Monday, July 18, 2022

কতটা কাজে আসছে দাওরার সার্টিফিকেট?

রাকিবুল হাসান:

কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি মাস্টার্স ডিগ্রি সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার ছয় বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল কওমি ঘরানার শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামকে গণভবনে দাওয়াত করে নিয়ে এই স্বীকৃতি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বীকৃতি প্রদানের পর কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সকল শিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে প্রতি বছরই দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এই সার্টিফিকেটের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় এবং হতাশায় আছে কওমি শিক্ষার্থীরা। এমনকি এই সার্টিফিকেট কার্যকর করার লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপও নেই কওমি কর্তৃপক্ষের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সরকার এমন মান দিয়েছে যেটি আমাদের কোনো কাজে আসে না। আমরা বেসরকারি নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিসিএস, এমনকি কোনো কর্মচারী পদেও আবেদন করতে পারছি না। সরকার মান দিয়েছে ৬ বছর হলো। কিন্তু তিন পয়সার কার্যকারিতা কেউ পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া নতুন ধারার মাদরাসা দারুল আরকামে নতুন সার্টিফিকেটের কল্যাণে এক হাজারের মতো কওমি আলেমকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল স্বীকৃতি দেবার পরের বছরই। এর বাইরে সরকারি কোনো চাকরিতে এই সার্টিফিকেট দিয়ে জয়েনের এখনও কোনো সুযোগ পরিলক্ষিত হয়নি।

মন্ত্রণালয় কী বলছে?

সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ায় দাওরায়ে হাদিসের নতুন এ সার্টিফিকেট নিয়ে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে কর্মক্ষেত্রে এ সার্টিফিকেট কতটা কার্যকরী তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকে গেছে। এই সার্টিফিকেটের অধিকারীরা সরকারিভাবে ঠিক কী কী চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন, এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না কেউ।

তবে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান ফাতেহকে বলেন, ‘সরকার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন সব ক্ষেত্রেই তারা তাদের সার্টিফিকেট শো করতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই।’ সার্টিফিকেট শো করেও অনেক শিক্ষার্থী কার্যকারিতা পচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখুন, বিসিএসে বা অন্য চাকরিতে যোগ্যতার একটা ব্যাপার থাকে বিভাগওয়ারি। সেই শিক্ষাটা না থাকলে তো আপনি আবেদন করতে পারবেন না। আর্টস পড়ে তো বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে আপনি কাজ করতে পারবেন না। ইসলামি বিষয়গুলোতে তারা সুযোগ পাবে। এই সুযোগ সরকারই দিয়েছে।’

সরকার কওমি মাদরাসার দাওরার মান মাস্টার্স দিলেও এ দিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার আবেদন করা যায় না। কেননা এই সনদের মান সম্পর্কিত কোনো ডাটা বাইরের রাষ্ট্রের সার্ভারে নেই। এই প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘কেউ যদি সমস্যায় পড়ে, আমাদেরকে জানালে আমরা দেখব। যতটুকু জানি, সমস্যা হবার কথা না।’

ইউজিসি কী বলছে?

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপপরিচালক মো. রুকনুজ্জামান এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। দাওরার সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমফিল করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
সরকার মাস্টার্সের সমমান স্বীকৃতি দিলেও দাওরার সর্টিফিকেট দিয়ে বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন করা যায় না কেন, জানতে চাওয়া হয় ইউজিসির ক্রস বর্ডার হায়ার এডুকেশন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে। তারাও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
উদ্যোগ নেই হাইয়াতুল উলয়ার

সার্টিফিকেটের কার্যকারিতা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের। মাঝেমধ্যে বোর্ডে এটা নিয়ে আলাপ হয়, কিন্তু কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না।

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব এবং আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটির সদস্য হযরত মাওলানা মুফতী নূরুল আমীনের সঙ্গে কথা হয়। ফাতেহকে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত সার্টিফিকেটের কার্যকারিতা নেই। অতিরিক্ত সচিবের বক্তব্যের কথা শোনালে তিনি বলেন, সচিব এই কথা কেন বললো জানি না। তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা এই সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন চাকুরি এবং পরীক্ষায় গিয়েছে। কিন্তু সার্টিফিকেট গ্রহণ করা হয়নি। পরে ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলে তারা কোনো সুরাহা করেনি। এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরিয়েছে কেবল।’

সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া সরকারের কাছে সার্টিফিকেট কার্যকর করার কোনো আবেদন করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এখনো করেনি।’ কেন শিক্ষাবোর্ড সার্টিফিকেট কার্যকর করার পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পদক্ষেপ নিব। মাঝেমধ্যে বোর্ডে এটা নিয়ে আলাপ হয়। কিন্তু কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। ঈদ গেলো, তারপর আরও কিছু ব্যস্ততা আছে। সব শেষ হলে আমরা হাইয়াতুল উলয়ার সব সদস্যকে নিয়ে আলোচনা করব বিষয়টি নিয়ে।’

তাহলে কি অল্প সময়ের মধ্যেই সার্টিফিকেট কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন? মুফতী নূরুল আমীন বলেন, ‘খুব অল্প সময় বলা যাবে না। তবে আমরা আলোচনা করব। আলোচনা করে উপর মহলে জানাব।’

স্বীকৃতির ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সার্টিফিকেট কার্যকর করার বিষয়টি রয়ে গেছে অমিমাংসিত। কবে মিমাংসা হবে, কবে আলাপ উঠবে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো আশার কথা শোনাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেকদিন।

 

The post কতটা কাজে আসছে দাওরার সার্টিফিকেট? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%93%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%a8/

No comments:

Post a Comment