অনুবাদ, মাহদি হাসান :
আল্লামা ইকবালের চর্চা যখন দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই মধুর সময়টাতেই ছিল আমার বেড়ে উঠা। নিজ সময়ে আল্লামা ইকবাল যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো কবি-সাহিত্যিকের জীবনে তা দুর্লভ। তাই শৈশব থেকেই আল্লামা ইকবালকে পছন্দ করে আসা এবং বড় হয়ে তাঁকে আমার গবেষণার বিষয়বস্তু বানিয়ে নেয়ায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না।
আল্লামা ইকবালকে পছন্দ করার অনেক কারণ রয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তিই তার নিজস্ব পছন্দের বিভিন্ন কারণ ব্যক্ত করে থাকেন। মানুষ যখন কোনো ব্যক্তির মাঝে তাঁর স্বপ্নের জগত দেখতে পায়, খুঁজে পায় তার হৃদয়ের ভাষা, তখন মানব হৃদয় সেই ব্যক্তিকে পছন্দ করতে শুরু করে। আমিও নিজেকে পৃথিবীর এই নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে ফেলতে চাই না। আমার ইকবাল পাঠ এবং ইকবালের কথা পছন্দ করার কারণ হচ্ছে, তিনি আমার পছন্দের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। হয়েছেন আমার অনুভূতির দোভাষী। তিনি আমার চিন্তা-চেতনার সারথি শুধু নন, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমার ভাবনা-অনুভুতির সহযোদ্ধা বনে গেছেন।
তবে ইকবালকে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছি তাঁর উচ্চ সাহসিকতা, ভালোবাসা এবং ঈমানী শক্তির কারণে। তাঁর কবিতা এবং রচনাগুলোই এর উত্তম পরিচায়ক। অথচ তাঁর সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকগণ তাদের রচনায় এগুলোর কোনো সন্ধানই দিতে পারেননি। আমিও আমার স্বভাবে সেই তিনটি বিষয়ের প্রাবল্য অনুভব করি। আমি নিজের অজান্তেই এগিয়ে চলি সেই কবিতা এবং রচনার দিকে, যেখানে উচ্চ সাহসিকতা, সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা এবং ইসলামের পুণর্জাগরণের চিন্তা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। যেখানে বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ, আত্মগঠন এবং দিগ-দিগন্তে ইসলামকে ছড়িয়ে দেয়ার প্লাবন উঠে। যে রচনা হয়ে উঠে বিশ্বস্ত হৃদয়ের পাথেয়, ঈমানী চেতনার সঞ্জীবনী শক্তি, যে রচনায় ফুটে উঠে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর আনীত বার্তার সামগ্রিকতা এবং অবিনশ্বরতা। আমার কলম যেন আনমনে বিচরণ করতে থাকে সেই রচনার ময়দানে।
আল্লামা ইকবাল উন্নত চিন্তা, ভালোবাসা এবং ঈমানী চেতনার কবি। তিনি আর আমি একই আকিদায় বিশ্বাসী, একই আহ্বানের প্রবক্তা এবং একই বার্তার প্রচারক। তিনি পশ্চিমা বুর্জোয়া সভ্যতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সমালোচক এবং বিদ্রোহী। এজন্যই তিনি আমার পছন্দ এবং মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মুসলিম জাতির অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি চিন্তামগ্ন। ছিলেন জাতীয়তা এবং দেশত্মবাদের মতো সংকীর্ণ চেতনার তীব্র সমালোচক এবং মানবতা ও ইসলামের পক্ষে এক মহান সেনানী।
আমি শৈশব এবং যৌবনের প্রারম্ভ থেকেই তাঁর কবিতা পাঠ শুরু করি। তাঁর কিছু কবিতাকে আরবিতে রূপান্তরের চেষ্টাও করেছিলাম বটে। তবে সত্য কথা হচ্ছে সে সময় আমি শুধু তাঁর ‘বাঙ্গেদারা’ বইটি পড়েছিলাম। তখন বইটির ফার্সি সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছিল। সত্যি বলতে ঐ সময় পর্যন্ত আমি ইকবালের নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠতে পারিনি।
