আবদুল্লাহিল বাকি:
কারাগার সাহিত্য বা Prison literature বিশ্বসাহিত্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারাগার সাহিত্য নিয়ে বেশ কিছু গবেষণার দরুণ, এর একটা একাডেমিক রূপ পেয়েছে। বিভিন্ন সংজ্ঞাও তৈরি হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবে বলা যায়, প্রিজন লিটারেচার হল, লেখকের ইচ্ছাবিরুদ্ধ জেলখানায় কিংবা অন্য কোন আবদ্ধ স্থানে বন্দিদশায় বসে লেখা সাহিত্য। অথবা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কারাগারের কাহিনী ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ফিকশন, নন ফিকশন ইত্যাদি তৈরি করা। অনেকে আবার ওই সাহিত্যকেও প্রিজন লিটারেচারের অংশ মনে করেন, যেই সাহিত্য লেখার দায়ে কারাগারে যেতে হয়েছে।
বিশ্বসাহিত্যে প্রিজন লিটারেচার
কারাগার সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীন সম্পদ হিসেবে আমরা রোমান দার্শনিকের রাজনীতিবিদ সেভেরিনাস বোথিয়াসের লেখা Consolation of Philosophy (দর্শনের সান্তনা) বইটা দেখি। বইটা লেখা হয়েছে ৫২৪ খৃ. কারাগারে বসে। মধ্যযুগের খৃস্টসমাজে এই বইটার প্রভাব ছিল গভীর। এই প্রভাব বাকি থাকে আলোকায়নের যুগ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। এখন এটি অন্যতম ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের মর্যাদায় উন্নীত। ইতালির বিখ্যাত কবি দান্তে আলিগিয়েরি (১২৬৫-১৩২১ খৃ.) ফ্লোরেন্সে নির্বাসনের শেষ দিকে বসে বসে লিখেছিলেন জনপ্রিয় দার্শনিক উপন্যাস ডিভাইন কমেডি। এছাড়াও খৃস্টধর্মের সংস্কারক প্রোটেস্ট্যান্ট ধারার প্রতিষ্ঠাতা মার্টিন লুথার ওয়ার্টবার্গ কারাগারে বসেই নিউ টেস্টামেন্ট অনুবাদ করেছিলেন জার্মান ভাষায়।
শেখ মুজিবুর রহমানও তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ জেলে বসে লিখেছেন। কারাগৃহেই মিগুয়েল দ্য সর্ভেন্তিস ‘দন কিহোতে’-বইয়ের প্রথম খণ্ড লেখেন। এছাড়াও জনপ্রিয় কারাগার সাহিত্যের মধ্যে আছে কবি নাজিম হিকমতের ‘জেলখানার চিঠি’, মার্কসবাদের সংস্কারপন্থী দার্শনিক অ্যান্তনিও গ্রামসির ‘প্রিজন নোটস’, জওহরলাল নেহরুর ‘আত্মজীবনী’, ‘গ্লিম্পসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি’, ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি।
ফরাসি বিপ্লবের কালে মার্কি দ্য সাদ তার জীবনের সাড়া জাগানো উপন্যাসগুলো লেখেন লুনাটিক অ্যাসাইলামে বন্দি অবস্থায়। চরম অন্তর্ঘাতমূলক ‘১২০ ডেজ অব সোদোম’ বা ‘জুলিয়েট’ বেকায়দায় ফেলে দেয় ফরাসি সরকার থেকে শুরু করে ক্যাথলিক চার্চকেও।
ইসলামি ইতিহাসের প্রিজন লিটারেচার
ইসলামি ইতিহাসেও কারাগার সাহিত্যের দৃষ্টান্ত কম নয়। আলেমদেরকে কারাগারে বন্দি করা হলেই তারা কোন না কোন কিছু লিখে সময়কে কাজে লাগাবার চেষ্টা করতেন। বিখ্যাত হানাফী ফকিহ ও উসুলবিদ শামসুল আইম্মাহ মুহাম্মদ সারাখসির (৪৯০ হি.) কথা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। একটা মাসআলার দরুণ কারাগারে যেতে বাধ্য হন ৪৬৬ হিজরিতে। এই কারাগারে তাকে থাকতে হয়েছে প্রায় ১৫ বছর। এই সময়ে তিনি ১৫ খণ্ডে ‘মাবসুত’ কিতাবখানা রচনা করেন। বর্তমানে এটি প্রায় ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। হানাফী ফিকহশাস্ত্রের একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে এটি স্বীকৃত। এছাড়াও কারাগারে বসেই ব্যাখ্যা করেছিলেন শাইবানী রহ.