Friday, May 1, 2020

আল্লামা ইকবালের দৃষ্টিতে কাদিয়ানী সম্প্রদায়

আবদুল্লাহিল বাকি :

পাকিস্তানের বিভিন্ন বেদাতি ধর্মীয় উপদল আল্লামা ইকবালের জন্মদিনে ধুমধাম উৎসব পালন করে থাকে। পাশাপাশি প্রত্যেক দলই এটা প্রমাণ করার প্রয়াস চালায় যে, আল্লামা ইকবাল তাদের দলের অন্তভূক্ত ছিলেন। তাদের মতবাদ ও বিশ্বাসের ধারক ছিলেন। এভাবে তরুণ আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণিকে তারা নিজেদের দলভূক্ত করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানে বর্তমানের কাদিয়ানী সম্প্রদায়ও পিছিয়ে নেই। তারা ইকবালের জন্মদিনে স্বতন্ত্রভাবে ‘ইকবাল ডে’ নামে আলোচনা সভা ও ভোজের আসর করে। সেখানে তারা চড়া গলায় এটা প্রচার করে যে, আল্লামা ইকবাল কাদিয়ানীই ছিলেন আর তাঁর পিতা তো ছিলেন কাদিয়ানীদের জন্য উৎসর্গপ্রাণ! (১)

আল্লামা ইকবালের খুদিবাদ দর্শনকে তারা বলে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আদর্শের দার্শনিক ভিত্তি। তাঁর কথিত ‘ইনসানে কামিল’-এর ধারণাকে তারা মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়তের সাথে গুলিয়ে ফেলে। মূলত খুদিবাদ বা আত্মঅহম দর্শন ইকবালের নিজস্ব কোনো দর্শনই না। প্রাচীন সুফিগণই এই ধারণা দিয়েছিলেন। আবদুল করিম জিলি ‘ইনসানে কামিল’ নামে একটা স্বতন্ত্র গ্রন্থই লিখেছেন। পরবর্তীতে পাশ্চাত্যেও ইনসানে কামিলের আওয়াজ উঠেছিল ধর্মনিরপেক্ষ দার্শনিকদের মাধ্যমে। নিটশে দিয়েছিলেন superman বা মহামানবের ধারণা, যা ইনসানে কামিল ধারণার কাছাকাছি।

তবে সুফিদের ইনসানে কামিল আর নিটশের সুপারম্যান-ধারণার মধ্যে পার্থক্য হলো, সুফিদের মহামানব হবেন একজন দুনিয়াবিমুখ সুফি আল্লাহভীরু ব্যক্তিত্ব। কিন্তু নিটশের মহামানব একজন নাস্তিক, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মাভিমানী, প্রবল অহংকারী। এক্ষেত্রে ইকবাল ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একজন যুগোপযোগী ইনসানে কামিলের ধারণা দিতে চেয়েছেন। আবদুল করিম জিলির কামালতত্ত্ব, নিটশের ব্যক্তিবাদ আর জ্য পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ দর্শনকে একীভূত করে ইকবালের ইসলামিকরণের প্রচেষ্টার নাম খুদিবাদ। এই দর্শনকে কাব্যিক রূপ দিতে গিয়ে পারস্য কবিদের মিস্টিক ভাষায় তিনি রচনা করেছেন ‘আসরারে খুদি’।

এখানে পেশ করেছেন এমন এক ইনসানে কামিলের ধারণা, যে আল্লাহর আনুগত্য আর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রেম থেকে শক্তি অর্জন করবে। সেই শক্তি দ্বারা পরিচালনা করবে সারা পৃথিবী, আল্লাহর খলিফা হিসেবে। যে বদলে দিতে পারে উম্মাহর আগামী দিনের ভাগ্য, বিলালের আজানের সঞ্জীবনী দিয়ে। জাতির তাকদির আপন কলম চালানোর পূর্বে যার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নেয়।
ইকবাল ইনসানে কামিলের কাছ থেকে এত কিছুর স্বপ্ন দেখার পরও তাঁকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন নিছক আল্লাহর খিলাফাত বা স্থলাভিষেকের ধারণার মধ্যে। তাহলে তাঁর খুদিবাদ কীভাবে দাবি করতে পারে একজন নতুন নবির–যেমনটা দাবি করে থাকে বর্তমানের কাদিয়ানীরা, তা অবোধগম্য।

