সুমাইয়া মারজান:
মরুবালার সংসার
বয়সে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন নবীজির অনেক ছোট। কেবলই কিশোরী সময়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স পঞ্চাশেরও বেশী। বয়সের ঢের তফাত ছিল বলে কি দাম্পত্য জীবন কাঠখোট্টা ছিল? মোটেও না। বয়সের সমীকরণটা জটিল হলেও ভালোবাসা ছিল শীত সকালের প্রথম ঝরে পড়া শিউলির মতো স্নিগ্ধ। কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যতটা না স্বামী, তারচেয়েও বেশি ছিলেন বন্ধু-প্রেমিক। ভালোবাসার মানুষটির কাছে তাই নিজের সবটুকুই সঁপে দিতেন। তাকে নিয়ে মেতে উঠতেন খুনসুটিতে। সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়েও তিনি প্রেয়সীর কাছে তার মনের মতো করে নিজেকে উপস্থাপন করতেন। প্রিয়তমাকে গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের বাহার দেখানো তার স্বভাবেই যেন ছিল না; আগাগোড়া একজন বন্ধুর মতো তুলে ধরতেন নিজেকে।
অনেকটা এমন যে, এখানে— আমার বুকের চাতালে তুমি সাজাও ভালোবাসার অধিকার আর অভিমানের পসরা । চাইলেই ভরসা করা যায় আর ইচ্ছেমতো ভালোবাসা যায়, আমি তোমার এমনই একজন অভিভাবক এবং বন্ধু।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও নিজেকে নবীজির চাওয়ার মতো করেই উপস্থাপন করেছেন। ফলে তাদের দাম্পত্যজীবন হয়েছে মধুরতম!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার তাদের দাম্পত্যজীবনের নানান সুন্দরম দৃশ্য তুলে ধরেছেন। তার বর্ণনায় পাওয়া যায় তার কাছে নবীজির নিজেকে সঁপে দেওয়ার কথা।
এক শীতের রাতের কথা বলছিলেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে এসে নির্দিষ্ট কোণে ইবাদতের জন্য মগ্ন হলেন। দীর্ঘক্ষণ ইবাদতের পর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে বললেন, আমার কাছে আসো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জবাব দিলেন আমি তো ঋতুবতী। বললেন তাতে কোনো অসুবিধা হবে না। তোমার হাত দু’টি বাড়িয়ে দাও। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তা-ই করলেন। তিনি হাত প্রসারিত করে দিলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নিজেকে তাঁর কোলে সঁপে দিলেন। তিনিও তাকে উষ্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। এভাবেই একসময় দুজনে ঘুমিয়ে পড়লেন। এরকম প্রায়ই হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম গোসল করে ঠাণ্ডায় কাঁপছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে এসে তাকে ডাক দিয়ে উষ্ণতা চাইলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও নবীজিকে জড়িয়ে দিতেন পরম ভালোবাসার উষ্ণতা।
ভালোবাসা, নির্ভরতার পাশাপাশি খুনসুটিতেও ভরপুর ছিল দুজনের প্রেমময় দাম্পত্যজীবন। একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঘরের সামনে অজু করছিলেন। নবীজি ঘর থেকে বের হয়ে তার পাশ দিয়ে মসজিদে নববীর দিকে যাচ্ছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা দুষ্টুমি করে পেছন থেকে নবীজির শরীরে পানি ছিটিয়ে দিলে নবীজিও সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি পাত্র থেকে পানি নিয়ে তার চপলা হুমাইরা পাখির শরীরে পানি ছিটিয়ে দিলেন। আর পুলকিত মনে হেসে উঠলেন দুজনেই। হাসতে হাসতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন, দেখো আয়েশা! আমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করিনি। বদলা নিয়েছি কেবল। আর বদলা নেওয়ার কথা কিন্তু কুরআনেই বলা হয়েছে।
আরেকদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঘরের পাশে লাকড়ি জড়ো করছেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও তার সাথে ছিলেন। নবীজির ছুড়ে দেওয়া একটি ছোট লাকড়ি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পায়ে এসে পড়লো। ইয়া রাসুলুল্লাহ, বদলা নেওয়া কি জায়েজ আছে? নবীজির দিকে তাকিয়ে বললেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। যদিও তিনি তেমন ব্যথা পাননি; ব্যথা পাওয়ার ভান করে আছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঠিকই তা বুঝতে পারলেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে জবাব দিলেন- হ্যা, বদলা নেওয়া তো অবশ্যই জায়েজ। তবে কারোর দ্বারা যদি ভুলবশত কিছু হয়ে যায় তো ভিন্নকথা। তা ধর্তব্য নয়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার তো বয়স কম ছিল। তার কিশোরী মনে নবীজির জন্য যেমন ফুটতো ভালোবাসার অজস্র ফুল, তেমনি মাঝেমধ্যেই অভিমানের পাথরও জমতো। নবীজির সাথে তিনি প্রায়ই অভিমান করতেন। নবীজিও তার অভিমান ভাঙাতেন খুশিমনেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার অভিমানটুকুও নবীজির কাছে মনে হতো ভালোবাসার সৌন্দর্য। এমনই একদিন দুজনে বেশ ঝগড়া করেছেন। সাধারণত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে অভিমান করতেন তা নবীজির ভালোবাসার পরাগ মাখানো কথাতেই গলে মোম হয়ে যেতো। কিন্তু সেদিনের ঝগড়াটাও বেশি হয়ে গেছে। নবীজি কতকিছু বলছেন, চেষ্টা করছেন প্রেয়সীর মান ভাঙানোর। কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। নবীজি আর কী করবেন, তাও যেন ভেবে পাচ্ছেন না। অগত্যা খুঁজে বের করলেন এক অভিনব পদ্ধতি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, এক কাজ করো, তুমি আমাদের মাঝখানে একজন মধ্যস্থতাকারী ঠিক করে নাও। যে আমাদের বিষয়টির মীমাংসা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভাবলেন , প্রস্তাবটি তো মেনে নেওয়ার মতো। তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কথায় রাজি হলেন। কিন্তু কাকে বানাবেন মধ্যস্থতাকারী? নবীজি তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথা বললেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, না, তিনি নয়। তার মেজাজ কঠিন প্রকৃতির। তারচে আমি আমার পিতাকেই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মানবো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডেকে নিয়ে এলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথমে ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনলেন। শুনলে কী হবে, তিনি তো আবু বকর! যে নবীজির জন্য জান ফিদা করে দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকেন, তার মেয়ে কী না সেই নবীজির সাথে অভিমান করে! আবার তাকে মধ্যস্থতা করতে হবে! তিনি ঘটনা শুনে দেরি করলেন না। মেয়েকে আচ্ছামতো মারতে লাগলেন। কোথায় গেলো মধ্যস্থতার কথা! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পিতার রাগ দেখে দৌড়ে গিয়ে নবীজির পেছনে আশ্রয় নিলেন। নবীজির গলা ধরে তার পিঠে চড়ে গেলেন। নবীজির গলা জড়িয়ে ধরেছেন তো ধরেছেনই! পিতা না যাওয়া পর্যন্ত আর ছাড়াছাড়ি নাই। আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মেয়েকে কতক্ষণ শাসন করে চলে গেলেন। এবার আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির পিঠ থেকে নেমে ঘরের কোণে বসে রইলেন। নবীজি প্রিয়তমার দিকে তাকালেন, মুখখানাতে কেমন অভিমানের ছাপ রয়ে গেছে তখনও। প্রিয়তমার মন ভালো করতে কাছে আসার জন্য ডাকলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকালেনও না। যেভাবে ছিলেন সেভাবেই বসে রইলেন। নবীজি হেসে উঠে বললেন, এখন আমি ডাকছি আর কাছে আসছ না, এতক্ষণ তো আমার পিঠে চড়েই বসে ছিলে।