-এর ‘আস-সিয়ারুল কাবির’।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর (১২৬৩-১৩২৮ খ্রী.) কারাগারের অভিজ্ঞতাও কম নয়। তাকে প্রায় সাতবারের মত কারাগারে যেতে হয়েছে। ঠুনকো ঠুনকো অজুহাতে। বিরোধীর মতপার্থক্য যখন হিংসায় রূপ নেয়, সেই হিংসার শিকার হয়েই তাকে যেতে হয়ে জেলে। সাতবারের জেলের সার্বিক সময় হবে আনুমানিক পাঁচ বছরের মত। প্রথম কারাগারে বসে তিনি লিখেছিলেন ‘আস-সারিমুল মাসলুল ফি সাতিমির রাসূল’। অন্যান্য বারে তিনি কবর জিয়ারত, মাযারপূজা, পীরপুরস্তি, মৃত মানুষের কাছে প্রার্থনা ইত্যাদি নিয়েও কিতাবাদি রচনা করেছেন। এছাড়াও তিনি কারাগারে থেকে বিভিন্ন চিঠি লিখেছিলেন। ইদানিং একজন গবেষক সেগুলো একত্র করে বের করেছেন ‘রাসায়েল মিনাস সিজনি’ নামে। এখানে বেশ কিছু চিঠি আছে। একটা মায়ের নামে, পরিবারের নামে একটা। দেমাশকে তার রেখে আসা ছাত্রদের কাছেও আছে একটা চিঠি।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, যেই ইবনে তাইমিয়া সাহসিকতা, যুক্তি-তর্ক আর বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন অন্যান্য গ্রন্থে, সেখানে এই চিঠিগুলো একেবারেই ব্যতিক্রম। এখানে তাকে দেখা যায় একজন নরম দিলের মানুষ হিসেবে। শত্রুর ব্যপারেও তারা ভাষা এখানে অনেক সংযত। তিনি কোমল কোমল উপদেশ দিয়েছেন এই বইয়ে। সংকলনটি সম্প্রতি বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তুরস্কের দরবেশ আলেম বদিউজ্জামান সাইদ নুরসীকেও (১৮৭৭-১৯৬০ খৃ.) জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়েছে মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের জিন্দানখানায়। তার বিখ্যাত গ্রন্থ সংকলন ‘রাসায়েলে নুর সমগ্র’-এর বেশিরভাগই তিনি রচনা করেছেন জেলে বসে। তার অনেক রচনায়ই মধ্যে মধ্যে উঠে এসেছে কারাগার জীবনের কষ্ট যন্ত্রণার কথা। কিন্তু তিনি সান্ত্বনা নিতে চেয়েছেন আল্লাহর কথা ভেবে, আখেরাতের কথা ভেবে। আর কেবলই সবর করেছেন।
তিনি ‘আস-সামারা’ রিসালায় বলেছেন, ‘আমি বলতে পারি যে, যদি আমাদের জন্য পরকালে বিশ্বাসের মতো দৌলত না থাকত, তাহলে বিনা অপরাধে জেলখানার অন্ধকারে আমি ও আমার ভাইয়েরা যে দুঃসহ জীবন যাপন করছি তার জন্য কোন আত্মিক সান্ত্বনা পেতাম না। প্রতিদিনের শাস্তির তিক্ততায় মনে হতো এই বুঝি মরে গেলাম। দুঃখ যন্ত্রণায় ভুলেই গিয়েছিলাম স্বাভাবিক জীবনের কথা। কিন্তু মহান আল্লাহর অসংখ্য অসংখ্য শুকরিয়া যে, তিনি আমার ভাইদের পক্ষ থেকে আমাদেরকে অনেক ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য করবার ধৈর্য-শক্তি প্রদান করেছেন। সেই ভাইয়েরা নষ্ট করে ফেলেছে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ‘রাসায়েল নূর’এর অনেক অংশ। এগুলো ছিল আমার নিকট দু চোখের জ্যোতি। এভাবেই আমার অনেক দস্তাবেজ হারিয়ে গিয়েছে। এ সকল কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পেরেছি কেবলই পরকালীন জীবনে পরিপূর্ণ ঈমান আনয়নের কারণে।
