Monday, June 13, 2022

বেফাকের সনদ উত্তোলনে ভোগান্তি: কমছে না বাড়ছে?

মুনশী নাঈম:

বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকে গতানুগতিক পদ্ধতিতে একাডেমিক সনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। এই অবস্থার উত্তরণে অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্ট মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমাঝেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। কর্তৃপক্ষ বলছেন, টেকনিক্যাল সমস্যা ও সম্পৃক্ত দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই পদ্ধতিটি এখনো গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই শিক্ষার্থীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে শিগগিরই এ সমস্যাটি কাটিয়ে উঠবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাধারণ নিয়মে বোর্ডে সনদ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর উক্ত সনদ মাদরাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। যেন পরীক্ষার্থীগণ মাদরাসা থেকে সহজে সনদ সংগ্রহ করতে পারেন। যদি মাদরাসায় পাঠানো না হয় এবং পরীক্ষার্থীদের সনদের প্রয়োজন হয়,  তাহলে মূল সনদ উঠানোর জন্য অনলাইন থেকে সনদ আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে তথ্য পূরণ করে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার মুহতামিম/নাযিমে তালীমাতের দস্তখত ও সীলসহ জমা দিতে হয়। মূল সনদে ফি দিতে হয় না। মূল সনদ তৈরী না হলে সাময়িক সনদ উত্তোলন করতে সনদ আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। এভাবে মূল সনদ হারিয়ে গেলে ডুপ্লিকেট সনদ এবং নম্বরপত্র তুলতেও ১০০ টাকা ফি দিতে হয়।

কয়েকজন ছাত্র অভিযোগ করে ফাতেহকে জানিয়েছেন, সনদ তুলতে গিয়েই মূলত তারা বিরূপ ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বেফাকের অফিসে। কেউ বলেছেন ঠিকমতো সহযোগিতা পাননি, কেউ বলেছেন আপমানের শিকার হয়েছেন। স্বজনপ্রীতিরও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। বিগত সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে অনেকে ক্ষোভ করেছেন।

বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের সনদ বিষয়ক ভোগান্তির কথা অস্বীকার করেননি। ফাতেহকে তিনি বলেন, বেফাক এবং হাইয়াতুল উলয়ার নিয়মগুলো প্রায় কাছাকাছি। দুটো সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। আলাপ-আলোচনা চলছে। পূর্ণ সমন্বয় হয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ এ ভোগান্তি থাকবে না।’

তবে বেফাক অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা সনদ তুলতে আসেন, তারা ঠিকঠাক ফরম পূরণ করে আসেন না অনেকেই। সনদ তোলার জন্য কী কী লাগবে, তা সব জানিয়ে দেয়া আছে। তবুও অনেকেই ভুল করেন। বারবার দেখিয়ে দেয়ার পরও। অনেকে ঠিকঠাক নিয়ম না মেনে আসলে ফিরিয়ে দিলে সেটাই হয়ে যায় বিরূপ ব্যবহার। সবসময় কাজের চাপ থাকে। সবসময় সবকিছু দেখিয়ে দেয়ার সময় থাকে না।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে কর্মকর্তাদের এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। লেখক ও সম্পাদক আহমাদ সাব্বির সোমবার দুপুরে এক স্মৃতিচারণে বলেন, দাওরা, কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ ধাপ পেরুনো বহু মানুষ সাধারণ ফরম ফিলাপের কাজটাই ঠিকঠাক করতে পারছে না। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও বহুবার, বহুভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তবু সহজ থেকে সহজ বিষয়টাও তাদের অনেকের মাথায় ঢুকছে না। কোথায় বাবার নাম লিখতে হবে, এক ঘরে বাংলা তো আরেক ঘরে আরবিতে, এসব বিস্তারিতভাবে ফরমে নির্দেশ করাই আছে, তবু তারা নিজের থেকে এই কাজটুকুই করে উঠতে পারছে না। নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে লেখা আছে, সনদ উত্তোলনের জন্য কী কী জরুরী কাগজ সাথে আনতে হবে। তবু তাদের দেখলাম, কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি আনেনি, কেউ আবার দাওরার প্রবেশপত্র ছাড়াই চলে এসেছে। বারবার এগুলো বুঝিয়ে দেয়া, হাতে কলমে দেখিয়ে দেয়া–এগুলো একটা বোর্ডের ব্যস্ত অফিসের জন্য বিরক্তিকরই। তবু দায়িত্বশীলদের দেখলাম, হাসিমুখেই খুবই আন্তরিকভাবে তারা সবাইকে সহায়তা করছেন।

