মুনশী নাঈম:
জেরুজালেম এবং কনস্টান্টিনোপল-এর অধিকার নেয়ার জন্য ইউরোপের খৃস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০৯৫-১২৯১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করে। ইতিহাস এর নাম দেয় ক্রুসেড। ১০৯৯ সালে ফ্রান্সের ক্লেরমন্ত শহরে পোপ দ্বিতীয় উর্বান ক্রুসেডারদেরকে মুসলমানদের হাত থেকে জেরুজালেম এবং কনস্টান্টিনোপল মুক্ত করতে লড়াই করার আহ্বান জানান। তখন মিশরে ইসমাইলি শিয়াদের শাসন, যাকে বলা হয় ফাতেমি সাম্রাজ্য। শামে শিয়া ইমামিয়াদের শাসন, তুরস্কে সেলজুক সাম্রাজ্যে শাসন সুন্নীদের। ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী ক্রুসেড শুরু হলে বদলে যায় ইসলামি সাম্রাজ্যের এই মানচিত্র। শিয়া-সুন্নি সম্পর্কে আসে ভাঙা-গড়ার প্রবল ঢেউ। ক্রুসেডের শুরুতে শিয়ারা শাসন ক্ষমতায় থাকলেও ক্রুসেড শেষে মসনদ থেকে ধ্বসে পড়ে তারা। তাহলে কি বলা যায় এই অঞ্চলে শিয়াদের পতন ক্রুসেড যুদ্ধেরই ফলাফল?
ডা. মুখতার শানকিতী ঠিক এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজেছেন তার ‘শিয়া-সুন্নি সম্পর্কে ক্রুসেডের প্রভাব’ বইয়ে। বইয়ের আলোচনাগুলোর দিকে চোখ বুলালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ক্রুসেড যুদ্ধ চলাকালীন কেমন ছিল শিয়া-সুন্নি সম্পর্ক, তাদের সম্পর্কে ক্রুসেড কেমন প্রভাব ফেলেছে, ক্রুসেড শেষ হলে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এই শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের ভিত এবং সেই ভিত কেমন আছে আজকাল। ডা. মুখতার শানকিতীর ভাষায়, ‘সুন্দর একটা ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য সুন্দর একটা অতীতও নির্মাণ করতে হয়।’ এজন্যই তিনি বর্তমান শিয়া-সুন্নির অবস্থান বুঝাতে প্রসঙ্গ টেনেছেন ক্রুসেডের। কারণ ক্রুসেডের মাধ্যমেই বলতে গেলে এক মেরু থেকে আরেক মেরুতে চলে গেছে শিয়ারা, তৈরী হয়েছে শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের নতুন মানচিত্র। মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে পশ্চিমা আগ্রাসন চলছে, তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বুঝতেও শানকিতীর ব্যাখ্যা সাহায্য করবে।
শানকিতী তার বইটিকে পাঁচটি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন। অধ্যায় পাঁচটি নিয়েই আলোচনা করা যাক।
প্রথম অধ্যায় : ক্রুসেডের মুখোমুখি তুর্কিরা
ডা. মুখতার শানকিতী এ অধ্যায়ে দেখিয়েছেন, ক্রুসেড যুদ্ধ কার সঙ্গে কার হয়েছিল। পুরো মুসলিম বিশ্ব যেমন এখানে জড়িত ছিল না, তেমনি পুরো খৃস্টান বিশ্বও এখানে জড়িত ছিল না।
খৃস্টানদের মধ্যে তখন দুটো দল; একপক্ষের সম্পর্ক পশ্চিম ইউরোপের গির্জার সাথে, তাদের কেন্দ্র ছিল রোম। অপরপক্ষের সম্পর্ক ছিল কনস্টান্টিনোপলের গির্জার সাথে। দু গির্জার অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। জেরুজালেম অধিকার করতে ক্রুসেডের ডাক দিয়েছিলেন যে পোপ দ্বিতীয় উর্বান, তিনি ছিলেন পশ্চিম ইউরোপের। অন্যদিকে ইসলামের মূল কেন্দ্র আরবের মুসলিমরা ক্রসেডে যুক্ত হয়নি। বরং ক্রুসেডে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছে সেলজুক সাম্রাজ্যের তুর্কিরা। কারণ লড়াইয়ের শক্তি আরবের ছিল না। তাই বলা যায় ক্রুসেডে খৃস্টানদের বাইজান্টাইন সম্রাট এবং আরব মুসলিমদের কোনো অংশগ্রহণ ছিলো না।
খৃস্টানদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রায় দু শ’ বছর তুর্কীরাই মাঠে থেকেছে। পরবর্তীতে শিয়ারা সঙ্গ দিয়েছে, কিন্তু লড়াইয়ের নেতৃত্বে কখনো আসেনি। ইসলামি মানচিত্রকে সামাল দেয়ার এই দায়িত্ব তুর্কিরা তিনটি কারণে পেয়েছে। ১. সামরিক শক্তি। ২. ইবনে খালদুনের আসাবিয়্যাহ তত্ত্ব অর্থাৎ গোষ্ঠী সংহতির রাষ্ট্র দর্শনের ভিত্তি। এর ওপর ভিত্তি করেই তুর্কিরা নতুন এক জোয়ার এনেছিল, বেঁচে থাকার প্রাণ দিয়েছিল ইসলামি সাম্রাজ্যকে। ৩. তুর্কিরা ছিল আব্বাসি খলিফাদের উত্তরসূরী। সুতরাং তুর্কিরাই ছিল ক্রুসেডে নেতৃত্ব দানকারী মুসলিম দল। সালাহউদ্দিন আইয়ুবিকে অনেকে আরবীয় বললেও তার মূল কিন্তু কুর্দি বংশ!