কিন্তু কারো পক্ষ থেকে আমি লাঞ্ছনা ও আধিপত্য সহ্য করে নিতে পারিনা— সে যেই হোক না কেন। তোমরা নিশ্চিন্ত হও আমি তোমাদের জন্য হলফ করে বলছি আখেরাতে বিশ্বাসের নূর ও শক্তি আমাকে ধৈর্য, সক্ষমতা ও সান্ত্বনা প্রদান করেছে। হৃদয়ে এনে দিয়েছে দৃঢ়তা। মনে জেগেছে বিরাট এক জিহাদের কামনা। এখন আমার কাছে মনে হয়, যেন আমি এমন একটি মাদ্রাসায় সময় যাপন করছি, যা সবটাই সুন্দর ও উত্তম। সেটাকে আমি ‘ইউসুফ আ.-এর মাদরাসা’ বলে অভিহিত করতে পারি। যদি আমার সার্বক্ষণিক রোগ লেগে না থাকতো আর বার্ধক্যের ভার বহন করতে না হতো, তাহলে আরো স্থির চিত্তে আমি এই মাদরাসা দৈনন্দিন পাঠগুলো রপ্ত করতাম।’
মিসরে জামাল আবদুন নাসেরের শাসনকালে ইসলামপন্থীদের উপর জুলুম নির্যাতনের স্টিম রোলার নেমে এসেছিল। ধরে ধরে বিশেষ ব্যক্তিদের ভরা হয়েছিল জেলের অভ্যন্তরে। অনেকেরই লেখায় সেই অন্ধকার দিনগুলির কথা উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জয়নাব আল-গাযালীর লেখা ‘আইয়ামুম মিন হায়াতী’। জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর বইটা তিনি লিখেন। এখানে উঠে এসেছে জামাল আবদুন নাসেরের জুলুম নির্যাতনের অনেক চিত্র। বিশেষভাবে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ সালে ইসলামপন্থী বিশেষভাবে ব্রাদারহুডের সদস্যদের উপর নেমে আসা করুণ চিত্র এখানে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সেই বই থেকে প্রথম রাতে যেই শাস্তির সম্মুখিন হয়েছিলেন, সেখান থেকে কিছু তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘ বাকবিতণ্ডার পর আমার সাথে কথায় না পেরে এখন ওসি আমাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল, তুই তো পাগল। তোর কথার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। আমি চাইলে এখনই তোকে মেরে ফেলতে পারি। কেউ জানতে পারবে না এ কথা।
আমি বললাম, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তাই করতে পারেন।
এটা শুনে সে আর ঠিক থাকতে পারল না। আজেবাজে বকতে বকতে এক পুলিশকে ডাকল। বলল, একে প্রথমবারের মত জোরে জোরে পাঁচটা চাবুক লাগিয়ে ফেলে রাখো। আমি একটু পরেই আসছি।
সেই পুলিশ আমার হাত পা আর কোমরে জোরে জোরে চাবুকের আঘাত লাগাল। আমি আর বসে থাকতে পারছিলাম না। পড়ে গেলাম মুখ থুবড়ে। কিছুক্ষণ পর আবার এসে আমাকে মারতে লাগতে লাগল। সাথে নিয়ে এল কয়েকজন ইখওয়ান সদস্যকে। সবাইকে মারতে লাগল এলোপাথাড়ি। এবার আমি বলতে পারব না কত আঘাত লেগেছিল গায়ে। কারণ, কিছুক্ষণ পরই আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।’
