নাসিম ইমরান:
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের তথ্য মতে বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াট হলেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে (২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল) ১৪,৭৮২ মেগাওয়াট। বিভিন্ন কারণে সক্ষমতার ১০০ % উৎপাদন সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা বিভাগ পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতউল্লাহ বলছেন বর্তমান আমাদের আসল বিদ্যুৎ চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক ৫৩ %, ফার্নেস তেলভিত্তিক ২৬ %, ডিজেলভিত্তিক ৬ %, কয়লাভিত্তিক ৮ %, হাইড্রো ১ %, অন-গ্রিড সৌর ১ % (অনেক দেশ ৫০ % উৎপাদন করে সৌর থেকে) এবং বিদ্যুৎ আমদানি হয় ৫ %।
পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ প্রায় ৬ টাকা। এরমধ্যে জ্বালানি খরচ গড়ে ৪ টাকা এবং ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২ টাকা ধরা হয়।
বর্তমান জ্বালানি সংকট শুরুর আগে নিয়মিত প্রায় ১৩-১৪+ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যায়ের পরেও জ্বালানি তথা কয়লা, গ্যাস, ডিজেল ইত্যাদি বাবদ নিয়মিত খরচ হয়।
স্পট মার্কেটে গ্যাসের মূল বৃদ্ধির অজুহাতে দূর্নীতি-অবশিষ্ট ভঙ্গুর রিজার্ভ বাচাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে অসহ্য লোডশেডিং এর গ্যাড়াকলে পিষ্ট করা হচ্ছে দরিদ্র-মধ্যবিত্ত জনগণকে।
বাংলাদেশের গ্যাস চাহিদার ৭৫ % উৎপাদন হয় দেশেই। বছরের শুরুতে যার বাজার মূল্য ছিল ইউনিট প্রতি ২ ডলার। বাকি ২৫ % আমদানী করতে হয়। কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে ইউনিট প্রতি ১১ ডলারে আমদানি করা হয় ১৯-২০ %। আর স্পট মার্কেট থেকে কেনা হয় ৫-৬ % যার বাজার মূল্য বছরের শুরুতে ছিল ইউনিট প্রতি ৩৫ ডলার। এবং দূর্নীতিটা মূলত হয় এখানেই, তাই এখন স্পট মার্কেট থেকে কেনা হচ্ছে ৯-১০ %।
কিন্তু সোলার প্যানেল স্থাপনের ব্যায়ের পরে যদিও কিছু খরচ রয়েছে তবে জ্বালানি বাবদ কোন খরচ নাই। ১ কিলোওয়াট খুচরা সোলার প্লানের মূল্য ৮০ হাজার টাকা হিসেবে ১৫ হাজার মেগাওয়াট সোলার প্যানেলের মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা পাইকারিতে যা আরও কমে আসবে।
যেখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ না নিয়েই পাঁচ বছরে শুধু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের বিল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। সেখানে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা বিশেষ কিছু নয়। বিনিময়ে পাওয়া যাবে দিনের গড়ে প্রায় ১২ ঘন্টা ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বা মোট চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি, কেননা রাতে চাহিদা কম থাকে।
কিন্তু এই পরিমাণ সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য প্রয়োজন বিশাল জায়গার। ১ শতাংশ জায়গায় ৪ কিলোওয়াট সোলার স্থাপন হলে ১ মেগাওয়াটের জন্য প্রয়োজন ২.৫ একর জমি। মহাসড়কের ২৫-৩৫ ফুট (সাধারণ গাছের লম্বা পরিমাণ) উপরে পোল মারফত ১০ মিটার চওড়া সোলার প্যানেল স্থাপন করলে ১ কিলোমিটার সড়কে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়কের সর্বমোট দৈর্ঘ্য – ৩৯০৬.০৩ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়কের সর্বমোট দৈর্ঘ্য – ৪৪৮২.৫৪০ কিলোমিটার, জেলা সড়কের সর্বমোট দৈর্ঘ্য – ১৩২০৬.৯২৩ কিলোমিটার। সর্বমোট সড়কের দৈর্ঘ্য – ২১,৫৯৫.৪৯৩ কিলোমিটার। যেখানে আমাদের চাহিদারও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
এ পন্থায় যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো কমিয়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করবে। তেমনই জ্বালানি আমদানি কমিয়ে রিজার্ভ সমৃদ্ধ হবে, বিদ্যুৎ খ্যাত স্বনির্ভর হবে। আর পুরো মহাসড়কে সোলারের ছাঁয়া তো আছেই।
বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার মনে করি।
The post বিদ্যুৎ উৎপাদন : জ্বালানি সংকটের সম্ভাব্য সমাধান appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a7%8e-%e0%a6%89%e0%a7%8e%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%a8-%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf/
No comments:
Post a Comment