Friday, September 24, 2021

হুমাইরা—দিলরুবায়ে সারওয়ারে কায়েনাত ( ৭ম পর্ব)

সুমাইয়া মারজান:

অনুরাগের রূপালী রেণু

কেবল যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ভালোবাসতেন তা কিন্তু নয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। নইলে বয়েসের জটিল সমীকরণে আটকা পড়া একটা সম্পর্ক ভালোবাসার সহজ, সুন্দর সমীকরণে রূপ নেওয়াটা সম্ভবপর হলো কিভাবে!

সবার সাথে নয়, সকলের শামিলে নয়—ভালোবাসার মানুষটি একান্তই আমার! প্রেমাস্পদ, প্রিয়তম মানুষটি আর কারোর নন। আমার নিজস্ব আকাশের একলা চাঁদটি যেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে ঠিক এমন করেই চাইতেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।

কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তো ছিলেন সবার জন্য ! তিনি সকলের কাছে পৌঁছতে চাইতেন যত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েই হোক না কেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পরবর্তী বিয়েসমূহ সম্ভবত এ কারণেই সংঘটিত হয়েছিলো।

তার একজন দুজন নয়! নয়জন সতিন ছিলেন। সবার সঙ্গে নবীজির ভালোবাসাটা ভাগ করে নেওয়া তার জন্য ছিল কষ্টকর। কখনো কখনো নারীসুলভ বিষাদে বিষণ্ণ হয়ে উঠতো মন। তার উপর নবীজির জন্য প্রায়ই আরবের নারীরা নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছে বলে ঘোষণা দিতো। সেসব আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা মনে মনে শঙ্কিত হতেন যদি আরও কারোর সাথে ভালোবাসার মানুষটিকে ভাগাভাগি করে নিতে হয়!

‘আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে তাতে আপনার কোনো দোষ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে; তারা দুঃখ পাবে না এবং আপনি যা দেন, তাতে তারা সকলেই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে, আল্লাহ জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।’

সূরা আহযাবের এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে বললেন, আপনার প্রভু তো আপনার চাহিদা পূরণে বড়ই তৎপর!

মূলত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চাইতেন সারাক্ষণ নবীজির পাশে থাকতে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা পারতেন না। যেখানে তার মন চাইতো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে একান্ত তার করে রোজই যেন পান সেখানে নয়দিন পরপর পেতেন।

নবীজির প্রতিজন স্ত্রী যেন নবীজিকে তার কাছ থেকে একদিন একদিন করে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। নবীজিকে ভীষণই ভালোবাসতে থাকা হুমাইরা পাখির জন্য তা সহ্য করা বিরাট ত্যাগ স্বীকারের ব্যাপার ছিল। তিনি তা সহ্য করেছেন। স্রেফ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে ভালোবেসে।

তাই যেদিন তার পালা আসতো তিনি চাইতেন সারাক্ষণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পাশে থাকতে। কোনো কারণে তা না পারলে কষ্ট পেতেন। একরাতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে ঘুমানোর সময় জুতা খুলে খাটের নিচে রাখলেন। কাপড়টাও রাখলেন কাছাকাছি। মনে হচ্ছিলো তিনি একটু পরেই উঠে আবার বাইরে কোথাও যাবেন। সাধারণত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম রাতে ইবাদতের জন্যও স্ত্রীদের কাছে অনুমতি চাইতেন। কারণ তিনি তার উপর থাকা অন্যের হক সম্পর্কে বেশি সচেতন থাকতেন। তো সেদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রস্তুতিমূলক শোয়ার ভঙ্গি, আচরণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বুঝে আসছিলো না। এজন্য ভেতরে ভেতরে তিনি উৎসুক হয়ে উঠেন। একসাথে শুয়ে গেলেন দুজনেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একসময় সন্তর্পণে বিছানা থেকে উঠলেন। পায়ের কাছে রাখা জুতা ও কাপড় নিলেন আস্তে আস্তে। আওয়াজ যেন না হয় এমন করে। পা টিপে টিপে হাঁটছিলেন যেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সজাগ না হয়ে যান। কারণ নবীজি ভেবেছিলেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঘুমিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি তো ঘুমাননি। নবীজি বের হয়ে যেতেই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বিছানায় উঠে বসলেন। তখন মধ্যরাত প্রায়। বাইরে নিশুতি অন্ধকার। মদিনার খেজুর বিথিকা, চাঁদ, তারা, হাওয়া সব ঘুমে বিভোর। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বেরিয়ে পড়লেন নবীজির পিছে পিছে। চেহারা চাদরাবৃত। যেন কোন রহস্যের সন্ধানে চলেছেন। অবশ্য তিনি যে ব্যাপারের মূল খুঁজতে বের হয়েছেন তা তার কাছে বড় একটা রহস্যই বটে। তিনি প্রায়ই দেখেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে কোথায় যেন চলে যান। ভেবে কূল পান না মাঝেমধ্যে এভাবে কোথায় যান তার প্রিয়তম। যেহেতু অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গেলেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার কাছে অনুমতি নিয়ে নেন। কিন্তু মাঝেমধ্যের এই যে তার অজান্তে যাওয়া- আসা করেন সেটা কোথায়! জোর একটা কৌতূহলের হাওয়া যেন তাকে আজ নবীজির পিছনে পিছনে নিয়ে এলো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এগিয়ে চলেছেন ধীর কদমে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও তাকে একইভাবে অনুসরণ করে আসছেন। চলতে চলতে নবীজি এলেন জান্নাতুল বাকিতে। মসজিদে নববি থেকে একটু দূরেই জান্নাতুল বাকি। যেখানে আছে অসংখ্য সাহাবির কবর। জান্নাতুল বাকিতে পৌঁছে নবীজি দাঁড়িয়ে গেলেন। পার হলো বেশকিছু মৌন সময়। কিছুক্ষণ পর আকাশের দিকে দুইহাত তুললেন। কান্নার গমকে কেঁপে উঠছেন যেন। অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছে দাড়ি। এভাবেই পৃথিবীর বুক থেকে তার আত্মীয় স্বজন, আহবাবদের জন্য দোয়া করতে লাগলেন। নবীজি বেশ কিছুক্ষণ সেখানে রইলেন। দোয়া শেষ করে ঘরের পথ ধরলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা দ্রুত ঘরে ফিরতে লাগলেন। তিনি চাচ্ছেন না নবীজিকে তার গোপনে অনুসরণ করার ব্যাপারটা জানতে দিতে। তাই দৌড়ে ঘরে এসে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। নবীজিও ঘরে এসে আগের মতোই পা টিপে টিপে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। শুয়েই বুঝতে পারলেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কিছু একটা হয়েছে। তিনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন, বুক ধড়ফড় করছে।

