সুমইয়া মারজান:
নির্মল আনন্দের স্নিগ্ধ সমীরণ!
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহজসরল জীবনযাপন করতেন। তাদের আনন্দ, উচ্ছ্বাস সবকিছুই উপভোগ করতেন। কোন গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের বাহার দেখানো বা সারাক্ষণ শাসনের মধ্যে রাখা নবীজির মধ্যে ছিল না। পুরো পরিবারকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা, তাদেরকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া সবই করতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একজন আদর্শ স্বামী, পিতা হওয়ার পাশাপাশি বন্ধুও ছিলেন। সারাক্ষণ নিজের কাজে ব্যস্ত না থেকে পরিবারকেও সময় দিতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে সময় কাটাতেন। প্রিয়তমার মনোরঞ্জনের জন্য মাঝেমধ্যে গল্পও বলতেন। একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে একটা গল্প শুনালেন। ভূতের গল্প। গল্পে খুরাফা নামের একটা চরিত্র এলো। আয়েশা জানো, খুরাফা কে? খুরাফা এক ব্যক্তির নাম। সে ছিল উযারা গোত্রের। তাকে নাকি একবার ভূতেরা তুলে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিলো। সে অনেকদিন ছিলো তাদের ওখানে এবং একদিন সে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসে। লোকের কাছে সে ভূতের দেশে আশ্চর্যজনক কী কী দেখেছে তা বর্ণনা করে বেড়াতো। এজন্যই লোকেরা বিস্ময়কর কোনকিছুর কথা শুনলে বলে আরে! এ তো খুরাফার গল্প!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও নবীজিকে মাঝেমধ্যে গল্প শোনাতেন। নবীজি মনোযোগ দিয়ে প্রিয়তমার গল্প শুনতেন আর তার গল্প বলার ভঙ্গি উপভোগ করতেন মুগ্ধ হয়ে। একবার আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজিকে একটা গল্প বললেন। এগারো সখীর গল্প। এগারো সখী মিলে এক আসরে বসে গল্প করছিলো। তারা পরস্পর ওয়াদা করলো প্রত্যেকে নিজ নিজ বরের অবস্থা বর্ণনা করবে। তাতে কোনকিছু গোপন করবে না। প্রথম সখী তার বরের কথা বললো, আমার বর তো উটের গোশতের মতো। সে গোশত আবার সুকঠিন পাহাড়ের চূড়ায় রাখা। সে পর্বতের পথও সুগম নয় যেখানে অনায়াসে আরোহণ করা যায়। আবার গোশতটাও না তেমন ভালো না যে সেটাকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করা যায়। দ্বিতীয় সখী বলে উঠলো আমার বরের কথা কিছু বলা যাচ্ছে না বাবা! আমি ভাবছি কী! আমি যদি তার দোষ বর্ণনা করা শুরু করি তো আর শেষই করতে পারবো না। আর বললে তো তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব দোষই বলতে হবে। তৃতীয়জন বললো, আমার বরের কথা বলবো কী! সে খুবই লম্বা। আর এতটাই একরোখা যে, তার সম্পর্কে কিছু বললে তার সাথে থাকা প্রণয়ের বাঁধনই ছিঁড়ে ফেলবে। আর কিছুই না বলি যদি তো কোনরকম ঝুলন্ত থাকবো। চতুর্থ সখী বললো, আমার বর তো তিহামার রাতের মতো শান্ত, কোমল। নাতিশীতোষ্ণ এক লোক সে। তাকে দিয়ে আমার না কোন ভয় আছে আর না কোন বিরক্তি! পঞ্চমজন বললো, আমার বর ঘরে চিতাবাঘ আর বাইরে সিংহের। আর ঘরে কী ঘটে না ঘটে কোন খবরই রাখে না। ষষ্ঠজন বললো, আমার বর খেতে বসলে সব একাই খেয়ে শেষ করে ফেলে, পান করতে গেলে একাই সব পান করে ফেলে। আর যখন বিছানায় শোয় তো নিজেই পুরোটা বিছানা নিয়ে শুয়ে থাকে। বালিশ, কাঁথা সবই তার। আমার ভালোমন্দের খবর তো রাখেই না।
সপ্তমজন বললো, আমার বরটা তো মাথামোটা আহাম্মক আর রোগাটে। ভীষণই বদমেজাজি। এতটাই যে, কখন জানি আমার ঘাড় মটকে দেয়, হাড়গোড় ভেঙে দেয়। অথচ জানো! রোগাটে হওয়ার কারণে কথা বলার শক্তিও রাখে না। অষ্টম সখী বললো, আমার বরের আবার খরগোশের মতো কোমল দেহ আর তার শরীর জাফরানের মতো সুগন্ধি ছড়ায়। নবম সখী বললো, আমার বরের মনটা তার শরীরের মতোই বড়। সে উঁচু খানদানের লোক, অতিথিপরায়ণ, পরোপকারী । নেতৃস্থানীয় হওয়ায় তার ঘরের মতো তার চুলাও সবসময় ব্যস্ত থাকে।
দশমজন বললো, আমার বরের নাম মালেক। মালেক সম্পর্কে আমি আর বলবো কী! তোমরা এতক্ষণ তোমাদের বরের কথা যা বললে, মালেক তার চেয়েও বেশি গুণের অধিকারী। তাদের সকলের চেয়ে উত্তম সে। আমি তার যা প্রশংসা করবো সে তো এর উর্ধ্বে! তার অনেক উট আছে। আর বেশিরভাগ উটই বাড়িতে বেঁধে রাখা হয়। মাঠে খুব কম উট চরানো হয়। আপ্যায়নে তার জুড়ি নেই। মেহমানের আগমনে যখন সানাই বাজে— বাড়িতে থাকা উটগুলো তখন বুঝে নেয় যে তাদের আয়ু ফুরিয়ে এসেছে।