তাছাড়া ইকবালের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্বের গ্রন্থ `Reconstruction of Religious Thought’-এ খতমে নবুওয়ত অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পর যে আর কোনো নবি আসবেন না, এটাকে স্বীকার করে নিয়ে এর একটা যৌক্তিক ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন ইকবাল। খতমে নবুওয়ত ইকবালের নিকট উম্মতে মুসলিমার খোদাপ্রদত্ত স্বয়ম্ভুতার স্বীকৃতি। এটা মানুষের সৃজনশীলতা ও যোগ্যতার দুয়ারকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

আল্লামা ইকবাল সম্পর্কে খোদ কাদিয়ানীদের স্বীকৃতি

আল্লামা ইকবাল যে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না, তার প্রমাণ পেতে দূরের কোনো দুয়ারে ধর্ণা দিতে হবে না, খোদ কাদিয়ানীদের নেতৃস্থানীয় মান্য ব্যক্তিত্বদের গ্রন্থাবলি ঘাঁটলেই এর প্রমাণ আমরা পেয়ে যাই।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘সুযোগ্য’ (?) পুত্র মির্যা বশির আহমাদ এম. এ. তাঁর পিতার জীবনীগ্রন্থ ‘সীরাতুল মাহদী’তে লিখেছেন, ‘ইকবালের পিতা শেখ নুর মুহাম্মদ ১৮৯১ বা ১৮৯২ ঈসায়ির দিকে মৌলভি আবদুল করিম ও সৈয়দ হামেদ শাহের প্রচারে মির্যা কাদিয়ানীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তখন ইকবাল স্কুলে পড়ত, নিজ পিতার দরুণ সে নিজেকে আহমদী বলে দাবি করত। তখন থেকেই তার কাব্যরচনার প্রতি প্রচুর আগ্রহ ও নিমগ্নতা ছিল।

সেসময় কাদিয়ানী-বিরোধী সাদুল্লাহ লুধিয়ানভির বিরুদ্ধে ও মির্যা কাদিয়ানীর পক্ষে একটা কবিতা রচনা করে সে। কিন্তু কয়েক বছর পর কলেজে পড়ার সময় তার চিন্তা-চেতনায় আমূল পরিবর্তন চলে আসে। সে নিজে তো সরেই আসে উপরন্তু পিতাকে সরে আসতে বলে ‘আহমদিয়া’ জামাত থেকে। তখন ইকবালের পিতা শেখ নূর মুহাম্মদ সাহেব মির্যা কাদিয়ানীর নিকট একটা চিঠি পাঠান। সেখানে লেখা ছিল, সিয়ালকোটের জামাত তো যুবকদের জামাত। আর আমি তো বৃদ্ধ। আমি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। এজন্য আমার নাম জামাত থেকে কেটে দেওয়া হোক। কাদিয়ানী এর উত্তর দিয়েছিলেন মীর হামেদ শাহের কাছে। লিখেছিলেন, জামাত থেকে শুধু তার নাম কাটা হবে না, ইসলাম থেকেই তার নাম কাটা হলো।’

উক্ত গ্রন্থেই আল্লামা ইকবাল সম্পর্কে আরও লেখা হয়েছে, ‘অধম আরজ করছে যে, ড. স্যার মুহাম্মদ ইকবাল যে পরবর্তীতে কেবল কাদিয়ানী সিলসিলা থেকে সরে গেছে তাই নয়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই জামাতের অনেক বড় একজন বিরোধী হিসেবে পরিগণিত ছিল। আধুনিক শিক্ষিত মহলে কাদিয়ানীদের ব্যপারে ‘বীতশ্রদ্ধা’ তৈরির ক্ষেত্রে ইকবালের ‘প্রপাগান্ডা’র ভূমিকা ছিল।’ (২)

