Monday, December 26, 2022

সালতামাামি: ফিলিস্তিনিদের শাহাদাত ও প্রতিরোধের বছর ২০২২

মুনশী নাঈম:

গাজার জামিল নাজম (৪ বছর) এবং আলা আবদুল্লাহ কাদ্দুম (৫ বছর), পশ্চিম তীরের রায়ান ইয়াসির সালমান (৭ বছর) এবং মাহমুদ সামুদি (১২ বছর)। এই শিশুদের ছাড়াই ফিলিস্তিন নতুন একটি বছরে প্রবেশ করবে। শুধু এই চারজনই নয়, এই তালিকায় থাকবে ফিলিস্তিনে ইহুদি দখলদারিত্বের ছুরি এবং বন্দুকের আঘাতে প্রাণ হারানো আরও অনেক শিশু। ইজরাইলি আর্মি রেডিওর ভাষ্যমতে, ২০০৫ সালের পর ইহুদি দখলদারদের হাতে সবচে বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে এ বছর।

ফিলিস্তিন, ইজরাইল এবং জাতিসংঘের সূত্র থেকে ২০২২ সালের একটি পরিসংখ্যান তুরে ধরা হলো।

শহীদ, আহত ও বন্দী

২০২২ সালে ফিলিস্তিনে ২৩০ জন শহীদ হয়। তারমধ্যে পশ্চিম তীরে ১৭১ জন। গাজায় ৫৩ জন। এদের বেশিরভাগই আগস্টে ইসরায়েলি আগ্রাসনে শহীদ হয়। ৬ জন রয়েছে অন্যান্য। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনে নিহতের রেকর্ড রাখতে শুরু করে। রেকর্ড শুরু করার পর সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে ২০২২ সালে।

এ বছর ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে বা ফিলিস্তিনি এলাকায় তাদের অনুপ্রবেশের সময় প্রতিরোধে ৯৩৩৫ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। ইজরাইল এ বছর গ্রেফতার করেছে ৬৫০০ ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে প্রায় ৪৭০০ জন এখনও ইসরায়েলি কারাগারে রয়েছে।

গুঁড়িয়ে দেয়া, বসতি আক্রমণ, ক্ষয়ক্ষতি

জেরুজালেমের পূর্বাঞ্চলসহ পশ্চিম তীরে দখলদাররা ৮৩৩টি ফিলিস্তিনি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দখলদাররা আক্রমণ করেছে ৭৯৩টি। এরমধ্যে ৫৮২টি আক্রমণেই ফিলিস্তিনি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। ২১১টি আক্রমণে ফিলিস্তিনিরা আহত হয়েছে। দখলদাররা ১৩১৩০টি জলপাই গাছ ধ্বংস বা উপড়ে ফেলেছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ

স্থানীয় ফ্রিডম নিউজ সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৭২০০ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকর্ম সংগঠিত হয়েছে। এরমধ্যে ৪১৩ টি গুলিবর্ষণের ঘটনা রয়েছে। বিশেষ করে রিমোট বোমা হামলাও করেছে তারা। মার্চের শেষে এবং এপ্রিলের শুরুতে ডিজেনগফ স্ট্রিট এবং বনেই ব্র্যাক অপারেশনের মতো ইসরায়েলিদের মধ্যে ঢুকে ফিলিস্তিনি গেরিলাদের দ্বারা পরিচালিত আক্রমণও রয়েছে। ।

ইসরায়েলি নিহত ও আহত

পশ্চিম তীরে এবং গ্রিন লাইনের ভিতরে কমান্ডো অভিযান এবং সশস্ত্র হামলা সহ ৩১ জন ইসরায়েলি নিহত এবং প্রায় ৫০০ জন আহত হয়েছে। সংখ্যাটি ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ অভিযান ব্যর্থ করার জন্য নিরাপত্তা সংস্থা এবং ইসরায়েলি সেনা বাহিনীর পরিচালিত অভিযানের সংখা ৪৫০টি। এরমধ্যে বিস্ফোরক ডিভাইসের আক্রমণ রয়েছে ৩৬টি। ৩০০ এর অধিক রয়েছে গুলিবর্ষণের ঘটনা। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য অপহরণ প্রচেষ্টা এবং ছুরিকাঘাত।

বিশেষ প্রতিরোধের অপারেশন

২২ মার্চ: দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বের্শেবাতে সংঘর্ষ এবং ছুরিকাঘাতে ৪ ইসরায়েলি নিহত এবং ৩ জন আহত হয়।