সবার গল্প শেষ হলে এবার শেষেরজন ধীরে ধীরে শুরু করলো তার বিশাল কাহিনি। সে বললো, আমার বরের নাম আবু যারা। আবু যারার কথা তোমরা যা ভাবছো সে তো তার থেকেও বেশি। আমার গা গহনাতে ভরিয়ে দিয়েছে। আর খাইয়ে দাইয়ে আমার শরীরে চর্বিতে পুরো করে দিয়েছে। আমাকে এত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে যে, আমি আনন্দ ও খুশিতে বিহ্বল। আমি তো ছিলাম দরিদ্র মেষপালকের কন্যা। তারপর সে আমাকে নিয়ে এলো তার পরিবারে। তার পরিবার তো বিরাট ধনী। কী নেই তাদের! উট, ঘোড়া, গরু আর কৃষিতে সমৃদ্ধ তারা। আর আমার কত যত্ন-আত্তি! যত পারো খাও, যত পারো ঘুমাও। আবু যরার মা মানে আমার শাশুড়ির কথা বলবো কী! তার ঘর ছিলো প্রশস্ত আর সেখানে বড় বড় পাত্রগুলো খাবার দিয়ে ভর্তি থাকতো। আবু যরার ছেলের কী প্রশংসা করবো! সে যেন কোন সরু তরবারি। ছাগলের একটি বাহুই তার পেট ভরার জন্য যথেষ্ট। আর আবু যারার কন্যা সে তো বাপ মায়ের অনুগত, সকলের চোখের জ্যোতি, সতীনের ঈর্ষা ছিল। আবু যরার দাসীর কথাও বলি, সে ঘরের কথা কখনোই বাইরে প্রকাশ করতো না। খাবার নষ্ট করতো না। চুরি করতো না। ঘরদোর কখনোই অগোছালো রাখতো না। এমনিভাবে আনন্দ-উল্লাসে আমরা দিনাতিপাত করছিলাম। তারপর সে বললো যে তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে সতিনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। তারপর সে আরেকজন পুরুষের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। তার নতুন বরও ভালো, বিনয়ী আর তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। তবুও আবু যরার মতো গুণবান না সে। যদিও আবু যরা তাকে তালাক দিয়েছে তবু সে আবু যরাকে ভুলতে পারছে না। নতুন বরের যত্নআত্তিও তাকে আবু যরাকে হারানোর বেদনা ভুলতে সাহায্য করছে না।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মনোযোগ দিয়ে পুরো গল্প শোনার পর বললেন, আবু যরা এবং উম্মে যরার মধ্যে যেমন সম্পর্ক, তোমার আমার মধ্যেও একই সম্পর্ক। কেবল একটা পার্থক্য আছে। সেটা হচ্ছে, আবু জরা তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলো কিন্তু আমি তোমাকে তালাক দিবো না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ কথা শুনে খুশি হয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। আপনি আমার জন্য আবু যরার চাইতেও উত্তম।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার পরিবারের সদস্যদের মনের কথা বুঝতেন। সেভাবেই তাদের খুশি রাখতেন। কোনখানে কেমন আচরণ করতে হবে নবীজির তা ভালো করেই জানা ছিল। নবুওয়তের মতো গুরুগম্ভীর কাজে ব্যস্ত থাকলেও স্ত্রী, কন্যাদের জন্য আনন্দের ব্যবস্থা করতে ভুলতেন না। নিজে যুহদের সর্বোচ্চটুকু ধারণ করলেও পরিবারের উপরে তা চাপিয়ে দেননি কখনোই। তাদের জন্য প্রায়ই নির্মল আনন্দ আর হাসির আসর বসাতেন। প্রিয়তমার মনোরঞ্জনের জন্য তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতাও করেছেন। একবার এক সফরে লটারিতে নবীজির সফরসঙ্গিনী হিসাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নাম উঠে। সফর করতে করতে এক পর্যায়ে এসে নবীজি সবাইকে আগে চলার নির্দেশ দিয়ে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে পেছনে থেকে যান। তারপর তার হুমাইরাকে বলেন, এসো, আমরা দৌড়াই। দেখি কে আগে যেতে পারে!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন ছিলেন হালকাপাতলা দেহের অধিকারী। জিতলেনও তিনিই। কয়েকবছর পরে আবার তারা একসঙ্গে কোনো এক সফরে যাচ্ছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তো আগের প্রতিযোগিতার কথা ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু নবীজি ভুলেননি। তিনি আবার কাফেলাকে আগে বাড়ার নির্দেশ দিয়ে নিজে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে পিছনে থেকে গেলেন। প্রেয়সীকে বললেন, চলো আমরা দৌড়াই। দেখি কে আগে যেতে পারে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও রাজি হলেন। প্রতিযোগিতার পরে দেখা গেলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জিতে গেলেন। কারণ ততদিনে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওজন বেড়ে গিয়েছিলো আর দৌড়ের গতি কমে যাওয়ায় তিনি প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হেসে বললেন, আয়েশা, এ হচ্ছে ঐদিনের বদলা।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন চপলা স্বভাবের। উচ্ছলতা, প্রাণবন্ত থাকা ছিল তার স্বভাবগত। যেকোন পরিস্থিতিতে তিনি নবীজিকে হাসিখুশি রাখতে পারতেন।