দারুল ইরশাদের প্রতিষ্ঠাতা মনজুরুল করিমও এমন একটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

অনেকে ভুল করলেও ভুল না করেও বিরূপ ব্যবহারের শিকার হন অনেক শিক্ষার্থী। এটাও সত্য। বেফাকের মহাপরিচালক ফাতেহকে বলেন, আমরা অফিসের কর্মকর্তাদের সবসময় বলি, আপনারা সেবা দেবার জন্য এখানে বসেছেন। অনেক ধরণের লোক আসবে। অনেক ধরণের ভুল নিয়ে। কিন্তু আপনাদেরকে সেবাটা দিতে হবে ঠিক করে। কারো প্রতি বিরূপ আচরণ করা যাবে না। আমাদের নির্দেশনার পরও কেউ কেউ বিরূপ ব্যবহার করে থাকে। সব মানুষ তো সমান না।’[

কোনো কর্মকর্তা বিরূপ ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা, জানতে চাইলাম। বেফাকের মহাপরিচালক বললেন, আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে, আমরা তার ব্যবস্থা নেই। পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেবার পর বিষয়গুলো গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আলহামদুলিল্লাহ উন্নতি হচ্ছে।’

পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন তরুণ আলেমগণ। লেখক ও সম্পাদক হামমাদ রাগিব বলেছেন, ‘মাস চারেক আগে গিয়েছিলাম বেফাক অফিসে। রিসিপশনে থাকা হাসিমুখ তরুণ মাওলানার পেশাদার কিন্তু অমায়িক আচরণ আমাকে বিশেষ মুগ্ধ করেছে।’ নাবিল আহমাদ বলেছেন, ‘আমিও গতকাল আমার মার্কশীট তুলতে গিয়েছিলাম। তাদের নির্দিষ্ট সময় পেরুবার পরে-ও তারা আমাকে হেল্প করেছেন।’ তরুণ আলেম আব্দুল্লাহ হাশেম বলেন, আমার নিজের অভিজ্ঞতাও খুব ভালো। বেফাক ও হাইয়া, দুইখানেই দায়িত্বশীলদের থেকে সুন্দর আচরণ পেয়েছি। কিছু কিছু লোককে এমন সব জটিল ও উদ্ভট সমস্যা নিয়ে হাজির হতে দেখেছিলাম যে, আমার নিজেরই মেজায খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তবে দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতা ছিলো বলার মতো। লেখক ও শিক্ষক আলামিন ফেরদাউস বলেছেন, তিনি তিন-চারবার বেফাকের অফিসে গিয়ে সহজ সমাধান পেয়েছেন।

কেউ কেউ বেফাকের অফিসে বিরূপ ব্যবহার পেয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি কেউ কেউ ভালো ব্যবহার পেয়েছে, এটাও সত্য। সবকিছু ছাপিয়ে বেফাক মহাসচিবের পরামর্শ হলো, ‘যে যেই কাজে আসবে, সে যেন ওই কাজের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন। সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও যদি বিরূপ ব্যবহারের শিকার হন কেউ, তাহলে অভিযোগের দরজা খোলা আছে। মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে বেফাক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু মৌখিক অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না।’

The post বেফাকের সনদ উত্তোলনে ভোগান্তি: কমছে না বাড়ছে? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a6%a6-%e0%a6%89%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%b2%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%ad%e0%a7%8b%e0%a6%97/

No comments:

Post a Comment