শাহানশাহ করকমলে
(আনোয়ার শাহ রহ.)
তানভীর এনায়েত
অসহনীয় অন্ধত্ব ঘণীভূত হয়ে যাওয়ার পর আমার চোখ
মহাকাশে হয় আত্মনিবিষ্ট, খোঁজে উদয়ের ছায়াপথে
নতুন কোনো নক্ষত্র কী এলো, রূপালী চাঁদের প্রতিবেশী
ঝলমলে দারুণ সুরতে, জোছনার কিরণের মতো মোলায়েম
দিগন্তের পরাজিত দূরত্বে আলোর ম্রিয়মাণ প্রস্রবনে
আরশের পায়ের কাছে, অদূরে, মেঘের মখমল ছায়াময়তায়
সে কি এলো? নতুন কোনো নক্ষত্র হয়ে
এলো কী জারিন ফুল সুরভীর কোমল দাপটে
এলো কী সবুজ পাখি, ভোরের নির্মল নির্জনতায়;
সে কী এলো সুললিত আজানের অনুরনণে, সুনীবিড় মগ্নতার উদাত্ত আহ্বানে
এলো কী সে? বেহেশতের চিরঞ্জীব পাখির পালকের মতো উড়ে
বিগত যে হয়ে গেছে একবার, তার মতো আসে না নতুন
বেহাদ উদাসিন হয়ে আছে বোধের তামাম ইন্দ্র
চশমার কাঁচের নিচে ঘুমিয়ে আছে অযাচিত নির্লিপ্ততা
ডুবে আছে নির্মোহ প্রেম, বদ্ধ জলাশয়ের নিভৃত অরণ্যে;
বেহুশির গহীনে, এহসাসের অব্যক্ত সীমাহীনতায়
কচুরিপানার ডানার তলে দুপুরের রোদের আর্জির মতো
কী যে সুকরুণ আর্তনাদ বাজে সমস্ত শব্দের তীব্রতায়, একযোগে
আমার কী হয়ে গেলো ক্ষত বোঝে না হৃদয়ের অবুঝ শিশু
পিতাহীন, অভিভাবকশূন্য, নিরাশ্রয়ী অনাথ এতিম
মাথায় প্রখর রোদ, ছায়া দেবে না আর প্রলম্বিত বটবৃক্ষের শরীর
সে ছিলো মরুভূমির শীতল শরাব, প্রবল দাবদাহে অনাগত বৃষ্টির অমৃতধারা, প্রগ্রাঢ় অন্ধরাতে পথ দেখানো আলোক প্রাসাদ।
যে গেছে আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে সে
সাথে করে নিয়ে গেছে সব, যা ছিলো সমস্ত তার
অসমাপ্ত আফসানার তৃপ্তীহীন পরিসমাপ্তির পর
হৃদয়ের ধর্ম হয় আফসোসের নজরানা পেশ করা
কথারা বোবা হয়ে গেছে, কলবে ঝুলে আছে সফেদ পাথরের ভার
আঙুলে ফুটে আছে তসবিহর নার্গিস ফুল
ভিজে যায় জায়নামাজের কাবা নয়নের সুগন্ধী গোলাপজলে
যাকে ভালোবেসে ছিটিয়ে দিই অনিন্দ গোলাপ, বিছিয়ে দিই সুমসৃণ পারস্য গালিচা
প্রস্থান নেই তার, কবরের সুরম্য রাজমহলে
প্রস্থান নাই হোক, তবু হয়ে যাবে দেখা
নির্জন সবুজ ছায়ায়, শীতল মৃত্তিকায়
আমাদের দেখা হয়ে যাবে রোজ ফজরের পর
কুয়াশার মতো করে এলে ঘাস হয়ে পেতে দিও বুক
আমি দিয়ে যাবো কিছু ইয়াসিনের আয়াত, দুরুদ
দুপায়ের কাছে নত হলে জানু, হাটু গেড়ে বসে সবিনয়ে হয়ে গেলে রুজুহ
আমাকে বাতেনিভাবে দোয়া করে দিও
তোমার রুহের মতো যেন হয় আমার এ রুহ।
গতিবিধি
সালাহ উদ্দীন আলভী
ভেতরের বিশ্বাস বাইরের বিশ্বাসকে গ্রাস করে
কিন্তু মানুষ সর্বদা প্রভাব ফেলে নিজের কল্পনার ওপর,
যা সে নিজেই বিশ্বাস করেনি কনোদিন।
মানুষের নিজেকে মহত্তম ভাবা এক উদগ্র মুদ্রাদোষ,
মানুষের নিজেকে ঊর্ধ্বে ভাবা—ভেতরের এক পৈশাচিক মানুষ।
মানুষের নগরে জংগল নেই, অথচ আচরণে আছে বন্য প্রভাব
প্রতিটি হাসির ভিন্ন ও বিভিন্ন অর্থ
প্রতিটি আচরণ, তার নিজেকে হাসায়
পুণ্যকর্মগুলো “নিষ্ফল হলো” বলে আড়ালে কাঁদায়;
মানুষের ভেতরে যতোটা ভালো, তার একটুও ভালো হয়ে দেখা দেয় না,
অথচ মানুষেরও বেশি মানবিক হয়ে ওঠে পশুগুলো, যারা কালেভদ্রে মানুষ দেখতে পায় না।
মানুষের প্রতিটি হ্যাঁ-বাচক ইশারায় থাকে স্বতঃস্ফূর্ত ‘না’।
প্রতিটি না-বাচক ইঙ্গিতে থাকে কিয়দ প্রশ্রয়।
শহরের গলিতে পোস্টারের মেলা বসে—
ছবির মানুষগুলো কি মিষ্টিমিষ্টি হাসে!