দ্বিতীয় অধ্যায় : ক্রুসেডে মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক মানচিত্র
মুসলিম ঐতিহাসিক, ভূগোলবিদ ও ভ্রমণকারীদের সূত্রে ডা. মুখতার শানকিতী ক্রুসেড চলাকালীন মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চিত্র তুলে ধরেছেন। সেই চিত্র থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায়, কতটা বিভাজনে ছিল মুসলিম সাম্রাজ্য। মিসরে শিয়া ইসমাইলিয়াদের শাসন, ইরাকে বুওয়াইহিয়ার পতনের পর সেলজুকি সাম্রাজ্যের উত্থানের কারণে দু দলেরই সমন্বিত বসবাস, শামে শিয়া ইমামিয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। অন্যদিকে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে একা ময়দানে নেমে আসে সেলজুকি সাম্রাজ্যের সুন্নিরা। শিয়া ইমামিয়ারা তুর্কিদের সঙ্গ দিলেও শিয়া ইসমাইলিয়ারা এবং নিযারিয়ারা শুরুতে সঙ্গ দেয়নি।
সব মিলিয়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল মুসলিম বিশ্ব।
তৃতীয় অধ্যায় : ক্রুসেডে সুন্নি এবং শিয়া ইমামিয়াদের ঐক্য
ক্রুসেড যুদ্ধে শিয়া ইমামিয়ারা সুন্নিদের সঙ্গে মিলে খৃস্টানদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। শিয়া ইমামিয়ারা সুন্নিদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। ১. ভৌগোলিক নৈকট্য। শাম এবং ইরাকের শিয়ারা ফাতেমিদের তুলনায় ভৌগোলিকভাবেই কাছাকাছি ছিল। এবং ইরাকে শিয়া-সুন্নিদের সমন্বিত আবাস ছিল। ২. সাম্প্রদায়িক একতা। ৩. ইরানে সাফাভি সাম্রাজ্য কায়েমের আগে শিয়া ইমামিয়াদের বিরুদ্ধে কোনো সুন্নি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তখনো তৈরী হয়নি। যেহেতু বিরোধিতা নেই, তাই এক হতেও সমস্যা নেই।
সবদিক বিবেচনায় শিয়া ইমামিয়ারা সুন্নিদের সাথে মিলে খৃস্টানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোনো সমস্যা অনুভব করেনি। আর এককভাবে লড়াই করার সেই শক্তিও শিয়া ইমামিয়াদের ছিল না। কারণ তাদের তো প্রতিষ্ঠিত সবল কোনো সাম্রাজ্য ছিল না।
চতুর্থ অধ্যায় : ক্রুসেডে সুন্নি বনাম শিয়া ইসমাইলিয়া
ক্রুসেড চলাকালীন শিয়া ইমামিয়ারা যতটা সহজে সুন্নিদের সঙ্গ দিয়েছে, ততটা সহজে শিয়া ইসমাইলিয়ারা সঙ্গ দেয়নি। বরং বলা ভালো তাদের সাধ্য থাকতে সঙ্গ দিতেই চায়নি, চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে। কারণ, শিয়া ইমামিয়াদের রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি কম থাকলেও মিসরে শিয়া ইসমাইলিয়া তথা ফাতেমিদের কিন্তু তা খুব ভালো করেই ছিলো। তাই তারা একা একা লড়াই করার চেষ্টা করেছে।
ডা. মুখতার শানকিতী বলেছেন, ফাতেমিরা সর্বপ্রথম ক্রুসেডারদের ঝড়কে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। তারা সর্বোতভাবেই চেয়েছে ক্রুসেড যেন আনাতোলিয়া এবং শাম পেরিয়ে না যায়। কিন্তু তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা চেষ্টা করেছে ক্রুসেডাররা যেন তাদের এবং সেলজুক সাম্রাজ্যের সুন্নিদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ সুন্নিদের সঙ্গে বিভাজন সৃষ্টি করার তীব্র চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্রুসেডাররা যখন জেরুজালেম আক্রমণ করে, তখন তারা হতাশ হয়ে যায়। কারণ তারা দেখছিলো তাদের হাতে থাকা জেরুজালেম হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ে তাদের সামনে দুটি পথ ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। প্রথমত ক্রুসেডারদের হাতে আত্মসমর্পণ, দ্বিতীয়ত প্রবল বিক্রমশালী সুন্নিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে জেরুজালেম রক্ষা করা। ক্রুসেডারদের কাছে আত্মসমর্পণ করার প্রশ্নই উঠে না। তাই ফাতেমিরা বাধ্য হয়ে মিসরের ক্ষমতা তুলে দেয় সুন্নিদের হাতে। তখন নুরুদ্দিন জঙ্গি তাদের সাহায্যের জন্য সালাহউদ্দিন আইয়ুবি এবং শেরকোহকে মিসরে পাঠান।
এ অধ্যায়ে ডা. মুখতার শানকিতী শিয়া নিযারিয়াদের নিয়েও আলোচনা করেছেন। ক্রুসেড চলাকালীন এই দলটি গুপ্তহত্যাকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদেরকে হাশশাশিনও বলা হতো। তারা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দানকারী সুন্নি নেতাদের হত্যা করতে শুরু করে। শিয়া ইমামিয়া এবং শিয়া ইসমাইলিয়াদের নেতারাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
হাশশাশিনরা শিয়া ইমামিয়ার বিচারক এবং নেতা ইবনুল খাশশাবকে হত্যা করে। ক্রুসেডারদের থামাতে উত্তর শাম থেকে ইবনুল খাশশাব সুন্নিদের ডেকে আনেন এবং একসঙ্গে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ইবনুল খাশশাব সুন্নিদের ডেকে আনার পর লড়াইয়ে যে বিজয় অর্জিত হয়, এটিই ছিল ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সর্বপ্রথম বিজয়। হাশশাশিনদের হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হন ফাতেমি খলিফা আল আমির। কিন্তু সালাহউদ্দিন আইয়ুবির সময় থেকেই তারা সুন্নিদের সঙ্গে বোঝাপড়া শুরু করে। তারপর সুন্নি নেতাদের নির্দেশে গুপ্তহত্যা শুরু করে ক্রুসেড নেতাদের। চারজন ক্রুসেড নেতাকে তারা হত্যা করে। বলা হয়, ক্রুসেড চলাকালীন এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
ক্রুসেডের পর হাশশাশিনদের আর দেখা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মসনদ হারানোর পর শিয়া ইসমাইলিয়া তথা ফাতেমিরা কার্যত সাধারণ একটি মুসলিম দলে পরিণত হয়। রাজনৈতিক কিংবা সামরিক কোনো কার্যক্রম তাদের আর বাকি থাকেনি।
পঞ্চম অধ্যায় : শিয়া-সুন্নি বিতর্কে সালাহউদ্দিন আইয়ুবি
ক্রুসেড পরবর্তী ইতিহাসে শিয়া-সুন্নি ঐতিহাসিকরা কেমন দেখেছেন সালাহউদ্দিন আইয়ুবিকে, ডা. মুখতার শানকিতী তা-ই তুলে ধরেছেন এই অধ্যায়ে। তিনি বলেছেন, আমার পাঠ অনুযায়ী ক্রুসেড চলাকালীন সালাহউদ্দিন আইয়ুবির ভূমিকাকে শিয়া-সুন্নি সবাই প্রশংসার চোখেই দেখে এবং তাকে সাহসী বলে আখ্যা দেয়। কিন্তু শিয়া-সুন্নিদের কিছু ঐতিহাসিক তার সমালোচনা করেছেন। যেমন ক্রুসেডের পরপরই সুন্নি মতালম্বী ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর ক্রুসেডে সালাহউদ্দিন আইয়ুবির ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কারণ, ইবনুল আসীর ছিলেন মসুলে জঙ্গিইনদের অধীনে। তিনি চাননি কখনো মসুল আইয়ুবির সালতানাতে যুক্ত হয়ে যাক। এমনিভাবে মিসরের ঐতিহাসিক আল মাকরিযিও তার সমালোচনা করেছেন। অথচ আল মাকিরিযি মিসরে থাকলেও তিনি শিয়া ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে ইবনুল আসীরসহ অন্যান্য সুন্নি ঐতিহাসিকরা একমত হয়েছেন, ক্রুসেডে সালাহউদ্দিন আইয়ুবির ভূমিকা ছিল সাহসী এবং কৌশলী। পরে সালাহউদ্দিন আইয়ুবির পজেটিভ জীবনী লিখেন ইয়াহইয়া ইবনে আবু তাই, জুরজি যায়দান। জুরজি যায়দান আইয়ুবিকে আরব্য সাহসী বলে প্রশংসা করেছে।
