেকাফ হয়নি।
নফল এতেকাফের নিয়ম
নফল এতেকাফ বলা হয়, যে এতেকাফের মধ্যে দিন বা সময়ের কোন নির্ধারিত সীমা থাকে না। অর্থাৎ ওয়াজিব ও সুন্নত এতেকাফ ব্যতীত যে পরিমাণ সময়ের জন্যই হোক, তা নফল এতেকাফ। নফল এতেকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশের সময় এরূপ নিয়ত করবে: হে আল্লাহ! যে পরিমাণ সময় আমি এ মসজিদে অবস্থান করব, তার এতেকাফের নিয়ত করছি। শুধু মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে, মুখে বলা জরুরী নয়।
রমযানের শেষ দশদিনে যদি দশদিনের কম সময়ের নিয়ত করা হয় তবে তা নফল এতেকাফ হবে। নফল এতেকাফ বছরের যে কোন সময়েই করা যায়। তবে রমযান শরীফে করলে সওয়াব বেশি হয়। যদি কোন ব্যক্তি সালাতের জন্য মসজিদে প্রবেশ করে এতেকাফেরও নিয়ত করে, তবে সে এতেকাফেরও সওয়াব পাবে। ফিকহী কিতাবে একটি মূলনীতি রয়েছে যে, নফল এবাদত শুরু করা হলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এতেকাফের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম এ কথা বলেছেন যে, নফল এতেকাফ শুর“ করার পর যতটুকু সময় অতিবাহিত হয়েছে, তা-ই ওয়াজিব হয়। আর যা এখনও বাকি রয়েছে, তার মধ্যে এতেকাফ শুর“ই করা হয়নি। সুতরাং তা ওয়াজিবও হয়নি এবং তার ক্বাযাও করতে হবে না।
মহিলাদের এতেকাফ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমযানে এতেকাফ করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় উম্মাহাতুল মুমিনীন তাঁর সঙ্গে মসজিদে এতেকাফ করেছেন। যেমন, একখানি হাদীসে রয়েছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা সিদ্দীকা রা. বলেন,
اِعْتَكَفَتْ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ اِمْرَأَةٌ مُسْتَحَاضَةٌ مِنْ
اَزْوَاجِهٖ (বুখারী শরীফ, হাদীস ২০৩৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পরও মুসলিম জাতির মায়েরা এতেকাফ করেছেন।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা সিদ্দীকা রা. আরও বলেন,
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْاَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ
حَتّٰى تَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالٰى، ثُمَّ اعْتَكَفَ اَزْوَاجُهٗ مِنْ بَعْدِهٖ.
‘নবী আলাইস সালাতু ওয়াস সালাম প্রত্যেক রমযানের শেষ দশদিন এতেকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণও এতেকাফ করেছেন।’ (বুখারী শরীফ, হাদীস ২০২৬)
অতএব পুরুষের ন্যায় নারীরাও এতেকাফে বসতে পারেন। এতেকাফ যেমনিভাবে পুরুষের জন্য অনেক সওয়াব ও ফযীলতের বিষয়, তেমনি নারীদের জন্যও প্রভূত সওয়াব ও মর্যাদার বিষয়। মহিলাগণ তিন প্রকার এতেকাফই পালন করতে পারেন। এতেকাফে তাদের জন্য পৃথক কিছু বিধান রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর মহিলারা কোথায় এতেকাফ করেছেন তার বিবরণ হাদীস শরীফে নেই। মোল্লা আলী ক্বারী রহ. হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, উম্মাহাতুল মুমিনীন পরবর্তীতে নিজেদের ঘরেএতেকাফ করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় নারীরা মসজিদে নববীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জামাআতবদ্ধ হয়ে সালাত আদায় করতেন। তেমনিভাবে উম্মাহাতুল মুমিনীন এতেকাফও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মসজিদে করেছেন। কিন্তু হাদীসে রয়েছে, মেয়েদের জন্য মসজিদের তুলনায় ঘরে নামায পড়া উত্তম। যেমন, হযরত আবু হোমায়েদ আস সায়েদী রা.-এর স্ত্রী হযরত উম্মু হোমায়েদ রা.- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মসজিদে সালাত আদায়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেছেন, মসজিদের তুলনায় ঘরে নামায পড়াই তোমার জন্য উত্তম।
