রাকিবুল হাসান:
সরকারি দুর্নীতি ও সহিংসতা বৃদ্ধির অভিযোগ তুলে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম আবু বকর কেইটার পদত্যাগ চাইছে দেশটির জনগণ। এ দাবিতে গত শুক্রবার রাজধানী বামাকোর সেন্ট্রাল সিটি স্কয়ারে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, কণ্ঠে ছিল জাতীয় সংগীত।
কেইটা ২০১৩ সালে প্রথম পশ্চিম অফ্রিকার এ দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও নির্বাচিত হন। ৭৫ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট বর্তমানে বেশ চাপের মুখে রয়েছেন। বিশেষ করে উত্তর মালির সর্বব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এখন মধ্য মালিতেও সহিংস কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতায় লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। মারা গেছে হাজারো সেনাসদস্য ও বেসামরিক মানুষ। এছাড়া সঙ্কটাপন্ন অর্থনীতি ও সরকারের অভ্যন্তরে দুর্নীতির কারণেও মালির জনসাধারণের মধ্যে কেইটাবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এর আগে গত ৫ জুন, ২০২০ দেশটির নবগঠিত বিরোধী দলের জোটও একই ধরণের একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এই জোটে অংশ নেয় ধর্মীয় নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ। তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে আন্দোলনটির নামকরণ করা হয়—’মুভমেন্ট অব ৫ জুন’। সরকার বিরোধী এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জোটের প্রধান ইমাম মাহমুদ ডেকো।
৫ জুনের সমাবেশের পরে মালির রাষ্ট্রপতি সরকারি শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, একটি নতুন সমন্বিত সরকার গঠন করা হবে, যাতে বিরোধীদলের ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ আরও অনেকগুলো সংস্কার করা হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাবার পরও প্রতিশ্রুতি পূরণের অগ্রগতি না দেখে আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মানুষ। ১৯ জুন, ২০২০ শুরু হয় আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব।
শুক্রবারের বিক্ষোভে এক বক্তৃতায় জোটের প্রধান মুখ ইমাম মাহমুদ ডেকো বলেছেন, ‘আমরা দাবি জানিয়েছি, তিনি শুনেননি। এবার তিনি বুঝবেন।’ বিরোধীদলের রাজনীতিবিদ চিক ওমর সিসসোকো বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের ডাকে সাড়া না দিলে নাগরিক অমান্য এবং কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিক্ষোভে আসা ৪২ বছর বয়সী শিক্ষক মামাদউ ডায়াকাইট এএফপিকে বলেন, ‘আলোচনায় কাজ হবে না। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য এখানে এসেছি। কেইটাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
কে এই ইমাম ডেকো?
উত্তর মালির টিম্বুকটু অঞ্চলের আরবি ভাষার অধ্যাপক ইমাম মাহমুদ ডেকো। বয়স ৬৬। তিনি পড়ালেখা করেছেন সৌদি আরবে। ২০০৯ সালে মালি ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। এ সময় মালির পারিবারিক সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে একটি সফল বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
এই ঘটনার ৩ বছর পর, ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম কেইটার প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানান ইমাম ডেকো। তখনো মালিতে অস্থিরতা শুরু হয়নি। পরে যখন মালিতে অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স সামরিক হস্তক্ষেপ করে, ইমাম ডেকো এই হস্তক্ষেপের সমালোচনাও করেননি। পরবর্তীতে আলোচনার বিরোধী সুলাইমান ববি মেগাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট কাইটার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
ফরাসি সংবাদপত্র লে ফিগারোর ভাষ্যমতে, ইমাম ডেকো মালির আর্থিক নীতি বিষয়ক আলোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। তাঁর দেশপ্রেম, ধর্মীয় নিষ্ঠা এবং ব্যক্তিত্বের কারণে তার আনুগত্য গ্রহণ করেছে বহু মানুষ।’ এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত মালিতে ইমাম ডেকোর রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ছেই।’ আল জাজিরায় যোগ করা হয়, ‘দেশীয় জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক ক্ষোভ ও প্রস্তাব আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা জরুরী মনে করেন ইমাম ডেকো।’
সূত্র: আল জাজিরা, এএফপি
The post মালিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা: সরকার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে মসজিদের ইমাম appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%85%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%be/
No comments:
Post a Comment