Monday, September 12, 2022

আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে ইসলামি দলগুলো?

মুনশী নাঈম:

২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত জুলাইয়ে সংলাপ সেরেছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া বাকি সব ইসলামি দলগুলোই অংশগ্রহণ করেছে। সংলাপে অংশ নেয়া মানেই নির্বাচনে অংশ নেয়া না। ইসলামি দলগুলো বলছে, সংলাপে দেয়া তাদের শর্তগুলো ইসি ঠিকমতো পালন করলে তবেই তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। নতুবা অধিকাংশ দলই নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে মনোভাব প্রকাশ করেছে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১০টি দল ধর্মভিত্তিক। নিবন্ধিত ইসলামপন্থী দলগুলো হলো— ১. বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (নিবন্ধন নং ০১৯), ২.বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (নিবন্ধন নম্বর ০২০), ৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ০২৩), ৪. জাকের পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ০১৬), ৫. ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ০৩০), ৬. ইসলামী ঐক্যজোট (নিবন্ধন নম্বর ০৩২), ৭. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (নিবন্ধন নম্বর ০৩৩),৮.ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ০৩৪), ৯. বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (নিবন্ধন নম্বর ০৩৫), ১০. খেলাফত মজলিস (নিবন্ধন নম্বর ০৩৮)।

এরমধ্যে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে তৃতীয় স্থান লাভ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

সংলাপে ইসলামি দলগুলোর প্রস্তাবনা

সংলাপে ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। এরমধ্যে রয়েছে: নির্বাচনকালীন সরকারের আকার সীমিত করা, ৩০ জনের বেশি প্রার্থী দিলে বেতার-টিভিতে প্রচারের সুযোগ, আস্থা অর্জন করে ইভিএমের ব্যবহারের সুপারিশ। খেলাফত মজলিস জানিয়েছে ১৫ দফা দাবি। এরমধ্যে রয়েছে: স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করা, ভোটের ৭ দিন আগে সেনা মোতায়েন, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, ব্যালট পেপারে ভোট করা, ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার।

খেলাফত আন্দোলন জানিয়েছে ৪০ দফা। এরমধ্যে রয়েছে: জন প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করা, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া, সংরক্ষিত মহিলা আসন বিলুপ্ত করা, ইভিএম ব্যবহার না করা, সংসদ ভেঙে নির্বাচন, ‘না’ ভোট চালু, দলের সব কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম জানিয়েছে ১১ দফা: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন ইসির অধীনে ন্যস্ত করা, সব আসনে ব্যালট পেপার ব্যবহার, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাহীন দলের নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট জানিয়েছে ৯ দফা। এরমধ্যে রয়েছে: পাঁচটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে রাখা, জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে নির্বাচন কর্মকর্কতাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা, ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া, ৩৩% নারী নেতৃত্বের বিধান সংশোধনের সুপারিশ। তরিকত ফেডারেশন জানিয়েছে ১১ দফা। এরমধ্যে রয়েছে: সংসদ নির্বাচন ২/৩ ধাপে করা যেতে পারে; যেন প্রতি কেন্দ্রে সেনা মোতায়েন করা যায়। সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম; ১৫০ আসনে ব্যালট পেপার এবং স্থানীয় নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে। নির্বাচনী ব্যয় ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন

ইসির অনুষ্ঠিত সংলাপে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে ইভিএমের মাধ্যমে ৩০০ আসনে ভোট করতে চাইলেও বেশির ভাগ দল এর বিরোধিতা করেছে। বিরোধিতা করেছে ইসলামি দলগুলোও।

প্রথমে জনগণের আস্থা অর্জন করে তারপর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে ইসলামি ঐক্যজোট। দলটি বলেছে, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেই গ্রহণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিটি নির্ভুল নিখুঁত হওয়া আবশ্যক। প্রযুক্তির জগতে বাংলাদেশ সবেমাত্র প্রবেশ করেছে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে এখনো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। সুতরাং এ বিষয়ে প্রথমে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে বলে ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে। নির্বাচন কমিশনকে এক্ষেত্রে জনগণের শঙ্কা কাটানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে। ইসলামী ঐক্যজোট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ জনগণের এই শঙ্কা কাটানোর লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করে।’

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানিয়েছে খেলাফত আন্দোলন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বলেছে, দেশের নারী-পুরুষ ভোটারদের অধিকাংশই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট দিতে অভ্যস্ত না হওয়ায় ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটেই ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। খেলাফত মজলিশ জানিয়েছে, ইভিএম যেহেতু অদ্যাবধি জনগণ ও রাজনীতিকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পরিহার করতে হবে। তবে, ভোটার ভেরিফাইএবল পেপার ট্রেলার সংযুক্ত করে স্থানীয় নির্বাচনে পরীক্ষা করা যেতে পারে। মেশিন যেহেতু মানুষ দ্বারা পরিচালিত হয় তাই সেগুলো ব্যবহার করার আগে রাজনৈতিক সমঝোতা ও সবদলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম চালু করার চেষ্টা করলে সন্দেহ আরো বেশী প্রবল আকার ধারণ করবে, যা কোন অবস্থায়ই কাম্য নয়।

ইসলামি দলগুলো কি নির্বাচনে যাবে?

দলীয় সরকারের অধীনে কোনভাবেই কোন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। নেতৃবৃন্দ বলছেন, যদি তারা আশ্বস্ত হতে পারে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তাহলে তারা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যায় কিনা।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন হবে কিনা আর হলেও কেমন হবে সেটা হলো বিবেচ্য বিষয়। বিগত দুটি নির্বাচন যেভাবে হয়েছে যদি আগামীতেও সেরকম নির্বাচনের আয়োজন চলে তবে তাতে অংশ নেয়া না নেয়া সমান কথা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে আমাদের আন্দোলনও অব্যাহত আছে। আমরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছি। ৭ বিভাগে সমাবেশ করেছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তোরণের কোন উপায় নেই।’

দলটি দেশের ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। আগামী নির্বাচনে এককভাবে নয় বরং জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত চায় দলটি।

এখনই কিছু নয়, তবে নির্বাচনের পূর্বে মজলিসে শুরায় আলোচনা করে বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে জোট কিংবা আসন ভিত্তিক সমঝোতা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি ফাতেহকে জানান, ‘এই মুহুর্তে আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইসলামী ঐক্যজোটকে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে নিয়মিত কাজ করছি।’

দেশের ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট করলে ভালো ফল আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট এবং আমরা সব সময় সত্যের পক্ষে, সত্যবাদিতার পক্ষে। আলেমগণের দায়িত্ব সত্যের পক্ষে লড়াই করা। আমরা মনে করি, সত্যের পক্ষের সব ইসলামী শক্তি এক জায়গায় আসতে পারলে ভালো একটি অবস্থা তৈরি হতে পারে।‘

নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে ফাতেহকে জানিয়েছন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। কারও সঙ্গে জোট করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হোক, তারপর দেখা যাবে কী হয়।’

সংলাপে দেয়া শর্ত না মানলে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি নাসিরুদ্দিন খান। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম কুমিল্লা জেলার সেক্রেটারি মাওলানা শাহ জালাল ফাতেহকে জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনে যাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আমরা আগে ২০ দলীয় জোটে ছিলাম। সরকারের চাপে সেখান থেকে বের হতে হয়েছে। সংলাপেও অংশ নিয়েছে সরকারের চাপে। সামনে নির্বাচনে আসলে কাদের সঙ্গে নির্বাচন করবে, তা ভাবনার বিষয়।’

The post আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে ইসলামি দলগুলো? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%80-%e0%a6%ad%e0%a6%be/

No comments:

Post a Comment