হামিদা কুতুব ইবরাহিম একজন মিসরীয় সাহিত্যিক। তিনি আবার সৈয়দ কুতুবের ছোট বোন। ২৯ বছর বয়সে ১৯৬৫ সালে তাকেও বন্দি করা হয় নাসেরী কারাগারে। প্রায় ছয় বছরের মত তাকে থাকতে হয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। বের হওয়ার পর তিনি উপন্যাসের আঙ্গিকে লেখেন ‘রিহলাতুন ফি আহরাশিল লাইল’ (রজনির ঝোপঝাড়ে যাত্রা)। তার ভাই সৈয়দ কুতুবের সাথেও তিনি কারাগারে থেকেছেন। জিহাদী সালাফী ধারার আলেম ড. শহিদ আবদুল্লাহ আযযামের সাথে দেখা হয়েছিল জেল থেকে মুক্তি পাবার পর। হামিদা তাকে ভাইয়ের কথা খুলে বলেছিলেন। ‘ফি যিলালি সূরাতিত তাওবা’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘আমি একদা সাইয়্যেদ কুতুবের বোন হামীদার সাথে জেলে ছিলাম। হামীদা বলেছেন- ১৯৬৬ সালের ২৮ আগস্টে সাইয়্যেদ কুতুবের ফাঁসির ব্যাপারে বাদশাহ আব্দুন নাসের একমত হল। তখন হামদী রাসূলী আমাকে তার ফাঁসির নির্দেশনামা দেখিয়ে বলল, এখন আমাদের সামনে আর মাত্র একটি সুযোগ বাকি আছে। আমরা যদি একটু সচেষ্ট হই, তাহলে হয়ত তাকে রক্ষা করতে পারব। কারণ, তার মৃত্যুর কারণে যে ক্ষতি হবে, তা শুধু মিসরের ক্ষতি নয়। বরং গোটা ইসলামী বিশ্বের ক্ষতি। তিনি যদি একটু বিনয়ভাব প্রকাশ করেন, তাহলে আমরা তার ফাঁসির হুকুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করে দেব। তারপর ছয় মাস গেলে তার মুক্তির ব্যবস্থা করব। আসুন, তাড়াতাড়ি আসুন। হাতে সময় একেবারে কম।
হামীদা বলেন, আমি সাইয়্যেদ কুতুবের নিকট গেলাম। বললাম, যদি তুমি একটু বিনয় ভাব প্রকাশ করো, তাহলে এরা ফাঁসির হুকুম মওকুফ করে দেবে। আমি যা বলছি, তা হামীদা কুতুবের মুখ থেকে আমি নিজেই শুনেছি। অন্য কারো থেকে শুনিনি। তবে হামীদা কুতুবের বাড়িতে, না জয়নাব গাযালীর বাড়িতে তিনি তা বলেছেন- ঠিক মনে আসছে না।
সাইয়েদ কুতুব বললেন, শোন হামিদা! আমি তাদের নিকট কোন কাজের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করব? আল্লাহর দ্বীনের জন্য যে কাজ করেছি, সে কাজের অপারগতার কথা বলব? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কাজ করতাম, তাহলে বিনয় ভাব প্রকাশ করতাম। কিন্তু আল্লাহর জন্য যা করেছি, তার জন্য এমন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর বললেন, হে হামীদা! যদি আমার আয়ু শেষ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে এই ফাসির নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে। আর যদি আয় শেষ না হয়ে থাকে, তাহলে এ নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে না। কেউ তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সুতরাং বিনয় প্রকাশের কারণে আমার আয়ু বৃদ্ধিও পাবে না, হ্রাসও পাবে না।
তারপর তাকে যখন ফাঁসিকাষ্ঠের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন এক ব্যক্তি তার নিকট এল। বলল, আপনি বলুন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। তিনি তখন তার দিকে ফিরে বললেন, ‘অবশেষে তুমি এলে এ নাটকের অবসান ঘটাতে! ভাই, আমাকে তো ফাঁসি দেয়া হচ্ছে এই কারণে যে, আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পাঠ করি। আর তোমরা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বিক্রি করে রুটির ব্যবস্থা করো। এটাই তাওহীদ। নির্মল তাওহীদ।’
The post কারাগার সাহিত্য : অব্যক্ত যন্ত্রণার সংকলন appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%85%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4/
No comments:
Post a Comment