২৭ মার্চ: হাদেরা শহরে উম আল-ফাহমের দুই সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হামলায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ১০ জন আহত হয়।

২৯ মার্চ: তেল আবিবের কাছে বনেই ব্রাক এলাকায় জেনিনের একজন ফিলিস্তিনির চালানো হামলায় ৫ ইসরায়েলি নিহত এবং ২ জন আহত হয়।

৭ এপ্রিল: তেল আবিবের ডিজেনগফ স্ট্রিটে জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে একজন কমান্ডোর সশস্ত্র হামলায় ৩ ইসরায়েলি নিহত এবং ১০ জনেরও বেশি আহত হয়।

৫মে: অভ্যন্তরীণ অংশে লোদ শহরের কাছে এলাদ এলাকায় জেনিনের দুই ফিলিস্তিনির হামলায় ৩ ইসরায়েলি নিহত এবং ৪ জন আহত হয়।

১৪ সেপ্টেম্বর: আল-জালামা চেকপয়েন্টে সশস্ত্র সংঘর্ষে একজন ইসরায়েলি অফিসার নিহত হয় এবং জেনিনের দুই প্রতিরোধ যোদ্ধা নিহত হয়।

৯ অক্টোবর: জেরুজালেমের পূর্বে শুয়াফাত চেকপয়েন্টে উদয় আল-তামিমির গুলিতে একজন ইসরায়েলি মহিলা সৈন্য নিহত এবং ৫ সৈন্য আহত হয়।

১১ অক্টোবর: নাবলুসের উত্তর-পশ্চিমে শাভেহ শোমরন বসতির কাছে এক ফিলিস্তিনির গুলিতে একজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়।

২৯ অক্টোবর: কিরয়াত আরবা বসতিতে হেবরনের একজন কমান্ডোর সশস্ত্র অভিযানে একজন বসতি স্থাপনকারী নিহত এবং ৩ জন আহত হয়।

১৫ নভেম্বর: উত্তর পশ্চিম তীরে এরিয়েল সেটেলমেন্টের কাছে দ্বৈত অভিযানে ৩ জন বসতি স্থাপনকারী নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়।

২৩ নভেম্বর: জেরুজালেমে একটি দ্বৈত বোমা হামলায় একজন বসতি স্থাপনকারী নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। পরে আহতদের একজনের মৃত্যু ঘোষণা করা হয়।

আরব রিপোটার্স ফর ইভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (এআরআইজে) ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০২২ সালের শুরু থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত ৯৭০০টি ফিলিস্তিনি জমিতে ১৩ হাজার ইজরাইলিকে সেটেল করতে ১১৬ টি বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইজরাইল।

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১১ মে: দখলদাররা আল-জাজিরার সংবাদদাতা শেরিন আবু আকেলাহ এবং আহত সাংবাদিক আলী আল-সামুদিকে হত্যা করে। তারা তখন জেনিন ক্যাম্পের কভারিং করছিলেন। আল জাজিরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইজরাইলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

৫ আগস্ট: ইসরায়েলি দখলদারদের আক্রমণে গাজায় ১৬ জন শিশুসহ ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এ আক্রমণে আল-কুদস ব্রিগেডের বিশিষ্ট সামরিক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

উপসংহার

নতুন একটি বছর আসছে। তবে কিছু সমস্যা নিয়ে নতুন বছরে পদার্পণ করতে হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের। সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো।

আল- আকসা মসজিদ : যে চরমপন্থী ইসরায়েলি দল গত সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে পরবর্তী সরকারী জোটের অংশ হবে, তারা সারাদিন আল-আকসায় আরও অনুপ্রবেশের হুমকি দিচ্ছে। যখন-তখন ঢুকে পড়ছে। তার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।

গাজা স্ট্রিপ : হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে এবার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হুমকির কারণে এই পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন বন্দীদের মুক্ত করার নতুন উপায় সন্ধান করতে হবে।

দখলদারিত্ব: বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েলে ডানপন্থী সরকারের গঠিত জোটের মধ্যে ঐকমত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে বসতি স্থাপনকে বেগবান করার বিষয়টি রয়েছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

The post সালতামাামি: ফিলিস্তিনিদের শাহাদাত ও প্রতিরোধের বছর ২০২২ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%87/

No comments:

Post a Comment