এ মর্মে আরও একাধিক হাদীস রয়েছে। আল্লামা ইবনে রুশদ মালিকী রহ. লিখেছেন, মেয়েদের এতেকাফের মাসআলায় কেয়াস হাদীসের বিপরীত। কারণ হাদীসে রয়েছে, হযরত আয়শা রা., হযরত হাফসা রা. ও হযরত যয়নব রা. প্রমুখ উম্মাহাতুল মুমিনীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মসজিদে এতেকাফ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন তাঁবুও স্থাপন করেন। এ হাদীস দ্বারা অনুধাবন করা যায়, মেয়েদের জন্য মসজিদে এতেকাফ করা বৈধ।
অপর দিকে, অন্য হাদীস শরীফে রয়েছে, নারীদের মসজিদের তুলনায় ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। এর উপর কেয়াস করে বলা যায়, তাদের জন্য এতেকাফও ঘরেই উত্তম।
ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. থেকে বর্ণনা রয়েছে যে, মেয়েরা ইচ্ছা করলে ঘরের সালাতের জায়গায় এতেকাফ করতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে জামাআতের মসজিদেও এতেকাফ করতে পারে। তবে তাদের জন্য ঘরে এতেকাফ করাই উত্তম।
মুনিয়াতুল মুসলীতে রয়েছে, মেয়েদের জন্য মসজিদে এতেকাফ করা বৈধ। ফাকুদ্দীন ইবনে কুদামা রহ. বলেন, মেয়েরা যে কোন মসজিদে এতেকাফ করতে পারে। সেই মসজিদে জামাআত হওয়া শর্ত নয়, কারণ তাদের উপর জামাআত জরুরী নয়।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা আবদুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ মাজমাউল আনহুরে লিখেছেন, নারীদের জন্য জামাআতের মসজিদে এতেকাফ করা বৈধ। তবে তাদের ঘরে এতেকাফ করাই উত্তম। ইমাম যায়লায়ীও অনুরূপ কথাই লিখেছেন। ইমাম কাসানী রহ. লিখেছেন, মহিলাদের জন্য মসজিদে এতেকাফ করা খেলাফে আফজল বা উত্তম নয়।
বর্তমানে পরিবেশ পরিস্থিতির রদবদল হয়েছে। মুসলিম নারীপুরুষের ভাব চরিত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিকট অতীতের ফকীহ আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহ. (ওফাত ১২৫২ হি.) লিখেছেন, মহিলাদের মসজিদে এতেকাফ করা মাকরূহে তানযীহী।
এখানে স্মর্তব্য যে, মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী সাধারণ মসজিদের অনুরূপ হুকুমের আওতায় আসবে না। বর্তমান বিশ্বের অন্যতমশ্রেষ্ঠ মুফতী ভারতের দার“ল উলূম দেওবন্দের বর্তমান শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী লিখেছেন, মসজিদে হারামে যাওয়া হয় বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ও বরকতময় জায়গা থেকে বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। মসজিদে নববীতে যাওয়া হয় রওযা শরীফ যিয়ারত ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। এ জন্য এ দুই মসজিদে নারীরা যেতে পারেন, বরং যাওয়া চাই। আমাদের পরিবারভুক্ত নারীদেরকেও হজ্জ ও ওমরার সফরে এ দুই মসজিদেই নামায আদায়ের জন্য উৎসাহিত করি। কারণ তাদের যিন্দেগীতে এরূপ সুযোগ বারবার আসবে না। আর সেখানে কোন অনৈতিক ঘটনা দুর্ঘটনারও আশঙ্কা নেই। সুতরাং হারামাইন শরীফাইনের হুকুম অন্যান্য মসজিদ থেকে ব্যতিক্রম।