অন্য একদিন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজির সাথে কী এক সামান্য কারণে অভিমান করে বসে আছেন। অভিমানে সারাদিন খাবারও মুখে দেননি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামও সেই সকালে বেরিয়ে গেছেন। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, ফেরার নাম নেই। একা ঘরে অভিমান যেন চাপা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। তাই ভীষণ মনখারাপ করে বসে আছেন নবীজির পথ চেয়ে। আর একথাও জানা আছে যে নবীজি এলে অভিমানের বরফটুকু গলে উষ্ণ জল হয়ে যাবে। কিন্তু নবীজিই তো আসছেন না। একা বসে বসে এসবই ভাবছেন। এর মাঝে হঠাৎ ঘরের দরজার কড়া নড়ে উঠলো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বুঝতে পারলেন কে এসেছেন। আর ততক্ষণে অভিমানও গলতে শুরু করেছে।
প্রিয়তমের সাথে কথা বলার জন্য মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠলো। তবু তিনি তো তিনিই। এক সমুদ্দুর উচ্ছ্বাস বুকে চেপে নির্বিকার ভঙ্গিতে দরজা খুলে দিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অন্যদিকে তাকিয়ে সালামের জবাব দিলেন, কোন কথা বললেন না। নবীজি ধীরে ধীরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এলেন।
হাতে সদ্যই হাদিয়া পাওয়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রিয় খেজুর। আর প্রেয়সীর অভিমানের কথাও অজানা নয়। তাই আদুরে গলায় ডাক দিলেন, হুমাইরা পাখি! দেখোতো তোমার জন্য কী এনেছি, তোমার প্রিয় খেজুর। এবার আল্লাহর নাম নিয়ে খেজুরগুলো খেয়ে নাও।
ব্যস! অভিমান তো হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোন ভালোবাসার পলকা হাওয়ায় উড়ে গেলো। এবার প্রিয়তমের দিকে ফিরে তাকালেন। নবীজির হাত থেকে দুটো খেজুর তুলে নিতে নিতে বললেন, আল্লাহর নামেই তো খাবো। এদ্দিন কি আমি আমার বাবার নামে খেয়েছি! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এমন অভিমান ভরা উত্তর শুনে নবীজি বেশ কতক্ষণ হাসাহাসি করলেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে যোগ্যতম প্রিয়তমা হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে যা যা করার দরকার সবই করেছেন। তার মানসিক বিকাশ, বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তাকে ঘরের কোণে বন্দী না রেখে বিভিন্ন সময়ে তাকে নিজের সফরসঙ্গী করতেন। এছাড়াও মদিনার আশেপাশে তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতেন। ভালোবেসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূর্ণ করতেন।
একদিন নবীজি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছিলেন। বাইরে হঠাৎ বাচ্চাদের আনন্দধ্বনি শোনা গেলো। ব্যাপার কী! নবীজি দেখতে বেরিয়ে এলেন। দেখলেন, এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বাচ্চাদের অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে খেলা দেখাচ্ছে। নবীজি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডাক দিলেন দেখে যাওয়ার জন্য। আয়েশা, এদিকে আসো। খেলা দেখে যাও। নবীজি দরজায় দাঁড়ানো ছিলেন বলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা দেখতে পারছিলেন না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাকে পিঠে তুলে নিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও দিব্যি আরাম করে নবীজির পিঠে চড়ে খেলা দেখতে লাগলেন। কিছুসময় পরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশা, খেলা দেখা হলো? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, না আমি আরও দেখবো। অগত্যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লামও প্রিয়তমাকে কাঁধে নিয়ে আরও কতক্ষণ খেলা দেখার সুযোগ করে দিলেন।
