Monday, July 25, 2022

আরবিতে শিক্ষাদানের নির্দেশনা মানছে না আলিয়া মাদরাসাগুলো

রাকিবুল হাসান নাঈম:

দেশের ফাযিল, কামিল ও আলিম মাদরাসাগুলোতে আরবিতে শিক্ষাদানের নির্দেশনা থাকলেও বড় কয়েকটি মাদরাসা ছাড়া সে নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ মাদরাসা। আরবি মূল কিতাব বাদ দিয়ে পড়ানো হচ্ছে বাংলা গাইড। এমনকি মাদরাসার লাইব্রেরীতে খুঁজেও আরবি মূল বইগুলো পাওয়া যায় না অনেক মাদরাসায়। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, দক্ষ শিক্ষকের অভাবেই এমনটা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে থাকলেও শিক্ষক সংকটের কারণে পারা যায় না।

গত মাসে দেশের ফাযিল, কামিল ও আলিম মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকদের ক্লাসে আরবিতে লেকচার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমিন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ক্লাসে পাঠদানের সময় আরবি বিষয়ের শিক্ষকদের কর্তৃক প্রতিদিন কমপক্ষে দশ মিনিট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরবিতে লেকচার বা বক্তব্য দেয়া এবং প্রয়োজনে তার অনুবাদ বলে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া আরবি বিষয়ের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আরবিতে কথোপকথনে উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আরবি মূল কিতাবের ইবারত পড়া (রিডিং পড়া) নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক মূল বই (কিতাব) থেকে পাঠদান করছে কী-না তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে চাহিদা মোতাবেক সব শ্রেণির মূল আরবি কিতাব ও রেফারেন্স কিতাব থাকা নিশ্চিত করাসহ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মূল কিতাব সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার আকবারুল উলুম ফাজিল মাদরাসায় এখনো ফাজিল খোলা হয়নি। অচিরেই খোলা হবে। তবে আলিমে বাংলা মাধ্যমেই পড়ানো হয়। আরবি মূল বই কেউ ধরেনও না। না শিক্ষক, না শিক্ষার্থী। এমনকি মাদরাসাটির লাইব্রেরীতেও নেই মূল বইগুলো। কথা হয় মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বেলাল হুসাইনের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে জানান, ‘দক্ষ শিক্ষক সংকটের কারণে আরবি মাধ্যমে পড়ানো যায় না। আর শিক্ষার্থীরা দাখিল পর্যন্ত সরকারি বইগুলো পড়ে। সেগুলো কিন্তু বাংলাতেই। সুতরাং শিক্ষার্থীরা দাখিল পাশ করলেও আরবিতে তেমন দক্ষ হয় না। ফলে মূল আরবি বই পড়ালে তারা কিছুই বুঝবে না। তাই বাংলাতেই পড়ানো। দক্ষ শিক্ষক থাকলে পড়াতে তো অসুবিধা নেই।’

বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হয় কুমিল্লা চৌওয়ারা ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসাতেও। সেখানে আলিম এবং ফাজিলের বইগুলো পড়ানো হয় বাংলায়। আরবি মূল বইগুলো পড়ানো হয় না। মাদরাসার ফাজিলের শিক্ষার্থী সাদমান বলেন, ‘বাংলাতেই এখানে সব পড়ানো হয়। মূল আরবি বই পড়ানো হয় না।’

ফাযিল, কামিল ও আলিম মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকদের ক্লাসে আরবিতে অন্তত ১০ মিনিট লেকচার দেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে। সেটাও মানা হয় না পূর্ণাঙ্গ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা আলিয়াতে আরবি আদব বিভাগের শিক্ষকরা কেবল আরবিতে লেকচার দেন। বাকিরা লেকচার অধিকাংশ দেন বাংলাতে। তবে আরবি মাধ্যমে পাঠদানের হার ঢাকা আলিয়াতে অন্য মাদরাসার তুলনায় বেশি। ঢাকা আলিয়ার কামিলের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ তামিম ফাতেহকে বলেন, হাদিস-তাফসির এবং আদবে আরবি লেকচার দেন শিক্ষকরা। তবে যারা আদবের শিক্ষক, তারাই বেশি দেন। শিক্ষকরা ক্লাসে আরবি মূল বই নিয়েই বসেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা সবাই মূল বই নিয়ে বসে না।’

তবে দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় আলিম থেকে আরবিতেই পাঠদান করা হয় বলে জানিয়েছেন মাদরাসার উপাধ্যক্ষ জনাব মোহাম্মাদ জহীরুল ইসলাম। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘দাখিল পর্যন্ত সরকারি বাংলা বই পড়ানো হয়। আলিম থেকে পড়ানো হয় আরবি মূল বই।’

আরবিতে পাঠদানের নির্দেশনা থাকলেও তা অনেকেই মানছে না। ফলে যোগ্য হয়ে উঠছে না শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সরকারিভাবে তা তদারকি করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ.কে.এম লুৎফর রহমান ফাতেহকে বলেন, ‘নির্দেশনা দিয়েছি ছাত্রদের যোগ্য করে তোলার জন্য। তদারকিরও ব্যবস্থা আছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তা তদারকি করেন। আমরাও তদারকি করি যখন পরিদর্শন করি।’

আরবিতে পাঠদানের জন্য দরকার যোগ্য শিক্ষক। কিন্তু আরবিতে পাঠদান না করানোর পেছনে অধ্যক্ষরা যোগ্য শিক্ষক সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। এ প্রশ্নের জবাবে লুৎফর রহমান বলেন, এটা একটা ব্যাপার। বিষয়টা আমরা দেখব। কিছু আবেদন জমা পড়েছে। তাছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে আমরা বলে দিয়েছি, ক্লাসগুলোতে আরবি ব্যাকরণ জানা দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ করতে পারবে। সংকট হলে আশু পদক্ষেপ হিসেবে এই পন্থাটা তারা অবলম্বন করতে পারেন।

The post আরবিতে শিক্ষাদানের নির্দেশনা মানছে না আলিয়া মাদরাসাগুলো appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a6/

No comments:

Post a Comment