Tuesday, April 27, 2021

আলোর পথের রাহবার (সপ্তম পর্ব)

[হযরত মাওলানা সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি (র)-এর জীবন ও কর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ]

মূল : মুহাম্মাদ হাসান আনসারি
ভাষান্তর : মওলবি আশরাফ

আরবি ভাষার খেদমত ও দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা

হজরত মাওলানা আবুল হাসান নদবি ১৮ জুন ১৯৬১ সালে নদওয়াতুল উলামা লখনৌ-এর পরিচালকের পদে নির্বাচিত হন। তাঁর পরিচালনার সময়ে আল্লাহ অনুগ্রহে দারুল উলুম নদওয়ার আশ্চর্য প্রগতি ও যুগোপযোগিতা অর্জন হয় এবং অসংখ্য কালোত্তীর্ণ কৃতী মনীষীদের রত্নপ্রসবা হয়ে ওঠে। ফলে আজ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে নদওয়াতুল উলামা আপন নামযশ নিয়ে ইসলামের খেদমতের সৌভাগ্য অর্জন করেছে। এবং এই প্রতিষ্ঠানটি একটি আলিশান ইসলামি দূর্গ হয়ে ওঠেছে। ইসলাম প্রচার-প্রসারে নেতৃত্ব দেবার সংকল্পে শুধু ভারতের বিভিন্ন জনপদ থেকে নয়, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া নেপাল থাইল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা ত্রিনিদাদ উগান্ডা ব্রুনাই ইত্যাদি দেশ থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা আসছে।

মধ্যপ্রাচ্যের প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক ও ইসলাম প্রচারক আলি তানতাবি লিখেন :

‘মিশরের জামিয়া আজহার এক দীর্ঘ সময় ইসলামের খেদমত করে এখন পিছিয়ে পড়েছে। অখণ্ড ভারতে দারুল উলুম দেওবন্দকে জামিয়া আজহারের আদলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, শিক্ষাপদ্ধতিতে নতুন দিন-দুনিয়ার বিষয়আশয় ছিল না, অপরদিকে স্যার সৈয়দ আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন পুরোপুরি আধুনিক ইউরোপীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুকরণে। দারুল উলুম নদওয়া এই তিন প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যতিক্রম, মধ্যমপন্থী পথ অবলম্বনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠান না দেওবন্দ ও প্রাচীন জামিয়া আজহারের মতো প্রাচীনপন্থী, আর না আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বস্তুবাদী ও আধুনিকতার পূজারী। দারুল উলুম নদওয়া উভয় ধারা থেকে উপকৃত হয়, উভয়ের সৌন্দর্য গ্রহণ করে, উভয়ের অপছন্দনীয় দিক এড়িয়ে গিয়ে এক আশ্চর্য ভারসাম্য রক্ষা করে। নদওয়া আধুনিক মননে ইসলামি গড়ন দানের এক নতুন একসপেরিমেন্ট, আল্লাহ যাকে কামিয়াবি দান করেছেন। যে ব্যক্তিত্বকে এই একসপেরিমেন্টের সফল নমুনা বলা যায়, তিনি সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি। তিনি প্রতীচ্য থেকে খুঁটেখুঁটে ভালো দিক যেমন নিয়েছেন, তেমনই সমন্বিত করেছেন প্রাচ্যকে। তিনি আরবি উর্দু ও ইংরেজি তিন ভাষাতেই সমুন্নত ধারণা রাখতেন, ফলে ইসলাম প্রচারে তাঁর জবান গোটা দুনিয়াকে শামিল করেছিল।
ভাই আবুল হাসান, আপনি ও আপনার অনুসারীবৃন্দ নিজেদের পথে যেন অনড় থাকে। আমার এই মুহূর্তে আর কোনো ইসলাম প্রচারককে আপনার চেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও ওজনদার মনে হয় না।’[১৪]

১৯৯৭ সালে লাখনৌ সফরকালে পবিত্র কা’বার ইমাম শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আসসুবাইল বলেন,
“‘আল্লাহর রসুল (স) ইরশাদ করেন— ইসলামি জ্ঞান প্রত্যেক সময়ে এমন সব লোক (আলেম) বহন করবে যাঁরা ভারসাম্যপূর্ণ খোদাভীরু ও আমানতদার হবে। তাঁরা ইসলামি জ্ঞানকে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে, বিভ্রান্তদের মিথ্যারোপ থেকে, এবং জাহিলদের অপব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করবে।’ আমি মনে করি মাওলানা আবুল হাসান আলি নদবি সেইসব সৌভাগ্যবান প্রকৃত আলেমদের একজন যাঁদের কথা এই হাদিসে বলা হয়েছে। এবং তিনি ধ্যানে-জ্ঞানে-বদনে ঠিক সেই কাজেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, হাদিসে আলেমের গুণে আল্লাহর রসুল (স) যা বলেছেন।”[১৫]

দারুল উলুম নদওয়ার সম্মানিত শিক্ষক মাওলানা সায়িদুর রহমান আ’জমি নদবি বলেন, ‘নদওয়াতুল উলামায় মাওলানা আবুল হাসান আলি নদবির চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। বিশেষত আরবি সাহিত্যে ও ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে অসম্ভব সাফল্য করতলগত হয়েছিল। মহান আল্লাহ হজরত মাওলানাকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্য দান করেছেন, তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য এক নতুন রূপ দান করেছিলেন।…’

১৯৫৫ সালে হজরত মাওলানার সম্পাদনায় মাসিক ‘আল বা’সুল ইসলামি’ এবং এর চার বছর পর পাক্ষিক ‘আর রাইদ’ নদওয়াতুল উলামায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যচর্চার স্বর্ণযুগ এনেছিল। যার ফলেই পরবর্তীতে পাক-ভারত-বাংলাদেশে মধ্যমপন্থী প্রগতিশীল আলেমদের জয়যাত্রা শুরু হয়।

টীকা :
[১৪] ‘আশ শারকুল আওসাত’, ডিসেম্বর/১৯৮৬
[১৫] ‘তা’মিরে হায়াত’, নভেম্বর/১০/১৯৯৭

The post আলোর পথের রাহবার (সপ্তম পর্ব) appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%a5%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%aa%e0%a6%b0/

No comments:

Post a Comment