মুনশী নাঈম:
মরক্কোর ফুটবলার কিংবা সাধারণ জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকলেও বিপরীতে দেশটির রাজ পরিবার। ষাটের দশক থেকে গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে তারা। সবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে প্রকাশ্যে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রধান এই দেশটি।
৪,৪৬,৫৫০ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট এবং প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ জনসংখ্যা–অধ্যুষিত আরব লীগের সদস্য এই রাষ্ট্রটি ১৯৫৬ সালের ৭ এপ্রিল ফ্রান্স ও স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ইজরাইলকে সাহায্য করে থাকে মরক্কোর রাজ পরিবার। ষাটের দশকে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের পরিপূর্ণ বিজয়ে মরক্কোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। যুদ্ধের দুই বছর আগে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে আরব লীগভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নেতারা মরক্কোর বন্দর নগরী কাসাব্লাঙ্কায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনটির উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ। মরক্কোর রাজা হাসান এই সম্মেলনে ইসরায়েলের আভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’ এবং বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’–এর সদস্যদের অনুপ্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন গোপনে। রাজা হাসান কাউকে না জানিয়ে পুরো সম্মেলনের কথোপকথন রেকর্ড করে রাখেন এবং এই রেকর্ডিং ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেন। এর ফলে আরবদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরায়েলিরা স্পষ্ট ধারণা লাভ করে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, ফলে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে বিভক্ত ও অপ্রস্তুত আরব রাষ্ট্রগুলোকে তারা মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।
খুব কম সংখ্যক আরব দেশই বর্তমানে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করছে। তাদের মধ্যে অন্যতম মরক্কো। গুটি কয়েক মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে মরক্কো একটি, যারা ইসরায়েলি পাসপোর্টধারীদেরকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করে। শুধু তাই নয়, ১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত মিসর–ইসরায়েল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে মরক্কো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৯০–এর দশকে জর্দান ও ‘ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা’র (‘Palestine Liberation Organization’, PLO) সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও মরক্কো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করে। ১৯৯৪ সালে পিএলও এবং ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে নিম্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯৯ সালে রাজা দ্বিতীয় হাসানের মৃত্যুর পর ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করে।
মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি ৯০ লক্ষ (বা ১৯৪ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার সমমূল্যের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়েছে। রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে অর্থনীতির যে খাতটি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে সেটি হলো পর্যটন খাত। ইসরায়েলি পাসপোর্ট নিয়ে মরক্কোয় প্রবেশ করা যায়। ২০১৯ সালে প্রায় ৪৫,০০০ ইসরায়েলি পর্যটক মরক্কো ভ্রমণ করেছে, অন্যদিকে প্রায় ৩,০০০ মরোক্কান পর্যটক ইসরায়েল ভ্রমণ করেছে। সবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে প্রকাশ্যে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রধান এই দেশটি।
মরক্কোর রাজ পরিবার ইসরায়েলের পক্ষে থাকলেও সাধারণ জনতা যে ফিলিস্তিনের পক্ষে, তার প্রমাণ মিলছে কাতার বিশ্বকাপে। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচের পর স্টেডিয়ামে না হয় স্টেডিয়ামের বাইরে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াতে দেখা যায় মরোক্কান সমর্থকদের। বিশ্বকাপের বিভিন্ন ম্যাচেও ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে জয় উদযাপন করেছিলেন মরোক্কান ফুটবলাররা। তবে, কিন্তু মরক্কোতে জনমতের ভিত্তিতে নয়, বরং শাসকশ্রেণির স্বার্থের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত হয়।
‘দ্য টাইমস অব ইসরায়েল’ নামে ইসরায়েলি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ানোয় মরক্কোকে জরিমানা করতে পারে ফিফা। বিশ্ব ফুটবল সংস্থার আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে স্টেডিয়ামে কোনো ধরনের পতাকা বা ব্যানার প্রদর্শন সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। অতীতে স্টেডিয়ামে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে অনেক দল জরিমানার মুখোমুখি হয়েছিল।
The post মরক্কোর সঙ্গে ইজরাইলের সম্পর্ক appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%87%e0%a6%9c%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8/
No comments:
Post a Comment