Sunday, October 31, 2021

মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে আতঙ্ক

ফাতেহ ডেস্ক:

বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদ ও মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক হামলায় ৬ জন নিহত হবার পর ক্যাম্পে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলার জন্য স্থানীয় রোহিঙ্গারা আরসাকে দায়ী করছে। যদিও আরসা হামলার দায় অস্বীকার করেছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক কাজ করছে। ক্যাম্পের বাইরে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে স্থানীয় অধিবাসীদেরও মধ্যেও ভয়-আতঙ্ক বাড়ছে।

সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায় হামলার ভয়াবহ চিত্র- মসজিদ, মাদ্রাসা এবং হেফজোখানার দরজা জানালায় এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। মসজিদের ভেতরে রয়েছে রক্তের কালসিটে দাগ। ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই চারজন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরো দুজন মারা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত তিনটার পর সশস্ত্র রোহিঙ্গা হামলা চালায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তারা তছনছ করে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট কেন আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি?

হামলার সময় তারা শুধু এই মসজিদ মাদ্রাসায় আক্রমণ করেই থেমে থাকেনি, আশপাশের প্রতিটি বাড়ির সামনেও পাহারা বসায় যাতে কেউ প্রতিরোধ করতে না পারে। আশপাশের রোহিঙ্গাদের দাবি কয়েকশ রোহিঙ্গা ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা বলেন, এখনো তাদের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলতেও ভয়-আতঙ্ক কাজ করছে সবার।

ঘটনার পর সার্বক্ষণিক পুলিশের পাহারা বসেছে, চলছে দিনে রাতে টহল। কিন্তু ক্যাম্পের পরিস্থিতি থমথমে বলেই মনে হয়েছে।

মসজিদ মাদ্রাসায় কেন হামলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতৃস্থানীয় একজন রোহিঙ্গা বলছিলেন, এ মাদ্রাসা ও মসজিদের অবস্থান ছিল স্পষ্টতই আরসার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।আরসা এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাদের সমর্থন না করায় আগেও হুমকি দিয়েছে। বলা হয়েছে মাদ্রাসা ছেড়ে দিতে। তারা (আরসা) চেয়েছে এই এলাকায় জন্য এই মাদ্রাসা তাদের একটা হেডকোয়ার্টার হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো এই মসজিদ মাদ্রাসায় এত ভয়াবহ হামলা কেন?

এ প্রসঙ্গে ওই রোহিঙ্গা বলেন, অনেক আগে থেকেই এই মাদ্রাসা তাদের টার্গেট ছিল। মাদ্রাসায় সাড়ে তিনশ’র মতো রোহিঙ্গা ধর্মীয় শিক্ষা নেয়।

সম্প্রতি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মহীবুল্লাহ হত্যার পর বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে এই মাদ্রাসা কেন্দ্রিক রোহিঙ্গারা। এছাড়া মহীবুল্লাহ হত্যার পর ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশে রোহিঙ্গাদের অনেকে পাহারা দেয়া শুরু করে।

১৮ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গারাও পাহারা দিত এবং গত কয়েক সপ্তাহে তারা ৪/৫জন দুস্কৃতিকারীকে ধরতে সহায়তা করেছে। এছাড়া ওই মসজিদের খুতবায় ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বয়ান করা হতো। যা আরসার বিপক্ষে যায়।

ক্যাম্পের বাজার-ঘাট দোকানে চাঁদাবাজি এবং নারী নির্যাতন নিয়েও সোচ্চার ছিল হামলার শিকার মসজিদ ও মাদ্রাসার পরিচালনার সাথে যুক্তরা।

ক্যাম্পে আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

ক্যাম্পে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন আরো নাজুক হয়ে পড়ছে বলেও মনে করেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। সেখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাচ্ছে বলেই তাদের অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পের ভেতর চাদাবাজি, মাদক বাণিজ্য এবং নানা রকম অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটছে অহরহ। ক্যাম্পে মারামারি রক্তক্ষয়ী সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গারাও নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

মসজিদের পাশে অবস্থানরত আরেকজন নারী ওই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলছিলেন, “রাতে ঘুম হয় না আমাদের। নামাজ-দোয়া পড়ি। আবার মারামারি কাটাকাটি হয় কিনা এ জন্য আতঙ্ক।”

এদিকে নিরাপত্তা এবং রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে ক্যাম্পের চারদিকে এখন কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই অপরাধ কর্মকাণ্ড।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

The post মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে আতঙ্ক appeared first on Fateh24.



source https://fateh24.com/%e0%a6%ae%e0%a6%b8%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%a6-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%98/

No comments:

Post a Comment