রাকিবুল হাসান :
দিন যত গড়াচ্ছে, আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তির মাত্রাটা তত বাড়ছে। প্রযুক্তির বিস্তৃত কল্যানে এখন যে কেউ নবীজিকে নিয়ে কটূক্তিমূলক বাক্য, ছবি, ফিল্ম, ফিকশন খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। প্রযুক্তি যখন ছিলো না, ঘৃণা ছড়াতে অনেক সময় এবং শ্রম দিতে হতো। প্রযুক্তি এলো যখন, সেবার সঙ্গে সঙ্গে ঘৃণা ছড়ানোটাও পানির মতো তরল হয়ে গেলো। ইচ্ছে হলেই ঘৃণাটা উগরে দেয়া যাচ্ছে অন্তর্জালের পাতায় পাতায়।
এই কয়দিন আগে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে, বরিশালের ভোলায়, সাধারণ এক হিন্দু যুবক ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা মুসলিমদের ইনবক্সে ইনবক্সে নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি ছড়ালো। বিষয়টি ফেসববুকে ভাইরাল হতেই প্রতিবাদে মাঠে নেমে এলো হাজার হাজার মুসলমান। পুলিশের গুলিতে শহীদ হলো চারটি তাজা প্রাণ।
বারবার কেন নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়?
নবী-রাসূলদেরকে নিয়ে কটূক্তি করার ঘৃণ্য কাজটা পৃথিবীর শুরু থেকেই হয়ে আসছে। সূরা আনআমের ৩১ নং আয়াতে নবীজিকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আপনার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকেও মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তারা সহ্য করেছে; তাদের নিকট আমার সাহায্য আসা পর্যন্ত তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নিয়মকে কেউ বদলাতে পারে না।’
সব রাসূলদেরকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে। কষ্ট দেয়া হয়েছে তাদের পরিবার-পরিজন, সাহাবি-সঙ্গীদের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরিবার ও সাহাবিদেরকে তিন বছর শিআবে আবি তালেবে কার্যত বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কেউ কিছু ক্রয় করতো না, তাদের কাছে কিছু বিক্রয় করত না। খাদ্যসঙ্কটে এক সময় তারা গাছের পাতাও খেয়েছেন। নবীজিকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর জন্যই আমি শত্রু তৈরী করে রেখেছি।’ (সূরা ফুরকান; আয়াত ৩১)
সুতরাং নবীজিকে কষ্ট দেয়া সেই পুরোনো আদত, পুরোনো বিধান। নবীজি কাউকে কখনো মারেননি, কাটেননি, বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। যুবক বয়সে আরবে উপাধি পেয়েছিলেন আল আমিন বলে। নবুওয়ত লাভের পর মক্কায় যে ১৩ বছর কাটিয়েছেন, আঘাতের কোনো প্রতিঘাত করেননি। সাহাবিরা আঘাত সহ্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে এসে মিনতি করতো দরবারে রিসালাতে, প্রতিবাদ এবং প্রতিঘাত করার অনুমতি দিন ইয়া রাসূলাল্লাহ! নবীজি তাদের প্রতিঘাতের অনুমতি না দিয়ে ধৈর্য্য ধারণের নির্দেশ দিতেন। তবুও কেনো কাফেররা, মুনাফিকরা তাকে কষ্ট দিতো? আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ১১৮ নং আয়াতে বলেছেন, ‘তাদের অন্তর ছিল বিভ্রান্তিপূর্ণ।’ ঘন কালো রাতের মতো তাদের অন্তর বিভ্রান্তিতে পূর্ণ ছিলো। রাসূলের রওনক ও রওশন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। ওই বিভ্রান্তির মায়াজালে পড়ে রাসূলকে কষ্ট দিতো। এই কারণটি ঠিক আজও অবিকল আছে। মানুষের হৃদয় এখন আরও বিভ্রান্তিকর। নবীজির কাল থেকে অনেক দূরে আমাদের বসবাস, প্রযুক্তি ও হাজার মতবাদের ধোঁয়াশায় সত্যটা এখন সুদূর পরাহত অনেকের কাছে। সুতরাং তাই এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে রাসূলকে নিয়ে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করে অনেকে।
