Monday, December 5, 2022

কাগজের বাজারে আগুন: হুমকির মুখে ইসলামি প্রকাশনা শিল্প

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ক্রমাগত বেড়ে চলা কাগজের দাম নিয়ে চিন্তিত ইসলামি বই প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পুরাতন বইয়ের দাম না বাড়ালেও আপাতত কাগজের দাম না কমা পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে। প্রকাশকরা বলছেন, দেশের কাগজের বাজারে বিশ্ববাজারের মন্দার ঢেউ প্রভাব ফেলেছে। কাগজ তৈরির কাঁচামাল অধিক মূল্যে ও বর্ধিত পরিবহন ব্যয়ে দেশে আনায় কাগজ তৈরিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি যে মাত্রায় স্বাভাবিক ছিল, তার তুলনায় বাস্তবে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। এ বৃদ্ধি ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়েছে।

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়তি দামেও প্রতিদিনের চাহিদা মাফিক কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি কাগজ মিলগুলো এখন বন্ধ। বসুন্ধরা গ্রুপের কাগজই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়াও ফ্রেশ কোম্পানিসহ দুটি কাগজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তেমন একটা কাগজ দিতে পারছে না।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম টনপ্রতি ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ হাজার টাকা বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। প্রতি টন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ কাগজের দাম ২০ হাজার থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। ২০২১ সালে ৮০ গ্রাম অপসেট এক রিম কাগজের মূল্য ১৫০০ টাকা হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে তা ৩০০০ টাকা হয়েছে। ১০০ গ্রামের একই কাগজ ১৭৫০ থেকে ৪২০০ টাকা দাঁড়িয়েছে। ২০ বাই ৩০ ইঞ্চি নিউজপ্রিন্ট কাগজের রিম ৩৮০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা হয়েছে।

নতুন বই প্রকাশ বন্ধ

আপাতত কাগজের দাম না কমা পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চেতনা প্রকাশন। প্রতিষ্ঠানটির এমডি বুরহান আশরাফি ফাতেহকে বলেন, আগে ৭০ গ্রাম কাগজের যে দাম ছিল, এখন ৬১ গ্রাম কাগজ তারচেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়। বাজারের এই চড়া মূল্যে আপাতত আমরা নতুন বই আনব না। তবে পুরাতন বই শেষ হয়ে গেলে রিপ্রিন্ট করব। সম্প্রতি দুটি বই রিপ্রিন্ট করেছি। কিন্তু দাম বাড়াইনি। আমরা জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যদি জানুয়ারিতেও কাগজের দাম না কমে, তাহলে ভেবে নিব কাগজের দাম সহসাই আর কমবে না। তখন নতুন বই আনলে সেটা বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হবে।’

কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কোনও দুষ্টচক্রের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

নতুন বই প্রকাশ করতে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ইত্তেহাদ প্রকাশনীর কর্ণধার মাওলানা ইসহাক। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘নতুন বই না আনলেও হয় না। পুরাতন বইয়ের বিক্রি অনেকাংশে কমে গেছে। ফলে নতুন বই আনলে তার সঙ্গে পুরাতন বইও চলে। তাই নতুন বই আনতে হয়। কিন্তু চড়াদামের বাজারে চাইলেই নতুন বই আনা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমরা নতুন বই আনছি ছোট পরিসরে। আগে যে বই আমরা দুই হাজার ছাপাতাম, তা এখন পাঁচশ কপি ছাপাচ্ছি। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলতে হচ্ছে।’

দুররানি প্রকাশনের কর্ণধার মানজুর আশরাফি জানান, দুইটি বই এখন আমার রিপ্রিন্ট করা দরকার। প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু কাগজের বাজারের চড়া দামের কারণে তা এখন সম্ভব হচ্ছে না। যে কাগজ আগে দুই হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ৩৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এখন রিপ্রিন্ট করতে গেলে বইয়ের দাম বাড়ানো ছাড়া গতি নাই। সুতরাং ভাবছি কী করব।’

বইয়ের ক্রেতা কমে গেছে

বইয়ের ক্রেতা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ইসলামি প্রকাশকরা। তারা বলছেন, অন্য অনেক সময়ের তুলনায় বইয়ের কাটতিও অনেক কম।

এ প্রসঙ্গে বুরহান আশরাফি বলেন, চলতি সপ্তাহে বইয়ের কাটতি একেবারেই তলানিতে। পাঠক বই কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং এ সময় যদি বইয়ের দাম আরও বাড়ানো হয়, তাহলে পাঠক আরও কমবে।

বইয়ের ক্রেতা অনকে কমে গেছে বলে জানিয়েছেন মাওলানা ইসহাক। তিনি বলেন, ‘সত্যিই বইয়ের ক্রেতা অনেক কমে গেছে। এদিকে বেড়ে গেছে কাগজের দাম। ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়। তবে বই প্রকাশে ব্যবসার সঙ্গে যেহেতু আমাদের দ্বীনি চিন্তাটাও থাকে, তাই বইয়ের দাম হুট করেই বাড়াতে পারি না। বৃহৎ সংখ্যক পাঠকের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। তাই দামও বাড়াচ্ছি না। কিন্তু কাগজের বাজার স্বাভাবিক না হলে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

প্রকাশকরা বলছেন, মিল মালিক ও কাগজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দেশজুড়ে কাগজের সংকট দেখা দিয়েছে। কাগজের যে আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। কাগজ তৈরীর মালামাল আমদানি হচ্ছে না। অথচ ইলেকট্রনিক সহ আরও বিভিন্ন খাতের মালামাল আমদানি হচ্ছে। কেন আমদানি হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেখানে সিন্ডিকেট থাকলে সরকারের উচিত তা দূর করে সংকটের নিরসন করা।

কাগজের বাজার স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে: অস্বাভাবিক কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দ্রুততম সময়ে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানিতে শুল্কমুক্ত ঘোষণা, দেশের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কাগজকে রিসাইকেলিং কাজে ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখা, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর গুদামজাতকৃত কাগজ স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা এবং শুল্ক হ্রাস/মুক্ত করা ছাড়াও অন্যবিধ কী ভর্তুকি বা প্রণোদনামূলক ছাড় দেওয়া।

The post কাগজের বাজারে আগুন: হুমকির মুখে ইসলামি প্রকাশনা শিল্প appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%95%e0%a6%bf/

No comments:

Post a Comment