ইকবালের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯২৯ সালে। তখন আমার বয়স সবে ষোল। তখন আমি জ্ঞান এবং সভ্যতার শহর লাহোরে সফররত ছিলাম। মে এর শেষদিকে গ্রীস্মের সময় ছিল তখন। ডক্টর আবদুল্লাহ চুগতাই আমাকে আল্লামা ইকবালের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর কবিতার একজন পাঠক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ডক্টর আবদুল্লাহ আমার মরহুম আব্বাজান সাইয়েদ আবদুল হাই হাসানির কথাও উল্লেখ করেন। আল্লামা ইকবাল এবং অন্যান্য সাহিত্যিক ও সমালোচকগণ তখন আমার পিতাকে চিনতেন তাঁর রচিত মূল্যবান গ্রন্থ ‘গুলে রানা’ এর কারণে। যা তখন সদ্য প্রকাশ পেয়েছিল এবং পাঠকের কাছে বিপুল সমাদৃত হয়েছিল।
আমি আল্লামা ইকবালের কাছে তাঁর ‘চাঁদ’ কবিতাটির আরবী রূপান্তর পেশ করি। তিনি তা দেখে আমাকে কতক আরব কবি সম্পর্কে এমন কিছু প্রশ্ন করেন, যা থেকে আমার জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। অতঃপর সেদিনের সেই বৈঠকের সমাপ্তি ঘটে। আমি ফিরে আসি এই মহান কবির বিনয়, অনাড়ম্বর এবং কৃত্রিমতাহীন জীবনের এক ঝলকের সাক্ষী হয়ে। তাঁর কথাবার্তা এবং চলাফেরা ছিল এসব উত্তম স্বভাবের পরিচায়ক।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৭। এ সময়ের মধ্যে আমার প্রায়ই লাহোরে আসা-যাওয়া হতো। কখনো সখনো মাসখানেক সময় নিয়েও সেখানে অবস্থান করতাম। কিন্তু এ সময়ে আমি একবারও এই মহান কবির সাথে সাক্ষাৎ করতে যাইনি। ভেবেছিলাম তিনি আমাদের মাঝে আরও অনেক বছর বেঁচে থাকবেন। এছাড়া বড় ব্যক্তিত্বদের সাথে সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রে আমি বরাবরই খুব সংকোচপ্রবণ ছিলাম। আবার আমার শিক্ষাজীবন এবং ব্যস্ততাকেও এর পিছনে দায়ী করা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে ফার্সি রচনায় মশগুল থাকার পর সে সময় আল্লামা ইকবালের দুইটি উর্দু কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। ইসলামি আলোচনা এবং সাহিত্যের মজমাগুলোতে তাঁর চর্চা গিয়েছিল বেড়ে। আর বাস্তবিকপক্ষেই সেই গ্রন্থদ্বয়ে আল্লামা ইকবালের কাব্য প্রতিভা এবং চিন্তাধারার শক্তিমত্তা প্রকাশ পেয়েছিল খুবই উৎকৃষ্টপন্থায়। গ্রন্থদ্বয়ে তিনি যে বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন, তা ছিল খুবই স্পষ্ট।
সে সময় আমি তাঁর ‘যারবে কালিম’ গ্রন্থকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতাম। যদিও পরে গিয়ে তাঁর ‘বালে জিবরিল’ গ্রন্থটি আমার মনোযোগ দখল করে নিয়েছিল। সেটির প্রতি আমার আকর্ষণ ক্রমেই তীব্রতর হয়েছিল এবং কাব্য চয়ন ও অনুবাদের অধিকাংশই সেই গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছিল।
আমি তখন দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ভাই মরহুম মাওলানা মাসউদ আলম নদভীর সাথে অবস্থান করতাম। প্রায়ই আমরা একে অপরকে ইকবালের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়ে বেশ তৃপ্তি লাভ করতাম। মাওলানা মাসউদ আলম ছিলেন আল্লামা ইকবালের কবিতার খুব পাগল একজন ভক্ত।
তখন একটা বিষয় নিয়ে আমি ছিলাম খুবই উৎকণ্ঠিত। সে সময় আল্লামা ইকবালের তুলনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরব বিশ্বে অধিক পরিচিত ছিলেন। মিসর এবং সিরিয়া প্রভৃতি দেশের সাহিত্যিকদের মাঝে ঠাকুর ছিলেন খুবই সমাদৃত।