নবীজি জীবনের শেষদিকের অসুস্থতায় এসে প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করতেন। নবীজি বুঝতেও পেরেছিলেন যে, এই অসুস্থতা তার অন্তিম অসুস্থতা। তিনি রোজ জীবিত এবং মৃত সবার জন্য মাগফিরাতের দুয়া করতেন। মৃতদের কবর যিয়ারত করে এসে ভাবতেন শিগগিরই তাদের তার সাথে দেখা হবে। এসময়েই একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার একদিন মাথাব্যথা শুরু হয় এবং তিনি বলে ওঠেন হায় আমার মাথা! নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার অস্থিরতা দেখে বললেন, তুমি এভাবে অস্থির হচ্ছো কেন? নবীজি এটা বুঝাতে চাইলেন যে, আমার মাথাব্যথার তুলনায় তোমার মাথাব্যথা আর কতটুকু! আসলে তো ব্যাপারটাও এমন ছিল। নবীজির ব্যথার তুলনায় তো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যথা সামান্যই। তারপর নবীজি বললেন, তুমি যদি আমার বর্তমানে মারা যেতে তো আমি তোমার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতাম। তোমার জন্য দুয়া করতাম। মাগফিরাত কামনা করতাম। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন। বুঝতে চেষ্টা করলেন নবীজির ভাবগতি। নবীজি কী তার সাথে ঠাট্টা করছেন নাকি সত্যিই বলছেন। তখন নবীজির চেহারায় কেমন দুঃখী দুঃখী ভাব ছিল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভাবলেন, নবীজি তার সাথে ঠাট্টা করছেন। তিনিও ঠাট্টাচ্ছলে বলে উঠলেন, হু! আমি মরে যাই তারপর আপনি নিজে আমাকে কবর দিয়ে আরেকটা বিয়ে করবেন। আর তাকে এনে এ ঘরে ওঠাবেন!
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার এমন আচ্ছারকমের জবাব শুনে তীব্র ব্যথার কষ্টের মধ্যেও হেসে দিলেন। ঠাট্টাচ্ছলে বললেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এ কথার দ্বারা নবীজির প্রতি তার গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশই বুঝা যায়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তো প্রায়ই নবীজির সাথে অভিমান করতেন। রাগ করতেন। নবীজিও প্রেয়সীর থেকে কোন মনখারাপের আভাস পেলে চমৎকার বুদ্ধি করে তা সারিয়ে দিতেন। নবীজি একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, আয়েশা, তুমি জানো কী, তুমি যেমন আমার উপর সন্তুষ্ট থাকা, অসন্তুষ্ট থাকা বুঝতে পারো! আমিও তোমার অসন্তুষ্ট থাকা বা সন্তুষ্ট থাকা বুঝতে পারি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির এ কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন! বিস্ময়মিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি কিভাবে তা বুঝতে পারেন? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন, তুমি যখন আমার উপর অসন্তুষ্ট থাকো তখন বলো ‘ইবরাহিমের রবের কসম।’ আর যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাকো, তখন বলো ‘মুহাম্মাদের রবের কসম।’ নবীজির এ জবাব শুনে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা দারুণ অভিভূত ও পুলকিত হলেন। লজ্জামিশ্রিত,খুশি খুশি গলায় বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! কসম খোদার! আপনি সত্য বলেছেন। তবে আমি তো কেবল মুখেই আপনার নাম পরিত্যাগ করি। অন্তর তো সর্বদা আপনার নামই জপ করে।
তথ্যসহায়িকা :
১.সহীহ বুখারী।
২.আবু দাউদ।
৩.মুসনাদে আহমাদ।
৪.তাবাকাতে ইবনে সাদ।
৫.শামায়েলে তিরমিযি।
The post হুমাইরা—দিলরুবায়ে সারওয়ারে কায়েনাত (১০ম পর্ব) appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%93%e0%a7%9f-8/
No comments:
Post a Comment