Wednesday, December 14, 2022

কেমন চলছে ছারছিনা দ্বীনিয়াত মাদরাসা?

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ছারছিনা দ্বীনিয়াত মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে। দীর্ঘ এই পথচলায় বেশ ভালোই এগিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু, তা লক্ষ্যমাত্রায় পূর্ণ হচ্ছে বলেও জানান কর্তৃপক্ষ। এই মাদরাসার সিলেবাসে দেশের আনাচে-কানাচে তৈরী হয়েছে প্রায় দেড় হাজার মাদরাসা। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ছারছীনা গ্রামে অবস্থিত ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা। দেশজুড়ে বেশ বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি। ১৯১৫ সালে বিখ্যাত পীর নেছারউদ্দীন আহমদ এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত কামিল মাদ্রাসা। ১৯২৭ সালে মাদ্রাসাটি সরকারি অনুমোদন লাভ করে। ১৯২২ সালে আলিম, ১৯৩১ সালে ফাজিল ও ১৯৪২ সালে কামিল শ্রেণির জন্য সরকারি অনুমোদন পায়। ১৯৫২ সালে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্বভার ছারছিনার পীর মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ গ্রহণ করলে তার চেষ্টায় ১৯৬১ সালে দারুল হাদিস ভবন, ১৯৬৬ সালে লাইব্রেরি নির্মিত হয়।

তবে দিন যত গিয়েছে, আলিয়া মাদরাসার মান তত নিচে নেমেছে। আরবি পাঠের জায়গা দখল করেছে বাংলা বই। রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে সিলেবাসে তৈরী হয়েছে সীমাবদ্ধতা। প্রবেশ করেছে বাইরের অনেক বই। ফলে যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম তৈরী কঠিন হয়ে যাচ্ছিল এই সিলেবাসের পক্ষে। বিষয়টি চোখে পড়ে ছারছিনার পীর মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহের। তিনি ভাবেন আলিয়া মাদরাসার বিকল্প কিছু, যেখানে যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম তৈরী হবে। অবশেষে ১৯৮৫ সালে তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বীনিয়াত মাদরাসা। এর সিলেবাসে রাখা হয় আলিয়া মাদরাসার পুরাতন সিলেবাস, যে সিলেবাস কওমি মাদরাসার দরসে নেজামির সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। মাদরাসাটিকে দূরে রাখা হয় সরকারি পরীক্ষা এবং সিলেবাস থেকে।

মাদরাসার সিলেবাস এবং পরীক্ষা

দ্বীনিয়াত মাদরাসার সিলেবাস দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। চেষ্টা সফলও হয়। ২০০৫ সালে এই সিলেবাসে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরী হয় দ্বীনিয়াত বোর্ড।

ছারছিনা কামিল মাদরসাার শিক্ষক মাওলানা আবু নাঈম নাসরুল্লাহ ফাতেহকে বলেন, ‘দ্বীনিয়াত বোর্ডে তালিকাভুক্ত মাদরাসা রয়েছে প্রায় ৮০০টি। তালিকা ছাড়াও অনেক মাদরাসা রয়েছে, যারা আমাদের সিলেবাসে পড়াচ্ছেন। সবগুলো মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার মাদরাসা রয়েছে। মাদরাসাগুলোতে বোর্ড পরীক্ষা হয় কেবল দাওরাতে। এছাড়া ইফতা, তাফসির এবং হাদিস বিভাগও রয়েছে। সেগুলোতে বোর্ড পরীক্ষা হয় না।’ তবে দ্বীনিয়াত মাদরাসার সিলেবাসে কতজন ছাত্র পড়ছে, তার কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

তবে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক কিংবা হাইয়াতুল উলয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বোর্ডটির। কওমি বোর্ড দুটির সঙ্গে সমন্বয়ের আপাত ইচ্ছেও নেই কর্তৃপক্ষের।

এতদিন সরকারি পরীক্ষায় অংশ না নিলেও ২০২৩ সাল থেকে সরকারী পরীক্ষায় অংশ নেবে দ্বীনিয়াত মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। মাওলানা আবু নাঈম জানান, ‘আমরা আমাদের সিলেবাসে সরকারি পরীক্ষার বিষয়টি যুক্ত করেছি। সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। দ্বীনিয়াত মাদরাসা সরকারি হবে না। বরং এ মাদরাসার ছাত্ররা তাদের সিলেবাসের পাশাপাশি আলিয়া মাদরাসায়ও পরীক্ষা দিবে। এমনভাবে সাজানো হচ্ছে, যেন একদিকে দাওরা শেষ হয়, অপরদিকে শেষ হয় আলেম। সে যেন দাওরা পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।’

প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হচ্ছে?

যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু, তা লক্ষ্যমাত্রায় পূর্ণ হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা। মাওলানা আবু নাঈম জানান, ‘আলহামদুলিল্লাহ, কিতাবের যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম তৈরী হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলাতেই আমাদে কার্যক্রম রয়েছে। মাদরাসার সংখ্যা আরও বাড়বে।’

মাওলানা আবু নাঈম আরও জানান, ‘তালিকাভুক্ত মাদরাসাগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় বোর্ড থেকে। এই মাদরাসা থেকে যারা ফারেগ হয়, তাদের নিয়োগ হয় দ্বীনিয়াত বোর্ডের কোনো মাদরাসাতেই। বোর্ডের তালিকাভুক্ত মাদরাসাগুলোয় শিক্ষকদের বেতন সর্বনিম্ন ১২ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ২৮ হাজার টাকা।’

The post কেমন চলছে ছারছিনা দ্বীনিয়াত মাদরাসা? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a6%9a%e0%a6%b2%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%9b%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a6%bf/

No comments:

Post a Comment