‘পূর্ব পাকিস্তান আহমদিয়া আঞ্জুমানে’র পুস্তক প্রণয়ন বিভাগের সেক্রেটারি কাদিয়ানী মহম্মদ আবদুল হাফীজ ১৯৫২ সালে ‘খাতামান-নবীঈন’ নামে একটা গ্রন্থ রচনা করেন, ‘তর্জুমানে আহলে হাদিস’ পত্রিকায় কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে লিখিত প্রবন্ধ ‘নবুওয়তের চরমপ্রাপ্তির প্রতি ঈমান’-এর জবাবে। সেই গ্রন্থে ইকবালকে নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে বলে স্বীকৃতি দিয়ে এরপর লিখেছেন, ‘খতম-নবুওয়ত’ বা ‘নবুওয়তের চরমত্ববাদ’ বলিতে আল্লামা ইকবাল বুঝিয়াছেন ‘নবুয়তের বিনাশ’। তিনি ছিলেন একজন মুসলমান কবি ও দার্শনিক। তাহার দার্শনিক মনের উপরে কোরআন ও সুন্নাতের প্রভাব হইতে পাশ্চাত্য দর্শন ও পাশ্চাত্য আদর্শের প্রভাব ছিল অনেক বেশী। (৩)

কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আল্লামা ইকবালের বাণী

আল্লামা ইকবাল কাদিয়ানীদের ফেতনার ভয়াবহতা ও তাদের সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদের সতর্ক করতে বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তিনি এ বিষয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি তাদের বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। বক্তব্যগুলো লতিফ আহমাদ শেরওয়ানী ‘হরফে ইকবাল’ নামে একটি গ্রন্থে সংকলিত করেছেন। এখানে ইকবালের কিছু উক্তি তুলে ধরছি। যাতে কাদিয়ানীদের বিষয়ে ইকবালের মতামতের তীব্রতা বোঝা যায়।

১. ইকবাল বলেছেন, ‘আমার নিকট কাদিয়ানী ধর্মের চেয়ে বাহাঈ ধর্ম বেশি নিরাপদ। কারণ, তারা খোলাখুলি ইসলামের বিরোধী। কিন্তু কাদিয়ানী ধর্ম ইসলামের বাহ্যিক কিছু রীতিকে বহাল রেখেছে। আর ভেতরে ভেতরে ইসলামের রুহ ও মাকাসেদকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কাদিয়ানীদের আকিদা-বিশ্বাসের অনেক কিছুই ইহুদিদের সাথে সামঞ্জস্য রাখে। তাই মনে হয়, যেন কাদিয়ানী ধর্মের মূল ইহুদি ধর্মে প্রোথিত।’ (৪)

২. ‘মুসলমানগণ ঐসব আন্দোলনের ব্যাপারে অনেক স্পর্শকাতর, যা তাদের ঐক্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। যে ধর্মীয় দল ইসলামের বহির্ভূত, নতুন নবুওয়তের উপর যার ভিত্তি, নিজেদের উদ্ভাবিত বিশ্বাসকে যেসব মুসলমান মেনে নেবে না, তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়া যাদের আদত, তারা মুসলমানদের একতা সংহতি নষ্ট করে দিতে পারে। কেননা মুসলমানদের ঐক্যের মূলমন্ত্রই হলো খতমে নবুওয়তের আকিদা।’ (৫)