আমি মনে করলাম, আমাদের ব্যর্থতার ফলেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরাই বিশ্বের সামনে আল্লামা ইকবালকে পরিচিত করতে পারিনি। তখনকার আরবি পত্রিকাগুলোতে ঠাকুর প্রমুখদের পরিচিতিমূলক প্রবন্ধ যখন চোখে পড়ত, তখন আরবিতে আল্লামা ইকবালের জীবনী লেখার সংকল্প উজ্জীবিত হয়ে উঠত এবং এটিকে নিজের দায়িত্ব ও আমানত মনে করতাম। অবশেষে আল্লাহ তায়ালার অশেষ কৃপায় এই মহান কবির মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্বে তাঁর সাথে একটি বিস্তারিত এবং ঐতিহাসিক সাক্ষাতের সুযোগ হয়।
১৬ই রমজান, ১৩৫৬ হিজরি মোতাবেক ২২ শে নভেম্বর, ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ ছিল সেই ঐতিহাসিক দিন। আমার ফুফা মাওলানা সাইয়েদ তালহা হাসানির সাথে আমি সেদিন আল্লামা ইকবালের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছিলাম। ভাই মৌলভী সাইয়েদ ইবরাহিম হাসানিও ছিল আমার সাথে। তখন আল্লামা ইকবাল দীর্ঘ অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তবুও তিনি আশ্চর্য উদ্যমতা এবং হৃদ্যতার সঙ্গে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং সময়যাপন করেন। হয়তো আমাদের আগমনের কারণে তিনি সাময়িকভাবে বেশ আনন্দ লাভ করেছিলেন। ফলে সেদিন তাঁর অসুস্থতা ছুটি নিয়েছিল। হাসিখুশি পরিবেশে আমাদের প্রাণখোলা আলাপ হয়েছিল সেদিন।
তাঁর বৃদ্ধ সেবক আলি বখশ একটু পরপরই এসে তাঁকে বেশীক্ষণ বসে থাকতে এবং কথা বলতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু তিনি সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ করেননি। সেদিন তাঁর সাথে নানা বিষয় নিয়ে আমাদের কথার রেলগাড়ি চলছিল। প্রসঙ্গক্রমে আইয়ামে জাহিলিয়াতে কবিতার কথা উঠলে আল্লামা ইকবাল সেগুলোর বাস্তবতা এবং যথার্থতা তুলে ধরেন গতিময়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। দিওয়ানে হামাসা থেকে কিছু পংক্তিও পাঠ করে শুনান।
তিনি বলছিলেন, ইসলাম একজন মানুষকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমলে উদ্যমী করে এবং সত্যানুসন্ধানী জীবনযাপনে আগ্রহী করে। অপরদিকে বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানকে তার সত্যানুসন্ধান এবং ভাবনার দিক থেকে ইসলামের কাছাকাছি মনে হয়। ইসলাম আগমনের দু শতাব্দী পর্যন্ত এই চেতনা জীবিত এবং কার্যকরী ছিল। ফলে সে সময়ের মুসলিমগণ আকিদা ও আমলে এবং জ্ঞানে-গুণে উন্নতির শীর্ষচূড়ায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু গ্রীক দর্শন এসে প্রাচ্যকে রুগ্ন এবং অচল ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। ইউরোপীয় বিশ্বেও দ্বিতীয় বিপ্লব জাগ্রত হয়েছিল যখন তারা নিজেদের কাঁধ থেকে মেটাফিজিক্স তথা অধিবিদ্যার দর্শনের বোঝা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে অধিক উপযোগী জ্ঞানের প্রতি মনোযোগী হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন কিছু বিষয়ের সূত্রপাত ঘটেছে, যেগুলো থেকে ইউরোপ বিশ্বও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। তারা বলেছিল, আরবীয় মেজাজ এবং স্বভাব-প্রবৃত্তি ইসলামের জন্য উপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু অনারব ভাবনা-চিন্তা ইসলামের উপর অত্যাচার করেছে। যেভাবে ইউরোপের উপর অত্যাচার করেছে গির্জা। সামগ্রিকভাবে উভয় ধর্মই যুক্তিগত চিন্তা-চেতনার নাগপাশে বন্দী হয়ে গিয়েছিল।