কী যে ভালো হতো, ছবির এই মানুষগুলো বাস্তবেও যদি এতোটা ভদ্র হত!
মানুষকে নিয়ে বড় চিন্তা হয়।
কোনো একদিন এমনও হয় কি না, মাহাত্ম্য কুড়াতে আমাদেরকে সদলবলে রওয়ানা করতে হয় অরণ্য-জংগলে..
কাশপরী তোর এই কবিতার নাম দেব না
জাবির মাহমুদ
কাশফুলময় ফুলে ফুলে সাদা দিন
কুসুম সমীরে আড়মোড়া ভাঙে বন
হাওয়ারা বাজায় পাতার বাঁশিতে বীণ
প্রকৃতিতে আজ কিসের এতো আয়োজন!
চেনা পৃথিবীটা দুলে ওঠে চিৎকারে
মুখ থেকে মুখে “শুকুর” তুলেছে ঢেউ
আম্মার ত্যাগী নাড়িছেঁড়া শিৎকারে
সোয়াদ এসেছে, তোমরা কি জানো কেউ?
শরতের কোলে মালিকের দেয়া দান
কাশের মতোই রেশম-কোমল রূপ
কাশপরী আর মিছে কী এমন ভান—
তোরই সুখে হাসি, কান্নায় নিশ্চুপ।
তোর আধো বোলে ডাকাডাকি পাড়া দিন
সকাল-দুপুর ভেসেছি আমরা কতো
জান্নাতি সুখে, ভূলোকেই হলো চিন
আব্বার আঁখি তুইময় ঘোরে ব্রত!
গোমতির জল পালা করে ছোটে রোজ
দিন মাস কেটে বছর গড়ায় দেখি
লতানো পুুঁইয়ের ডগার মতোই পোজ
সবুজ হাসিতে উঠছিস বেড়ে একি!
বড় মায়া কাড়া অবাক চাহনি তোর
চপলতা মোড়া শীতল সবুজ দিন
ঢঙী উচ্ছ্বাসে শূন্যতা ছাড়ে দোর
জান্নাতি সুখে, ভূলোকেই হলো চিন!
দেয়ালে দেয়ালে কাঁটাছেড়া, আঁকাআঁকি
ইশকুল ব্যাগে ডিম নিয়ে ঘরে ফেরা
ঘরময় তোর উড়ো চলাচল– পাখি
মা’র রাঙাচোখ আপার আপায় ঘেরা।
ভাইটাকে বোকা বানাতি যে হেসে খেলে
গুল মেরে মেরে ডিম করতিস সারা
তোর উচ্ছ্বাসে মনে হতো ডানা মেলে
মাঝেমাঝে হই আমিও যে দিশেহারা।
কিন্তু হঠাৎ-ই তোর কি যে ছাই হলো
দুধচোয়া রূপ হলো বা ক্যানোই ফিকে
উথাল-পাতাল শুনি না কোনোই গোল-ও
সবকিছু ক্যানো মলিন চতুর্দিকে!
যাই-বা হয়েছে কাশপরী ওরে—তোর
মলিন বসনে তাই বলে বসে থাকা!
রাত পাড়ি দেয় মেহনতী সব ভোর
পাঠ বিনে যায় মানুষের মান রাখা?
অন্নবিহীন পাখি যদি ঘরে ফেরে
তাই বলে আর পরদিন বসে থাকে?
অবেলার ঝড়ো বৃষ্টিতে যাবি হেরে
পা-টা না ফেলেই রোদসী পথের বাঁকে!
চল ছুটে চল খরা-জরা ঝেটে ফেলে
তোর ছায়া হয়ে রব তো পাগল—আছেই
জীবনের আকাশে মেঘ-সুরুজের খেলে
ফাগুন নসীব হয়তো শীতের পাছেই…
কোন সে মহান সত্তা
আবু তালহা রায়হান
এই যে আকাশ মা ও মাটি
সবুজ পরিবেশ,
কে সাজালো নিখিলধরা
কে সাজালো দেশ?
এই যে সাগর বয়ে চলে
জলের কলতান,
কার প্রেমেতে মত্ত হয়ে
গায় কোকিলে গান?
এই যে পাহাড়-বনবাদাড়ি
তরুলতার গাছ,
কার তরেতে তাসবীহ জপে
সাগর জলের মাছ?
এই যে সূরয কিরণ দিয়ে
সতেজ করে প্রাণ,
কার ইশারায় বৃষ্টি পড়ে
নদে আসে বান?
এই যে চাঁদে স্নিগ্ধ হাসে
মুক্ত করে দাঁত,
কোন সে মহান সত্তা তিঁনি
দিনকে করেন রাত?
The post কয়েকটি ছড়া-কবিতা appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%95%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%9b%e0%a7%9c%e0%a6%be-%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%be/
No comments:
Post a Comment