৩. কাদিয়ানীদের ‘সান রাইজ’ পত্রিকায় একবার আল্লামা ইকবালের প্রাচীন লেখা থেকে উদ্ধৃতি টেনে কাদিয়ানীদের প্রতি ইকবালের পক্ষপাত প্রমাণ করার প্রয়াস চালানো হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় আল্লামা ইকবাল বলেছিলেন, ‘এখানে আমার এটা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, শুরুর দিকে কাদিয়ানী দ্বারা ইসলামের কিছু কাজ হয়েছে। আমার জানা মতে মরহুম মৌলভি চেরাগ আলি, যিনি ইংরেজিতে বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকাদি রচনা করেছেন, তিনিও শুরুর ‍দিকে মির্যা কাদিয়ানীর সঙ্গ দিয়েছেন। এমনকি ‘বারাহিনে আহমাদিয়া’ গ্রন্থ রচনায় তারও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু তিনিও সেখান থেকে সরে এসেছেন। কোনো আন্দোলনের প্রাণ একদিনেই বেড়ে ওঠে না। পরিপূর্ণ প্রকাশের জন্য বেশ সময় লাগে এর।

যখন প্রত্যক্ষ করলাম, কাদিয়ানী মতবাদে একজন নতুন নবির ধারণা দেয়া হচ্ছে, তখনই আমি এই জামাতের প্রতি বিতৃষ্ণ ও মনক্ষুণ্ন হয়ে ওঠি। পরে একবার এই জামাতের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মুখে যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি মারাত্মক গালি-গালাজ শুনলাম, তখন মনক্ষুণ্নতা রূপ নিল বিরোধিতায়। আমি সেখান থেকে সরে এসেছি, মত পরিবর্তন করেছি, এতে আশ্চর্যের কী আছে? জীবন্ত মানুষই মত ও পথ পরিবর্তন করে সঠিকটা বেছে নেয়, মৃত মানুষ নয়। এমারসন খুব সুন্দর বলেছেন, একমাত্র পাথরই শুধু নিজ অবস্থান থেকে সরতে পারে না। (৬)

৪. কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে ঘিরে ইংরেজদের ‘ডিভাইড এন্ড রুল’-এর পলিসিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইকবাল বলেছেন, ‘এই ভারতবর্ষের অবস্থা হলো, যদি কোনো মূল ধর্মের মধ্যে নতুন উপদল সৃষ্টি হয়, সেটাকে ইংরেজ লিবারেল সরকার মূল দলের ঐক্য নষ্টের খাহেশে বেশ মদদ যোগায়, নিজ আনুগত্যে থাকার শর্তে। এই পলিসিকে আকবর ইলাহাবাদি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, ‘গভর্নমেন্টের বন্ধু হতে চাও, তাহলে ‘আনাল হক’ বলো। তবে নিশ্চিন্ত থাকো, তোমার ফাঁসি হবে না।’ (৭)

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বৈধতা:

জওহর লাল নেহেরু ও ইকবাল

আল্লামা ইকবাল যখন ধারাবাহিকভাবে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক প্রমাণাদি দ্বারা লিখে যাচ্ছিলেন তখন জওহর লাল নেহেরু এটাকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন বলে তিনটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত এক ইংরেজি পত্রিকায়। এসবের জবাবে আল্লামা ইকবাল একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যার লিখিত রূপ ২৩ পৃষ্ঠা। এখানে অনেক কথার ফাঁকে তিনি এক সত্য উচ্চারণ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু ইদানিং যে কাদিয়ানীদের অধিকার নিয়ে মুখ খুলছেন এত জোরে শোরে, যা ইতোপুর্বে মুসলমানদের অধিকারের ক্ষেত্রে কখনো দেখা যায়নি, এর একমাত্র কারণ, জওহর লাল নেহেরু ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়–উভয়ই মুসলমানদের ঐক্য, শক্তি, সংহতিকে পছন্দ করে না। এটা তিক্ত হলেও বাস্তব।’ (৮)