অতএব যে কোন মহিলা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে সকল প্রকার এতেকাফ করতে পারবেন। বর্তমান সময়েও তা মাকরূহে তানযীহী হবে না। وَمَا تَوْفِيْقِى اِلَّا بِاللهِ
মহিলাগণ ঘরের নামায আদায়ের জায়গায় এতেকাফে বসার পর সে জায়গাটি তাদের জন্য মসজিদের ন্যায়। পুরুষগণ এতেকাফে বসার পর স্বাভাবিকভাবে মসজিদ থেকে বের হতে পারেন না। তেমনি নারীরাও এতেকাফের জায়গা থেকে ঘরের অন্য অংশে যেতে পারবেন না। পুরুষগণ যে যে প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হতে পারেন, নারীরাও সে সব প্রয়োজনে এতেকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন।
ঘরে যদি নামায আদায়ের জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা না থাকে তবে এতেকাফে বসার সময় নির্ধারিত করে সেখানে এতেকাফে বসবে। কোন নারী যদি ঘরের নামাযের জায়গা ছাড়া অন্য জায়গায় এতেকাফে বসে তবে তার এতেকাফ সহীহ হবে না। কেননা যে জায়গায় সে নামায আদায় করে না, সে জায়গা মসজিদের হুকুমে নয়। তেমনিভাবে যদি নামাযের জায়গা নির্ধারিত না থাকে, এতেকাফের পূর্বেও নির্ধারিত করেনি, তবে তার এতেকাফও সহীহ হবে না।
যে নারীর স্বামী আছে, তার এতেকাফে বসার পূর্বে স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রীকে এতেকাফে বসার অনুমতি দেওয়ার পর স্বামী আর স্ত্রীকে বাধা দিতে পারবে না। বাধা দিলেও এ বাধা দেওয়া সহীহ হবে না। কোন নারী যদি এতেকাফের মানত করে, তবে স্বামী তাকে মানত পুরা করতে বাধা দিতে পারবে। স্বামী যদি স্ত্রীকে এক মাস এতেকাফের অনুমতি দেয়, এ ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি লাগাতার একমাস এতেকাফ করতে চায় তবে তাকে বাধা দিতে পারবে। স্বামী তাকে পৃথক পৃথকভাবে এক মাস এতেকাফ করার কথা বলতে পারবে। আর যদি স্ত্রীকে সুনির্দিষ্ট এক মাসের এতেকাফের অনুমতি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে লাগাতার এক মাস আদায় করতে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না।
কোন মহিলা মানত করল, এক মাস এতেকাফ করবে। এতেকাফে বসার পর যদি তার মাসিক স্রাব শুরু হয়, তবে যে কয়দিন স্রাব থাকে, সে কয়দিনের এতেকাফ সে ক্বাযা করবে। ক্বাযার এতেকাফ মাসের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে। মাঝখানে বিরতি দিলে আবার নতুন করে শুরু করবে। কেননা এ পরিমাণ লাগাতার রাখা তার জন্য সম্ভব। যদি কেউ দশদিন এতেকাফ করার মানত করে, তবে মাঝখানে স্রাব শুরু হলে তাকে আবার নতুন করে এতেকাফ শুরু করতে হবে। নারীদের এতেকাফে বসতে হলে মাসিক স্রাব ও সন্তান প্রসব-পরবর্তী স্রাব থেকে মুক্ত হতে হবে। কোন নারী এতেকাফে বসার পর যদি তার মাসিক স্রাব চলে আসে, তবে তার এতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ মাসিক স্রাব এতেকাফের উপযুক্ততার পরিপন্থী অবস্থা। মাসিক স্রাব অবস্থায় রোযাও রাখা যায় না।
কোন নারী স্বামীর অনুমতিতে এতেকাফ শুরু করার পর স্বামী আর স্ত্রীর এতেকাফের স্থানে আসবে না।
এতেকাফের আদব
১. ভাল কথা বলা। অর্থহীন কথা না বলা।