আয়েশা, কী হয়েছে তোমার? জিজ্ঞেস করলেন নবীজি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জবাব দিলেন, কিছু না।

কিছু তো একটা হয়েছে! নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলেন। তাই বললেন, তুমি কি নিজে থেকে বলবে? না তুমি চাও আল্লাহ এ ব্যাপারে আমাকে জানিয়ে দিন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কেঁপে উঠলেন যেন। পাশ ফিরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক! তারপর পুরো ব্যাপারটা নবীজিকে খুলে বললেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ও আচ্ছা! তাহলে আমি আমার সামনে যে ছায়াটি দেখতে পেয়েছিলাম তা তোমারই ছিল? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ধরা পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, হুম, আমিই ছিলাম। নবীজি হেসে বললেন, কখনো এমনটা ভেবো না যে আল্লাহর রাসুল তোমার সঙ্গে বেইনসাফি করবেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তার ভুল বুঝতে পারলেন। লজ্জাবনত হয়ে বললেন, মানুষ তার কোন ব্যাপার যতই গোপন রাখুক! আল্লাহ তো সম্যক অবগত।

আরেকদিনের ঘটনা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতে একসাথেই ঘুমিয়ে ছিলেন দুজনে। মাঝরাতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘুম ভেঙে গেলো। বিছানায় হাত দিয়ে দেখেন নবীজি পাশে নেই। পেরেশান হয়ে গেলেন। ভাবলেন নবীজি তাকে রেখে অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। ঘরে বাতিও নেই। নিকষ কালো অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। কিশোরী মনে জমলো অভিমানের মেঘ। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ভাবলেন, দেখি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কোথায় গিয়েছেন! এইসব ভেবে ভেবে হাতড়ে বিছানা থেকে নামার সময় তার হাত নবীজির পা স্পর্শ করলো। এগিয়ে দেখেন নবীজি সিজদারত। তাকে রেখে কোথাও যাননি।

শুনতে পেলেন নবীজির মোনাজাত—’হে আমার প্রভু! আমি আপনার রাগের পরিবর্তে আপনার সন্তুষ্টি চাই। শাস্তির পরিবর্তে চাই ক্ষমা। আমি সর্বদা আপনার কাছেই আশ্রয় চাই। আপনি আপনার যেরকম প্রশংসা করেছেন, আমি তা করতে অক্ষম। ‘

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার নিজের ধারণার ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হলেন। নিজের উপর তার রাগ হলো। নবীজি কোন অবস্থায় আছেন আর আমার মনে কীসব উল্টাপাল্টা ভাবনা এসেছিল! নবীজির দিকে ফিরে বললেন, আপনার উপর আমার পিতামাতা উৎসর্গিত হোক হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কোন অবস্থায় আছেন আর আমি কী ধারণা করেছিলাম!