তিনি তাসাউফের ব্যাপারে কতক সূফীর চিন্তাগত ভ্রষ্টতার সমালোচনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালার ওজুদ তথা অস্তিত্ব এবং শ্রবণ সংক্রান্ত ব্যাপারে এসে বলেন, সাহাবায়ে কেরাম কখনো এ সকল বিষয়ে আলাপ করার চিন্তাই করতেন না। এমন চিন্তা তাদের ভাবনায় উদয় হলে তাঁরা ভয়ে কেঁপে উঠতেন এবং অনুতপ্তবোধ করতেন।
হিন্দুস্তানে ইসলামের নবজাগরণের কথা উঠলে তিনি শাইখ আহমাদ সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফেসানি (রহঃ), শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) এবং সুলতান মুহিউদ্দিন আলমগীর ওরফে আওরঙ্গজেব (রহঃ) প্রমুখগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, আমি সবসময়ই এ কথা বলি যে, যদি এই মনিষীগণের জন্ম না হতো এবং তাঁদের পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টা না থাকত, তাহলে হিন্দুস্তানি সভ্যতা এবং দর্শন কবেই ইসলামের গণ্ডি ছাড়িয়ে যেত।
পাকিস্তানের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা নিজেদের ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে পারে না, তারা নিজেদের ধর্ম এবং সভ্যতা-সংস্কৃতিকেও টিকিয়ে রাখতে পারবে না। ক্ষমতা এবং প্রতিপত্তির মাধ্যমেই কোনো ধর্ম এবং সভ্যতা-সংস্কৃতি টিকে থাকে। তাই পাকিস্তানই হচ্ছে মুসলিমদের সমস্যার একমাত্র সমাধান এবং তাদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানও এই রাষ্ট্র। এর পাশাপাশি তিনি ইসলামে জাকাতের বিধান এবং বাইতুল মাল প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন।
হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তিনি বলেন, কতক মুসলিম নেতৃবৃন্দ অমুসলিমদের মাঝে তাবলিগ করার প্রতি মনোযোগী হওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি মুসলিমদের মাঝেও দাওয়াত চালু রাখতে বলেছেন। বলেছেন আরবি ভাষার উন্নতিসাধন এবং মুসলমানদের জন্য একটি বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। আমার খেয়াল হচ্ছে, মুসলমানদের সার্বিক বিষয়ের প্রতিনিধিত্বের জন্য একটি উচ্চমানের ইংরেজি পত্রিকা চালু করা খুবই প্রয়োজন। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর আওয়াজের মধ্যে শক্তি এবং প্রভাব সৃষ্টি হবে। কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে, মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। মুসলিম জাতির ধেয়ে আসা বিপদ সম্পর্কেও তাদের কোনো টনক নড়েনি। মুসলিম নেতৃবৃন্দের সংকীর্ণ মনোবৃত্তি, অনগ্রসর চিন্তাভাবনা এবং স্বার্থপর মনোভাব নিয়ে তিনি খুবই দুঃখপ্রকাশ করতেন।’
ডক্টর আব্দুল্লাহ চুগতাইয়ের কথাবার্তা দেখে আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে, তিনি এই কথোপোকথনকে হয়তো আরও প্রলম্বিত করতে চাইছেন। কিন্তু আমরা আল্লামা ইকবালের শারীরিক আরামের প্রতি লক্ষ্য প্রস্থানের জন্য অনুমতি চাওয়াকেই সমীচীন মনে করলাম। অতঃপর সালাম বিনিময় করে সেখান থেকে চলে এলাম। সেদিন অথবা তার পরের দিনই আমি লাহোর থেকে চলে আসি।
আমার মনে আছে, সেদিন আমি যখন তাঁর কাছ থেকে তাঁর কবিতা আরবি রূপান্তরের অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি খুবই খুশী হয়েছিলেন। তাঁর অনুমতিতেই ‘যারবে কালিম’ গ্রন্থ থেকে আমার পছন্দের কিছু পংক্তি আরবি রূপান্তর করে শুনিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে জানালেন যে, ডক্টর আবদুল ওয়াহহাব আযযামও আরবি রূপান্তরের ইচ্ছাপোষণ করেছেন।