এরপর তাদের মাঝে পারস্পরিক পত্রালাপও চলে কিছু কাল। ইকবাল সে পত্রগুলোতে এটা দেখাতে চেষ্টা করেছিলেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায় শুধুমাত্র ইসলামের জন্যই নয়, দেশ ও দেশীয় সকল ধর্মের জন্যই হুমকি। সবাই যখন একযোগে ইংরেজ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত, ঠিক সে মূহুর্তে গাদ্দারির জন্য কাদিয়ানী সম্প্রদায় এক পায়ে খাড়া। ২১ জুন ১৯৩৬ ঈসায়িতে লাহোর থেকে নেহেরুর প্রতি এক চিঠিতে সুস্পষ্ট তিনি বলেছিলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে আহমদী জামাত ইসলাম ও বর্তমান হিন্দুস্তান, উভয়ের জন্যই খতরনাক গাদ্দার।’ (৯)

কাদিয়ানীদের ব্যাপারে আল্লামা ইকবালের চূড়ান্ত বক্তব্য

আল্লামা ইকবাল তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘যে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পরে অন্য কোনো নবীর আগমনের দাবি করে, সে ইসলামের গণ্ডি-বহির্ভূত কাফের। সে হিসেবে কাদিয়ানী জামাতও কাফের। আমার জানা আছে, কেউ কেউ আমার ব্যাপারে এ ধারণা করছে যে, আমি রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের মিটিয়ে দেবার জন্য প্রবল প্রয়াস চালাচ্ছি। বিষয়টা এমন নয়। আমিও ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা জোরে শোরে বলি। এ ছাড়া হিন্দুস্তানের ভবিষ্যত অন্ধকার। কাদিয়ানীদের ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্যই তাদেরকে আলাদা ধর্ম হিসেবে ঘোষণা প্রয়োজন। এতে করে তারা ইসলাম ছাড়া হিন্দুস্তানের অন্যান্য ধর্মের মতো স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। তাদের দ্বারা সরলমনা মুসলমানরাও বিভ্রান্ত হবে না। হিন্দুস্তানের শান্তি-শৃংখলা স্থিতির জন্য তাদের পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে ঘোষণা করা জরুরি।’ (১০)

ইকবাল হিন্দুস্তানের জন্য যে বিষয়টা বুঝেছিলেন, আজও আমাদের দেশে সে বিষয়টা রাজনৈতিক হর্তা-কর্তা, বুদ্ধিজীবীদের বুঝে আসেনি। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের শান্তি শৃংখলা স্থিতির জন্য আল্লামা ইকবালের প্রস্তাবটা এ দেশেও প্রয়োগ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

তথ্যসূত্র :

১. মাওলানা আবদুর রহিম আশআর, মির্যাইয়াত: আল্লামা ইকবাল কি নজর মে, পৃ. ২

২. মির্যা বশির আহমাদ এম. এ., সীরাতুল মাহদী, খ.২, পৃ.২৪৮-২৫০

৩. মহম্মদ আবদুল হাফিজ, খাতামান-নবীঈন, পৃ. ১৮১

৪. লতিফ আহমাদ শেরওয়ানী সংকলিত, হরফে ইকবাল, পৃ. ১২৩

৫. প্রাগুক্ত. পৃ. ১২২

৬. প্রাগুক্ত. পৃ. ১৩১ – ১৩২

৭. প্রাগুক্ত. পৃ. ১২৫

৮. ফরযান্দ তৌহিদ, আল্লামা ইকবাল কা পায়গাম মিল্লাতে ইসলামিয়া কে নাম, পৃ. ৩

৯. জওহর লাল নেহেরু, কুছ পুরানে খুতুত, খ. ১, পৃ. ২৯৩

১০. আল্লামা ইকবাল, ইসলাম আওর কাদিয়ানিজম, ইংরেজি থেকে উর্দু অনুবাদ: ড. সুফি নযির আহমাদ

The post আল্লামা ইকবালের দৃষ্টিতে কাদিয়ানী সম্প্রদায় appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%83%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%a4-3/

No comments:

Post a Comment