রাকিবুল হাসান নাঈম:
ইসলাম বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ এবং গবেষণায় প্রকৃত মেধার ছাপ রাখতে পারছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্ররা। আরবি এবং ইংরেজির স্ট্যান্ডার্ড ভাষাজ্ঞান না থাকায় তারা হাত বাড়াতে পারছে না কোর্সসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সব রিসোর্সের দিকে। ফলে গুটিকয়েক বাংলা সাজেশন পড়েই কোনোমতে শেষ করতে হচ্ছে সেমিস্টার। এতে কেবল পরীক্ষার বৈতরণী পার হওয়া যাচ্ছে, কিন্তু ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান এবং গভীর জগত সম্বন্ধে তারা থেকে যাচ্ছে না-ওয়াকিবহাল।
ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্র এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, এই সঙ্কটের কথা সবাই জানেন। কিন্তু সঙ্কট কাটানোর তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো চেষ্টা করা হয় না। ফলে ‘চলছে চলো’র গতিতে বছর শেষ করছে ইসলামিক ডিপার্টমেন্টগুলো।
দুমুখী সঙ্কটে ছাত্র এবং শিক্ষক
প্রকৃত ইসলামি মেধা ও মনন গড়ে না উঠার পেছনে দুমুখী সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের একজন ছাত্র । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রটি ফাতেহকে বলেন, ইসলামিক স্টাডিজের সিলেবাসে যে রেফারেন্স গ্রন্থগুলোর তালিকা দেয়া হয়েছে, সেটা কিন্তু খুব সমৃদ্ধ। যেমন সিরাত বিষয় কোর্সে প্রাচীন গ্রন্থগুলোর সঙ্গে আল্লামা শিবলী নোমানী এবং আবুল হাসান নদভির সিরাত বিষয়ক গ্রন্থও আছে। কিন্তু থাকলে কী হবে—ছাত্ররা নিজেরা পড়ছে না, শিক্ষকরাও পড়াচ্ছেন না। পড়ানো হচ্ছে ভাসা ভাসা কিছু বিষয়, যেগুলো বহুল প্রচলিত। সিরাতের গভীর কোনো আলোচনা এখানে করা হয় না। এমন সব বিষয়েই।’
এর পেছনের কারণ জানতে চাইলে ইসলামিক স্টাডিজের আরেক ছাত্র হাসান ইনাম বলেন, ‘ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, ইসলামিক স্টাডিজ পড়তে আসে দুই ধারার ছাত্র—মাদরাসা এবং কলেজ। মাদরাসার ছাত্ররা আরবি পারে, ইংরেজিতে হয়ত দুর্বল। কলেজের ছাত্ররা ইংরেজি পারে, কিন্তু আরবি জানেই না। শিক্ষক ইসলামি পরিভাষা এবং বিভিন্ন বিষয়গুলো আরবিতে বলতে গেলে বুঝে না কলেজের ছাত্ররা। ইংরেজিতে বলতে গেলে বুঝে না মাদরাসার ছাত্ররা। এই উভয়মুখী সঙ্কট এড়াতে শিক্ষকগণ অত গভীর আলোচনায় যান না। সাধারণ বিষয়গুলোই পড়ান। ছাত্ররাও গুটিকয়েক সাজেশন পড়ে পরীক্ষা দেয়। এমন করে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞানটাও শিখতে পারছে না ছাত্ররা।’
ইংরেজিতেও পিছিয়ে থাকছে ছাত্ররা
ডিপার্টমেন্ট ইসলামিক স্টাডিজের হওয়ায় ইসলামিক সাবজেক্টগুলোই থাকে মূল ও প্রধান। নন-মেজর হিসেবে থাকে ইংরেজি, এন্ট্রোপলজি, সোশিওলজি ইত্যাদি। কোনো কোনো ভার্সিটিতে নন-মেজর বিষয়গুলো থাকে বেশ অবহেলিত। এরমধ্যে ইংরেজি অন্যতম ফলে ছাত্ররা তাতেও উন্নতি করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্র আব্দুল্লাহ ফাতেহকে জানান, ‘নন-মেজর বিষয়গুলো সাধারণত ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরাই পড়ান। অতিথি শিক্ষকদের আনতে চাইলেও অনেক সময় আনতে পারেন না। ফলে অনেক কোর্স নামকা ওয়াস্তে সিলেবাসের অর্ন্তভুক্ত থাকলেও সে বিষয়ে ছাত্রদের তেমন জানাশোনাই হচ্ছে না। যেমন আইসিটি থাকলো নন-মেজর। আইসিটি ডিপার্টমেন্টের কাউকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে এনে বিষয়টি আমাদের পড়ানোর কথা। কিন্তু শিক্ষক রাজি না হওয়ায় বিষয়টি পড়াচ্ছেন আমাদেরই কোনো শিক্ষক। কিন্তু তিনি ত আইসিটি বিষয়ে অভিজ্ঞ না। তিনি পড়ালেও কেমনই বা পড়াবেন। একই হিসাব ইংরেজির ক্ষেত্রেও।’
এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, নন-মেজর বিষয়গুলোও ঠিকমতো হয় না, মেজর বিষয়গুলোতে ত দুর্বলতা থাকেই। না ঘর কা, না ঘাটকা।’
নেই আরবি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, কর্মশালা
ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভাষা শেখার অন্যতম একটি মাধ্যম ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব এবং কর্মশালা। আরবি ভাষাশিক্ষার সঙ্কট কাটাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবির জন্য আলাদা কোনো ক্লাব কিংবা কর্মশালা নেই। এ প্রসঙ্গে ঢাবির ছাত্র হাসান ইনাম বলেন, ‘ঢাবিতে ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব আছে। সেখানে আরবি, ইংরেজি সহ সবভাষারই সেকশন আছে। কিন্তু আরবির জন্য আলাদা ক্লাব এখনও আমি খুঁজে পাইনি।’ হাসান ইনাম আরও বলেন, ‘আগে সেমিস্টার ছিল ৬ মাসের, এখন হয়েছে ৪ মাসের। ফলে সিলেবাসের বাইরে কিছু পড়ার সুযোগও থাকে না। পুরো প্রক্রিয়াটা হয়ে গেছে সিলেবাসকেন্দ্রীক।’
একই কথা স্বীকার করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল্লাহও। তিনি আরেকটি বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যেহেতু ইসলামিক স্টাডিজে পড়েও সরকারি সব চাকরিতে ফাইট করা যায়, তাই ছাত্ররা আরবি পারে কি পারে না, তার দিকে খেয়াল করে না। বরং সারাদিন বিসিএসের বই নিয়ে বসে থাকে। কোর্সের বই না পড়ে সবাই বিসিএসের বই পড়ে। ফলে আরবিটা অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে।’
কী বলছেন শিক্ষকরা
এই সঙ্কটের কথা একবাক্যে স্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘এটা একটা বাস্তব সঙ্কট। এটা কাটানোর চেষ্টা করছি। সামনে সিলেবাসে কিছু যুক্ত করার চেষ্টা করব আরবি সঙ্কট দূর করার জন্য।’
এই সঙ্কট দূরীকরণে আরবি বিষয়ক কর্মশালা এবং ক্লাবের আবশ্যকতার কথা স্বীকার করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তাজাম্মুল হক। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সহজেই এসব কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। এসব আয়োজন না করলে এই সঙ্কট কাটবে না। কিন্তু আয়োজনটাই করা হয় না। ফলে যেমন আছে তেমনই থেকে যাচ্ছে।’
The post সমস্যার অন্ত নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজগুলোতে appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a6%bf/
No comments:
Post a Comment