নবীজি সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যারা ঘৃণা ছড়াতো, তিনি সরাসরি ঘৃণাকে দমন করতেন না। মক্কায় তো দমন করার মতো পদক্ষেপ নেয়ার শক্তি ছিলো না, কিন্তু মদীনায় গিয়ে শক্তি থাকার পরও দমন করতেন না। সরাসরি ঘৃণার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে বরং যে গোষ্ঠী বা দল ঘৃণা ছড়ায় এবং ঘৃণা সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতেন। এমনকি এই ঘৃণা ছড়ানোর কাজে কোনো নেতৃস্থানীয় কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতেন।
রাসূলকে কাফের এবং ইহুদিরা যেমন কষ্ট দিয়েছে, তেমনি মুনাফিকরাও কষ্ট দিয়েছে। কাফের এবং ইহুদিরা কষ্ট দিতো সরাসরি, মুনাফিকরা কষ্ট দিত লুকিয়ে, আলোর বাইরে গিয়ে আঁধারে, বিশ্বাসে মোড়কে অবিশ্বাসের খুন্তি মেরে। মুনাফিকদের আঘাতেই সবচে বেশি কষ্ট পেতেন রাসূল। কিন্তু এখন যারা নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি ছড়ায়, তারা আসলে নবীজিকে নয় বরং নবীজির উম্মতকে কষ্ট দিতে চায়। কারণ নবীজি মুসলমানদের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়; তাই নবীজিকে নিয়ে কিছু বললে, মুসলমানরা কষ্ট পাবেই।
প্রতিটি ধর্মের কাছেই প্রিয় মহৎ সম্মানিত কিছু থাকে, মুসলিমদের কাছে সেই প্রিয় ব্যক্তিটি হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং তাকে কিছু বলা মানে মুসলমানাের কষ্ট দেয়া। মানুষ সাধারণত বাবা-মাকে নিয়ে কটূক্তি করলেই সহ্য করতে পারে না। রাসূল সা. হলেন আমাদের প্রাণ, প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাকে কিছু বললে সহ্য হবে কীভাবে?
নবীজিকে কটূক্তির প্রকৃতি
নবীজিকে কষ্ট দেয়ার পদ্ধতি তখন যেমন ছিলো, এখন তেমন নেই। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পদ্ধতি বদলেছে। কালে কালে এই পদ্ধতি বদলায়। কিন্তু প্রকৃত জিনিসটা একই থেকে গেছে। অর্থাৎ কষ্ট দেয়া। রাসূলকে ইহুদি এবং কাফেররা কষ্ট দিত কটূক্তি, কবিতা এবং আচরণের মাধ্যমে। এখন এই মাধ্যম আরও বিস্তৃত, আরও প্রসারিত হয়েছে।
ডেনমার্কে কার্টুন একে নবীজিকে ব্যঙ্গ করেছে। আমেরিকায় ফিল্ম বানিয়ে নবীজিকে হেয় করা হয়েছে। প্রচ্যবিদরা প্রতিনিয়ত বিশ্বাস পরিপন্থী সব প্রশ্ন তুলে খাটো করার চেষ্টা করছে নবীজিকে। প্রযুক্তির কল্যানে যোগাযোগ মাধ্যম যত সহজলভ্য এবং বিস্তৃত হচ্ছে, ততই বাড়ছে ঘৃণা ছড়ানোর এই কৌশল, স্থান, সুযোগ।
বাংলাদেশে নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি করার সবচে সহজ মাধ্যম হয়ে উঠছে ফেসবুক। লেখাপড়া না জানা ব্যক্তিও এই মাধ্যমে ঘৃণা ছড়াতে পারে। ফেসবুক ব্যবহার করতে খুব পটু কিংবা জিমেইল-ইমেইল লাগে না। লাগে অন্য কোনো সিকিউরিটি চেক। গত কয়েক বছরে বড় বড় কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এমন। বি-বাড়িয়ার নাসিরনগরে, কুমিল্লার হোমনায়, সর্বশেষ বরিশালের ভোলায়। সবকটি ঘটনায় কটূক্তি ছড়িয়েছে সাধারণ হিন্দু যুবক, হয়ত লেখাপড়াও জানে না তেমন। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে কখনো কখনো এগুলোকে হ্যাক বলা হয়েছে, তবে মূল দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যারা কটূক্তি করে ঘৃণা তৈরী করে, তারা আসলে অসুস্থ এবং বর্ণবাদী। কারণ তারা মূলত ইসলাম এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করে। এটা হলো নির্দিষ্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে খাটো করার চেষ্টা। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা। সন্ত্রাসীবিরোধী যুদ্ধের নামে দেশে দেশে যে মুসলিম নিধন চলছে, তাকে বৈধতা দেয়ার জন্যই নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়। পাশাপাশি ঘৃণা ছড়ানোর এই মনোভাবের কারণে তাকে অসুস্থ বলেও অভিহিত করা যায়। কারণ ইসলামের কোনো চিন্তা পছন্দ না হলে সে সমালোচনা করতে পারে, তার মতামত তুলে ধরতে পারে, কিন্তু কটূক্তি করতে পারে না। গালি-গালাজ করতে পারে না।
