Wednesday, September 23, 2020

উচ্চশিক্ষায় আল্লামার আগ্রহ : ‘একছাত্রের স্মৃতিচারণ’

কেফায়াতুল্লাহ আজহারি:

১৯৯৬ সালে আমি হাটহাজারিতে হেদায়া আখেরাইনে ভর্তি হই। তখনই হযরতের সঙ্গে পরিচয়। তবে প্রথম বছর হযরতের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি, হয়েছে মেশকাতের বছর। হযরত আমাদের মেশকাত পড়াতেন, অধিকাংশ সময় আমিই এবারত পড়তাম। এবারত পড়তে পড়তে হযরতের একটা কোমল দৃষ্টি আমি অনুভব করতাম। ভেতরে ভেতরে টের পেতাম শীতল একটা ছায়া। এই অনুভবের কারণেই একদিন মনে হলো, হযরতের সঙ্গে সম্পর্ক করে ইলমের সাথে আমলের লাইনেও এগিয়ে যাওয়া দরকার৷ তাই মেশকাতের বছর হযরতের কাছে নিজেকে সোপর্দ করলাম। একান্ত ব্যক্তিগতভাবে হযরতকে আমার মুরুব্বি বানালাম হযরতের অনুমতি নিয়েই। এই হিসেবে বলা যায়, ১৯৯৭ সালে হযরতের সঙ্গে আমার আসল সম্পর্ক শুরু হয়।

তখন হযরতের কাছে আসা-যাওয়া করতে করতে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম, আমার সবকিছুর তদারকি করতে শুরু করেন হযরত। বাড়ি যাওয়ার সময় তিনি ছুটি দিতেন, ফিরে এলে আবার হাজিরা দিতাম তার কাছেই। ফজরের আগেই হযরতের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তাহাজ্জুদ শেষ করে ফজরের আজান হলে মসজিদে যেতেন, আমি জুতা এগিয়ে দিতাম। ফজরের পর রুমে নিয়ে আসতাম। হযরত ব্যক্তিগত ওজিফা পাঠ করতেন। এদিকে যারা হযরতের সঙ্গে সুলুকের সম্পর্ক রাখতো, তারা একের পর এক হাজির হতেন। ইশরাক পড়ে হযরত আমাদের মজলিশে বসতেন, খোঁজ নিতেন, নতুন সবক দরকার হলে বলে দিতেন।

মেশকাতের বছর যখন প্রায় শেষ, দেওবন্দ যাবার জন্য হযরতকে না জানিয়েই পাসপোর্ট করে ফেললাম। হযরতের কানে কেউ বলে দিলো, আপনি যাকে এত ভালোবাসেন, আগামি বছর সে এ মাদরাসায় পড়বে না। দেওবন্দ চলে যাবে। কথাটা শুনে হযরত মনে মনে কষ্ট পেলেন। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে যখন তার কাছে ছুটি নিতে গেলাম, দেখলাম আগের মতো আর উচ্ছলতা নেই, মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। কথা বলছেন তো বলছেন না। আমি বললাম, হযরত, আমি আমার ওপর অসন্তুষ্ট বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কেন তা আমি জানি না। হযরত বললেন, তুমি নাকি এখানে আর পড়বে না, দেওবন্দ চলে যাবে? আমি বলে ফেললাম, দেওবন্দ যাবার জন্য পাসপোর্ট করেছি ঠিক, যাবার আগে আপনার অনুমতি চাইতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে হাটহাজারি-ই আমার দেওবন্দ। একথা শুনে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করতে লাগলেন। দৃশ্যটা এখনো চোখে ভাসলে অপূর্ব এক শিহরণ খেলে যায় দেহ-মনে।

হযরতের অনুমতিতে জামিয়া আজহারে

আমি পড়ালেখা করতে কখনো দেওবন্দ যাইনি। মিশরে জামিয়াতুল আজহারে গিয়েছি হযরতের অনুমতি পেয়েছি বলেই। তখন আমি হাটহাজারিতে ইফতা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একদিন মুমতাজুল করিম বাবা হুজুর আমাকে ডেকে বললেন, মিশরের জামিয়াতুল আজহারের সাথে হাটহাজারির চুক্তি হয়েছে; হাটহাজারির সনদ দিয়ে ওখানে অনার্স পর্যায়ে ভর্তি হওয়া যাবে। চুক্তির যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে হাটহাজারির কৃতি সন্তান আসলাম উদ্দিন আজহারি-সহ আরও কয়েকজন মিলে। তোমার তো ইফতা শেষ। আমি চাচ্ছি আমাদের সনদ নিয়ে তুমিই প্রথম জামিয়াতুল আজহারে যাও। আমি বললাম, আপনি আমার মুরুব্বি। কিন্তু আমার আরও একজন মুরুব্বি আছেন। তার কাছে জিজ্ঞেস না করে আমি কিছু বলতে পারব না। বাবা হুজুর বললেন, আগে তোমার ইচ্ছে দরকার। তোমার ইচ্ছে থাকলে অনুমতি পেয়ে যাবে।

হাটহাজারি হজরত ছিলেন আমার রূহানি এবং আধ্যাত্মিক মুরুব্বি। মুফতি কেফায়াতুল্লাহ ছিলেন তালিমি মুরুব্বি। আমি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে বললাম, বাবা হুজুর আমাকে মিশর যেতে বলছেন। কিন্তু আমার শঙ্কা হয়, ওখানে গিয়ে আমি আমার ঈমান-আমল এবং লেবাস-সুরত ঠিক রাখতে পারব না। মুফতি সাহেব বললেন, আমার বিশ্বাস আছে তুমি পারবে। ওখানে তাবলিগের মেহনত হয়, মেহনতে জুড়ে থাকবে। তুমি যাও।

এরপর আমি আমার রূহানি মুরুব্বি হাটহাজারি হযরতের কাছে গিয়ে বললাম, বাবা হুজুর এবং মুফতি সাহেব হুজুর আমাকে মিশর পাঠাতে চাচ্ছেন। আপনি যা বলবেন তাই হবে। হযরত হাসি দিয়ে বললেন, তুমি মিশর যাবার জন্য আমার কী করতে হবে তাই বলো। আমি বললাম, একটা প্যাডে আপনার সত্যয়ন লিখে দিতে হবে। হযরত নিজের প্যাড এগিয়ে দিয়ে বললেন, প্যাড নিয়ে যাও। যা লেখার লিখে নিয়ে এসো।

প্যাডে সাইন নিতে হতো নাজেমে তালিমাত মুফতি আহমাদুল হক সাহেব অথবা নায়েবে নাজেমে তালিমাত হারূন সাহেবের কাছ থেকে। কিন্তু তারা দুজনই সাইন দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন গিয়ে ধরলাম শেখ আহমদ সাহেব হুজুরকে। অবশেষে শেখ আহমদ সাহেবের অনুরোধে প্যাডে সাইন করেন হারূন সাহেব রহ.। আমি জামিয়াতুল আজহারে চলে গেলাম।

হাটহাজারি হযরত অনুমতি না দিলে কখনোই মিশর যাওয়া হতো না। বলতে গেলে হযরতই আমাকে ওখানে পাঠিয়েছেন। ২০০৮ সালে ফরিদাবাদ মাদরাসায় এক বয়ানে হযরত বলেছিলেন, মুফতি কেফায়াতুল্লাহকে আমি মিশর পাঠিয়েছি।

The post উচ্চশিক্ষায় আল্লামার আগ্রহ : ‘একছাত্রের স্মৃতিচারণ’ appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%89%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%8d/

No comments:

Post a Comment