২. উত্তম মসজিদ নির্বাচন করা। যেমন মসজিদে হারাম, জামে মসজিদ ইত্যাদি।
৩. বেশি বেশি কালামে পাক এবং হাদীস শরীফ পাঠ করা।
৪. যিক্ধর করা।
৫. হাদীস শরীফ শি¶া করা।
৬. হাদীস শরীফের দরস দেওয়া।
৭. সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধ্যয়ন করা।
৮. আম্বিয়া এবং আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনী পাঠ করা।
৯. শরঈ আহকামের কিতাবাদি পাঠ করা।
১০. যে সব কথায় গোনাহও নেই, সওয়াবও নেই, অর্থাৎ মোবাহ কথা প্রয়োজন ছাড়া না বলা। ৭৪
যে যে কারণে এতেকাফ ভঙ্গ হয়
এতেকাফকারী ব্যক্তি শরঈ প্রয়োজন এবং মানবীয় প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে মসজিদের বাইরে গেলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে। শরঈ প্রয়োজন যেমন, জুমআর সালাতের জন্য গমন। মানবীয় প্রয়োজন যেমন, মল-মূত্র ত্যাগ করার জন্য গমন। তেমনিভাবে মহিলাগণ যদি এতেকাফের স্থান থেকে সংশিষ্ট ঘরেও প্রবেশ করে, তবু ওয়াজিব এতেকাফ হলে তা ভঙ্গ হয়ে যাবে। বের হওয়া ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলে হোক।
গ্রহণযোগ্য ওযর ব্যতীত অল্পসময় মসজিদের বাইরে থাকলেও এতেকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। ওযরের কারণে বের হলে গোনাহ হবে না। ওযর ব্যতীত বের হলে গোনাহ হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
وَلَا تُبْطِلُوْا اَعْمَالَكُمْ
‘তোমাদের কর্ম বিনষ্ট করো না।’ (সূরা মুহাম্মদ: ৩৩)
এতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া সম্পর্কে ইসলামী আইনশাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ হেদায়ায় রয়েছে, কেউ যদি ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বের হয়, তবে ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মতে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেছেন, এতেকাফ ভঙ্গ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না অর্ধেক দিনের বেশি সময় মসজিদের বাইরে থাকে।
এ মাসআলায় ইমাম আযম আবু হানীফার মত অনুসারে ফতওয়া দেওয়া হয়। যদি কেউ শরঈ বা মানবীয় প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে গিয়ে প্রয়োজন পূরণ করার পর অল্প সময়ও মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, তবে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদি মল-মূত্র ত্যাগ করার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর কোন পাওনাদার কিছুক্ষণ এতেকাফকারীকে আটকিয়ে রাখে, তাহলে এর দ্বারা ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মত অনুসারে এ ব্যক্তির এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে; কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর মত অনুসারে তার এতেকাফ ভঙ্গ হবে না। ইমাম সারাখসী রহ. বলেন, এ ক্ষেত্রে ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর বক্তব্যই মুসলমানের জন্য পালন করা সহজসাধ্য।
এতেকাফকারী ব্যক্তি রোগীর শুশ্রুষা করার জন্য মসজিদ থেকে বের হবে না। তবে কেউ যদি এতেকাফের মানত করার সময় রোগীর শুশ্রুষা, জানাযার সালাত এবং ইলমের মজলিসে নিয়মিত উপস্থিত হওয়ার শর্ত করে নেয়, তবে সে এতেকাফকারীর জন্য এ কাজগুলো জায়েয আছে। কারোর যদি চিন্তা করার দ্বারা অথবা দৃষ্টি দেওয়ার দ্বারা বীর্যপাত হয়ে যায় অথবা স্বপ্নদোষ হয়, তবে এর দ্বারা এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।