সম্ভবত তখনো পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়নি। মসজিদে নববির সামনে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসেরা বর্শা নিক্ষেপ-তরবারি চালনা-কুস্তিসহ আরও নানান খেলা দেখিয়ে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছিলো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন তার পাশে। ভীড়ের কারণে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভালোমতো দেখতে পারছিলেন না। তাই নবীজি নিজের পাশে চাদর দিয়ে ঢেকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে খেলা দেখার সুযোগ করে দিলেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একজন দায়িত্বশীল স্বামী ছিলেন। এমনিতেও তিনি নিজের সবকাজ নিজ হাতেই করতেন। প্রিয়তমা ঘরে আসার পর তার উপর সংসারের সকল দায়িত্ব চাপিয়ে নির্ভার হয়ে যাবেন এমন স্বভাব ছিল না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার ঘরে আসার পরেও নিজের সব কাজ নিজেই করতেন। বরং প্রিয়তমার সাথে ঘরের কাজেও সাহায্য করতেন। নবীজির দিলরুবাও ছিলেন নবীজির অনুসারী। তিনিও নিজের কাজ নিজেই করতেন। একদিন দ্বিপ্রহরে, সূর্য তার আগুন যেন ঢেলে দিচ্ছে মরুর বুকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঘরের সামনে বসে নিজের জুতা সেলাই করছিলেন। ঘরের ভিতরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা চরকায় সুতা কাটছিলেন। এরমধ্যে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার চোখ পড়লো নবীজির ওপর। তিনি তখন সাক্ষী হলেন এক অপার্থিব সুন্দরের। দেখলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কপালে ঘাম জমে আছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে তা টপটপ করে নিচে পড়ছিল। ফোঁটাগুলো নিচে পড়ার সাথে সাথে তার থেকে এক আশ্চর্য আলোকছটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। রোদ্দুরের আলোয় ঝলমল করা হিরে- পান্নার মতো সে আশ্চর্য আলোর বিকিরণ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্থান, কাল, পাত্র ভুলে অবাক বিস্ময়ে— মুগ্ধতামাখা দৃষ্টিতে নবীজিকে দেখতে লাগলেন। প্রেমাস্পদের রূপসুধা পান করায় এতটাই মগ্ন ছিলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামও যে তার দিকে তাকিয়ে আছেন তা খেয়াল করেননি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ডাকে তার সম্বিত ফিরলো। আয়েশা, কী হয়েছে? অমন করে কী দেখছো?
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার চোখেমুখে তখনও মুগ্ধতা লেগে আছে। নবীজির দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো দেখছিলাম আপনাকে। দেখছিলাম আপনার কপালে জমেছে মুক্তোদানা । সে মুক্তোদানা রোদ্দুরের তাপে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো আলোকছটা। অবাক-বিস্ময়ে আমার দুইচোখ সে আলোর খেলা বিভোর হয়ে দেখছিলো। এখন যদি আবু কাবির হাজলি আপনাকে দেখতো তবে সে তার কবিতার শ্রেষ্ঠ উপমা এখানেই পেয়ে যেতো।
নবীজি বললেন, আচ্ছা! শোনাও দেখি আবু কাবির হাজালির কবিতাখানা।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন প্রিয়তমের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করলেন,
‘সে, নবজাতক শিশু এবং দুধের চেয়েও—
পবিত্রতম ও অপরূপ।
তুমি তার উজ্জ্বল চেহারার দিকে যদি তাকাও
উপলব্ধি করতে পারবে—
কিভাবে সূর্য এবং চন্দ্রের আলোকরশ্মি
তার চারদিক আলোকজ্জ্বল করে রেখেছে।’
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম প্রেয়সীর মুখে কবিতা আবৃত্তি শুনে অভিভূত হয়ে গেলেন। হাতের কাজ ফেলে রেখে এগিয়ে এসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কপালে চুমো খেলেন। বিমোহিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, আয়েশা, তোমার কবিতা শুনে আমার মন যতটা পুলকিত হয়েছে, তুমি আমার চেহারা দেখেও ততটা আনন্দিত হওনি।
তথ্যসহায়িকা :
১.সহিহ বুখারি।
২.সিরাতে ইবনে হিশাম।
৩.হিলইয়াতুল আউলিয়া।
৪.তারিখে তাবারি।
৫.মুসনাদে আহমাদ।
The post হুমাইরা—দিলরুবায়ে সারওয়ারে কায়েনাত (৯ম পর্ব) appeared first on Fateh24.
source https://fateh24.com/%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%93%e0%a7%9f-7/
No comments:
Post a Comment