এর ছয় মাস পর ১৯৩৮ সালের ১২ই এপ্রিল আল্লামা ইকবাল ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ শুনে তাঁর জীবন এবং শিল্প নিয়ে কিছু কাজ করার সংকল্প আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। এ ব্যাপারে আমি মাওলানা মাসউদ আলম সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি। আমরা উভয়েই এ ব্যাপারে একে অপরকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি করি। তিনি আল্লামা ইকবালের জীবন এবং মিশন নিয়ে লেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। আমাকে বলেন তাঁর কবিতাগুলোর আরবি রূপান্তর করতে। কারণ, এ ব্যাপারে তিনি অভিজ্ঞ ছিলেন না। এরপর আমাদের কাজ শুরু হয়ে যায়।
আমার এই মরহুম বন্ধু উস্তাদ মুহিব্বুদ্দিন খতিব সাহেবের তত্ত্বাবধানে মিসর থেকে প্রকাশিত ‘আল-ফাতাহ’ পত্রিকায় আল্লামা ইকবালের ব্যাপারে অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি প্রবন্ধ লিখেন। আমিও তাঁর জীবন নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখি। যা অনেক পরে হেজাজ রেডিও থেকে প্রচারিত হয়েছিল। এরপর দশ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন লেখালেখি এবং শিক্ষকতার ব্যস্ততায় আল্লামা ইকবালকে নিয়ে লেখার এই যজ্ঞ বন্ধ ছিল।
১৯৫০ সালে আমার হেজাজ, মিসর এবং সিরিয়া সফরের সুযোগ হয়েছিল। প্রায় এক বছর আমি সেখানে অবস্থান করেছিলাম। তখন আমি আল্লামা ইকবাল, তাঁর রচনা এবং চিন্তাধারা নিয়ে কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলাম। দারুল উলুম এবং কায়রো ইউনিভার্সিটিতে সেগুলো থেকে পাঠ করেছিলাম।
১৯৫২ সালে সিরিয়া সফরের সময় দামেস্কে বসে আল্লামা ইকবালকে নিয়ে আরেকটি প্রবন্ধ লেখার সুযোগ হয়েছিল। যেটি ‘মুহাম্মাদ ইকবাল ফি মদীনাতির রাসুল’ অর্থাৎ রাসুলের শহর মদীনা মুনাওয়ারায় মুহাম্মাদ ইকবাল শিরোনামে দামেস্ক রেডিও থেকে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু তখনও আল্লামা ইকবালের রচনার আরবি রূপান্তরের যে ইচ্ছাপোষণ করেছিলাম, তাতে মনোনিবেশ করতে পারিনি। এর একটি কারণ ছিল ইতিমধ্যে ডক্টর আবদুল্লাহ আযযাম এ কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। যিনি নিজের আরবি-ফারসি দক্ষতা এবং আল্লামা ইকবালের সাথে চিন্তাগত সম্পর্ক রাখার দরুন এ কাজের জন্য খুবই যোগ্য ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর আরবি রূপান্তরের কিছু সঙ্কলন হাতে এসেছিল। কিন্তু আমার কতক বন্ধু মন্তব্য করেছিল যে, রূপান্তরের মাঝে মূল কবিতার প্রাণ এবং প্রভাব কিছুই নেই। ফলে এর মাধ্যমে আল্লামা ইকবালের চিন্তা-চেতনার সঠিক চিত্রায়ন সম্ভব হয় না এছাড়া আল্লামা ইকবালের শান মোতাবেক এগুলো যথোপযুক্ত নয়।
আমিও সেই রূপান্তরিত কবিতাগুলো দেখে বুঝতে পারি যে, রূপান্তরের মাঝে জ্ঞান-বুদ্ধিমত্তা এবং ছন্দের কোনো কমতি নেই। তবে এর প্রধান অসৌন্দর্য হচ্ছে তিনি ছন্দোবদ্ধ রূপান্তরের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিজের সাথে সুবিচার করতে পারেননি। এর ফলে মূল এবং রূপান্তর উভয় রূপের সৌন্দর্যই ঠিকমতো ফুটে উঠেনি। আবার কোথাও কোথাও ছন্দপতন ঘটে পাঠকের কবিতা পাঠের আনন্দে বিঘ্নতা ঘটিয়েছে।