যদি কেউ কয়েকদিন যাবৎ বেহুঁশ অথবা পাগল অবস্থায় কাটায়, তবে এর দ্বারা এতেকাফ ফাসেদ হয়ে যাবে। স্বামী স্ত্রীর মিলন দ্বারা এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। চুম্বন ও স্পর্শ করার দ্বারা যদি বীর্যপাত হয়, তবে এতেকাফ ছুটে যাবে, আর যদি বীর্যপাত না হয় তবে এতেকাফ ছুটবে না।
এতেকাফকারীর জন্য জায়েয কাজসমূহ
১. পানাহার করা।
২. নিদ্রা যাওয়া।
৩. মসজিদের মিনারায় আরোহণ করা। ৮৩
৪. ধোয়ার উদ্দেশ্যে এতেকাফকারীর মাথা মসজিদ থেকে বাইরের দিকে নিয়ে যাওয়া।
৫. মসজিদে ওযু বা গোসল করার দ্বারা যদি মসজিদ অপবিত্র বা ময়লাযুক্ত হওয়ার ভয় না থাকে, তবে মসজিদে ওযু বা গোসল করা।
৬. এতেকাফকারীর নিজের বা পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু ক্রয়-বিক্রয় করা। তবে শর্ত হলো, ক্রয়-বিক্রয়ের দ্রব্য মসজিদে উপস্থিত করা যাবে না। এতেকাফকারীর জন্য জায়েয আছে, বিবাহ করা, কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং মাথায় তৈল লাগানো।
এতেকাফকারীর জন্য যা অবৈধ
১. মসজিদে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় করা।
২. ক্রয়-বিক্রয়ের বস্তু মসজিদে উপস্থিত করে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদন করা।
৩. এতেকাফ অবস্থায় পুণ্যের কাজ মনে করে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী। কারণ হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হোরায়রা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাগাতার রোযা রাখা এবং চুপ থাকার রোযা থেকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু গোনাহ থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যে হলে তা মাকরূহ হবে না। কারণ হাদীস শরীফে এসেছে, যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়।
এতেকাফকারীর মজুরি নিয়ে কোন কিছু শিক্ষা দেওয়া, লিখে দেওয়া এবং কাপড় সেলাই করে দেওয়া মাকরূহ। এ কথা স্মর্তব্য যে, যে সব কাজ মসজিদে মাকরূহ, তা মসজিদের ছাদেও মাকরূহ।
এতেকাফ শুরু করার মাধ্যমে মসজিদ নির্ধারিত হয়। অতএব এতেকাফকারীর জন্য বৈধ নয় যে, কোন মসজিদে এতেকাফ শুরু করার পর কোন রকম ওযর ছাড়া সে মসজিদ পরিবর্তন করা। এতেকাফকারীর জন্য জুমআয় অংশগ্রহণ এতেকাফকারীর জুমআর সালাতে অংশগ্রহণ সম্পর্কে হেদায়ায় রয়েছে, এতেকাফকারী কখনও মসজিদ থেকে বের হবে না; তবে মানবীয় প্রয়োজন এবং জুমআর সালাত ব্যতীত। মানবীয় প্রয়োজনে বের হতে পারবে, কারণ হযরত আয়শা সিদ্দীকা রা. বর্ণনা করেছেন, নবী আলাইহিস সালাম এতেকাফ থেকে কখনও বের হতেন না, মানবীয় প্রয়োজন ব্যতীত। আর জুমআর সালাতের জন্য বের হতে পারবে এই জন্য যে, জুমআর সালাত প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে মসজিদে শুধু জামাআত হয়, সে মসজিদে এতেকাফও সহীহ হয়, সুতরাং জুমআর প্রয়োজন জুমআর মসজিদের দিকে যাওয়া বৈধ বানিয়ে দিয়েছে।
