Wednesday, September 23, 2020

আল্লামা আহমদ শফী : শাহবাগের মোকাবেলায়

মো: আশরাফ আজীজ ইশরাক ফাহিম:

শাহবাগের পূর্বেও এদেশে শাহবাগীরা ছিলো, এখনও আছে। ২০০৯-১০ সালে যখন যুদ্ধাপরাধ বিতর্ক তুঙ্গে তখনই আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। একটা প্রশ্ন সবসময় আমাকে তাড়া করেছে : জামায়াতের বিরোধিতা কেন করা হয়? ইসলাম বিরোধিতার জায়গা থেকে জামায়াত বিরোধিতা করা হয় নাকি জামায়াতের ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে’ মানুষ ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণাসূচক মন্তব্য করে? দীর্ঘদিন এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি হতে পারে তা নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হয়েছে। চিন্তার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি ২০১৩ সালে মনে হওয়াটা সেরকমটা ছিল না। তবে ইসলামোফোবিক ব্রাহ্মণ্যবাদী যে গোষ্ঠী তাদের আচরণ দিয়ে সাবিত করে দেয় যে যারা জামায়াতের বিরোধিতা করে তারা আসলে ইসলাম বিরোধিতার জায়গা থেকেই জামায়াতের বিরোধিতা করে। তবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারটা এরকম না। এটা বুঝতে আমাকে অনেক সময় নিতে হয়েছে, এটা অস্বীকার করবো না।

মূলধারার জামায়াত বিরোধীরা দু’টো গোষ্ঠীতে বিভক্ত। প্রথম পক্ষে রয়েছে ইসলামাতঙ্কগ্রস্থরা যাদের কথা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। এরা মোটাদাগে ইসলামকেই পছন্দ করে না এবং যে কোন মূল্যে ইসলামকে খেদাতে বদ্ধপরিকর। ইসলাম বিরোধিতার জায়গা থেকেই তাদের জামায়াত বিরোধিতা। এরা শুধুমাত্র জামায়াত না, ইসলামী যে কোন কিছুরই বিরোধী। একারণে শাহবাগের ছয় দফায় তারা জামায়াতসহ সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী তুলেছিল। শিক্ষানীতির মত বিষয়ে তারা শালীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন বিষয়ের বিন্দুমাত্র অন্তর্ভুক্তিও সহ্য করতে পারে না। এগুলোর সাথে জামায়াত বা একাত্তরের দূরতম সম্পর্কও নাই। এমনকি একাত্তরের বহুপূর্বে ১৯৬৯ সালের ১৫ই আগস্ট রেসকোর্স মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের ছাত্র আব্দুল মালেককে তারা প্রকাশ্য দিবালোকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে শুধু ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কথা বলার জন্য। একাত্তরের পর এরাই রেডিও-টেলিভিশনে সালাম-আজান বন্ধ করে শুভ সকাল-শুভ সন্ধ্যার প্রচলন করেছিল। এথেকে স্পষ্ট যে এদের জামায়াত বিরোধিতা আসলে ইসলাম বিরোধিতা থেকেই উতসারিত। এরা জামায়াতের বিরোধিতা করে (অপ)আদর্শিক কারণে।

জামায়াত বিরোধীদের মধ্যে দ্বিতীয় দলে রয়েছে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি। সময়ে-সময়ে জামায়াত বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সাথে জোট গঠন করেছে। পক্ষ বদল করেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী প্রফেসর গোলাম আযমের কাছে এসে দোয়া চেয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং মরহুম জামায়াত নেতা মাওলানা নিজামী এক টেবিলে বসে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছে। অর্থাৎ এখানে ইসলাম বা আদর্শ নয় বরং রাজনৈতিক ফায়দাই মূখ্য ছিল। আওয়ামী লীগ যখন জামায়াত বিরোধিতা করে তখন সেটা রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেই করে। এখানে ইসলাম প্রাধান্য পায় না। দেখা গেছে জামায়াতের বিরোধিতা করলেও আওয়ামী লীগ হেফাজতের তোষণ ঠিকই করছে। যদি আওয়ামী লীগ ইসলামাতঙ্কগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হত তাহলে এটা তারা করত না। বরঞ্চ জামায়াতের বিরোধিতা করতে গিয়েই অনেকক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জামায়াত বিরোধিতা এবং শাহবাগীদের জামায়াত বিরোধিতার মধ্যে এটাই মৌলিক পার্থক্য।