নবীজিকে কটূক্তির প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ
কটূক্তির ধরন বুঝে প্রতিবাদ করতে হয়। সূরা ফুরকানের ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীতে এমন কয়েকজন বান্দা আছে, মূর্খ এবং জাহেলরা তাদেরকে গালি দিলে তারা শান্তভাবে বলে দেয়, সালাম!’ সূরা কিসাসের ৫৫ নং আয়াতে বলেছেন, ‘তারা যখন অযথা আলাপ শুনে, তা উপেক্ষা করে যায়। এবং বলতে থাকে, আমাদের কাজ আমরা করি, তোমাদের কাজ তোমরা করো।’
অজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে অজ্ঞের মতো কথা বলাটাই প্রতিবাদ নয়, বরং অজ্ঞ ব্যক্তিকে উপেক্ষা করাই প্রতিবাদ। তবে এই নিয়মটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে হলে খাটে। কিন্তু সমস্যা যখন ব্যাপক হয়ে যায়, ঘটনার সঙ্গে যখন জড়িয়ে যায় গোটা জাতির আবেগ ও সেন্টিমেন্ট এবং সম্মান ও মর্যাদা, তখন প্রতিবাদ করতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো মুসলিম উম্মাহর প্রাণের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। অস্তিত্ব ও আবেগের সঙ্গে মিশে আছেন। তাকে নিয়ে যখন কটূক্তি করা হয়, রাগ করার শতভাগ অধিকার মুসলিম উম্মাহর আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে সেই রাগটুকু পরিমিত মাত্রায়, পরিকল্পিত কৌশলে বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে।
রাসূলকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে সহিংসতা শুরু করে দিলে হিতে বিপরীত হয়। মিডিয়াগুলো তখন তাদেরকে প্রতিবাদকারী হিসেবে না দেখিয়ে বরং দেখাতে শুরু করে সহিংসতাকারী হিসেবে। তাই আন্দোলনে রাস্তায় নামা যাবে, শতভাগ অধিকার আছে মুসলিমদের, কিন্তু আগুন জ্বালানো, ভাঙচুর করা যাবে না। শান্তি বজায় রাখতে হবে। তবে কেউ যদি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে নবীজিকে নিয়ে কটূক্তি করে, অসুস্থতা এবং বর্ণবাদিতা ছড়ায়, তাহলে সে যেই রাজনৈতিক পক্ষের প্রতিনিধি, সে পক্ষকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। নির্দিষ্ট কিংবা বিচ্ছিন্ন কটূক্তির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, কটূক্তিকারীর রাজনৈতিক পক্ষকে প্রতিহত করার দিকে মনোযোগী হতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে খতিব উবায়দুল হক রহ. এর ঘটনা উল্লেখ করা যায়। কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে আন্দোলন তখন তুঙ্গে। হঠাৎ একদিন একটি মুসলিম সংগঠন বকশি বাজারে কাদিয়ানি অফিস ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করলো। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে খতিব সাহেব টের পেয়ে গেলেন অফিস ঘেরাওয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাঙচুরও হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইনকিলাব অফিসে ফোন করে রুহুল আমিন খানকে বললেন, এর বিপরীতে বিবৃতি দাও। রুহুল আমিন খান বললেন, আন্দোলন করছে ভালো কথা। আপনি বিরোধিতা করছেন কেন? খতিব সাহেব বললেন, ঘেরাও করে ভাঙচুর করলে হিতে বিপরীত হবে। মিডিয়া প্রচার করবে খতমে নবুওয়তের আন্দোলন করতে এসে ভাঙচুর করে। এরা জঙ্গি।’
আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘পশ্চিমা লেখকদের লেখা বইগুলো নবীজির বিরুদ্ধে বেশী ঘৃণা ছড়িয়েছে। এখন আমাদের কর্তব্য হলো এর প্রতিবাদে অনেক বই লেখা। রাসূলকে, ইসলামকে যতভাবে পারা যায় ফুটিয়ে তোলা। নিজেদের ভাষায় হোক কিংবা বিদেশী ভাষায়। পুরো বিশ্বের মুসলমানরাই আজ এই ঘৃণার শিকার। পাশাপাশি ধর্ম অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে আইন করার জন্য জাতিসংঘকে চাপ দেয়া। মুসলিম সংগঠন, মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান, আলেম-উলামা সবাইকে আইন করার পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার উপ-মহাসচিব ডা. আলী বাদাহদাহ বলেন, ‘রাসূলকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করা কিংবা সহিংসতার পথ বেছে নেয়া অপরিণত চিন্তার পরিচয়। বুদ্ধিবৃত্তিক কিছু করে আমাদের প্রতিবাদ জানাতে হবে। যেমন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সংগঠন করে মানুষের সামনে রাসূলকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। হয়ত অনেক অমুসলিম বিশ্বাস করবে না, না করুক, আমাদের প্রচার চালিয়ে যেতে হব। রাসূলের সীরাতগ্রন্থ বিলিয়ে দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে, সাংগঠনিক পর্যায়ে, রাষ্ট্রের সহযোগিতায়—যেভাবেই হোক জোয়ার আনতে হবে। আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। আমরা বলছি না রাগ প্রকাশ করা যাবে না। বলছি—রাগ প্রকাশ করতে হবে পরিমিত মাত্রায়, পরিকল্পিত কৌশলে।’
ডা. ইউসুফ কারজাবি বলেন, ‘নবীজিকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উত্তেজনার সময় মানুষ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তাই মানুষকে জানাতে হবে প্রতিবাদের তরিকা ও পদ্ধতি। তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে প্রতিবাদের প্রতিবাদের নিয়ম ও কৌশল। মানুষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার দায়িত্ব আলেমদের, দাঈদের, লেখকদের। রাসূলের প্রতি ভালোবাসায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, প্রতিবাদ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এই ভালোবাসা যেন মার না খায়। সঠিক পন্থায় প্রতিবাদ জানিয়ে যেন ভালোবাসার জয় হয়।
এখন, এই যুগে, রাসূলের ভালোবাসায় একটি কাজ আমাদের লেখকদের এবং আলেমদের করতে হবে। তা হলো—লিখে যতভাবে পারা যায় রাসূলের সীরাতকে মানুষের সামনে তুলে ধরা। আধুনিক ভাষায়, মনোরম সাহিত্যের মোড়কে, ফিকশনের আঙ্গিকে—সব মাধ্যমেই সীরাত চর্চার ধারা চালু করা সময়ের প্রয়োজন। মানুষ যে আঙ্গিকে পড়তে চায়, সেই আঙ্গিকও ব্যবহার করতে হবে মুসলিম সীরাত লেখকদের। তাহলে মানুষ পড়বে, মানুষের হৃদয় স্পর্শ করবে। সাহাবিগণ কেউ মুহাজির হয়ে, কেউ আনসার হয়ে রাসূলের সাহায্য করেছেন। এই এতকাল পর আমরা আমাদের রাসূলকে ‘সীরাত চর্চা’র মাধ্যমেই কেবল সাহায্য করতে পারি। সীরাত যারাই পড়বে, তারাই আলোকিত হবে।’
শুধু নবীজি নয়, ইসলামের প্রতিটি নিদর্শন আমাদের প্রিয়। কোরআন, মসজিদ, কাবা, মক্কা, মদীনা, রওজা, হাজরে আসওয়াদ, মিনা, আরাফা—আমাদের শ্রদ্ধার একেকটি আয়োজন। ইসলামের যে নিদর্শন নিয়েই কটূক্তি করা হোক, আমাদের প্রতিবাদ জানানো উচিত। চীনে মসজিদের পর মসজিদ গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, গাজায় শত শত মুসলিমকে হত্যা করা হচ্ছে, ভারতে মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে—এইসবও আঘাত। এইসব আঘাতেও রক্তক্ষরণ হয় ঈমানদারদের কলিজায়। এইসব ক্ষেত্রেও প্রতিবাদ প্রয়োজন।
The post নবীজিকে কটূক্তি : প্রকৃতি, প্রবণতা ও প্রতিরোধ appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%9f%e0%a7%82%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-2/
No comments:
Post a Comment