তাঁর মতো আরবি সাহিত্যিক এবং ফার্সি ভাষী ব্যক্তির জন্য উচিত ছিল প্রথমে আল্লামা ইকবালের চিন্তাধারাকে নিজের মাঝে ধারণ করা। অতঃপর সেগুলোকে আরবি ভাষার পোশাক পরানোর চেষ্টা করা। যেমনটি তিনি মিশরের প্রসিদ্ধ ‘আর-রিসালাহ’ এবং ‘আস-সাকাফাহ’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি সমৃদ্ধ প্রবন্ধে করেছিলেন। বাহ্যতই প্রতিটি ভাষার একটি বিশেষ ঢং, রুচি এবং বর্ণনা ধারা রয়েছে। যেগুলো সে ভাষার ইতিহাস এবং নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহার থেকে জানা যায়। শাব্দিক রূপান্তরের মধ্যে ভাষার সেই বিশেষ রুচি এবং ঢং না থাকে তবে তাতে যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তা সত্ত্বেও ডক্টর আবদুল্লাহ আযযাম ইসলাম এবং ইসলামি সাহিত্যের জন্য এক বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। অবশ্যই তিনি এর জন্য কৃতজ্ঞতা এবং সমাদৃতির যোগ্য। তিনি নিজে ছিলেন আরবি ভাষী। যা ছিল তাঁর উত্তম স্বভাব, দৃঢ়তা, একনিষ্ঠতা এবং ইসলামি চিন্তা-চেতনার প্রতি ভালোবাসা লালন করার দলিল।আল্লামা ইকবালের সৌভাগ্যই বলতে হয় যে, তিনি ডক্টর আবদুল্লাহ আযযামের মতো একজন রূপান্তরকারী পেয়েছিলেন। নিশ্চয়ই ডক্টর আযযামের পরিশ্রম এবং ভালোবাসায় আল্লামা ইকবালের আত্মা খুবই আনন্দিত হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
আমি বলছিলাম যে, নিজের নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে আমি ইকবালের কবিতার আরবি রূপান্তরের কাজে মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। কিন্তু একটি ঘটনায় আমার এই সংকল্পে উৎসাহ যোগ হয়। আমি এ নিয়ে উদ্যমী হয়ে উঠি। দামেস্কের প্রসিদ্ধ এবং সমাদৃত পত্রিকা ‘আল-মুসলিমুন’ এর মধ্যে আরবের প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক আলি তানতাভির লেখা একটি খোলা চিঠি পাঠ করি। যার মধ্যে তিনি আমাকে ইকবালের কবিতার আরবি রূপান্তরের আহ্বান করেন। যেন আরব বিশ্বে আল্লামা ইকবাল পরিচিত লাভ করেন এবং তাঁর কবিতার বার্তাকে সঠিকভাবে পরখ করা যায়।
তিনি লিখেছিলেন, ‘ইকবালের নির্বাচিত কিছু কবিতা রূপান্তর করে আপনি কি আমাদেরকে ইকবাল ও তাঁর চিন্তা-চেতনা, আকিদা-বিশ্বাস এবং তাঁর সৎসাহসকে বুঝার, সেগুলোর রহস্য উন্মোচন করার সুযোগ করে দিবেন? কারণ, তাঁর কবিতার আরবি রূপান্তরসমূহ আমাদের মাঝ থেকে তাঁর অনারব হওয়ার প্রতিবন্ধকতাকে পুরোপুরি দূর করতে পারেনি। তাই আপনি কি মহৎ কাজটুক সম্পাদন করবেন? তাঁর মতো সমুজ্জল ব্যক্তিত্বের চিন্তা-চেতনার মনোরম উদ্যানে ভ্রমণ করার সুবর্ণ সুযোগ থেকে আপনি আমাদের বঞ্চিত করবেন না।’
তাঁর এই অনুরোধে আমার মাঝে উদ্দীপনা জেগে উঠেছিল। তিনি আমার নিভু নিভু এবং ক্লান্ত মস্তিষ্কে সতেজতার বীজ বুনে দেন। এর ফলে এক বসাতেই আল্লামা ইকবালের ‘মসজিদে কুরতুবা’ কবিতাটি রূপান্তর করে ফেলি। ভেতরে ভেতরে আমি তাঁর কবিতা রূপান্তরের এক আশ্চর্য স্পৃহা এবং তাকাজা অনুভব করি। যা আমি অগ্রাহ্য করতে পারিনি। এরপর আমি ধারাবাহিকবভাবে আরও কিছু প্রবন্ধ লিখে ফেলি।
এখানে একটি কথা স্পষ্টা করা প্রয়োজন যে, আমি আল্লামা ইকবালকে কোনো নিস্পাপ, পবিত্র ব্যক্তি মনে করি না। তাঁকে কোনো ধর্মীয় নেতা অথবা ইমাম, মুজতাহিদ হিসেবে দেখি না। আর ইকবালের গোড়া ভক্তদের মতো আমি তাঁর কথাবার্তা এবং রচনাবলীর প্রশংসায় কোনো অতিরঞ্জন করিনি। আমি মনে করি হাকিম সানায়ী, ফরিদুদ্দিন আত্তার এবং জালালুদ্দিন রহিমাহুল্লাহু প্রমুখগণ শরীয়তের আদব রক্ষা করার দিক দিয়ে, নিজেদের ভেতর-বাহিরকে এক রাখার দিক দিয়ে এবং দাওয়াত ও আমলের সমন্বয়ের দিক দিয়ে আল্লামা ইকবাল থেকে অনেক অগ্রে ছিলেন। এমনকি আল্লামা ইকবালের বিশ্বাস এবং দর্শনে এমন কিছু কথাও পাওয়া যায়, যেগুলোর সাথে সহমত পোষণ করা দুস্কর বটে।
