Wednesday, October 20, 2021

মাহফিল ও মসজিদে সিরাত চর্চার মূল্যায়ন

আবু তাশফি :

বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি মসজিদেই জুমার বয়ানে মহানবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কমবেশি আলোচনা হয়। অনুরূপ শীত মওসুমের মাহফিলগুলোতেও নবিজীবনের নানা ঘটনা ও উপঘটনা বয়ান করেন ওয়ায়েজগণ। কিন্তু নবিজীবন বা সিরাতের ওপর গঠনমূলক এবং ব্যাপক আলোচনা খুব কমই পরিলক্ষিত হয়।

রবিউল আউয়াল মাসে সিরাত বা নবিজীবন বিষয়ে আলাদা একটা আমেজ থাকে বাংলাদেশের স্থানীয় সংস্কৃতিতে। ধর্মীয় অঙ্গনে নবিজির জন্মবার্ষিকী পালন করা না করা নিয়েও এ সময়ে চলে তুমুল বিতর্ক। একপক্ষ এ মাসে নবিজির জন্ম হয়েছিল বলে ঘটা করে মিলাদুন্নবী পালন করতে গিয়ে নানা কিসিমের বিদআতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান, আর আরেক পক্ষ ছড়িয়ে পড়া এসব বিদআতের ব্যাপারে মানুষকে সোচ্চার করতে গিয়ে এ বিষয়টাকে এমনভাবে আকড়ে ধরেন যে, নবিজীবনের বরকতময় দিক-উপদিকগুলো নিয়ে আলোচনারই আর সুযোগ পান না।

জুমার বয়ানে যেভাবে এমনটা হয়, মাহফিলের আলোচনায়ও অনুরূপ। তবে এর বাইরেও কিছু খতিব এবং ওয়ায়েজ মসজিদের মিম্বরে কিংবা মাহফিলের মঞ্চে নবিজীবনের ওপর গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করেন। এবং এ ধরনের সচেতন আলেমের সংখ্যা ধীরে হলেও বাড়ছে দিনদিন।

দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সহসম্পাদক মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব টঙ্গীর আন নুর জামে মসজিদের খতিব। তিনি তাঁর মসজিদে জুমার বয়ানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন সিরাত বিষয়ক আলোচনাকে। বছরের বেশির ভাগ সময় জুড়েই তাঁর জুমার আলোচনার বিষয়বস্তু থাকে সিরাত।

তিনি ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সিরাত বিষয়টা এত ব্যাপৃত যে আমাদের জীবনের যেকোনো প্রসঙ্গে পাথেয় হিসেবে সিরাতকে সামনে নিয়ে আসা যায়, এবং আনা দরকারিও। একজন মুসলিম হিসেবে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে নবিজিকে অনুসরণ অপরিহার্য। আর মুসলিম জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ কীভাবে নিতে হয়, নবিজির সিরাতে এর উত্তম নমুনা বলে দেওয়া আছে। তাই খতিব এবং ওয়ায়েজগণের জন্য নবিজীবনের আলোচনা কেবল রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করেই নয়, বরং পুরো বছর জুড়েই করা উচিত।

মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব বলেন, সমকালীন যেকোনো ইস্যুতেও সিরাতের আলোচনা নিয়ে আসা যায়, আবার দৈনন্দিন জীবনের দরকারি জিনিস আলোচনার সময়েও অপরিহার্যভাবে সিরাতকে আনতে হয়।

তিনি বলেন, রবিউল আউয়াল এলে একপক্ষ মিলাদুন্নবী পালনের পক্ষে আর আরেক পক্ষ বিপক্ষে যুক্তিতর্ক করে সময় নষ্ট করেন। নবীজীবনের কোনো আলোচনা তেমন গুরুত্ব পায় না এসব বিতর্কে। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। এটা নবিজির শানের খেলাফ বলে মনে হয় আমার কাছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নবিজির জীবন এবং জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষাবলি ছড়িয়ে দিলে মিলাদুন্নবী জায়েজ না-জায়েজ বিষয়ে এত দীর্ঘ আলাপের দরকার পড়ত না। মুসল্লিরা নবিজির জীবনের আলোকেই বুঝে নিতে পারবেন বিস্তারিত।

মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব তাঁর মসজিদে সিরাত বিষয়ে বয়ানের পাশাপাশি সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে সিরাত চর্চা ও পাঠের আগ্রহও তৈরি করছেন আলাদা উদ্যোগে। মুসল্লিদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছেন সিরাতের ওপর। প্রসিদ্ধ সিরাতগ্রন্থ আর রাহিকুল মাখতুমের বাংলা অনুবাদ পাঠ করে এর ওপর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন প্রায় শ’খানেক মুসল্লি। নভেম্বরের তৃতীয় শুক্রবার আন-নুর মসজিদে সিরাতের ওপর তাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য বিশেষ পুরস্কারেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব বলেন, সাধারণ মুসল্লিদেরকে সিরাত পাঠে আগ্রহী করে তোলার জন্যই মূলত এ উদ্যোগ। এতে মুসল্লিদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন নবিজির জীবনের নানাদিক সম্পর্কে তাঁরা সচেতন হয়ে উঠছেন, অন্যদিকে নবিজির সিরাতের ওপর প্রত্যেক মুসল্লির মধ্যেই আলাদা একটা আগ্রহ ও অনুপ্রেরণার জন্ম হয়েছে।

The post মাহফিল ও মসজিদে সিরাত চর্চার মূল্যায়ন appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b2-%e0%a6%93-%e0%a6%ae%e0%a6%b8%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a6%9a%e0%a6%b0%e0%a7%8d-2/

No comments:

Post a Comment