নবীজির প্রতি তার তীব্র ভালোবাসার কারণে ভালোবাসার যন্ত্র‌ণাও ছিল বেশি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে স্ত্রীদের মধ্য থেকে অন্য কেউ ভালোবাসার কথা বললে তার কষ্ট লাগতো। তাই বলে যে কারোর প্রতি কোনরূপ হিংসা-বিদ্বেষ মনে লালন করতেন তাও না। হাসিমুখেই বিরহ যাতনা সয়ে যেতেন। কারোর প্রতি কোন অভিযোগ, অনুযোগ ছিল না তার। বেশিরভাগ সময়ই সরলতার পরিচয় দিতেন সবখানে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কোন এক সফরে সঙ্গী ছিলেন আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। দিনভর কাফেলা পথচলার পর সন্ধ্যায় যাত্রাবিরতি করলেন। আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা আলাদা আলাদা উটে ছিলেন। কাফেলা থামলে দুজনেই হাওদা থেকে বের হয়ে এলেন। একসাথে বসে গল্প করতে লাগলেন। গল্প করতে করতে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাথায় খেলে গেলো একটা দুষ্টু বুদ্ধি। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, চলেন আমরা উট বদলাবদলি করি। দেখি, রাসুল এসে কী করেন! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সরলভাবে নিলেন ব্যাপারটা। ভাবলেন আল্লাহর রাসূল তো আমার কাছেই আসবেন। উট বদল করলেই কী! তিনি রাজি হয়ে গেলেন। আর হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহাও জানতেন নবীজি প্রথম রাতটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথেই কাটাবেন। তিনিও নবীজির সাথে কিছুক্ষণ খুনসুটি করার সুযোগ পাবেন। একটুপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সাওদা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাওদায় বসে দেখতে পেলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার হাওদার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো! নবীজি তার হাওদায় তাকে না পেলে ফিরে আসবেন তো! নবীজি যদি না আসেন! আজকের রাত যদি হাফসার সাথেই কাটিয়ে দেন? তাহলে তো তিনি আজকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন। তার ভীষণ মন খারাপ হলো। কান্না পেয়ে গেলো যেন। নবীজি তো আর তাদের এইসব কাহিনির খবর জানেন না। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাওদায় হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে পেলেন। তাকে সালাম দিয়ে সেখানেই বসে পড়লেন। এদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তো অধীর আগ্রহে বসে আছেন নবীজির অপেক্ষায়। নবীজি তার কাছে কখন যাবেন! এরইমধ্যে কাফেলা চলতে শুরু করলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। মনখারাপের সময়টুকু পার করলেন খুবই কষ্টে। কাফেলা চলতে চলতে একজায়গায় এসে যাত্রাবিরতি করলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে হাওদা থেকে বের হয়ে এলেন। ঘাসের স্তুপের উপর পা ছড়িয়ে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলেন, হে আমার প্রভু! আল্লাহর রাসূল চলে গেলেন আমি তাকে কিছু বলতেও পারছি না। আপনি একটি সাপ অথবা বিচ্ছু পাঠিয়ে দিন, সেটি এসে আমাকে দংশন করুক। তবুও যদি আল্লাহর রাসুল আমার কাছে একটু আসেন!

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন খুবই মেধাবী ও বুদ্ধিমতী। নবীজির মন কাড়তে কী করতে হবে তা ভালো করেই জানতেন! ভুল তো মানুষেরই হয়। তার উপর তিনি ছিলেন অল্পবয়সী কিশোরী। তারও মাঝেমধ্যে ভুল ত্রুটি হতো। কিন্তু তিনি উত্তম কৌশলে তা কাটিয়ে উঠতেন। একবার নবীজি এক কয়েদিকে গ্রেফতার করে তার হুজরায় বন্দী করে রাখলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, সে যেন পালিয়ে না যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অন্যান্য মহিলাদের সাথে গল্পে মত্ত হয়ে গেলে কয়েদি সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। একটু পরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এসে জানার পর গম্ভীরভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, শাস্তিস্বরূপ তোমার হাত কেটে দিতে হবে। একথা বলে নবীজি বাইরে চলে গেলেন সাহাবায়ে কেরামকে কয়েদির পালিয়ে যাওয়ার খবর দিতে। কয়েদিকে ধরে আনা হলো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিছুক্ষণ পরে ঘরে এলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার হাতদুটিকে সামনে এনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন। নবীজি কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ তিনি তো আগের ঘটনা বেমালুম ভুলে গেছেন। অবাক হয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন,তোমার হাতে কী হয়েছে আয়েশা? করছো কী তুমি! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বিষণ্ণ কন্ঠে জবাব দিলেন, দেখছি আপনি আমার কোন হাতটা কেটে দিবেন। নবীজির মনে পড়লো আগের কথা। বুঝতে পারলেন তার কথায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কষ্ট পেয়েছেন। কারণ ব্যাপারটা তো ইচ্ছাকৃত ছিল না। সাথে সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্য দুহাত তুলে দোয়া করলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার মনের আকাশের অভিমানের মেঘ সরে গিয়ে উঠলো ঝলমলা রোদ্দুর!

তথ্যসহায়িকা:

১.সহীহ বুখারী।
২.তিরমিযি।
৩.আবু দাউদ।
৪.সুনানে বায়হাকী।
৫.সহীহ মুসলিম।
৬.মুসনাদে আহমাদ।

The post হুমাইরা—দিলরুবায়ে সারওয়ারে কায়েনাত ( ৭ম পর্ব) appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%93%e0%a7%9f-5/

No comments:

Post a Comment