কিছু অতি আবেগী যুবক ভক্তদের মতো করে আমি বলব না যে, ইসলামকে তাঁর চেয়ে ভালো করে কেউ বুঝতে পারেনি। তাঁকে ব্যতিত অন্য কেউ ইসলামি জ্ঞান এবং নিগুড় তত্ত্ব পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। বরং সত্য কথা হচ্ছে, আমি আমার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে এ কথাই ব্যক্ত করেছি যে, আল্লামা ইকবাল ইসলামিয়াতের একজন একনিষ্ঠ অনুসন্ধানী ছিলেন এবং নিজের সমসাময়িক ইলমী ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে তিনি বরাবরের মতো উপকার অর্জনে আগ্রহী ছিলেন। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী, মাওলানা সুলাইমান নাদাবি এবং মাওলানা মাসউদ আলম নাদাবি প্রমুখগণের রচনা থেকে তাঁর শিষ্টাচার, বিনয় এবং ইলমি অভিরুচির সন্ধান পাওয়া যায়।
তাঁর বিরল ব্যক্তিত্বের মাঝে এমন কিছু দুর্বল দিকও আছে, যা তাঁর জ্ঞান, রচনা এবং আহ্বানের সাথে মিল রাখে না।
(তাঁর ‘দি রিকনস্ট্রাকশন অব রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম’নামক গ্রন্থে এ ধরণের কিছু চিন্তা পাওয়া যায়। তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সামগ্রক আকিদার সাথে মিল রেখে সেগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা সম্ভব। মাওলানা সুলাইমান নাদাবি রহিমাহুল্লাহুও এমনটি মনে করতেন) যেগুলোকে দূর করার সুযোগ তিনি পাননি। তবে আমি মনে করি যে, আল্লামা ইকবাল হলেন ঐ কবি, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সে সময়কার প্রেক্ষাপট উপযোগী কিছু হুকুম এবং বাস্তবতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যেগুলো সমসাময়িক অন্য কোনো কবি অথবা চিন্তকগণের কাছ থেকে নিঃসৃত হয়নি।
আমার খেয়াল হচ্ছে, পয়গামে মুহাম্মাদী তথা মুহাম্মাদী আহ্বানের স্থায়িত্ব এবং মুসলিম উম্মাহর জোরালো অবস্থান তৈরীর জন্য নেতৃত্বসুল্ভ গুনাবলী অর্জনের বিবেচনায় সমসাময়িক যে চিন্তা এবং দর্শনের প্রয়োজন ছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দৃঢ় বিশ্বাসী। তাঁর চিন্তা-চেতনায় এগুলো স্পষ্ট এবং আরও জোরালো হয়েছে। এই আঙ্গিকেই তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। এদিক বিবেচনায় তিনি দ্বীনী বিষয়ে পড়াশোনা করা আলিমদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন। কারণ, তাঁরা পাশ্চাত্য সম্পর্কে কিছুই অবগত ছিলেন না। পশ্চিমাদের স্বার্থ, উদ্দেশ্য এবং ইতিহাস সম্পর্কে তাদের গভীর কোনো জানাশুনা ছিল না।
আমি আবারও বলছি যে, আমি তাঁকে উচ্চ সাহসিকতা, সূদুরপ্রসারী চিন্তা, ভালোবাসা এবং ঈমানী চেতনার কবি হিসেবে পেয়েছি। আমি নিজের ব্যাপারে এই সাক্ষ্য দেই যে, আমি যখনই তাঁর কোনো কথা পাঠ করেছি তখন আমার ভেতরে চেতনা এবং আবেগ উথলে উঠেছে। অনুভূতির জগতে উঠেছে ঝড়। আমার চলাফেরা এবং কথাবার্তায় এসেছে ইসলামি বীরত্বের মেজাজ। আমার দৃষ্টিতে এটিই হচ্ছে তাঁর কবিতার প্রকৃত মূল্য এবং মর্যাদা।
