Tuesday, September 21, 2021

তালেবান শাসনব্যবস্থায় ‘নারী শিক্ষা’: বাংলাদেশী স্কলারগণ কী ভাবছেন?

বেলায়েত হুসাইন:

দীর্ঘ বিশ বছর লড়াই শেষে গত ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন ঘটে। এখন তারা নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তালেবান-পরবর্তী ইসলামি শাসন ব্যবস্থায় আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার কী হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। তারা অভিযোগ করেছে, বারো বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের ঘর থেকে বের হয়ে পড়াশোনার সুযোগ দিবে না তালেবান। যদিও কাবুল পতনের দু’দিন পর মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক আফগান মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তবে বাস্তবিক পক্ষে ইসলামি রাষ্ট্রে এবং ইসলামি শরিয়তে নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কতটুকু এবং তার পদ্ধতি কি-এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. এবিএম হিজবুল্লাহর নিকট।

‘দেখুন, আমার এনালাইসিস হলো, বর্তমান তালেবান কুড়ি বছর আগের তালেবান নয়। তারা অনেক পোড় খেয়েছে। অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। শরীয়তের ভিতরে থেকেই যতটুকু ছাড় দেয়া যায় যার সবটুকুই তারা করবে বলে মনে হয়। যে সমস্ত বিষয়ে ইতিপূর্বে তারা ইসলামের কঠোরতা দেখিয়েছিল সে সব বিষয় তারা সহনশীলতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু মুসিবতের ব্যাপার হলো, এখন মিডিয়াগুলো তালেবান অমুকখানে ধর্ষণ করছে কিনা তমুকখানে হত্যা করছে কিনা, কোন বাসায় হামলা করছে কিনা-এ ধরণের কোন খবর তারা দিতে পারছে না। উপরন্তু তালেবান কাবুলে প্রবেশের পরে সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এক অনন্য নজির দেখিয়েছে। এজন্য বিদেশী মিডিয়াগুলো তালাশ করে করে কোথায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায়, খোঁচানো যায় সেগুলো বের করে নিয়ে আসছে। এরমধ্যে নারী অধিকার সবচেয়ে বেশি জায়গা পেয়েছে। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, বর্তমান তালেবান মেয়েদের অধিকার, শিক্ষা, চাকরি ইত্যাদির ব্যাপারে অনেক ছাড় দিবে। তবে তালেবানের ভাষ্য অনুযায়ী সেটা অবশ্যই হবে শরিয়তের বিধিনিষেধ মেনে।’

আর ইসলামি শরিয়তে নারীদের সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে সেটা প্রচলিত সহশিক্ষা নয়; বরং ছেলে-মেয়ের শিক্ষাব্যবস্থা আলাদা আলাদা থাকবে। সেইসঙ্গে সহশিক্ষা আদর্শ সমাজ গঠনে বড় একটি প্রতিবন্ধক বলে মনে করে তালেবান। এ প্রসঙ্গে ড. এবিএম হিজবুল্লাহ বলেন, ‘তালেবান যদি সরকার গঠন করে তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকুন বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারা প্রাথমিক থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত, স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ, ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ দিবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে শিক্ষার জন্য তারা মেয়েদের ঘর থেকে বের হতে বাধা দিবে না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, নারীদের চেহারার বিষয়ে দু‘টি অভিমত আছে; যাদের রক্ষণশীল বলা হয় তারা মুখ খোলার ব্যাপারে কোন ফতোয়া দেয় না। তারা বলে, চেহারাটাও পর্দার অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু আরেকটা মত আছে যেখানে চেহারা খোলা রাখার সুযোগ আছে। দেখুন, তালেবান কিন্তু প্রথম জায়গাটি থেকে ফিরে এসেছে। যেসব নারী চাকরি করবে অথবা যেকোনো কাজে বাইরে বের হবে তাদেরকে চেহারা খোলা রেখেই কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, চেহারা ঢেকে রাখার রক্ষণশীল নিয়ম তারা চাপিয়ে দেয়নি। তবে তালেবানের শাসনব্যবস্থা আসলে কি হবে এটার বিষয়ে অনেকে বলছেন, ‘ওয়েট এ্যান্ড সি’ , তাই তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত মত দিতে আরো সময়ের প্রয়োজন আর তাদের শাসনব্যবস্থায় নারী স্বাধীনতা ও তাদের শিক্ষার কি হবে, তা নিয়ে উদ্বেগের সময় এখনো আসেনি।’

বর্ষিয়ান এ ইসলামি স্কলার মনে করেন তালেবানদের নিয়ে বিদেশী মিডিয়া নেতিবাচক প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই করছে না। তার দাবি, যেসব দেশের মিডিয়াগুলো আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার নিয়ে চিন্তিত তাদের দেশের নারীদের কি অবস্থা এটা নিয়ে তাদের চিন্তা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি এবং বলেন, ‘তারা যে ওপেনলি নারীদের শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি ইত্যাদিতে ছেড়ে দিয়েছে এর আউটপুট এবং ফলাফল কি হচ্ছে; সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে, পারিবারিক বন্ধন ও সৌহার্দ্য তো অনেক দূরের কথা। লিভটুগেদার, পরকীয়া এগুলো কি নারীদের প্রতি সম্মান নাকি অপমান। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু দেখতে পাচ্ছি এবং তালেবান ঘোষণাও করেছে যে তারা বিশ বছর আগের সেই অবস্থায় আর নেই, এখন তারা অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তাই আমাদের আশা করতে বাধা কিসের?’

সাম্প্রতিক সময়ের কর্মকাণ্ড দেখে তালেবানের ব্যাপারে প্রায় একই রকম ধারণা পোষণ করেন দেশের আরেক বিজ্ঞ আলেম দারুল উলুম ঢাকার প্রিন্সিপাল মুফতি রেজাউল হক মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তালেবান যদি ঘোষণা অনুযায়ী বাস্তবিক ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে এতে অন্তত নারী স্বাধীনতা ও নারী শিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই; বরং ইসলাম নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে ছেলেদের তুলনায় মোটেও কম গুরুত্ব দেয়নি, তারা ৪৮ মাইলের কম দূরত্বে একা একা গিয়েও শিক্ষাগ্রহণ ও চাকরি-বাকরি করতে পারবে এবং তারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানও করতে পারবে। কেননা, হজরত আয়েশা (রা.)-এর নিকট এসে সেকালে সাহাবিদের শিক্ষাগ্রহণের নজির আছে, তবে অবশ্যই তাদের শরয়ী পর্দা মানতে হবে।’

আর নারীদের ঘরের বাইরে চলাফেরার ক্ষেত্রে পারিপার্শিক পরিবেশ অনুকূলে থাকাটা আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি। তার দাবি, অনেক গণতান্ত্রিক দেশেও এখনো নারীদের একা একা বাইরে বের হওয়ার মতো নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে ওঠেনি। আমাদের দেশেও নিরাপত্তার স্বার্থে পিতা-মাতা মেয়েদেরকে নিজেরা সঙ্গে করে স্কুলে নেওয়া-আনা করেন।

The post তালেবান শাসনব্যবস্থায় ‘নারী শিক্ষা’: বাংলাদেশী স্কলারগণ কী ভাবছেন? appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%a8/

No comments:

Post a Comment