প্রায়সময়ই ইসলামপন্থীরা এই পার্থক্য বুঝতে না পেরে নির্বোধের মত আচরণ করেন। যেহেতু বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদী একনায়কতন্ত্রের কবলে পড়েছে সেমতে আমার মত হচ্ছে এই শাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, এর মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর মাথা থেকে ইসলামাতঙ্কগ্রস্থ ভূতদের বিতাড়ন করা। ভুলে গেলে চলবে না যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশকে মুসলিম দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, রেডিও-টেলিভিশনে সালাম-আজান ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং ইসলামাতঙ্কদের এক হাত নিয়েছিলেন। ইসলামপন্থীরা যদি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে তবে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের জন্য ইসলাম বা ইসলামপন্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার কোন বিকল্প থাকে না। এটা একনায়কতান্ত্রিক সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইসলামপন্থীদের আক্রমণের মুখে স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর সাথে মিত্রতা স্থাপন করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে ঐ গোষ্ঠীটিই আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে বিইসলামিকীকরণের আজন্ম লালিত খোয়াব পূর্ণ করে চলছে।

শাহবাগের দু’টো দিক আছে। শাহবাগের রাজনৈতিক দিক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক কারণে শাহবাগকে ব্যবহার করেছে এই দলটি। এছাড়া আর যারা শাহবাগে ছিল তারা হচ্ছে ঐসকল লোক যাদেরকে শাহবাগী হিসেবে ক্যাটাগরাইজ করা হয়েছে। এরা আদর্শগতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে। এদের আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে না, ব্যক্তি সাঈদী বা ব্যক্তি নিজামীর বিরুদ্ধেও না, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও না। এদের যুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের সাথে। আদর্শিক শাহবাগের রাজনৈতিক মৃত্যু ২০১৩ সালেই ঘটেছে। ২০১৫ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে তাকে ক্ষণিকের জন্য পুনর্জন্ম দেওয়া হয়েছিল। তবে আদর্শিক শাহবাগের যে সামাজিক ও সামগ্রিক রুপ তার জন্ম-মৃত্যু কোনটিই শাহবাগের মধ্য দিয়ে হয়নি। এরা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ২০১৩ সালে ব্যক্তিগতভাবে আমি শাহবাগের বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম শাহবাগীদের এই রুপটার কারণেই। হেফাজতের উত্থানও ঘটেছিল এই শাহবাগের বিরুদ্ধেই। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এখানে নিছক রাজনৈতিক দল জামায়াতের বিরোধিতা হচ্ছে না বরং ইসলামাতঙ্কের চাষ চলছে। এবং এটিই শুধুমাত্র জামায়াত নয়, জামায়াতের পদ্ধতিগত সমালোচকদেরও শাহবাগের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। হেফাজত এবং আহমদ শফী সবাই জামায়াতের সমালোচক হওয়া সত্ত্বেও শাহবাগবিরোধী অবস্থান নিতে কালক্ষেপন করেন নাই একারণেই। আজকে বাংলাদেশ যে শাহবাগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সেটিও এই শাহবাগ; সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধবিরোধী শাহবাগ। এই শাহবাগের সাথে আওয়ামী লীগের ততটাই সম্পৃক্ততা আছে যতটা আছে বিএনপির।

আল্লামা শফী খুব নিষ্ঠার সাথে আদর্শিক শাহবাগের রাজনৈতিক কবর দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাথে ‘যোগাযোগ’ করে আদর্শিক শাহবাগের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও অনেকাংশে শ্লথ করেছেন। বিএনপি-জামায়াতের অনেকেই একারণে মাওলানা শফীর উপর খাপ্পা। তাদের কথা হচ্ছে শফী কেন জালেমের সাথে হাত মেলাল। অথচ তারা ভুলে যায় যে দীর্ঘদিন আল্লামা শফী বিএনপি-জামায়াতকে সুযোগ দিয়েছেন। এক পর্যায়ে যখন তিনি দেখেছেন বিএনপি-জামায়াত নিজেরা আন্দোলনে না নেমে হেফাজতের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার খোয়াব দেখছে তখন তিনি মসজিদ-মাদ্রাসা হেফাজতার্থে আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ করেন। এটা পুরাপুরিভাবে আল্লামা শফীর দূরদর্শীতা ও কৃতিত্ব। এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখার কোন সুযোগই নাই।

আল্লামা শফী ইসলামকে অরাজনৈতিকভাবে উপস্থাপন করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ের কাছে ইসলামকে গুরুত্বপূর্ণ করেছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের খেয়ালমত চললে জোর করে আওয়ামী লীগকে আদর্শিক শাহবাগীদের ক্যাম্পে ঠেলে দিতে হত। বিএনপিও ইসলামকে taken for granted হিসাবে দেখার মওকা পেত। এটা একনায়কতান্ত্রিক সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ : ক্ষমতাবান জালেমের মোকাবেলায় দুর্বল মজলুম । আল্লামা শফীকে নিয়ে শাহবাগী ও বিএনপি-জামায়াতের আহাজারি একই সূত্রে গাঁথা। উভয়েরই কথা হচ্ছে আল্লামা শফী ফ্যাসিবাদের জুলুমকে বৈধতা দিয়েছেন। শাহবাগীদের আহাজারির কারণ আল্লামা শফীর আগে ফ্যাসিবাদের সহযোগী হয়ে শাহবাগীরা নিজেদের ইসলামোফোবিক আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারছিল বিনা বাঁধায়। কিন্তু শফী তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। ফ্যাসিবাদের সহযোগী হওয়ার শাহবাগী খোয়াব ভঙ্গ করায় শাহবাগীদের যত গোস্বা। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের কাছে ইসলামের হেফাজতের চেয়ে জুলুম ( পশ্চিমা অর্থে অধিকার রক্ষা) বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে। অথচ ইসলামের ইতিহাসে জালেম-ফাসেক শাসকের অভাব নাই।