আমি আল্লামা ইকবাল নিয়ে লেখা গ্রন্থটি আরবিতে রচনা করেছি বেশ কিছু কারণে। প্রথমত আমি দেখেছি যে, মধপ্রাচ্যে পশ্চিমা দর্শন এবং সভ্যতা ক্রমেই প্রভাব বিস্তার করছিল। দেখতে পাচ্ছিলাম, আরব এবং ইসলামি বিশ্ব ক্রমেই প্রাচীন এবং নব্য জাহিলিয়াতের আবর্তে এসে ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিকে ছিল সীমাতিরিক্ত জাতীয়তাবাদী চেতনা, অপরদিকে ছিল স্যোশালিজম এবং কমিউনিজমের বিষ। কবিতা, সাহিত্য, রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক অঙ্গনেও এই বিষাক্ত মতবাদগুলো বেশ ভালো করেই হানা দিয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে রুখে দাঁড়াবার মতো কলম সৈনিকদের সংখ্যা ক্রমেই দুর্লভ হয়ে পড়ছিল। আরব বিশ্বের বার্তাকে অনুধাবন করতে পারবেন, এর সারমর্ম উপস্থাপন করার খেদমত করতে পারবেন এবং নিজেদের চিন্তাগত সকল যোগ্যতাকে জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ব্যয় করতে পারবেন। যারা আসমানী দাওয়াত এবং চারিত্রিক সৌন্দর্যের জন্য জীবন বাজি রাখতে পারবেন। যারা এই চিন্তাগত ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে কাতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন এবং শিক্ষিত প্রজন্মকে নিজেদের দলে ভেড়াতে পারবেন, এমন কলম সৈনিকদের অভাবে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছিল।
পশ্চিমা চিন্তাধারার এই বিষাক্ত এবং কলুষিত পরিবেশ আর নিজেদের মূল্যবোধ ও যোগ্যতা এবং নিজেদের মিশন ও দাওয়াতী অবস্থান তথেকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন প্রজন্মের দিকে লক্ষ্য করে এই মহান কবির মূল্য এবং মর্যাদা নিঃসন্দেহে অনেকগুন বেড়ে যায়। যিনি জন্মেছিলেন ইসলাম সম্পর্কে প্রায় অজ্ঞ এক নওমুসলিম ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মেছিলেন এমন এক দেশে যেখানে ছিল ফিরিঙ্গী তথা ইংরেজ সভ্যতার রাজত্ব। তিনি সমসাময়িক এবং পাশ্চাত্যধারার বড় বড় ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষা লাভ করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুহাম্মাদী চেতনা এবং ইসলাম ধর্মের উপর তাঁর বিশ্বাস ক্রমেই মজবুত হয়েছে।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিত্ব, তাঁর উম্মাতের যোগ্যতা এবং তাদের ভবিষ্যতের উপর তাঁর নির্ভরতা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলাম ধর্মের শ্বাশ্বত চেতনা লালন এবং পাশ্চাত্য চিন্তাধারা ও সভ্যতার প্রতি ঘৃণাপোষণ পরিণত হয়েছিল তাঁর স্বভাবে। নিজের শাস্ত্রীয় সকল যোগ্যতাকে তিনি এই চিন্তা এবং বিশ্বাসের পথেই ব্যয় করেছিলেন। ফলত তিনি পরিণত হয়েছিলেন ইমানি চেতনা এবং দার্শনিকতায় দক্ষতা অর্জনের রোল মডেলে। নিজের চিন্তাধারা দিয়ে তিনি উপমহাদেশের জনসমুদ্রের মাঝে সৃষ্টি করেছিলেন এক মহাপ্লাবন। যার ঢেউ ভারত মহাসাগর ছাড়িয়ে আরব সাগরের তীরে এবং ইসলামি বিশ্বের ভূখণ্ডেও আঘাত হেনেছিল।
তাই বর্তমান মুসলিম বিশ্বের নতুন প্রজন্ম এবং আরব বিশ্বের উদীয়মান তরুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার খোরাক হিসেবে আল্লামা ইকবালকেই সবচেয়ে উত্তম উপহার হিসেবে উপযুক্ত মনে করলাম। আশা করি, তাঁকে নিয়ে অধ্যয়ন করে তাদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনার ঝড় জাগবে, ভেঙ্গে যাবে অলসতা এবং অন্যমনস্কতার ঘুম। ঘুমিয়ে পড়া আত্মমর্যাদাবোধ এবং চেতনা জাগ্রত হবে। তাদের চিন্তা এবং সাহিত্য মোড় নিবে এক নতুন ভুবনের দিকে।
The post আলী নাদাবির ইকবাল পাঠ appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%80-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a0/
No comments:
Post a Comment