শিয়া ইসমাইলিয়া ছিল সালাহউদ্দিন আইয়ুবির বিরোধী। তাদের ইমাম হাসান আমিন আইয়ুবির জীবন-চরিত লিখেছে; পুরো জীবন-চরিত কুৎসা, মিথ্য অভিযোগ, অপবাদ দিয়ে পূর্ণ। আশ্চর্য হলো—যে অভিযোগ ইবনুল আসীর এবং আল মাকরিযি তুলেছিলেন, সেগুলোকেই তারা অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেছে। এই গ্রন্থের জবাবে শায়খ মোস্তফা নতুন করে আইয়ুবির একটি জীবন-চরিত লিখেন। এরপর আইয়ুবিকে নিয়ে পজেটিভ জীবন-চরিত লিখেছে শিয়া ইমামিয়ার নেতা জাফর মুহাজির। তবে শিয়া মানসে এখনো সালাহউদ্দিন আইয়ুবিকে নেতিবাচকভাবে দেখার চল রয়ে গেছে।
উপসংহার
ক্রুসেড পরবর্তী দুই শতাব্দীজুড়ে শিয়া-সুন্নি মানচিত্র বদলের চিত্র তুলে ধরেছেন ডা. মুখতার শানকিতী। তিনি দেখিয়েছেন, ক্রুসেড চলাকালীন শিয়ারা ক্ষমতার মসনদ হারিয়েছে। মসনদই শুধু হারায়নি, বরং ক্রুসেডের পর শিয়াদের কেন্দ্র এই আরব অঞ্চল ছেড়ে পারস্যে স্থানান্তর হয়। সবকিছুই হয়েছে ক্রুসেডের প্রভাবে।
ইরাক জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিয়া ধর্মালম্বী। শিয়াইজম এখান থেকেই তার চারদিকে ছড়িয়েছে। ইসলামের ইতিহাসের প্রথম পাঁচ শতাব্দী শিয়াইজম ইরাক থেকে ছড়িয়েছে পশ্চিমে। কিন্তু ক্রুসেড এসে সেই যাত্রা থামিয়ে দেয়। পশ্চিমে ফাতেমিদের পতন ঘটে। কার্যত তারা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেয়। ক্রুসেডের পর শিয়াইজম যাত্রা শুরু করে পূবে। ক্রুসেড-পরবর্তী এই সময়ে শিয়া-সুন্নি সম্পর্ক মূলত স্থিতিশীলই ছিল। কোনো উত্তেজনা ছিল না। কিন্তু পারস্যে শিয়াইজম যাত্রার পর যখন সেখানে সাফাভি সাম্রাজ্য কায়েম হয়, তখন শিয়া-সুন্নি সম্পর্কটা আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে দু দলের মধ্যে বাড়তে থাকে দূরত্ব, বিভাজন। এখন তো শিয়াইজম জাতিগত পক্ষপাত এবং সাংস্কৃতিক বিরোধের সাথে মিশে গেছে।
ক্রুসেডে শিয়াদের তিনটি ভাগ দেখা যায়। এক. শিয়া নিযারিয়া, যারা শুরুতে সুন্নিদের বিরুদ্ধে থাকলেও পরে সুন্নিদের কথা শুনেছে। দুই. শিয়া ইসমাইলিয়া, নিজেরা পরাজয় থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে সুন্নিদের। তিন. শিয়া ইমামিয়া, যারা সুন্নিদের সঙ্গে এক কাতারে লড়াই করেছে। মূলত ক্রুসেডারদের প্রতিরোধ করেছে সুন্নিরাই, শিয়ারা নয়। সঙ্গত কারণেই ক্রুসেড চলাকালীন শিয়াদের পতন ঘটেছে। ডা. মুখতার শানকিতীর ভাষায়—এই আরব অঞ্চল থেকে ভবিষ্যতে শিয়াইজম একদম নির্মূল হয়ে যাবে। অঘোষিত যে ক্রুসেড চলছে বর্তমান তৃতীয় বিশ্বে, শিয়াদের অবস্থান বিবেচনায় এই ক্রুসেডেও তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী।
The post ক্রুসেড যুদ্ধে শিয়া-সুন্নি সম্পর্কে প্রভাব: মুখতার শানকিতীর গবেষণা appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a1-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a7%8d-2/
No comments:
Post a Comment