Saturday, December 17, 2022

ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সঙ্কট : যা ভাবছে সালাফি সমাজ

মুনশী নাঈম:

ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলা করতে হলে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা খুব জরুরী। অথচ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক পক্ষই সে রাস্তায় হাঁটছে না। গত কয়েকদিনে দেশের নানা প্রান্তের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যে সমঝোতা দরকার, তার কোনো কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সঙ্কট। ঘনায়মান এই রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন নিয়ে বিভিন্ন ইসলামী দলগুলো কথা বললেও এসব নিয়ে কথা বলতে চায় না দেশের সালাফি সমাজের নেতারা। তাদের ভাষ্য হলো, ‘প্রচলিত রাজনীতিতে তারা বিশ্বাস করেন না। ফলে এটা নিয়ে কথাও বলতে চান না।’

রাজনীতি নিয়ে তাদের ভাবনা

দেশের প্রচলিত রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না আহলে হাদিস দলগুলো। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সেক্রটারী ড. শহিদুল্লাহ খান মাদানি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি অস্বীকার করি না। ইসলামে রাজনীতি অবশ্যই আছে। কিন্তু প্রচলিত রাজনীতি কখনও ইসলামি রাজনীতি নয়। তাই আমরা প্রচলিত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছি না। বরং রাসুল সা.-এর দাওয়াতি ধারায় আমরা কাজ করছি। দাওয়াতি পথ ধরেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৌঁছব।’

প্রচলিত রাজনীতি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই বলে ফাতেহকে জানান আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীকের সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত রাজনীতি আমরা বিশ্বাস করি না। সুতরাং এটা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তাও নেই। যখন ইসলামি রাজনীতির প্রচলন ঘটবে, তখন দেখা যাবে কী করি। আমরা মূলত সমাজ সংস্কারের কাজ করি। শিক্ষা এবং আকিদা রয়েছে তার শীর্ষে। আমরা মনে করি, শিক্ষায়-আকিদায় একটা মানুষ যখন শুদ্ধ হয়ে যাবে, দেশ এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। জোর করে কাউকে ঠিক করাতে হবে না।’

আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। শিক্ষা সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার ও নেতৃত্ব সংস্কার। নেতৃত্ব সংস্কারের বর্ণনায় তাদের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসৎ নেতৃত্ব আজ সমাজ জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। শান্তিপ্রিয় সৎ নেতৃত্ব সর্বত্র মুখ লুকিয়েছে। এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও আরও কিছু বিষয়কে আমরা মৌলিক কারণ হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। এক. সরকারী ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক পদ্ধতি এবং হরতাল, ধর্মঘট ও মিছিলের যথেচ্ছ ব্যবহার। দুই. দল ও প্রার্থী ভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা। তিন. সৎ ও অসৎ সকলের ভোটের মূল্য ও নির্বাচনের অধিকার সমান গণ্য করা। চার. দলীয় প্রশাসন, দুর্নীতিগ্রস্থ আমলাতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থা। নেতৃত্ব সংস্কারের লক্ষ্যে তাদের প্রস্তাব হলো—এক. সর্বত্র ‘ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন নীতি’ অনুসরণ করা এবং ইমারত ও শূরা পদ্ধতি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা। দুই. আল্লাহ্কে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসাবে ঘোষণা করা এবং তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে রাষ্ট্রীয় আইনে মূল ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করা। তিন. স্বাধীন ও ইসলামী বিচার ব্যবস্থা চালু করা।

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাদের ভাবনা

বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের শিক্ষাবোর্ডের নাম বাংলাদেশ আহলে হাদীস তা’লীমী বোর্ড। আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষাবোর্ডের নাম হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড। এর অধীনে ৯২টি মাদরাসা রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও সরকারের সঙ্গে তাদের প্রবল দ্বিমত রয়েছে।

স্কুল ও মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র সিলেবাস চায় হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষাবোর্ড। বোর্ডের শিক্ষাসচিব ড. শামসুল আলম ফাতেহকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষার জন্য অভিন্ন পাঠ্যসূচি আমরা সমর্থন করি না। যেহেতু, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃথক, উভয়টির স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণয়নকৃত পুস্তক ব্যতীত অন্য কোন পুস্তক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না মর্মে যে বিধান আছে, তাও আমরা সমর্থন করি না। কারণ, বোর্ডের সকল বই প্রশ্নাতীত নয়। ইতিমধ্যেই বোর্ডের বিভিন্ন বই সম্পর্কে প্রচুর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এরপরেও রাখতে হলে সেখানে অবশ্যই ইসলামী শিক্ষার জন্য হানাফী ও আহলেহাদীছ এবং অন্যান্যদের জন্য তাদের দক্ষ ব্যক্তিদের কমিটিতে নিতে হবে।’

প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নিয়ে কেবল ধারাবাহিক মূল্যায়নও সমর্থন করেন না তারা। শামসুল আলম বলেন, পরীক্ষা না নিয়ে কেবল ধারাবাহিক মূল্যায়ন করলে দুর্নীতি বাড়বে। কেননা শিশুরা অন্যের মাধ্যমে ব্যবহারিক কাজ করে আনে। এতে শিশু অবস্থাতেই তারা দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়।

দাখিল ও আলিম পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ পরিচিতি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক করারও বিরোধিতা করে এই দলটি। তাদের বক্তব্য হলো, মাদরাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা হবে মুখ্য। বাকী বিষয়গুলি থাকবে ঐচ্ছিক।

কওমী মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কওমী মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, কিওমিদের মতোই তাকে সমস্যাজনক মনে করেন তারা। তারা বলেন, কওমী মাদরাসা শিক্ষা যুগোপযোগী করার ভাষাটিই আপত্তিকর। এসব মাদরাসা যারা চালান ও এখানে যাদের সন্তানরা লেখাপড়া করে, তারা প্রয়োজন মোতাবেক সিলেবাস পরিমার্জন করে থাকেন। যেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় সিলেবাসগুলি সেখানকার শিক্ষকরা করে থাকেন। এখানে সরকারী হস্তক্ষেপ অহেতুক সমস্যা ডেকে আনবে।

শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার বর্তমান যে শিক্ষাক্রম আনছে, তার আমরা ঘোর বিরোধী। যে শিক্ষায় ডারউইনের মতবাদ শেখানো হয়, তার সাথে কোনো আপোষ নেই। এর বিরুদ্ধে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা উচিত।’ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।

The post ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সঙ্কট : যা ভাবছে সালাফি সমাজ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%98%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%a4-%e0%a6%b9%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a6%99/

No comments:

Post a Comment