কাজেই পশ্চিমা অর্থে অধিকার প্রতিষ্ঠার চেয়েও বড় কাজ হচ্ছে শাহবাগ ঠেকানো। একারণে আজকাল অনেকসময় বিএনপি-জামায়াত ও শাহবাগীদের এক কাতারে দেখা যায়।  সাবেক-বর্তমান জামায়াত নেতারা অনেকক্ষেত্রে চিহ্নিত শাহাবাগীদের সুরে কথা বলেন। কিন্তু হেফাজত তো সিয়াসী জুলুম ঠেকানোর জন্য না। হেফাজত ও আল্লামা শফীর সিলসিলা ইসলাম হেফাজত করা। শির্‌ক যে সর্বোচ্চ জুলুম এটা unapologetically এলান করাটাই আল্লামা শফীর লেগ্যাসি ; বিএনপি-জামায়াতের সেই তাকত নেই। তাই তিনি ইসলামোফোবিক শাহবাগীদের বানোয়াট “অধিকার” এর বদলে সরকারের সাথে ‘যোগাযোগ করে’ যেকোন ‘সহনীয় কিছুর’ বিনিময়ে তওহীদের স্বীকৃতি আদায়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবং এটা ফখরের বিষয়। এখানে কোন হীনম্মন্যতার সুযোগ নাই। আজকে অনেকে মাওলানা শফীকে ‘সরকারের দালাল’ বলেন। অথচ এরা ভুলে যান যে শাহবাগীদের সাথে হাত মিলায়ে পশ্চিমা লিবারেল অধিকারের দালালী করার চেয়ে সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখা হাজার গুনে বেহতর এবং ইসলাম সম্মত।

আল্লামা শফীর সিলসিলা আমাদের যুগ যুগ ধরে দেখিয়ে দেবে যে তাওহীদের সওয়াল উঠলে মুসলমানরা অন্যসমস্ত petty concern-কে অগ্রাহ্য করে unapologetically ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব এলান করবে। শাহবাগীরা যদি ইসলামের মোকাবেলায় সেকুলার জুলুমতন্ত্রকে মেনে নিতে রাজি হন তাহলে মুসলমানরাও শাহবাগের মোকাবেলায় ইসলামের ফ্লেভারওয়ালা জুলুমতন্ত্রকে সাময়িকভাবে মেনে নিবে। জালেমের বিরোধিতা করার দায় হেফাজত বা আল্লামা শফীর একার না। আর ইসলামবিদ্বেষের চেয়ে বড় জুলুম আর কোন কিছুই নাই। আপাতদৃষ্টিতে এতে জালেমেরই সুবিধা মনে হলেও দার্শনিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক সব দিক থেকে এইটাই সঠিক অবস্থান। আল্লামা শফী এই সঠিকতাকে চিনতে ভুল করেন নাই। আজকে যারা জুলুমের বিরোধিতা করতে চান তারা তওবা করে শাহবাগ ছেড়ে ইসলামে দাখিল হন; তখনই কেবল আল্লামা শফীর দোয়া আপনাদের সাথে থাকবে। কিন্তু মনের মধ্যে শাহবাগ সুপ্ত রেখে কোনমতে একটু শক্তি পাইলে ক্ষমতার সাথে আঁতাত করে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে ক্রুসেড চালাবেন – এইটার রাস্তা আল্লামা শফী বন্ধ করে দিয়ে গেছেন।

( লেখক সরকারের সাথে ‘সম্পর্ককে’ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত মত। একনায়কতান্ত্রিক শাসনে মাজলুম দুর্বলদের পক্ষে থেকে ‘রাজনৈতিক অধিকার’ আদায়ে প্রাধান্য দেওয়া হবে নাকি ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় দেওয়া হবে গুরুত্ব, প্রয়োজনে স্বৈরাচারীর সাথে যোগাযোগ করা হবে–এটা কঠিন বিতর্ক ও জটিলতার বিষয়। সুদান ও লিবিয়ার মুসলমানরাও এই জটিলতায় পড়েছেন, দ্বিমত করেছেন। আমরা এককথায় বলতে পারি, ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আবার রাজনৈতিক অধিকার আদায়ও শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।–– সম্পাদক )

The post আল্লামা আহমদ শফী : শাহবাগের মোকাবেলায় appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a6%a6-%e0%a6%b6%e0%a6%ab%e0%a7%80-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%87/

No comments:

Post a Comment