হেদায়ার উল্লেখিত বক্তব্যের টীকায় মাওলানা জালালুদ্দীন আল-খারেযেমী ‘কেফায়া’য় লিখেছেন, যদি কেউ এ প্রশ্ন করে যে, জুমআর সালাত অনেক ওযরের কারণেই সাকেত হয়, সুতরাং এতেকাফের ওযরেও জুমআর সালাত সাকেত হওয়া চাই। এর উত্তরে বলা যায়, এতেকাফ রক্ষণ করার উদ্দেশ্যে জুমআর সালাত বর্জন করা বৈধ হবে না। কারণ, (ওয়াজিব এতেকাফ হলেও) এতেকাফের ওয়াজিব হওয়া জুমআর সালাতের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের; কেননা এতেকাফ ওয়াজিব হয়েছে মানতের কারণে, আর জুমআর সালাত ওয়াজিব হয়েছে, আল্লাহ তাআলা ওয়াজিব করার কারণে। কোন বান্দার জন্য জায়েয নেই যে, সে আল্লাহর ওয়াজিবকে নিজের মানতের ওয়াজিবের মাধ্যমে বর্জন করবে।
বাদায়েউস সানায়ে‘ গ্রন্থে রয়েছে, ‘এমনিভাবে জুমআর সালাত আদায় করার জন্য বের হওয়াও প্রয়োজনীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, কেননা জুমআর সালাত ফরযে আইন এবং এ সালাত সকল মসজিদে আদায় করা বৈধ নয়। সুতরাং জুমআর সালাত পড়ার জন্য বের হওয়া অত্যাবশ্যক, যেমন অত্যাবশ্যক অন্যান্য মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়া। অতএব জুমআর জন্য বের হওয়ার দ্বারা এতেকাফ বাতিল হবে না। আরও একটি দলীল এই যে, এতেকাফ আদায় করা জুমআর সালাতের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের, সুতরাং এতেকাফের মাধ্যমে জুমআর সালাত বর্জন করার অনুমতি দেওয়া
যায় না।’
জুমআর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সূর্য ঢলার পর এতেকাফের স্থান থেকে বের হবে। কারণ সূর্য ঢলার পরই সালাতের দিকে আহ্বান হয়ে থাকে। যে আহ্বানে সাড়া দেওয়া এই এতেকাফকারীর জন্য জরুরী। যদি কারো অবস্থান জুমআর মসজিদ থেকে দূরে হয় তবে সে এমন সময় বের হবে, যেন মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারে ও খুতবা শুনতে পারে এবং খুতবার পূর্বে চার রাকআত সুন্নত আদায় করতে পারে।
জুমআর সালাতের পূর্বের সুন্নতের ব্যাপারে কোন বর্ণনায় আছে, ছয় রাকআত। দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ এবং চার রাকআত সুন্নত। জুমআর সালাতের পর সুন্নত পড়বে চার রাকআত বা ছয় রাকআত (ইমাম আযমের মতে চার রাকআত এবং সাহেবাইনের মতে ছয় রাকআত)। এতেকাফকারী ব্যক্তি জুমআর পূর্বের ও পরের সুন্নতও জুমআর মসজিদে পড়তে পারবে। কারণ উভয় সুন্নতই জুমআর মূল সালাতের আনুসাঙ্গিক বিষয়। আর জুমআর সালাত পড়তে যাওয়া বৈধ হওয়ার কারণে তার আনুসাঙ্গিক বিষয়সমূহও বৈধ। সুন্নতসহ জুমআর সালাত আদায় করার পরও কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে জুমআর মসজিদে অবস্থান করে, তবে তার এতেকাফ মাকরূহ হবে। এতেকাফ ভঙ্গ না হওয়ার কারণ হলো, জুমআর মসজিদ প্রথম থেকেই এতেকাফের জন্য উপযুক্ত স্থান; সুতরাং শেষের ভাগও এখানে আদায় করা যাবে।
আর মাকরূহ হবে এই জন্য যে, সংশিষ্ট ব্যক্তি এক মসজিদে এতেকাফ শুরু করার মাধ্যমে এ মসজিদকেই সে এতেকাফের জন্য নির্ধারিত করে নিয়েছে। অতএব সে ব্যক্তির পাশের এ মসজিদে এতেকাফ শেষ করতে সক্ষম হওয়া সত্বেও (বিনা প্রয়োজনে) অন্যত্র এতেকাফপরিবর্তন করা মাকরূহ বলে গণ্য হবে।
The post এতেকাফের আহকাম ও করণীয় appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%8f%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%93-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a7%80%e0%a7%9f/
No comments:
Post a Comment